চেকমেট পর্ব ২৪
সারিকা হোসাইন
ঘড়ির কাটা তরতর করে সময় এর পর সময় পাড় করে চলেছে।বৃষ্টি থামার নাম নেই।আকাশ যেনো আজ ফুটো হয়ে গেছে।থেকে থেকে গগন কাঁপিয়ে বাজ আছড়ে পড়ছে ধরনীতে।তার সাথে পাল্লা দিয়ে বর্ষনের ধারা।
সারফরাজ দের বিশাল বসার ঘর থেকে বাইরের খোলামেলা প্রকৃতি বেশ করে উপভোগ করা যায়।যিনি বাড়িটা গড়েছিলেন তিনি নিঃসন্দেহে রুচিশীল আর সৌখিন।বাতাসের তোড়ে সারফরাজ দের দেশি বিদেশি দামি দামি ফুলের গাছ গুলো হেলে দুলে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষন আগের ফুটন্ত ফুল গুলো লুটিয়ে যাচ্ছে গাছের তলায়।বাতাসের শক্তির সাথে টিকতে না পেরে লিচু সমেত চিকন ডাল গুলো ঘাসের উপর ভেঙে পতিত হলো।নেলি এই দৃশ্যে বেশ মর্মাহত হলো।নিজের বাড়ি হলে এক্ষুনি সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আয়েশ করে খেতে বসতো।আর এদিকে একা একা বসে বসে মশা মারতে হচ্ছে তাকে।যেও একটা মানুষ হলো আলাপ করার সেও ভিজে ভিজে কোথায় যেনো চলে গেলো।অলস শীতল বর্ষণমুখর দুপুরে বেশ করে ঘুম পেলো নেলির।একটা বিছানা হলে মন্দ হতো না।জম্পেশ একটা ঘুম দেয়া যেত।নেলির ভাবনার মাঝে আমজাদ হায়দার এর ফোন এলো।ফোনের কর্কশ শব্দে এক প্রকার লাফিয়ে উঠলো নেলি।স্ক্রিনে তাকিয়ে বাবার নম্বর দেখেই ভয়ে ঢোক গিললো।এরপর ফোন কানে তুলে বললো
“হ্যা বাবা!
আমজাদ হায়দার উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালো
“কোথাও আটকে গেছিস?আমি যাবো তোদের আনতে?
নেলি চট করে বলে উঠলো
“ন ন না না এসো না।আমি রূপকথা কে নিয়ে আমার স্কুল ফ্রেন্ড মিতার বাড়িতে এসেছি।ওর মা ছাড়তে চাইছে না।আমাদের যেতে দেরি হবে।আবার নাও ফিরতে পারি।রূপকথার নাকি এখানে এসে ভালো লাগছে।
মেয়ের প্রতি আমজাদ হায়দার এর অগাধ বিশ্বাস।তাছাড়া মেয়েকে ঘরের কোণে চেপে রাখতেও পছন্দ করেন না তিনি।বাবার ঘরে যতদিন আছে পাখা মেলে উরুক না।সংসার শিকল ভেঙে মেয়েরা কি আর দূর আকাশে ডানা মেলতে পারে?
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আমজাদ হায়দার আর কথা বাড়ালেন না।ফোন রেখে দিলেন।আমজাদ হায়দার ফোন কাটতেই ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়লো নেলি।এরপর আবার বাইরের দৃশ্যে মনোযোগী হলো।
রেস্টুরেন্ট থেকে কয়েক পদের খাবার নিয়ে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজেই বাইক চালিয়ে ফিরে এলো অভিরূপ।বাড়ির আঙিনায় ঢুকতেই কতগুলো ডাল ভেঙে পড়ে যাওয়া লিচু তার নজরে এলো।দ্রুত পায়ে সেগুলোর নিকট গিয়ে দুই হাতে কুড়িয়ে দৌড়ে ঘরে ফিরে এলো।পুরোটা দৃশ্য নেলির নজরে বন্দি হলো।হুট করেই অভিরূপ ছেলেটার প্রতি অনন্য এক ভালোলাগা কাজ করলো তার।
অভিরূপ ঘরে এসে কামালের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়লো।কামাল দৌড়ে এসে ভিজে জুবুথুবু হওয়া অভিরূপ কে দেখে বলে উঠলো
“তাড়াতাড়ি গোসল সেরে পোশাক পাল্টে নাও।আমি খাবার সার্ভ করছি।
অগত্যা অভিরূপ দৌড়ে দুতলায় সারফরাজ এর ঘরের সামনে এসে দরজায় কড়া নাড়লো।সারফরাজ এগিয়ে দরজা খুলে অভিরূপ কে এমন অবস্থায় দেখে কিছুক্ষন নীরব রইলো।এরপর শুধালো।।
“ভিজেছিস কেনো?
