ডার্কসাইড পর্ব ১২
জাবিন ফোরকান
আসমানের হুডি।
রোযা আন্দাজ করেছিল হাসপাতালে তাকে কে বি গ্রুপের লোকদের মোকাবেলা করতে হতে পারে।তাই সালোয়ার কামিজ পাল্টে আসমানের হুডি পরিধান করেছিল যেন চলাচলে সুবিধা হয়।
স্থির দৃষ্টিতে আসমানের দিকে কয়েক মিনিটখানেক তাকিয়ে রইলো রোযা।আসমানের অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছেনা সে কৌতুক করছে।সে এবং কৌতুক দুই ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা। নিজের নিজের চাপড় দিতে ইচ্ছা হচ্ছে রোযার।কি ভেবেছিল সে?উপন্যাসের নায়কদের মতন আসমান তাকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করবে কিংবা প্রয়োজনে কোলেও তুলে নেবে?কোন দুঃখে?কি ঠেকা পড়েছে আসমানের?রোযা কি সেই উপন্যাসের নায়িকা কিংবা সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতি?
তাই বলে এভাবে হুডির কথা জিজ্ঞেস করতে হবে?নায়িকা কিংবা দেবী না হলেও অন্তত একজন সাধারণ মানুষ তো সে!
রোযা নিজেও বলতে পারবেনা তার শরীরে কোন শক্ত ভর করলো।উভয় হাত বাঁধা থাকায় সে সামনে ঝুকলো।আসমান মাথা কাত করে তার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছিলো।সুযোগ বুঝে রোযা সজোরে আসমানের কপালে নিজের কপাল ঠুকে দিলো!উবু হয়ে বসে থাকায় আসমান ভারসাম্য হারিয়ে ধপ করে পড়ল মেঝেতে, বাম হাতে চেপে ধরলো নিজের কপাল।তার অনুভূতিশূন্য দৃষ্টিতে বর্তমানে ভাসছে এক বিস্ময়।
– হোয়াট ওয়াজ দ্যাট ফর?
– শুকরিয়া করুন হাত মুক্ত নেই।থাকলে চড় দিতাম!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দাঁতে দাঁত পিষে উচ্চারণ করলো রোযা।তার ক্ষোভ লক্ষ্য করে আসমান নিজের কপাল ডলতে ডলতে নিঃশব্দে চেয়ে রইলো।এই মেয়ের মাঝে ভয়ডরের অনুভূতি উধাও হলো কবে?প্রথম প্রথম তো আসমানকে দেখলেও কাপাকাপি করার অভ্যাস ছিল।আর এখন কিনা ষাড়ের মত গুতোতেও ছাড়ছেনা!এ কি মুসিবত?
আসমান এবং রোযার মধ্যকার অস্বস্তিকর নীরবতা ছেদ করলো লিফটের ডিং করে শব্দ।উভয়েই নজর ঘুরিয়ে তাকালো।দরজা খুলে যেতেই গ্রাউন্ড ফ্লোরে পা রাখলো কেবিনবয়ের পোশাক পরিহিত….
– নিহাদ!
অস্ফুট স্বরে বিড়বিড় করলো রোযা।কয়েকবার চোখ পিটপিট করলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে। হ্যাঁ, নিহাদই।কোনো পার্থক্য নেই।একই সুদর্শন চেহারা, বিস্তৃত ঠোঁট এবং উৎফুল্ল হাসি।ফোঁড়ানো কানে ছোট্ট একটি পাথরখচিত দুল, কালো বাদামী মিশেলের মসৃণ চুলরাশি।শুধুমাত্র বাইকসুটের পরিবর্তে পরিধানে রয়েছে হোমকেয়ার হসপিটালের কেবিনবয়ের শুভ্র বর্ণের ইউনিফর্ম।
লিফট থেকে বেরিয়েই চারদিকের ধ্বংসযজ্ঞ খেয়াল করে নিহাদের ঠোঁটে তীর্যক হাসির উৎপত্তি ঘটলো।মৃ*তদে*হ ডিঙিয়ে এগোতে এগোতে সে বললো,
– এভরিথিং ক্লিয়ার।সিসিটিভি রুমের সবাই ফিনিশ। ফুটেজও ডিলিট।আর গ্র্যান্ডপা ইজ স্লিপিং পিসফুলি।
কাকে রিপোর্ট প্রদান করছে সে?কি অদ্ভুত!বি*স্ফা*রিত দৃষ্টিতে আসমানের দিকে তাকালো রোযা।এই বান্দা কি নিহাদকেও জড়িয়েছে এসবের মাঝে?আসমান অবশ্য রোযার দিকে চেয়ে নেই, তার দৃষ্টি এগিয়ে আসতে থাকা নিহাদের উপর আবদ্ধ।
– ডক্টর ওয়াসিম আহমেদও বর্তমানে ঠিক আছেন।
শেষ বাক্যটি উচ্চারণ করে আসমানের সামনে এসে থামলো নিহাদ।আসমান উঠে দাঁড়ালো।মৃদু কন্ঠে ব্যক্ত করলো,
– গুড ওয়ার্ক।
বিস্তর হাসলো নিহাদ।দুই আঙ্গুলে আসমানের উদ্দেশ্যে স্যালুট ঠুকে পরক্ষণে মেঝেতে বসে থাকা হতবাক রোযার দিকে তাকালো সে। ভ্রুজোড়া তার উঁচু হয়ে উঠল কৌতুকের ভঙ্গিতে।জিহ্বা দাঁতে ঠেকিয়ে চুক চুক শব্দ করে আফসোসের সাথে সে বললো,
– অওও…. পুওর থিং!
