ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ২৯

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ২৯
অবন্তিকা তৃপ্তি

কাব্য থামলো; এবার অস্থির হয়ে বলে যেতে লাগলো——-‘কুহুকে এনে দে না ভাই, প্লিজ। কিভাবে ও ভুলে যাবে আমার দেওয়া থাপ্পড়, আমার সব অপমান, কষ্ট সবটা! কিভাবে; কিভাবে, ঠিক কিভাবে করলে ও আগের মতো হয়ে যাবে। জাস্ট টেল মি। ওর কাছে মাফ চাইতে হবে? ওর পায়ে ধরতে হবে? কি, ঠিক কি করলে ও আমাকে ভালোবাসবে আগের মতো? তুই তো লাভগুরু, এতদিন আমাকে কুহুর পেছনে লেলিয়ে দিয়েছিস। আমার এখন কুহুকে চাই; এট এনি কস্ট। আমারে এনে দে প্লিজ। ওকে আমার চাই তানিম। তুই যা সাজেশন দিবি আজ; সব করবো আমি। সব! বল আমাকে কি করতে হবে?’

কাব্য অস্থির হচ্ছিল ভীষণ। ও পারলে আজই কুহুর কাছে ছুটে যায়। কুহুর আচরণ এতদিন সহ্য করতে পারলেও: এখন থেকে আর একমুহূর্ত পারছে না— যখন থেকে কাব্য নিজের ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পেরেছে।
বেচারা কাব্য আজ ভীষণ অস্থির; আজ যেন ভীষণ তাড়াহুড়ো ওর! কুহুকে পারলে এক্ষুনি রুম থেকে বের করে কাজী অফিসে টেনে নিয়ে বিয়ে করে ফেলার মতো ভীষণ অস্থির; উৎকুণ্ঠিত হয়ে আছে এ যাবতকালের সেরা রামছাগল মিস্টার শাহরিয়ার সিদ্দিক কাব্য।
কাব্য হতাশ আজ ভীষণ, সিদ্ধান্তহীনতায় পুড়ছে ভীষণ।
বহুদিন আগে ওর কাছে কুহু একটুখানি ভালোবাসা, একটুখানি ভালোবাসার সময় চেয়েছিলো। কাব্য দেয়নি, ভাবতেও নিজেকে একটা সুযোগ দেয়নি সেদিন। তার ফলস্বরূপ আজ—- সবটা ভেস্তে গেছে। অনুতাপে পুড়ছে আজ ও। বুকের ভেতর থেকে কালো ধোয়ার মতো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাব্য আলগোছে দু হাঁটুর মধ্যে মাথা ঠেসে রেখে চুপচাপ মেঝের দিকে চেয়ে রইল। ওর পিঠ কাঁপছে। বারবার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ ডলে-মুছে জোরে শ্বাস ফেলে আবার চুপ করে বসে থাকছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তানিম বুঝে কাব্য কেন এত চুপ হয়ে গেছে হঠাৎ, তানিমের কাছেও কাব্যকে এভাবে দেখে ভালো লাগছে না। তানিম ছোট একটা শ্বাস ফেলে কাব্যের কাঁধে ওর হাতটা রাখল, নরম কণ্ঠে বোঝাল একজন পারফেক্ট সুবন্ধুর ন্যায়——‘কাব্য…কিছু শেষ হয়নি কাব্য। কুহু এখনো তোরই আছে। এভাবে নিজেকে দোষ দিস না, যদিও তোর দোষ আছে।’
তানিম আবার মশকরা করে বসে। কাব্য ওসব মশকরার আজ একটুও ধার ধারেনি, কাব্য এখনো হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে বসে আছে, একবার অস্ফুটে বললো বুঝি———-‘কিছু ঠিক হবে না আর তানিম, নিজের হাতে আমি সবটা শেষ করে ফেলেছি। সবটা…কিছু নেই আর।’

শুনলো তানিম, তানিম নিজের মতো করে আবারো তখন বলল———‘ধুর। মেয়ে মানুষ তো, তুই এতদিন যা করেছিস ভুলতে একটু তো টাইম লাগবে। কিন্তু স্টিল, শি স্টিল লাভস ইউ কাব্য।’
কাব্য মাথাটা তুললো এইবার, তাকালো একদৃষ্টিতে তানিমের দিকে। তানিম এবার বিজ্ঞ লোকদের মতো করে অঙ্ক কষার মতো করে বলে গেল একের পর এক বাণী——‘কিন্তু লাভগুরু দ্য আল্টিমেট তানিমের মতে—- কুহুকে পটানো পসিবল, কিন্তু সেটার জন্য দরকার প্রপার প্ল্যান। কুহুর রাগ-অভিমানের পাহাড় ধসাতে তোকে একটু কসরত করতে হবে।’