চুল ঝাড়তে ঝাড়তে অভিরূপ বললো।
“বাসায় মেহমান এসেছে সেই হুশ আছে তোর?কটা বাজে ঘড়িতে?
অভিরূপ এর কথায় দেয়ালের ঘড়িতে নজর দিলো সারফরাজ।প্রায় তিনটার কাছাকাছি।সারফরাজ প্রত্যুত্তর করবার আগেই অভিরূপ বললো
“টাওয়েল,টিশার্ট আর ট্রাউজার দে প্লিজ।খুব ঠান্ডা লাগছে।
সারফরাজ দ্রুত হাতে কাবার্ড খুলে একটা ডার্ক নেভি ব্লু টিশার্ট আর ব্ল্যাক ট্রাউজার এগিয়ে দিলো অভিরূপ এর পানে।এরপর বললো
“পোশাক পাল্টে এখানে আয়।কথা আছে।
অভিরূপ চলে যেতেই রূপকথা সারফরাজ এর পানে তাকিয়ে বলল
“কটা প্রেম করলে এ পর্যন্ত?
প্রেমের কথা শুনে খুক খুক করে কেশে উঠলো সারফরাজ।তার মতো অমানুষের সাথে প্রেম করে বেঘোরে প্রাণ হারাতে কে চাইবে?
আর এসব প্রেম ভালোবাসা করার অঢেল সময় আছে নাকি তার?প্রেমিকার ঠোঁটে টাস টাস সিল মারার চাইতে নিজের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো অপছন্দের মানুষের জীবনে সিল মারা বেশি আনন্দ যার কাছে তার আবার কিসের প্রেম প্রীতি?সারফরাজ কে নিরুত্তাপ দেখে রূপকথা বললো
“বড় হয়ে অনেক সুদর্শন হয়েছো।তোমাকে দেখে আমার কেমন কেমন যেনো ফিল হচ্ছে।
“তুমিও বড় হয়ে বেহায়া হয়েছো।ভেবেছিলাম বড় হয়ে বুঝদার হবে।কিন্তু তার বদলে মাথামোটা গাঁধী হয়েছো।এহেন গাঁধী মেয়ে লোক আমার দুচোক্ষের বিষ।যাও বাড়ি ফিরে যাও।
সারফরাজ এর মুখে আকস্মিক এহেন শব্দ বোমায় স্তম্ভিত হলো রূপকথা।মনে হচ্ছে তার কান ভুল শুনলো।তাই পুনরায় শুধালো
“কিহ আমি বেহায়া?আমি মাথামোটা গাঁধী?
সারফরাজ ভনিতা না করে বলে উঠলো
“নয়তো কি?
“কিভাবে আমি বেহায়া,মাথা মোটা গাঁধী?
ধমকে জিজ্ঞেস করলো রূপকথা।সারফরাজ ইতস্তত করে নিচু গলায় বলল
“এহেন ঝুম বরাবর বৃষ্টিতে একটা পুরুষ মানুষের সাথে দরজা বন্ধ করে আটকে রয়েছ।মানুষ কি ভাবছে?
“দরজা বন্ধ করে তোমার শ্লীলতাহানি করছি?
রূপকথার বেফায়েস কথায় সারফরাজ দুই হাতে মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো
“আস্তাগফিরুল্লাহ।
সারফরাজ এর এহেন বোকা বোকা অবয়ব দেখে ফিক করে হেসে দিলো রূপকথা।এরপর বললো।
“ঠিক আছে বাইরে চলো।খিদে পেয়েছে।।।
মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে থাকা অসংখ্য চকলেট এর খোসার পানে তাকিয়ে সারফরাজ শুধালো
“ওই ছোট পেটে কি আছে রূপকথা?দৈত্য দানবের বসবাস?
