চেকমেট পর্ব ৪৭ (২)
সারিকা হোসাইন
শুনশান নিস্তব্ধ অন্ধকার রাস্তার বাঁকে গাড়িতে বসে বসে চোখ বুঝে সিগারেট ফুকছে সারফরাজ।ঘড়িতে সময় মধ্যরাত।শীতের প্রকোপ যথেষ্ট।মাঝ রাতে জেগে থাকা রাস্তার কুকুর গুলো ভৌতিক সুরে নেকড়ের ন্যয় হাউলিং করে চলেছে।পুরো শহর যেনো ঘুমিয়ে গিয়েছে।মানুষের চলাচল খ্যব একটা নেই।কিন্তু থেকে থেকে এম্বুলেন্স এর পুপু সাইরেন কানে লাগছে।
মাথায় হাজারো কুটিল বুদ্ধি কিলবিল করছে সারফরাজ এর।কোনটা রেখে কোনটা আগে জাহির করবে তার কোনো কিনারা খোঁজে পাচ্ছে না।বন্দুকের চোখা নল দিয়ে নাকের ডগা চুলকে ফোনে সময় পরখ করে নিলো।এমন সময় ড্যাভিনের কল এলো।
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে ফোন রিসিভ করলো সারফরাজ।এরপর ভরাট ব্যস স্বরে বললো
“yes ড্যাভিন
“He has left the hospital and is on his way home, boss.
ড্যাভিনের কথা শেষ হতে না হতেই ফোন কেটে দিলো সারফরাজ।এরপর গাড়ি থেকে নেমে ডাকলো
“বয়েজ।
পিছনের গাড়ি থেকে মুহূর্তেই নেমে এলো ইয়ং আর লুইস।সঙ্গে নিয়ে এলো নিজেদের ব্যাবহারিক হেকলার এন্ড কোচ এর 416 সাব মেশিন গান।নিজের ব্লেজারের ভেতর থেকে দুই হাতে দুটো গান বের করে চকচকে নজর বুলালো সারফরাজ।এরপর লম্বা লম্বা পা ফেলে হাটতে লাগলো সামনের দূতলা বিশিষ্ট আধুনিক বাড়িটির অভিমুখে।
নিজের ডিউটি শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্য ছুটছে রুদ্ররাজ।আজকাল কিছুই তার মনঃপুত হচ্ছে না ।সব কিছু কেমন আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে।মায়া চৌধুরী সবচেয়ে বড় লস প্রজেক্ট রুদ্রের জন্য।রুদ্র অবশ্য ইতোমধ্যে ভেবে ফেলেছে কিভাবে সারফরাজ কে নাকানি চুবানি খাওয়াবে।তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে সারফরাজ এর কাছের এক লোককে ম্যানেজ করে ফেলেছে রুদ্র।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
তাকে দিয়েই সারফরাজ এর উইকেট পতন করবে সে।শুধু সময়ের অপেক্ষা।
নানাবিধ ভাবনা ভাবতে ভাবতে নিজ বাড়ির সামনে এসে থামলো রুদ্রের গাড়ি।বাড়ির নিচের বিশাল পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি পার্ক করে তালা খোলে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে চাইলো রুদ্র।কিন্তু একি?তালা আগে থেকেই খোলা!রুদ্রের ফর্সা মসৃন কপালে সূক্ষ ভাঁজ পড়লো।সে লম্বা পায়ে ফিরে এলো পার্কিং এরিয়ায় এরপর গাড়ির টুলবক্স থেকে নিজের গান বের করে সন্ত্পর্নে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলো। বিশাল ড্রয়িং রুমে ঘুটঘুটে অন্ধকারের রাজত্ব।রুদ্র নিজে থেকেই লাইট অন করে চারপাশে চতুর নজর বুলালো।রুদ্রের শরীরের গন্ধে প্রতিদিন রুদ্রের পোষা বিড়াল ম্যানি আর কুকুর লাভেলো দৌড়ে আসে।কিন্তু আজ এলো না ।রুদ্রের কাছে ঘটনা খটকা লাগলো।সে সিঁড়ি ধরে উপরে উঠে এলো।এরপর নাকের পাতা ফুলিয়ে খট করে নিজের বেড রুমের দরজা খোলে গুলি চালাতে চাইলো।কিন্তু তার আগেই সারফরাজ তার কপালে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে কিটকিটিয়ে হেসে বলে উঠলো
“লস এঞ্জেলসের হাওয়া বড্ড মিষ্টি।এজন্যই তো জঙ্গল ছেড়ে শহরের বাতাস খেতে এলাম।কেমন লাগলো আমার দেয়া সারপ্রাইজ ব্রো?
