ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ১৪
অবন্তিকা তৃপ্তি
সিদ্দিক বাড়ির সবচেয়ে ডানপিঠে; চঞ্চল-আদুরে মেয়ে কুহু সুইসাইড করেছে গতকাল রাতে! আরেকটু স্পেসিফিকলি বলতে গেলে— কথাটা করেছে না, করার চেষ্টা করেছে হবে।
এই এক কান্ড ঘটার পর একপ্রকার মাথায় বজ্রপাত হবার মতোই হতবম্ব হয়ে গেছে এ বাড়ির সবাগুলো সদস্য!
গতরাতে কি ঘটেছিল সিদ্দিক মহলে; সেসবের কিছু বর্ণনা দিলে সম্ভবত ভালো হবে। মূলত গতকাল কুহু যখন কবিতার ঘরটা থেকে বেরিয়ে আসে; কেন যেন কবিতার ঘুম তখন ছুটে যায়; সঙ্গে পায় ভীষন পানির তৃষ্ণা! পানির জন্যে কবিতা ঘুম থেকে উঠে ডাইনিংয়ে যান। তখনো তিনি বুঝতে পারেননি— কুহু রুমে নেই, রুমের কোথাও নেই। ঘুমের ঘোরে কবিতা সেসব খেয়ালে রাখতে পারেননি!
কিন্তু যখন ডাইনিংয়ে গিয়ে জগ থেকে পানি ঢালা শুরু করেন; তখনই শুনতে পেলেন— পাশের ঘরটা থেকে কেউ চিৎকার করে উঠল কেমন! এবং কণ্ঠটা কুহুর; সেটা চেনামাত্রই কবিতার হাত থেকে পানির জগ নিচে পড়ে যায়। পানিতে পুরো ফ্লোর ভিজে যায় নিমিষেই; কিন্তু শেষ অগ্রাহ্য করে কবিতা এক দৌড়ে যান পাশের সেই রুমটায়।
দরজা খোলা; আর সেই দরজার সামনে দাড়িয়ে কবিতার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে একপ্রকার। কুহু মাটিতে লুটিয়ে পরে ছিলো তখন! ডান হাত থেকে ঝুলছে একটা পুরনো কম ধারালো ফলের ছু ড়ি; বাম হাতের কব্জি থেকে রক্ত ফিনকি দিয়ে গড়িয়ে পরছে!
কবিতা দৃশ্যটা দেখমাত্রই দরজা চেপে পিছিয়ে যান আপনাআপনি দুকদম! সঙ্গে গায়ের জোরে চিৎকার করে উঠেন
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
——- ‘আল্লাহ গো!’
পরপরই নিজেকে সামলে এক দৌড়ে কুহুর কাছে গিয়ে বসে; মেয়ের বাম হাতের কাটা জায়গা শাড়ির আঁচলে চেপে; ওপরহাতে ছু ড়িটা নিয়ে ছুড়ে ফেলেন রুমের একপাশে। অস্থির কণ্ঠে, প্যানিক করতে করতে মেয়ের মুখে ছুয়ে ছুয়ে ডাকতে থাকেন অনবরত———‘কুহু! কুহু;মা তুই একি করে ফেললি। ও কুহুর বাবা; কুহুর বাবা! আসুন এখানে; কুহুর বাবাআআ….!’
একবার সাদাতকে ডাকছেন কবিতা; আবার কুহুর মুখে থাপ্পড় দিতে দিতে কুহুকে ডাকছেন। পাগল হয়ে যাচ্ছে রীতিমত কবিতা। অথচ এত ডাকার পরেও কুহুর জবাব আসে না। কিন্তু কবিতার চিৎকারে সাদাত ঠিকই ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে আসেন ওই রুমটায়! সাদাতের চক্ষু চড়কগাছ! উনি দ্রুত কুহুর পাশে এসে বসে মেয়েকে নিজের রানের উপর নিয়ে নিলেন; কবিতার দিকে তাকিয়ে হাপাতে হাপাতে জিজ্ঞেস করলেন——-‘ও..ওর কি হয়েছে?’
‘সুই..সুইসা…সুই সাইড!’ ——কবিতা কোনরকমে দুটো কথা উচ্চারণ করতে পারলেন সেই কঠিন সময়ে!
বাকি কথা আর শুনতে সক্ষম হলেন না সাদাত! বড়বড় চোখে কবিতার দিকে তাকিয়ে বললেন——‘বসে আছো কেন? উঠো; ওকে হাসপাতালে নেওয়া লাগবে। গাড়ির ড্রাইভারকে কল দাও; এক্ষুনি! গাড়ি বের করুক। আর ওর হাতের পট্টি বাধো; দ্রুত করো কবিতা! মেয়েটার রক্ত বেশি চলে যাচ্ছে!’
