টেরিবেল পর্ব ২৪

টেরিবেল পর্ব ২৪
অনুপ্রভা মেহেরিন

তুমুল বৃষ্টিত সেই সাথে বজ্রপাতের বিকট শব্দে তৈরি হয়েছে গা ছমছমে পরিবেশ।প্যালেসের পাখিরা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে তার হই হুল্লোড় ভাবটা খুব একটা নেই।ভয়ে আন্দ্রিয়া গুটিয়ে আছে চোখে ঘুম নেই অবশ্য এই অবেলায় কে ঘুমাবে?সন্ধ্যা নেমেছে ধীরে ধীরে ঘোর তমসা দখল করেছে জঙ্গলটাকে।থেকে থেকে ভয়ে আন্দ্রিয়ার শ্বাস প্রশ্বাস অস্বাভাবিক আন্দোলিত হচ্ছে।তখনকার সেই দৃশ্য আন্দ্রিয়ার মন মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলেছে সে কি করে পারবে তার কিং এর এই ভয়ংকর রূপটা মেনে নিতে?প্যালেসে ফিরে এডউইন চুপচাপ আন্দ্রিয়াকে নিয়ে ছাদে চলে যায়।সুইমিংপুলে ঝাপিয়ে নেমে মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে গোসল করে সাথে আন্দ্রিয়াকেও করায়।সম্পূর্ণ কার্যক্রমে আন্দ্রিয়া একদম বোবা বনে গেছে মেয়েটার মুখে রা নেই কি অদ্ভুত অপ্রস্তুত অপ্রীতিকর ঘটনা।অথচ এডউইন কতটা স্বাভাবিক তার মাঝে ভাবাবেগ নেই অনুতপ্তের লেশটুকু নেই।
গোসল শেষ করে এডউইন বলল,

” কুইন ভীষণ মাথা ব্যথা করছে প্লিজ আসো চুল টেনে দাও।”
আন্দ্রিয়া তখনো বোবার রূপে ছিল এডউইন নিজ থেকে আন্দ্রিয়ার হাত টেনে নিজের মাথায় দেয়।মেয়েটা বাঁধ সাধতে পারে না চুপচাপ এডউইনের চুলে হাত বুলায়।এতেও অবশ্য এডউইন ক্ষান্ত হয়নি আন্দ্রিয়ার বুকে নিজের মাথা চেপে তবেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে।আন্দ্রিয়ার মনে হলো সে কোন দৈত্যের কাছে বন্দি হয়েছে আর দৈত্যটা তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে শ্বাস নেওয়ার তাড়া দেখালে দৈত্যটা যেন তার টুঁটি চেপে বলবে,’ শ্বাস নেওয়া বারণ।’
আন্দ্রিয়ার মাথা ধরে যায় হঠাৎ করেই আশেপাশের সব কিছুই তাকে অস্বস্তির দুয়ারে ঠেলে দেয়।আন্দ্রিয়া যখন হাঁসফাস করছিল তখনি এডউইনের ঘুম ভেঙে যায় রক্তিম চোখে আন্দ্রিয়ার পানে তাকিয়ে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” ঘুমাওনি?”
এই যাবৎ এডউইনকে মিথ্যা বলেনি আন্দ্রিয়া তবে তার ইচ্ছে হলো একটু মিথ্যা বলতে।বলতে ইচ্ছে করছে সে ঘুমিয়েছে যদি বলে সে ঘুমায়নি তবে এডউইন হাজারটা প্রশ্ন দাঁড় করাবে।তবে আন্দ্রিয়া পারেনি মিথ্যাটা গলায় এসেই থেমে গেছে।
” আন্দ্রিয়া চুপ কেন ঘুমাওনি?”
” না।”
” কেন?রাত হয়ে গেল!এতটা সময় জেগেই ছিলে?”
” ঘুম না আসলে কী করব বলুন?মাথা ব্যথা কমেছে?”
” হুম।”
এডউইন হাই তুলল পুনরায় মাথা রাখল আন্দ্রিয়ার বুকে।এডউইনের চেয়ারে নাট মাফিন একসাথে শুয়ে দুজনের চোখ বন্ধ হয়তো মনিবকে দেখে তাদেরো ঘুমের তাড়া দিল।

