ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ২৩
অবন্তিকা তৃপ্তি
সিদ্দিক বাড়িতে হইচই চলছে একপ্রকার। শামিমা একপ্রকার ছুটে-ছুটে ব্যাগ গুছাচ্ছেন। সাথে দুই ছেলেকেও সকাল থেকে তাড়া দিচ্ছেন ওনাদের সাথে যাবার জন্যে। স্নিগ্ধ সেই যে ভোর রাতে বাড়ি ফিরে সোজা বিছানায় শুয়েছিল; এখনো উঠবার নাম-গন্ধ নেই।
তারউপর ওর নাকি শরীর খারাপ করছে; বমি ভাব আর জ্বর করছে। শামিমা সেটা শুনে স্নিগ্ধকে আর বললেন না যাবার জন্যে। ওর জন্যে আলাদা করে সকালে উঠে খিচুড়ি করলেন; মাছ ভাজা; আর ভর্তা করে রেখে দিলেন। ঘুম থেকে উঠে গরম গরম খাবার খেলে ভালো লাগবে। স্নিগ্ধ বাসায় একা: তাই ওকে একা রেখে কাব্যকে তো আর সাথে করে নেওয়া যায়না।
শামিমা কিছুটা এইবার দোনামোনা করছিলেন। কাব্যকে ওর বড়দাদু দেখবে কদিন ধরে বলে যাচ্ছেন। কাব্যটাই তো যায় না ওদিকে। পরক্ষণে শামিমার মুখ ভোতা হয়ে যায়—— যাবেই বা কেন? সারাক্ষণ ফুটবল আর পড়াশোনা। লাইফে ওর আর কিছু আছে? উজবুক দুটো বাচ্চা পয়দা হয়েছে; যত্তসব!
শামিমা এসব ভাবতে ভাবতে দ্রুত শুটকি আর একপাশে সর্ষে ইলিশ রাঁধছেন। যাবার আগে কিছু খাবার রেঁধে নিয়ে যাবেন; না জানি বৃদ্ধ মানুষটা খাওয়া-দাওয়ার অনিয়মের কারণেই কি এই অসুস্থতা পোহাচ্ছেন?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে এই বড়দাদু?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
উত্তরটা হচ্ছে—- উনি সিদ্দিক বাড়ির চরম বিপদের সঙ্গী; ওদের উন্নতির; এত ধন-সম্পত্তির মূলহোতা।
আজ থেকে দশ বছর আগে, যখন আনোয়ার-সাদাত-শাদাফ আজকের মতো এত ধনবান ছিলেন না, ছিল যা কোনো বংশগত বাপ-দাদার রেখে যাওয়া সম্পদ— ঠিক তখন রিটায়ার্ড আর্মি আনোয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি বিজনেস খুলবেন।
কিন্তু সেই বিজনেসে কোনো পার্টনার থাকবে না। পার্টনার থাকা মানে—- ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের জন্যে মারাত্মক একটা সংঘর্ষ ডেকে আনা; এই ব্যাপারটা বুদ্ধিমান রিটায়ার্ড আর্মির বোঝা ছিলো।
তাই তিনি ভাবলেন— এই বিজনেস তিন ভাইয়ের থাকবে বিজনেস। কিন্তু সেজন্যে দরকার ছিল প্রচুর টাকা। এত টাকা ব্যাঙ্ক থেকে লোন নেওয়া যেতেই পারতো; কিন্তু আনোয়ার মনে করেন— ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া মানে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া এক সময়ে। পরিচিত একজনের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনা পীড়া দিচ্ছিলো তাকে, তাই চাইলেন না ওভাবে টাকার জন্যে ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে।
আর সেই কঠিন সময়ে— বড়দাদু আনোয়ারকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। তার পেছনে অবশ্য আরেকটা গল্প আছে। আনোয়ার সেই তখন থেকেই একজন অপরিচিত বৃদ্ধ নারীকে নিজের পরিবারের আসনে বসিয়েছেন। বৃদ্ধ নারীর নাম মোহসিনা; স্বামী নেই; নিঃসন্তান। দশ বছর আগে আনোয়ার নিজে উনার বিজনেস দেখাশোনা করতেন। এখন আনোয়ারেরও বয়স হয়েছে; তাই এখন উনার বিজনেস দেখাশোনা করার জন্যে বছর খানেক ধরে একটা নতুন লোক ঠিক করে দিয়েছেন। বলা যেতে পারে— আনোয়ার একজন সন্তানের ন্যায় মোহসিনার খেয়াল নিয়েছেন এত বছর।