কথাটা বলতে বলতে সাদাত মেয়েটাকে পাজকোলে তুলে নিলেন। কুহুর হাতের কাটা জায়গায় কবিতা নতুন শাড়ির আঁচলটা ছিড়ে পট্টি করে দিলেন দ্রুত। কুহুর হাতটা ঝুলে রইলো সাদাতের বাহুর পাশে। তারপর কল লাগালেন ড্রাইভারকে! সিদ্দিক বাড়িতে কাজ করা ড্রাইবার পাশেই মেসে থাকে; তাই আসতে বেশি দেরি হলো না। সে রাতে ভয়ঙ্কর এক সময় কাটল মেয়েটার মা-বাবার! পুরোটা রাত অসম্ভব দীর্ঘ ছিলো; মেয়েটা হাসপাতালে ভর্তি হলো; মা-বাবার মনটা বিষাদে ঢেকে গেল; মা-বাবা মেয়ের উপর আস্থা হারিয়ে ফেললেন— সেসবের জন্যে দায়ী মেয়েটা তখন অজ্ঞান হয়ে ডক্টরের চিকিৎসা নিতে ব্যস্ত থাকায় সেসবের খবর রাখলো না এটুকু!
সেদিনের ওই রাতটা বড্ড বিভীষিকাময় ছিলো সিদ্দিক পরিবারের জন্যে। পুরোটা রাত সাদাত-কবিতা মেয়ের পাশে থম হয়ে বসে ছিলেন। ডক্টর ওর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। কবিতা আঁচলে মুখ চেপে সেই যে কান্না শুরু করেছেন, আর থামছেই না সেটা। সাদাতও পাথরের মতো কবিতাকে আগলে বসে আছেন। পুরুষ বাবার সেই চোখ ভীষণ লাল; রক্তিম-টসটসে! এক্ষুনি যেন জল গড়াবে! সাদাত বারবার চোখের জল লুকিয়ে ফেলছেন বলে সেই জল কেউ দেখলো না! এমনকি আফসোস তার মেয়েটাও সেটা বুঝলো না, দেখলোই না! নিথর হয়ে পরে আছে বালিশের মাথা রেখে।
সে-রাত কোনরকমে পেরিয়ে গেল! কুহুকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্যে মেডিসিন দেওয়া হিচ্ছে ইনজেকশনের মাধ্যমে। সকাল হতে না হতেই; পুরো সিদ্দিক পরিবার হাসপাতালে এসে হাজির হলেন। কুহুর খবরটা শোনার পরপরেই সাজেক থেকে একপ্রকার উড়ে এসেছেন সবাই বলা চলে।
ওদিকে; শাহরিয়ার সিদ্দিক কাব্য এর অবস্থা ভয়ঙ্কর নিরূদ্বেগ! কুহুকে হাসপাতালে দেখার পর কি ভাবছে ও এইমুহূর্তে; সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
আসলে; কাব্য মারাত্মক হতবম্ব হয়ে ছিলো পুরোটা রাত; খবরটা শোনার পর থেকে। বিশ্বাস হচ্ছিল না ওর এই সু ইসাইডের খবরটা। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে— কুহু; ওই ছোট-দুর্বল হৃদয়ের মেয়ে কুহু এই মারাত্মক কাজটা করেছে; করার সাহস পেয়েছে। কাব্যকে যখন আনোয়ার এসে খবরটা দিলেন— কাব্যের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে ছিলো। ও কেমন যেন ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে ছিলো আনোয়ারের দিকে।
কাব্য হাসপাতালে এসে সোজা গেল কুহুর কেবিনের সামনে। কুহুকে ঘুমের ঔষুধ দেওয়া হয়েছে, ভেতরে ঘুমাচ্ছে ও। কাব্য তাই আর ভেতরে গেল না। এমনিতেও কুহু জেগে থাকলেও ও ভেতরে যেত না। এই বেয়াদব-অতি বোঝা মেয়েটাকে সামনে দেখলে কাব্য নিজের মেজাজ ঠিক রাখতে পারবে না আজ কিছুতেই। রাগের মাথায় কিছু একটা করে বসবে! যার ভালোবাসার সাহস আছে; তার এই ছোটলোকি আচরণ কাব্য মোটেও বরদাস্ত করতে চাইছে না। কাব্য সিদ্ধান্ত নিলো— কুহুর সামনেও ও আর যাবে না। মেয়েটালে লাই দিয়েছে বলেই এতটা সাহস করেছে। ভালোবাসে ঠিকাছে! তাই বলে এসব করবে? চাচ্চু-চাচীকে পরোয়া করলো বা একবারের জন্যে? একবারের জন্যে ওই অতি-বোঝা; বেয়াদব মেয়েটার মনে হলো না— ওর জীবনে কাব্যই সব না! এত এত মানুষ এই মেয়েটাকে আদর করে; ভালোবাসে— সব ভুলে গেল? নিমিষেই?
