চেকমেট পর্ব ৩
সারিকা হোসাইন
সারফরাজ এর আনা চকলেট আইসক্রিম দুই হাতে মাখিয়ে খাটের উপর বসে বসে খাচ্ছে আর পা দোলাচ্ছে রূপকথা।মেঝেতে বসে বসে সেই দৃশ্য দেখে খানিক হাসলো সারফরাজ।এরপর আদুরে কন্ঠে বললো
“মজা?
তড়িৎ মাথা ঝাঁকালো রূপকথা।এরপর নিজের আধ খাওয়া একটা চকলেট সারফরাজ এর মুখের সামনে ধরে ছোট ছোট দাঁত বের করে ভুবন ভোলানো হেসে বললো
“খাও।
আকস্মিক এমন কাণ্ডে ভড়কে গেলো সারফরাজ।এরপর গলে পরা চকলেট এর উপর নজর বুলালো।কিছুক্ষন আগেই এটা চেটে চেটে খেয়েছে রূপকথা।চকলেট ফেলে এবার রূপকথার পানে নজর দিলো সারফরাজ।পুরো গাল মুখ মাখিয়ে খেয়েছে সে।মেয়েটির পুরো মুখশ্রী দেখে অদ্ভুত মায়া হলো সারফরাজের।হয়তো মেয়েটির মা বেঁচে থাকলে আদরে যত্নে তুলে তুলে খাবার খাওয়াতো ।তপ্ত কম্পিত শ্বাস ফেলে একটা টিস্যু দিয়ে রূপকথার তুলতুলে মুখশ্রী মুছতে মুছতে সারফরাজ বললো
“আমি চকলেট খাই না।তুমি খাও।চকলেট খেলে দাঁতে পোকা হয়।
সারফরাজ এর কথায় ভ্রু কুঁচকে খাওয়া থামিয়ে রূপকথা বললো
“তুমিও মাম্মার মতো মিথ্যে বলছো নাহ?পাপা বলেছে দাঁত ব্রাশ করলে সব পোকা মরে যায়।
আর কথা বাড়ালো না সারফরাজ।কিছুক্ষণ উশখুশ করে ধীর কন্ঠে সারফরাজ বললো
“আচ্ছা তোমার বাবা মায়ের জন্য তোমার খারাপ লাগে না?
হাতের চকলেট পুরোটা খাওয়া শেষ করে আঙ্গুল চাটতে চাটতে রূপকথা বললো
“লাগে।
“তোমার মা বাবা কোথায় আছে তুমি জানো?
মাথা ঝাঁকালো রূপকথা।সে জানে।সারফরাজ অধীর হয়ে শুধালো
“কোথায় আছে?
খোলা জানালায় আঙ্গুল তাক করে ভাঙা কন্ঠে রূপকথা বললো
“আকাশের তারা হয়ে গেছে”
কথাটি বলেই জোরে কেঁদে উঠলো।মেয়েটির কান্নায় সারফরাজ নিজেও ব্যথিত হলো।এরপর মেঝে থেকে উঠে গিয়ে রূপকথাকে কোলে তুলে নিয়ে বুকে জড়ালো।রূপকথা সারফরাজ এর গলা জড়িয়ে ধরে বলল
“মাম্মার পেটে আমার ছোট ভাই ছিলো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
মেয়েটির বড় বড় চোখ বেয়ে টপটপ করে জল ঝড়ছে।সারফরাজ সেই চোখের জল মুছে বললো
“কেঁদোনা রূপকথা।এখানে বড় বড় মনস্টার আছে।কান্নার শব্দ শুনে এখানে এসে তোমায় খেয়ে নেবে।তখন তুমিও আকাশের তারা হয়ে যাবে।
সারফরাজ এর কথায় ধীরে ধীরে কান্না থামালো রূপকথা।এই টুকুন বয়সে তার জীবন গতিহীন,গন্তব্য হীন হয়েছে।তার বাকী জীবন কিভাবে চলবে সে বিষয়েও সে কিচ্ছুটি জানে না।সারফরাজ হীন তার যাবার জায়গাও নেই।কোনো দিন কোনো আত্মীয় স্বজন ও দেখেনি সে।হয়তো নেই।তবে কোথায় যাবে সে?সারফরাজ নিজেও চিন্তিত রূপকথাকে নিয়ে।এভাবে বদ্ধ ঘরে মেয়েটিকে কতোদিন বন্দি করে রাখবে সে?ছোট বাচ্চা পাখা মেলে পুরো বাড়ি বিচরণ করবে।সেখানে একটা বদ্ধ ঘরেই তার চলাচল সীমাবদ্ধ হয়েছে।খারাপ উশৃংখল ছেলে পেলে দিয়ে ভরা সুবহান গং এর হাবেলি।প্রত্যেকটা মানুষ এখানে নির্দয়,হৃদয় হীন।টাকা,ক্ষমতা আর শারীরিক সুখের কাছে এরা নিজেদের বিবেক বেঁচে দিয়েছে সস্তা মূল্যে।দিনের বেলা চুরি,ছিনতাই,খুন আর রাতের বেলায় মাতাল হয়ে পুরো হাবেলি জুড়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে ঘুরে বেড়ায়।এখানে এমন নিকৃষ্ট কিছু পুরুষ আছে যারা নষ্টা মেয়ে মানুষ নিয়ে ঘরের ভেতর অপকর্মে লিপ্ত হয়।এমন একটা পাপের সাম্রাজ্যে এমন ছোট নিষ্পাপ রাজকুমারী অবহেলায় ফেলে রাখতে পারে না সারফরাজ।কিন্তু মেয়েটিকে কার কাছে রাখবে সে?
