ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৩১

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৩১
অবন্তিকা তৃপ্তি

কুহুর চোখে চোখ রেখে ভীষণ সন্তুষ্টি নিয়ে, নরম কণ্ঠে বলল———‘আই লাভ ইউ কুহু। আই জেনুইনলি লাভ ইউ। প্লিজ ফিরিয়ে দিস না আমায়, প্রমিজ আজ তুই আমাকে একসেপ্ট করলে ট্যুর থেকে ফিরেই আমরা বিয়ে করে নেব। ব্যাস— আমি আর কখনো তোর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার চান্স থাকবে না।’
কুহু শুনল স্রেফ। কাব্য ভীষণ আগ্রহ নিয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে আছে— কুহুর জবাব শোনার জন্যে।
কুহু, কুহেলিকা সিদ্দিক কুহু, এমন একটু মেয়ে ছিলো ছয়মাস আগে—যে কিনা কাব্যের একটুখানি ভালোবাসা, একটুখানি স্নেহ পাওয়ার জন্যে রীতিমতো মরে যাচ্ছিল। আর আজ? আজ তার সেই শখের কাব্য ভাই কুহুকে নিজের উজাড় করা সেই ভালোবাসার কথাই স্বীকার করে যাচ্ছেন। অথচ, এখন এই প্রেমের কথা কুহুর একটুও ভালো লাগছে না, একটুও না। অস্থির-এলোমেলো কুহু আজ শ্বাসটুকুও ফেলতে পারছে না।

যখন এলোমেলো ভঙ্গিতে কুহু চেষ্টা করে কাব্যের থেকে সরে যাওয়ার, কাব্য তৎক্ষণাৎ ওর নির্মেদ-সরু কোমরটা চেপে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। দেহের সাথে দেহের অকপটে ঘনিষ্ট সংঘর্ষে শিউরে উঠে কুহুর দুহাত এসে ঠেকল কাব্যের বুকের দুপাশে। কুহু এলোমেলো চোখে হাতদুটোর দিকে তাকাল, পরপর ধীরে ধীরে ডাগর ডাগর চোখ তুলে কাব্যের চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে দেখলো; ওর মুখে আজএফ ফ্যাকাসে, মলিনতা পুরো মুখটা জুড়ে; এবং কান্না আটকে রাখার দরুন মুখটা লাল হয়ে গেছে।
কাব্য কুহুর এলোমেলো বেবি-হেয়ারগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে হাস্কি স্বরে শোনালো——-‘ভালোবাসি কুহু।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিভু-নিভু ধীর গলায় কাব্য যখন এই ম্যাজিকাল কথাটা কুহুর কানে দিল, সেটা শুনে কেন যেন কুহু হঠাৎ বোবার মতো চোখের কোন বেয়ে এক ফোঁটা জল ফেলে দিল। কাব্য আঙুলের ডগায় সাথেসাথেই লুফে নিল সেই জল। কুহু তখনো কাব্যের চোখের দিকে চেয়ে; হতবম্ব এবং দিশাহীন দৃষ্টিতে তাকাল।
কাব্য এবার কুহুর গালে হাতটা রাখল; কুহু একবার সেই হাত দেখলো, যা তার গাল পরম আবেশে ছুয়ে রেখেছে। কাব্য ভীষণ নরম, আহ্লাদী স্বরে লাই দেখিয়ে বলল———‘কাঁদছিস কেন, হু?’
কুহুর চোখ থেকে আরেক ফোঁটা জল পড়লো। কাব্য ভীষণ সুন্দর করে, প্রেমিক ন্যায় কুহুর দুই চোখ আলতো করে মুছে দিয়ে আবার বলল———‘বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি, তাইনা? আ’ম সরি!’

কাব্য ভীষণ আবেগে, নরম কণ্ঠে অবলীলায় যেন সবটুকু অপরাধটুকু স্বীকার করে নিলো। কুহু স্রেফ নাক টানল; ওর গলা ঢোক গেলার সঙ্গে সঙ্গে উঠছে নামছে। কাব্য কুহুর নাকের ডগায় আলতো করে চুমু খেয়ে মিষ্টি করে বললো——‘শাস্তি দিতে চাইছিস? একটা কাজ করতে পারিস— বিয়ে করে ফেল আমাকে। বিয়ের পর আমার জীবন ভাজাভাজা করে ফেলবি একদম। মনের সুখে আমার হোপলেস লাইফের সুখ শান্তি একদম কামড়ে খেয়ে ফেলিস। তোর দেওয়া সমস্ত শাস্তি কবুল।’

