চেকমেট পর্ব ২১ (২)

চেকমেট পর্ব ২১ (২)
সারিকা হোসাইন

মনের মাধুরী মিশিয়ে সেজেছে নেলি।একদম হালকা পাতলা পার্টি সাজের মতো।কোঁকড়ানো ঝাঁকড়া চুলগুলো স্ট্রেট করে ছেড়ে কাঁধের দুই পাশে ফেলে রেখেছে।ঠোঁটে কালারফুল লিপস্টিক দিয়েছে।চোখে মোটা করে আইলাইনার কাজল সব টেনেছে।পড়েছে দামি ড্রেস।অসুস্থ রূপকথাকেও ধরে বেঁধে সাজিয়েছে।নেলির এহেন বোকা কাণ্ডে রূপকথা খেঁকিয়ে বার কয়েক জিজ্ঞেস করেছে রামপুরা গেলে এতো সাজতে হবে কেনো?কিন্তু নেলি কোনো প্রত্যুত্তর করেনি।
সারফরাজ এর দের বাড়ির আঙিনায় রূপকথা আর নেলি যখন পৌছালো তখন দুজনেই সারফরাজ আর অভিরূপ কে দেখতে পেলো।রূপকথা তেমন তোয়াক্কা না করলেও নেলি মনে মনে ভীত হলো।ব্যাগ থেকে ঝটপট একটা ছোট মিরর বের করে চেহারা টা ভালো করে পরখ করলো নেলি।সব ঠিক আছে।শুধু গাড়ির বাতাসে চুল গুলো আলুথালু হয়ে রয়েছে।ওসব ব্যাপার নয়।

সারফরাজ এর গেট আপ দেখে নেলি মনে মনে বলে উঠলো
“দেখ দেখ দারোয়ান এর ভাব দেখ।মালিকের অবর্তমানে কেমন মালিক সাজা হচ্ছে।ব্যাটা গুন্ডা।
হঠাৎ বালিশের তলায় বন্দুকের কথা মনে পড়তেই চুলগুলো একটু ঠিক করলো নেলি।এরপর মনে মনে বললো

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“শুট টা কোথায় করবে কপালে না ভুড়িতে?না না কপালে করলে সাজ নষ্ট হবে।পত্রিকায় নইলে খবরের শিরোনামে ছবি সুন্দর হওয়া চাই।হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করে বলবো ভুড়িতে মারতে।আমার অনুরোধ অমান্য করে বজ্জাত লোকটা যদি পাছুতে মারে?
মনের ভয়ানক ধারনায় জিভ কেটে মাথা নাড়িয়ে নিজের পাছুতে একবার হাত বুলালো নেলি।সাদা পাছু দুটো রক্তে রঞ্জিত হবে আহ কি নিদারুণ ব্যাথা।এদিকে অভিরূপ নেলির দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে ফেললো।মেয়েটার হাবভাব কিছুই সুবিধার মনে হচ্ছে না।সারফরাজ এর কোন কালের আত্মীয় এই মেয়েটা তা জানার জন্য অভিরূপের মন অকুলিবিকুলি করে উঠলো।
বোকা নেলিকে ফেলে ধীর দুর্বল পায়ে সারফরাজ এর সামনে এসে দাড়ালো রূপকথা।এরপর মিহি চিকন গলায় বললো

“দেখুন আমরা সেদিনের ঘটনার জন্য অনুতপ্ত।কাউকে না বলে লিচু গাছে উঠা উচিত হয়নি আমাদের।এর জন্য দুঃখিত।ক্ষমা করবেন।
রূপকথার সাবলীল কথায় সারফরাজ পাল্টা কথা বলার ভাষা হারালো।বুকে কেমন ঢিপ ঢিপ শব্দ হচ্ছে।হৃদপিণ্ড লাফিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইছে।মাথা কেমন পিন পিন করে ঘুরছে।একটু জ্ঞান হারাতে পারলে ভালো লাগতো।এদিকে দুস্টু মনে কেমন উদ্ভট গান বেজে যাচ্ছে
“আমি জ্ঞান হারাবো মরেই যাবো ।বাঁচাতে পারবে না কেউ।
সারফরাজ কে নিরুত্তাপ দেখে রূপকথা মাথা নিচু করে বলে উঠলো
“আমার একটা মেরুন রঙা ব্যাগ আপনার ঘরে রয়েছে।সেটা নিতেই আমরা এসেছি।ব্যাগ টা দয়া করে দিয়ে দিন আমায়।