তারপর আজ কি যে হয়ে গেল— সকাল সকাল খবর এলো; মোহসিনা ভীষণ অসুস্থ। আনোয়ার যেন জরুরি প্রয়োজনে তাকে দেখতে আসেন দু-ভাই, ভাইয়ের বউদের সাথে নিয়ে।
ঘুম থেকে উঠেই এমন একটা অপ্রত্যাসিত খবরে আনোয়ার খবরটা ঠিকই চমকেছেন; পরপর ব্যতিব্যস্ত হয়ে শামিমাকে খবর দিলেন। তারপরেই শুরু হয়েছে— সিদ্দিক বাড়ির বউদের ছোটাছুটি। অতঃপর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আনোয়ার স্ত্রী-ভাইদের নিয়ে বেরিয়ে পরেছেন দিঘিরপাড় গ্রামের উদ্দেশ্যে।
এবার আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে; স্নিগ্ধ মা-বাবা যেতেই ওভাবেই বিছানা থেকে ঠাস করে উঠে বসে গেল। এতক্ষণ এত কুকিয়ে যাচ্ছিলো অসুস্থতার বাহানায়; মনে হচ্ছিল এক্ষুনি হয়তোবা মারাও যেতে পারে। অথচ শয়তানটার আসল রূপ এখন বেড়িয়েছে।
কাব্য পাশেই বসেছিল। স্নিগ্ধের এই রূপ দেখে কাব্য শুধুমাত্র ছোট একটা শ্বাস ছাড়লো; অবাক-টবাক হলো না খুব একটা। কারণ ও এখন এক রাতেই স্নিগ্ধের নির্লজ্জতা দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ছোটবেলায় ঠাসঠাস থাপ্পড় খেলে বোধহয় আজ এরকম বড় ভাইয়ের সামনে অসভ্যতা করতে পারতো না: আর নাইবা পারত এমন বাসর-বাসর করে মরে যেতে।
স্নিগ্ধ উঠে বসতেই; কাব্য ভ্রু কুচকে ফোনটা জ্যাকেটের পকেটে রাখতে রাখতে ভ্রু কুঁচকে: ফিচেল গলায় বলল———‘অ্যাকটিং শেষ, রাইট? উঠে ফ্রেশ হয়ে আয়; আমি রুমে যাচ্ছি।’
স্নিগ্ধ শুধু মাথা নাড়ালো দুপাশে। কাব্য চুপচাপ বেরিয়ে গেলো। স্নিগ্ধ এবার ঘড়ির দিকে তাকালো। বাইরে যেতে হবে কেনাকাটা করতে। আজ স্নিগ্ধ কায়াকে শর্ত দিয়েছে——পুরোটা দিন কায়া আজ বউ-বউ হয়ে থাকবে; শাড়ি পড়বে, স্নিগ্ধকে খাবার বাড়বে। আর ওরা একদিনের জন্যে স্রেফ সংসার করবে: একটা সুন্দর-স্বাভাবিক স্বামী-স্ত্রীর সংসার!
স্নিগ্ধ সময় দেখে চটজলদি কম্বল গায়ের উপর থেকে সরিয়ে টাওয়াল-ট্রাউজার নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।
দশ মিনিটে শাওয়ার নিয়ে; ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে ঘরে কেউ নেই; শুধু বিছানার উপরে কায়া বসে আছে; দরজার সিটকিনি তুলে দেওয়া।
কায়ার পরনে একটা সাধারণ সালোয়ার-স্যুট; শাড়ি পড়েনি ও।
স্নিগ্ধ সেটা দেখে নিজের মতো তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আয়নার দিকে যেতে যেতে বলল——— ‘কিরে, রেডি হোস নি? শাড়ি না কিনে দিলাম; পরলি না এখনো?’
কায়া তাকালো আয়নায় সরাসরি স্নিগ্ধের দিকে; ওর চোখ টলমল করছে ভীষণ— এ যেন কেঁদেই দিবে।
স্নিগ্ধ নিজের মতো করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে; গায়ে একটা কালো পোলো টিশার্টও জড়িয়েছে কায়াকে রুমে দেখে। ও নিজের মতো চুল মুছতে মুছতে খেয়াল করলো—- কায়া কথা বলছে না; উত্তরও দেয়নি।
কায়াকে হঠাৎ এমন চুপচাপ দেখে স্নিগ্ধ চুল মোছা হাত থামালো; আয়নায় নিজেও ভ্রু কুঁচকে কায়ার দিকে তাকাল।
কায়ার চোখে পানি দেখে ভ্রুটা আরো কুঁচকে ফেলল স্নিগ্ধ। আয়নায় ওর দিকে তাকিয়ে চিন্তিত গলায় বললো———
‘আর ইউ ওকে, না?’