কাব্য কেবিনের বাইরে দাড়িয়ে জানালার দিয়ে একমনে চেয়ে রইল ঘুমন্ত কুহুর দিকে। কুহু শুয়ে আছে, হাতে ব্যান্ডেজ; অপরহাতে স্যালাইনের ক্যানুলা।
চারদিক থেকে রাগ-হতাশা আবার ঘিরে ধরলো কাব্যকে! আশপাশের সবকিছু সেইজন্যে তেতো লাগছে শুধু। এই মুহূর্তে কাব্যের মনটা চাইছে কুহুকে ঘুম থেকে টেনে তুলে মাথায় তুলে জোরে একটা আছাড় মারতে। একটুও সহমর্মিতা দেখাতে ইচ্ছে করছে না এই ফাজিল মেয়েটাকে। কাব্য কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলো ওভাবেই; দাতে দাঁত পিষে দেখে গেল শুধু ঘুমন্ত কুহুটাকেই।
কাব্য জানালায় হাতটা রাখল নিজের। কুহুকে ওভাবেই দেখতে দেখতে বিড়বিড় করে কিছু বলল——-‘তুই আমাকে ঠিক প্রমান করলি কুহু। আমি সত্যি তোর আবেগই ছিলাম; ভালোবাসা হইনি কোনোদিন। নিজেকে যে মেয়ে ভালোবাসতে পারেনা, সে আর কাউকেই ভালোবাসতে পারে না। আমার জীবনে এতকিছু চলছে; আমি তো গিভ আপ করে ফেলিনি তোর মতো। তুই আসলেই ভুল ছিলি; আমি রাইট; আমিই!’
কথাটা শেষ করে কুহুর মুখটাই আর দেখতে ইচ্ছে হলো না কাব্যের। ও মাথা ঘুরিয়ে চলে এলো সেখান থেকে। কাব্য কেবিনের বাইরে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলো! মাথাটা নিচু করে দুহাতে চুল খামচে ধরে ওভাবেই নিশ্চুপ বসে রইলো অনেকক্ষণ।
ওপাশে বড়রা কুহুর পুরো ব্যাপারটা একে অন্যের সাথে আলোচনা করছেন। কুহুর সাথে দেখা করে, ছোটদের নিয়ে বাসায় গেছে স্নিগ্ধ আর ছোট চাচী। ওদের মধ্যে কাব্য শুধু থেকে গেছে; কুহুর প্রতি এত তিক্ততার মধ্যেও কেন থাকলা কে জানে।
কাব্য অনেকক্ষণ ওভাবে বসে থাকার পর হুট করে ওর কল এলো। কাব্য ওভাবেই মাথা নিচু করা অবস্থাতেই পকেট থেকে টেনে ফোনটা বের করে স্ক্রিনে নাম না দেখেই রিসিভ করলো।
‘হ্যালো!’ বলতেই ওপাশে ঊর্মি কাব্যের এই মাথা ব্যথার মধ্যেও ঝাঝাঁলো গলায় বলে উঠলো——‘তোমার বোন নাকি সুই সাইড করেছে?’
কাব্য এই গলা শোনে ফোন চোখের সামনে নিয়ে নামটা দেখে। নামটা দেখামাত্রই ওর মাথা চিরবিড়িয়ে উঠে মুহূর্তের মধ্যে।
চোখ উল্টে হতাশ শ্বাস ছাড়লো.. ফোনটা এই মুহূর্তে ধরাটাই উচিত হয়নি ওর; আগে নামটা দেখা উচিত ছিলো।
এমনিতেই মাথাটা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে; এখন এই মেয়ে ওর মাথায় যেটুকু ভালো ছিলো সেটাও আরও ধরিয়ে দিবে। তবে ফোন রিসিভ করার পর এসব ভাবার কোনো মানে নেই। তাই কাব্য ছোট একটা শ্বাস ফেলে জবাব দিল——-‘করে ফেলেনি, চেষ্টা করেছে।’
ঊর্মি কথাটা সহজভাবে নিলো না। কাব্য ওর সঙ্গে এমন ভয়েসে কথা বলছে কেন? ওর মনটা কি পুড়ছে ওই মেয়েটার জন্যে?
ঊর্মি দাতে দাঁত চেপে বললো-—‘দেখলে তো; দেখলে? মেয়েটাকে আমি এত আদর করতাম। তোমার বোন বলে আমি কি ওকে কম ভালোবেসেছি? আর এখন দেখো? এই আমারই থেকে তোমাকে কেড়ে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে এই ছেঁমরি! বাল পাকনা একটা! ছি!’
কাব্য ঊর্মির কথাটা শোনামাত্রই বিশাল একটা ধমক দিয়ে বসে——-‘শাটআপ ঊর্মি! কি বলছো এসব? ছোট মানুষ ভুল করে ফেলেছে। তুমি ওকে নিয়ে ওভাবে বললে নেক্সট টাইম খবর আছে তোমার।’
ঊর্মির কাটা গায়ে এই কথাটা যেন নুনের ছিটা দিল। তেতো কণ্ঠে বললো—-‘হ্যাঁ দেখলাম তো ছোট মানুষের নমুনা। কিভাবে বড় ভাইকে প্রপোজ করে? এটা ছোট মানুষরা করে? ওর ভাই তুমি; মেয়েটার এতটুকু লজ্জা করলো না?’