“হাত দিয়ে ধরবে?
বলেই সারফরাজ এর কাছে এগিয়ে এসে হাত টেনে ধরলো রূপকথা।রূপকথার অকপটে বলা কথায় আর স্পর্শে ছিটকে সরে এসে সারফরাজ বললো
“ইয়া আল্লাহ ছি ছি।আমি ওসব করি না।
সারফরাজ এর চরিত্র সম্পর্কে ইতোমধ্যে অবগত হয়ে গেছে রূপকথা।মানুষটা সত্যিই তার সেভিয়র।সেই আগের মতোই রয়েছে।একটুও পাল্টায় নি।আচ্ছা তাদের এই সম্পর্কের নাম কি এখন?কোন সম্পর্ক ধরে সারফরাজ এর আশেপাশে ঘুরঘুর করবে রূপকথা?সেভিয়র?পরিচিত মানুষ নাকি বন্ধু?
নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে উত্তর খুঁজে পায় না রূপকথা।এদিকে সারফরাজ দরজা খোলে বাইরে বের হতে নিতেই রূপকথা এক বিশাল আবদার করলো।
“আমাকে ছোট বেলার মতো একবার কোলে নেবে সারফরাজ?বহু দিন কোলে উঠিনা।আমার বাবার পর তোমার মত কেউ এতো যত্ন করে আমায় কোলে নিতে পারে নি।তোমার গলা জড়িয়ে ধরে কোলে উঠার মতো প্রশান্তি আমি আর কোথাও পাইনি।নেবে একবার?
রূপকথার আবদারে সারফরাজ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।ঘিলু হীন মেয়েটা আজ তাকে এভাবে পেয়ে বসেছে।পরিচয় না দিলেই বোধ হয় ভালো ছিলো।এতবড় মেয়েকে কিভাবে কোলে নেবে সে?কোলে উঠার পর সারফরাজ এর যেই অনুভূতি হবে তা সামলানোর ক্ষমতা কি আছে এই গাঁধীর?
সারফরাজ একবার ফাঁকা ঢোক গিলে বললো
“হা হা হাতে ব্যাথা রূপকথা।অন্যদিন।খুব ব্যাথা করছে গো।এই দেখো দরজা পর্যন্ত খুলতে পারছি না।আহ ও মাগো
বলেই চোখ মুখ কুঁচকে একটু নাটক করলো সারফরাজ।সারফরাজ এর অদক্ষ অভিনয়ে জল ঢেলে রূপকথা বলে উঠলো
“একটু আগেই তুমি আমাকে তুলেছিলে উপরে।তখন ব্যথা কোথায় ছিলো?নির্ঘাত অভিনয় করছো তাই না?
রূপকথার পাল্টা উত্তরে সারফরাজ এক দৃষ্টিতে রূপকথার পানে তাকিয়ে রইলো।এরপর শীতল গম্ভীর গলায় বললো
“নিজের সর্বনাশ কেনো ডেকে আনছো রূপকথা?
রূপকথা আইধাঁই করে বললো
“ক কোলে উঠার সাথে সর্বনাশ ডেকে আনার কি সম্পর্ক?
“সময় হলেই বুঝবে।এসো।
বলেই হাত বাড়ালো সারফরাজ।সারফরাজ এর আহ্বানে ঠোঁটে প্রশস্ত হাসি ঝুলিয়ে এগিয়ে গেলো রূপকথা।এরপর দুই হাত উঁচু করতেই ছোট বাচ্চার ন্যয় রূপকথা কে কোলে তুললো সারফরাজ।রূপকথা সারফরাজ এর গলা জড়িয়ে ধরতেই ইলেকট্রিক শক খেলো সারফরাজ।সারফরাজ এর কানের কাছে মুখ এনে রূপকথা গদগদ স্বরে ফিস ফিস করে বললো
“প্রতিদিন একবার করে এসে কোলে উঠবো হু?
