ছায়াস্পর্শ পর্ব ১০

ছায়াস্পর্শ পর্ব ১০
জান্নাত চৌধুরী

খাবার টেবিলের পরিবেশ বেশ শান্ত। ইফরাহ্ দাঁড়িয়ে আছে অরুনিমার পাশে। সকলে খেতে বসেছে – আরাধ্য বেশ কয়েকবার জোর করার পড়েও সে খেতে বসে নি।
এদিকে খাবার টেবিলে বাহারি রকমের খাবার থাকার পরেও প্লেট ভর্তি ভাত আর আলুর ভাজি নিয়ে বসেছে আরাধ্য। আলুভাজি নাকি ভীষণ প্রিয় , সব কিছুতেই তার আলু চাই।

ইফরাহ বেশ কিছু সময় ধরেই দাঁড়িয়ে খাওয়া দেখছে মানুষটার। কেমন বড় বড় লোকমা মুখে তুলছে সাথে নিজের হাতের দিকের তাকাচ্ছে বারবার। লোকটার হাতের অর্ধেক হবে তার হাত , আঙুল গুলো কি বড় বড়। এইসব ভেবেই মনে মনে হাসছে – অরুনিমা খেয়ালে এলেও কিছু বলে না সে। নতুন ব‌উ আমদ ফুর্তিতে থাকলে তার সংসারেও নাকি উন্নতি হবে। আরাধ্যের খাওয়া অর্ধেক হতেই আধ খাওয়া প্লেট এগিয়ে দেয় ইফরাহর দিকে। কাহিনী বেশ গড়বড়ে বুঝতে না পেরেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ইফরাহ। আরাধ্য হাত ধরে টেনে ইফরাহ কে কিছুটা কাছে এনে আধ খাওয়া প্লেট ধরিয়ে দেয় হাতে। সাথে বেশ কড়া স্বরে বলে …

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– এই প্লেটের খাবার শেষ করে , তারপর আরো খাবার নিবে। বুঝেছো ব‌উ!
ইফরাহ কিছু বলে না মাথা নিচু করে তাকায় খাবার প্লেটের দিকে। বেশ সুন্দর করে এক পাশ থেকে খেয়েছে লোকটা। আরাধ্য চেয়ার ছেড়ে উঠে কিছুটা সাইডে গিয়ে দাড়ায় , সেই একই চেয়ারে বসতে বলে ইফরাহ কে।
চেয়ারম্যান এদিক ওদিক তাকায় না। খাবার প্লেটে মনোযোগ রেখে বেশ শান্ত ভঙ্গিতে গরুর গোশত আর পরোটা খাচ্ছেন।
অরুনিমা এগিয়ে এসে দাঁড়ায় দুজনের মাঝে। বেশ‌ কর্কশ গলায় বলে..

– এইসব কি হচ্ছে বাপজান? মীর বাড়িত কি খাওনের অভাব পড়ছে। তুমি নতুন ব‌উরে ঝুটা খাইতে দিছো কেন ?
টেবিল হতে অপর এক প্লেট এগিয়ে নিয়ে তাতে হাত ধুয়ে নেয় আরাধ্য। হাতের পানি কিছুটা ঝেড়ে এগিয়ে এসে হাত মুখ মুছে ইফরাহর শাড়ির আঁচলে। তারপর রয়ে সয়ে উত্তর করে অরুনিমার প্রশ্নের!
-হয়েছে কি মা জননী , যদি খাবার টা ঘরে পাঠাতেন তবে এক প্লেটেই দুজন খেতাম। মানে হলো আমি হাতে তুলে ব‌উকে খাওয়াতাম সাথে নিজেও খেতাম। তা এইখানে যখন খেতে বসেছি তাই আমার ঝুটা প্লেটের খাবার টাই ওকে দিলাম। এতে মোহাব্বত বাড়বে মা জননী। এমনি তো তোমাদের ব‌উমা কেমন সবসময় সাপের মতো ফোঁস করে ওঠে, এই বুঝি ছোবল মারলো বলে। তাই একটু সাপের ক্ষাতির যত্ন করে মনি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি ।
ইফরাহ কিছু বলছে না খাবার প্লেট হাতে অরুনিমা পাশেই ঠায় দাঁড়ানো। এদিকে আরাধ্যের এমন রসিয়ে রসিয়ে বলা কথাগুলোতে যেন মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ বাড়িয়ে দিয়েছে মানহার। বেচারি এতো সময় ভালোই তো খাচ্ছিলো। এই যে আরাধ্য তার পাশে বসে খাবার খেলো এতে যে তার কি শান্তি তা কি ওই মানুষটা জানে। উহু একদম জানেনা ..!
আরাধ্য পাশ কাটায় অরুনিমার – ইফরাহর একদম কাছাকাছি এসে হাত ধরে বসিয়ে দেয় টেবিলে।