কাব্য তাকিয়ে আছে কুহুর কান্নাভেজা মুখের দিকে। কুহু নাক টানল আবার। ওর মাথায় ভেসে বেড়াচ্ছে অনবরত— পুরনো ছয় মাসের সকল স্মৃতি। ওর ছোট মস্তিষ্ক বিশ্বাস করতে পারছে না এই কাব্যকে। আর ভুলতে পারছে না ছয় মাস আগের সেই অপমান, থাপ্পড় দিয়ে রিজেক্ট করা মারাত্মক অহংকারী কাব্যকে।
কুহুর মাথায় হঠাৎ প্রশ্ন এল— আচ্ছা.. . কাব্য ভাই এসব কেন করছেন? কাব্য… কাব্য ভাই কি নাটক করছেন? ঊর্মি আপুর সাথে মিলে? এটা কি তাদের কোনো ছলনা?
কথাটা মাথায় আসতেই হঠাৎ আচমকা কুহু দুহাতে গায়ের জোরে ধাক্কা দিয়ে বসলো কাব্যকে, কাব্য সেই ধাক্কায় ছিটকে দূরে সরে গেল। শুরুতে অবাক হয়ে তাকালেও, পরমুহূর্তে ও স্বাভাবিক হয়ে মৃদু হাসলো- যেন এটাই হবার ছিল।

কুহু ভীষণ অস্থির হয়ে গেছে আচমকা, ও এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে পাগলের মতো। একবার ওদিকে হাঁটছে, আবার এসে কাব্যের সামনে দাঁড়াচ্ছে। পরপর নিজের মাথার চুল খামচে ধরে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। কুহুর মাথা ঝিমঝিম করছে প্রচণ্ড; ফেটে যাচ্ছে যেন মাথার ভেতরটা। এই কাব্য… এই কাব্য ভাই— তার বলা প্রতিটা কথা কুহুর হৃদয়ে এসে তীরের মতো লেগেছে। কিন্তু কুহু এই ফাঁদে পড়বে না, একদমই না।
কুহুকে অস্থির দেখে, এইবার কাব্য দু’কদম এগিয়ে বোঝাতে গেল———‘লিসেন কু. .!’
বাকিটা বলার আগেই কুহু আঙুল উঠিয়ে চিৎকার করে বলল———‘দূরে! খবরদার আমার কাছে আসবেন না। জাস্ট স্টে এওয়ে।’

কাব্য সঙ্গে সঙ্গেই পিছিয়ে গেল, দূর থেকেই এইবার অস্থির পাগলাটে কুহুকে বোঝাতে গেল———‘কুহু, শান্ত হ। শান্ত মাথায় ভাব; আমি তোকে টাইম দিচ্ছি। হু? টাইম নে; ভাব, ওকে? কোনো প্যারা নেই। আগে একটু শান্ত হ। তোকে সিক লাগছে।’
কুহু কাব্যের দিকে রক্তলাল চোখে ফিরে তাকাল, থেমে থেমে বললো———‘টাইম নেব ভাববার? আপনি… আপনি নিয়েছিলেন?’
কাব্য কি বলবে? ও শুকনো মুখে জবাব দিল এই কথার——‘ওটা আমাদের পাস্ট কুহু, জঘন্য একটা পাস্ট। ভুলে যা ওসব, প্লিজ।’

কুহু পাগলাটেভাবে শব্দ করে হেসে উঠল, এলোমেলোভাবে চুল কানের পেছনে গুঁজে বলল———‘পাস্ট? আপনার ওই পাস্ট আমাকে আজ এই জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কাব্য ভাই! দেখুন; লুক অ্যাট মি।’
কুহু নিজেকে হাত দিয়ে দেখালো, কাব্য ঠান্ডা চোখে কুহুকে দেখলো। ওর ভেতরটা এই এলোমেলো, কাঁদতে কাঁদতে পাগল হয়ে যাওয়া কুহুকে দেখে ফেটে যাচ্ছে।
আজ অব্দি কুহু কখনোই কাব্যের সামনে এভাবে কাদেনি। কাব্যের মন হাহাকার করে উঠে হঠাৎ!
কুহু চোখের জল ঝরঝর করে পড়ছে, ও ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে বলতে লাগল———‘এটা হচ্ছে আপনার পাস্টের নমুনা। আজ আমি কুহু হাসতে পারি না কাব্য ভাই। কারও সঙ্গে কথা বললে আমার সেলফ এস্টিম লো লাগে, আমার চুল, আমার হাসি, আমার লাইফ, সবটা আজ এলোমেলো হয়ে গেছে। আর আপনি সেটাকে ‘জাস্ট একটা পাস্ট’ বলে দিলেন?’