কাব্যের কথা বলতে একটুও ইচ্ছা করছে না। ঊর্মির সাথে ইও আরো নয়। কাব্য আলস্য নিয়ে বলল——-‘ও বুঝেনি; করে ফেলেছে। এটা ওর আর আমার ম্যাটার। তোমার ঢোকার দরকার নাই এটাতে।’
ঊর্মি এবার ঝাঝালো কণ্ঠে বলে যায়——‘মানে? আমি কেন ঢুকবো না? আমার বয়ফ্রেন্ড তুমি। আমাদের মধ্যে প্রেম আছে; আর জেলাসি থাকবে না?’
কাব্য এটা শোনে ঊর্মিকে শুধরে দিল——-‘শব্দটা আমাদের হবে না। ওটা স্রেফ তোমার আছে।আমাকে এই সম্পর্কে কিভাবে রেখেছো তুমি, সেটা তুমি ভালো করেই জানো। ভুলে গেলে বলো আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি।’
ঊর্মি দমে গেল এইবার! আহত কণ্ঠে বললো—-‘আমাকে ওভাবে তুমি বলতে পারলে? তাও ওই মেয়েটার জন্যে? আমার প্রতি তোমার এত বিতৃষ্ণা?’
বারবার কুহুকে ওই মেয়ে, ওই মেয়ে বলতে শুনে কাব্যের কেন যেন মেজাজটাই গরম হয়ে গেল! কাব্য রেগে উঠে বললো——-‘বারবার ওই মেয়ে,ওই মেয়ে বলা বন্ধ করবে? ওর একটা নাম আছে; কুহু নাম ওর। নাম ধরে বলতে পারছো না?’
উর্মি অবাক হয়ে গেলো———‘তুমি আমাকে বকলে কাব্য? ওই মে.. মানে ওই কুহুর জন্যে? সত্য করে বলো তো- তুমি ওকে কি ভালোবাসো? আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু করছো তুমি? চিট টাইপ?’
কাব্য জবাবে হালকা হাসলো! ঊর্মিকে ইচ্ছে করে রাগিয়ে দেবার জন্যে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো —‘লিসেন ঊর্মি শিকদার! আমি কাব্য কখনো লুকিয়ে কিছু করার মতো ছেলে নই, তুমি এটা বেটার জানো! যদি কাউকে ভালোবাসার হয়; সবার সামনে তাকে ভালোবাসবো। বিয়ে করার ইচ্ছে হলে সবার সামনে সেটা স্বীকার করবো। আর হ্যাঁ; কুহুর সঙ্গে আমার তেমন কিছুই নেই। যেটা নেই সেটা নিয়ে অযথা পেইন দিবা না আমাকে।’
ঊর্মি অবাক হয়ে বলল——‘তোমার লজ্জা করছে না? তোমার গার্লফ্রেন্ডকে তুমি এভাবে এসব কথা শোনাচ্ছো? আমি কি হই তোমার তাহলে? একটা মানুষের এটা বলতে একটুও হলেও হ্যাজিটেশন হয়। লিসেন, তোমার-আমার ব্রেকআপ হয়নি এখনো কাব্য! স্টিল নাও আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড!’
কাব্য জবাবে মৃদু হেসে বললো——-‘না করছে না। কারণ আমি এই সম্পর্ককেই মানি না। জোর করে আছি শুধু। যেদিন হাতে সুযোগ আসবে; এই টক্সিক সম্পর্ককে লা থি মেরে বেরিয়ে যাব। এন্ড তোমাকে বলছি আমি এসব; ভালো না লাগলে ব্রেকআপ করে নাও, সিম্পল!’
ঊর্মি কেদে ফেলল এইবার। কাব্য এইবার অতিষ্ট হয়ে বলল——‘কান্না থামাও। এসব ন্যাকা কান্না করা মেয়ে আমার পছন্দ না।’
ঊর্মি নাক টেনে কেঁদে কেঁদে বলল——-‘হ্যাঁ; এখন তো তাই লাগবেই। এখন তো টাকার কুহুর কান্না তো ভালো লাগে। ওটাই পছন্দ তোমার। সত্য করে বল কাব্য— ওকে তুমি ভালোবাসো,তাই না?’
কাব্য এইবার এই সাইকোকে বোঝাতে না পেরে হাল ছাড়লো—‘তোমার যা ইচ্ছা ভাবো। আই ডোন্ট কেয়ার এট অল!’
বলে ফোনটা কেটে বন্ধ করে আবার পকেটে ঢুকিয়ে দিল। মাথাটা ব্যাথাটা আসলেই বেড়ে গেছে এই এক কলের পর। পাগল করে দিবে এই সাইকোটা ওকে। কাব্য বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ালো ক্যান্টিনে যাবে বলে। ওকে যেতে দেখে পেছন থেকে শাদাফ ডাকলেন——‘কোথায় যাচ্ছিস কাব্য?’