তেতে উঠল রোযা। জিভ বের করে তাকে ভেঙিয়ে হাসতে হাসতে তার হাতের দড়ি খুলতে আরম্ভ করলো নিহাদ।আসমান চারিপাশে একবার নজর বুলিয়ে কাঁধের উপর দিয়ে পিছনে তাকিয়ে হঠাৎ বিড়বিড় করলো,
– ডোন্ট প্রোভোক…শি বাইটস্!
আনমনে নিজের কপালে আঙুল বোলালো আসমান।
নিজের কপালে কোমল স্পর্শে নিদ্রাভঙ্গ হলো ইউনূস রহমানের।অতি যত্ন এবং ভালোবাসার মিশ্রিত এই স্পর্শ কার অনুভবে তার মোটেও বেগ পোহাতে হলোনা।মিটমিট করে চোখ মেলে চাইলেন তিনি।নিজের উপর ঝুঁকে থাকতে দেখলেন হাস্যোজ্জ্বল মায়াবী চেহারাটি।তার শুষ্ক ঠোঁটে মুহূর্তেই প্রস্ফুটিত হলো হাসির পুষ্পধারা।
– চড়ুই!
নিজের দাদুর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো রোযা।বিড়বিড় করলো,
– কেমন আছো দাদু?
– খুব ভালো।তোমার কপালে কি হয়েছে?
চিন্তিত হয়ে শুধালেন ইউনূস।তাতে নিজের কপালের ব্যান্ডেজ ছুঁয়ে রোযা বিস্তর হেসে জানালো,
– চিন্তা করোনা দাদু,তেমন কিছু নয়।ওই বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম হে হে…!
– দেখেশুনে চলতে পারোনা?বেশি ব্যথা পেয়েছ? দেখি!
– না দাদু! একদম না।হালকা একটু ছড়ে গেছে শুধু।আমি একদম ঠিক আছি।
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ইউনূস।তারপর বললেন,
– আচ্ছা….কিন্তু তুমি এই সময়ে, এখানে?
