চেকমেট পর্ব ২৯
সারিকা হোসাইন
চলছে আষাঢ় মাসের প্রথম দিন।মুহূর্তে মুহূর্তে সূর্য আর মেঘের লুকোচুরি খেলা চলছে।প্রকৃতি জুড়ে খুশির আমেজ সেই সাথে এলোমেলো শীতল বাতাসের হুটোপুটি।
নিজের আঠাশ বছরের চাকরি জীবনের কার্যালয় ছেড়ে বিদায় নিলেন সুফিয়ান চৌধুরী।সুফিয়ান চৌধুরীর ফেয়ারওয়েল এ কেঁদে ভাসালো সহকর্মী এবং কাছের মানুষজন।এমন সৎ দক্ষ কমিশনার কে বিদায় দিতে ডিপার্টমেন্ট এর কেউ রাজি ছিলো না।কিন্তু বাধ্য হয়েই সুফিয়ান চৌধুরী কে ছাড়তে হয়েছে।
নতুন কমিশনার কে কার্যালয়ের সমস্ত কাজ বুঝিয়ে সুজিয়ে দায়িত্বের ভার ছেড়ে দিয়ে সজল চোখে বেরিয়ে এলেন সুফিয়ান।আজ রাতের ট্রেনেই ঢাকা আসবেন তিনি।এরপর কয়েকদিন রেস্ট নিয়ে নতুন কার্যালয়ে জয়েন করবেন।
ঢাকা আসা নিয়ে রেখার চোখে মুখে যেই উচ্ছাস আর আনন্দ ধরা দিলো তার কিছুই দেখা গেলো না সুফিয়ান চৌধুরীর চোখে মুখে।রেখা ভাবলেন হয়তো দীর্ঘ বছরের চেনা পরিচিত শহর, মানুষ,স্থান ছেড়ে যাবার জন্য সুফিয়ান চৌধুরীর মন ভার।কিন্তু আসলেই কি তাই?
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
নিজেদের ঘরের আসবাবপত্র হাবিজাবি সব একা হাতে লোক মারফত ট্রাকে তুললো রেখা।সুফিয়ান একটা নির্দেশনা পর্যন্ত দিলেন না।সংসার জীবনের অভিজ্ঞতায় রেখার যতটুকু জ্ঞান হলো ততো টুকুই করলো।খানিক বাদে দুজন কনস্টেবল আর এস আই আবির মাহতাব এলো।
আবির কনস্টেবল দের হেল্প করার নির্দেশ দিয়ে কিছু খাবার এর বক্স রেখার সামনে নিয়ে মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে বললো
“ম্যাম আমার ওয়াইফ পাঠিয়েছে আপনাদের জন্য।নতুন বাসায় রান্না করতে অনেক ঝামেলা হবে।তাছাড়া রাতের জার্নি।
বলেই আবির কিছুক্ষন নীরব রইলো।এরপর ইতস্তত করে বললো
“কাল গেলে কোনো অসুবিধা ছিলো?
চিন্তিত ভঙ্গিতে আবিরের থেকে খাবারের বক্স নিতে নিতে রেখা প্রত্যুত্তর করলো
“তোমার স্যার এর কি যেনো হয়েছে।আজকাল কেমন মনমরা হয়ে থাকছে।সারাক্ষন কি যেনো ভাবে।
আবির নিজেও বিষয়টা খেয়াল করেছে।চটপটে হাসিখুশি কমিশনার সাহেব হুট করেই কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেলেন।সারাক্ষন তাকে উদাসীন লাগে।এর হেতু আবির নিজেও খোঁজ করেছে।কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।
রেখা আবিরের পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“উর্মি কে নিয়ে এলে না যে?
আবির খানিক মেপে হেসে উত্তর করলো
“ঊর্মি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা।ডক্টর বেড রেস্ট দিয়েছে তাই আর কি!
