টেরিবেল পর্ব ৯

টেরিবেল পর্ব ৯
অনুপ্রভা মেহেরিন

এডউইনের হাতে জলন্ত সিগারেট।ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছেড়ে নিজেকে কিছুটা চিন্তামুক্ত করতে চাইলেও চিন্তারা তার মস্তিষ্ক দখল করেছে।এত তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পূর্ণ এডউইন কি না এই প্রশ্নেরি উত্তর পেল না আন্দ্রিয়া কেন কাঁদছে?তবে কি আন্দ্রিয়া তার সাথে কমফোর্ট নয় নাকি এডউইনকে এখনো মন থেকে গ্রহণ করতে পারছে না।আচ্ছা এমনো তো হতে পারে এডউইনের ভালোবাসার ছোঁয়াগুলো একটু বেশি হিংস্র ছিল।মানুষের সান্নিধ্য ছেড়ে বেশ কয়েক বছর আগেই পশুপাখির প্রতি ভালোবাসায় মনোনিবেশ করেছে।অবশ্য পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা ছিল সেই ছোট থেকেই কিন্তু মানুষের প্রতি কেন জানি ভালোবাসা জন্মায়নি।জন্মায়নি অবশ্য ভুল কথা যা একটু আশেপাশের মানুষদের ভালোবাসে ছিল সবটাই অতীতের কলুষিত স্রোতে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে।

আন্দ্রিয়াকে ভালোবাসার মতো স্পর্ধা এডউইন দেখিয়ে ছেড়েছে।আন্দ্রিয়া শুধু যে তার ভালোবাসা তা কিন্তু নয় আন্দ্রিয়া মেয়েটার প্রতি শারীরিক ভাবে টান অনুভব করে এডউইন।এই টানকে লাগাম দিয়ে যাচ্ছে অনেকটা দিন মেয়েটা আচমকা কেন এলো?কেন এডউইনের শান্ত জীবনে ঝড় তুলে দিল?আন্দ্রিয়াকে কাছে পেলেই এখন শান্তি লাগে তবে জ্বলে উঠে শারিরীক চাহিদা এডউইন প্রতিবার নিজেকে আটকাতে ব্যর্থ হতে গিয়েও হয় না।নিজের তারিফ আজকাল নিজেই করে সে।
আন্দ্রিয়ার কান্না থেমেছে তবে মেয়েটা শান্ত মোহে বিছানায় বসে।বাইরে আচমকা শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে এই ঘন জঙ্গলে এসব যে শোনা যাবে তা অস্বাভাবিক নয়।আন্দ্রিয়া মাথা তুলে তাকায় এডউইনের পানে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” এডউইন।”
আন্দ্রিয়ার একটা ডাক এডউইনের ভেতর জ্বলতে থাকা আগুন নিভিয়ে দেয়।দ্রুত হাত থেকে সিগারেট ফেলে ছুটে আসে আন্দ্রিয়ার কাছে।আন্দ্রিয়াও কিছুটা এগিয়ে এসে এডউইনের গালে চুমু খায় উন্মুক্ত বুকে হাত রাখতে তার হাত চেপে ধরে এডউইন।
” আন্দ্রিয়া মেরি আবার ভুল করছো আমায় এতটা দূর্বল করে দিও না।”
“আমি আপনাকে চাই এডউইন?”
” তবে কাঁদলে কেন?”
” যেভাবে যা হচ্ছিল তা আমি চাই না।”
এডউইনের ভ্রু কুচকে গেল।আন্দ্রিয়ার ভনিতা সে কিছুই বুঝতে পারছে না।কি চায় মেয়েটা?কি বলতে চায়?

” আন্দ্রিয়া আমায় বলো কি হয়েছে?”
” আপনি আমাকে সত্যি ভালোবাসেন?”
” ইয়েস।ইয়েস মাই কুইন।তোমার মনে কি সন্দেহ?ঠিক আছে আরো কিছুটা সময় নাও।”
” না কোন সন্দেহ নেই।আমি যা চাই আপনি তা চাইবেন?”
এডউইন আন্দ্রিয়ার গালে হাত রাখল মেয়েটাকে ভরসা দিয়ে বলল,
” একবার বলো, শুধু একবার।এডউইন উইলসন তার ভালোবাসা পেতে সব করতে রাজি।”
” বেশ তবে চলুন আমরা বিয়ে করি।”

