টেরিবেল পর্ব ২০

টেরিবেল পর্ব ২০
অনুপ্রভা মেহেরিন

চুপচাপ মাথা ঝুকে বসে আছে পাপেট।তার হাতে, শার্টে রক্তের দাগ।একটু আগেই সে চরম মাত্রায় ভুল করে ফেলেছে এই ভুল তো পাপেটের দ্বারা কাম্য নয়।সে অতি বিচক্ষণ এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তি তাহলে কেন এই ভুলটা হলো?এবারের মতো ভাগ্যদেবতা যদি সহায় না হয় তবে পাপেটের খেলা ইতোমধ্যে শেষ হতে চলেছে।
এই তো কয়েক ঘন্টা আগে একটি মেয়েকে কৌশলে তার পাতালপুরীতে বন্দি করেছে।রাগে জেদে কি করেছে সে নিজেও জানে না।পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হয়নি বলেই সে বিপদে পড়তে পারে বলা যায়।
বিপদে পড়ার চান্স ফিফটি পার্সেন্ট।
পাপেট নিজের পাতালে যে মেয়েটিকে বন্দি করেছে তার নাম মালিহা।মেয়েটা বিবাহিত স্বামী দেশের বাইরে থাকেন।তবে মেয়েটা তার স্বামীর চোখে ধূলো দিয়ে একেরপর এক সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে যাকে বলা হয় পরকীয়া।ঠিক এই ব্যাপারটাকেই মানতে পারল না পাপেট এমন নারী সমাজের শত্রুতার শত্রু। এমন নারীর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

পাপেট যখন একটি পার্কে বসে মালিহার কথা শুনছিল অর্থাৎ তার প্রেমিকের কাছে স্বামীর কথা বলছিল তখনি পাপেট বুঝে যায় এই মেয়ে কতটা জঘন্য কাজ করছে।দূর দেশে থাকা স্বামী তার স্ত্রীর পানে তাকিয়ে অথচ স্ত্রী কি না পরপুরুষে আসক্ত!রাত তখন বাড়ছে সেই সাথে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে মানুষের আনাগোনা।মালিহা যখন বাড়ি ফিরছিল ঠিক তখনি তার পিছু নিল পাপেট আর সুযোগ মতো মেয়েটিকে অচেতন করে তুলেও আনল আসার সময় একটি ব্রিজে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মেয়েটির ব্যাগপত্র ফেলে এসেছে কিন্তু সে যে মেয়েটিকে তুলে এনেছে এটা কি আদৌ পারফেক্ট কাজ হয়েছে?যদি কেউ তাকে দেখে ফেলে?কিংবা সন্দেহজনক ক্লু পেয়ে যায়!
পাপেট ভারি বিরক্ত হলো অন্তত তার ভাবনায় ছিল আগামী এক সাপ্তাহে কোন রকম ক্রাইম করা যাবে না এই এক সাপ্তাহ সে সাধারণ মানুষের রূপে কাটাবে কিন্তু নিজের কথা আজ নিজেই খেলাপ করে ফেলল!
কিছুক্ষণ আগে পাপেট মালিহার একটি কান কেটে ছিল।
এই মুহূর্তে পাপেট পুনরায় হাতের ছুরিটা মুষ্টিবদ্ধ করল রেগে মেগে মালিহার বাকি কান এক পোচে কেটে ফেলল। মুহূর্তে বেহিসেবে রক্ত ঝরছে কয়েক ফোঁটা রক্তের ছিটা পাপেটের গায়েও এসেছে পাপেট বিরক্ত হয়ে গায়ের শার্ট খুলে ছুড়ে ফেলল মেঝেতে নিজের কক্ষে ফিরে কোন মতে হাত ধুয়ে নতুন শার্ট পরে বেরিয়ে পড়ল মাঝ রাতে।মালিহা নামের মেয়েটার চেতনা এত সহজে ফিরবে না সে ব্যাপারে নিশ্চিন্ত পাপেট।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মাঝ রাতে আন্দ্রিয়ার ঘুম ভাঙলো কোলের কাছে মাফিনকে দেখে বড্ড চমকে গেল মাফিন তো তার কোলে থাকার কথা না।এডউইন মাফিনকে বিছানায় উঠতে বারণ করেছে ভদ্র মাফিন তার কর্তার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তবে মাফিন এখানে কী করছে?
আন্দ্রিয়া যখন পিঠ ঘুরালো তখন পিঠের তলায় নাট’কে দেখে পালটা অবাক হলো।এডউইন কোথায়?এডউইন তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে রাখে সেখানে এডউইনের স্থানে নাট কি করছে?অন্ধকার কক্ষে একটি ল্যাম্পের আলোয় কিছুটা আলোকিত।আন্দ্রিয়া উঠে বসল মাথাটা এত ভার ভার লাগছে কেন?এদিকে ঘুমেও চোখটা খিঁচে আসছে আন্দ্রিয়া কোন মতে হেলেদুলে উঠে দাঁড়াল।