রেখা প্রশস্ত হেসে বক্স গুলো ঘরের ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বলে উঠলো
“খুব মিস করবো তোমাদের।অবশ্যই সময় পেলে ঢাকা যাবে।আর নতুন অথিতির জন্য শুভ কামনা রইলো।
আবির ধন্যবাদ জানিয়ে সুফিয়ান চৌধুরীর তালাশ করলো।বাংলোর পাশের গার্ডেন নির্দেশ করে রেখা জবাব দিলো
“বাগানেই পাবে।বিশ্রাম নিচ্ছে হয়তো।ঘর অগোছালো।হাঁটা চলার জায়গা নেই।
আবির মাথা ঝাকিয়ে গার্ডেন অভিমুখে পা বাড়ালো।
কংক্রিটের পাতানো হেলনা চেয়ারে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে বসে আছেন সুফিয়ান চৌধুরী।কোনো কিছুই তার ভালো লাগছে না।চেনা পরিচিত ভয় ,দুশ্চিন্তা সর্বদিক থেকে গ্রাস করেছে তাকে।রেখা নরম মনের মানুষ।সুফিয়ান তাকে চাইলেও খোলামেলা কিছু বলতে পারে না।সব কিছু মনের ভেতর গোপন করতে করতে নিজেই ভেতর থেকে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।যেই ভয় ধীরে ধীরে এতগুলো বছর বুকে জমে জমে স্তুপ হয়েছে তা যেনো আরো ভারী হয়ে উঠছে ক্রমশ।রূপকথা আর সারফরাজ এর বিষয়টা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।সন্তানের ভালো চাওয়া অন্যায় নয়।হোক রূপকথা অন্য কারো সন্তান কিন্তু সুফিয়ান চৌধুরী তো তাকে পেলে পুষে বড় করেছেন।নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবেসেছেন।নিজ সন্তানের মতোই আদর যত্ন করেছেন।বাবা হিসেবে দায়িত্ব পালনেও করেননি একবিন্দু গাফিলতি।তবে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কেনো পালন করতে পারবেন না?
“শেষ পর্যন্ত আমাকে এভাবে নিঃস্ব করতে ফিরে এলি তুই সারফরাজ?তোর মতো হৃদয় হীন মানুষ আদেও আরেকটা মানুষকে ভালো বাসতে পারে?কিন্তু আমি বাবা হয়ে কি করে মেয়েকে বলি হতে দিবো বল?
রূপকথার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ কল্পনা করেই চোখ ফেটে জল গড়াতে চাইলো সুফিয়ান চৌধুরীর।কিন্তু নিজেকে কঠিন শিকলে বেঁধে চোয়াল চেপে নিজেকে সামলে মনে মনে বলে উঠলেন
“তোকে আমি রূপকথার ছায়াও মাড়াতে দেবো না সারফরাজ।মেয়েকে রক্ষার জন্য যদি সত্যিই এবার তোর হাতে প্রাণ খোয়াতে হয় তবে আমি রাজি।
“স্যার!
হঠাৎ আবিরের গলায় অল্প চোখ খুললেন সুফিয়ান চৌধুরী।এরপর নড়েচড়ে বসে ধীর গলায় ডাকলেন
“আরে আবির,এসো বসো।
এস আই আবির সুফিয়ান চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়ে অল্প গলা খাকরি দিয়ে বলে উঠলো
“সেদিন সারফরাজ কে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচানো ঠিক হয়নি স্যার।বয়সে ছোট ছিলাম নতুন চাকুরিতে পদার্পণ তাই ওতোকিছু বুঝিনি।আজকের মত বুঝদার হলে আপনাকে অতবড় রিস্ক নিতে দিতাম না আমি।
বলেই মাথা নত করলো আবির।সুফিয়ান আবিরের পানে কিছুক্ষন অসহায় তাকিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে শুধালো
“এতগুলো বছর বাদে সৃষ্টি কর্তার কৃপায় বাবা হবার অনুভূতি কেমন বোধ করছো?