কাব্য কিছুই বুঝলো না, কেবল তানিমের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে বলল———‘কি করতে হবে?’
‘প্রপোজ!’ ———— তানিম সরাসরি বলে উঠল।
কাব্য ঠান্ডা চোখে তাকালো তখন, পরপর মুখটা ঘুরিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল———‘বাচ্চামো চিন্তা। প্রপোজ করার কি আছে? ডিরেক্ট বিয়ে করে নেই তাহলেই হয়।’
‘হো, পরে কুহু তোমার গলাটা এমনে টিপে ধরুক, না? —— তানিম রাগে কাব্যের ঘাড়ে দু হাত ঠেসে টিপে ধরে দেখাল।
কাব্য জোর করে তানিমের হাত গলা থেকে সরিয়ে দিয়ে থমথমে মুখে বলল———‘বিয়ে করলে কেন জুতা দেবে? এটা তো ভালো, আজকাল প্রপোজের কোনো সিকিউরিটি আছে? বিয়েই তো সেফ অপশন। কুহুর মনে ভয় থাকলো না; রাইট?’

তানিম হতাশ কাব্যের মেধা দেখে। এই মেধা নিয়ে নাকি কাব্য বোর্ডে অল বাংলাদেশ টপ করেছিলো, লানত ওই বোর্ডের উপর।
তানিম কাব্যের দিকে তাকাল, ঠান্ডা স্বরে স্বাভাবিক কণ্ঠে একটাই প্রশ্ন করলো———‘তোর কুহুর বয়স কত?’
কাব্য বুঝে না এই প্রশ্নের কারণ, ও নিজের মতো আঙুলে গুণে জবাব দিল———‘১৯! কেন?’
তানিম চেতে উঠে বললো———‘আর তোর ২৬! বয়সের ডিফারেন্সটা দেখসস দুজনের? কুহু সবে বড় হচ্ছে; ওকে বিয়ে করতে গেলে সবকিছু ওর মতো করে করা লাগবে। ও তোরে বিয়ের জন্যে বলছিল? কি করছে? ওইটুকু মেয়ে তোরে প্রপোজ করতে পারে, তুমি ব্যাডা দামরা হয়ে ওরে প্রপোজ করতে গিয়ে পা কাপাই ফেলতেসো। এই তুই না পুরুষ? পুরুষগিরি দেখা নিজের, বুঝছস?’
তানিম এভাবে বোঝাতে থাকে, কাব্যও সব বুঝে এবার মাথা নাড়ল। পরমুহূর্তে আতঙ্ক নিয়ে বলল———‘এতকিছুর পরে ও একসেপ্ট করবে? আমি ওকে থাপ্পড় দিয়েছি তানিম।’

বলতে বলতে কাব্য অপরাধবোধে ডুবে নিজের হাতের দিকে তাকাল; যে হাত কুহুর গালে উঠেছিল। ইচ্ছে করছে— এই হাত কেটে ফেলে দিতে— কোন সাহসে কুহুর গালে উঠল ওর হাতটা?
কাব্য অসহায় হয়ে তাকালো তানিমের দিকে——-‘ ও মানবে না তানিম; নখরা দেখাবেই। ওর তাকানো দেখছিস? যেন আমাকে খেয়ে ফেলবে, ঢেকুর অব্দি নিবে ওই ও যা মেয়ে। আমার দেওয়া জ্যাকেট অব্দি গায়ে রাখলো না; আর এখন আস্ত আমার প্রপোজ একসেপ্ট করবে? আমি অন্তত বিলিভ করতে পারছি না ওকে এই ব্যাপারে।’
‘সব আপনার কর্মফল গুরু। গন্ডগোল এত বড় একটা বাধাইসো, এখন এটারে শোধরাতে আপনার পেছন দিয়াই বাঁশটা যাবে।এ আমার এখানে কিছু করার নেই।’—— তানিম ভীষণ স্বাভাবিক: গা ছাড়া ভঙ্গিতে বলল।
কাব্য ভ্রু কুঁচকে ফেলে, যেন তানিমের এই কথা ওর খুব একটা পছন্দ হয়নি। তানিম বুঝল—কাব্য এটা ভালো চোখে দেখেনি। পরপর ও নিজেকে শুধরে বলল———‘মাইন্ড খাইস না, আছি তো আমি। আমি শিখাইয়া দিব তোকে সব। ডোন্ট ওয়ারি দোস্ত।’

কাব্যও এইবার ভীষন আশা নিয়ে নড়েচড়ে বসলো যেমন। তানিম অনেকক্ষণ ভাবল; ভাবতে ভাবতে কফির কাপে চুমুকও দিল কটা। কাব্য বড় আগ্রহ নিয়ে ওর ভাবনা দেখে যাচ্ছে। হঠাৎ তানিম থামলো, কাব্যের দিকে তীক্ষ চোখে তাকিয়ে হঠাৎ বলল———‘কালকে তুই কুহুকে প্রপোজ করবি, আমি প্ল্যান দিব তোকে। কখন কিভাবে কেমন করে ওকে প্রপোজ করবি— আমি ভাবছি।’
‘কালকেই?’——— কাব্য থতমত খেয়ে উঠলো যেমন।
তানিম ভ্রু বাঁকিয়ে তিরস্কার করে বলল———‘তো কি দিন গেলে কি রাতে? যখন সিয়াম কুহুকে বিয়ে করে বাসর ঘরে ঢুকবে তখন?’

