খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ৮

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ৮
আনিকা আয়াত

গ্রামের ভীতু সহজ-সরল মেয়েটি এক আকাশ সম স্বপ্ন, আশা, সাহস নিয়ে পা রেখেছিল ঢাকা। মনেপ্রাণে ছিলো বিশ্বাস! ছোট থেকে যে বাবা-মা আশেপাশের মানুষের কটুক্তি শুনেছে, তাচ্ছিল্য হজম করেছে এগুলোর মূল্য তাকে দিতেই হবে। মাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই চৈতীর বিয়ের জন্য তোরজোড় শুরু করে। প্রতিটি মেয়ের জীবনের বড় শত্রু ঘটক নামক ব্যক্তির আনাগোনা বেড়ে যায় তাদের বাড়িতে। বেশ মোটা অংকের টাকা দিতেও পাত্রপক্ষ রা রাজি। কিন্তু প্রতি সম্মন্ধে বাঁধ সাধে তার বাবা-মা। তেজী এবং শক্ত গলায় বলে, অভাব অনটনে, না খেয়ে থাকলেও মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিবে না। বরং তার মেয়ে অনেক পড়াশোনা করে, ভালো একটি পদে চাকরি করবে। এসব কথায়, প্রতিবেশী, গ্রামের লোক তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেও বসে থাকেনি। নাক ছিটকে বলেছে,

“ এত টাকা খরচ কইরা মাইয়া মানুষের বেশী পড়াশোনা করাইতে হয়না। তখন বিয়া দেওয়া কঠিন হইবে! চৈতী এখন কিশোরী, সুন্দরী এবং চোখ ধাঁধানো নারী। এই সময়ই একবারে সঠিক সময় বিয়ে দেওয়ার। কয়েক বছর পর বয়স হইলে, ভালো পাত্র পাওয়া যাইবে না। তখন পস্তাবেন। বুইড়া বেটাও খুঁজতে হইবে হারিকেন দিয়ে। ”
আরিফা বেগম তাদের মুখের উপর কিছু তিক্ত ও ঝাঁঝালো কথা শুনিয়ে দিতেই তারা নাক মুখ বিকৃতি করে চলে গেছেন। দৈনন্দিন কতশত মানুষের জঘন্য কথার স্বীকার চৈতী। গ্রামের মানুষ গুলো কুড়িতে বুড়ি হওয়া মেয়েগুলোকে সহ্য করতে পারে না। বাবা-মায়ের থেকে তারাই যেনো সকাল বিকাল সেই মেয়েগুলোর বিয়ের চিন্তায় কাঠ হয়ে যায়। মুখে ফেনা তুলে ফেলে বিয়ে, বিয়ে করে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চৈতীর এতদূর আসা কখনও সম্ভব হতো না। যদি তার দুপাশে মমতাময়ী মা এবং আদর্শ বাবা না থাকত। যারা মেয়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য হাজার কষ্টও সহ্য করেছে। ঘরে বাজার না থাকলেও চৈতীর কলেজের বেতন হাতে তুলে দিয়েছেন। আশেপাশের কারো কথা তোয়াক্কা না করে, মেয়ের মাথায় ভরসার হাত রেখে সাহস দিয়েছে এগিয়ে যাওয়ার। তার বাবার বিশ্বাস ছিলো, এই মেয়েই তার সম্মান বাড়াবে। লোকে যাই বলুক, তার মেয়ে খুব মেধাবী! উল্টো পাল্টা কোনো সঙ্গ ছিলো না! সারাক্ষণ মন্ত থাকতো পড়াশোনায়। সেই চৈতী আজ পেরেছে বাবা-মায়ের আশা অল্প পূরণ করতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে পাড়া-পড়শীকে দেখিয়ে দিয়েছে। চৈতী একজন কঠোর পরিশ্রমী মেয়ে। ছোট্ট বেলা থেকে বাবা-মায়ের ভালোবাসা, অভাবের মাঝেও দৃঢ় বন্ধন দেখে এসেছে। হয়তো তাদের কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ নেই, তবুও ওই টিনের ঘরে অদ্ভুত এক শান্তি আছে। যেখানে, বাবা তাকে আদর করে খাইয়ে দিতো। বাজার থেকে বাদাম, বিস্কুট এনে, উঠোন থেকে উচ্চস্বরে ডাকতো,