সারফরাজ এর ভাবনার মাঝে রূপকথা ডেকে উঠলো
“আমার ঘুম পেয়েছে।
নিজের ছোট সিঙ্গেল বিছানা ঝেড়ে ঝুড়ে সারফরাজ বালিশ পেতে বললো
“ঘুমাও।
“এভাবে ঘুমাই না।
“তো কিভাবে ঘুমাও?
“গান গাও
এবার মহা ফ্যাসাদে পরলো সারফরাজ।কি গান গাইবে সে?আর তার যেই গলা একদম ফাঁটা বাঁশের মতো গমগমে।এই বেসুরে গলায় গান গাইলে ঘুম আসার পরিবর্তে ঘুম চিৎকার করে পালাবে।
রূপকথা কে চুলে বিলি কেটে সারফরাজ বললো
“আমি কোনো গান জানিনা।চুল টেনে দিচ্ছি ঘুমাও।
কিন্তু নাছোড়বান্দা রূপকথা।তার গান না শুনলে ঘুম হবে না।এবার নিজের কপালে চাপর মারলো সারফরাজ।এরপর কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে ধীর গলায় গাইলো
“টুইঙ্কেল টুইঙ্কেল লিটল স্টার…..
গুনগুনিয়ে গান ধরতেই দু মিনিটের ব্যবধানে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো রূপকথা।কিন্তু হৃদয় দগ্ধ হলো সারফরাজ এর।চেপে রাখা কান্নায় বুক ভার হয়ে গলা বিষিয়ে উঠলো।নিজের মায়ের সুন্দর মুখশ্রী আর সমধুর গলায় ছড়া কেটে ঘুম আনানোর স্মৃতি মনে পড়তেই আকাশি চোখ দুটো রক্ত বর্ণ হলো।নিভৃতে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো নিখুঁত গাল বেয়ে।ধীরপায়ে মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ালো সারফরাজ।বেলকনির দিকে পা বাড়াতেই থেমে গেলো।রূপকথা শক্ত হাতে তার শার্ট টেনে ধরে আছে।আলগোছে সেই শার্ট ছাড়িয়ে বারান্দায় এসে হাহাকার ভরা নয়নে খোলা আকাশে দৃষ্টি মেললো সারফরাজ।এরপর কষ্ট মিশ্রিত কন্ঠে বললো
“আমি আজো রাতে ঘুমাতে পারি না আম্মু।আমার কানে তোমার সুর বেজে উঠে।মনে হয় এই বুঝি তুমি আমাকে ডাকছো।আমি এখনো তোমার স্পর্শ অনুভব করতে পারি।তুমি কোথায় আছো আম্মু?দেখো তোমাকে ছাড়া তোমার রাজ ভালো নেই।কোথায় তোমাকে না খুঁজেছি?