আড়চোখে দেয়ালঘড়ির দিকে চাইলেন ইউনূস।রাত এগারোটা প্রায়।এত রাত্রিতে সাধারণত রোযা তার সঙ্গে দেখা করতে আসেনা।
– আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি দাদু, বাড়িতে।
রোযার মিষ্টি কন্ঠে ইউনূস বিস্মিত হয়ে রইলেন।বাড়িতে মানে?কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছেনা।তিনি উঠে বসতে চাইলে রোযা তাকে সাহায্য করলো।বালিশ রেখে তাতে হেলান দিয়ে দিলো।কিছুটা সময় দীর্ঘ প্রশ্বাস গ্রহণ করে রোযার দিকে ফিরতেই দ্বিতীয় দফায় চমকিত হলেন ইউনূস।তার কেবিনে রোযা একলা নয়। আরো একজন উপস্থিত রয়েছে।
কেবিনের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে।পরনে টি শার্ট এবং গাবার্ডিন।মুখে ফেস মাস্ক এবং মাথায় সানক্যাপ।বুকের উপর দুবাহু গুটিয়ে রেখে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার সঙ্গে দৃষ্টি মেলানোর পরেও টু শব্দ করলোনা সে।এমনকি একচুল নড়লোনা পর্যন্ত।
নিজের দাদুকে দরজার সঙ্গে দাঁড়ানো আসমানের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রোযা কিছুটা বিব্রত অনুভব করলো।কন্ঠ পরিষ্কার করে সে ফিরলো দাদুর দিকে।আর কোনো উপায় নেই।লুকিয়ে রাখার অর্থ হয়না।কিছুক্ষণ আগে পোশাক পরিবর্তন করে নতুনভাবে নিজেদের তৈরী করে এই কেবিনে ঢোকার পূর্বে তেমনি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে এবং আসমান।
– দাদু।তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
ইতস্তত করে মৃদু কন্ঠে বিড়বিড় করলো রোযা।ইউনূস রহমান প্রশ্ন করলেন না।শুধু চেয়ে থাকলেন নিজের নাতনীর মুখপানে।রোযা ইশারা করতেই আসমান এগিয়ে এলো, কেবিন বেডের পাশে দাঁড়াতেই রোযা তার বাহু স্পর্শ করলো আলতোভাবে।অতঃপর নিজের দাদুর দিকে ফিরে জোরপূর্বক হাস্যোজ্জ্বল অভিব্যক্তিতে জানালো,
– ও…উনি নীল।আমার…
– বয়ফ্রেন্ড?
নিজের দাদুর কন্ঠে শব্দটি শুনে চমকে উঠলো রোযা।শুধুমাত্র সেই নয় বরং সদা নির্বিকার আসমান পর্যন্ত ভ্রু তুলে চাইলো বৃদ্ধের পানে।একটি স্নিগ্ধ হাসি ছড়িয়ে পড়ল ইউনূস রহমানের অধরজুড়ে।রোযা ভীষণ ভয়ে ছিল ব্যাপারটি তার দাদু ঠিক কিভাবে নেবে তা ভেবে।কিন্তু তিনি এতটাও খোলামেলা আচরণ করবেন কিংবা খুশি হবেন সেটা সে নিজেও উপলব্ধি করেনি।
– হা হা… ঠিক ধরেছি তাইনা? আমার চড়ুইও তাহলে অবশেষে একটি বয়ফ্রেন্ড জুটিয়ে ফেললো?
– হাসব্যান্ড।
অতর্কিতে ঘোষণা করলো আসমানের বজ্রকন্ঠস্বর।হতভম্ব রোযা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলো।অপরদিকে ইউনূসের হাসি ম্রিয়মাণ হয়ে এলো।তিনি কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকলেন আসমানের দিকে।তৎক্ষণাৎ হস্তক্ষেপ করলো রোযা।ইউনূসের উভয় হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে আকুতি করলো,
– আমি খুবই দুঃখিত দাদু।আসলে… আমি জানিনা বিষয়টা তোমাকে ঠিক কিভাবে… আমি চাইনি তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগে… কিন্তু…
– আমিই জোর করেছিলাম বিয়ের জন্য।
অন্যদিকে তাকিয়ে বললো আসমান।তার কণ্ঠে স্পষ্ট অস্বস্তি প্রকাশ পেলো।দীর্ঘ মিনিট দেড়েক নিশ্চুপ রইলেন ইউনূস।রোযা মাথা নিচু করে রাখলো নিজের।দাদুর দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলানোর সাহস সে করছেনা।ইউনূস রহমানের মৃদু কন্ঠ রোযাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো।
– কতদিন হয়েছে বিয়ের?
– এ…এক মাস…
ওড়নার খুঁট চেপে ধরে উত্তর করলো রোযা।দ্বিতীয় দফায় নীরবতা।অতঃপর…
– আমার কাছে এসো চড়ুই।
– দাদু…আমি সরি!
নিজের দাদুর বক্ষে রোযা নিজেকে বিলীন করলো।তাকে বাহুডোরে আগলে নিয়ে মাথায় স্নেহের চুম্বন এঁকে হাসলেন ইউনূস।
– খোদা আমার প্রার্থনা কবুল করেছেন।আলহামদুলিল্লাহ।
মাথা তুলে অশ্রুসিক্ত নয়নে দাদুর দিকে চাইলো রোযা।তার আঁখিজোড়া বেয়ে গড়িয়ে নামা অশ্রুর ফোঁটা নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলি ব্যবহার করে মুছে দিলেন ইউনূস।
– আমার চড়ুই জীবনে একটু সুখের দেখা পেয়েছে।আমার সকল শখ পূরণ হয়েছে।আর কিছু চাইনা এই জীবনে।হয়ত এবার শান্তিতে খোদার কাছে ফিরে যেতে পারবো।
– না দাদু, প্লীজ এমন কথা বলোনা।আমার কষ্ট হয়!