“সারফরাজ যেনো কথা বলার ভাষা হারালো।এরই মধ্যে অভিরূপ ফিরে এসে দরজা খোলা দেখে ভেতরে ঢুকে গেল।ভেতরের দৃশ্যে তার চোখ কপালে।নেলিও এলো মিনিট দুই পর বিরক্ত হয়ে রূপকথা কে ডাকতে।নেলি আর অভিরূপ দুজনকে একসাথে দেখে সারফরাজ বিব্রত হয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।কিন্তু নির্বিকার রূপকথা।নেলি এহেন দৃশ্যে চেঁচিয়ে বলে উঠলো
“এসব কি করছিস রূপকথা?এই লোকের কোলে উঠেছিস কেনো ?শিগগির নাম।ছি ছি।একি সর্বনাশী কাজ কারবার!
নেলির কথা কানে তুললো না রূপকথা।অভিরূপ বিস্ময়ে কথা বলার ভাষা হারালো যেনো।তবুও বহু কষ্টে বলে উঠলো
“প্রথম সাক্ষাতেই কোলে?দ্বিতীয় বার কি বাসর ঘরে?
সারফরাজ উত্তর করবার আগেই নেলির চোখ ছাপিয়ে ধরে কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে গেলো অভিরূপ।অভিরূপ আর নেলি যেতেই রূপকথা কে নামিয়ে দিতে চাইলো সারফরাজ।কিন্তু শক্ত হাতে সারফরাজ এর গলা চেপে ধরে রইলো রূপকথা।এক প্রকার বাধ্য হয়ে জবরদস্তি মূলক নিজের থেকে ছাড়িয়ে মেঝেতে দাঁড় করালো রূপকথাকে।এরপর লজ্জা জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো
“এরপর এমন আবদার করলে গাল ফাটিয়ে দেবো রূপকথা।
কথাটি বলেই হনহন করে বাইরে বেরিয়ে গেলো সারফরাজ।সারফরাজ চলে যেতেই ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠলো রূপকথা।আর বিড়বিড় করে বলে উঠলো
“তোমাকে আমি ছাড়ছি না মশাই।তোমার সান্নিধ্য আমাকে যে আলাদা এক প্রশান্তি দেয়।কোথায় পালাবে আমাকে ছেড়ে তুমি?একবার পালাতে পেরেছো বলে বার বার পারবে?নো নেভার।
বর্ষণ মুখর সন্ধ্যার আবছা আলোয় বেলকনিতে পাতা ইজি চেয়ারে শরীর এলিয়ে চোখ বুজে সিগারেট ফুকে চলেছে যুবক।বয়স বত্রিশ এর দোরগোড়ায়।বৃষ্টির ঝাপটা এসে ইতোমধ্যে তাকে বেশ খানিক ভিজিয়ে দিয়েছে।কিন্তু তাতে বিন্দু পরিমাণ ভ্রূক্ষেপ নেই তার।গায়ের সাথে লেপ্টে থাকা ভেজা কাপড় ভেদ করে শরীরের পেশীবহুল খাঁজ গুলো চোখে লাগছে।ক্লীন সেভ এর ফর্সা গালের চোয়াল দ্বয় কেমন শক্ত আর তীক্ষ্ণ।টকটকে লালচে কোমল ঠোঁটে ঠেসে রাখা সিগারেট টা বড্ড বেমানান।তবুও নির্বিঘ্নে তার স্বাদ আস্বাদন করছে সে।
কিছুক্ষন পর ভীত সন্ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে এলো বৃদ্ধ এক লোক।এই বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ কাজের লোক সে।নাম তার দুলাল।দুলাল অন্ধকার ঘরকে লাইট জ্বালিয়ে আলোকিত করে বেলকনির নিকট গিয়ে দাঁড়ালো।এরপর মাথা নিচু করে বলে উঠলো
“ছোট সাহেব হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে।আপনাকে চাইছে।নীচে আসুন।
দুলালের কথায় চোখ মেলে চাইলো যুবক।বিদ্যুতের ঝলকানি তে অদ্ভুত দ্যুতি ছড়ালো ভয়ানক চোখ জোড়া।যেনো জ্বলন্ত কয়লার খনি।হাতের ইশারায় দুলাল কে যেতে বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো যুবক।এরপর কক্ষে এসে গায়ের পাতলা শার্ট ছুড়ে ফেললো ক্লথ বিনে।নতুন একটা টিশার্ট গায়ে চাপিয়ে চোখে মুখে গাম্ভীর্য ফুটিয়ে নীচে নেমে এলো।ল্যান্ড লাইনে এখনো কেউ অপেক্ষা করছে বোধ হয়।যুবক ধীর পদে ল্যান্ডলাইন কানে তুলে গম্ভীর ভারী গলায় বলে উঠলো
“রুদ্র রাজ স্পিকিং।
ওপাশ থেকে কেউ কিছু বললো।যা শুনে কপালের শিরা ফুলে নাকের পাতা কেঁপে উঠলো রুদ্রের।ঠোঁট কামড়ে নিজের ক্রোধ সংবরন করে বলে উঠলো
“ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ফেলে রাখুন।পাগলের ডক্টর আমি নই।আপনি।তাই নেক্সট টাইম থেকে এসব বিষয়ে আমাকে ইনফর্ম করবেন না।গট ইট?