কুহু থেমেথেমে, কান্না আটকে কাব্যের দিকে ফিরে রাগীমুখে আবার বলল———‘আমি জানি না আপনি কি প্ল্যান করছেন আবার আমাকে নিয়ে। যদি মনে করেন— আমাকে কষ্ট দেওয়ার পরিমাণ কম হয়ে গিয়েছে; এবার আরেকটু তাতে লবণ ছিটাতে চান, তাহলে বলব. .!
কুহু ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে এবার চুড়ান্ত অসহায়ের মতো বললো——‘আপনি স্বার্থক কাব্য ভাই। আমি কষ্ট পেয়েছি; এমন কষ্ট যে আমি মরতে ভালোবাসি এখন, বাঁচতে নয়। দয়া করে, দয়া করে আপনার এই নাটক; এই প্ল্যান করা বন্ধ করুন। আমি পারব না আর; আমি এর সত্যি নিতে পারব না, আপনার এইসব ষড়যন্ত্র।’
কাব্য দূর থেকেই শীতল স্বরে বলল———‘আমার ফিলিংস তোর কাছে ষড়যন্ত্র মনে হচ্ছে?’
‘হ্যাঁ হলো! হলো! হলো!’ —— কুহু আচমকা চেঁচিয়ে উঠল।
কাব্য তাকিয়ে রইল। কুহু কাব্যের দিকে চেয়ে নাক টানতে টানতে, ধরা গলায় বলল———‘থাপ্পড় দিয়ে রিজেক্ট করেছিলেন আমায় কাব্য ভাই, ভুলে গেছেন?’

কাব্য কি বলবে? ও কুহুকে এভাবে ভাঙতে দেখে নিজেই ভেতর ভেতর শেষ হয়ে যাচ্ছে একদম। ও দু কদম এবার এগোয়, জবাবে বললো———‘তাই তো বলছি— আমাকে বিয়ে কর। তারপর আমার লাইফও হেল করে দে, সুযোগ দিচ্ছি তো তোকে শাস্তি দেওয়ার। আমরা প্রতি রাতে বসে ডিসকাস করব, কিভাবে তুই আমাকে নতুন নতুন পানিশমেন্ট দিতে পারিস তোকে থাপ্পড় মারার কারণে।’
কুহু ঘেন্নায় চোখ ফিরিয়ে নিলো। কাব্য এবার মৃদু স্বরে বলল———‘গত ছয়মাস তুই একা কষ্ট পাসনি কুহু, আমিও একইভাবে পেয়ে এসেছি। আমি বলিনি তারমানে এটা না- আমার খারাপ লাগেনি।’
কুহু তাকাল কাব্যের দিকে, তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল——-‘কষ্ট আপনি পেয়েছেন? হাঁহ!’
কাব্য ওসব অপমান ধার ধারলো না। ও এগিয়ে এসে কুহুর মুখোমুখি দাঁড়াল, কাব্যের দিকে কুহু মুখটা তুলেও তখন তাকালো না। মাথায় নামিয়ে রেখেছে সেভাবেই। কাব্য কুহুর নত মাথার দিকে চেয়ে নরম কণ্ঠে শোধাল———-‘একবার ভরসা কর কুহু, ছয়মাসের যন্ত্রণা তোর কাছে ষাটটা বছরের ভালোবাসা, ভরসা হয়ে ধরা দিব।’
‘না করব না, করব না আমি ভরসা!’ —— কুহু আবার বিড়বিড় করে আপনমনে বলতে লাগে।কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠেছে ওর ততক্ষণে।

কুহু যতই বাইরে শক্ত, ম্যাচোর দেখাক না কেন— আসল কথা হচ্ছে মানুষ ছয়মাসে ইমম্যাচোর থেকে ম্যাচোর হয়ে যাওয়া স্রেফ কাল্পনিক। মানুষ তো স্রেফ ম্যাচোর হবার একটিং করে—অথচ থেকে যায় সেই ছেলেমানুষ, বাচ্চা, ইমম্যাচোর কুহুর মতোই।
কাব্য কুহুর হাতটা ধরে কিছু বলতে গেলে; কুহু ঝটকা দিয়ে হাতটা সরিয়ে দিল। তারপর কান্না আটকে কুহু ধীর পায়ে এবার এগিয়ে গেল কাব্যের দিকে, কাব্যের মুখোমুখি হলো একদম। সরাসরি কাব্যের ওই হুডেড চোখে চোখ রেখে ধরা কণ্ঠে বলল———‘আপনি… আমি জানিনা আপনি আর ঊর্মি আপু মিলে আবার কিসের ফাঁদে আমাকে ফেলতে চাইছেন। আমি বেগ ইউ কাব্য ভাই, প্লিজ যদি সত্যি এটা ফাঁদ হয়ে থাকে, প্লিজ প্লিজ দোহাই লাগে এটা এখানেই স্টপ করুন। আমি কুহু যতই বাইরে শক্ত দেখাই; আমি সেই আগের ইম্যাচিউর, উইক কুহুই আছি; আমি কাঁদব, কাঁদব— কিন্তু আমার কান্না শোনার কেউ থাকবে না, কখনো কারোর কাঁধ পাবো না।’
কুহু কাব্যের কাছে হাত জোড় করে ফেলল আচমকা———‘আমার শান্তি ভিক্ষা দিন আপনি, প্লিজ। আমি একটু শান্তি চাই। এসব কুটিল দুনিয়ার প্যাচ আমি বুঝিনা কাব্য ভাই, প্লিজ আমাকে এসব প্যাচে জড়াবেন না। প্লিজ দোহাই আপনার।’