হেসে পুনরায় রোযাকে বুকে আগলে তার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলেন ইউনূস।তার বুকে মাথা গুঁজে নিজেকে প্রশান্ত করলো রোযা। উষ্ণতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে তার অন্তর।সে কল্পনাও করেনি যে ইউনূস রহমান তার বিয়ের বিষয়টাকে এতটা সহজভাবে নিতে পারেন।হয়ত পরিস্থিতি তাকে তেমন প্রতিক্রিয়া করতে বাধ্য করছে।তথাপি অদ্ভুত এক অপরাধবোধ হচ্ছে রোযার।দাদুকে এক মিথ্যা সম্পর্কের আশ্বাস প্রদান করতে হচ্ছে তাকে।কোনোদিন যদি মানুষটি তার লুকায়িত সকল রহস্য উদঘাটন করে ফেলে, সেদিন কি আর মানুষটির সামনে মুখ তুলে দাঁড়াতে পারবে রোযা?
আসমানের দিকে ফিরলেন ইউনূস।কাপা কাপা হাত বাড়াতেই আসমান সামনে মাথা ঝোঁকালো।তার ক্যাপের উপর হাত বুলিয়ে দিয়ে ইউনূস রহমান শুধালেন,
– তোমার পুরো নাম কি বাবা?
– নীলাদ্রি রেমান নীল।
– কি করো?
– ব্যবসা।
কিসের ব্যবসা তা অবশ্য স্পষ্ট করলোনা আসমান। ইউনূসও জিজ্ঞেস করলেন না।তার পূর্বেই রোযা হস্তক্ষেপ করলো,
– দা…দাদু তুমি ওনার সাথে পরেও আলাপ করতে পারবে। এখন দেরী হয়ে যাচ্ছে।আমাদের বাড়িতে যেতে হবে।আমি তোমার সকল জিনিসপত্র তুমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই গুছিয়ে নিয়েছি।চলো এখন।
– নতুন বাড়ি নিয়েছ বলতে কি তুমি এটাই বুঝিয়েছিলে চড়ুই?
আসমানকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞেস করলেন ইউনূস।তাতে রোযা কিঞ্চিৎ লজ্জাবোধ করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।দ্রুত বিষয় পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে বললো,
– ডক্টর ওয়াসিমের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।তোমাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।শুধু থেরাপির জন্য হাসপাতালে নিতে হবে। নার্সও থাকবে তোমার সেবা শুশ্রূষার জন্য, আমি থাকবো।
বহুদিন বাদে রোযার চেহারায় পরিপূর্ণতার এক হাসি দেখতে পেলেন ইউনূস।তাতে তার হৃদয় সিক্ত হয়ে উঠলো।কিন্তু দৃষ্টি ফিরিয়ে মাথা নাড়লেন তিনি।
– না না দাদুভাই।আমি কিভাবে তোমার শ্বশুরবাড়িতে বোঝা হয়ে যাই?
– দাদু!কি বলছো তুমি? এমন বলোনা দোহাই লাগে তোমার!
হাহাকার করে উঠলো রোযা।কিন্তু ইউনূস রহমান মানতে নারাজ।তার নাতনী একা হলে একটা কথা ছিল।কিন্তু তার স্বামীর ঘরে,তার সংসারে নিজের উপস্থিতি তার কাছে অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছে।নিজের ছেলের সংসারেই টিকতে পারেননি তিনি, নাতনী জামাইয়ের সংসারে কি করে এই অসুস্থ শরীরে বোঝা হয়ে দাঁড়াবেন?
– আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আপনি আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবেন তাহলে আপনার জানা উচিত যে আপনি না গেলেই বরং আমাদের জন্য তা অধিক চিন্তার কারণ হবে!