” এডউইন আছেন?শুনছেন আপনি?”
আন্দ্রিয়া ডেকে উঠল অথচ এডউনের সাড়া পাওয়া গেল।ওয়াশরুমে নেই তাহলে এডউইন কোথায়?ভেতর থেকে বেলকনির দরজা বন্ধ তাহলে এডউইনের বাইরে থাকার কথা না ছেলেটা গেল কোথায়?আন্দ্রিয়া কক্ষের লাইট জ্বালিয়ে দরজার কাছে যেতে বুঝতে পারল দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ এডউইন তাকে বন্দি করে কোথায় গেল?আচমকা আন্দ্রিয়ার গা ছমছম করে উঠল এখানে আসার পর থেকে এডউইন এক মুহূর্তের জন্য তাকে দূরে রাখেনি তাহলে এখন রাতে কোথায় গেল?আন্দ্রিয়া অনেকবার ডাকল এডউইনকে নাহ সাড়া শব্দ নেই।কক্ষের কাঁচের দেয়ালটা ঢেকে আছে ভারি পর্দায়।
আন্দ্রিয়া পর্দা সরিয়ে বাইরের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করল প্যালেসের বাইরে সব অন্ধকার অতলে হারিয়ে গেছে সেই সাথে শেয়ালের হাঁক নাম না জানা পশুরা কেমন করে যেন ডাকছে আন্দ্রিয়ার গা ছমছম কর উঠল।নিস্তব্ধতায় পেঁচার ডাকটাও ভীতিকর লাগছে আন্দ্রিয়া কেঁদে ফেলল ভয়ে আশঙ্কায় মেয়েটা থরথর করে কাঁপছে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জোরে জোরে ডাকল এডউইনকে তার ডাকে মাফিন নাট চোখ খুলেছে অথচ এডউইনের সাড়া শব্দ নেই।

এই শহরের মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তরা যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন একদল উচ্চবিত্ত তাদের হই হুল্লোড়ে ব্যস্ত।এডউইন সচারাচর এই নাইট ক্লাবে আসে আসলেও শুধু একা নয় সাথে অভ্রও আসে।তবে আজ অভ্র এখনো এসে পৌঁছায়নি এডউইন পায়ের উপর পা তুলে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে তার সামনে হাত পা গুটিয়ে বসে আছে একটি ছেলে।ছেলেটার চাহনি হাবভাবে বেশ ভালোভাবে বোঝা যায় সে এডউইনকে কতটা মান্য করে এবং ভয় পায়।
” স্যার যা যা কাজ ছিল সব শেষ আপনি যা বলবেন তাই করব।এখন যেহেতু অবসর সময় আমি কিছুটা নিজের মত করে সময় কাটাতে চাই।আমাদের কয়েকটা দিন ছুটি দিন আমরা সবাই মিলে কক্সবাজার যেতে চাই।”
” ঠিক আছে যাও।টাকা লাগলে বলবে যা লাগবে দিব সমস্যা নাই।”
অচিরেই ছেলেটার মুখে ফুটে উঠল হাসি।ঠিক এসব কারণেই এডউইনকে সে এতটা পছন্দ করে।এডউইনের সাথে ছেলেটার বেশ ভালো সম্পর্ক মূলত এডউইনের টুকটাক কিছু সিক্রেট এই ছেলেটাই জানে।ছেলেটা এডউইনের সাথে হ্যান্ডশেক করে উঠে দাঁড়াল তবে যাওয়ার আগে পেছনে ফিরে বলল,