কাব্য সঙ্গেসঙ্গেই কুহুর হাতটা চেপে ধরল, কুহু কাব্যের সামনে ভেঙে-চুরে গেল এবার, ও পারেনি আর নিজেকে একটা শক্ত খোলসের মধ্যে আটকে রাখতে। হাপিয়ে উঠেছে কুহু এই শক্ত, ম্যাচোর হবার অভিনয়ে।
কুহু কাঁদছে, কাব্য মলিন চোখে তাকিয়ে দেখল সেই কান্না। তারপর আলতো করে মাথাটা নামিয়ে কুহুর চেপে ধরা দুই হাতের মধ্যে ছোট করে একটা একটা করে মোট তিনটা চুমু খেল; কুহুর কান্না থেমে গেল আচমকা এতে।
কাব্য চুমু খেয়ে কুহুর গালে হাত রাখল, কুহু ঘেন্নায় সরিয়ে দিল সেই হাত সাথেসাথেই। কাব্য আবার রাখল; কুহু আবার সরিয়ে দিল। কাব্য রসাত্মক মুডে আবার রাখল গালে হাত, কুহু এবার কটমট চোখে তাকাল কাব্যের দিকে।
কাব্য মৃদু হাসল; তারপর বলল———‘কাধ পাচ্ছিস না, তাই নিজে থেকে কাঁধ দিচ্ছি তোকে কাদার জন্যে। এখন সেই কাঁধে তুই নিজে থেকে মাথা রেখে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদবি, নাকি আমি জোর করে রাখাবো, সেটা ডিপেন্ড করছে আমার মুডের উপর।’

কুহু প্রশ্নবোধক চোখে তাকাল, ও কাব্যের এসব কথার বুঝেওনি তখনও। তাই কুহুর ঘিলুতে ঢোকানোর জন্যে কাব্য আবার বুঝিয়ে বলল———‘টাইম নে; দিচ্ছি তো আমি। সিয়ামের সাথে তোর সম্পর্ক এখানেই শেষ। আর বাকি রইল বিয়ে— সেটা দেখা যাবে। তুই আমাকে সুযোগ না দিলেও; আমি সুযোগ খুঁজে নেব নিজের মতো। কিন্তু আমি সেটা চাই না— তাই বলছি টাইম নে,ভাব। আমি তোকে অপশন দেইনি: জাস্ট তোকে রেডি হতে বলেছি আমাকে সুযোগ দেবার জন্যে, দ্যাটস ইট। এখন লক্ষ্মী বাচ্চার মতো রুমে যাবি; মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবি। আগামীকাল অনেক বড় জার্নি করতে হবে। এন্ড হ্যাঁ আমার পাশেই সিটে বসবি, নাহলে সবার সামনে কাঁধে তুলে এনে বসিয়ে দেব, হু?’
ঠান্ডা মাথায় একটা বড়সড় হুমকি দিয়ে কাব্য কুহুকে ছেড়ে দিল। কুহু কটমট চোখে কাব্যের দিকে চেয়ে আছে, আঙুল উঁচিয়ে শাসিয়ে কিছু বলার আগেই কাব্য ওসবে তাকানোর পাত্তাও দিল না। ও ভ্রু তুলে কুহুর দিকে চেয়ে বলল———‘রুমে যাবি, নাকি আমি এখনো কাঁধে তুলে দিয়ে আসব রুমে? হু?’

কুহু রাগে আগুন হয়ে মুখটা ফুরিয়ে ফেললো। কাব্য এবার অধৈর্য হয়ে চোখ উল্টে বলল———‘হায়রে মেয়ে মানুষ!’
বলেই কুহুকে আচমকা কাঁধে তুলে নিল। কুহু তো আচমকা কাব্যের এমন কাণ্ডে আঁতকে উঠে চেঁচিয়ে উঠলো জোরে। সঙ্গে সঙ্গেই কাব্য সাবধান করে দিল———‘চেঁচাস না; উহু। মানুষ আছে, আপনি নিশ্চয়ই কনট্রোভার্সি চাইছেন না ট্যুরে?’
কুহু সঙ্গে সঙ্গেই মুখটা বন্ধ করে আশেপাশে তাকাল; কেউ কি দেখেছে। নাহ, এত রাতে কেউই নেই এখানে। পরপর কুহু রাগী চোখে তাকায় কাব্যের দিকে। কাব্য কুহুকে পাজকোলে তুলে রুমের দিকে যেতে যেতে হাঁপানির অভিনয় করে মজা নিয়ে বলল———‘তুই তোর স্বামীকে দিয়ে বড্ড খাটাবি বিয়ের পর, বোঝা হয়ে গেছে আমার।’
কুহু মুখটা তেতো করে বলল———‘বিয়ে করতে কেউ বলেনি আপনাকে, আমি কুহু আপনাকে জীবনেও বিয়ে করব না।’

