টেরিবেল পর্ব ১৬
অনুপ্রভা মেহেরিন
সকাল সকাল ক্লাসের উদ্দেশ্যে মার্ভেলাসে এসে মুডটাই নষ্ট হয়ে গেল মার্টিনের।একেরপর এক মেয়ে এই শহর থেকে গায়েব হচ্ছে,এই প্রতিষ্ঠানের দুটি মেয়ে নিখোঁজ হয়েছিল কেন যেন মনে হয় কোন একটা মিল খুঁজে পান মার্টিন।যখন আন্দ্রিয়ার মৃত্যুর কথা শুনলেন তখনি তিনি থমকে গেলেন হাত পা ছেড়ে বসে রইলেন কয়েক পল।শুধু কি তিনি?বাকি যারা ছিলেন বিশেষ করে আন্দ্রিয়ার ভায়োলিন শিক্ষক ডেরিক তিনি খুব মর্মাহত হয়েছেন।মার্টিন তার মানবন্ধন কার্যক্রম এছাড়াও পুলিশের সাথে আলাপ আলোচনার বিষটিতে আরো জোরদার দিলে ডেরিক বলল, এই ব্যাপারটায় আমাদের চুপ থাকাই ভালো শুধু শুধু এসবে প্রতিষ্ঠানকে জড়িয়ে প্রতিষ্ঠানের বদনাম হবে।
ঠিক এখানেই মেজাজটা খিজে গেল মার্টিনের তিনি জোর দিয়ে কিছু বলার আগেই বাকিরা অর্থাৎ গ্রেস ব্রিক তারাও সহমত জানায় এসবে আর না জড়ানোই ভালো হবে।
বাইরে দমকা বাতাস বইছে কফি হাতে বারান্দার রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।এখন কী মাস?বাংলা কোন মাস?যতদূর জানি এখন তো বৈশাখ মাস নয় আকাশ এত জোরে ডাকছে কেন?কয়দিন পরেই শীতের চাদর জড়িয়ে যাবে সবার গায়ে কিন্তু তার আগেই কালবৈশাখীর ন্যায় তুফান নামছে কেন?মার্টিন বাংলা মাসের হিসাব খুব ভালো বুঝেন না বুঝেন না বললে ভুল হবে খুব ভালো করে কখনো বিচার বিশ্নেষণ করে দেখেননি।ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলেন একজন তরুন ছেলে।
” স্যার, সেট আপ ডান। ইউ কেন টেক ক্লাসেস নাও।”
” ওকে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মার্টিন ওয়ানটাইম কফির কাপটা ঝুড়িতে ফেলে কক্ষে প্রবেশ করলেন আজ তার অনলাইন এবাকাস ক্লাস আছে আচমকাই আন্দ্রিয়ার কথা মনে পড়ে গেল মেয়েটা ছটফটে তবে বেশ ভালো ছিল অন্তত মার্টিনের সব কথা শুনত।মানুষ এই পৃথিবীতে কত দিন?আজ আছে কাল নাই কি অদ্ভুত আমরা!কি অদ্ভুত আমাদের নিয়তি!
থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছেন ডেরিক একটু আগেই মার্টিনের সহিত কিছুটা তর্ক হয়েছে।তারা এখানে ঐক্যজোটে কাজ করতে এসেছে যদি তাদের মাঝেই বিরূপ ভাব দেখা দেয় তবে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে।ভাস্কর্য শিক্ষক এলফ্রেড তাড়া দিয়ে বলেন,
“তোমাদের কারো ক্লাস নেই?ক্লাসে চলো।”
ডেরিক থমথমে মুখ ধরে রেখে বলল,
” তোমার আছে?তো যাও প্লিজ বিরক্ত করবে না।”
” মার্টিন যা বলেছে তা যুক্তি দিয়ে বলেছে।আবার তুমি যা বলেছো তাও যুক্তি নিয়েই বলেছো আমি উভয় মতামতকে সম্মান করি।আর নিজের বিচার বুদ্ধি খাটিয়ে বলছি আমরা এখন এই দেশের মানুষের কাছে মহান রূপে আছি দেশের বাইরে থেকে আগত শিক্ষকরা একটা প্রতিষ্ঠান খুলেছে ছেলে মেয়েদের জন্য সুযোগ করে দিয়েছে ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে তাদের শখের বিষয়গুলো শেখার।সেখানে আমাদের উচিত হবে না এসব গুম খু *নের কেসে ফেসে যাওয়া।আমরা সবাই জানি আমরা নির্দোষ আমাদের নীতি আমাদের এসব শেখায়নি তাহলে?যদি এসব নিয়ে আমরা বেশি আগ্রহ দেখাই সাধারণ জনগন আমাদের সন্দেহ করবে।যাই হোক এরপর কিছু হলে দেখা যাবে।”
ডেরিক কিছুটা আশ্বস্ত হলো একমাত্র মার্টিন ছাড়া সবাই তার সাথে যুক্তিতর্কে মিলেছে।পেইন্টিং শিক্ষক গ্রেস বলেন,
” আমাদের নিজেদের মাঝে দ্বন্দ্ব করা উচিত হবে না।শুনো,আমাদের ভুলে গেলে চলবে না সাপ্তাহে একদিন পথের মানুষদের খাওয়ানোর কথা।এই সাপ্তাহ তো শেষ হতে চলল এই ব্যাপারে এখনো কোন আলোচনা হয়নি!”
” আলোচনা হচ্ছে তো। এখনকার আলোচনা একটাই আন্দ্রিয়া মেরি।”
” যে মারা গেছে তাকে নিয়ে কথা না বাড়ানোই শ্রেয় আমাদের উচিত এসব নিয়ে চুপ থাকা।”
নাওমি ভীষণ ব্যস্ত একজন মানুষ।নাওমির সম্পর্কে যদি বলতে হয় লম্বা ফর্সা দেখতে বেশ সুন্দরী একজন মহিলা।পড়াশোনায় তিনি বেশ ভালো ছিলেন।সংসারের যাতাকলে থাকলেও পড়াশোনাতে মনোনিবেশ করে গেছেন।যখন স্বামী সন্তান নিয়ে সব ছন্নছাড়া এই সংসার করার আর কোন ভিত্তি খুঁজে পেলেন না তখনি তিনি বিয়ে করলেন জিসানকে।জনাব জিসানের সাথে তার সম্পর্ক খুব বেশি দিনের ছিল না।জিসানের প্রথম স্ত্রী ক্যান্সার রোগে অল্প বয়সে মারা যান এরপর আর বিয়ে নিয়ে ভাবেননি জিসান নাওমির সাথে যোগাযোগের পর নিজেকে নিয়ে ভাবার আগ্রহ বাড়ল।সিদ্ধান্ত নিলেন বিয়ে করবেন হঠাৎ বিয়েও করে ফেললেন।এডউইনের সম্পর্কে তিনি সবি জানতেন নাওমির অতিত নিয়ে কোন মাথা ব্যথা ছিল না তার।
জিসানের পরিবারের সবাই রাজনীতির সাথে জড়িত একমাত্র জিসান ব্যবসার কাজে মনোনিবেশ করেছে তবে নাওমি নিজেকে সংসারের কাজে বন্দি রাখেননি তিনি তার ভাসুরের সহযোগীতায় সমাজ সেবিকা হিসেবে নিজেকে উন্মোচন করেছেন আজ কাল অবশ্য তাকে রাজনীতির টুকটাক কাজে দেখা যায়।
এডউইনের বিয়ে উপলক্ষ্যে আন্দ্রিয়াকে কিছুই দেওয়া হলো না : শাশুড়ীর কাছ থেকে মেয়েটা নিশ্চয়ই দামি কিছু উপহার আশা করে।আজ কাজ শেষে নাওমি আন্দ্রিয়ার জন্য গহনা কেনার উদ্দেশ্যে একটা দোকানে প্রবেশ করলেন।দামি দামি যত হার আঙটি ঘুরে ফিরে সেসবের দিকেই চোখ যাচ্ছে তার অথচ তার কার্যক্রমে নেহাল ভারি বিরক্ত।নেহালের একটাই কাজ নাওমির সহিত থাকা এক কথায় নাওমির সহকারী নেহাল।
” আপা এসব গয়না কিনে তোমার কি লাভ হবে?বারবার বলছি এডউইন আর ওর বউকে মাথায় তুলে নাচা বন্ধ কর।”
” নাচি কোথায়?ছেলেটা মনের ভুলেও আমার সাথে একটা দিন যোগাযোগ করে না এখন যা একটুআধটু কথা হয়।তাছাড়া যত যাই হোক এডউইন আমার ছেলে আন্দ্রিয়া আমার ছেলের বউ তাকে কি ভালো কিছু দেওয়া যায় না?”