কায়া টলমল চোখে এবার দুপাশে মাথা নাড়ল; অর্থাৎ ও ‘ওকে’ না। স্নিগ্ধ শুনে চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। তারপর তোয়ালে রেখে পেছন ফিরে সরাসরি তাকালো কায়ার ঠিক চোখের দিকে।
স্নিগ্ধ অবাক মুখে দাড়িয়ে আছে; কায়া কান্নামাখা মুখে স্নিগ্ধের বিছানায় বসা।
ওভাবেই কায়া বিছানায় বসে থেকেই: স্নিগ্ধের মুখের দিকে মাথা উঁচু করে চেয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো, এমনকি চূড়ান্ত অসহায়ের ন্যায় বলে গেলো; সাফাই গাইতে লাগলো নিজের ভয়ের——— ‘এটা…এটা না করলে হয়না স্নিগ্ধ? আমার কথাটা একটু রাখুন, দয়া করে। আমি…আমি মা-বাবাকে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করেছি; এখন আবার এসব! আমি পারব না স্নিগ্ধ: আমার হাত-পা কাঁপছে—এই দেখুন; দেখুন একবার।স…সম্ভব না এসব আমার জন্যে। আপনার জন্যে হয়তবা সহজ; আপনার এই বিয়েতে ভাই-বোন আছে আপনার পাশে— কিন্তু আমার এই বিয়েতে কে আছে বলুন? কেউ জানে না। আর জানলে ওরা যে কি করবে আমি জানিও না। আমাকে সময় দিন; এক্ষুনি এসব না। প্লিজ স্নিগ্ধ; প্লি..প্লিজ!’
কায়ার শেষের কথাটা বড্ড করুণ শোনাল— কেঁদেই কেঁদেই যেন ‘প্লিজ’ বলল স্নিগ্ধকে।
স্নিগ্ধ রীতিমত হতবম্ব। ও বুঝেনি কায়া এভাবে ওর কাছে অনুনয় করবে। অথচ ও তো জানে যে— কায়ার বাসর রাত নিয়ে এই মত ছিল। কায়াকে জিজ্ঞেসও করেছিল স্নিগ্ধ। কায়া চুপ ছিলো ঠিকাছে; কিন্তু সেটাকে তো স্নিগ্ধ লজ্জা ভেবে ভুল করে ফেলেছে। মস্ত বড় ভুল! কায়া রাজি না জানলে— কখনোই কায়ার বিরুদ্ধে গিয়ে ওকে জোর করে স্নিগ্ধ এটা করত না।
স্নিগ্ধ নিজেকে সামলে নিলো। দ্রুত পায়ে বিছানায় বসা কায়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে কায়ার হাতটা নিজের হাতে চেপে নিজের দিকে টানল। ততক্ষণে কায়া মাথা নিচু করে ফেলেছে, ঠোঁট চেপে কেঁদেই ফেলেছে প্রায়। বেচারি বিয়ে মুষড়েই যাচ্ছে। এ এক নাজেহাল অবস্থা। এতসময় স্নিগ্ধ এটা খেয়ালই করলো না: শিট!
কায়া কি রাজি ছিল না বিয়েতে? কথাটা মাথায় আসা মাত্রই স্নিগ্ধ ভীষণ ভয় নিয়েই হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসল——— ‘তুই কি বিয়ে মানিস? সত্য করে বলবি!’
কায়া কান্না থামিয়ে স্নিগ্ধের দিকে তাকাল: চোখে চোখ মিলতেই ; কায়া থমকালো। স্নিগ্ধকে ভীষণ স্ট্রিক্ট দেখাচ্ছে: সিরিয়াস হয়ে আছে মুখ-ভঙ্গি।
কায়া আস্তে করে: নিচু গলায় জবাবে বলল———‘ম..মানি।’
স্নিগ্ধকে এবার এতক্ষণে আশ্বস্ত হতে দেখা গেল। তারপর ও ভ্রু উঁচু করে কায়ার গোলগাল মুখের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো——‘বাসর রাত নিয়ে তোর প্রবলেম? তাই তো?’
কায়া এবার অনুনয় চোখে স্নিগ্ধের দিকে চেয়ে রইল; ওই টলমলে; দীঘির ন্যায় স্বচ্ছ দুই-চোখের ইশারায় যা বোঝার স্নিগ্ধ বুঝে গেল। ও হালকা হেসে কায়ার মাথায় হাত রেখে মৃদু চাপ দিয়ে আদর-আদর গলায় বলল———‘ফাইন; তুই যা চাইবি সেটাই হবে।আমি তোকে বিয়ে করেছি- তোর মনের জাস্ট ভয়টা দূর করার জন্যে। বাসর লাগবে না আমাদের, আমরা এমনি ঠিক আছি। লাইক বিবাহিত ব্যাচেলর?’
বলেই মজা নিয়ে চোখ টিপলো স্নিগ্ধ। কায়া ওমন চোখ টিপ্পনীতে কান্নামাখা মুখেই হেসে উঠল। স্নিগ্ধও হাসলো কায়ার সাথে; হাসিহাসি কায়ার মুখটার দিকে চেয়ে বললো———-‘আয়হায়, এই হাসিটার জন্যে শাহবীর সিদ্দিক স্নিগ্ধের জানটাও কুরবান!’
কায়া উত্তরে মাথাটা নিচু করে চোখের জল মুছতে মুছতে থিত চেপে হাসল। স্নিগ্ধ এবার বসা থেকে একটু উঠে এসে কায়ার কপালের মধ্যিখানে টিপ দেবার জায়গায় চুমু খেল; কায়া স্নিগ্ধের হাত চেপে ধরে চোখ বুজল শান্তিতে।
‘ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি’— সকাল ১০ টা!