“স্যার আমার একটা ব্যাপারে ভীষণ ভয় হচ্ছে।”
“ভয়?”
” আপনার জন্য ভয়।”
” আমার জন্য?কিন্তু কেন?”
” জোয়াকিম ভীষণ ডেঞ্জারাস পার্সন তবে সে আপনাকে মান্য করে ভালোবাসে।আপনি যে কাজটা করলেন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজটা যদি…. মানে তীরে এসে তরি ডুবে গেলে জোয়াকিম আপনাকে ছাড়বে না।জোয়াকিমের ইতিহাসে সে একটাও ফ্লপ কাজ করেনি একমাত্র আপনাকে সাপোট করে সে তার কাজ থেকে সরে এসেছে মিথ্যার প্রাচীর গড়েছে যদি এসব লিক হয়ে যায় তবে আপনি আমি আমরা শেষ।”
এডউইনের হাতে জলন্ত সিগারেট সে তা মুখে পুরল। আন্দ্রিয়া সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না বলে আজকাল সিগারেট খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছে।তার চোখে মুখে যে চিন্তার আভাস তা অতি সহজে যে কেউ দেখলে বুঝে ফেলবে।

এডউইন সিগারেটটা হাতের মাঝে নিয়েই মুচড়ে ফেলল ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে,
” শুনো মধু সংগ্রহে নামলে মৌমাছির হূল খাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।আমি মধু সংগ্রহে নেমেছি আমি যে হূল খাব না তার নিশ্চয়তা কী?”
” স্যার আপনি ইতোমধ্যে মধু খেয়ে ফেলেছেন সরি একটু বেশি ডিপ বলে ফেললাম।”
ছেলেটা জিভে কামড় বসালো ইসস বেখেয়ালি হয়ে কি বলেছে সে! এডউইন নিজেও আনমনে হেসে ফেলল।
” মৌমাছির চাকে বসে মধু খাচ্ছি বুঝতে পারছো কতটা রিস্কে আছি।যাই হোক তুমি যাও আমার বন্ধু চলে আসবে।”
ছেলেটা চলে গেল।এর কিয়ৎক্ষণ বাদেই আগমন ঘটল অভ্রের।উষ্কখুষ্ক চুল আর এলোমেলো শার্ট চোখে মুখে বিষণ্ণতা নিয়ে এডউইনের সামনে বসল অভ্র।হাতের ব্লেজারটা অন্য চেয়ারে রেখে মুষড়ে উঠল সে,

” আঁই কিচ্চি?আঁর লগে কিল্লাই এরুম ওয়?”
এডউইন কিঞ্চিৎ অবাক হয় অভ্রের আবার কী হয়েছে?ছেলেটা কি ছ্যাকাভ্যাকা খেয়ে আসলো নাকি?
” হোয়াট হ্যাপেন অভ্র?”
” কইচ্ছারে ভাই আর কইচ্ছা।মাইয়া ওজ্ঞা…”
অভ্রের কথার মাঝেই ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল এডউইন,
” কি সমস্যা স্বাভাবিক ভাবে বলো।না হলে আমি যাচ্ছি।”
অভ্র নাক টেনে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক বসালো।
” একটা মেয়েকে দেখে ভালো লেগেছে ওর সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে দামি দামি গিফট দিয়েছি একসাথে লাঞ্চ ডিনার করেছি ভেবেছি আগামী মাসেই প্রপোজ করব ওর হাবভাবে আমি শিউর ছিলাম আমাকে পছন্দ করে
কিন্তু এখন…”