কথা গুলো বলতে বলতে ফুঁপিয়ে মুখ চেপে কেঁদে উঠলো সারফরাজ।কিছুক্ষন পর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠলো
“তুমি চিন্তা করো না আম্মু।পাতাল থেকে হলেও তোমাকে তোমার ছেলে খুঁজে বের করবে।আমি জানি তুমি এখনো বেঁচে আছো।
খুব সকাল বেলা নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সারফরাজ।রূপকথা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।ছোট মানুষের ঘুম বোধ হয় একটু বেশীই।সারফরাজ মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গেলো।এরপর এক মগ ব্ল্যাক কফি নিয়ে ছাদে চলে গেলো।স্নিগ্ধ মনোরম এই সকাল বেলা সুবহান গং ছাদেই থাকেন।প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেন।এক পা দু পা করে সারফরাজ ছাদে উঠলো।ছাদের এক কোনে পাতানো চেয়ার টেবিলে দাবার গুটি সাজিয়ে নিজে নিজেই খেলে চলেছেন সুবহান।আজকাল রাতে ঘুম হয় না তার।বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ঘুম চলে যায়।সেই সাথে রুচি উঠে যায় সমস্ত কিছুর উপর থেকে।কিন্তু টাকার স্বাদ ভিন্ন।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এর রুচি দূর হয়না।
কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে সুবহান গং এর খেলা উপভোগ করলো সারফরাজ।দাবা খেলা বেশ পছন্দ করেন সুবহান।তার মতে যারা বুদ্ধিমান আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী তাদের পছন্দের খেলা হচ্ছে দাবা।সুবহান গং নিজেকে চূড়ান্ত জ্ঞানী মনে করেন।এই বিষয়ে সারফরাজ তাচ্ছিল্য হাসে।যারা জ্ঞানী তারা কখনো নিজেকে জাহির করে না।সে যাই হোক কফিতে অল্প চুমুক দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে সুবহান এর সামনে গিয়ে বসল সারফরাজ।খেলা ভালোই জমিয়েছেন সুবহান।কিন্তু খেলার রুল ভঙ্গ করে খেলছেন তিনি।নিজেকে জেতানোই যেনো তার মুখ্য উদ্দেশ্য।কফি মগ রেখে সারফরাজ ঘোড়া গুটি হাতে তুলে নিলো।এরপর দুই ঘর ডিঙিয়ে সুবহান গং এর একটা গুটি খেয়ে ফেললো।
আকস্মিক এমন আক্রমণে সুবহান কপাল কুঁচকে ফেললেন।এরপর শুধালেন
“কবে থেকে জানিস এই খেলা?
বাঁকা হেসে সারফরাজ বললো
“আট বছর বয়স থেকে।
“তোর বাবা দাবা খেলতেন?
মাথা ঝাকিয়ে আরেকটা গুটি খেয়ে নিলো সরফরাজ।এরপর উত্তর করলো
“সেরা দাবাড়ু ছিলেন তিনি।
আরো কিছু প্রশ্নের আগ্রহ প্রকাশ করলেন সুবহান।এই ছেলে সম্পর্কে জানার ইচ্ছে তার বহু দিনের।কিন্তু সুযোগ দিলো না সারফরাজ।সে তার গমগমে কন্ঠে সুবহান কে থামিয়ে বলে উঠলো
,―খেলায় মনোযোগ দিন দাদাজান।আপনি হেরে যাচ্ছেন।
কথাটা গায়ে লাগলো সুবহান এর।সে কখনো হারতে শিখেনি।জীবনে জিত ছাড়া কোনো হার নেই তার।হাঁটুর বয়সী এই ছেলের কাছে তো আরো নয়।
ধীরে ধীরে খেলা জমলো।টান টান উত্তেজনা দুজনের মধ্যে।সাদা গুটি নিয়ে বেশ গর্ব সুবহান এর।কিন্তু সেই গর্ব খর্ব করলো সারফরাজ।সুবহান এর রাজাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলো সারফরাজ।সমস্ত পথ বদ্ধ।নিজের অদ্ভুত ভয়ানক চোখ দিয়ে সুবহান এর বিধ্বস্ত চেহারা একবার পরখ করলো সারফরাজ।এরপর স্মিত হেসে আওড়ালো
“চেক।
সারফরাজ এর হুমকিতে মাথার রক্ত টগবগ করছে সুবহানের।জীবনে প্রথম বার তার হার হতে যাচ্ছে।কোনো ভাবেই চেক কাটাতে পারবে না সুবহান।এদিকে সারফরাজ এর মুখে ক্রুর হাসি।সুবহান হার মানতে বাধ্য।নিজের মন্ত্রী দিয়ে সুবহান এর রাজা কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে সারফরাজ ভারী গলায় বলে উঠলো
“চেকমেট।
দাবার গুটির পতনের সাথে সাথে সুবহান এর সমস্ত দম্ভ অহংকার, তেজ আর ক্রোধ যেনো মাটিতে গুঁড়িয়ে গেলো।অধিক ক্রোধে কাঁপতে কাঁপতে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো
“কি চাস?
এমন প্রশ্নের অপেক্ষাতেই যেনো ছিলো সারফরাজ।প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুঁজে সেও উঠে এলো।এরপর শুধালো
“ক্যাপ্টেন কে মারলেন কেনো?