আবির বুঝলো কমিশনার রূপকথা আর সারফরাজ কে নিয়ে কোনো কথা বলতে চাইছেন না।তাই সেও প্রসঙ্গ পাল্টে জবাব দিলো
“আনন্দের চাইতে ভয় বেশি হচ্ছে স্যার।কারন বাবাদের অনেক দায়িত্ব।
কমিশনার সুফিয়ান আলগোছে উঠে দাঁড়িয়ে আবিরের কাঁধ চাপড়ালেন।এরপর সাহস দিয়ে বললেন
“বাবারা হয় সুপার হিরো।বিপদ আসবেই।কিন্তু সন্তানকে সুরুক্ষার দায়িত্ব বাবার।সন্তানের জন্য বাবাদের হতে হয় সিংহের মতো হিংস্র বুঝলে?
আবির মাথা নাড়ালো।কমিশনার পুনরায় বললো
“ক’টার ট্রেনের টিকিট কেটেছো?আর আসবাব পত্রের ট্রাকের সাথে কে যাবে?
আবির ঘড়িতে সময় পরখ করে বললো
“বিকেল পাঁচটায় সোনার বাংলায়।আসবাব পত্রের সাথে কনস্টেবল মহিদুল যাবে।কমলাপুর নেমেই নতুন কার্যালয়ের এসপি মাহিদ সারোয়ার আপনাকে রিসিভ করে কমিশনার বাংলোতে নিয়ে যাবে।
সুফিয়ান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে উঠলো
“খুব শীঘ্রই বদলি হয়ে ঢাকা এসো আবির।নয়তো একা অনুভূত হবে আমার।তোমার সাথে মন খুলে কথা বলে আত্মিক শান্তি পাই।
কথাটি কেমন অসহায় এর ন্যয় বললেন সুফিয়ান।আবির মাহতাব মাথা ঝাকিয়ে আশ্বাস দিয়ে জবাব দিলো
“সিউর স্যার।
সার্পেন্ট বায়ো ল্যাব,পূর্বাচল,ঢাকা
সার্পেন্ট বায়ো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি খুবই পরিচিত একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি।পূর্বাচল এর বিশাল বড় জায়গা নিয়ে বছর দুই আগেই নির্মাণ হয়েছে এই কোম্পানি।বাংলাদেশ সহ বিশ্বের আরো কয়েকটা দেশে নিজেদের শাখা খুলে রাতারাতি সুনাম কামিয়ে চলেছে সার্পেন্ট বায়ো ল্যাব।কিন্তু প্রধান শাখা ক্যালিফোর্নিয়ায়।এতো নামীদামী কোম্পানি অথচ কেউ জানেনা এই কোম্পানির মালিক কে?প্রথম দু বছর এই কোম্পানি ভালো বিজনেস করলেও হঠাৎ সমালোচনার তোপে পরে যায়।কোনো এক সাতাশ বছর বয়সী সাহসী সাংবাদিক তার ক্রাইম রিপোর্ট এ এই কোম্পানি সম্পর্কে তুলে ধরেন কিছু ভয়ানক তথ্য।এই কোম্পানির ‘নিউরো-ড্রিম’ নামের একটি এক্সপেরিমেন্টাল ড্রাগ কালো বাজারে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।
এই ড্রাগ নাকি মানুষকে ‘আত্মিক সুখ’ এনে দেয়, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট ডোজ পার হলেই সেটাই ভয়ানক সাইকোসিস তৈরি করে। আইনত এটা নিষিদ্ধ, কিন্তু লুকিয়ে কর্পোরেট ভাবে উৎপাদন চলছেই।অল্প বয়সী ছেলে মেয়ে,ভার্সিটির স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে হীনমন্যতায় ভোগা মানুষ জন বেশি ক্রয় করছে এই মেডিসিন।সেই সাথে ধীরে ধীরে বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিত মৃত্যু ঝুঁকি।তবে এসবের পেছনের মূল হোতা কে সেটা খোঁজে বের করাই যেনো দুষ্কর।কিন্তু উত্তাল প্রশাসন হুট করেই মুখে কুলুপ এঁটে নিলো। সাংবাদিক নিঝুম ইয়াসমিন এর সমস্ত রিপোর্ট মিথ্যাচার এবং নিউরো ড্রিম কোনো ক্ষতিকর মেডিসিন নয় এই মন্তব্য জারি করে দমিয়ে দেয়া হলো সাতাশ বছর বয়সী এই ক্রাইম ইনভেস্টিগেট তরুণী সাংবাদিক কে।কিন্তু থেমে রইলো না সে।পুরো উদ্দমে এই ড্রাগ সম্পর্কে স্ট্রং এভিডেন্স যোগারে তৎপর হলো।
কিন্তু এই টুকুন একটা মেয়ে এতো সাহস কোথায় পেলো?কে কলকাঠি নাড়ছে এই মেয়ের পেছনে?