কাব্য নিজের মতো রিসোর্টের দিকে হাঁটতে হাঁটতে জবাব দিল———‘তুই করবি, তোর বাপ করবে বিয়ে, ইগোওয়ালি।’
‘তাহলে বাপকেই গিয়েই বিয়েটা করুন না, ফালতু।’ —— কুহু রাগে চোখ-মুখ খিছে বলল।
কাব্য হাঁটতে হাঁটতে নিজের মতো মজা নিয়ে বলল———‘না, আমি হেলদি একটা ছেলে। আপাতত বাপের মেয়েকেই আল্লাহ আল্লাহ করে কোনরকমে পেয়ে গেলেই চলবে আমার।’

কুহু রেগে কাব্যের বুকে ইচ্ছেমতো থাপ্পড় দিতে দিতে হম্বি-তম্বি করে বলল———‘আমাকে নামান ফালতু লোক, নামান বলছি। আমি আপনাকে মেরে ফেলবো কিন্তু। বিচার দিব আমি আপনার নামে আব্বুর কাছে। নামান বলছি।’
‘দিস বিচার, কিন্তু এখন আল্লাহর ওয়াস্তে নাচিস না, হাত ব্যথা করছে আমার।’—- কাব্য অসহায় স্বরে বললো।
কুহু তবুও চুড়ান্ত হইচই করছে; নেমে যাবে ও। বেচারা কাব্য কোনোমতে কুহুকে কোলে করে এনে রুমের সামনে ঠাস করে নামিয়ে দিতেই কুহু মুখটা ফুলিয়ে ফুসে উঠে তাকালো কাব্যের দিকে— এই যেন খেয়েই ফেলবে ওকে। ওদিকে বেচারা কাব্য নিজের হাত চেপে ডলতে ডলতে ব্যথা নিয়ে কুকিয়ে উঠে বলল———‘আমার সহজ-সরল জীবনটা তামাতামা করে ফেলবি বুঝতে পারছি এক্ষুনি। তোকে যে আল্লাহ কি দিয়ে বানিয়েছে। এত্ত রাগ? মাফ করো মাবুদ।’

কাব্য তওবা করছে কুহুর সামনেই। এটা দেখে কুহুর মেজাজ আরো সপ্তমে চড়ে গেল। কুহু রেগে তাকাল কাব্যের দিকে; পরক্ষণেই কাব্যের মুখের সামনে রুমের দরজা বন্ধ করে দিল।
কাব্য হতাশ চোখে বন্ধ দরজার দিকে তাকালো, পরপর ছোট শ্বাস ফেলে ব্যথাতুর হাত ঝাড়তে ঝাড়তে সিয়ামের রুমের দিকে পা বাড়াল ও। এই ছেলেরে কাব্য এইবার স্পেশাল ট্রিট দিবে। অনেক পুড়েছে কাব্য এ কদিন; সবটা এবার এখন থেকে সুদে এম-আসলেও ওসুল করবে।
কিন্তু সিয়ামের রুমের সামনে যেতে সেখানে ঘটল আরেক কান্ড। সিয়ামের রুমের দরজা হালকা খোলা। সিয়াম বিছানার উপর বসে কারো সঙ্গে কিছু একটা কথা বলছে। কাব্য কান পেতে শুনল সেসব কথা। পরক্ষণেই দাঁত শক্ত হয়ে গেল ওর। বিড়বিড় করে দাঁত চিবিয়ে বলল———‘বাস্টার্ড একটা, করাচ্ছি তোকে বিয়ে।’
কাব্য দরজা খুলে রুমে ঢুকতেই সিয়াম চমকে পেছন ফিরে তাকালো। অস্ফুটে বিড়বিড় করে———‘কা. . .ব্য!’

ট্যুর থেকেই ফিরে কুহুর একদম চুপচাপ; নিজেকে একপ্রকার ঘরবন্দি করে ফেলেছে বলা চলে। একদিন কাব্য অনেকবার কুহুকে রিচ করার চেষ্টা করেছে, পারেনি। কুহু ইচ্ছে করেই কাব্যের সামনে পড়েনি।ভার্সিটিও যায়নি; প্রক্সি দিয়ে গেছে শুধু। তাই কাব্য ভার্সিটিতেও কুহুর দেখা পায়নি। শেষ অব্দি কায়াকে পেয়ে কুহুর কাছে খবর পাঠিয়েছে।
তাই সেই খবর নিয়েই কায়া কুহুর পাশে বসে আছে। ও ভয়েভয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে আছে; কুহু কায়ার দিকে চেয়ে ফুসছে। কায়া এবার আলতো করে কুহুর গায়ে হাত রাখল, কোনরকমে বোঝাল———‘কাব্য ভাইয়ের সঙ্গে একবার দেখা করে সবকিছু ক্লিয়ার করে ফেলো কুহুপু।আমার মনে হয় .. এটা ভালো হবে।’
কুহু জোরে একটা শ্বাস ছেড়ে কাব্যের দেওয়া চিঠিটা ছিড়ে টুকরো-টুকরো করে দুমড়ে-মুচড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিল। কায়া শীতল চোখে এসব দেখল; তারপর আলগোছে কুহুর অগোচরে স্নিগ্ধকে মেসেজ দিল——-‘Kaj hoyni, kuhupu letter fele diyeche.!’
( কাজ হয়নি, কুহুপু লেটার ফেলে দিয়েছে)