ওপাশের মানুষ ফোন কেটে দিলো।রুদ্র টেলিফোন শব্দ করে রেখে দুলাল কে ডেকে উঠলো।ভীত দুলাল এসে বললো
“বলুন ছোট সাহেব
“এক মগ ব্ল্যাক কফি দাও।চিনি ছাড়া।
দুলাল ঘাড় কাত করে চলে যেতেই নিজের ফোন বের করলো রুদ্র।এরপর ডায়াল করলো কাঙ্খিত নম্বর।রিং বাজার সাথে সাথেই রিসিভ করলো ওপাশের ব্যক্তি।বাজ পাখির ন্যায় শিকারি চোখে সম্মুখে দৃষ্টি মেলে রুদ্র বলে উঠলো
“হুয়াটস দ্যা নিউজ দেয়ার কেভিন?
“নট গুড বস।
“এক্সপ্লেইন
“পুলিশ সারফরাজ এর কারখানায় সন্দেহ জনক কিছুই পায়নি।খালি হাতে ফিরে এসেছে।তার দুই বডিগার্ড লুইস আর ইয়ং বড্ড চালাক।সাথে ব্রাউনি।এভাবে কিছুই করা যাবে না।অন্য পথে হাঁটতে হবে।
কেভিনের ইংরেজি না বোধক কথা গুলো বেশ অপছন্দ হলো রুদ্রের।রাগে তার চোয়াল কেঁপে কেঁপে উঠছে থেকে থেকে।দাঁত পিষে রাখার কারনে মনে হচ্ছে দাঁতের কপাট এই বুঝি ভেঙে গেলো।সারফরাজ তার চির জীবনের শত্রু।এই শত্রুর একটা লোম পর্যন্ত বাঁকা করতে পারছে না সে।অথচ সারফরাজ ঠিক পদে পদে তাকে ঘোল খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।আচ্চা সারফরাজ কি জানে কে এই রুদ্র চৌধুরী?