-শুনছো মেয়ে , খাবার সম্পূর্ণ করে ওঠা চাই।‌
ইফরাহ কিছু বলে না মাথা নিচু করে খাবারে মনোযোগ দেয়। আরাধ্য আশেপাশে তাকায় ,খাবার টেবিলে তার কিছু একটা নেই মনে হচ্ছে। আশেপাশে বেশ কয়েকবার লক্ষ করে গলা ছেড়ে ডাক তোলে সে ..
– রেণুর মা – খাবার টেবিলে ডালের বাটি ক‌ই ?
রান্না ঘর হতে দ্রুত বেড়িয়ে আসে রেণুর মা হাতে গরম ডালের বাটি অরুনিমা কিছুটা সরে যেতে টেবিলে উপর গিয়ে ডালের বাটি রাখে
রেণুর মা।
আরাধ্য এগিয়ে এসে ইফরাহর মাখানো ভাতে ডাল ঢেলে দেয় কিছুটা।‌বেশ‌ বিরক্ত হলেও , দাঁতে দাঁত চেপে আরাধ্য পাগলামি সহ্য ইফরাহ। আরাধ্য আরো এক চামচ ডাল ভাতে দিতে বেশ নরম গলায় বলে …

– শুকনো ভাত খেতে হবে না ব‌উ ! গলায় আটকে গেলে সে এক বিপদ । এই যে ডাল দিয়েছি এখন ডাল -ভাত আর ভাজি চটকে, মানে মেখে খেয়ে উঠো তো দেখি।
ছেলের এহেন কান্ডে বেশ অবাক হয় অরুনিমা । এদিকে মানহা যেনো নিজের চোখ কান কোনোটাই বিশ্বাস করতে পারছে না। এক রাতেই তবে মানুষটার এতো পরিবর্তন ভাবতেই অবাক লাগছে। সত্যি কি পরিবর্তন নাকি মানুষটা আগেও এমন ছিলো। সে চিনতে পারে নি এসব ভেবেই চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার।
খাবার টেবিলে চলছে ঘন নীরবতা চেয়ারম্যান সাহেব কোনোদিকে তাকায় না।এমন ভাব ধরেছে যেন‌ তার সামনে বিশ্বযুদ্ধ হলেও তার মনোযোগ সেই খাওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

ইফহার খাওয়া প্রায় হয়ে এসেছে , ভাতের শেষ লোকমা মুখে তুলবে ঠিক এমন সময় আরাধ্য ঝুঁকে আসে তার দিকে। নরম তুলতুলে হাতে ভাতে শেষ লোকমা পুরে নেয় নিজের মুখে।
– উমমমম . এ যেন পৃথিবীর সেরা মজার খাবার। আহ আজ যেন ডাল ভাতেও স্বাদ বেড়েছে।
এতো রসের কথা সহ্য হয় না মানহার, খাবার শেষ না করেই হাত ধুয়ে উঠে যায় সে। আরাধ্য তাকায় না সেদিকে তবে ইফরাহর নজর এড়ায় না কিছুই। মেয়েটার ভরে আসা চোখ জোড়াও তার নজরে এসেছে ।‌চেয়াম্যানের খাওয়া শেষ উঠতে নিবে ঠিক এমন সময় অন্দরমহলে হতে কারো গলা ভেসে।
রেজা এসেছে ছোট নবাবের সাথে আজ নাকি কোথায় যাওয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের। তাই ডাকতে এসেছে , ইফরাহর হাত ধোঁয়া হতেই উঠে দাঁড়ায় সে। অপেক্ষা করে না আরাধ্য হাত ধরে টেনে সিঁড়ি দিকে যেতে থাকে। ভরকে যায় মেয়েটা .. এই লোকটার এমন হুটহাট কাজ কর্ম তার ভীষণ বাজে লাগে । হাত বেশ মোচড়া মোচড়ি করতে থাকে সে ..