কাব্যের ভ্রু সিয়ামের নাম শোনামাত্রই সাথেসাথেই কুচকে একাকার হয়ে গেল, সেটা দেখে তানিম নরম সুরে নিজেকে শুধরে বলল———‘সরি; তুমি তো আবার জেলাস হয়ে যাও সতীনের নাম শুনলে। আচ্ছা, সিয়াম বাদ, তুই প্রপোজ করবি কালকে মানে কালকেই।’
কাব্য থামল; অজান্তেই চিন্তায় চিন্তায় কখন যে নিজের নখ কামড়াতে শুরু করেছে— নিজেও জানে না। সেভাবেই নখের কোন কামড়াতে কামড়াতে অন্যদিকে চেয়ে কিছু ভাবতে থাকে।
ভাবনায় একটা দৃশ্য দেখে কাব্য—- ফুল হাতে কাব্য কুহুকে ভীষণ আবেগ-ভালোবাসা নিয়ে প্রপোজ করেছে, আর কুহু সাথেসাথেই কাব্যকে থাপ্পড় দিয়ে চলে গেছে। দৃশ্যটা মাথাত খেলতেই— আতকে উঠে যেমন কাব্য। তানিম তখন সবেই কফির কাপ হাতে নিল। কাব্য সাথেসাথেই আতঙ্কিত হয়ে, তড়িগড়ি করে বলে উঠল———‘কুহু যদি থা— আই মিন রিজেক্ট করে?’

তানিম কাব্যের প্রশ্নে কিছুসময়ের জন্যে থামল, তারপর নিজের মতো আবার আরাম করে কফির কাপ চুমুক বসিয়ে, কাব্যের কথার জবাব দিল——‘তাহলে কুহুর মতো আপনিও দেবদাস হয়ে যাবেন, সিম্পল।’
কাব্য এই উত্তরে অসহায় হয়ে তাকাল; বেচারার দিলটা ভেঙ্গে যাবে কুহু রিজেক্ট করলে। কাব্যের এহেন করুন অবস্থা দেখে তানিম এবার সিরিয়ার হলো সত্যি, কাব্যের দিকে চেয়ে বলল———‘আসলে— তুই ঠিক। রিজেক্ট করার সম্ভাবনাই ১০০% টু বি অনেস্ট।’
‘হু। জানি আমি, রিজেক্টই করবে, আমিও তো মাথায় তুলে নাচার মতো কিছু করিনি, এটাই প্রাপ্য আমার।—— কাব্যহাল ছেড়ে শরীর হেলিয়ে দিল বিছানার কাঠে।
কাব্য-তানিম দুজনেই বড্ড চিন্তায় পরে গেছে। এই পুরো ব্যাপারটা কেমন করে হ্যান্ডেল করবে স্বয়ং লাভ গুরু তানিম অব্দি বুঝতে পারছে না। তাই দুই বন্ধু মিলেমিশে এটা নিয়ে ভাবছে, আজ সারারাত ধরেই ভাববে তারা।
ড্রিম স্কোয়ার রিসোর্ট, ডাইনিং হল , ৯:২০ (সকাল)
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ট্যুরে আসা সবাই নাশতা খেতে বসছে একে একে। সবার চোখেই ঘুন লেপটে আছে, হয়তো নাশতা খেয়েই সবাই আরও একবার ঘুম দিবে। কাব্য যেহেতু সিনিয়র ভলেন্টেয়ার, তাই ও নিজে খাবার তদারকি করছে।

কিন্তু আজকের চিত্র ভিন্ন একদম।
আজ দায়িত্ববান; স্যারদের গুড স্টুডেন্ট কাব্য কাজ করছে কম, সদর দরজার দিকে আনচান চোখে নজর রাখছে বেশি। তাই কাজেও হচ্ছে গন্ডগোল; জুনিয়র ভলেন্টেয়ার অব্দি কাব্যকে নিয়েই গসিপ করে যাচ্ছে—- তাদের ফেমাস কাব্য ভাইয়ের হলোটা কি আজ?
ওদিকে কাজ করতে করতে গুডবয় কাব্য বারবার তাকাচ্ছেন সদর দরজার দিকে—এই কুহু এখনো আসছে না কেন?
তানিম কাব্যের পাশে দাড়িয়ে জুসের কন্টেইনারে জুস ঢালছে। যেহেতু কাব্যের পাশেই, তাই কাব্যের বারবার কাজ ফেলে সদর দরজার দিকে তাকানো ও ভ্রু কুঁচকে দেখছিল। জুস ঢালতে ঢালতে হঠাৎ তানিম বড্ড নির্বিকার গলায় জুসের কন্টেনারের দিকে চেয়েই বলল———‘কুহু… আকাশে উড়ছে।’