এডউইন মুহূর্তে চমকে গেল।বিয়ে!বিয়ের ব্যাপারটা তার মাথায় আসেনি মূলত বিয়ের নাম তুললেও এখানে অনেক টানাপোড়ন দেখা যাবে যা এডউইন মোটেও চায় না।যেমন এডউইনের মা জেনে যাবেন আন্দ্রিয়ার কথা।সে চায় আন্দ্রিয়া শুধু তার সাথে থাকবে তার নিকট থাকবে।তাদের মাঝে আর কোন মানব অস্তিত্ব আসুক তা চায় না।সবচেয়ে বড় কথা আন্দ্রিয়া বিয়ে নিশ্চয়ই একা করতে চাইবে না?সে অবশ্যই তার পরিবারের উপস্থিতি চাইবে কিন্তু তার চাচারা এডউইনের মতো একটা আজব জীবন ধারণ কারীর কাছে কি করে বিয়ে দেবেন আন্দ্রিয়াকে?হঠাৎ চিন্তায় এডউইনের মাথা খারাপ হয়ে গেল আন্দ্রিয়াকে না পাওয়ার নিশ্চয়তা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ল।
এডউইনের চিন্তাগ্রস্ত মুখখানী আন্দ্রিয়া অতি সহজে ধরে ফেলল তাই তার যুক্তি দিয়ে বলল,
” সম্পর্কটা এভাবে কতদিন বয়ে বেড়াব?বিয়েটা হয়ে গেলে আমাদের মাঝে আর কোন বাঁধা থাকবে না লুকোচুরি থাকবে না।সম্পর্ক পাকাপোক্ত করতে আমাদের বিয়ে করা উচিত।”

এডউইন হঠাৎ বাকা হাসল।আন্দ্রিয়ার থুতনি তর্জনির আঙুলের সাহায্যে তুলে ধরে ঠোঁটের কোণে চুমু খেল।হঠাৎ এডউইনের মুখচ্ছবি পালটে যাওয়াটা ধরতে পারলো আন্দ্রিয়া তবে সে ভাবল এডউইন হয়তো বুঝতে পারছে তার যুক্তিটা।কিন্তু এডউইন যে ভাবছে অন্য কথা।এডউইনের মাঝে যে স্বার্থপর সত্তাটা আছে সে পৈশাচিক হেসে বলে,
” আন্দ্রিয়া মেরি, মাই কুইন তুমি যে আমার রাস্তাটা এত সহজ করে দিচ্ছো তা বলার ভাষা নেই।নিজেই নিজেকে এডউইনের পিঞ্জিরায় বদ্ধ করতে চাইছো?এডউইন উইলসনের প্যালেসে তোমায় স্বাগতম অনেক আগেই জানিয়েছি তবে এবার স্বাগতম জানাতে চাই এডউইনের দুর্বোধ্য জীবনে।মাই লাভ, আই এম রেডি টু ডু এভরিথিং ফর ইউ।”
এডউইনের দুর্বোধ্য হাসিটুকুর অর্থ আদৌ বুঝতে পারল না আন্দ্রিয়া সে চেপে ধরল এডউইনের হাত।

” কি হলো আপনি রাজি?”
” ইয়েস।ইয়েস মাই কুইন।”
” এডউইন আমাদের বিয়েতে কে কে থাকবে?মানে আপনার দিক থেকে?আপনি তো বলেছিলেন আপনার মা…”
আন্দ্রিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই এডউইন বলল,
” সময় মতো জানতে পারবে।জীবনের বাকি জটিলতা তো তুমি জানো না।”
” তা ঠিক।”
আন্দ্রিয়া কিছুটা সময় চুপ রইল।মনে জমে থাকা কথাগুলো সাজিয়ে এডউইনের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আগেই এডউইন আন্দ্রিয়ার ঠোঁট চুমু খেয়ে বলে,
” কুইন আর কোন কথা নয় ঘুমাতে যাও।তোমার জন্য খুব অল্প সময় আছে এই রাতটা নষ্ট করো না।”
এডউইন কিছুটা থেমে আন্দ্রিয়ার বা হাত জড়িয়ে বলে,
“যেদিন এই হাতে আমার রিং পড়বে সেদিন থেকে তোমার রাত দিন সবটাই এডউইন উইলসনের।হয়তো ঘুমটাও হারাম হয়ে যাবে।”
আন্দ্রিয়া হেসে ফেলল দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।