” এখন?”
” ওর সুগারড্যাডি আছেরে ভাই।ওই সুগারের কাছে আমি সল্টরে ভাই সল্ট।”
এডউইন চাপা হেসে দম ছাড়ল।অভ্র যে একটা আধাপাগল সে তা ভালো করেই জানে।
” এসব নিয়ে কান্নাকাটি করছো! তুমি কি বাচ্চা?প্লিজ অভ্র এসব বাদ দাও।”
” আমার ভালো লাগছে না আমি মরেই যাব।”
” তো যাও।আমি আর আন্দ্রিয়া তোমার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে আসব।”
” এই শ্লা আমার বাবা না পুলিশ মরার আগে সুইসাইড নোটে তোমার নাম লিখে যাব একদম লকাবে তোমার বাসর করিয়ে ছাড়বে।”
” আঙ্কেলকে তাহলে আমিও জানাব তার নবাব পুত্র দুইদিনের প্রেমে পরে লক্ষ লক্ষ টাকার উপহার সেই মেয়েকে দিয়েছে।এত টাকা সে পায় কোথায়?তাছাড়া এসব টাকা অহেতুক পথে কেন খরচ করবে?”
অভ্র খুকখুক করে কেশে উঠল।কাশির সাথে এডউইনের সাদা শার্টে ওয়াইনের ছিটকা আসতে দাঁতে দাঁত চেপে তাকাল সে।অভ্রের অবস্থাটা হলো চাচা আপন প্রাণ বাঁচা।সে কথা পালটে বলে,

” সরি ভাই সরি।এসব বাদ দাও আন্দ্রিয়া জানে তুমি এখানে?”
” না সে ঘুমে।”
” কিহ বেচারি ভয় পাবে তো।তোমার সাপেরা যদি..”
” দরজা লক করে এসেছি।”
” এডউইন আন্দ্রিয়া তোমার সাথে সুখী তো?নাকি তুমি ম্যানিউপুলেইট করে ফেলেছো।”
এডউইন হো হো করে হেসে ফেলল।টেবিলে হাত ভর করে কিছুটা এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,
“একবার বিয়েটা কর অভ্র বুঝে ফেলবি এই সম্পর্কে কোন ম্যানিউপুলেইট নেই।জাস্ট ভালোবাসা।রাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা শুধু লেপ্টে থাকবে।ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যাবে বউকে ছাড়তেই ইচ্ছে করবে না।”
” এই চুপ করো।আমি অবিবাহিত সিঙ্গেল আমার এসব সহ্য হয়না প্লিজ এসব আমার সামনে বলবে না।”
অভ্র কুমির কান্নায় ভেঙে পড়ল।এডউইন ঠোঁট বাঁকিয়ে হাতে থাকা ঘড়ির দিকে নজর ঘুরালো রাত তিনটা বাজে যত দ্রুত সম্ভব তাকে প্যালেসে ফিরতে হবে।যে উদ্দেশ্যে বাইরে এসেছিল সেই কাজ হয়ে গেছে এইছাড়া আর বসে থেকে লাভ নেই।হঠাৎ এডউইনের ঘাড়ে হাত রাখল কেউ একজন এডউইন ঘাবড়ে গিয়ে পেছনে তাকাতে নেহালকে দেখে ভীষণ চমকে গেল সেই সাথে তার ঘাবড়ানো চাহনি পরখ করে নেহাল কুটিল হাসল।