কাব্য পেছন ফিরে জবাব দিল——‘ক্যান্টিনে, কফি নিব একটা।’
‘ওয়েট, আমিও আসছি!’ —— শাদাফ কাব্যের সাথেই এগুলেন।
সাদাত-কবিতা এইমুহূর্তে কুহুর চিকিৎসা যে ডাক্তার করেছেন, তার কেবিনে বসে আছেন। ডাক্তার কুহুর সমস্ত রিপোর্ট দেখছেন বসে বসে। সাদাত-কবিতা দুজনেই চিন্তিত ভঙ্গিতে ডাক্তারের মুখের দিকে চেয়ে রয়েছেন সেই কখন থেকে।
সমস্ত রিপোর্ট দেখা শেষ হলে ডাক্তার হাফিজ রিপোর্ট একসাথে করে টেবিলের উপর রাখলেন; সঙ্গে চোখ থেকে চশমা খুলে টেবিলের একপাশে রেখে সাদাত-কবিতার দিকে তাকালেন। সাদাত চিন্তিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন——-‘সব রিপোর্ট কি ভালো হাফিজ?’
হাফিজ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন; তারপর বলা শুরু করলেন একে-একে ——‘কি আর বলব তোমাকে সাদাত! তোমার মেয়ের আসলে হ্যালুসিনেশন হচ্ছে অনেক।আমার যতদূর ধারণা, সম্ভবত এই কারনেই ওই সুইসা ইড এটেম্প নিয়েছে।’
সাদাত-কবিতা দম্পত্তি অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল চোখে হাফিজের দিকে তাকিয়ে রইলেন। হাফিজ বুঝতে পারলেন— তার বলা কথার কিছুই বন্ধু-বন্ধু পত্নী বুঝেননি। তাই হাফিজ একটু বিস্তারিত বলা শুরু করলেন——-‘লেট মি এক্সপ্লেইন! তোমার মেয়ের জ্বরের টাইপ ভীষন এগ্রেসিভ; এই ধরনের জ্বরে পেশেন্ট শকে চলে যায় আমার জানামতে! শক থেকে হার্ট ফেইলার থেকে শুরু করে ব্রেইন ফাংশনে সমস্যা দেখা দেয়। ডেথও হতে পারতো সেটা থেকে।’
সাদাত আতকে উঠে বললেন——‘মানে? কি বলছো তুমি এসব?’
হাফিজ বলেন——-‘কিন্তু আমার এটা প্রশ্ন। এত জ্বর গায়ে নিয়ে তোমরা বাসায় বসে ছিলে কেন? তোমরা কুহুকে নিয়ে এডমিট কেন হওনি হাসপাতালে?’
সাদাত জবাবে নিচু গলায় বললেন——-‘আমরা সাজেক ছিলাম; গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরেছি। আমি ওকে বলেছিলাম এডমিট হতে। কুহু আমাদের থেকে রাতটুকু টাইম নিয়েছে। ভেবেছিলাম সকাল হলেই ভর্তি করে দেব। কিন্তু তার আগেই—-‘
সাদাত কথাটা বলা সেজ কীর্তেই কবিতা আলহছে চোখের ওয়ানি মুছলেন। কাঁদতে চাইছেন না এখন আর উনি। নিজেকে শক্ত করেই ডাক্তারের কেবিনে ঢুকেছেন কবিতা। তাই কান্না চেপে হাফিজের দিকে চেয়ে শুনতে লাগলেন সন।
ডাক্তার হাফিজ মাথা নাড়লেন——-‘ইয়াহ; আই সি! মূলত তীব্র জ্বরেই ওর ব্রেইন ফাংশন করা অফ করে দিয়েছিলো কিছুসময়ের জন্যে।তখন হ্যালুসিনেশন ; কনফিউশন থেকে শুরু করে ডিসিশনে অক্ষমতা এসব দেখা দিচ্ছিলো। সাধারণত সজ্ঞানে সুই সাইড করার ইচ্ছে থাকলে ও বাড়ির সব চেয়ে ধা রালো নাইফ ব্যবহার করত। কিন্তু ও সেটা না করে; বাড়ির একটা সাধারণ কমদামি নাইফ নিয়েছে, আর তোমরা বলছো দরজায় আটকায় নি রুমের—- এসব সিম্পটম বোঝাচ্ছে ও সজ্ঞানে এইসব করেনি।’
সাদাত বললেন—-‘জ্বরের মধ্যে এসব ঘটানো আদৌ সম্ভব?’
হাফিজ মাথা নাড়লেন——‘অবশ্যই সম্ভব! তোমার মেয়ে এখানে যখন এসেছে ওর তাপমাত্রা জানো কত ছিলো? তারউপর ব্লাডেও ইনফেকশন পেয়েছি আমরা।তোমার মেয়ের সু ইসাইড সম্বন্ধে ধারণা কি? ও এস সম্পর্কে কখনো কথা বলেছে তোমাদের সাথে? ভাবি; আপনার সঙ্গে কিছু কথা হয়েছে এই ব্যাপারে?’