সাথেসাথে কাব্য আকাশের দিকে তাকাল, হকচকিয়ে বলে গেল——‘কোথায়? হু, কোথ—-!’
তানিম নিজের মতো করে কাব্যকে নিয়ে মশকরা করে আবার জুস ঢালায় মন দিল। পরমুহূর্তে কাব্যও ওর মতলব বুঝে গেল—তানিম মশকরা করছে ওর সাথে। কাব্য এইবার চূড়ান্ত বিরক্তি নিয়ে তাকাল তানিমের দিকে———‘সিরিয়াসলি? আকাশ? আর কিছু পাস্ নাই?’
তানিম জুস ঢেলে কনটেইনারের ঢাকনা লাগিয়ে নির্বিকার কণ্ঠে বলল———‘হু, ঠিকই বলেছি, তোর ইমাজিনেশনের আকাশে। কাজে মন দে শালা!’

বলেই তানিম অন্যদিকে চলে গেল। কাব্য কি করবে? ও জুনিয়র ভলেন্টেইয়ারকে বড় কন্টেনারে পরোটা রাখতে বলে তানিমের পেছনে ছুটলো। তানিম নিজের মতো কাজ করছে, কাব্য ওর পেছনে দাঁড়িয়ে গলা পরিষ্কার করে বলেই যাচ্ছে———‘আচ্ছা…তানিম? প্রপোজ থেকে বিয়ে বেটার না? হালাল থাকবে? রাইট? তাই আমি ভাবছি কি…বিয়েই করে ফেলি, কি বলিস?’
তানিম কিছু বলছে না, ও নিজের মতো খাবর টেবিলে সব গ্লাসগুলো উল্টে উল্টে রাখছে। কাব্য ওর পেছনে ঘুরে এসে আবার বলল———‘কুহু—ভাই আমার একটাসময় বোন ছিলো। এখন প্রপোজ করব এভাবে—একটু, একটু কেমন হয়ে যাচ্ছে না ব্যাপারটা?’

তানিম নিজের মতো করে গ্লাস উল্টে রাখছে টেবিলে, যেন শুনছেই না কাব্যকে। কাব্য তানিমের এই ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে এইবার কথা ছেড়ে বিরক্ত হয়ে ওর হাতে থাকা গ্লাস ঠাস করে রাখল টেবিলে———‘কি বলছি আমি? আমাকে কাজ দেখাবি না তানিম।’
তানিম গা ছাড়া ভঙ্গিতে তাকাল রাগী-রাগী কাব্যের দিকে——‘কি?’
কাব্য এবার থমথমে কণ্ঠে জানালো———‘ বিয়ে করে ফেলি? হু? এসব প্রপোজ করলে আমার ধারণা আমি ফেসে যাব; কুহু থাপ্পড় মেরেও দিতে পারে। আমি ওর মতো চুনোপুটির কাছে থাপ্পড় খাচ্ছি, এটা দেখতে ভালো দেখাবে না। তার চেয়ে বিয়ে করে ফেলা বেটার অপশন। এ ব্যাপারে তোর কি ধারণা?’
তানিম ভ্রু বাকিয়ে পুরোটা কথা শুনে গেল, তারপর ভীষণ সতর্ক চোখে কাব্যের গাল হাত দিয়ে ছুয়ে দিয়ে বলল———‘গাল রাফ হয়ে আছে, থাপ্পড় দিলে কুহুরই ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কাব্য বিরক্ত হয়ে গাল থেকে সরিয়ে দিল তানিমের হাত, রাগ দেখালো———‘ফাজলামো করিস না তানিম। আমি সিরিয়াস।’

তানিম নিজেও এবার রেগে গিয়েও থেমে গেল। আশপাশের মানুষ দেখে শুধরে গিয়ে কাব্যের কাছে এসে হিসহিস্ করে বলল———‘ফাজলামো আমি করছি? তুই করছিস ফাজলামো। কুহুরে রাজি না করে ডিরেক্ট বিয়ে করতে গেলে সংসার কিভাবে টিকবে তোর? কুহু পরদিন ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবে। হবে তখন? খুশি হবি তখন?’
তানিম কাব্যের কাঁধে হাত রাখলো——‘একবার ডিভোর্স হয়ে গেলে মামা; কাইন্দাও কুল পাবা না, বুঝছো?’
বলে তানিম আবার অন্যদিকে চলে গেল। কাব্য দীর্ঘশ্বাস ফেলল একটা; তারপর আকাশের দিকে চেয়ে, বড্ড দুঃখ নিয়ে আবদার করল খোদার কাছে———‘ইয়া আল্লাহ; হেল্প করো প্লিজ, কুহুর মনটা নরম করে দিয়ো, হু? আমি তোমার মসজিদে সদকা দিব একটা বড় আমাউন্ট, প্রমিজ।’
‘কুহু… কুহু এদিকে এদিকে আয়।’—-—- হঠাৎ পেছন থেকে কেউ কুহুকে ডাকলো যেন।
কাব্য হঠাৎ আশপাশ থেকে কুহুর নাম শুনে আকাশ থেকে মুখ সরিয়ে সাথেসাথে মাথা নামিয়ে ওদিকে তাকাল। কুহু একটা সাদা ত্রিপিস পড়েছে, সাথে গাড় লাল দোপটটা একটা শোল্ডারে রেখে ছেড়ে দিয়েছে, চুলগুলো খুলে রাখা, উড়ছে এলোমেলো, কুহু চুল কানের পেছনে গুঁজতে গুঁজতে হাসতে হাসতে এগুচ্ছে একপাশের টেবিল ঘিরে থাকা মেয়েদের দিকে।