“ চৈতী মা! কই তোরা..!”
চৈতী দৌঁড়ে এসে বাবার হাত থেকে আগে বাজারের ব্যাগ নিজের কাছে নিয়ে ঘরে যেতো। পেছন পেছন ছোট ভাই সায়মনও ঘরে ঢুকেই দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হতো, বাবা কার জন্য মজা এনেছে এই নিয়ে। তার মা মাটির চুলায় রান্না বসিয়ে সেখান থেকেই চেঁচিয়ে লাকড়ি নিয়ে তেড়ে যেতো। চৈতীর পিঠে ধপাধপ কয়েক ঘা দিতেই সায়মন এক দৌঁড়ে বেরিয়ে পড়তো রাস্তায়।

অন্যসব মেয়ের মতো চৈতী আদরে আহ্লাদী হয়ে বড় হয়নি। সে বড় হয়েছে, মায়ের হাজার বকা-ঝকা, মাইর খেয়ে। মায়ের সাথে জমির ফসল ঘরে তুলার কাজও করেছে। এসব তার কাছে সাধারণ বিষয়। সারাক্ষণ বাবা-মায়ের মাথার উপর বসে খায়নি সে। অতিরিক্ত ঢঙ-ও দেখেনি। তার দুই চোখ অনেক বাস্তবতার স্বাক্ষী হয়েছে। মায়ের সর্বক্ষণ পরিশ্রম, কষ্ট দেখে বড় হয়েছে। তার তো এই ব্যস্ত, বিলাসিতার শহরে এসে অতীত ভুলে বাবা-মায়ের কষ্টের টাকা নষ্ট করার প্রশ্নই উঠে না। সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, নিজের খরচ নিজে চালাতে। যদি আল্লাহ সহায় হন, তাহলে সায়মনের হাত খরচের কথাও সে ভেবে দেখবে। তার জীবনটা আজ এতো রঙীন শুধু মাত্র ওই কঠোর পরিশ্রমী দুটি মানুষের জন্য।

চৈতীর এসব ভুলে গেলে চলবে না। রঙচঙে শহরে হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা। সেসব ইগনোর করে, এগিয়ে যেতে হবে লক্ষ্যে। চৈতী যানে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পদে পদে কঠিন রাস্তা পাড় করতে হবে। তবেই, একদিন সুদিন আসবে। তার নিজের একটি ঘর হবে। সেই ঘরে বাবা-মাকে স্থান দিবে চৈতী।
“ ম্যাম আমার পড়া কমপ্লিট! আপনি জলদি ছুটি দিন। ”
স্টুডেন্টের চেঁচানো কণ্ঠে চৈতী নিজের অতীতের কিছু মিষ্টি, হাহাকার, আফসোস এবং শান্তির স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসে। কল্পনার জগতে হঠাৎ বেঘাত সৃষ্টি হওয়ায় মেয়েটি অন্তর চমকে উঠে। আশেপাশে নজর বুলিয়ে নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
“ মিস ইউ মা.. আব্বা..! ”

ক্ষীণ কণ্ঠে বলেই, সামনে বসা পিচ্চি ছেলেটার মাথার চুল ডানহাতে এলোমেলো করে মৃদু হেঁসে বলল,
“ হোমওয়ার্ক গুলো দিয়ে দিচ্ছি। তারপর ছুটি পাবে।”
পিচ্চি আহিত মুখ ভার করে টেবিলে দুহাত ভাজ রেখে বসে রইলো। চৈতী তীক্ষ্ণ চোখে খেয়াল করে, চটপট প্রতিটি খাতায় হোমওয়ার্ক দিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত হয় আহিতের মা মিথিলা। তিনি হাতে কিছু শুকনো নাস্তা এনে চৈতীর সামনে রাখলো। খাওয়ার জন্য অনুরোধ করায় চৈতী মিষ্টি হেঁসে হাতের ঘড়িতে সময় দেখে নেয়। তাড়াহুড়ো কণ্ঠে নম্রভাবে বলল,
“ আপু আমি আজ খেতে পারবো না। প্লিজ কালকে যখন আসবো। অবশ্যই খাবো। ”

“ তা কি করে হয় চৈতী? তুমি হালকা কিছু খাও। ” খুবই ভদ্রতার সহিত বললেন মিথিলা।
চৈতী মুগ্ধ হয়ে গেলো। সে বিস্কুটের এক কামর খেয়ে টিউশনে মন দেয়। শ্রাবণের দেওয়া টিউশন শুরু করেছে আজ প্রায় মাস খানেক হয়ে গেছে। এই কয়েকদিনে মিথিলার আচার-ব্যবহারে মুগ্ধ না হয়ে পারেনি চৈতী। মেয়েটি হোমওয়ার্ক শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। আহিতের গালে আদর করে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে আসে। ভার্সিটিতে স্নিগ্ধা, জিনিয়া, হিমু এবং শ্রাবণকে ছাড়া যেনো জমেই না। দেখতে দেখতে দেড় মাস কেটে গেলো তবুও চৈতী টের পেলো না। পাবে কিভাবে? সব যে ভালোভাবেই কাটছে।