বিরক্ত হয় আরাধ্য এতো চঞ্চল ব‌উ সে কোনো কালে চেয়েছে বলে মনে পড়ছে না তার।ব‌উ হবে শান্ত ,নরম এঁটেল মাটির মতো যেনো তাকে যেন বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। অথচ এই মেয়ে পুরোই একটা শক্ত ইট। রাগ লাগছে তার শেষ সিঁড়ির পেড়িয়ে ধমকে ওঠে সে।
– এই যে বালের চেংড়ি — এতো ভাব ধরে না মামুনি।
মালিশ দিয়ে দিবো , মালিশ।
ইফরাহ কিছুটা অবাক হয় এই মানুষটাকে সে একদম বুঝে উঠতে পারছেনা। তবে জানতে বেশ‌ কৌতুহলী সে। তার সকল চরিত্রের সাথে পরিচিত হতে চায় সে।
ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতেই হাতে এক কাগজের ব্যাগের মতো কিছু একটা ধরিয়ে দেয় আরাধ্য — ইফরাহ শান্ত চোখে তাকায় ব্যাগের দিকে গহনার বাক্সের মতো কিছু টা। পরক্ষণেই আবার তাকায় আরাধ্য চোখে। লোকটা কিছু বলবে এই আশায় কিছু সময় তাকিয়ে থাকে.. ভাবনা সফল হলো আরাধ্য ইফরাহর হাত ছেড়ে নিজের চুল গুলো বেক ব্রাশ করে বলে —

– বিবাহিত নারীর হাত , গলা খালি রাখতে নেই। তাই রেগুলার ব্যবহারের জন্য কিছু গহনা আছে পড়ে নিও। হাত গলা খালি রেখে আমার অকল্যাণ চাইবে তা হচ্ছে না বুঝেছো মেয়ে। ওসব পড়ে থেকো আসছি !
– ক কোথায় যাবেন ?
ঘর থেকে বেড়োনোর উদ্দেশ্যে মাত্র‌ই এক পা ফেলেছিলো, তবে ইফরাহ কথায় হাঁটা গতি থামিয়ে আবারো ঘুরে তাকায় আরাধ্য।
তার ব‌উ কি তাকে নিয়ে ভাবছে ? বাহ বেশ মজা তো
– কাজ আছে , দ্রুত চলে আসবো। আমি না আসা অবদ্ধি ঘরের বাহিরে পা রাখবে না।
হাতে থাকা ব্যাগের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইফরাহ। আরাধ্য বেড়িয়ে গিয়েছে , দরজা দিকে একবার তাকিয়ে ‌এগিয়ে যায় আয়নার কাছে।
আয়নায় ভেসে ওঠা নিজের প্রতিবিম্ব দেখে তাচ্ছিল্যের হাসে। ধীরে ধীরে হাত বুলে স্পর্শ করে নিজের নাক ,মুখ ,চোখ।

মাথায় সরে যাওয়া শাড়ীর আঁচল মাটি বেয়ে পড়ছে। চোখের কোণে পানি এসে ভীর করেছে
এতো কিসের অবজ্ঞা তার ছোট নবাবের উপর , এই প্রশ্নের উত্তর যেন ভিতরটা ভেঙে চুরমার করছে তার।
ব্যাগ থেকে লাল রঙের বাক্স রেব করে নজর বুলায় তাতে। কিছু সময় তাকিয়ে থেকে আবারো আয়নায় নিজেকে দেখে। ধীরে ধীরে কাঁপা কাঁপা হাতে খোলে গহনার বাক্স।
একটা চিকন চেইন , চুড়ি হালকা ওজনের একজোড়া কানের দুল রয়েছে। ইফরাহ এক এক করে পড়ে নেয় সব গহনা। ফর্সা বরণ গায়ে সোনালী জিনিস কেমন ঝকঝক করছে। ঝলক দিচ্ছে ..
– কি করছো ?
পেছন থেকে ভেসে আসা কারো কন্ঠ শুনতেই দ্রুত চোখ মুছে শারীর আঁচল মাথা তুলে। পিছন ঘুরতেই নজরে আসে মানহা এসেছে।