কাব্য তাকিয়েই রইল, চূড়ান্ত অবসেশন নিয়ে। হয়তো এখনও কাব্য বুঝেনি—- এটাকেই হয়তো অবসেশন বলতো কুহু। কুহু সেদিন কাব্যকে বলেছিল—- ও অবসেসড কাব্যের প্রতি। হয়তো যখন-যখন কাব্য ওর সামনে আসত, কুহু তখন-তখন ঠিক এভাবেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাতো কাব্যের দিকে, আজ কাব্যের মতো কুহুও হয়তবা সদর দরজার দিকে বারবার-বারবার তাকিয়ে দেখত—- কাব্য এসেছে কি না।
কাব্যের বুক আবারও বেইমানের ন্যায় কুহুকে দেখে ধুকপুক শুরু করছে। হার্ট বিট করছে চূড়ান্ত দ্রুতগতিতে। কাব্য সেদিনের মতো আরেকবার চোখ খিছে উঠে হাতের তালুতে খামচে ধরে বুকের বা পাশে; কুহুর থেকে চোখ সরিয়ে নিজের বুকের দিকে চেয়ে মৃদু শাসানোর স্বরে বলে গেল ——‘বি স্লো; স্লো, স্লো প্লিজ।’
তারপর বুকে হাত রেখে কুহুর দিকে আবার মাথা তুলে তাকালো। কুহু যখন ওর পাশ দিয়ে চলে গেল—- একটা ভ্যানিলা পারফিউমের ঘ্রাণ কাব্যের নাকে এসে হঠাৎই যেন খেললো। কাব্য চোখটা বুজে ফেলল— পুরোটা ঘ্রাণ নিতে চাইল যেন নিজের মধ্যে অকপটে।
কুহু চলে গেল, গিয়ে বসেছে চেয়ারে, গল্প করতে লেগে গেছে। কুহুর ঘ্রাণও মুছে গেছে, কাব্যের বুক ধুকপুক স্বাভাবিক হয়েছে। কাব্য বুক থেকে হাত সরিয়ে নিলো, মাথার পেছনটা চুলকাতে-চুলকাতে কুহুর দিকে চেয়ে হঠাৎই হালকা করে লজ্জা পেয়ে হাসলো। ও ব্লাশ করছে ভীষণ। প্রেমে পড়ে গুডবয় শাহরিয়ার সিদ্দিক কাব্যের অবস্থা যে চূড়ান্ত বিপদজনক।

পাশ থেকে একটা জুনিয়র প্লেটে করে ওর জন্যে খাবার নিয়ে যাচ্ছিল, কাব্যকে এভাবে ব্লাশ করতে দেখে থামল, অবাক হয়ে জিজ্ঞেসই করে বসলো——‘কাব্য ভাই, আপনি ব্লাশ করতেসেন? কাকে দেখে?
ছেলেটা অবাক হয়ে বলছে আর আশপাশে খোজার চেষ্টা করছে কাউকে। ছেলেটার কথা শুনেই কাব্য এর মুখ থেকে হাসি একদম গায়েবই হয়ে গেল। সাথেসাথে মুখটা গম্ভীর করে ফেলল ও। রাগী-রাগী মুখ বানানোর চেষ্টা করে ছেলেটাকে ধমক দিল———‘শাট আপ, মিটিং রুমে না আসতে চাইলে— ভাগ এখন থেকে।’
ছেলেটা কাব্যের থ্রেট শুনেই চোরের মতো চলে গেল। কাব্যদের মিটিং রুমে একবার যাওয়া মনে— পুরুষ সত্তার চূড়ান্ত বেজ্জত করে ফিরে আসা। প্রচণ্ড জ্বালায় এরা মিটিং রুমে মিটিং করা নাম করে।
কাব্যের নজর হঠাৎ গেল পাশের কনটেইনারে রাখা পুডিং-এর দিকে। কুহুর তো এগ পুডিং অনেক পছন্দের। কাব্য সাথেসাথেই ওর পাশ দিয়ে যাওয়া জুনিয়রকে ডাকলো———‘রাকিব!’
রাকিব থামল, সাথেসাথেই প্রিয় সিনিয়র ভাইয়ার ডাকে কাব্যের পাশে এসে দাঁড়াল———‘জি ভাই।’
কাব্য একটি ছোট প্লেটে অনেকগুলো পুডিং নিয়ে রাকিবের হাতে ধরিয়ে দিল———‘এটা ওই যে সেকেন্ড টেবিলে বসা: হোয়াইট ড্রেস, রেড দোপাটটা— ওকে দিয়ে আসবি। এন্ড হ্যা- আমার নাম বলার দরকার নেই।
রাকিব একবার দেখে নিলো কাব্যের বলা মেয়েটাকে, তারপর হেসে বলল———‘বোনের প্রতি এত দরদ আপনার ভাই?’