” অবশ্যই যায় তাই বলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করবে?এসব কি বাড়াবাড়ি নয়?”
নাওমি ভীষণ রেগে গেল নেহালের দিকে তাকালেন ক্রুদ্ধ চোখে,
” নেহাল আমার ছেলেকে নিয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ কর।টাকা আমার, ছেলের বউ আমার সিদ্ধান্ত আমার তোমার এত মাথা ব্যথা কেন?”
নাওমির ধমকে নেহাল চুপসে যায় দ্বিতীয়বার আর সাহস করে মুখ ফুটে কিছু বলার।
বেশ ভোরে ঘুম ভাঙলো আন্দ্রিয়ার জ্বর ছেড়ে গেছে।
অনেকদিন পর বিছানা ছেড়ে উঠার শক্তি হলো তার।এতটা দিন জ্বরের সাথে যুদ্ধ করে বিছানায় লেগে ছিল মেয়েটা।এই এক প্যালেসে থাকতে থাকতে তার বড্ড দম বন্ধ লাগছে তাই বাধ্য হয়ে আজ প্যালেসের বাইরে এলো।সে কি একা এসেছে?মোটেও না এডউইন অদূরে দাঁড়িয়ে কুকুরদের খাবার দিচ্ছে।এডউইনের প্যালেসটা বাইরে থেকে দেখতে কোন রূপকথার প্যালেসের মতো।বাইরে থেকে প্যালেসের দেয়াল জুড়ে লতানো গাছ এক মুহূর্তের জন্য মনে হবে এটা গাছের বাড়ি।সারাটা প্যালেস লতা গাছ দখল করে নিয়েছে।আন্দ্রিয়া একটি গাছের গুড়িতে বসে অসংখ্য পাখি ডাকছে ভোরের আলোতে ধীরে ধীরে জঙ্গলটা আলোকিত হচ্ছে।শিশিরে গাছের পাতাগুলো কেমন ভিজে আছে।আন্দ্রিয়া এডউইনের পানে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
” এডউইন আপনি কি করেন?”
এডউইন কিছুটা ভড়কালো হঠাৎ এই সকালে এসব প্রশ্ন?”
” মানে?”
” মানে আপনার পেশা কি সেটাই জানতে চাই।”
এডউইন কয়েক পল নিরব থেকে শান্ত সুরে বলে,
” ফ্রিল্যান্সিং।”
” সত্যি?”
” মিথ্যা বলব কেন?”
টেরিবেল পর্ব ১৫
আন্দ্রিয়া প্রত্যুত্তর করল না উঠে দাড়াল। প্যালেসের সিমানা পেরিয়ে একটু জঙ্গলের দিকে হাটতে ইচ্ছে হলো।এডউইন নিজের কাজে ব্যস্ত থাকলেও আন্দ্রিয়ার পানে ঠিকি মনোযোগ ধরে রাখল।আন্দ্রিয়া হাটতে হাটতে আরেকটু দূরে যেতে হঠাৎ একটি বুনো বিড়াল ঝাপিয়ে পড়ল তার গায়ের উপর।আকস্মিক আক্রমণে আন্দ্রিয়া চেচিয়ে উঠল তার চিৎকারে ভারি হয়ে উঠল গহীন জঙ্গল এডউইন ছুটে আসার আগেই আন্দ্রিয়ার দিকে তেড়ে গেল তার শেপার্ড জাতের সবচেয়ে ভয়ানক কুকুরটি।