আসমানের অতর্কিত বক্তব্যে ঝট করে ঘুরে তাকালো রোযা।এক ছেলে কি পাগল হয়ে গেলো?দাদুকে এসব বলছে কেনো?ইউনূস রহমানও দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছেন।বুকের উপর উভয় বাহু ভাঁজ করে আসমান নিজের বক্তব্যে যুক্ত করলো,
– আপনি হাসপাতালে থাকলে উনি সবসময় চিন্তা করেন।আমাকে অসুখী দেখতে হয় তাকে।আমি তা চাইনা।আমার মনে হয়না আপনার নাতনীকে সুখী করার জন্য এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় রয়েছে।
আসমান একটি কথাও সত্যি বলেনি জানা সত্ত্বেও রোযা অনুভব করলো তার হৃদস্পন্দন গতি পরিবর্তন করেছে।কেমন লয় তাল সহযোগে স্পন্দিত হচ্ছে।এক অদ্ভুত মাধুর্য অনুভূত হচ্ছে অন্তরে।একটি ঢোক গিলে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রইলো রোযা, অবাধ্য হৃদয়কে শান্তনা দিতে চেষ্টা করলো।
ইউনূস রহমান দীর্ঘ এক মুহুর্তজুড়ে তাকিয়ে থাকলেন আসমানের দিকে।এই ছেলে তার দেখা পুরুষমানুষদের থেকে কিছুটা ভিন্ন।অন্য কেউ হলে হয়ত তাকে বলতো,“আপনার নিজের বাড়ি মনে করেই থাকবেন, আমি আপনার সকল দায়িত্ব পালন করবো”— এই ধরণের মুখে মধু এবং অন্তরে বিষ মিশ্রিত কথাবার্তা।কিন্তু এই ছেলেটি তা করেনি।সে একবারও বলেনি যে সে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে, বা তার জন্য সবকিছু করবে এমনকিছু।এই ছেলে তাকে তার স্ত্রীর সুখের জন্য অনুরোধ করেছে।তার স্বার্থ রয়েছে।সে চায় তার স্ত্রী ভালো থাকুক, সেই প্রয়োজনে সে যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত।ব্যাপারটি তার সততার প্রকাশ ঘটাচ্ছে।কোনো ঘোরালো পেঁচানো বক্তব্য সে রাখেনি।অদ্ভুত এক রহস্যের অস্তিত্ব তিনি টের পাচ্ছেন, যা অবস্থান করছে এই ছেলের অবয়ব থেকে আরম্ভ করে অন্তর পর্যন্ত।
– ঠি…ঠিক আছে।
– দাদু!
ইউনূস রহমান আস্তে করে জবাব দিতেই রোযা তাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।মৃদু হাসলেন ইউনূস।যদিও এত রাতে হঠাৎ রোযা আর তার স্বামীর আগমন এবং তাকে এক্ষুণি নিয়ে যাওয়ার বায়নায় তিনি অবাক হয়েছেন, তবুও তার নাতনীর প্রতি দৃঢ় আস্থা তাকে সকল প্রকার অশুভ চিন্তা থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করলো।
দাদুকে বুকে আগলে রেখে দৃষ্টি ঘুরিয়ে আসমানের দিকে চাইলো রোযা।তার সেই দৃষ্টিতে কৃতজ্ঞতা ঝরে পড়লো।আসমান অল্প একটু মাথা দুলিয়ে উল্টো ঘুরলো।মেঝে থেকে কিছুক্ষণ আগে রোযার গুছিয়ে রাখা ব্যাগটা তুলে সে বললো,
– গ্যারেজে আসুন,আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।
এটুকু বলেই আসমান বেরিয়ে গেলো।রোযা জানে ইউনূস রহমানকে পিছনের গ্যারেজের পথ দিয়ে নিয়ে যেতে হবে যেন সামনের গ্রাউন্ড ফ্লোরের ধ্বংসযজ্ঞ তার চোখে না পড়ে।হাসপাতালের সম্মুখ সড়কেই রাতের আধারের পর্দার অন্তরালে অবস্থান করছে নিহাদ।এখনো পর্যন্ত তার রিপোর্ট বলছে সবকিছু স্বাভাবিক।কে বি গ্রুপ ঘটনা আচ করেনি।খুব দ্রুতই অবশ্য করবে কারণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেশিক্ষণ নির্বিকার থাকবেনা।এতক্ষনে অন্যান্য ফ্লোরে অবস্থানরত রোগী এবং নার্সগণ নিশ্চয়ই টের পেয়েছে অস্বাভাবিকতা।সবকিছু উন্মোচিত হওয়ার আগেই রোযা এবং তার দাদুকে নিয়ে এই জায়গা পরিত্যাগ করতে হবে আসমানকে।