কাব্যের মেজাজ সাথেসাথে বিগড়ে গেল, ও রাকিবের ঘাড়ে শক্ত করে দুহাত চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে হাসার চেষ্টা করে বললো——‘উহু—বউ আমার। তুই ভাবি ডাকবি,কি ডাকবি?’
‘ভা-বি? তাহলে সিয়া—!’
—— রাকিব অবাক হলো।
কাব্য পুরো নাম বলতে না দিয়ে বলে উঠল———‘আমাদের মিটিং যেন কোন রুমে হয়, জানিস?
রাকিবের মুখটা মিটিং রুমের কথা শুনেই মুহূর্তেই পাংশুটে হয়ে গেল, মাথা নামিয়ে মিনমিন করে বলল———‘সরি ভাই।’
কাব্য রাগ নামালো; রাকিবের ঘাড় থেকে হাত সরিয়ে আবার গুডবয় হয়ে বললো—‘গুড, গো নাও।’
কুহু ভ্রু কুচকে বলল——-‘ভাবী? কার ভাবি?’
রাকিব বোকার মতো হাসল স্রেফ, কুহু আশপাশ দেখল, সন্দেহভাজন কাউকেই না পেয়ে পরে রাকিবকে বললো——-‘কে পাঠিয়েছে এই প্লেট?’

‘কা—- আসলে ভাই পাঠিয়েছে।’ ——- রাকিব আমতা আমতা করে বলল।
কুহু বিরক্ত হলো যেমন———-‘জি, সেটাই জিজ্ঞেস করছি। কোন ভাই? তার নাম কি?’
‘তার নাম…তার নাম..তার নাম হচ্ছে ভাই।’—— রাকিব বেচারা বেকায়দায় পড়েছে যেমন।
কুহু অধৈর্য‍্য হয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল———‘কারোর নাম শুধু ভাই হয়?এর আগে পেছনে কিছু নেই?’
‘আছে তো।’ —- রাকিব ঘামছে; দূর থেকে কাব্য ওকে চোখের ইশারায় শাসাচ্ছে যেন নাম না বলে।
রাকিব কি মনে করল, হঠাৎ প্লেটটা সজোরে কুহুর পাশে রেখে দ্রুত তাড়াহুড়ো করে এক নিঃশ্বাসে বললো———‘খেয়ে নিন, ভাবি। আমার কাজ আছে, যাই আমি।’

বলেই এক দৌড়ে পগাড় পা হয়ে গেল। কুহু আহাম্মক হয়ে প্লেটের দিকে চেয়ে আরেকবার ছেলেটার যাওয়া দেখল। অবাক হলোও হয়তো, বললো——-‘আশ্চর্য, ও পালালো কেন?’
শার্লিন আশপাশ খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ একটু দূরে কাব্যকে দেখলো, কাব্য তানিমের সাথে দাড়িয়ে কথা বলতে বলতে বারবার কুহুর দিকেই তাকাচ্ছিলো। শার্লিন হঠাৎ গম্ভীর হলো, কুহুর দিকে ফিরে বললো——‘খেয়ে নে, কে পাঠিয়েছে ম্যাটার করে না। খাওয়াটা ইম্পর্টান্ট।’
কুহু তবুও অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো আরেকবার পালিয়ে যাওয়া ছেলেটার দিকে।জানা দরকার— কোন ভাইয়ের অলিখিত বউ হয়ে গেল ও?

ড্রিম স্কোয়ার রিসোর্ট— সন্ধা ৬:১১!
আজ রাতে ককটেল পার্টি হবে রিসোর্টের গ্রাউন্ডে। ড্রেস কোড— ব্ল্যাক। ছেলেরা পড়বে ব্ল্যাক শার্ট, হোয়াইট প্যান্ট। মেয়েরা পড়বে ব্ল্যাক শাড়ি, ব্ল্যাক ব্লাউজের সাথে।
ককটেল পার্টি উপলক্ষে কুহুর জন্যে একটা সিল্ক শাড়ি লাগেজ থেকে বের করে রেখেছে শার্লিন। কুহু শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই শার্লিন দ্রুত তাড়াহুড়ো করে শাড়িটা এনে কুহুর হাতে ধরিয়ে দিল———‘এটা পর। আমি গোসল যাচ্ছি।’
কুহু শাড়িটা কোনোরকম ধরলো, সিল্কের শাড়ি এতটা ফিনফিনে দেখে ইতস্তত হয়ে বলল———‘এটা কেন?শরীর সব দেখা যাবে তো শার্লিন।’