” আমার কুইন মুড অফ করেছে কেন?কুইন থাকবে হাসি খুশি সে না হাসলে আমি কি করে স্বস্তি পাব?”
আন্দ্রিয়া অপ্রস্তুত হাসল।তার শরীর কাপছে বুকের অস্বাভাবিক স্পন্দন এডউইন ঠিকি ধরতে পারল।আন্দ্রিয়া মেরির চলন-বলন, হাসি-খুশি সব ভাব ভঙ্গিমা এডউইনের মুখস্ত আজ হঠাৎ আন্দ্রিয়ার অস্বাভাবিক আচরণ এডউইন ঠিকি ধরতে পারল।ঘুম থেকে উঠে এডউইন তার হিংস্রতার কথা বেমালুম ভুলে গেছে অবশ্য ভুলবে না কেন?তার কাছে এসব ডাল ভাত কিন্তু আন্দ্রিয়ার মতো নরম হৃদয়ের অধিকারী কেউ আদৌ মেনে নিবে?সারাদিনের সব ভাবতে গিয়ে এডউইনের মনে পড়ল তখনকার হিংস্রতার কথা।মুহূর্তে ঢোক গিলল সে তার হিংস্রতা তবে আন্দ্রিয়ার মুখোমুখি এলো!এডউইন নিজের বিব্রত ভাবটাকে সাইডে সরিয়ে কিছুটা মন মরা হয়ে বলে,

” তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই আন্দ্রিয়া।এই জঙ্গলে আমি বছরের পর বছর টিকে আছি নিজের অধিপত্য বিস্তার করেছি নিশ্চয়ই এমনি এমনি না।আমাকে লড়াই করতে হয়েছে বর্তমানে পাগলা শেয়াল ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে এরা লোকালয়ে চলে যাচ্ছে।তুমি তো জানো না আমার একটি বিড়ালকেও কয়েকদিন আগে কামড়ে ছিড়ে ফেলেছে।আর আজ তোমাকে আঘাত করল এসব রাগ আমি এক সাথেই তুলে নিয়েছি।আমার কর্মকাণ্ডে তুমি ভয় পেয়েছো জানি।কিন্তু ভয় পেও না দেখো আমি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ তোমার কিং।”

আন্দ্রিয়া কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো।সে এডউইনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল এডউইন তার জীবনে যা বলছে ঠিক তা হচ্ছে সেই হিসাবে এখন যখন এডউইন তার ব্রেনওয়াশ করল বোকা মেয়ে আন্দ্রিয়া এডউইনের কথায় আশ্বস্ত হলো।অবশ্য আদৌ এডউইনের অস্বাভাবিক রূপ আন্দ্রিয়ার চোখে পড়েনি।সে জানে এডউইন বদ মেজাজী ব্যস এইটুকুই।আন্দ্রিয়ার মুখাবয়ব থেকে যখনি ঘন কালো মেঘের প্রভাব সরতে শুরু করল তখনি এডউইন অগোচরে ফিচেল হাসল।

” আন্দ্রিয়া?”
” হুম।”
” আমি কি বলেছি বুঝতে পারছো?তুমি নিজেই একবার ভাবো আমার এত এত পোষা প্রাণী আর আমি কি না আরেকটা প্রাণীকে এতটা জেদ দেখিয়ে আঘাত করব।প্লিজ সুইটি তুমি আমাকে বুঝো।আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে কেউ আঘাত করলে আমি সহ্য করতে পারব না।”
এডউইন আপসেট হয়ে পড়ল আন্দ্রিয়া বুঝল এডউইনের কথা সে স্মিত হেসে বলল,
” আমি বুঝতে পারছি।তবে আপনার উপর রাগটা আমার এত সহজে পড়বে না।”
” কেন?”
” আমার একটা শর্ত আছে।”
” কী শর্ত?”
” আমাকে একদিন বাইরে নিয়ে যাবেন লোকালয়ে?অনেকদিন হলো বের হই না।”

এডউইনের হাসি থেমে গেল।আন্দ্রিয়া বাইরে যাওয়া মানেই বিপদ তবুও মেয়েটাকে বোঝাতে হবে।এডউইন কথা না বাড়িয়ে বেশ আগ্রহ সুরে বলে,
” অবশ্যই নিয়ে যাব।আজ বৃষ্টি আজ কি করে বের হবে?”
” না আজ থাক। অন্য দিন।”,
” ঠিক আছে।এখন বলো ক্ষুধা পেয়েছে?কি খাবে বলো।”
” যা করবেন তাই খাব।”
” সত্যি?”
আন্দ্রিয়া ভ্রু কুচকে নিল এডউইন তার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।
” সমস্যা কি আপনার?”
” কই?”
” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
” আমি তো আমার খাবারের দিকেই তাকিয়ে আছি।”