কবিতা এবার কিছু একটা মনে পড়ায় সঙ্গেসঙ্গে জবাব দিলেন——‘হ্যাঁ; আমার মনে আছে।একবার একটা ছেলে এসএসসি এক্সামের আগে সু ইসাইড করেছিল। তখন ও সেটা নিয়ে অক্ষেও করে বলেছিল— ছেলেটা আর জান্নাতে যেতে পারবে না। কুহুর সেদিন ভীষণ মন খারাপ ছিলো এটা নিয়ে।’
ডক্টর হাফিজ বললেন——‘দেখো এখন! যেটা বলেছিলাম।ও সজ্ঞানে থাকলে এসব করতো না।’
কবিতা মাথা নুইয়ে ফেলেন, চোখের কোণ গড়িয়ে এক ফোঁটা জল উনার কোলের উপর পরে। সাদাত বললেন—-‘ও সুস্থ হবে তো? মানে এই ঘটনা কি আবার ঘটতে পারে?’
ডক্টর হাফিজ জবাবে বললেন——‘সুস্থ হবে না কেন? তবে প্রপার কেয়ার নিতে হবে। আর এই ঘটনা আমার মনে হয়না সুস্থ হবার পর ও আর করবে। তোমাদের এখন কাজ— ওর ভেতর থেকে মনের খবর বের করা। ওর মনে কোনো দুঃখজনিত অসুস্থতা থেকে থাকলে সেটা জেনে আমাকে ইনফর্ম করো!’
এতটা সময় ধরে সাদাত-কবিতা দুজনেই ডক্টরের কাছে ছিলেন! আনোয়ার-শাদাফ সবাই নিচে ক্যান্টিনে। সারারাত জার্নি করে সবার মাথা ঘুরছে; ব্যথা করছে! তাই পুরুষ লোক সবাই কফি খেতে গেছেন হাসপাতালের নিজস্ব ক্যান্টিনে। কুহুর কেবিজের বাইরে শুধু শামিমা বসে আছেন বেঞ্চে! কুহুর কেবিনে যাওয়া এখন নিষেধ বলে উনি যাননি। অজু করে এসে বেঞ্চে বসে কোরআন পড়ছেন।
ঠিক সেসময় সবার অগোচরে কাব্যের টক্সিক গার্লফ্রেন্ড ঊর্মি সিকদার কুহুর কেবিনের সামনে এলো! আশপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে শামিমাকে একদম লুকিয়ে সোজা কুহুর কেবিনের ভেতরে ঢুকে গেল।
কুহুর ঘুমও তখন সবেই ভেঙ্গেছিল। ও আনমনে সিলিংয়ের থেকে চেয়ে ছিলো। ঊর্মি সোজা গিয়ে ওর পাশে দাড়িয়ে গেল!তারপর অসুস্থ কুহুকে ডাকলো চুড়ান্ত কর্কশভাষায়——-‘এই মেয়ে!’
মেয়েলি অচেনা কণ্ঠ শুনে কুহু দুর্বল ভঙ্গিতে মাথা ঘুরিয়ে পাশটায় তাকাল। অবাকই হলো কুহু! আস্ত এক জীবনে দেখা সবচেয়ে ভাগ্যবতি নারী ঊর্মি আপুকে দেখে কুহু ফ্যালফ্যাল চোখে তার দিকে তাকিয়ে অস্ফুটে বলল——-‘আপু; তুমি?’
কুহু চায়নি ঊর্মির সাথে কোনোরূপ খারাপ ব্যবহার করতে। ও আগের মতোই স্বাভাবিক আচরণ করতে চেয়েছিল। কাব্য ভাই ঊর্মি আপুকে ভালবাসলে; সেটা নিশ্চয়ই ঊর্মির দোষ না। তাহলে কেন নিজের মনের দুঃখে কুহু ঊর্মিকে শাস্তি দেবে! কুহু তাকে তাই কিছু বলতে যাবে; তার আগেই ঊর্মি তেতো কণ্ঠে বলে গেল——-‘সু ইসাইড করেছো না? কাব্যের জন্যে..ওহ সরি! মিস্টেক করে ফেলেছি। ভাইয়ের জন্যে! ভাই হয়না কাব্য তোমার?’
কুহু অবাক! ঊর্মির কথা ওর হজম করতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে! ওর সু ইসাইডের খবর ঊর্মি আপু কি করে জানলেন? কুহু ফ্যালফাল চোখে ঊর্মির দিকে তাকিয়ে রইল শুধু; মুখে কিছুই বললো না। শুধু শোনে গেল; ঊর্মি যা বলে গেল।
এইসময় ঊর্মি বলল———‘আচ্ছা এই মেয়ে! তোমার একটুও লজ্জা করলো না? যার কোলে-পিঠে মানুষ হলে, তাকেই এই বিশ্রী নজরটায় দেখতে?’
কুহু জবাবে অস্ফুটে বলল——-‘কাউকে ভালোবাসা বিশ্রী?’
