ডার্কসাইড পর্ব ২

ডার্কসাইড পর্ব ২
জাবিন ফোরকান

চারিদিকে পর্বতের সারি। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু হরিৎ বর্ণের রঙ্গখেলা। মেঘের দলেরা সম্পূর্ণ আকাশজুড়ে যেন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছে। হাওয়াই মিঠাইয়ের মতন মেঘের ভেলা ভেসে চলেছে মহাকালের নেশায়। সমুদ্র থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কোনো প্রাকৃতিক লীলাক্ষেত্রে এর আগে রোযা বেড়ানোর সুযোগ লাভ করেনি।রাঙামাটির সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য্য যে কারো নজর কাড়তে পটু।

গতকালই নাবিল কায়সারের সঙ্গে হেলিকপ্টার সহযোগে সাজেকের রুইলুই পাড়ায় পৌঁছেছে রোযা। “ মেঘপুঞ্জ ” নামক এক রিসোর্টে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা ছিল আগে থেকেই। নাবিল একমাত্র রোযা ব্যাতিত নিজের সেক্রেটারি কিংবা অন্য কোনোপ্রকার সঙ্গ নিয়ে আসেনি। নিরালায়, নিভৃতে, একলা এক রমণীর সঙ্গে সে মাদকীয় সুখপূর্ণ কিছু দিন যাপন করতে চায়। নিজের বৈবাহিক জীবন থেকে দূরে এই পার্বত্য অঞ্চলের প্রকৃতির কোলে, স্নিগ্ধ এক সত্তার সঙ্গে প্রেমময় মুহূর্তযাপনের স্বপ্ন সে বহুদিন ধরে লালন করেছে।এবার তা বাস্তবে রূপান্তরিত করার পালা। নিজের অমোঘ উপভোগ এবং লীলাখেলার মাঝে কোনো অপ্রয়োজনীয় তৃতীয় ব্যক্তির হস্তক্ষেপ পরিত্যাগ করতে বদ্ধপরিকর নাবিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রুইলুই পাড়া মূলত রুইলুই পাহাড়ের নিকট অবস্থিত একটি পর্যটন স্থান। সাজেক ভ্যালিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের আবাসন এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদানের জন্য এখানে রয়েছে বিভিন্ন রিসোর্ট থেকে শুরু করে স্থানীয় আদিবাসীদের বাসস্থান। মানুষের কমতি নেই, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ চারিপাশ।তবুও সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে এক টুকরো প্রশান্তির আশ্রয়স্থল যেন এই রুইলুই পাড়া।
গতকাল এই স্থানে যখন নাবিল পৌঁছেছে তখন রাত আটটা।তাই ভ্রমণ কিংবা উপভোগ কোনোকিছুরই সুযোগ লাভ করেনি সে। ক্লান্ত শরীর নরম গদির বিছানায় এলিয়ে দিতেই নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল আঁখিজোড়া।বহুদিন এমন শান্তির ঘুম দেয়নি নাবিল। সকালে যখন তার নিদ্রাভঙ্গ হলো তখন সমস্ত শরীর ফুরফুরে অনুভূত হলো। আরও একটি দৃশ্য তার নজর কেড়ে নিলো। কক্ষের লম্বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা কামিজ পরিহিত রমণীটি। তার মসৃণ কুচবরণ কেশরাশি পিঠ ভাসিয়ে নেমে গিয়েছে কোমরের নিচ অবধি।বায়ুতে দোল খেয়ে বেড়াচ্ছে তা স্রোতস্বিনীতে প্রবাহিত ঢেউয়ের মতন।