রেলিং খামচে ধরে নিজের ক্রোধ নিবারণ করলেন সুবহান।এরপর বললেন
“আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলানোর অধিকার তোকে আমি দেইনি সারফরাজ।
ভাবলেশহীন হয়ে সারফরাজ বললো
“উনি অনেক ভালো মানুষ ছিলেন সেই সাথে ছিলেন সৎ।তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।তাদের ছোট একটা বাচ্চাও ছিলো। পুরো পরিবার শেষ করা কি ভীষণ জরুরি ছিলো?
এবার ঘুরে তাকালেন সুবহান।এরপর দ্রুত পদে এগিয়ে এসে সারফরাজ এর শার্টের কলার চেপে ধরে ধমকে উঠলেন
,”কলিজা অনেক বড় হয়ে গেছে তোর তাই না?
সুবহান এর চোখে চোখ রেখে সারফরাজ বললো
“যেই এতিম বাচ্চাটা আমার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে ওই ক্যাপ্টেন এর মেয়ে।এমন নিষ্পাপ বাচ্চার চেহারা দেখে আপনার বুক কাঁপে না দাদাজান??অপরাধ বোধ জাগে না?ভোলাভালা বাচ্চাটা বাবা মা হারিয়ে কিভাবে বেঁচে আছে তার খুজ নিয়ে ছিলেন কখনো?
হাতের বাঁধন আলগা হয় সুবহানের।আলগোছে সারফরাজ এর কলার ছেড়ে দিয়ে কম্পিত কন্ঠে বলে উঠে
“আমাকে পুলিশের ভয় দেখিয়েছিলো ওই ক্যাপ্টেন।বারবার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলো।কোটি টাকার মাল সিস করে থানায় ধরিয়ে দিয়েছিলো।ওসি আমার পালতু কুত্তা না হলে তুই সহ লেকচার দেবার জন্য অবশিষ্ট থাকতি না এখানে।ঐযে দামি কফি গিলছিস তার বদলে লাল আটার বালু ওয়ালা কিরকিরে রুটি আর ডাল চিবুতে হতো ।বুঝেছিস কি বলেছি?
সুবহানের কথায় প্রশস্ত হাসে সারফরাজ।এরপর বলে উঠে
“এভাবে কতো জনের রক্তে আপনার হাত লাল হয়েছে দাদাজান?
মাথা উঁচু করে সারফরাজ এর পানে তাকিয়ে রয় সুবহান।কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারে না।সে উত্তর দিতেও চায় না।নিজের ব্যাক্তিগত ব্যাপারে অন্যের কাছে জবাবদিহিতা করতে মোটেও পছন্দ নয় তার।উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলো না সারফরাজ।পিছন ফিরে হাটা ধরলো।এমন সময় গম্ভীর গলায় সুবহান বলে উঠলেন
“মেয়েটাকে আমার চোখের সামনে থেকে বিদেয় কর সারফরাজ।নয়তো একেও দুনিয়া ছাড়া করতে এক মিনিট ভাববো না আমি।বড় হয়ে এও যে বাপের প্রতিশোধ নিতে ফুঁসে উঠবে না তার কি গ্যারান্টি?অযথা একটা বাচ্চার জন্য কেনো আমার সাথে তোর সম্পর্ক খারাপ করছিস?ভুলে জাসনা তোকে আমি রাস্তা থেকে তুলে এনে এখানে জায়গা দিয়েছি।খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি।নুন খেলে গুন গাইতে হয় জানিস তো নাকি?
পায়ের গতি দ্বিগুন করে ফিরে এলো আবার সারফরাজ। নিম্নভাগের লালচে ঠোঁট কামড়ে ধরে বাঁকা হাসলো।এরপর ঠান্ডা ভয়ানক গলায় বললো
“নুন যা খেয়েছি তার হাজার গুণ আপনাকে ফেরত দিয়েছি দাদাজান।আর রইলো ওই বাচ্চাকে শেষ করা।ওই বাচ্চার সাথে যতক্ষন আমি আছি ততক্ষণ আপনি কেনো?আপনার মরা বাপ কবর থেকে উঠে এসেও কিচ্ছুটি বাঁকাতে পারবে না।কারন আমি ঐ মেয়ের শেল্টার হয়ে সামনে দাঁড়াবো।আর দ্বিতীয় বার যদি ঐ মেয়েকে নিয়ে এমন ভাবনা ভেবেছেন আপনার মন আমি জ্বালিয়ে ছাই করবো দাদাজান।
সারফরাজ এর হুমকিতে থরথর করে কেঁপে উঠলেন সুবহান।বার বার তার মনে হয় কোথায় যেনো এমন গলার স্বর এমন হুমকি তিনি শুনেছেন।কিন্তু মনে করতে পারেন না।মাঝে মধ্যেই সারফরাজ কে প্রচন্ড ভয় লাগে তার।মনে হয় সারফরাজ তার জম।মনের ভেতরে পশু সত্ত্বা বার বার চিৎকার করে বলে উঠে
“শেষ করে দে এই ছেলেকে।নয়তো এই ছেলেই একদিন তোর নাম,তোর সাম্রাজ্য ধুলোয় মিশিয়ে দেবে এক তুবড়িতে।
তবুও সুবহান পারে না।কেমন অদ্ভুত এক মায়া তাকে আকড়ে ধরে আছে।কি সেই মায়া?