শহরটির নাম ভেনিস। ব্যাস্ততায় পরিপূর্ণ সেন্ট মার্কস স্কয়ার, মূল প্রাণকেন্দ্র বলে কথা। গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে গগনে উঁকি দিয়ে চলেছে সূর্যরাজ।তাপমাত্রা ওঠানামা করছে আরামদায়ক ১৭° সেলসিয়াস থেকে আরম্ভ করে ২৬° পর্যন্ত। ইতালির উত্তর প্রান্তে অবস্থিত ভেনিস বিখ্যাত এর অভ্যন্তরীণ ক্যানেল যোগাযোগ ব্যবস্থা, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য।
শহরের বুক ছে*দ করে বয়ে গিয়েছে ইংরেজি “এস” অক্ষরাকৃতির “ ক্যানাল গ্রান্দে ” বা গ্র্যান্ড ক্যানাল।যা সর্বদাই পালন করে শহরটির যাতায়াত ব্যবস্থার প্রধান ভূমিকা।৩.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ওয়াটারওয়ে বেয়ে হরদম চলে নৌকা, মালবাহী জলবাহন থেকে আরম্ভ করে ঘুরতে আসা পর্যটকবাহী সব বাহন। এর উপরে অবস্থানরত রিয়ার্তো ব্রীজটিও পরিপূর্ণ থাকে সৌন্দর্য্যপ্রেমী কিংবা কাজের উদ্দেশ্যে যাতায়াতরত মানুষদের আনাগোনায়।
তবে ভেনিসের কোনো এক প্রান্তে পাতালকক্ষের ভেতরে শক্ত মেঝের উপর কাতরাতে থাকা ব্যক্তিটি আজ এর অদ্বিতীয় সৌন্দর্য্য অবলোকনে ব্যর্থ।সমস্ত শরীর তার অবশ হয়ে আছে যন্ত্রণায়।থেকে থেকে থমকে পড়ছে হৃদস্পন্দন। দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়েছে আরো আগেই। র*ক্তস্নাত শরীর ঘেমে নেয়ে একেবারে চটচটে হয়ে গিয়েছে।নড়লেই ক্ষ*তস্থানে ঘষা লেগে তীব্র ব্য*থা ছড়িয়ে পড়ছে অঙ্গ প্রত্যঙ্গে।
কালো পোশাক পরিহিত বেশ কয়েকজন লোক আশেপাশে দাঁড়িয়ে আছে নির্বিকার ভঙ্গিতে।যেন মানুষ নয়,যান্ত্রিক রোবট।এমনি নিষ্ক্রিয়তার ছোঁয়া তাদের পাথরকঠিন চেহারাজুড়ে।পোশাকের বুকের উপর শোভা পাচ্ছে ছোট্ট সিলভার বর্ণের পেঁচার মুখাবয়ব।একটি বিশেষ মোহর।কক্ষটির ঠিক মাঝ বরাবর একটি আরামকেদারা। আলো আঁধারির খেলায় ধীরে ধীরে দোল খাচ্ছে সেটি।
ক্যাচ…. ক্যাচ….
কাঠের ঘর্ষণের শব্দটি কেমন অশরীরী ঠেকছে কানে।তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে কড়া তামাকের ঘ্রাণ। ঘ্রাণটি খুব কটু নয়,বরং কিছুটা মাদকীয় এবং আকর্ষণীয়ও বটে। আভিজাত্যের ছোঁয়া রয়েছে তাতে।ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ বায়ুর আচ্ছাদনে নিঃশ্বাস আটকে আসছে।নির্বিকার চিত্তে সেই আরমকেদারায় দোল খেয়ে চলেছে একজন।হাতের দুই আঙ্গুলের ফাঁকে প্রজ্জ্বলিত স্যাব্রানি ব্ল্যাক রাশিয়ানস সিগারেট, যার একেকটির মূল্য প্রায় ১৩ ডলার।
মেঝেতে পড়ে থাকা ব্যক্তি কম্পিত শরীরে চেয়ে আছে আরামকেদারার উদ্দেশ্যে।সে জানে আর সম্ভব নয়।তার সমাপ্তি ঘনিয়ে এসেছে।তবুও ইটালিয়ানে সে জানাতে চাইলো অন্তিমবারের মতন,
– আমি চেষ্টা করেছি বস! সর্বোচ্চ চেষ্টা কিন্তু….
কর্কশ একটি হাসির শব্দ প্রতিধ্বনিত হলো চাপা দেয়ালজুড়ে।পাতালের ভেতর হওয়ায় চারিপাশ একেবারেই আবদ্ধ যার দরুণ সেই হাসির ধ্বনি শোনালো ভীষণ ভয়ং*কর।তারপর হঠাৎই হাসি ম্রিয়মাণ হয়ে সেই কন্ঠে ভর করলো অদ্ভুত তিক্ততা।
– ইউ ফেইল্ড টু প্রোটেক্ট মাই সন্!