নাবিল উঠলো।নীরব পদক্ষেপে পৌঁছলো রমণীর কাছে।দুবাহু বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে পিছন থেকে।তারপর সেই কেশরাশিতে নাক ডুবিয়ে দীর্ঘ প্রশ্বাস নিয়ে বিড়বিড় করলো,
– গুড মর্নিং, সুমি।
প্রথম কয়েক সেকেন্ড স্থির হয়ে থাকলেও পরে মৃদু একটি হাসির রেখা ফুটে উঠলো রমণীর ওষ্ঠজুড়ে। সুমি নামটা শুনে অভ্যস্থ নয় সে, সত্যিকার নাম রোযা!কিন্তু এই বান্দার কাছে সে সুমি হিসাবেই পরিচিত। বাহুজোড়া ছাড়িয়ে নিয়ে সেই স্মিত হাসি ধরে রেখে পিছন ফিরলো রোযা।তৎক্ষণাৎ তার রাঙা গালে স্পর্শ বোলাতে আরম্ভ করলো নাবিল।

– শুড উই…..
নাবিলের সিগারেটপোড়া ঠোঁটে তর্জনী আঙ্গুল ঠেকিয়ে মৃদু কন্ঠে রোযা জানালো,
– সবেমাত্র ভোরের আলো ফুটলো। আমাদের প্রকৃতি উপভোগ করা উচিত মিস্টার কায়সার।
রোযার কোমরে হাত দিয়ে তাকে কাছে টেনে নিয়ে ঘাড়ে নাক ডুবালো নাবিল।তার শরীরের হৃদয়হরণকারী সুমিষ্ট ঘ্রাণটি ক্ষুধার্ত জন্তুর ন্যায় গ্রহণ করে বাদশাহ কায়সারের পুত্র জানালো,
– উপভোগ করার জন্য প্রকৃতি নয়,তোমাকে দরকার সুমি।
– তাই বুঝি?
মৃদু হেসে নাবিলের চুলে আঙুল বোলাতে শুরু করলো রোযা,নিজের প্রশান্তির স্পর্শে যেন ধীরে ধীরে বশ করতে চাইছে কোনো অবাধ্য পশুকে।

– ঠিক আছে।তবে তাই হবে, আজ রাতে।
– রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে কে?
হতাশায় গুঙিয়ে উঠলো নাবিল। এই রমণীর স্থানে অন্য কোনো মেয়ে হলে হয়ত এতক্ষণে জোরপূর্বক বিছানায় ছুড়ে ফেলতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতোনা সে।কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্য এই রমণীর সঙ্গে পাশবিক ব্যবহার করতে বাঁধছে তার। অস্বস্তি হচ্ছে। যেন এ অর্থের লোভে শরীর বিক্রি করা কোনো নির্লজ্য নারী নয়, বরং পরম পূজনীয় কোনো দেবী। চাইলেও যাকে খুব সহজে অসম্মান করা সম্ভবপর নয়। হৃদয় তাতে বাঁধ সেধে দাঁড়ায়। এমন অনুভূতি কি শুধুমাত্র নাবিলেরই হচ্ছে নাকি এই রমণীর পূর্বের খদ্দেরদেরও হয়েছে?জানার কি কোনো উপায় রয়েছে?ঠোঁট ফুলিয়ে রীতিমত শিশুদের মতন করে আবদার করলো নাবিল,

– তুমি গতকাল রাতেও একই কথা বলেছো, ক্লান্তি লাগছে এখন নয়।
– সবুরে মেওয়া ফলে মিস্টার কায়সার।
রোযা কিঞ্চিৎ হেসে আঙুল সরিয়ে নিতেই তার কব্জি আঁকড়ে ধরলো নাবিল।জোর টানে তাকে কাছে নিয়ে চিবুক স্পর্শ করে ঝুকলো তার ওষ্ঠজোড়ার উদ্দেশ্যে।
– আই কান্ট ওয়েট এনিমোর….
ফিসফিস কন্ঠে ঘোষণা করে যেই না নিজের তৃষ্ণা নিবারণে হা*ম*লে পড়বে সে, ঠিক ওই মুহূর্তেই কক্ষের দরজায় ক*ড়াঘা*ত।
– রুম সার্ভিস স্যার।
ভীষন বিরক্ত হয়ে রোযাকে ছাড়তে বাধ্য হলো নাবিল। হতাশায় মাথার চুল আঁকড়ে ধরে অশ্রাব্য একটি ইংরেজি ভাষার শব্দ উচ্চারণ করলো সে।