“ডক্টর রুদ্র আপনি কোম্পানির শেয়ার বিদেশি কোম্পানির কাছে ইমিডিয়েটলি বিক্রি করে দিন।নয়তো আপনার সকল ইল্লেগ্যাল বিজনেস ক্লোজ হবে অচিরেই।বুঝতেই পারছেন জনগন সাংবাদিক মেয়েটির পাশে আছে।
কথাটি বলেই সাফিন হায়দার গলার টাই এর নট ঠিক করতে ব্যস্ত হলো।সাফিন হায়দার এর মুখ পানে তাকিয়ে রুদ্র দাঁত কটমটিয়ে উত্তর করলো
“এক দিন দুদিনের প্রজেক্ট নয় এটা।কতো কোটি কোটি ডলার খরচ হয়েছে এটার পেছনে হিসেব করেছেন কখনো?আপনাদের গাফিলতির জন্যই এসব হচ্ছে।নয়তো এতোবড় সত্য উন্মোচন হলো কি করে?
রুদ্রের ধমকে ধীর লয়ে সাফিন হায়দার উত্তর করলেন
“আপনি ভুল বুঝছেন ডক্টর।কোম্পানি তে এমন কেউ নেই যে ,ভেতরের তথ্য লিক করবে।
“তাহলে এই মেয়ে জানলো কি করে?ভুত এসে তার কানে কানে বলে গিয়েছে?
সাফিন হায়দার কোনো উত্তর না করে মাথা নিচু করে বসে রইলো।রুদ্রের চোখ জোড়া কেমন আগুনের ন্যয় জ্বলছে।ঠোঁটে একটা সিগারেট ঠুসে লাইটার দিয়ে আগুন ধরাতে ধরাতে রুদ্র বললো
“কোম্পানির শেয়ার চেঞ্জ করার ব্যবস্থা করুন।ডেভিল কিং কোম্পানির হয়ে আমি শেয়ার কিনে নেবো।আমার কোম্পানির শেয়ার অন্য কারো কাছে আমি কখনোই বিক্রি করবো না।আপাতত শো অফ করার জন্য বড় বড় বিজনেস ম্যান দের আমন্ত্রণ করুন।সার্পেন্ট ল্যাব এর শেয়ার কেনার টাকা বাংলাদেশ এর বিজনেস ম্যান দের অবশ্যই হয়নি।
বলেই বাঁকা হেসে হাতের ইশারায় সাফিন হায়দার কে চলে যেতে ঈশারা করলো রুদ্ররাজ।সম্মতি জানিয়ে সাফিন হায়দার চলে যেতেই তিতকুটে বিস্বাদ সিগারেট অ্যাসট্রেতে চেপে উঠে দাঁড়ালো রুদ্র।এরপর নিজের পার্সোনাল হ্যাকার ড্যাভিন কে কল করলো
“Find out who is helping the girl.”
ঢাকার স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেটে রুদ্ররাজ এর সার্পেন্ট বায়ো ল্যাব এর শেয়ার নিলামে তোলা হয়েছে।আশ পাশের মানুষ জন পারলে রুদ্রকে মাথায় তুলে রাখে এমন দৃশ্য নজরে লাগছে।সবাই যে টাকা খেয়ে ভুঁড়ি ভার করেছে তা স্টক এক্সচেঞ্জ এর মানুষদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে।বিভিন্ন দেশের ডন মাফিয়া এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে।দাম হাঁকানো মাত্র কিনে নেবে এই ড্রিম প্রোপার্টি।নামি দামি বিজনেস ম্যান সবাই সবাইকে চোখে চোখে তিরস্কার করছে।কিন্তু ফাইনাল চেকমেট কে করবে কে জানে?