নিজের ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে খচখচ করে মেসেজ টাইপ করলো রুদ্র।এরপর সেটা পাঠিয়ে দিলো গ্যাঙ এর সব চাইতে নৃশংস হৃদয় হীন মানব কাই কে।
“কিল দ্যাট বাস্টার্ড জ্যাসকিন।হি উইল ওপেন হিজ মাউথ ইফ হি ইজ কট।
মেসেজ ড্রপ করে উঠে দাঁড়ালো রুদ্র।এই মুহূর্তে সব কিছু বিষাদ লাগছে তার।হঠাৎ রূপকথার মায়াবী ঘুমন্ত মুখশ্রী ভেসে উঠলো রুদ্রের চোখে।মুহূর্তেই সমস্ত ক্রোধ, জেদ, রাগ শীতল জলধরারার ন্যয় হলো।হৃদপিণ্ডের গতিও কেমন তেজ হলো।হৃদপিণ্ডের মধ্যখানে কেউ ক্রমাগত হাতুড়ি পিটিয়ে চলছে যেনো।রুদ্র দুই হাতে বুক চেপে ধরে বিড়বিড় করে আওড়ালো
“ডিয়ার রূপকথা।হাউ সুইট ইউ আর
রাত নয়টার দিকে বৃষ্টি কমে এলো।খাবার দাবারের পালা চুকিয়ে সারফরাজ অভিরূপ এর উদ্দেশ্যে কঠিন গলায় নির্দেশ দিলো
“ওদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আয় অভি।
রূপকথা আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে চাইলো।কিন্তু কঠিন মুখশ্রী করে হাত উঁচিয়ে রূপকথাকে থামিয়ে দিলো সারফরাজ।সারফরাজ এর এহেন নিষ্ঠুর আচরণে দুচোখ ছলছল করে উঠলো রূপকথার।অভিমান ও হলো বেশ।কিন্তু সারফরাজ তা প্রশ্রয় দিলো না।
অভিরূপ সারফরাজ কে ডেকে একটা কর্নারে নিয়ে স্বাভাবিক গলায় শুধালো
“এমন করছিস কেনো মেয়েটার সাথে?
“সদিচ্ছায় আগুনে ঝাঁপ দিতে চাইছে ও অভিরূপ।বয়স কম।ভুল করার প্রবণতা বেশি।আবেগে গা ভাসিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনতে চাইছে।দুদিন পর রঙিন চশমা খুলে গেলে পস্তাবে।তখন আমি মরে যাবো।
অভিরূপ সারফরাজ এর কঠিন কথা গুলো খুব সহজেই বুঝে গেলো।তাই তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো
“বুঝিয়ে বল।আই হোপ বুঝে যাবে।
“ওকে বোঝানোর অবস্থাতেই নেই আমি।হুট হাট আমাকে ছুঁইয়ে দিচ্ছে।এটা সেটা বায়না ধরছে।বুঝতেই চাইছে না সে আর ছোট বাচ্চা নেই।
“কি করবি এখন?
“ক্যালিফোর্নিয়া যাবার ব্যাবস্থা কর আমার।ও আমার পিছে এভাবে লেগে থাকলে আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না।আমি কখনোই চাইনা ফুলের মতো সুন্দর একটা মেয়ে আমার মতো হৃদয় হীন পশুর জীবনে জড়াক।আমার লাইফ মিনিংলেস।আমি আজ আছি কাল নেই।সুযোগ পেলে শত্রু পক্ষ কুকুরের মত রাস্তায় মেরে ফেলে রাখবে আমাকে।জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছে সে।আমি চাই সে ভালো থাকুক।সুফিয়ান চৌধুরী তার জায়গায় আসলেই ঠিক।মেয়ের ধারণা ঠিক আঁচ করতে পেরেছিলেন ভদ্রলোক।
অভিরূপ আর কথা বাড়ালো না।নিঃশব্দে রূপকথার আর নেলির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বললো
“চলো,তোমাদের রেখে আসি।অনেক রাত হয়ে গেছে।বৃষ্টির বেগ আবার বাড়লে ঝামেলা হয়ে যাবে।
বলেই নেলিকে চোখ ইশারা দিলো অভিরূপ।অভিরুপ এর কথায় রূপকথা ছলছল নয়নে সারফরাজ এর পানে একবার তাকালো।সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে গটগট পায়ে সিঁড়ি ধরে উপরে উঠে গেলো সারফরাজ।সারফরাজ এর এহেন নিষ্ঠুর আচরণে টপ টপ করে অশ্রু গড়ালো রূপকথার গাল বেয়ে।দুই হাতে দ্রুত সেগুলো মুছে রূপকথা বলে উঠলো
চেকমেট পর্ব ২৩
“তুমি খুব খারাপ সারফরাজ।আমি আর কখনোই কথা বলবো না তোমার সাথে।
করিডোরে দাঁড়িয়ে রূপকথার পুরো কথাটা শুনলো সারফরাজ।এরপর তাচ্ছিল্য হেসে বিড়বিড় করে বলে উঠলো
“সেটা তোমার জন্যই মঙ্গলজনক রূপকথা।