– তুমি !
– আসতে মানা বুঝি?
ইফরাহ এগিয়ে এসে দাঁড়ায় মানহার মুখোমুখি। মুখের এক মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে বলে —
এসেছো বেশ ভালোই হয়েছে , ভীষণ একা লাগছিল। এসো বসবে ,
বেলকনির সাদা পর্দাটা খানিকটা নড়ে ওঠে – মানহা সেদিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস নিংড়ে গাম্ভীর গলায় বলে
– বেলকনিতে বসি ! দেখছো পশ্চিমা হ‌ওয়া আসছে।
ইফরাহ মুসকি হেসে এগিয়ে যায় বেলকনিতে। মানহা পিছন পিছন গিয়ে একদম রেলিং ঘেঁষে দাড়ায়।
পশ্চিমা শীতল বাতাসে গাছের ডালপালা একটি অপর আরেকটির গায়ে দোলা দিচ্ছে মানহা অপলক তাকিয়ে দেখে সবুজের সৌন্দর্য। পশ্চিম এই দিক টা কেমন ভয়ংকর নিস্তব্ধ।
ইফরাহ এগিয়ে এসে হাত রাখে মানহার কাঁধে — আচ্ছা তোমার কি মন খারাপ ?
কাঁধ ঘুড়িয়ে একবার ইফরাহ দিকে তাকায় মানহা পর মূহুর্তেই আবারো নজর দেয় সেই গাছপালার দিকে..
– দুঃখ গোপন জিনিস গোপন রাখতে হয়। প্রকাশ করলে চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পায়।
মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায় ইফরাহ হাত নামিয়ে নেয় সে।

পানি খাইবা ? পানি ….
শুষ্ক ঢোক গিলে যুবকটি – সামনের মানুষটির গলাটা ভীষণ চেনা লাগছে। কাঁপা কাঁপা গলায় কিছু বলতে নিবে তার আগেই
হুসসস !
থামিয়ে দেয় সামনের মানবটি। আরো কিছুটা ঝুঁকে সামনের মানবটি একদম মুখের কাছে এসে বলে —
– তোর মৃত্যু আসন্ন !
গলা জড়িয়ে আসছে যুবকটি। তৃষ্ণায় ফেটে পড়া গলা , আর এই ভয়ংকর সময় সব মিলিয়ে নিঃশ্বাস আটকে আসছে তার।
কপাল ভেসে উঠছে বিন্দু বিন্দু ঘাম । হাত পা কাঁপছে। কন্ঠ জড়িয়ে আসছে। এই তো মনে হচ্ছে কেউ দুহাতে শক্ত করে চেপে ধরেছে গলা।

কানে আবার ভেসে আসে পায়ের শব্দ ! তাবে এবার মনে হয় একাধিক পায়ের শব্দ। কেউ এগিয়ে আসছে তার দিকে .. চোখে বাঁধা কাপড়ে ফাঁক গলিয়ে কিছুটা আল চোখে প্রবেশ করলেও সব ঝাপসা। দড়ির শক্ত বাঁধনে হাত ছিঁড়ে যাবার উপক্রম । যুবকটি হাত ঘষে চলেছে অনবরত। তবে এ বাঁধন যে এত সহজে খুলবার নয়। পায়ে শব্দগুলো যেন একদম কাছাকাছি এসে থেমে যায়।
-ভাবিয়া করিও কাজ- করিয়া ভাবিও না।
বাঁশের উপড়েও বাঁশ আছে এইটা কি তুমি জানো না।
গুমোট পরিবেশে , দেয়ালে দেয়ালের বাড়ি খাওয়া ভয়ংকর লাইন গুলো যেন ঝাঁজরা করে দিচ্ছে শ্রবণ‌ইন্দ্রিয়। যুবকটি পা ঘষে ঘষে পেছাতে থাকে। সামনে মানুষটি কে তা জানতে আর বাকি নেই। মাটির সাথে পা ঘষে ঘষে পেছাতে গিয়ে ঠেকে যায় দেয়ালে। সাথে সাথেই নাকে ভেসে আসে ভেজা মাটির স্যাঁতস্যাঁতে এক গন্ধ। নাক কুচকে নেয় যুবটি।