শার্লিন টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে যেতে চেঁচিয়ে বলল———‘ককটেল পার্টিতে এটাই পড়ছে সবাই। ব্লাউজ আছে ফুলহাতার, টেনশন নিস না। পরে ফেল; আমি এসে চুল কার্ল করে দেব।’
বলেই শার্লিন ওয়াশরুমের দরজা আটকে দিল। কুহু বেচারী বেকায়দায় পড়েছে। এই শাড়ি কিভাবে পরবে? কেমন দেখাবে? যদি সবটা দেখা যায়? কুহু কখনোই এতটা রিভিলিং শাড়ি পড়েনি, সিল্কের শাড়িও এই প্রথম পড়া হবে।
কুহু ভোতা মুখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়িটা নিজের শরীর উপরে মেলে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো। উম; ততটাও বোঝা যায় না—তবুও! আচ্ছা পরে ফেলা যাক। বেশি শরীর দৃশ্যমান হলে— খুলে ব্ল্যাক কুর্তি পরে ফেলবে।
কুহু রুমের একপাশে গিয়ে কোনরকম ব্ল্যাক ব্লাউজ-পেটিকোট পরে হেঁটে এসে আয়নার সামনে শাড়িটা নিয়ে দাঁড়াল। তারপর পরা শুরু করলো। ওঠছ সেগুরে বালি। শাড়িটা পরাই যাচ্ছে না একদমই— সিল্কের শাড়ি হওয়াতে একদিক সামলালে আরেকদিক খুলে পড়ছে— একি মহা সমস্যা!

কুহু শাড়ি নিয়ে যখন স্ট্রাগল করে যাচ্ছে, ঠিক তখন ওয়াশরুম থেকে শার্লিন বেরিয়ে এলো। এসেই শাড়ি হাতে নাস্তানাবুদ কুহুজে কুহুকে দেখে অবাক হয়ে বলল———‘কি রে, পড়িস না এখনও?’
কুহু ফিরল শার্লিনের দিকে। শার্লিন চুলে টাওয়াল দিয়ে ঝাড়ছে। কুহু ভীষণ বিরক্ত হয়ে বললো———‘পারছি না; খুলে পরে যাচ্ছে বারবার। কি শাড়ি এনেছিস এসব?’
শার্লিন মাথায় তোয়াল পেচিয়ে এগিয়ে এলো। তারপর কুহুকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বলল———‘পরিয়ে দিচ্ছি, সোজা হয়ে ধর।’

কুহু বাধ্য মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে রইললো। শার্লিন প্রফেশনালদের ন্যায় ভালো করে মেপেঝেপে, সতর্ক চোখে সুন্দর করে শাড়িটা পরিয়ে দিল। তারপর সুন্দর করে চুল কার্ল করে ছেড়েপেছনে দিল। আর মুখে মিনিমাল মেকআপ এর সাথে ডার্ক রেড লিপস্টিক দিয়ে দিলো—-ব্যাস কুহু তৈরি।
কুহু এতক্ষণও একবারের জন্যেও আয়নায় দেখেনি। এবার শার্লিন সম্পূর্ণ তৈরি করা শেষ করে একটু সরে কুহকে নিজে ভালো করে দেখলো, পরপর খুশি হয়ে চোখ টিপ্পনি দিয়ে বলল———‘ভাই, তোকে হট লাগছে অনেক।’
কুহু ভ্রু কুচকে রাগ হবার ভান করলো। শার্লিন ওকে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করাতে করাতে বলল——-‘ সত‍্যি বলছি আমি গাধা, আসলেই ভালো লাগছে। দেখ নিজে।’

কুহু আয়নায় নিজের দিকে তাকালো। অবাক হয়ে নিজেকে দেখতে থাকে ও। আসলেই ওকে ভালো দেখাচ্ছে। শেষ কবে এতটা সুন্দর করে সেজেছে কুহু—- জানা নেই। গত ছয় মাস কুহুর জীবনটা পুরো বদলে দিয়েছিল। হাসতে ভালোবাসা কুহু— মনমরা যখন হয়ে যায়, তখন থেকে মেকআপ-সাজগোজের প্রতি মনটাই উঠে গেছে কুহুর। আজ এতদিন পর নিজেকে এরুপে দেখে কে এক হয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখতে লাগলো নিজেকে।
শার্লিনও পাশ থেকে মস্করা করে কুহুর কোমরে চিমটি কাটল হঠাৎ, আচমকা এটাতে কুহু কেমন কোমর ডলতে ডলতে শার্লিনের দিকে রেগে তাকালো——‘চিমটি কেন দিলি?’