পরপর ঊর্মির দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো——-‘এসব কে বলেছে আপনাকে? কার কাছ থেকে শুনেছেন এসব কথা?’
ঊর্মি কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল এইবার। পরমুহূর্তে জবাব দিয়ে বসলো—-‘কাব্য বলেছে আমাকে। তুমি কুি বুঝতে পারো না কাব্য তোমার এসবে ফেড্যাপ?’
কুহুর বুকটা যেন কেউ কামড়ে ধরলো হঠাৎ! কাব্য ভাই ওর কথা ঊর্মি আপুকে কেন জানিয়েছেন? কুহু ভালোবাসে তাকে,সেটা লুকিয়ে রাখতে পারেননি? বরং উনি কুহুর এই অবস্থাত নিজের গার্লফ্রেন্ডকে পাঠিয়েছেন ওকে কথা শোনানর জন্যে, নিজের পেছন ছাড়ানোর জন্যে! কিন্তু কুহু কি উনার পেছনে আদৌ পড়ে ছিলো রিজেকশনের পর থেকে? সরেই তো যাচ্ছিল একটু একটু করে।কিন্তু সেজন্যে সময় তো দিতে হবে ওকে! চার-চারটি বছরের অভ্যাস কাটাতে একটাদিন সময় দেওয়া গেল না?
কুহুর চোখের জল আলগোছে মুছে ফেলল! মাথাটা নামিয়ে ফেলল অপমানে!
ঊর্মি সেটা দেখে আরো কথা শোনাবার উদ্দেশ্যে বলল——-‘জীবনে তো ছেলে দেখোনি। তাই চোখের সামনে যেই একটা ছেলে বাসায় দেখতে সেটাতেই ক্রাশ খেয়ে ওই ক্রাশকে আবার প্রপোজ করে বসে আছো! ছেলে দেখলেই মুখ দিয়ে লোপ পরে না?’
কুহু মাথা তুলে তাকাল! ভাঙা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো——‘এটাও কি উনি বলেছেন?’
কুহুর মন যেন মানতে চাইছে না, এসব কথা কাব্য ভাই বলেছেন। ঊর্মিও কুহুকে তখন আরো কষ্ট দেবার জন্যে জবাব দিল——‘হ্যাঁ! কাব্য আমাকে সব বলেছে। আমার সঙ্গে একটা ডিল হয়েছে ওর। আমি তোমাকে ওর পেছন ছাড়তে পারলে ও আমাকে ট্রিট দিবে, শপিং করে দেবে আমাকে। কিন্তু তুমি তো পেছনেই হাত ধুয়ে পরে আছো। এত অপমান গায়ে লাগে না? একবার কাব্য অপমান করলো এখন আমি করলাম। তাও? গন্ডারের চামড়া শরীরে নাকি? কাব্য এমনি-এমনি তোমার উপর বিরক্ত হয়নি এখন বুঝতে পারছি!’
কুহু ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল আজ! যেটুকু হৃদয় জোড়া লাগানোর চেষ্টায় ছিলো: সেটাও এইমুহূর্তে ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেল! কুহুর চোখের সামনেই তার আত্মসম্মান; বেচে থাকা আত্মসাহস সবটাই ধুলোয় মিশে গেল। কুহু হা করে ঊর্মির দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের কোণ বেয়ে শুধু অশ্রু গড়তে লাগলো; এই কান্নার কোনো শব্দ নেই!
কুহুকে কাব্য ভাই যেখানে এমনরূপে বিদ্রুপ করেন, তার জন্যেই কিনা কুহু মরে যাচ্ছিল! নিজের প্রতি ধিক্কার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো কুহুর! কাব্য ভাই ওকে নিয়ে এসব ভাবেন? ওকে এতটা ছোট করে অপমান করে ঊর্মি আপুকে ওর নামে বলেন— সেখানে কিনা কুহু——-
আফসোস; কুহুর আত্মসম্মানের বলিদানের প্রতি এক আকাশ আফসোস রইলো! কুহু একবার নিজের হাতের দিকে তাকালো! আজ ও যেখানে আছে; যে অবস্থায় আছে পুরোটা কাব্য ভাইয়ের জন্যেই! তার কি এটুকু মায়া হয়নি? কুহুকে এই নাজুক অবস্থাতে এই অপমানটুকু না করলেও পারতেন না?
কুহু নাক টানল! ঊর্মি কুহুকে ভালো করে দেখে নিলো, তারপর বলল——‘ছেড়ে দাও কাব্যকে। মুক্তি দাও ওকে! ওর এসব আর ভালো লাগছে না। তুমি পেইন দিচ্ছো ওকে। ও নিজেই আসতে পারতো তোমার কাছে। কিন্তু তুমি ওকে বারবার বিরক্ত করছো দেখে আমাকে পাঠালো! তাই আমি বলতে এসেছি। আজ একজন বোন হয়েই বলছি— এসব ছ্যাছরামো করো না আর। ভাগ্যবানদের কপালে ভালোবাসা জোটে। আজ মেনে নাও; হয়তো তোমার ভাগ্য খারাপ! মেনে নাও এই সত্য!’