আন্দ্রিয়া চোখ রাঙাল এডউইনকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার আগেই এডউইন তার দু’হাত বন্দি করল নিজের সাথে।বাইরে ঝড় হাওয়া বইছে কক্ষে এতক্ষণ বাতি জ্বললেও এডউইন দ্রুত উঠে মোমবাতি জ্বালাল এবং নিভিয়ে দিল বাতি।আন্দ্রিয়া বুঝতে পারছে না এডউইন ঠিক কি চাইছে!একেরপর এক বাজের শব্দে আন্দ্রিয়া কেঁপে উঠছে জানলাটা একটু খুলে দিতেই দমকা বাতাসে উড়তে শুরু করল কক্ষের পর্দা।
” এডউইন এবার কিন্তু আমার ভয় করছে।”
” তুমি ভয় পাবে এডউইন উইলসনকে আর কোন কিছুতেই না।”
” মানে?”
” ইসস কথা বলে না।ক্যান্ডেল লাইট ডিনার রেডি।”

আন্দ্রিয়া ভ্রু কুচকে নেয় এই লোকটা কি পাগল হয়েছে?ইসস কিসব বলছে এডউইনের গায়ে জড়ানো ফিনফিনে একটি সাদা শার্ট।আন্দ্রিয়ার পানে তাকিয়ে এডউইন ধীরে ধীরে শার্টের বোতাম খুলল তার আর বুঝতে বাকি নেই এডউইন কি চাইছে।মন মেজাজ এমনিতেই বিক্ষিপ্ত ছিল তার মাঝে এডউইন হঠাৎ তাকে অন্যদিকে ডুবাতে চাইছে!আন্দ্রিয়া এডউইনকে একবার ভেবেছিল বাঁধা দিবে কিন্তু তার আর হলো কই?এডউইনের ছোঁয়া ভালোবাসার উল্লাস সবটাই আন্দ্রিয়ার ভালোলাগে নিজের তৃপ্তি এডউইনের সাথেই জড়িত।সে নিজেকে বাঁধা দিতে পারলে তো এডউইনকে বাঁধা দেবে।আবছা আলোয় এডউইনের উন্মুক্ত দেহটা আঁকড়ে ধরল আন্দ্রিয়াকে।মেয়েটার কাঁধের উপর ফ্রকের ফিতা খুলে দিতে একপাশ উন্মুক্ত হয়ে পড়লে।এডউইনের ভালোবাসার আঘাতগুলো শুকিয়ে গেছে তবে দাগটা এখনো উবে যায়নি।এডউইন দাগে হাত বুলায়,

” দাগগুলো শুকিয়ে গেছে।”
” হু।”
” আজ আবার গাঢ় করে দেবে।”
” এডউইন প্লিজ না, ব্যথা লাগে।”
এডউইন হাসে আন্দ্রিয়াকে টেনে আনে বুকের কাছে।
” এডউইনের ভালোবাসা সহ্য করা এত সহজ নয়।কিং ইজ কিং।”
আন্দ্রিয়া লজ্জায় তাকায় সেই চকচকে বাদামী চোখ জোড়ায় এই যে এই কামুক চাহনিতে আটকে যায় সে।এডউইনের কাছে নিজেকে সপে দেয় বারংবার।আন্দ্রিয়া নিজ থেকেই এডউইনের ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।হুড়মুড়িয়ে ঘরে প্রবেশ করা বাতাসে মুহূর্তে নিভে যায় মোমবাতি।অন্ধকারে এডউইনের দখলদারি বেড়ে যায় থেমে থেমে ভেসে আসে আন্দ্রিয়ার শীৎকার ধ্বনি।বজ্রের শব্দে লাফিয়ে উঠে মাফিন অন্ধকারে তার ভয় বাড়ে। মিয়াও মিয়াও শব্দে এডউইন প্রচন্ড বিরক্তবোধ করে সে যখনি আন্দ্রিয়াকে ছেড়ে মাফিনের কাছে যাবে তখনি মাফিন থেমে যায় হয়তো আবার ঘুমিয়ে পড়ছে।এদিকে আন্দ্রিয়া এডউইনকে টেনে এনে নিজের কাছে বন্দি করে এবং ফিসফিসিয়ে বলে,