– আম…আমি ব্রেকফাস্ট অর্ডার করেছিলাম।
কোনোমতে বলে দরজা খুলতে এগিয়ে গেলো রোযা।তার বুকের ভেতর হৃদযন্ত্র থমকে পড়েছিল।কয়েক সেকেন্ডের জন্য পুনরায় একটি অঘটন থেকে বেঁচে গিয়েছে সে।এবং তার রক্ষক…..
দরজা খুলতেই সাদা শার্ট এবং কালো ক্রপ স্যুট পরিহিত অবস্থায় কক্ষে প্রবেশ করলো রুম সার্ভিস স্টাফ। মাস্কে আবৃত তার চেহারা, পায়ে চেলসি বুট এবং ললাটে ছড়িয়ে থাকা এলোমেলো চুলের গুচ্ছ।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটি সিগারেট ধরিয়ে ঠোঁটে পুরে অযথাই স্টাফকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলো নাবিল।তার অবয়বটা… সুঠাম। বিস্তৃত বুক এবং প্রশস্ত কাধ। কোমরের অংশটুকু চাপা। ঠিক যেন আওয়ারগ্লাস কাঠামো। যথাযথ শরীরচর্চার মাধ্যমেই শুধুমাত্র এমন শারীরিক কাঠামো অর্জন সম্ভব।তবে কোথাও যেন অদ্ভুত একটি অসঙ্গতি রয়েছে। কিছুটা চেনা পরিচিত অনুভূত হচ্ছে একে।কিন্তু এই প্রত্যন্ত সাজেক ভ্যালির রিসোর্টের কোনো রুম সার্ভিস স্টাফকে খোদ নাবিল কায়সারের চেনার কথা নয় কোনোদিন।
নিজের প্রতি ঈষৎ বিদ্বেষ অনুভব করলো নাবিল।ভীষণ উল্টোপাল্টা ভাবছে সে আজকাল।সব ওই নাখাস্তা লামিয়ার উদ্ভট প্রভাব। রোযা স্টাফের সঙ্গে কথা বলছে, তাতে বিরক্ত করার প্রয়োজনবোধ না করে নাবিল উল্টো ঘুরে আকাশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে সাধের সিগারেটে মনোযোগ দিলো।

– কংলাক পাহাড়।
কন্ঠ খাদে নামিয়ে দুইটিমাত্র শব্দ উচ্চারণ করলো স্টাফ।তাতে কিছুই বুঝতে অবশিষ্ট রইলোনা রোযার।আলতো করে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো সে। তৎক্ষণাৎ উল্টো ঘুরে বাইরের পথ ধরতেই বারান্দা থেকে নাবিল কন্ঠ চড়িয়ে ডাকলো,
– খাবার কোথায়?
নিশ্চল রইলো স্টাফ। কিছুটা হতচকিত হয়ে নাবিলের দিকে ঘুরলো রোযা।দ্রুত ব্যাক্ষা করলো।
– আম..আমি যে অর্ডার দিয়েছিলাম সেটা গুলিয়ে ফেলেছে। আমার বাদামে অ্যালার্জি রয়েছে।সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে জানতে এসেছে।একটু পরেই ব্রেকফাস্ট পাঠানো হবে।
– ওহ। তা…. এমন মাস্ক পড়ার কারণ?
কিঞ্চিৎ মাথা হেলিয়ে নাবিলের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় করলো স্টাফ।তার বাদামী বর্ণের চোখের তীক্ষ্ণ চাহনিতে অযথাই শিউরে উঠলো নাবিল।