” আজ রাত আমার ঘুম হবে না এডউইন।”
” তাহলে আমার কাছে থেকে যাও অবশ্য আমি কিন্তু কন্ট্রোলে নেই।”
এডউইন চোখ মারল আন্দ্রিয়া তির্যক হেসে চলে গেল নিজ কক্ষে।
অবশেষ আন্দ্রিয়া মেরি এডউইনকে পেতে চলেছে তার স্বপ্নের কিং ইসস এ কি করে সম্ভব!আচ্ছা কল্পনার মানুষেরা সত্যিই কি বাস্তবে এসে ধরা দেয়?এটা আদৌ সম্ভব ছিল?আন্দ্রিয়ার কাছে ধীরে ধীরে অসম্ভবের প্রশ্নরা সম্ভবে প্রস্তুত হয়েছে।হঠাৎ আগমন ঘটল শালোমীর।শালোমীকে দেখেই আন্দ্রিয়া কিছুটা লজ্জায় পড়ল,
” কুইন আপনি ব্লাশ হচ্ছেন!”
” কই?আজকাল তুমি একটু বেশি কথা বলো শালোমী।”
” ওও তাই নাকি?তবে আজ যা করলেন আমি আপনাকে পরিপূর্ণ সমর্থন করছি।জলদি জলদি এডউইনকে বিয়ে করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করুন আন্দ্রিয়া মেরি।”

” এডউইন আমাকে সত্যি ভালোবাসে?”
” তা আর বলতে?উনি আপনার জন্য কতটা অনিয়ন্ত্রিত আপনি কি বুঝতে পারেন না?”
” পারি।তবে জীবনের এই সিদ্ধান্তটা একা নেও কি ঠিক হয়েছে?আমি সন্দিহান শালোমী।”
ফেইরি শালোমী কিছুটা সময় উড়ে বেড়ালো মূলত সে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে।আন্দ্রিয়ার প্রশ্নে সে ভারি বিরক্ত।মেয়েটা সবকিছুতে এত সন্দিহান কেন?এডউইনের মতো ছেলেকে পেয়েও সে সবুর করছে না!
” আন্দ্রিয়া মেরি আপনি বরং আপনার চাচাদের কাছে ফিরে যান তারা আপনাকে ধরে বেঁধে যার তার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে সেটাই ভালো হবে।”
” এই না না।এডউইন ছাড়া আর কাউকে আমার মনে ধরেনি বিশ্বাস করো কাউকে না।”
” এখনো বুঝতে পারছেন না?আপনার ঈশ্বর আপনার জন্য এডউইন উইলসন’কে সৃষ্টি করেছেন।”
শালোমী হঠাৎ গায়েব হয়ে গেল।আন্দ্রিয়া বেশ কয়েকবার ডাকল ফেইরিটাকে তবে সাড়া পেল না।তার কানে যেন এখনো লেগে আছে শালোমীর সেই কথা,”আপনার ঈশ্বর আপনার জন্য এডউইন উইলসনকে সৃষ্টি করেছেন।”

মার্ভেলাস বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীর অভাব নেই প্রায় সারাটা সময় এখানে ব্যস্ততা লেগেই থাকে।এই প্রতিষ্ঠানের মূল গেটে দাঁড়িয়ে রয় দুজন দারোয়ান একজন রমিজ অন্যজন মঞ্জু।এই প্রতিষ্ঠেন সবাই তাদের মামা বলেই সম্বোধন করে।এই আদরের ডাকটার মর্যাদা একজন আদৌ রাখতে পেরেছে বলে মনে হয় না।স্বভাব সুলভ ভাবে মঞ্জুর নজর খারাপ বলা যায় তার সামনে কোন মেয়ে হেটে গেলে হোক সে ছোট কিংবা বড় বা বৃদ্ধা সবার দিকেই কলুষিত নজর বুলিয়ে দেয় ।রমিজ প্রথম প্রথম মঞ্জুর এসব কান্ডকারখানায় হুশিয়ারি দিলেও ধীরে ধীরে রমিজের মাঝেও এসব নোংরামি বেড়ে গিয়েছে।
রমিজ বেশ ঠাট্টার সুরেই বলল,