” খবরদার এডউইন রেগে গিয়ে ওদের আবার আঘাত করবেন না।”
” করব না।”
” সত্যি?”
এডউইন আন্দ্রিয়ার কথায় জবাব দিল না।হয়তো জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি সে মেতে আছে তার আন্দ্রিয়ার দেহের প্রতিটি ভাজে।রাত যত গভীর হয় বৃষ্টির প্রকোপ ততই বাড়ে সেই সাথে বাড়ে এডউইনের পাগলামো।

পাপেট নিজের কার্মকাণ্ডে নিজেই খিলখিলিয়ে হাসছে।ইদানীং তার খুনাখুনির প্যাটান চেঞ্জ হয়েছে।যে পাপেট কখনো নারী ছাড়া কাউকে হত্যা করত না সেই পাপেট কয়েকদিন আগে একটা বাচ্চা ছেলেকে মেরেছে।এছাড়াও পাপেট দুইদিনের বেশি তার শিকারকে বাঁচিয়ে রাখে না অথচ মালিহাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে।পাপেটের বড্ড ইচ্ছা মালিহাকে হত্যা করবে তিলতিল করে।যেমন এখন তার পছন্দের ধারালো ছুরি নিয়ে এগিয়ে গেছে মালিহার কাছে।মালিহা আতঙ্কিত চোখে তাকায় পাপেটের পানে,
” ভয় পাচ্ছো মালিহা?”

কাপড় দিয়ে মালিহার মুখ বেশ শক্ত করে বাঁধা।সেই সাথে চৌকির সাথে দুইদিকে বেঁধে রাখা হয়েছে মালিহার হাত পা।পাপেট মালিহার সাথে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন করেনি মূলত তার ইচ্ছাও জাগেনি।পাপেট নিজে একজন ঘৃনিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও সে কি না অন্য ব্যক্তিকে ঘৃণা করে।ব্যাপারটা একটুআধটু হাস্যকর বটে।পাপেট মালিহার পরনের জামাটা তুলে দিল এবং উন্মুক্ত করল দু’পা।পায়ের অংশ থেকে মালিহার মাংস কাটা হবে এবং সেই মাংস আবার মালিহাকেই খাওয়ানো হবে।পাপেট কতটা সাইকো হলে তার কাছে এসব স্বাভাবিক এবং আনন্দের ব্যাপার স্যাপার।নিজের ভাবনা অনুযায়ী কাজ করতে শুরু করল সে ধারালো ছুরির সাহায্যে মালিহার পা থেকে ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করল মাংস।চিনচনে ব্যথায় মুহূর্তে চেচিয়ে উঠল মালিহা মুখ বন্ধ থাকার কারণে কেমন যেন গোঁ গোঁ শব্দ হলো।
রক্তে ভেসে গেল চৌকি।তীব্র ব্যথায় ছটফট ছটফট করতে করতে পাঁচ মিনিটে জ্ঞান হারাল মালিহা।পাপেট বিস্তৃত হাসে এগিয়ে যায় কিচেনে।মালিহার মাংসের টুকরোগুলো যত্ন সহকারে টুকরো করে বেশ তেল মশলা দিয়ে ঝাল ঝাল করে রেডি করল মাংস কষা।পাপেট নিজের রান্নায় নিজেই মুগ্ধ সে বেশ হাস্যোজ্জ্বল মুখে সারা রান্নাঘরে পাইচারি করে এবং বলে,

টেরিবেল পর্ব ২৩

” আমি রান্নায় বেশ ভালো।নিজের রান্নার প্রেমে আমি নিজেই বারবার পড়ি তবে আজ আবার পড়লাম।মাংসের ঝোলটা এতটা লাল আর দুর্দান্ত হয়েছে তা বলার মতো না।গরম গরম মাংস কষা দিয়ে এক প্লেট ভাত অনায়াসে সাবাড় করা যায়।এই যে বর্ননা দিচ্ছি আপনাদের কি লোভ লাগছে?কি সোনামনিরা একটু চেখে দেখবে নাকি – পাপেট স্পেশাল ঝাল ঝাল মাংস কষা?আমি কিন্তু মাইন্ড করব না।”

টেরিবেল পর্ব ২৫