– ঠান্ডা লেগেছে স্যার।
কর্কশ কন্ঠে উচ্চারণ করে বিলম্ব ছাড়াই কক্ষ ত্যাগ করলো স্টাফ।তার চলে যাওয়ার পথপানে দীর্ঘ এক মুহুর্ত নিঃশব্দে চেয়ে রইলো নাবিল।পরক্ষণে রোযার অবয়বে দৃষ্টি ফেলে বিড়বিড় করলো,
– অদ্ভুত স্টাফ!
– হুম।
সম্মতিস্বরুপ মাথা নেড়ে দুই হাত একত্রিত করে উৎফুল্ল কণ্ঠস্বরে রোযা ব্যক্ত করলো,
– সে যাক।আজকের দিন শুরু করতে হবে জলদি।সাজেকের সবচেয়ে উঁচু স্থান, কংলাক পাহাড়ে না গেলে এখানে বেড়াতে আসাটাই অনর্থক হয়ে যাবে!
– ওকে ডিয়ার!
মৃদু হেসে সিগারেটে মনোযোগী হলো নাবিল।অপরদিকে বিছানায় বসে একটি দীর্ঘশ্বাস গ্রহণ করলো রোযা।তার সম্পূর্ণ শরীর হঠাৎ করেই অবশ হয়ে পড়েছে।

নিজ দ্যুতি ধরিত্রীর বুকে ছড়িয়ে দিয়ে পশ্চিম প্রান্তে অস্ত যাচ্ছে দিবাকর।আকাশ ছেয়ে থাকা মেঘপুঞ্জে প্রতিফলিত হওয়া সেই স্বর্ণালী রশ্মি যেন নির্দেশ করছে স্বর্গের দুয়ারকে।সেই দৃশ্যের নিচেই সবুজাভ উর্মীমালায় পরিপূর্ণ সুবিস্তৃত অরণ্য এবং পর্বতরাশি যেন স্বয়ং স্বর্গ।
পাহাড় বেয়ে অরণ্যের পথে নামতে নামতে ক্রমশই উত্তেজিত হয়ে উঠছে রোযা।তার সামনেই হাইকিং বুট পরিধানকৃত নাবিল অভিজ্ঞ ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছে।অস্তমিত রবির অমিত মায়ামাঝে এই মোহনীয় অরণ্যগাত্রে হেঁটে চলা পথিকযুগলের একজনের অন্তরে রয়েছে দ্রুত রিসোর্টে ফিরে নিজের মহাভোজ আরম্ভের বাসনা, এবং অপরজনের অন্তর শীতল আতঙ্কে পরিণত বরফখন্ডে।
– তুমি অযথাই আমাকে অতটা পথ হাঁটালে সুমি!
খানিক ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো নাবিল।একবার বিরক্ত দৃষ্টিতে পিছনে চেয়ে পুনরায় জানালো,
– এখানে নেটওয়ার্ক নেই। সবাই ভিন্নপথে নেমেছে। পাহাড় জঙ্গলে এমন ছেলেমানুষী করতে নেই।
– স…সরি!

নতমুখে ধমক হজম করে হতাশা প্রকাশ করলো রোযা।তাতে নাবিল কায়সারের ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত হয়ে এলো, তার সঙ্গে ঠোঁটে খেলে গেলো এক অদ্ভুত হাসির প্রবাহ।
– ইউ বেটার স্যাটিসফাই মি টুনাইট বেব!
কোনোপ্রকার জবাব প্রদানের সামর্থ্য অবশিষ্ট রইলোনা রোযার মাঝে।তার হাত শক্তভাবে চেপে বসলো ধরে রাখা লাঠিতে।অপরদিকে তার হৃদয় লিপ্ত হলো এক অদৃশ্যমান সংগ্রামে।
দ্রুতই অরণ্য পেরিয়ে লোকালয়ে পৌঁছানো যাবে আন্দাজ করলেও যেন পথ হারিয়ে একই জায়গায় বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকলো নাবিল।পরপর তিনবার একই পাহাড়ী গাছের নিচে উপস্থিত হওয়ার পর থনকালো সে।চারিদিকে চাইলো।সন্ধ্যার আধার ক্রমশ গ্রাস করে ফেলছে সমগ্র ধরাকে।ইতোমধ্যে অজানা পশুপাখির কলতানে মুখরিত হতে আরম্ভ করেছে অরণ্যমাতা।কিছুক্ষণ পরেই এই স্থান পরিবর্তিত হবে ভ*য়ংকর জ*ন্তুদের বিচরণক্ষেত্রে!
– ফা***!