স্নিগ্ধের রিপ্লাই এলো——-‘toder meyeder somossha ki? hya? normaly ekta bepar handle korte paris na tora? sobkichukei complicated kora lage ken toder?’
(তোদের মেয়েদের সমস্যা কি? হ্যা? একটা ব্যাপার নরমালি হ্যান্ডেল করতে পারিস না তোরা ? সবকিছুকেই কমপ্লিকেটেড করা লাগে কেন তোদের?)
কায়া এবার বিরক্ত হয়ে লিখল——-‘to amara meyeder pechone ghuro ken tomra? na ghurlei hoy. robot-re biye koro jao..robot diyei baccha poyda koro, faltu lok…’
(তো আমরা মেয়েদের পেছনে ঘুরো কেন তোমরা? না ঘুরলেই হয়। রোবটরে বিয়ে করো যাও, রোবট দিয়েই বাচ্চা পয়দা করো, ফালতু লোক)

স্নিগ্ধের পাল্টা রিপ্লাই এলো——-‘baccha? tumi human hoye amare mone hoy baccha diya vorai felso? baccha to durer kotha…biye je hoise, amare ekta kiss korsos? bol, answer dibi ei qus er…naile tor khobor ache…’
(বাচ্চা? তুমি হিউমান হয়ে আমারে মনেহয় বাচ্চা দিয়া ভরাই ফেলসো। বাচ্চা তো দূরের কথা,বিয়ে যে হইসে. .আমারে একটা কিস করসস? বল, আনসার দিবি কিন্তু এই প্রশ্নের। নাইলে তোর খবর আছে)
কায়া তাকিয়ে হঠাৎ হেসে ফেলল, পরপর হাসি চেপে রিপ্লাই করলো——‘kiss kono moger mulluk na…. ja paiso, taye shukriya aday koro…’
(কিস কোনো মগের মুল্লুক না। যা পাইসো তাতে শুকরিয়া আদায় করো।)

স্নিগ্ধ রিপ্লাই করে——-‘hu? thik? oke, fine……ami aj tor sathe ghumabo rate …eka ghumais raite….. kuhur samne amar lojja na lagleo tor lagbe…so? dekha hocche babe! bye..vai dakche…’
(হু? ঠিক? ওকে ফাইন।আমি আজ তোর সাথে ঘুমাবো রাতে। একা ঘুমাইস রাতে। কুহুর সামনে আমার লজ্জা না লাগলেও তোর লাগবে। সো? দেখা হচ্ছে বেইব। বাই, ভাই ডাকছে!)
‘কুহু, কায়া খেতে আসো!’
— কবিতা ডাইনিং টেবিল থেকে ডাকলেন জোরে গলায়।
কুহু-কায়া খাবার টেবিলে বসা। সাথে সাদাদ, কবিতা একপাশে। কুহুর মুখটা চুড়ান্ত থমথমে। গায়ে একটা নরমাল ঢোলা টিশার্ট, আর কালো প্লাজো। চুল ভেজা, টপটপ পানি পড়ছে, সেভাবেই খোলে রাখা। মূলত পাগলের বেশে এসে ডাইনিং টেবিলে বসেছে।
কবিতা মেয়েকে ভাত-তরকারি বেড়ে খেতে দিচ্ছেন।কুহু খাচ্ছে কম, বসেবসে কাব্যকে নিয়ে ভাবছে বেশি, হয়তবা গালিগালাজ করে যাচ্ছে।