কাব্য আজ একটু সকাল সকাল এসেছে। কুহুর কার সাথে কথা বলেছে এই মাঝরাতে; সেটা তো সন্দেহ করেছে কাব্য। এখন কে এই ছেলে; সেটা তো জানা লাগবে। এবং কাব্যের গাট ফিলিংস হচ্ছে—- ওই ব্লাডি বাস্টার্ড সিয়ামই। কুহুকে আবার ফাঁসাচ্ছে। যেই শুনেছে কুহু কাব্যের কিছু একটা হয়: সেদিন থেকেই কুহুর পেছনে পরে আছে।
কাব্য ট্রান্সপোর্টে গাড়িটা রেখেই দ্রুত এগুচ্ছে। হাটতে হাটতে হাতের ঝুলিয়ে রাখা ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট গায়ে দিচ্ছে। আশপাশের কয়েকটা মেয়ে তখন তাকিয়ে দেখছিল কাব্যের রাগী-রাগী মুখে জ্যাকেট পড়ার ধরনটার দিকে। রিমি হঠাৎ কাব্যকে দেখতে দেখতে পাশের একজনকে বলেই বসলো————‘ঊর্মি আপুর ভাগ্য তো দেখ ভাই। এত মারাত্মক একটা ছেলেরে পটাইলো কেমনে ভাই? ওর থেকে তো আমি দশ গুণ বেশি সুন্দরী। আমার দিকে তো ফিরেও তাকালো না।’
বলেই চাপা রাগে ফেটে যেতে যেতে আরো একবার কাব্যের যাওয়ার দিকে তাকালো রিমি। পাশের বান্ধবী রোজ শুধু হাসলো; পরমুহূর্তে জবাবে দায়ছাড়া ভাবে বললো———‘ ওই ঊর্মি আপু সাইকো একটা। শুনেছি কাব্য ভাইয়ের সাথে নাকি প্রবলেম হচ্ছে উনার। চান্স একটা নিতেই পারিস।’
বলেই হাসতে লাগলো রোজ। রিমিও পাল্টা হাসছে।
কাব্য হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পাশে একটা স্টিক দেখে সেটা ওভাবেই হাঁটার মধ্যেই হাতে নিয়ে নিলো। স্টিকটা রোল করতে করতে সোজা চললো সিয়ামের দিকে। ওইখানেই ও ওর বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে।
কাব্য সোজা সিয়ামের টেবিলের সামনে দাড়িয়ে স্টিকটা টেবিলের উপর ঠাস করা চাপ দিয়ে ধরতেই; সিয়াম স্টিকটা অনুসরণ করে সোজা কাব্যের মুখের দিকে তাকালো। সানগ্লাসের আড়ালে কাব্যের রাগী-রক্ত উপচানো চোখ বুঝতে না পারলেও সিয়াম বুঝতে পেরেছে—- গন্ডগোল তো কিছু একটা হয়েছেই।
সিয়াম হালকা হাসার চেষ্টা করতেই; কাব্য সোজা একহাতে স্টিক ধরে৪ ওপরহাতে ওর কলার ধরে ফেলল। সিয়াম সাথসাথেই গ্রু কুচকে ফেলল; কান্নার কলার ধরা হাতের দিকে একবার চেয়ে আবার কাব্যের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাল। কাব্য মারাত্মক গম্ভীর গলায় সোজা-সাপ্টা জিজ্ঞেস করলো——-‘তুই কাল রাতে কুহুকে কল দিয়েছিলি?’
কাব্য যদি হটব্লাড হয়ে থাকে: সেদিকে সিয়াম হচ্ছে কোল্ড ব্লাড। কাব্যের মাথায় রাগ সবসময় চড়েই থাকে: অথচ সিয়াম হচ্ছে শান্ত মাথার খিলাড়ি! ও কাব্যের মতো রাগারাগী; মাথা গরম করেন; ও আস্তেধীরে নিজের খেলাটা বুঝিয়ে দেয় ওপরমানুষকে।
সম্ভবত এই কারণেই কাব্যের এই রাগী-ধমকে বলা কথাটা সিয়াম হজম করে নিলো। পরপর মুচকি হেসে কলার থেকে কাব্যের হাত ছাড়িয়ে দিয়ে হাসিমুখে জবাব দিল———-‘না তো।’
কাব্য এই মিথ্যা হজম করতে পারলো না একদমই। ও গতকাল কুহুর ফোনে সিয়ামের নম্বর সেভ দেখেছে। কুহু ওয়াশরুমে থাকার সময় সিয়ামের কল এসেছিল; তখন কাব্য দেখেছে। কাব্য এবার মুখটা ঝুঁকে আনলো সিয়ামের ঠিক মুখ বরাবর। দুটো পুরুষালি চোখ একত্রে মিলল। একজনের চোখে অসম্ভব রাগ; না না জেলাসি আর অপরজনের চোখ ভীষন ঠান্ডা: কোল্ড!