রাতের আধার গ্রাস করেছে চারিধার।ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা বেজে কুড়ি মিনিট।পুরো হাবেলি নিস্তব্ধ নীরব।দূর থেকে কেমন ভয়ানক এক পাখির আর্তনাদ ভেসে আসছে।চারপাশ গুমোট উত্তপ্ত।হয়তো রাতে কোনো ঝড় আঘাত হানবে।কি নাম সেই ঝড়ের?
মদের বোতল হাতে নিয়ে টলতে টলতে সারফরাজ এর ঘরের সামনে এসে দাড়ালো মাসুদ।সারফরাজ বাড়িতে নেই।মাসুদ নিজ চোখে দেখেছে।সারফরাজ এর আনা নাদুস নুদুস মেয়েটার প্রতি বড্ড লোভ হয়েছে মাসুদের।কিন্তু সারফরাজ এর ভয়ে আধারে ঘেঁষতেই পারে না সে।কেমন হিংস্র বন্য শুয়োরের মতো ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে সারফরাজ।
মাসুদ মনে মনে ভাবে সারফরাজ নিজের খায়েশ মেটানোর জন্য এই মেয়েকে এনেছে।মেয়ে মানুষের আবার ছোট বড় আছে নাকি?এই সারফরাজ বড্ড চতুর।মুখে ভালো মানুষের ভান ধরে থাকে।কিন্তু ভেতরে আস্ত এক জানোয়ার।
নিজের গরম মাথা শীতল করতে দরজায় কড়া নাড়ে মাসুদ।একবার দুবার বার বার।মাসুদের কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় রুপকথার।সারফরাজ ভেবে ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলতেই মাসুদ হুমড়ি খেয়ে পড়ে রূপকথার উপর।কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই রূপকথার গালে এক কামড় বসিয়ে দেয় মাসুদ।ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে রূপকথা।ঝটপট এক হাতে রূপকথার মুখ চেপে ধরে নিজের কাপড় খুলতে তৎপর হয় মাসুদ।কিন্তু তার আগেই কেউ বলিষ্ঠ হাতে মাসুদের গলা চেপে ধরে।শ্বাস রোধ হয়ে সমস্ত তেজ যেনো নিমিষেই গায়েব হলো মাসুদের।নিজের সর্বস্ব দিয়ে মাসুদকে ছুড়ে ফেলে রূপকথা কে বুকে টেনে নেয় সারফরাজ।এরপর ভীত রূপকথা কে বিছানায় বসিয়ে সারফরাজ বলে উঠে
চেকমেট পর্ব ২
“এটা একটা মনস্টার রূপকথা।এটাকে আমি এক্ষুনি মেরে ফেলবো।তুমি শুধু কিছুক্ষন অপেক্ষা করো ঠিক আছে?আমি একটু পরেই ফিরে আসবো।
সারফরাজ এর পেটের কাছের শার্ট খামচে ধরে কান্না জড়িত কন্ঠে রূপকথা বলে উঠলো
“আমার ভয় করছে।ও আমাকে ব্যাথা দিয়েছে সারফরাজ।
রাগে ক্রোধে সারফরাজ কথা বলার কোনো অবস্থাতেই নেই।নাসারন্ধ্র দিয়ে কেমন আগুনের উত্তপ্ত বাতাস বের হচ্ছে ফসফস শব্দে।তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে এনে সারফরাজ বললো
“এখন যদি এই মনস্টার আমি না মারি তাহলে এটা আবার তোমার কাছে আসবে রূপকথা।
রূপকথা সারফরাজ এর শার্ট ছেড়ে দিয়ে আধো বুলিতে শুধায়
“একদম মেরে ফেলবে?
সারফরাজ ভারী ভয়ানক কন্ঠে উত্তর করলো
“একদম।