অশ্রাব্য শব্দটি হিসিয়ে উঠে নিজের লাঠি ছুঁড়ে ফেললো নাবিল।প্রচণ্ড ক্রোধে তার সমগ্র শরীর কাঁপতে আরম্ভ করেছে থরথর করে।জীবনে প্রথম কোন মেয়েমানুষের প্ররোচনায় এমন এক বিপদজনক পর্যায়ের সম্মুখীন হয়েছে সে।
চট করে পিছনে চাইলো নাবিল।তার অগ্নিদৃষ্টি অবলোকন করেই শিরদাঁড়া বেয়ে হিমশীতল স্রোত বয়ে গেলো রোযার।ক্রমেই পিছাতে আরম্ভ করলো সে, যদিও খুব ভালোমতই অবগত যে এই অরণ্যের মাঝ থেকে পালানোর পথ নেই।থাকলেও সেই পথের সন্ধান তার জ্ঞানে নেই।
পাঁচ লাখ টাকার সামনে নিজের প্রাণপাখিকে বাজি রেখে কি কাজটা ঠিক করেছে রোযা?
নাবিলের শক্তিশালী বাহুজোড়া মুহূর্তেই রোযাকে চেপে ধরলো আঁছড়ে ফেলল গাছের গুঁড়িতে।তীব্র যন্ত্রণায় রোযার সমস্ত শরীর যেন ঝনঝন করে উঠলো। অদ্ভুত এক যাতনা তরঙ্গ তার পিঠজুড়ে টনটন করতে থাকলো।

– মনে হচ্ছে তোকে একটু বেশীই মাথায় উঠিয়ে ফেলেছি, তাই এখন মাথায় বসে তাতাথৈথৈ করে নৃত্য করছিস!
– ন… নাবিল…
– একদম চুপ!
সহসাই রোযার নিকটবর্তী হয়ে তার শরীরের সঙ্গে নিজের শরীর মিশিয়ে ফেললো নাবিল।তার তপ্ত নিঃশ্বাসে গা গুলিয়ে উঠলো রোযার। দাঁতে দাঁত চেপে হজম করে গেলো সে।
– আমাদের এখন এখান থেকে যেতে হবে নাহলে…
– কিভাবে যাবি তুই?পথ জানা আছে তোর?
নিঃশব্দ রোযা। তার গ্রীবায় জড়িয়ে গেলো নাবিলের ডান হাতের আঙুল। স্বাভাবিক নিঃশ্বাস প্রশ্বাস চলমান রাখা রোযার জন্য হয়ে উঠল কষ্টসাধ্য। তার চেহারার দুঃস্থতা অনুভব করে তীর্যক হাসলো নাবিল।
– ডোন্ট ওয়ারি বেবি… আমি রিসোর্টে না ফিরলে কিছুক্ষণের মধ্যেই জানাজানি হয়ে যাবে। আই অ্যাম আ ভি আই পি ইউ নো?শীঘ্রই উদ্ধার পাবো আমরা।শুধু ততক্ষণ টিকে থাকতে হবে এই যা।
ভয়ার্ত দৃষ্টিতে নাবিলের ফ্যাকাশে দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রোযা।তার কাছে ঝুঁকে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ঠোঁট ঘষতে আরম্ভ করলো নাবিল।