কাব্য হিসহিসিয়ে বললো————‘ডোন্ট ট্রাই টু বি ওভার স্মার্ট সিয়াম। যদি বুকের সাহস থাকে তাহলে স্বীকার কর; কিসের ভয় করছিস?’
কাব্য ইচ্ছে করেই যেন খোঁচালো।সিয়ামের মুখ থেকে কথা বের করার জন্যে। নাহলে তো আবার মারপিট শুরু করা যাচ্ছে না।
সিয়াম এবার সরাসরি কাব্যের চোখের দিকে তাকাল। তারপর উঠে দাঁড়ালো আস্তে করে।
একটু হেসেএসে সোজা কাব্যের মুখোমুখি হয়ে কঠোর মুখভঙ্গি করে জবাব দিল———‘হ্যাঁ, দিয়েছিলাম। তো? কথাও বলেছি; এখন কি কল রেকর্ড চাই তোর? তোর বোনকে পটাচ্ছি কিভাবে জানতে চাস?’
সিয়ামও ইচ্ছে করেই কাব্যকে কাব্যের মতোই খোচাচ্ছে। কথাটা শুনেই কাব্য হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলেছে। তারপর সিয়ামের চোখে চোখ মিলিয়ে চোখের রক্তিম ইশারায় শাসিয়ে স্রেফ বলল———‘আর কল দিবি না ওকে। ও তোর কোনো গেইম না সিয়াম। যা আমাকে হারানোর জন্যে তোর খেলা লাগবে। ওকে ট্রেস করা ছেড়ে দে।’
সিয়াম হাসল: ব্রাউন কালারের জ্যাকেটের পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে আরাম করে গা টানটান করে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ উপরে তাকিয়ে ভাবার ভান করলো।
পরপর কাব্যের দিকে তাকিয়ে কাব্যকে ইচ্ছে করে রাগানোর জন্যে শয়তানের মতো হেসে বলল———‘অনেক ভাবলাম রে। পারলাম না। আমি তো কল দিবই: প্রপোজ করারও ইচ্ছে আছে। তোর বোন কিন্তু আমাকে লাই দিচ্ছে। না দিলে নিশ্চয়ই আমি একটা মেয়েকে মাঝরাতে কল করার সাহস পেতাম না; রাইট? থিঙ্ক কাব্য; থিঙ্ক! তোর বোনকে গিয়ে এই শাসানোটা কর। আমাকে করে লাভ নেই; আমি এমনিতেও মানবো না।’
পরপর সিয়াম সামান্য হেসে মাথার পেছনটা চুলকে লজ্জা পাবার ভান করে বললো———‘ আসলে…সত্য বলতে তোর বোনটাকে হেব্বি মনে ধরেছে। বিয়ে করলে বউ হিসেবে ও মন্দ না।’
পরপর কাব্যের দিকে চেয়ে গর্ব নিয়েই বললো——-‘সম্পদ আমাদের তো তোদের মতোই। তোর বোন তো ভালো থাকবে; আমার বাবা এত্ত বড় বিজনেসম্যান। আমিও বিদেশে স্যাটেল হচ্ছি। তোর তো খুশি হওয়া উচিত: বোনের জন্যে এত ভালো পাত্র পুরো ঢাকা খুঁজে পাবি তোরা?’
ওদিকে ধীরেধীরে কাব্য নিজের মেজাজ হারাচ্ছে। বারবার ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে——সিয়াম বলেছে কুহু লাইন দিয়েছে; আশ্বাসও দিয়েছে, ও কথা বলেছে ওর সাথে। সত্য তো, কুহু না দিলে সিয়াম তো এতদূর আসতেই পারত না। সবটা কুহুর দোষ। কাব্যকে ও এতটা দেউত ভুলে গেল? কাব্যের সাবটিটিউট খুঁজে পেয়ে গেল? কাব্য যে এতবে বললো— সিয়াম ভালো ছেলে না? কুহুর কাছে সেটাই কোনো দাম নেই? ও তো একদিন কাব্যকে ভালোবেসেছিলো? ওর ভালোবাসা এতটাই দ্রুত ক্ষয় হয়ে গেল?