শার্লিন হাসতে হাসতে বলল———‘ভাই, কি কার্ভ তোর, জোস! আমার যদি এমন একটা ফিগার থাকতো।’
কুহু ভ্রু কুচকে তাকালো, পরপর শার্লিনের হাসি-মজা দেখে কুহু মৃদু হাসলো স্রেফ।
কাব্য একপাশে দাঁড়িয়ে তানিমের সাথে গল্প করছিল। গল্প বলার মাঝে— কাব্যের চোখ বারবার সদর দরজার দিকে যাচ্ছিল। শুনেছে, মেয়ের আজ শাড়ি পড়বে। কাব্য নিজেই ব্ল্যাক শার্ট, হোয়াইট প্যান্ট পড়েছে। শার্ট একপাশে ইন-আউট করা, বুকের উপর কয়টা বোতাম খুলে রাখা।তানিমের কাঁধে হাত রেখে একটা গ্রুপের সাথে আড্ডা দিতে দিতে অপেক্ষা করছে, কখন কুহু আসবে। বেচারার মন বড্ড তড়পাচ্ছে আজ। বারবার নিজের অজান্তেই নখ কামড়াতে কামড়াতে সদর দরজার দিকে তাকাচ্ছে শুধু।
তানিম স্রেফ দেখে যায় কাব্যের অস্থিরতা। হাসে ও মনেমনে।
হঠাৎ তানিম কাব্যকে ইশারা করল কিছু। কাব্যও নির্বিকার হয়ে নখ কামড়ানো হাতে পেছন ফিরলো। ভেবেছে অন্যকিছু দেখাচ্ছে তানিম; কিন্তু …
থমকে গেল শাহরিয়ার সিদ্দিক কাব্যের পুরো দুনিয়া যেন। কুহু আসছে এদিকেই। কাব্য নিজের অজান্তেই পুরোটা শরীর কুহুর দিকে ফিরিয়ে হা করে তাকিয়ে রইল। ওর হাতে থাকা ফোন কখন যে হঠাৎ ওর হাত গড়িয়ে নিচে পড়ল, কাব্য তা টেরই পেলো না।

অথচ ফোন নিচে পড়ার সাথেসাথে কাব্যের ফোনের গ্লাস ভেঙে চুরমার হলো, কাব্যের নজরটুকুও অব্দি এলো না তাতে; ও কুহুকে দেখছে। অথচ তানিম চমকে উঠে ফোন সাথেসাথে ঠিকই তুলে নিয়েছে। ফোনের এই করুন অবস্থায় তানিম কাব্যকে ঠেললো———‘শালা; ১ লাখ টাকার ফোন ভেঙ্গে দিলি তুই।’
কাব্যের সেদিকে কোনো হুশ নেই। ও তাকিয়েই রয়েছে কুহুর দিকে। কুহু পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার সময়, কাব্য আগের মতো একটা ভ্যানিলা পারফিউমের গন্ধ পেল। কাব্য চোখটা খিছে বুজে নিল।
কুহু সোজা যোগ দিল মেয়েপক্ষের সাথে। কাব্য এবারও পেছন ফিরে কুহুর দিকে তাকাল।
কুহু সিল্কের শাড়ি পড়েছে। কুহুও হয়তো তাকাল তখন। কাব্য ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে, কুহু ভ্রু কুচকে ফেলল কেন যেন। আশপাশ দেখে বোঝার চেষ্টা করল——— কাব্য ঠিক কাকে এমনভাবে দেখছে। কেউ তো নেই আশেপাশে। পরপর ও কাব্যের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিল। অন্যদিকে চেয়ে কাব্যকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করল।

কাব্য দেখছে কুহুকে, অবজার্ভ করছে। কুহুর চোখ, চোখে আজ ব্লু কাজল লাগিয়েছে, টানা টানা চোখ দেখাচ্ছে। ওর ঠোঁটে ডার্ক রেড লিপস্টিক— রেড ওয়াইন কালার, কাব্যকে তৃষ্ণার্ত করে দিচ্ছে ভীষণ। আজকাল রেড ওয়াইনও বুঝি এতটা নেশালো হয়? কুহুর পিঠের মাঝে কালো তিল, তিলের নিচে হোয়াইট——

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ২৮

ওয়েট: হোয়াট? কাব্য হঠাৎই ভ্রু কুচকালো। এটা…কুহুর ব্লাউজের পেছনের হুক দুটো খোলা? ওই তিল এইজন্যেই দেখা যাচ্ছে? কাব্য ভ্রু কুচকে চোখ ছোট করে মাথাটা সামান্য এগিয়ে আরও একবার দেখল—- না ঠিকই আছে; হুক খোলাই। কাব্য একবার সতর্ক চোখে আশপাশের সবাইকে দেখল; কেউ কি তাকাচ্ছে?
পরপর থমথমে মুখে বড়বড় পা ফেলে কাব্য এগিয়ে গেল কুহুর দিকে।

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৩০

1 COMMENT

Comments are closed.