” মঞ্জু ভাই শুনছো বড় স্যাররা নাকি মানবন্ধনে যাবে পরপর শহরে বেশ কয়েকটা মেয়ে গায়েব এসব নিয়ে পুলিশের কেন কোন তৎপরতা নাই।এসব সবার নজরে আসা দরকার তাই আর কি মানবন্ধনের আলোচনা চলতেছে।মার্ভেলাসেও তো কয়েকজন নাকি গায়েব।দেখবেন পুলিশ আসলে সবাইরে জেরা করব।”
হঠাৎ করেই মঞ্জু ঘাবড়ে গেল।ঢোক গিলে আশেপাশে তাকাল জহুরি দৃষ্টিতে।তার চাহনিতে রমিজ ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে,
” মঞ্জু ভাই ডরাও কেন মিয়া?”
“ক..কই ডরাই?এই বা*লের মানবন্ধনের কথা কে তুলছে?”
” মার্টিন স্যার তুলছে।”
” সব কাজে মার্টিন স্যারের একটু বেশি বাড়াবাড়ি।আমার বা*লের মানবন্ধন।এসব বিদেশি বালডি দেশে আইসা তামশা লাগায় কেন?”
রমিজ ঘাবড়ে গেল কেউ শুনে ফেললে চাকরি যাবে সুনিশ্চিত।

” আস্তে কথা বলেন মঞ্জু ভাই কেউ শুনে ফেলবে।”
মঞ্জু চুপসে গেল তবে চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে।এসব মানবন্ধন হওয়া মানে সাধারণ মানুষ সতর্ক হবে চারিদিকে আলোচিত হবে,সংবাদপত্র কিংবা টিভি চ্যানালে এসব কথা উঠবে সাংবাদিকরা আরেক ঝামেলা এরা কেঁচো খুঁজতে সাপ বের করে ছাড়ে।
মঞ্জুর কপালে জমতে থাকা ঘাম হাতের উলটা পিঠে মুছে রমিজের উদ্দেশ্যে বলে,
” রমিজ ভাই থাকেন।বাথরুম থেকে আসি।”
মঞ্জু চলে গেল তার চিন্তারা পিছু নিয়েছে।ওয়াশরুমের দিকে যেতেই চোখে পড়ে একটা বাচ্চা মেয়ে আয়নায় দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে বাচ্চাটার বয়স কতো হবে?দশ কি এগারো।বাচ্চা মেয়েটাকে একা দেখেই মঞ্জুর লালসা জেগে উঠল নিজেকে দমিয়ে রাখা বড্ড কষ্ট হচ্ছে কোন মতে নিজেকে থামিয়ে বলে,

” মামনি কার সাথে এসেছো?”
” পাপা দিয়ে গেছে।”
” গান শেখো?”
” তুমি কি করে জানলে?”
” আমি অনেক কিছুই জানি আমার সাথে যাবে?”
” কোথায় যাব?”
” আসো আমার সাথে আসো।”

একটা দিন কেটে গেল বিয়ে সম্পর্কে এডউইন আর কোন কথাই তুলেনি কিংবা আন্দ্রিয়াকে তুলতে দেয়নি।বরং গতকাল সকালে নাস্তার টেবিলে আন্দ্রিয়াকে জানালো, “আন্দ্রিয়া মেরি আমি চাই না এই সম্পর্কে কোন খুঁত থাকুক।তুমি কি আমাকে সত্যিই বিয়ে করতে চাও?আরেকবার ভাবো।”
আন্দ্রিয়া তো আর কিছুই ভাবতে চায় না কি ভাববে সে?তার মন শরীর সবটাই এডউইনের নামে জপ করছে।যাই হয়ে যাক সে প্রস্তুয় এডউইনের কাছে নিজেকে সপে দিতে।
এডউইনের প্যালেস ঘোরা হয়নি আন্দ্রিয়ার এই ফাঁকা সময়টুকুতে প্যালেসটা ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় সে।এডউইন তার পশুপাখিদের পরিচর্যায় ব্যস্ত আন্দ্রিয়া সেই সুযোগে প্যালেসটা ঘুরে দেখছে।

প্যালেসে ঢুকতেই বিশাল হলঘর মাঝ দিয়ে চিড়ে গেছে চওড়া সিড়ি।সিলিং-এ ঝুলছে বিশাল বড়ো বড়ো ঝাড়বাতি।সেই সাথে প্যালেস জুড়ে আছে ইনডোর প্লান্ট কিংবা কয়েকটা আর্টেফেশিয়াল ফুল গাছ।দোতলায় বেশ কিছু ঘর আছে তার সাথে দুইটা খোলামেলা ঝুলন্ত বারান্দা আছে।বারান্দায় পা ফেলতে চমকে যায় আন্দ্রিয়া সারাটা বারান্দা মাছের দখলে।কয়েকটা একুরিয়াম এবং ছোট্ট একটা জলাশয় সেই জলাশয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছে একটা ছোট ফোয়ারা।জলাশয়ে কিছু জীবন্ত গাছ দেখা যাচ্ছে পানির নিচে এবং উপরে।টপটপ পানি ঝরছে সেই সাথে রঙিন মাছেরা খেলা করছে।আন্দ্রিয়া মুগ্ধ চোখে দেখল সবকিছু।ছোট মাছ ধরার লোভে আন্দ্রিয়া জলাশয়ে হাত ডুবিয়ে দেয় এবং একটি মাছ ধরেও ফেলে।কমলা রঙের মাছটি আন্দ্রিয়ার হাত থেকে লাফিয়ে ছিটকে পড়ে মেঝেতে তখনি সেখানে উপস্থিত হয় এডউইন।