” এত রাতে এখানে?বউ কোথায়?”
” আপনি?”
” এডউইন ঘামছো কেন?তোমার বউ জানে তুমি এখানে?”
” জানবে না কেন?অবশ্যই জানে।”
” কোন মেয়ে নিয়ে এসেছো ?বউ
দিয়ে কি মন ভরে না?”
এডউইন ভীষণ রেগে গেল তবে অভ্র দ্রুত চেপে ধরল এডউইনের হাত ইশারায় তাকে থামতে বললে এডউইন নিজের রাগটা সংবরন করে তবে নেহালের কথার পালটা জবাব দিতে ভুলে না।
” আপনি কোন মেয়ে এনেছেন?না মানে আপনার বউ পরপুরুষের সাথে পালিয়েছে আজ এত বছর তাও বিয়ে করছেন না অদ্ভুত!নাকি এক মেয়েতে মন ভরে না?”
অপমানে থমথমে হয়ে যায় নেহালের মুখ।এডউইন এখানে আর এক মুহূর্ত থাকার ইচ্ছা পোষণ করল না।সে নিজের ব্লেজার, ফোন হাতে তুলে বলে,
” আমাকে রাগানোর চেষ্টা করবেন না মামা আমি রিকুয়েষ্ট করছি এর পরিনাম ভয়াবহ হবে।আই রিপিট ভয়াবহ।আরেকটা কথা আমার ওয়াইফ নিয়ে কোন প্রকার ভালো খারাপ মন্তব্য আমি শুনতে চাই না,ক্লিয়ার?”

” শুয়োরের বাচ্চা তোর…”
” ওয়েট আমার জন্ম আপনার বোনের পেটে তাহলে শুয়োরটা কে?অনেক বাড়াবাড়ি করছেন আপনার মতো ছিঁচকে মানুষকে আমার জাস্ট এক সাইডের পাওয়ারে গায়েব করে দিতে পারি আর সব পাওয়ারের কথা বাদ দিলাম।”
এডউইন উলটো পথে হাটা ধরল অপরদিকে নেহাল তার পানে তাকিয়ে আছে ক্রুদ্ধ চোখে।
” আমাকে তুমি চেনো না এডউইন উইলসন তোমার প্রাণ ভোমরা ছিঁড়ে ফেলব এক নিমিষে।আমিও দেখব তোমার পাওয়ার কতটা!”

নেহাল ক্রুর হাসল।নিজের হাসি দীর্ঘ স্থায়ী করে এগিয়ে গেল সামনের দিকে।নেহালের সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয়।নেহাল যখন বিয়ে করে তার বিয়ের ঠিক সাত মাসের মাথায় তার বউ পরপুরুষের সাথে পালিয়ে যায় এক কথায় যাকে বলে পরকীয়া।লোক সমাজে লজ্জায় নিজের মুখ দেখাতে পারেনি নেহাল।সবাই তাকে নিয়ে হাসি তামাশায় লিপ্ত থাকতো।চেনা অচেনা সবাই তাকে বিভিন্ন ভাবে বাজে বাজে অপবাদ দিতে শুরু করে। বিবাহিত জীবনে নেহালের সম্পর্ক ছিল বেশ মধুর সে তার স্ত্রীকে যথেষ্ট ভালোবাসতো এবং শ্রদ্ধা করত কিন্তু কি থেকে কী হয়ে গেল!নেহাল এসব আজও মিলিয়ে উঠতে পারে না।নারীর মন এত অদ্ভুত কেন?
আজও বিয়ে করার সাহস করেনি নেহাল মনে মনে পণ করেছে আর বিয়েই করবে না। কেটে যাক জীবন বাঁচবে আর কতদিন?

প্যালেসে ফিরতে ফিরতে এডউইনের রাত চারটা বেজে গেল যখনি গাড়ি এসে প্যালেসের সামনে দাঁড়াল তখনি দেখতে পেল কক্ষের লাইট জ্বলছে তার মানে কি আন্দ্রিয়া উঠে গেছে!ভয়ে দম বন্ধ হয়ে এলো তার।
কোন মতে গাড়িটা সাইডে রেখে জঙ্গলের দিকে দৌড় লাগাল কক্ষের পেছনের সাইড থেকে ভেতরের কিছু দেখা যায় কিনা চেষ্টা করল।নাহ কিছুই দেখা যাচ্ছে না যদি পর্দা সরিয়ে রাখত তবেই দেখা যেত এডউইন বেশ কিছুক্ষণ নিরবিলি ভাবল কি করা যায় কি করবে সে?আন্দ্রিয়াকে কী জবাব দেবে?এদিকে মশারা তাকে ঘিরে ধরেছে ইচ্ছা মতো রক্ত আহারে ব্যস্ত মশার দল।এডউইন হাত চুলকে প্যালেসের দিকে গেল যা হবার হবে আন্দ্রিয়াকে যা তা বুঝিয়ে দেওয়া যাবে।
সারা প্যালেসের পশুপাখিরা ঘুমে এডউইন পা টিপে টিপে দোতলায় নিজের কক্ষে এসে উপস্থিত হলো বেশ কয়েকবার ঈশ্বরের নাম জপে দরজা খুলতে দেখতে পেল বিছানায় গুটিয়ে বসে আছে আন্দ্রিয়া মেয়েটা কেমন করে কাঁপছে এডউইনকে দেখতে পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল মাফিন নাট আন্দ্রিয়ার সম্মুখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