হিমশীতল স্রোত বয়ে গেলো মেঝেতে লুটিয়ে থাকা ব্যক্তির সমস্ত শরীরে।নিস্তার নেই তার।আরামজেদারায় বসা মানুষটি ঝুকলো তার উদ্দেশ্যে, সিগারেট পু*ড়ে নিঃশেষ হচ্ছে ধীরে ধীরে কিন্তু সেদিকে মনোযোগ নেই তার।
– তোমাকে আমি সুযোগ দিয়েছি লিও…. দ্বিতীয় সুযোগ বলে আমার অভিধানে কিছু না থাকা সত্ত্বেও দিয়েছি।কেনো জানো?কারণ একটা সময় তুমি আমার জীবন রক্ষা করেছিলে।
অতর্কিতে পা দিয়ে সে চে*পে ধরলো লিও নামক ব্যক্তিটির বুক।মাটিতে রীতিমত পি*ষে গিয়ে য*ন্ত্রণায় ককিয়ে উঠলো লিও।কিন্তু কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই কারো।
– ইউ লস্ট ইওর চান্স অ্যান্ড আই লস্ট মাই সন্! গুডবাই লিও…. ফরএভার!
এটুকুই।পুনরায় আরামকেদারায় হেলান দিয়ে সে দুই আঙ্গুল তুলে ইশারা করলো।এক ইঙ্গিতেই কাজ হলো।আশেপাশে দন্ডায়মান প্রত্যেক যান্ত্রিক ব্যক্তি সামনে এগোলো।তাদের হাতে উত্তোলিত হলো রিভ*লভার।
পরক্ষণেই মুহুর্মুহু বু*লে*টধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠল সমগ্র পাতালকক্ষ।তার সঙ্গত দিলো মৃ*ত্যুআর্তনাদ।কেদারায় দুলতে দুলতে ঠোঁটে সিগারেট পুরে তৃপ্তিভরে সেই ধ্বনি শ্রবণ করে গেলো মানুষটি।তার বিপর্যস্ত হৃদয় একটি চালের দানার সমতুল্যের তৃপ্তিলাভ করেছে।
লিওর মৃ*তদে*হ বলতে কিছুই অবশিষ্ট রইলোনা।ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে তা ঝাঁঝাড়ির ন্যায়।দুইজন লোক সেটি টেনে সরিয়ে নিতে আরম্ভ করলো।অপরদিকে চোখ বুজে দুলতে দুলতে বায়ুতে দামী সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে থাকলো সে।পরক্ষণে মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– এনি নিউজ ফ্রম বাংলাদেশ?
– নো স্যার।আমাদের টি….
ঠাস!
উচ্চারণও করতে পারলোনা লোকটি।তার কপা*ল ফু*টো হ*য়ে গে*লো ধাতব বু*লে*টে।মেঝেতে আছড়ে পড়লো নিথ*র শরীরটি।উপস্থিত অন্য সকলে নির্বিকার ভঙ্গিতে কয়েক সেকেন্ড আগেও জীবিত থাকা তাদের সঙ্গীকে টেনে নিয়ে যেতে থাকলো।হাতের পি*স্ত*ল ঘোরাতে ঘোরাতে আরামকেদারায় বসমান সত্তা বিড়বিড় করলো,
– নেগেটিভ নিউজ শুনতে চাইনা।আই ওয়ান্ট মাই সন্!