চৈতী এতো দিনের সমস্ত ঘটনা ভাবতে ভাবতে রিকশায় উঠলো। কাছের ফুচকার দোকানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। মেয়েটির কল্পনায় সব বন্ধুরা ভর করলেও আরেকটি অদ্ভুত মানবও জায়গা করে নিলো। সেই নির্দিষ্ট বটগাছের নিচে বাইকে হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে নাচিয়ে বসে থাকা যুবটিকে মনে পড়লো তার। তৃধার ছটফটে স্বভাবের জন্য চৈতীও তাদের সাথে মিশতে শুরু করেছে। এই কয়েকদিনে তারাও যেনো ওদের বন্ধু হয়ে গেছে। অর্পণ যখন রসিকতার সুরে বলে,

“ এ্যাই চুমকি! আবারোও খাবে কি আমার শক্ত হাতের মিষ্টি থাপ্পড়? ”
চৈতীর কঠিন জবাব দিতে হয়না তার আগেই খ্যাপা বাঘিনীর মতো তেড়ে যায় স্নিগ্ধা। পায়ে পা মিলিয়ে ঝগড়া করাটা যেনো নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে স্নিগ্ধার। ভার্সিটিতে এসেই সুযোগ খুঁজতে থাকে, অর্পণের সাথে কিভাবে ঝগড়া করা যায়! কিভাবে চাপার জোর বাড়িয়ে হারিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু অর্পণ কি কাঁচা খেলোয়াড়? সে সব জায়গায় তুড়ি মেরে স্নিগ্ধার জিদ, রাগ এবং ক্ষোভকে দমিয়ে দেয়। এসব যেনো বিনোদনের জায়গা করে নিয়েছে সকলের কাছে। সবাই তাদের ঝগড়া দারুণ ভাবে এনজয় করে।

রিকশা মামার তিরিক্ষি মেজাজের ডাকে চৈতীর হুঁশ ফিরলো। রিকশা থেকে নেমে নিজের অজান্তেই হেঁসে উঠলো। ভাড়া মিটিয়ে ফুচকা খাওয়ার মাঝে চোখ পড়লো, দূরে কিছু ছেলেদের সাথে বসে থাকা অর্পণের দিকে। চৈতী ভ্রু কিঞ্চিৎ করে তীক্ষ্ণ চোখে লক্ষ্য করে বুঝল, এটা সত্যি অর্পণ। তৎক্ষনাৎ মনে পড়লো, কিছুদিন আগের ঘটনা। টিউশন শেষে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় চৈতী কিছুটা ভীত হয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই মুহুর্তে অর্পণ ঝড়ের বেগে বাইক নিয়ে এদিক দিয়েই যায়। চৈতী এক নজর সামনে তাকিয়ে আবার ফোনে দৃষ্টি রাখল। মেয়েটা সেভাবে পাত্তা না দেওয়ায় বুঝতেই পারেনি, কখন আবার সেই বাইকটা ফিরে এসেছে। প্রচন্ড স্পিডে এসে একদম চৈতীর পায়ের নিকট থামে। ঘটনার আকস্মিকতায় মেয়েটা আঁতকে উঠে। ভয়ানক ভয়ে মৃদু চিৎকার করে পিছিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। অনুভব করে, তার দেহ অতিরিক্ত ভয়ে কাঁপছে। হাত কম্পিত হওয়ার মাঝে পুরুষালী কণ্ঠ কানে পৌঁছে যায়,

“ এ্যাই চুমকি! ভরসন্ধ্যায় এই খারাপ এলাকায় একা একা কি করছ? প্রমিক ট্রেমিক জুটিয়ে ফেলেছ নাকি? তার জন্য অপেক্ষা করছ? মনে রেখো, এই এলাকায় এক পিস ভদ্র, শান্তশিষ্ট, অমায়িক ছেলে শুধুমাত্র আমিই। বাকি সবাই খারাপ -বখাটে! ”
চৈতী তরিত করে চোখ খুলে। সামনে অর্পণের ফ্যাকাসে, ক্লান্ত মুখশ্রী দেখে ভয় পালিয়ে যায়। উল্টো খ্যাপে গিয়ে তিরিক্ষি মেজাজে চেঁচিয়ে উঠে,
“ আপনি এখানে কি করছেন? আমাকে এক্সিডেন্ট করার প্ল্যান করছেন নাকি? আরেকটু হলেই জান টাই বেরিয়ে যেতো। ”
বলেই চৈতী দাঁতে দাঁত শক্ত করে ফোঁস ফোঁস করছে। অর্পণ বাঁকা চোখে থমথমে মুখে মেয়েটাকে পরখ করে বলল,
“ কোথায় যাচ্ছ তুমি?”