” কুইন!”
আন্দ্রিয়ার কান্না বেড়ে গেল এডউইনের বুকটা কেমন করছে রক্তিম কান্না মাখা আন্দ্রিয়ার মুখটা তার কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না।এই কান্না মাখা রক্তিম মুখটায় এত মায়া কেন?এডউইন ছুটে এসে আন্দ্রিয়াকে জড়িয়ে ধরল।
” কাঁদে না কুইন।আমি এসে গেছি আর কাঁদে না।”
আন্দ্রিয়ার কান্না কি থামে?মোটেও না বেচারি বেশ ভালোই ভয় পেয়েছে আতঙ্কে তার মরি মরি অবস্থা।এই একাকিত্ব সময়ে শালোমী এসেছে শুধু কি শালোমী?অনেক অনেক ফেইরিরা এসেছে তার সাথে গল্প করেছে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছে কিন্তু মন তো মানে না।
এডউইন বেড সাইডে টেবিলটায় তাকাল।ঢাকনা দেওয়া মগটা থেকে আলতো হাতে ঢাকনা সরিয়ে দেখতে পেল আন্দ্রিয়া সম্পূর্ণ শরবত শেষ করেনি।এত বড়ো ভুল!তাড়াহুড়োতে এত বড়ো ভুল করে নিজেকে নিজেই গালি দিল এডউইন।

এডউইনের দৈনিক রুটিন ভিন্ন সে দিনে ঘুমায় আর রাতে মাঝে মধ্যে প্যালেস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে অন্যত্রের উদ্দেশ্যে কিন্তু আন্দ্রিয়াকে রেখে সে বের হতে পারে না।যদি আন্দ্রিয়া শুনতে পায় এডউইন কোথাও যাবে তবে সেও বায়না করবে এডউইন চায় না আন্দ্রিয়া কোথাও যাক। তাই বিয়ের পর দিনে অথবা রাতে যত বার এডউইন বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে গেছে ততবার আন্দ্রিয়াকে শরবতের সাথে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে দিয়েছে।আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি আন্দ্রিয়া অর্ধেক শরবত খেয়েই ঘুমিয়ে যায় যার ফলে এডউইন ভেবেই নিয়েছিল আন্দ্রিয়া প্রতিবারের মতো এবারো শরবত শেষ করেছে।

” আপনি আমাকে ছেড়ে কোথায় গেলেন এডউইন? কি হলো বলুন কোথায় গেছিলেন?আমি তো মরেই যেতাম আমার কেমন লেগেছে আপনি জানেন?এই এডউইন আপনার শার্টে রক্ত কেন?”
এডউইন চমকে গেল তার শার্টে রক্ত!হোয়াট দ্যা…আন্দ্রিয়া দিশেহারা হয়ে পড়ল এডউইনের ফোল্ড করা শার্টের হাতার কনুইতে রক্ত লেগে আছে।এডউইন রক্ত দেখেই ঘেমে গেলে তার ঘামাক্ত মুখখানি দেখে আন্দ্রিয়া কেমন যেন সন্দেহের চোখে তাকাল।এডউইন নিজেই ঘাবড়ে বলে,