কুহু ঢোক গিলে কান্না আটকালো এইবার। দুজন মানুষ ওকে যা ইচ্ছে তাই শোনাবে; একজনের সাফাই গেয়ে আরেকজন কুহুকে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করবে সেটা কুহু মেনে নিবে? কুহু হৃদয় খুইয়েছে; জেদ-রাগ আগের মতোই আছে; টগবগে-তাজা!
কুহু দুহাতে চোখ-গাল মুছে ফেলল। ও আর কাঁদবে না। এই দুই মানুষ ভালো আছে; উল্টো ওদের ভালোবাসার ভিলেন হচ্ছে কুহু। দুজন কুহুর থেকে মুক্তি চাই তো? দিবে তা কুহু! কুহু উদার হবে আজ থেকে। মনটা ভেঙ্গে গেছে; যাক! আত্মসম্মানকে হারাতে দিবে না আর কুহু। যথেষ্ট হয়েছে মুখ বুজে অপমান সহ্য করা!
একটা কাপুরুষকে ভালবেসেছিল কুহু। যার নিজের মুখ নেই কুহুর সামনে আসার, অথচ নিজের গার্লফ্রেন্ডক পাঠিয়ে অপমান করতে ঠিকই বিবেকে বাধেনি। ছি…!
আজ কাব্য ভাইয়ের এমন মনোভাবের প্রতি থু দিতে চায় কুহু। বোন হিসেবে যেটুকু সম্মান করত ওই মানুষটাকে, সেটার জন্যেও এখন আফসোস হতে লাগলো ওর!
কুহু হাসলো! চোখে-মুখে এখনও ওর জল মাখামখি অবস্থা। কুহু সেই অবস্থায় নাক টেনে; ঊর্মির চোখে চোখ রেখে ঠান্ডা-শান্ত গলায় বললো —-‘কাব্য ভাইকে আমি আমাকে রিজেক্ট করার পরেই ছেড়ে দিয়েছিলাম ঊর্মি আপু! আপনার ভয় হচ্ছে না আপনার প্রেমিক কাব্য ভাইকে আমি কেড়ে নেব? আর হয়তো আপনার প্রেমিকও একই ভয়টাই পাচ্ছেন।’
ঊর্মি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল! কুহু হাসলো—‘আর ভয় পাবেন না। আজ থেকে আপনি এবং আপনার আদরের প্রেমিক কাব্য ভাইকে আমার সালাম; ভালো থাকেন আপনার। শুধু বলবো, আমার নামে দুজন যে গসিপগুলো করবেন সেটা আমার সামনে এসে বলা বন্ধ করে দিন। কারণ নেক্সট টাইম আপনি আর আপনার কাব্য ভাই দুজনকেই আমি ছেড়ে কথা বলবো না। নেক্সট টাইম এসব আমাকে বললে আমি আব্বুকে দুজনের নামেই বিচার দেব!’
ঊর্মি হা করে কুহুজে দেখলো! ওর টোটকা এত দ্রুত কাজে দিবে সেটা স্বয়ং উর্মিও বুঝতে পারেনি। কুহু এইবার একটু হেসে বললো——‘ আপনার প্রেমিককে বলে দিবেন— সে যেন আর আমার উপর বিরক্ত বোধ না করে সেজন্যে আমি কুহু তার প্রতি সকল অনুভূতি মাটি চাপা দিয়ে দিলাম। আর এটাও বলে দিবেন— কুহুর গন্ডারের চামড়া কখনোই ছিলো না। গন্ডারের চামড়া, কাপুরুষ লোক হলেন সে; আপনার প্রেমিক; যার সাফাই গাইতে আপনি আমার কাছে এসেছেন।’
কথা থামিয়ে কুহি জোরে শ্বাস ফেলতে ফেলতে আঙুল দিয়ে দরজা দেখিয়ে দিয়ে বলল——‘নাও, গেট আউট ফ্রম মাই কেবিন।’
‘কি?’ —- ঊর্মি অবাক হলো!
ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ১৩
কুহু এইবার চেঁচিয়ে বলল—-‘আই সে, গেট আউট রাইট নাও! নাহলে আমি কিন্তু চিৎকার করব!’
ঊর্মি ভ্রু কুচকে কুহুকে দেখল! পরপর হালকা হেসে দরজা ঠাস করে খুলে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে।
বিপত্তি ঘটলো তখুনি! কেবিনের বাইরে ঠিক সেসময় কাব্য দুহাতে কফির কাপ নিয়ে দাঁড়িয়েছে! এই মুহূর্তে ঊর্মিকে কুহুর কেবিনের সাঁবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কাব্য ভ্রু কুচকাল! কাব্যকে নিজের চোখের সামনে দেখে ঊর্মিও ভয় পেয়ে ঢোক গিললো একটা! কাব্য ভ্রু কুচকে ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল——-‘তুমি এখানে কি করছো?’