চৈতী তার কথায় উত্তর না দিয়ে হেঁটে সামনে চলে যায়। আশেপাশে রিকশা খুঁজে ব্যর্থ হয়ে অসহায় মুখে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে রইলো। অর্পণকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে যেনো, ভীষণ মজা পেরেছে। মনে মনে হাঁসলো চৈতী। অর্পণ ধারালো চোখ চৈতীর কপালের ঘাম! হাতের তালু অনবরত ঘষা। মাঝে মাঝে ওড়না চেপে ধরা, দীর্ঘশ্বাস ছাড়া সবই তীক্ষ্ণ চোখে খেয়াল করলো। মেয়েটি যতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো, সেও বাইকে বসে চৈতীকে দেখতে থাকে। এই শহরে কেনো জানি একা মেয়েটাকে রেখে চলে যেতে তার মন স্বায় দিলো না। চৈতী কয়েকবার কঠিন হয়ে বলল,
“ আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? চলে যান। মনে হয় জরুরী কাজ আছে আপনার।”

অর্পণ হেঁসে চুপ করে ছিলো। চৈতীর মনে ভয় থাকলেও অর্পণকে দেখে তার সাহস হচ্ছে। সে জুতা দিয়ে মাটি খুড়িয়ে মুখ ভার করে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ পর বাঁকা হেঁসে অর্পণ কাউকে কল করে রিকশা আনতে বলে। মিনিট পাঁচেক পর তুষিব সেই রিকশা থেকে নেমে যায়। চৈতীর সামনে দাঁড়িয়ে তাকে চলে যেতে বলে। চৈতী চটপট রিকশায় উঠে একবার পেছনে তাকায়। অর্পণ তখনও একই ভঙ্গিতে বসা। রিকশা চলতে শুরু করলে, মেয়েটি মৃদু হেঁসে জোর গলায় বলল,
“ ধন্যবাদ অর্পণ শেখ! ”
তৎক্ষনাৎ অর্পণের গম্ভীর মুখে আচমকা হাঁসি ফুটে উঠে। তুষিব নিয়ে চলে যায় নিজ কাজে।
চৈতী নিজের ভাবনায় নিজেই বিস্মিত হলো। অবাকের চরম মাত্রায় পৌঁছে ধিক্কার জানালো, তার মনকে। কতশত সুন্দর স্মৃতি থাকলে, এই স্মৃতিই কেনো বারবার মনে আসে? সে চমকে তাকালো সামনে অথচ একটু আগে বসে থাকা অর্পণ কে দেখতে পেলো না। সাথে থাকা ছেলেপুলেও নেই।

তিনমাস পরেই স্নিগ্ধা এ বাসা ছেড়ে চলে যাবে। তার মধ্যে একমাস পেরিয়ে গেছে। মেয়েটার মন ভীষণ খচখচ করে। অর্ণবের সাথে যতটা সহজ সম্পর্ক গড়ে উঠছে ততটাই জটিল সম্পর্ক অর্পণের সাথে। এই বাসায় স্নিগ্ধার মন শান্ত হয়ে যায়। নিয়ম করে ছাঁদে যাওয়াও একপ্রকার অভ্যাস হয়ে গেছে। চৈতী, শ্রাবণ এবং অর্পণের বন্ধুমহলের সঙ্গে বেশ মিষ্টি বন্ধন দৃঢ় হলেও ওই অর্পণের সাথে হয়নি। এক মাসের ভার্সিটি লাইফ দারুণ এনজয় করেছে। আজ স্নিগ্ধা মায়ের সাথে শপিং করে বাসায় ফিরলো। দ্রুত খাওয়া দাওয়া করে, মিষ্টিকে নিয়ে এক দৌঁড়ে চলে গেলো অর্ণবের বাসায়। পায়েল শেখও স্নিগ্ধাকে বেশ পছন্দ করেন। তৃষ্ণার সাথেও ভীষণ ভাব জমেছে মিষ্টি এবং স্নিগ্ধার। স্নিগ্ধা বাসায় ঢুকে আশেপাশে একবার জহুরি দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো। কাউকে দেখতে না পেয়ে জোরপূর্বক হেঁসে পায়েল শেখকে বলল,