– আনটিল দ্যান, হোয়াই নট উই….?
শব্দ করে হাসলো নাবিল।তারপর রোযার চুলে নাক ডুবিয়ে বিড়বিড় করলো,
– তোমার ঘ্রাণ এতটাই মাদকীয় যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা অতীব কষ্টকর। আই কান্ট ওয়েট টু ডিভোর ইউ হোল!
রোযার শরীরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবাহিত হতে থাকলো নাবিলের কলুষিত হাতজোড়া।অভিজ্ঞ ভঙ্গিতে সে এক অজগর সাপের মতন ধীরে ধীরে গলাধঃকরণ করতে আরম্ভ করলো নিজের শি*কারকে। রোযার দৃষ্টিপ্রদীপ যেন আঁধারে ঢেকে গেলো।প্রকৃতির মতোই অশুভ এক অন্ধকার তাকেও গ্রাস করে ফেললো সম্পূর্ণ।
রোযার পরনের জ্যাকেটের চেইন খুলে তা ছুঁড়ে ফেললো নাবিল।অতঃপর যেই না লোভনীয় ভঙ্গিতে হাত বাড়ালো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে ঠিক তখনি এক মৃদু গর্জন সম্পূর্ণ জায়গায় যেন প্রতিধ্বনিত হলো।
অনতিবিলম্বে সতর্ক হয়ে প্যান্টের পকেট থেকে লাইটার বের করলো নাবিল।নিজ অবস্থানে স্থির থাকলো রোযা।লাইটারের প্রজ্জ্বলনে ক্ষীণ আভায় চারিদিক আলোকিত হতেই অশুভ দৃশ্যটি নজরে এলো নাবিলের।
ঠিক হাত সাতেক দূরেই ছোট্ট একটি ঢিবির উপর দন্ডায়মান এক ছায়ামূর্তি। আঁধারগোলা অবয়বেও তার প্রভাবশালী অবস্থান হৃদয়মাঝে ভয় ধরিয়ে দেয়।

– ক…কে?
ঈষৎ আতঙ্কিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো নাবিল।তার কন্ঠটি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কর্কশ শোনালো।গলা খাকারি দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করতে যেতেই ঢিবির উপর অবস্থানরত ছায়ামূর্তির হঠাৎ অগ্রসর হওয়ার দরুণ সে হতবিহ্বল হয়ে পড়লো। লাইটারের আলোর সীমানায় প্রবেশ করতেই ধীরে ধীরে দৃষ্টিগোচর হলো….. সাদা শার্ট, কালো ক্রপ স্যুট এবং চেলসি বুট। চেহারায় মাস্ক, হাত আবৃত কালো রাবারগ্লাভসে।সেই হাতের মাঝে শোভা পাচ্ছে একটি মেকানিকাল টুলবক্স!
মাস্কের উপরে ঘন ভ্রুজোড়ার নিচে, চুলের গুচ্ছের আড়ালেও স্পষ্ট দৃষ্টিগোচর হলো চকচকে কালো বর্ণের মণিজোড়া। আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক বর্ণের সঙ্গে পার্থক্য ধরা সম্ভব নয়।কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় ওই দৃষ্টিমাঝে লোকায়িত নৃ*শংস দানবটির অস্তিত্ব মুহূর্তেই উপলব্ধি সম্ভব।ওই আঁখি যেন মহাকাশে উদ্ভুত একজোড়া কৃষ্ণগহ্বর।যেকোনো কিছুকে নিজ আঁধারগর্তে টেনে নিয়ে শূন্যতার নিঃশেষ প্রদানের কারিগর।
নিজের শরীরের সমস্ত জোরের বিলুপ্তি অনুভব করে ধপ করে মাটিতেই বসে পড়ল নাবিল।তার কণ্ঠে অবিশ্বাস এবং মহাবিস্ময় প্রকাশ পেলো ভূ কম্পন হয়ে।

ডার্কসাইড পর্ব ১

– আ…আহ…আসমান!
হিং*স্র জানো*য়ারের ন্যায় ছায়ামূর্তির হাত থেকে টুলবক্সটি সশব্দে মাটিতে পড়ল।তাতে তার ঢাকনা খুলে ঘাসে আচ্ছাদিত ভূমিতে ছড়িয়ে পড়লো রেঞ্জার, হাতুড়ি, প্লাসসহ সকল প্রকার সরঞ্জাম। এই সরঞ্জাম শুধুমাত্র গাড়ি মেরামতেই নয়, ভিন্ন জিনিস মেরামতেও ব্যবহৃত হয় সে সম্পর্কে যথাযথ অবগত নাবিল কায়সার।
একটি বিষয় সম্পর্কে সে বর্তমানে নিশ্চিত।তার মৃ*ত্যু অবধারিত! এবং তার মৃ*ত্যুদূত আজরাইল নয়…..
আসমান!

ডার্কসাইড পর্ব ৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here