সবাই যখন নিজের মতো খেতে ব্যস্ত, তখন হঠাৎ সাদাদ খাবারের মধ্যে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন———‘কুহু! খাবার শেষে এই কাপড় চেঞ্জ করে ভালো ড্রেস পরে ড্রইং রুমে গিয়ে ভালো মেয়ের মতো বসবে। তোমার চাচ্চু-চাচীরা আজ আসবেন আমাদের ঘরে, একটা বিষয় আলোচনা করার জন্যে।’
কুহু নিজের ভাবনা উঠে গেল তুঙ্গে। ও মাথা তুলে অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকাল——-‘কোনো অকেশন আছে আজ, আব্বু?’
সাদাদ ভীষণ গম্ভীর কণ্ঠে জবাবে বললেন——-‘হু; আছে। পরে শুনবে।খাবার শেষ করো।’
কুহু সেভাবেই চেয়ে থাকল বাবার দিকে। আজ হুট করে সিদ্দিক বাড়ির বড়রা কেন কুহুদের ফ্ল্যাটে আসছেন? আর তাদের আসার সাথে কুহুর সেজেগুজে থাকার সম্পর্ক কি?
কুহু এসব প্রশ্নের জবাব পেল না। সাদাদ কোনরকমে খেয়েই উঠে গেলেন। কবিতা অবাক হয়ে একবার স্বামীর দিকে তাকালেন: সাদাদ আজ খেতে বসে আদর-যত্ন করে আহ্লাদ না দেখিয়ে কুহুকে ভালো-মন্দ কিছু না জিজ্ঞেস করে এতটা গম্ভীর গলায় এই প্রথম কথা বললেন। কিছু কি হয়েছে? কবিতা চিন্তায় পড়ে গেলেন। চিন্তিত ভঙ্গিতেই মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বললেন——‘তুই খা, আমি আসছি।’
বলেই চেয়ার থেকে উঠে হন্তদন্ত পায়ে স্বামীর পিছু পিছু নিজেদের ঘরে ছুটলেন। কুহু ফ্যালফ্যাল চোখে সবার এই অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখল।কায়ার দিকে তাকালে; কায়াও ক্লুলেস হয়ে কুহুর দিকেই তাকিয়ে আছে তখন— ওর মাথাতেও এসব ঢুকছে না।

সাদাদের কথামতো, কুহু একটা ব্ল্যাক পাকিস্তানি থ্রিপিস পরে ড্রইং রুমে এসেছে। ড্রইং রুমে পুরো সিদ্দিক পরিবার থমথমে মুখে বসে আছে তখন। এদেরকে এভাবে বসে থাকতে দেখে কুহুর শুরুতে কিছুটা হকচকিয়ে গেল সম্ভবত। পরপর সবাইকে চোখ ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ সোফার একপাশে ভদ্র; লক্ষ্মী ছেলে হয়ে বসে থাকা কাব্যের দিকে নজর গেল। কাব্য আজ বেশ ফর্মাল শার্ট পড়েছে। ব্ল্যাক শার্ট আউট করে জিন্সের সাথে পড়েছে, আজ বোতামসব আটকানো শার্টের।
কুহু ভ্রু কুঁচকে কাব্যের দিকে তাকাল; এই ধুরন্ধর লোক এখানে এইসময়ে বড়দের সাথে নিয়ে বসে আছে কেন? কুহুর সন্দেহটা শুরু হলো তখুনি।
ও ড্রইং রুমে ঢুকতেই শামিমা কুহুকে আদর করে ডাকলেন——-‘কুহু; এখানে আয়। বস আমার পাশে।’
কুহু গিয়ে নিজের সবচেয়ে পছন্দের বড়মা শামিমার পাশে বসলো। শামিমা কুহুর পিঠে হাত গলিয়ে ওকে সুন্দর করে আগলেও নিলেন সাথেসাথে। একবার তো ফিসফিস করে বলেও ফেললেন——‘ভালো লাগছে এই ড্রেসে তোকে। কাব—-!’

বাকিটা বলতে পারেননা শামিমা, কাব্যের ইশারা দেখে চুপ হয়ে গেলেন। ভাগ্য ভালো কুহু বুঝেওনি কিছু। ও প্রশ্নবোধক চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছে শুধু। কি হচ্ছে এখানে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। কাব্যও এখন অব্দি একবারের জন্যে ভুলেও কুহুর দিকে তাকাচ্ছে না, যেন কুহুর সাথে ট্যুরে চুড়ান্ত অভদ্রতা করা ছেলেটা কাব্য না: অন্য কেউ ছিলো। কাব্য তো এখন চূড়ান্ত ভদ্র ছেলের মতো চিন্তিত হবার ভান করে মাথাটা নিচু করে রেখেছে— আর এটা দেখেই কুহুর মেজাজটা খারাপ হচ্ছে।
সাদাদই শুরুতে কথা তুললেন, বড় ভাইয়ের দিকে চেয়ে থমথমে গলায় বললেন——-‘ভাইয়া আপনি বলা শুরু করেন আগে।’
আনোয়ার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, বললেন ধীর কণ্ঠে——-‘মেয়ের বাবা তুমি, তুমিই বলো।’
সাদাদ এবার মেয়ের দিকে তাকালেন, সাদাফ তো ভয়েভয়ে পাশ থেকে ভীষণ নরম কণ্ঠে সাদাদের কানে বললেন———-‘ভাইজান, বকো না বেশি। বাচ্চা মেয়ে ভুল করে ফেলেছে।’