– মগজ – এই মগজ ভাজি আমার ভীষণ প্রিয় । তা হোক গরুর – ছাগল অথবা মানুষ।
কর্কশ গলায় বলা কথাগুলো যেন ঘরের বাতাস আরো কয়েক ভারি করে তোলে। থরথর করে কাপতে থাকে যুবকটি এত সময়ের বিন্দু বিন্দু ঘামের প্রতিফলন আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হঠাৎ খুলে যায় চোখের বাঁধন-
চোখে এসে পরে প্রকৃতির সাদা আলো মূহুর্তেই চোখ বুঝে নেয় যুবকটি। ইতোমধ্যে পুরো ঘরে ফেটে পড়ে উচ্চ হাসির শব্দে। যুবকটির বুকের ভিতর ভয় যেন আরো কয়েকগুণ ভেড়ে যায়। ভয় – মৃত্যু ভয়। সামনে থাকা যমদূত যে সাধারণ কেউ নয় , এ হয়তো তার থেকে ভালো কারো জানবার কথা নয়।
এ যে তার পাপের শাস্তি, সরল এক জোড়া কাঁপা কাঁপা চোখে খুব ধীরে সামনের দিকে তাকায় সে –
– পাপের দুনিয়ার পাপিকেই শাস্তি দিতে হয়।
যুবকটির চোখ নামিয়ে নিয়ে মাটির দিকে তাকায়।‌শরীরে শক্তি অবশিষ্ট নেই। দৃষ্টিতে মাটির দিকে রেখেই ভয়ে ভয়ে বলে

আ…আমাকে মাফ করে দিন ।
কথাগুলো বেশ ব্যথাতুর । মনে হচ্ছে ভীষণ কষ্টে গলা হতে টেনে হিচড়ে বের করা হয়েছে তাদের।
– আমি শিকার করছি আমার ভুল।
দ্বিতীয়বারের মতো উচ্চস্বরে আবারো হেসে ওঠে সামনে মানবটি সাথে দুইপাশে থাকা দুই সঙ্গীও ঠোঁট চেপে হাসছে , ফাঁকা ঘরে হাসির শব্দ দেয়ালে দেয়ালে কম্পন তৈরি করছে।
অন্তর‌আত্না কেপে ওঠে যুবকটির হঠা‌ৎ থেমে যায় সেই হাসি। ডান দিক হাত বাড়াতেই বেল্ড টাইপ কিছু একটা এগিয়ে দেয় তার সঙ্গী ছেলেটা। যুবকটি নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাইলেও লাভ হয়।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই একের পর এক আঘাত অনুভব করে নিজের শরীরে।
সময় কত পেরিয়েছে জানা নেই , নেতিয়ে পড়ে যুবকটি। এদিকে ক্ষত বিক্ষত হয়ে শরীর ফেটে লাল তরল‌ বেরিয়ে এসেছে। অদ্ভুত এক প্রশান্তি হাসির শব্দ খেলে যায় ঘুরে যায়।

মাগরিবের আজান পড়তে আর কিছু সময়ের বাকি , মানহা চলে যাওয়ার পরেই বেশ লম্বা এক ঘুম দিয়েছিলো ইফরাহ।‌ দেয়ালে ঝুলতে থাকা ঘড়ির ঘর কাপানো শব্দেই না ঘুম টাহ ভাঙ্গলো তার। এলোমেলো চুলোগুলো হাত খোপা করে এগিয়ে যায় হাতমুখ ধুতে।
বেশি সময় নেয় না কোনো মতে চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে বেড়িয়ে আসে‌ শাড়ীর আঁচলে পানি মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকতেই দরজায় শব্দ হচ্ছে।
আরাধ্য এসেছে হয়তো, ইফরাহ দেরি করে আধমোছা মুখেই এগিয়ে গিয়ে খোলে দরজা।
ব‌উ দরজা খুলেছে ভেবেই মুসকি এক হাসি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সে। ইফরাহ ভ্রু কুঁচকে নেয় বেশ খুতিয়ে দেখে আরাধ্য কে।
স্বাভাবিকের তুলনায় কেমন যেন লাগছে মানুষ টাকে।‌বেড়োনোর সময় তো বেশ পরিপাটি ছিলেন, তবে এখন যেন সেই সাঝ একদম নেই লম্বা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে চোখে এসে বাড়ি খাচ্ছে। গায়ে জড়ানো শার্টে মাত্রাধিক ঘাম লেগে আছে।

যেতে দিবে তো নাকি ?
আরাধ্যের ধমকে স্বরে ধ্যান ভাঙে ইফরাহ। ইসস কি বাজে একটা কাজ সে পথ আঁটকে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট নবাব কি তবে কিছু বুঝে গেলো।
কি বুঝে যাওয়া কথা ভাবছো সুন্দরী।‌
– তেমন কিছু নয়। আপনি গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আসুন।
ইফরাহ কথা বাড়ায় না আবারো‌ দ্রুত পা বাড়ায় বেলকনিতে এই বাড়িতে আসার পর এঈ বেলকনি আর ওই বিছানা এই দুটোই যেন তার প্রধান জায়গা।
রেলিংয়ের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘোরপাক খেলেও উত্তর মিলছে না। এ কেমন পেরা এসব নিয়েই মাথায় বাম পাশটা চিনচিনে ব্যাথায় ফেটে পড়ছে।