ওদিকে সিয়াম ইচ্ছে করে কাব্যকে খোঁচাতে শুরু করলো একের পর এক কথা বলে। ওর মাথায় আসলেও একটা বুদ্ধি এসেছে—-ও আসলে কাব্যকে ইচ্ছে করেই রাগাতে চাইছে। তারপর কাব্য ওকে আঘাত করবে; সিয়াম ওই আঘাত নিয়ে কুহুর কাছে যাবে; কুহুর সহানুভূতি নেবে: আর তারপর…কুহুকে এভাবেই নিজের আরো কাছে টেনে নেবে সিয়াম। নারী জাতি তো হয়ই কোমল, বোকার হদ্দ একটা জাতি এরা। অল্পতেই গলে সবকিছু দিয়ে দেয়, হা হা হা।
কুহু…উফ! মারাত্মক একটা মেয়ে! শ্যামলা বর্ণের মেয়ে একটা সিয়ামের মতো গৌড় বর্ণের হৃদয় কেড়েছে। কে বলে
—- ফর্সা ছেলেরা শ্যামলা মেয়েদের প্রেমে পরে না? এইতো সিয়াম পড়েছে তো। এত সহজে কি সিয়াম ওকে যেতে দেবে? কাব্যকে তো শালা বানিয়েই ছাড়বে নিজের। শত্রু থেকে শালা—বেশ জমবে ব্যাপারটা।
সিয়াম এবার ইচ্ছে করেই কাব্যের কানের কাছে মুখ এনে হিসহিস করে হেসে হেসেই অশ্লীল ভঙ্গিতে বললো——‘তারপর কি শুনবি? কুহু আমার প্রেমিকা হবে, প্রেমিকা থেকে বউ; বউ থেকে আমার বাচ্চার মা…!’
বাকিটা বলার আগেই কাব্য এবার আচমকা সিয়ামের মুখে-নাকে চূড়ান্ত ঘুষি দিয়ে বসলো। সিয়াম আচমকা এমন আঘাত করাতে টাল সামলাতে না পেরে দু’কদম পিছিয়ে গেল। কাব্য রাগে ফুসছে। সিয়াম নিজেকে সামলে নাকে হাত রাখল। তারপর হাত চোখের সামনে এনে দেখে—রক্ত! নাক ফাটিয়ে দিয়েছে শালা।
সিয়াম এবার রক্তমাখা নাক নিয়েই হেসে হেসেই বলল———‘কি রে ভাই; তুই কিসের জন্যে এত জেলাস? এটা আবার কেমন সমীকরণ? তোর আসলেই বোন হয়তো? নাকি তোর ভেতরেই কিছু-মিছু হেহ হেহ…!’
সিয়া সন্দেহভরা গলায় মজা নিচ্ছে।
কাব্য এবার রাগের মাথাত পাশ থেকে একটা স্টিকটা উঠিয়ে সেটা দিয়ে সিয়ামের গায়ে এলোপাথাড়ি মারতে মারতে শুইয়ে দিল ওকে ফ্লোরে; রাগের তোপে ঘেমে গেছে একদম। মারতে মারতে চিৎকার করে বলতে লাগলো———‘বারবার বলেছি; বারবার ওয়ার্ন করেছি ওর থেকে দূরে থাক। থাকলি না কেন শুয়োরের বাচ্চা। ওরে ট্র্যাপ শেখাস? বাপ হবি ওর বাচ্চার? হওয়াচ্ছি তোকে আজ বাপ!’
কাব্য কি করতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে; তাৎক্ষণিক সিয়াম হাত দিয়ে কাব্যের আঘাত আটকানোর চেষ্টা করলো। কাব্যের হুশ নেই। ও এলোপাথাড়ি মারতে মারতে সিয়ামকে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। আশপাশের কিছু ছেলে-মেয়ে ভিডিও করছে; তানিম আজ ভার্সিটি আসেনি—নাহলে ও ঠিকই সিয়ামের প্ল্যান বুঝতে পারত।
কাব্য রীতিমত পাগল হয়ে গেছে। কি করতে যাচ্ছে— ওর নিজেরও সেই বোধশক্তি নেই।
ভার্সিটির সবচেয়ে গুডবয়ের এই করুন মারপিট দেখে কেউ কেউ ডিন এর কাছে গেছে—- সেটার খবর দেবার জন্যে। আজ নিশ্চয়ই কাব্যের কপালে দুঃখ আছে।
হয় এসপার নয় ওসপার।
কাব্যও ওর এতদিনের রাগ-জেদ সব একে একে ঝাঝ নিয়েই ঝড়তে লাগল সিয়ামের গায়ের উপর। কাব্য এবার স্টিক ছেড়ে পাশ থেকে কোল্ড কফির কাচের বোতল তুলে সেটা নিজের হাতেই চেপে ভেঙে ফেলল। কাচের টুকরো ঢুকে গেঁথে গেল কাব্যের হাতের ভেতর। রক্ত পড়তে লাগল অবিরাম। এইবার সিয়াম দ্রুত আঘাতপ্রাপ্ত শরীর টেনে নিয়ে কাব্যকে আটকাতে যাবে; হঠাৎ কাব্যের হাত পাশ থেকে কেউ আটকে দিল।