এবার আর কেউ উত্তর করলোনা।শুধু চেয়ে থাকলো স্থির দৃষ্টিতে।
মারবেল ভবন।
দুপুর বারোটা ত্রিশ। ফোনে সময় দেখতে দেখতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকলো আসমান।গতকাল রাতের ব্যাস্ততার পর ভোররাতে যে ঘুমিয়েছিল সেই ঘুম আধ ঘণ্টা আগে ভেঙেছে।গলা শুকিয়ে খাঁ খাঁ মরুভূমি হয়ে রয়েছে।কিছুটা হিমশীতল বরফ এবং পানি প্রয়োজন।
মাস্ক পড়ে থাকা সত্ত্বেও সুস্বাদু ঘ্রাণটি সহসাই নাকে ঠেকলো তার।মুহূর্তেই মোচড় দিয়ে উঠলো পেট।ঘোষণা করলো সে শুধুমাত্র পিপাসার্তই নয় বরং ক্ষুধার্তও বটে।সিঁড়ির ধাপের নিচে পৌঁছতেই দৃশ্যটি নজরে এলো তার।স্বচ্ছ দেয়ালের ওপাশে কিচেনে দেখা যাচ্ছে রোযাকে। ইন্ডাকশনের উপর বড়সড় একটি পাত্র চড়িয়েছে সে।ভেতরে প্রবেশ করতেই তেলের চিরচিরে আওয়াজ শোনা গেলো। অপর একটি প্যানে বেরেস্তা ভাঁজা হচ্ছে।আসমান কিছুই বললোনা।নিঃশব্দে এগোলো ফ্রিজের দিকে।
ফ্রিজ থেকে একটি পানির বোতল উদ্ধার করতেই রোযার উৎফুল্ল কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
– ওহ!আপনি উঠে পড়েছেন?ক্ষুধা লেগেছে নিশ্চয়ই?
মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো আসমান। অস্বীকার করলোনা।তাতে রোযা দ্বিগুণ উৎফুল্ল কন্ঠে জানালো,
– আমি বিরিয়ানী রান্না করেছি।প্রায় হয়ে গিয়েছে।শুধুমাত্র বেরেস্তা দিয়ে সাজিয়ে দিলেই তৈরী।
কোনো মন্তব্য করলোনা আসমান।পানির বোতল আঁকড়ে ধরেই এগোলো বাইরের উদ্দেশ্যে।ঠিক তখনি টাইলসের মেঝেতে চাকার ঘর্ষণের মৃদু ধাতব আওয়াজ ভেসে এলো।কিচেনের প্রবেশপথের সামনেই হুইলচেয়ারে আবির্ভূত হলেন ইউনূস রহমান।পরনে আরামদায়ক ফতুয়া এবং পায়জামা।নাকে যথারীতি ন্যাসাল ক্যানোলা সংযুক্ত রয়েছে যার যন্ত্রাংশ হুইলচেয়ারের সঙ্গেই যুক্ত।
– কি খুশবু!
ইউনূস প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিলেন।রোযা বেরেস্তা ছিটাতে ছিটাতে দাদুর দিকে চেয়ে বিস্তর হাসলো।গতকাল রাতে এই পেন্টহাউজে পৌঁছে যারপরনাই হতবাক হয়েছিলেন ইউনূস।আসমান নিজেকে ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিলেও তিনি কোনোদিন কল্পনাও করেননি ঠিক কতবড় ব্যবসায়ী সে!তবুও এই আভিজাত্য এবং অন্য কিছু নিয়েও কোনোপ্রকার প্রশ্ন করেননি এখনো পর্যন্ত।ক্লান্ত ছিল সবাই।তাই রাত অতিক্রান্ত হয়েছে একপ্রকার নির্বাকতার মাধ্যমে।
আসমানকে সামনে দন্ডায়মান দেখে ইউনূস রহমান মৃদু হেসে বললেন,
– আজ একসাথেই খাই সবাই, কি বলো জামাই?
স্পষ্টত জমে গেলো আসমান।কিছুটা দূর থেকেও রোযা তার অভিব্যক্তি খেয়াল করলো।ঘন ভ্রুজোড়া কুঁচকে উঠেছে, দৃষ্টিতেও অদ্ভুত কাঠিন্য।হাতের আঙ্গুলগুলো চেপে বসেছে পানির বোতলে, অপর হাত তুলে সে সহসাই টেনে তুললো মাস্কটি, আরো একটু ওপরে।যেন ঢেকে ফেলতে চায় নিজের সমস্ত সত্তাকে।
– আম…আমার কাজ আছে…দুঃখিত!
ডার্কসাইড পর্ব ১১
এটুকু বলেই আসমান ইউনূস রহমানের হুইলচেয়ার পাশ কাটিয়ে দ্রুত এগোলো সিঁড়ির দিকে।মুহূর্তেই আড়াল হয়ে গেলো দুই তলায়।সেদিকে হতচকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন ইউনূস।অপরদিকে রোযা একটি নিঃশ্বাস ফেললো।
আসমান এবং তার চেহারা নিয়ে রাখঢাক!রহস্যটি ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে উঠছে। হঠাৎ করেই রোযার এই রহস্যভেদের প্রচণ্ড ইচ্ছা হচ্ছে!