ভাবনায় তুলিয়ে গিয়েছিলো নিজেকে নিয়েকে হঠাৎ ঘাড়ে এক শীতল হাতের অনুভব হয় তার। লম্বা চুলগুলো কাঁধ হতে সরিয়ে একদম বুকে কাছে এনে রাখে আরাধ্য । মেয়েটা বেলকনিতে এসেছিল একটু শান্তি অনুভব করতে, তবে এটা ভুলে গিয়েছে পুরো অশান্তিটাকেই ঘরে রেখে এসেছে ।
আরাধ্য ধীরে ধীরে ঠোট ছোঁয়ায় ইফরাহ চুল সরানো উন্মুক্ত পিঠে। এক টানে খুলে ফেলে পিঠে ঝুলতে থাকা,ব্লাউজের ফিতা।

ইফরাহ একটুও অবাক হয় না, ঠায় দাঁড়িয়ে দৃষ্টি রাখে দুরের গাছ গাছালির ফাঁকে। দূরের ওই ঘরটায় নিয়ে ভীষণ কৌতুহল তার। আরাধ্যের হাত ধীরে ধীরে স্থান করে নেয় ইফরাহর উন্মুক্ত পেটে। বেশ এক ঝটকা- টানে ইফরাহ কে একদম নিজের বুকে নিয়ে নেয় সে।
অনেক সময় পেড়িয়ে গেছে , ইফরাহ তখনো হায় দাড়ানো— তবে কি ,এই মেয়ের অনুভূতি নেই। কেন জানি ভীষণ রাগ লাগে আরাধ্যের , মেয়েটার উন্মুক্ত পেটে হাত নাড়াচাড়া করতে- করতে হাতে দড়ির মতো কিছু একটা অনুভব হয়। থমকে যায় আরাধ্য ..আবারো বেশ কয়েকবার নেড়েচেড়ে দেখে বস্তু টাকে। ইফরাহ অনুভব করে সবকিছু তবে মুখ ফুটে কিছু বলে না।

– এই যে মহারানী , এটা বুঝি নজর কাটা সুতো। শুনেছি মেয়েদের
বেশি- বেশি নজর লাগলে তারা কোমড়ে বন্ধনী বাঁধে।
এবারেও চুপ থাকে ইফরাহ— তবে বেশ বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে । মনে মনে ভাবে
– তাই যদি হতো! তবে আরো ৭টা বেঁধে নিতো সে , তবুও যদি এই পুরুষের নজর কাটতো।
– কোনোভাবে তুমি কি ভাবছো আমি তোমাকে নজর দিয়েছি ?
ইফরাহ কিছু বলবে তার আগেই আরাধ্য আবারো বলে ওঠে ..
– শোন মেয়ে আমি নজর দেই নি , তুমি এসেছিলে আমার নজরে‌ বিশ্বাস করো মাইরি তোমাকে প্রথম দেখেই আমি পুরাই টাস্কি। ভাই আমার হৃদয় পুরাই ব্লক পড়ে গিয়েছিল।সময় থেমে গিয়েছিল। তোমার এই লম্বা চুলের আকর্ষণ আমাকে ভীষণ করে টেনেছে।

কিছু সময়ের জন্য থেমে যায় আরাধ্য কিছু একটা ভেবে নিয়ে আবারো বলে ,
-শুনছো মেয়ে, একদিন নীল শাড়ি পড়বে।
সাথে মেচিং ব্লাউজ । তোমার সাদা মনির চোখ জোড়ায় কাজল পড়বে‌। লম্বা গোছের চুলগুলো ছেড়ে থাকবে।
আমি দেখতে চাই, দুচোখ ভরে দেখতে চাই।

ছায়াস্পর্শ পর্ব ৯

আবারো প্রেমে পড়তে চাই ঠিক যেমনি মানুষ প্রমে পড়ে আষাঢ়ের দোলনচাঁপার।
থমকে যায় ইফরাহ। লোকটা কাব্যিক কথাগুলো তার হৃদয়ের কোথাও যেন হালকা জায়গা করে নেয়। ইফরাহ ঘুরে যায় চোখে চোখ রাখে আরাধ্যেরের
নীল বুঝি আপনার প্রিয় রং !

ছায়াস্পর্শ পর্ব ১১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here