তবে এডউইনের চোখ মুখ স্বাভাবিক লাগছে না বড্ড অস্বাভাবিক রাগান্বিত লাগছে।
” মাছটাকে মারছো কেন আন্দ্রিয়া?”
” ক..কই?”
এডউইন আলতো হাতে মাছ তুলে ছেড়ে দিল জলাশয়ে।
” এই মাছ গুলো ভীষণ নাজুক।তাছাড়া তুমি যে এখানে হাত চুবিয়ে দিলে তোমার হাতে জীবাণু থাকতে পারে।”
” সরি এডউইন আমার সতর্ক থাকা উচিত ছিল।”
এডউইন মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।এডউইনের মেজাজ কেন গরম?সেই প্রশ্ন আন্দ্রিয়ার মনে খচখচ করছে তাই নিজেকে দমানোর বৃথা চেষ্টা না করে আন্দ্রিয়া বলে,
” এডউইন আপনাকে রাগান্বিত লাগছে কেন?”
” এমনি।”

এডউইন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।সে কি করে বলবে তার মা বিয়ের সংবাদ পেয়ে ভীষণ রেগে গেছেন।কিন্তু কেন রেগে গেছেন তা আন্দ্রিয়াকে ঘুনাক্ষরেও বলা যাবে না।আন্দ্রিয়া নিশ্চয়ই এসব নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তাই এডউইন তার মায়ের ব্যাপারটা আড়াল করে ছাদের দিকে গেল।আন্দ্রিয়াও গেল তার পিছুপিছু।
ছাদে উঠেই স্তব্ধ বাকরুদ্ধ আন্দ্রিয়া এত ঘন জঙ্গল যে সবুজ আর সবুজ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।মাথার উপর ঘুরছে একদল চিল এরা এখানে কেন ঘুরছে?আন্দ্রিয়ার ভীষণ ভয় লাগলো অথচ এডউইন নিস্তব্ধ নিশ্চুপ।এডউইন আকাশের পানে তাকাল চকচকে সাদা আকাশ তার মাঝে একদল চিল কি সুন্দর উড়ছে হঠাৎ এডউইন শিষ বাজাতে সব চিল দ্রুত ছাদের আশেপাশে ঘুর‍তে লাগল আন্দ্রিয়া ভয়ে নিজেকে আড়াল করে বলে,

” আপনি চিলও পালেন?”
” না ওরা মুক্ত।তবে আমার ডাকে সাড়া দিতে বাঁধ্য।”
আন্দ্রিয়া ভেবে পেল না এই লোকটা কি আসলেই মানুষ নাকি কোন তান্ত্রিক?আন্দ্রিয়া সন্দেহের জেরে মজা করেই বলল,
” এডউইন আপনি কি আসলেই মানুষ নাকি অন্যকিছু?”
” আন্দ্রিয়া মেরি, আমি এক অভিশপ্ত কিং”
আন্দ্রিয়া চমকে গেল এমন অভিশপ্ত রাজা-রানি রাজপুত্র-রাজকন্যার গল্প সে অনেক পড়েছে।তারা দীর্ঘদিন জঙ্গলে থাকে কিংবা কেউ ব্যাঙ,সাপ,হাস হয়ে যায়।
তার মানে কি এডউইন এমন কিছু!এডউইন আন্দ্রিয়ার পানে তাকাল ছেলেটার আজ কি হয়েছে?এই রাগান্বিত লাগছিল এখন আবার মনে হচ্ছে তীব্র মনখারাপেরা ঘিরে ধরেছে এডউইনকে।এডউইন আন্দ্রিয়ার চোখে চোখ রেখে বলে,

টেরিবেল পর্ব ৮

” আন্দ্রিয়া?”
“হুম?”
” আমায় একটু জড়িয়ে ধরবে?শান্তিতে দুচার মিনিট থাকতে চাই।”

টেরিবেল পর্ব ১০