রূপকথার এই কথাটা সারফরাজ এর কানে গেলো না।মৃদুমন্দ আবহাওয়ায় সারফরাজ দের বাড়ির সামনের খোলা মাঠে কিশোরের দল ক্রিকেট খেলছে।তাদের উচ্ছাস ব্যাট বলের শব্দ আর চিৎকার চেঁচামেচি সারফরাজ এর কানে কেমন জোরে জোরে আঘাত করছে।
সামনে দাঁড়ানো বিশাল দেহি মানুষটার এমন বেখেয়ালি গর্দভ এর মতন আচরণে রূপকথা অল্প রুষ্ট হলো।তার কাছে মনে হলো লোকটা নির্বোধ।নয়তো এতগুলো কথা বলার পর ও কেউ এমন ক্যাবলা কান্তের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে?
রূপকথা আবারো বলতে চাইলো
“আপনি মনে হয় আমার ক….
কথা শেষ করতে পারলো না রূপকথা।নিজের সাথে রূপকথাকে টেনে মিশিয়ে ডান হাতে খপ করে ধরে ফেললো ক্রিকেট বল।আকস্মিক এহেন কাণ্ডে ভড়কে গেলো নেলি আর অভিরূপ।দারোয়ান এর বুকে রূপকথাকে বেশ বেমানান ঠেকলো নেলির কাছে।দাঁতে দাঁত পিষে গুটি গুটি পায়ে সারফরাজ এর ধারে এগুতেই অভিরূপ তাকে থামিয়ে বললো
“খুব সুন্দর রোমান্টিক সিন চলছে।নো ডিস্টার্ব।উহু।কাবাব মে হাড্ডি হলে অজগরের কাবাব বানিয়ে খাইয়ে দেবো তোমায়।

এবার অভিরূপ এর মুখের পানে নজর দিলো নেলি।অভিরূপ এর হাসি খুশি চেহারা দেখে পেট গুলিয়ে গাল ফুলে উঠলো নেলির।পা দুটোও কেমন থর থর করে কেঁপে উঠলো।মুখ ভরে বমি পাচ্ছে।
“আরে এটাই তো সেই লোক যে স্বপ্নের ভেতর তাকে জোর করে অজগরের কাবাব খাওয়াতে চাইছিলো।
ভয়াবহ দুঃসপ্নের কথা মনে পড়তেই নেলির কান্না পেলো।মোটা কাজল লেপটানো চোখ জোড়া কচলে বোঝার চেষ্টা করলো তার সামনে যেই ব্যাক্তি রয়েছে এই সেই স্বপ্ন মানব কিনা।
চোখ কচলেও একই ব্যাক্তিকেই দেখলো।এদিকে কচলানি খেয়ে চোখের কাজল কোটর আর গাল লেপ্টে একাকার হলো।নেলিকে দেখতে কেমন বোকা ভুতের মতো লাগছে।অভিরূপ বহু কষ্টে নিজের হাসি চেপে রাখলো।কিন্তু জ্ঞান হারানোর উপক্রম হলো নেলি।

চেকমেট পর্ব ২১

সারফরাজ এর প্রশস্ত বুকে চোখ বুজে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে রূপকথা।বুকটা কেমন নিরাপদ ভরসাস্থল মনে হলো।ভেতর থেকে কেউ বলে উঠলো
“কতো দিন পর এমন শান্তি পেলি?
রূপকথা উত্তর দিতে পারলো না সেই প্রশ্নের।মন না চাইতেও মাথা তুলতে চাইলো রূপকথা।কিন্তু চেপে ধরলো সারফরাজ।এরপর অজান্তেই বলে ফেললো
“যন্ত্রণায় দগ্ধ হুতাশন নিভতে শুরু করেছে সবে।আর একটু থাকো প্লিজ।

চেকমেট পর্ব ২২