“ আন্টি কাউকে দেখছি না যে। বাসায় নেই কেউ?”
মিষ্টি চট করে বুঝতে পারলো ব্যাপার টা। এই কয়েকদিন নিজের বোনের অদ্ভুত কিছু লক্ষ্মণ দেখেছে। ওইদিন দুষ্টুমি করে ছাঁদে অর্ণবের ছবি তুলা। সেই ছবি প্রতিদিন দেখে স্নিগ্ধা মিটি মিটি হাঁসে। সেই দৃশ্য হাতেনাতে ধরে ফেলেছে মিষ্টি। বোনের কান্ডকারখানায় না হেঁসে পারেনি। আজও স্নিগ্ধার উঁকি ঝুঁকি, অস্থিরতা দেখে মিষ্টি বোনের পিঠে খুঁচা দিয়ে মিটিমিটি হাঁসলো। পায়েল শেখ তাদের হালকা নাস্তা দিয়ে বলল,
“ কার কথা বলছো? ”
“ অর- তৃষ্ণা! তৃষ্ণার কথা বলছিলাম আন্টি! ও কোথায়?” ইতস্ততভাবে বলে স্নিগ্ধা এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। পায়েল শেখ হেঁসে উঠে বলল,
“ কোচিং-এ ভর্তি হতে গিয়েছে অর্ণবের সাথে!”
“ ওহ আচ্ছা! ”

বলেই স্নিগ্ধা বিনয়ী ভাবে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়। পাশের ঘরে আঁড়চোখে দেখে বিদায় জানালো। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই চোখে পড়লো, তিনটি ছেলেকে। সবাইকে স্নিগ্ধা চেনে। এরা আর কেউ নয়! অর্পণ, তুষিব এবং রনি। স্নিগ্ধা মুখ মুচড়ে তাকে পাশ কাটিয়ে উপরে উঠার সময় বেশ রসালো কণ্ঠে শুনতে পেলো কয়েকটি অসভ্য বাক্য,
“ এসব কি শুনছি সুন্দরী? তুমি নাকি আমাকে ইমপ্রেস করতে না পেরে আমার ডুপ্লিকেট ওই বলদটাকে চুমু খাওয়ার প্ল্যান করছ? শুনলাম আজকাল সারাক্ষণ আমার বাসায় ঘাপটি মেরে থাকো। অর্ণবের সাথে হা হা হি হি করো! তাহলে সুন্দরী! আমার মতো অসহায় ছেলের সাথে কোমর বেঁধে ঝগড়া করার মানে কি? মুখে মধু টধু নেই? আমার সঙ্গেও তো হাহা হি হি করতে পারো! আমি কি মাইন্ড করবো? চুমু-টুমুও দু একটা বন্ধু ভেবে দিতে পারো। কোনো মাইন্ড করবো না!”

তুষিব, রনি উচ্চস্বরে দুহাতে মুখ চেপে হেঁসে যাচ্ছে। মিষ্টি হা হয়ে তাকিয়ে দেখছে এই অসভ্য লোককে। স্নিগ্ধা রাগান্বিত দৃষ্টি ফেলে হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো। ডান হাত উঠিয়ে আঙুল তুলে বলল,
“ চুপ একদম বাজে কথা নয়। গলা নিচে! একদম জিহ্ব টেনে.. ”

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ৭

কথা সম্পর্ণ করার আগেই অর্পণ ধমকে উঠলো। দুই পা সামনে বাড়িয়ে স্নিগ্ধার মুখোমুখি হয়ে বাঁকা হেঁসে বলল,
“ আবারোও ঝগড়া? আজ থেকে ঝগড়া করলে বুঝে নেবো, আমার জন্য তোমার হৃদয়ে অনেক প্রেম। নাকি সত্যি? এই গায়ে পড়ে ঝগড়ার মধ্যে সীমাহীন প্রেম লুকিয়ে আছে? আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছ। ভালো টালো বেসে ফেলনি তো? এ্যাই ভালো কথা! তোমার বান্ধবী চুমকি কলেজে আসছে না কেনো? পুরো একদিন হয়ে গেলো ভার্সিটি আসেনি। তাকে এখন-ই কল করে সাফ সাফ জানাও! কাল ভার্সিটি না আসলে ওর পড়াশোনা বন্ধ। ক্লাস থাকলেও আসতে হবে, না থাকলেও আসতে হবে। এটা অর্পণের আদেশ! ”

খেয়ালি আমি হেয়ালি তুমি পর্ব ৯