” শার্টে রক্ত কীভাবে!”
” এডউইন আপনার কী হয়েছে কোথায় ছিলেন আপনি?”
আন্দ্রিয়ার দিশেহারা হয়ে এডউইনের শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে না শরীরের কোথাও আঘাত নেই তবে রক্ত এলো কোথা থেকে?এডউইন শব্দ করে শ্বাস ছেড়ে বলে,
” অভ্র এক্সিডেন করেছে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম সেখান থেকেই লেগেছে।”
” কি!কীভাবে হলো?”
” গাড়ির ব্রেকে সমস্যা খুব বেশি আঘাত পায়নি অল্প পেয়েছে আমাকে ফোন করেছে না গিয়ে কি থাকতে পারি?”
” উনি এখন কেমন আছেন?”
” মাথায় হাতে পায়ে একটু চোট লেগেছে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।জানো ওর হাতের ক্ষতটা গভীর অনেক রক্ত ঝরেছে ওখান থেকেই শার্টে রক্ত লেগেছে।”
” ওহ।”
” আর তুমি এদিকে কি করলে নিজের চোখ মুখের এ অবস্থা কেন? ”

” জানেন আমি কতটা ভয় পেয়েছি!আশেপাশে কেউ নেই আমি একা এখানে বন্দি কতটা ভয়ানক ব্যাপার স্যাপার।”
” ভয় কাটিয়ে দিব?”
” আপনি পাশে থাকলেই আমার ভয় কেটে যায়।”
এডউইন বাঁকা হাসল।আন্দ্রিয়া ইতোমধ্যে রক্ত চেক করতে গিয়ে তার শার্ট খুলে দিয়েছে আন্দ্রিয়ার মন থেকে এই রাতের ছাপটুকু মুছে দেওয়া দরকার।এডউইন জানে কি করে আন্দ্রিয়াকে ভুলিয়ে দিতে হয় সে আন্দ্রিয়াকে টেনে এনে বুকে জড়াল।
” খুব ভয় পেয়েছো?”
” হুহ।”
” ঘুমাবে?”
” ঘুম কেটে গেছে।”
” তাহলে রাত টুকু নষ্ট করব কেন?”

এডউইন আন্দ্রিয়ার ঠোঁট আঁকড়ে ধরল আন্দ্রিয়া ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল এডউইনকে।
” কি সমস্যা আন্দ্রিয়া?”
” আপনি দেখছেন না নাট মাফিন তাকিয়ে আছে।”
” তো?”
” তো মানে লজ্জা নেই আপনার?”
” না নেই।আমি চাই না আমার লজ্জা হোক।প্লিজ কুইন কাম।”
এডউইন শিষ বাজাল সঙ্গে সঙ্গে মাফিন নাট একছুটে বেরিয়ে গেল।এডউইন বাতি নিভিয়ে এসে আন্দ্রিয়াকে জড়িয়ে ধরল আন্দ্রিয়ার নাকে এসে ঠেকল মদ আর সিগারেটের বাজে গন্ধ।
” এডউইন আপনি মুখ ধুঁয়ে আসুন আপনি মদ খেয়েছেন?”
” চুপ করো।তোমাকে খেতে দাও।”
” না আগে মুখ ধুঁয়ে আসুন।”

টেরিবেল পর্ব ১৯

আন্দ্রিয়ার জোরাজোরিতে এডউইন একটুও নড়ল না বরং সে ধীরে ধীরে নিজের মাঝে আকড়ে ধরল আন্দ্রিয়াকে আন্দ্রিয়া যখন নিজের প্রতি নিজেই নিয়ন্ত্রণ হারালো তখন থেমে গেল তার আদেশ নিষেধ।নিস্তব্ধ কক্ষ জুড়ে শুধু শোনা যাচ্ছে আন্দ্রিয়ার গোঙানি।আন্দ্রিয়া হাঁপিয়ে উঠে মেয়েটা গুটিয়ে গিয়ে এডউইনের কাছ থেকে দুরত্ব চায় কিন্তু এডউইন একটুও ছাড়তে রাজি নয়।

টেরিবেল পর্ব ২১