রক্তমাখা মুখে সিয়াম তাকালো ওদিকে। কাব্যও ভয়ংকর ফুঁসতে ফুসতে পাশে তাকাল। কুহু ভ্রু কুচকে মারাত্মক গম্ভীর মুখে কাব্যের চোখে চেয়ে রয়েছে।
কাব্য কুহুকে দেখেই কেমন গরম হয়ে গেল আপনা-আপনি। ও সিয়ামের পায়ে আরও একটা লাথি দিয়ে কুহুর দিকে চেয়ে ফুসতে ফুসতে বললো —— ‘ছ…ছাড় আমাকে; শালার বাচ্চা তোকে কি বলেছে…কলিজা কত বড়———‘
কাব্য কথাটা শেষ করার আগে কিছু বলার আগেই কুহু থমথমে গলায় বলে বসলো——‘ যা বলুক উনি; সেটা উনার আর আমার ম্যাটার। আপনর এটাতে ইনভলভ হবার দরকার নেই। আমি আছি দেখার জন্যে।’
‘আপনার এটাতে ইনভলভ হবার দরকার নাই’—-কথাটা কানে যাওয়ামাত্রই সিয়ামের থেকে চোখ সরিয়ে অবাক হয়ে কাব্য কুহুর দিকে তাকাল। পরপর কুহু কাব্যের রক্তেমাখা হাতটা থেকে কোল্ড কফির কাচের টুকরো ঝাড়ি দিয়ে ফেলে কাব্যের হাত ছেড়ে দিল।
কাব্য একবার ওই টুকরোগুলো দেখল; পরপর কুহুর দিকে তাকাল, চুপচাপ। কুহু ভীষণ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কাব্যের দিকে বা চেয়েই বললো———‘বড় মা যদি শুনেন তার গুড বয়ের এই রূপ দেখা যায় ভার্সিটি এলে; তিনি তো লজ্জায় মরেই যাবেন। আমাকে বাধ্য করবেন না বড়মাকে আপনার ব্যাপারে আগাগোড়া সব বলতে। ইনক্লুডিং আমার-আপনার সাজেক ট্রিপ— সবকিছু।’
কুহু থমভঙ্গিতে কাব্যের চোখের দিকে চেয়ে পুরোটা কথা বললো।
কাব্য চোখ ছোটছোট করে কুহুর দিকে তাকালো এইবার। কুহু ওসব ধার ধারলোই না একবারের জন্যে। ও কাব্যের হাত ছেড়ে সিয়ামের পাশে এসে হাঁটু গেড়ে বসলো। সিয়ামের পুরো মাথাই বোধহয় ফেটে গেছে; নাকে মুখে রক্ত। অপরাধবোধে ডুবে যেতে লাগল কুহু সেটা দেখে। গতকাল ও নিজেই তো সিয়ামকে একটা জরুরি দরকারে কল দিয়েছিল: সেটা সিয়াম মাঝরাতে ব্যাক করেছে। এটার জন্যে কাব্য ভাই এতবড় হাঙ্গামা করে ফেললেন?
কুহু ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে সেটা সিয়ামের নাকে চেপে ধরে ম্লান গলায় বলল———‘রক্ত পড়ছে আপনার নাক থেকে। রুমালটা চেপে ধরুন; আর আমার সাথে চলুন। হসপিটাল যেতে হবে। ব্যান্ডেজ লাগবে সম্ভবত।’
সিয়াম মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে একবার আড়চোখে কাব্যের দিকে তাকাল। কাব্য তাকিয়েই আছে কুহুর দিকে; ওর দু-চোখ কেমন যেন! কাব্যের বিশ্বাস হচ্ছে না, কুহুর সিয়ামের জন্যে এত দরদ?
কাব্য হঠাৎ কি মনে করে একবার নিজের ব্যথা পাওয়া; কাচ গেঁথে যাওয়া, রক্তে ভেজা হাতটা চোখের সামনে তুলে দেখল—কাব্যের হাত থেকেও রক্ত পড়ছে। কুহু ওকে দেখল না? সিয়ামকে দেখল? কাব্যের থেকে সিয়ামকে গুরুত্ব দিল বেশি? সিয়াম কি তাহলে ঠিক বলেছে? কুহুই সিয়ামকে আশকারা দিচ্ছিলো? কুহুই চায়—- সিয়াম ওর প্রেমে পড়ুক?সবকিছু কুহু চাইছিল বলেই হচ্ছিল?
অস্ফুটে একবার কি বলতে চাইল যেন——-‘ক…কুহু…! আমিও….রক্ত…!’