রুদ্র দাঁত পিষে বলে উঠলো
“সিংহের খাঁচায় মরতে এসেছিস?
সারফরাজ আরেক দফা হাসলো।এরপর রুদ্রের চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো
“তোর মুসলমানি করাতে এসেছি।শুনেছি দিনে দিনে বহুত লম্বা হয়ে গেছে।তাই কাটাতে এলাম।
বলেই গর্জে উঠলো
“টাইট করে পিছ মোড়া করে বেঁধে ফেল একে।
আদেশ পাওয়া মাত্র অন্ধকারের ভেতর থেকে শক্ত পোক্ত লুইস আর ইয়ং বেরিয়ে এসে রুদ্রের দুই হাত মুড়িয়ে ধরলো।রুদ্র ধস্তা ধস্তি করে নিজেকে মুক্ত করতে চাইলো।কিন্তু অসুর তুল্য শক্তিশালী মানুষ দুটির সাথে পেরে উঠলো না।এই দৃশ্যে মজা পেয়ে সারফরাজ নাটকীয় হাসলো।এরপর বললো
“এমন শরীর ওয়ালা দেখে দুটো বডি গার্ড রাখবি।আজ যদি বডি গার্ড থাকতো তবে আমার হাতে ধোলাই খাওয়া থেকে বাঁচতে পারতি।এসব কুকুর বিড়াল দিয়ে কি হয় বল?মানুষের বলের উপর আর কিছু আছে?
রুদ্রকে টেনে হিচড়ে ডাইনিং রুমে নিয়ে এলো দুজনে।এরপর একটা চেয়ারের সাথে শক্ত করে বাধলো।সারফরাজ চোখের ইশারা করলো লুইস কে।ইশারা পাওয়া মাত্র কিচেন থেকে ম্যানি আর লাভেলোর রক্তাক্ত দেহ দুই হাতে ঝুলিয়ে অনাদরে নিয়ে এলো লুইস।এরপর তা ছুড়ে মারলো রুদ্রের উপর।সন্তান তুল্য পশু দুটির নৃশংস পরিণতিতে চিৎকার করে উঠলো রুদ্র।সারফরাজ বিদঘুটে হাসলো সেই চিৎকারের প্রত্যুতরে।এরপর একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললো
“ঘেউ ঘেউ মিউ মিউ করে একদম কানের মাথা খেয়ে নিচ্ছিলো।তাই চিরতরে চুপ করিয়ে দিলাম।
বলেই অপ্রস্তুত রুদ্রের কপালে আর বুকে দুই হাতের দুই গান ঠেকিয়ে ট্রিগার চেপে বলে উঠলো
“হ্যাপি জার্নি।
খট করে আওয়াজ হলো।রুদ্র চিৎকার করলো।কিন্তু গুলি বেরোলো না।রুদ্রের কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়লো।তা দেখে সারফরাজ হো হো শব্দে হেসে বলে উঠলো
“ভয় পেলে কেমন লাগে ভাইয়া?অন্যকে ভয় দেখানোর মাঝে পৈশাচিক আনন্দ আছে তাই না?আমার সহজ সরল মাকেও তো এভাবেই দিনের পর দিন ভয় দেখিয়েছিস তাই না?কি ভেবেছিলি এতো তাড়াতাড়ি মারবো?
বলেই দাঁতে দাঁত পিষলো সারফরাজ।এরপর চোখের কোনে জমে থাকা জল হাতের উল্টো পিঠে মুছে হিসহিস করে বলে উঠলো
চেকমেট পর্ব ৪৭
“উহু মোটেও না।আমার মায়ের চাইতে বদ্ধ উন্মাদ করবো তোকে আমি।যেদিন ফুল মেন্টাল হয়ে ন্যাঙটা হয়ে রাস্তার মাঝে ট্রাফিক পুলিশের মতো গাড়ি আটকিয়ে নাচ দেখাবি সেদিন তোকে শেষ করবো আমি।এর আগে নয়।কিন্তু আজ এই মুহূর্ত থেকে তোর জীবনের জাহান্নাম আওয়ার শুরু।তোকে আমি এক মিনিট ও শান্তিতে ঘুমুতে দেবো না।আমার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যা করতে চাইবি।সেটাও পারবি না।ইউর টাইম স্টার্ট নাউ।