ল্যাপটপের স্ক্রিনে নিখুঁত দৃষ্টি তাক করে রেখেছে উপস্থিত অতিথি।পরনের বেশ ভূষা আর আভিজাত্য বলে দিচ্ছে কে কার উপরে।ভেতরে ভেতরে কেউ কারো থেকে হিংস্রতায় কম নয়।প্রভাব প্রতিপত্তি আর টাকা পয়সাও আকাশ চুম্বী।
আবছা আধার আর হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি চিড়ে সাই সাই গতিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এর সামনে দাঁড়ালো সারফরাজ এর কুচকুচে কালো রঙা রোলস বয়েস।গাড়ি তো নয় যেনো ভয়ানক অন্ধকারাচ্ছন্ন এক ত্রাস।সারফরাজ এর গাড়ি দেখে স্টক মার্কেটের সকলের চোখ কপালে উঠার উপক্রম।কারন বাংলাদেশ এর কাস্টমাইজড করা এটাই সবচেয়ে দামি গাড়ি।গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশের দরজা খোলে প্রথমে বেরিয়ে এলো অভিরূপ।গায়ে জড়ানো কালো ব্ল্যাক সুট ।অভিরূপ দৌড়ে গিয়ে খোলে দিলো পেছনের দরজা।এরপর সেই দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।ফকফকে সোডিয়াম লাইটের আলো ঠেলে বেরিয়ে এলো কালো ফরমাল পোশাকে আবৃত সারফরাজ।নীল চোখ দুটো ঠান্ডা,শীতল স্থির।তাদের গভীরতা অনেক।চোখ দুটোর কঠিন ভাষা পড়তে ব্যর্থ হলো আশপাশে দাঁড়ানো মানুষ জন।
গাড়ি থেকে নেমে নিজের নিজের পোশাক থিক করে থুতনিতে অল্প চুলকিয়ে বাঁকা হাসলো সারফরাজ।এরপর হাতে থাকা সিগারেট বক্স থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে ধরলো।লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে অভিরূপ কে চোখের ইশারা করলো।
ইশারা পেতেই দৌড়ে গিয়ে গাড়ির ডিকি খুললো অভিরূপ।এরপর ডিকি থেকে টেনে হিচড়ে বের করে আনলো বড় বড় তিনটে লাগেজ।অভিরূপ কে ফেলে ভেতরের সিঁড়ি ধরলো সারফরাজ।উঁচু প্রশস্ত বক্ষ আর শক্ত চোয়ালে এগিয়ে চললো এই কঠিন পুরুষ।চোখ মুখের দৃঢ়তা প্রমান করে দিচ্ছে খিলাড়ি বহুত পুরোনো।
ইতোমধ্যে শেয়ার এর দাম হাঁকা শুরু হয়ে গেছে।শেয়ার খরিদ দারের আসনে শক্ত মুখে বসে আছে রুদ্ররাজ।চোখে তার আত্মবিশ্বাস এর ছায়া স্পষ্ট।ঠোঁটের কোণে বিজয়ী হাসি।বিদেশি ব্যবসায়ীরা নিজেদের দাম বলে চলেছে অবলীলায়।একশত কোটি থেকে শুরু হলো নিলাম।ধীরে ধীরে দাম ঠেকলো ছয় শত কোটিতে।চতুর সাফিন হায়দার ঠোঁটে কপট হাসি মেখে হ্যান্ড মাইকে বলে উঠলো
“ছয় শত কোটি এক, ছয়শত কোটি দুই।
সাফিন হায়দারের কথা শেষ হতে না হতেই রুদ্ররাজ দাঁড়িয়ে বলে উঠলো
“আট শত কোটি।
রুদ্ররাজ এর মুখে টাকার এমাউন্ট শুনে উপস্থিত সকলের চোখ ছানা বড়া হলো।কিন্তু ভাবলেস হীন রইলো রুদ্র।যেনো এই কটা টাকা তার বা হাতের ময়লা।রুদ্র এক পলক চারপাশের মানুষ জনকে দেখে মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো
“ডেভিল কিং কোম্পানীর পক্ষ থেকে এই শেয়ার কিনতে চাই আমি।
রুদ্ররাজ এর শক্ত গম্ভীর ভরাট কন্ঠে উপস্থিত সকলেই রুদ্রের পানে নজর দিলো।ডেভিল কিং কোম্পানির নাম বহু বার শুনেছে তারা।কিন্তু তার মালিক কে কখনো দেখা হয়নি।হাঁটুর বয়সী সুদর্শন গাম্ভীর্য পূর্ণ এই যুবককে দেখে সকলের চোখে অবিশ্বাস্যের আভা ফুটে উঠলো।
“নেহাত নিজ পরিশ্রমে এতো নাম ধাম নাকি পূর্বপুরুষ এর দেয়া প্রতিপত্তি?