কুহু একবার সিয়ামকে তুলতে তুলতে ঘেন্নার দৃষ্টি দিল কাব্যের দিকে; কাব্য সেটাও দেখল। পরপর কাব্য যা বলতে চাচ্ছিল, আর বলতে পারল না। চোখ বুজে লম্বা শ্বাস ফেলল। আর তাকালো না কুহুর দিকে একবারের জন্যেও।
কুহু সিয়ামকে নিয়ে কাব্যকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল; একবারের জন্যেও কাব্যের ব্যথা দেখল না; কাব্যকে নিয়ে ভাবলো না।
কাব্যও আর পেছন ঘুরে দেখল না; ও পাথরের মতো নিজের পায়ের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ওর হাত থেকে অনবরত রক্ত পড়ছে; রক্তে ফ্লোর ভিজে যাচ্ছে। ওর ওদিকে খেয়ালটুকু নেই। মাথায় ঘুরছে কুহুর ওই ঘেন্নার দৃষ্টি: কুহুর ওই কথাগুলো; সিয়ামের প্রতি কুহুর দরদ— সবটাই মারাত্মক বিষ লাগছে কাব্যের কাছে এখন।
তানিম হঠাৎ কোথা থেকে দৌড়ে এলো। এসেই কাব্যের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলল; কাব্য ওটাও শুনতে পেল না।ও পাথরের মতো নিজের জায়গায় দাড়িয়ে রইল।
ওর চোখে শুধু ভাসছে—কুহু সিয়ামকে নিয়ে হসপিটাল গেছে। কুহু সিয়ামের জন্যে চিন্তিত হয়েছে; কাব্যকে শাসিয়েছে। সবটাই সিয়ামের জন্যে; কাব্যের জন্যে কিছু না; কিচ্ছু না।
তানিম কথা বলতে বলতে হঠাৎ কাব্যের হাতের দিকে চোখ গেল। সম্পূর্ণ কেটে গেছে কাব্যের হাত। তানিম এইবার এতক্ষণে আতকে উঠে দ্রুত কাব্যের হাত চেপে ধরে আতঙ্কিত গলায় বলল———‘ইয়া মাবুদ। তোর হাত থেকে তো রক্ত পড়ছে। কাব্য? এই কাব্য? আরে, রুমাল আছে কারো কাছে; দ্রুত দাও।’
একজন রুমাল এগিয়ে দিতেই তানিম কাব্যের হাত বেঁধে ফেলল। কাব্য প্রাণহীন দৃষ্টিতে নিজের হাতে তানিমের রুমাল বাঁধা দেখল।
তানিম তো ওকে ভালোবেসে বন্ধু বলে খেয়াল করে রক্তভেজা হাতে রুমাল বেঁধেছে। কুহু নিশ্চয়ই সিয়ামকে ভালবেসেই রুমাল দিয়ে নাকের রক্ত পড়া বন্ধ করেছে! কাব্য চোখ বুজে ছোট করে শ্বাস ফেলল। আবার চোখটা খুলে তাকাল: ওর চোখ লাল হয়ে আছে; রক্তিম যেন এই চোখ থেকেও এইবার রক্ত ঝরবে।
তানিম দ্রুত তারপর কাব্যকে পাশের ফার্মেসিতে নিয়ে গেল ব্যান্ডেজ করাতে। কাব্য পুরোটা সময় চুপচাপ ছিলো। ওর মাথায় এখনো ঢুকেছে না—- কুহু সত্যি সিয়ামের জন্যে ফল করেছে। কুহুর ওই দৃষ্টি: ওই দরদ —-ওটা তো ভালোবাসাই ছিলো।
অর্থাৎ কুহু সিয়ামকে ভালোবেসে ফেলেছে। কুহুর কোথাও আর কাব্যের স্থান নেই। ঠিক এইজন্যেই কুহু আর কাব্যকে দুই চোখে দেখতে পারেনা। কুহু এখন: পস্তাচ্ছে! হয়তবা ভাবছে—- কেন কাব্যকে বলেছে ও সেদিন ভালোবাসার কথা। অথচ কাব্যের প্রতি ওর তো কোনো অনুভূতিই ছিলো না। সবটাই ইনফ্যাচুয়েশন ছিলো। কুহু আজ বুঝেছে সেটা।
তবে আজ কুহু বুঝেছে; কিন্তু কাব্য? ও তো বুঝতে চাইছে না এসব। ওর অবচেতন মন মানতে নারাজ— কুহু কাউকে ভালোবাসতেও পারে।
কাব্যের হাতের ড্রেসিং শেষ করে এইবার; এতক্ষণে তানিম কাব্যের দিকে তাকাল। কাব্যের দিকে চেয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করল——-‘এইবার বল; কেসটা কি? কি জন্যে করলি এসব? সত্য বলবি; নাহলে ঘুষি দিয়ে তোমার মুখের নকশা বদলায় দিমু।’
ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ২২
কাব্য তানিমের দিকে তাকালো; কেমন প্রাণহীন ওই দৃষ্টি। তানিম হয়তবা একটু ভরকালো। কাব্য এইবার হঠাৎ বলে বসলো———-‘কুহু সিয়ামকে ভালোবাসে।’
তানিম প্রথমে বুঝেনি কাব্য কি বলেছে। ও কাব্যের দিকে চেয়ে পরপর মাথা ঝাকালো——-‘কে কাকে ভালোবাস?’
কাব্য এবার গলা খাকারি দিল। একটা ঢোক গিলে; ম্লান গলায় বলল——-‘কুহু সিয়ামকে ভালোবাসে।’
Denim jacket porbo 20 te ektu golmal ache doya kore asol porbo 20 den