সকলের চিন্তা ভাবনার সুতো ছিঁড়ে সাফিন হায়দার উচ্ছসিত স্বরে হাঁক ছাড়লো
“আটশত কোটি এক,আট শত কোটি দুই,আট শত কোটি তি….
সাফিন হায়দার এর বিড শেষ হবার আগেই চূড়ান্ত উত্তেজনাকে আরো হাজার গুণ বাড়িয়ে সারফরাজ সম্মোহনী গলায় সিগারেট এর ধুয়া উড়িয়ে বলে উঠলো
“সিক্সটিন হান্ড্রেড ক্রোর।এন্ড আই থিংক নো ওয়ান এলস হ্যাজ দ্যা এবিলিটি টু বাই সাচ অ্যা মোডেস্ট প্রোপার্টি ফর দিজ মাচ মানি।
সারফরাজ এর কন্ঠে বসা থেকে তড়িৎ উঠে দাঁড়ালো রুদ্ররাজ।এহেন মুহূর্তে সারফরাজ এর আগমন তার কাছে দুঃসপ্নের ন্যয় ঠেকলো।মস্তিষ্কের ক্রোধ লাগাম হীন হিংস্র হয়ে বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে চাইলো।এদিকে সারফরাজ এর বিড শুনে উপস্থিত সকলেই দাঁড়িয়ে গেলো।সেই সাথে শুরু হলো উত্তেজিত গুঞ্জন।সারফরাজ রুদ্ররাজ এর হিংস্র মুখের পানে তাকিয়ে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।এরপর রয়ে সয়ে ঠেস দিয়ে বলে উঠলো
“সো টেল মি,ডিড আই স্যা এনিথিং রঙ?
সকলেই সারফরাজ এর প্রশ্নে মাথা নাড়লো।তাতে প্রশস্ত হেসে সারফরাজ নাটকীয় গলায় তাচ্ছিল্য হেসে রুদ্রকে চোখ টিপে বলে উঠলো।।
“দিজ প্রোপার্টি ইজ মাইন।
সারফরাজ শেয়ার মালিকানা নিজের দাবি করতেই সাফিন হায়দার হাত তালি দিয়ে গুনলো
“এক দুই তিন।
প্রতিপক্ষ কেউ দাম বাড়ানোর মতো দুঃসাহস দেখালো না।রুদ্ররাজ যেনো কথা বলার ভাষা হারালো।সে চোখে মুখে জ্বলন্ত অঙ্গার নিয়ে সারফরাজ এর সামনে দাঁড়ালো।
“আগুন নিয়ে খেলছিস।পুড়ে যাবি বলে দিলাম।
চেকমেট পর্ব ২৮
রুদ্রের হুমকিতে সারফরাজ শব্দ করে হাসলো।পুরো হল রুমের দেয়ালে দেয়ালে বাড়ি খেলো সেই ভয়ানক হাসি।নিজের হাসি কোনো মতে নিয়ন্ত্রণে এনে রুদ্রের শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে উঠলো
“আমি নিজেই আগুন।তুই আর আমাকে কি পোড়াবি রুদ্ররাজ?নিজেই তো ছাই হয়ে যাচ্ছিস।আমাকে পোড়ানোর আগে তোর নিভে যাওয়া ছাই আমি বাতাসে উড়িয়ে দেবো।এবং খুব শীঘ্রই।