সাদাদ এসব শুনলেন না। কুহুর দিকে তাকালেন, কবিতা পাশ থেকে নাক টানলেন এতক্ষণে, হয়তো কাঁদছেন।
সাদাদ বলা শুরু করলেন———-‘তোমাকে ভার্সিটিতে পাঠানো হয়েছিল, পড়ার জন্যে। তুমি কি করেছো কুহু?’
কুহু ফ্যালফ্যাল করে তাকালো সাদাদের এই প্রশ্নে। সাদাদ আবার থমথমে কণ্ঠে বললেন——-‘উত্তর দাও কি করেছো?’
কুহু মাথাটা নামিয়ে নিলো, প্রশ্নের উত্তর দিল কোনরকমে——-‘পড়াশোন—-‘
‘না; তুমি একটা খারাপ চরিত্রের ছেলের সাথে সম্পর্কে চলে গেছিলে।’—– সাদাদ কুহুকে বাকিটা বলতেও দিলেন না, নিচু গলায় উঠলেন।
কুহু আতকে উঠে তাকালো সাদাদের দিকে। আব্বু, আব্বু এস জানলেন কি করে? সাদাদ এবার কুহুর দিকে তাকালেন, নিজেকে শান্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে বললেন———‘কুহু, তুমি সম্পর্কের কিছু বুঝো? বলো? সিয়াম ওই ছেলেটার আগেরকার কাহিনি আদৌ জেনে জড়িয়েছো এই সম্পর্কে?’

‘সিয়াম?’ —— কুহু অবাক হয়ে তাকাল সাদাদের দিকে। তারপর অবিশ্বাস নিয়ে কাব্যের দিকে তাকালো। কাব্য মাথাটা তখনো নীচু করে রেখেছে। কুহু বিশ্বাস করতেই পারছে না— কাব্য ভাই এতটা নিচে নামতে পারেন। কুহুকে সাদাদের সামনে এতটা ছোট করার একটা প্ল্যান করতে পারলেন?হয়তবা কুহু অজান্তে সেদিনের পর কাব্যের থেকে এই ধোঁকা একদমই আশা করেনি। কাব্য ভাই জানতেন সিয়ামের সাথে কেন কুহু সম্পর্কে জড়িয়েছে; তাও এটা বাবার কানে দিলেন? ছি!

সাদাদ আবার শ্বাস ফেললেন; কুহুর দিকে চেয়ে বললেন——-‘ভুল যেহেতু করে ফেলেছো, করে ফেলেছো। এটা নিয়ে বাড়তি কিছু বলে আমরা লোক হাসাবো না। সিদ্দিক বাড়ির একটা সম্মান আছে। এই সম্মানটা তুমি বুঝো বলে ভেবেছিলাম আমি। যাইহোক— আমি সেদিকে যাচ্ছি না।’
কুহু এবার সাফাই গাইতে চাইলো——-‘বাবা সিয়ামের সাথে আমি—-!’
পাশ থেকে আনোয়ার বললেন——-‘কুহু.. .মা আমরা যা বলছি আগে শুনো?’
কুহু থেমে গেলো, গিলে ফেলল কথাটা। সাদাদ এবার বড়ভাইয়ের দিকে তাকান, আনোয়ার চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করতেই সাদাদ বলা শুরু করেন———‘তাই আমরা ঠিক করেছি. .!
সাদাদ থামলেন; পুরো কথাটা বলতে কেমন একটা লাগছে উনার। তবুও বললেন আবার——‘আমরা ঠিক করেছি, তোমার বিয়ে দেব।’

‘বিয়ে? এসব. .এসব কি বলছো?’—— কুহু চুড়ান্ত অবাক হয়ে পাথরের মতো হয়ে গেল এ কথা শুনে।
পরপর সাফাই গেয়ে বলতে লাগলো———‘আব্বু.. এটা সিরিয়াস সম্পর্ক না। আমি.. তোমরা বললে আমি এক্ষুনি ওকে ফোন দিয়ে সম্পর্ক ব্রেকাপ করে দিচ্ছি। কিন্তু বিয়ে—? আমি এখনো পড়াশোনা করছি আব্বু।’
সাদাদ বললেন——-‘বিয়ের পর পড়াশোনা করবে তুমি। তোমার আম্মুর সাথে আমার বিয়েও অনেক ছোট থাকতে হয়েছে। তোমার আম্মু তখন সবে ১৮। তো? তোমার আম্মু আজ মাস্টার্স পাশ করেছেন। আমি পড়াইনি তোমার আম্মুকে? তোমাকেও তোমার হাসবেন্ড পড়াবে।’

কুহু চুড়ান্ত হেল্পলেস হয়ে তাকাল একবার কাব্যের দিকে: ভেবেছিল ওর বিয়ে শুনে অন্তত এইবার কাব্য কিছু বলবে। কিন্তু কাব্য নিজের মতো বসে আছে মাথাটা ওভাবেই নামিয়ে। যেন কচি খোকা সে।
কুহু হাল ছেড়ে দিল, রাগে-দুঃখে-অপমানে ভুলেও আর একবার কাব্যের দিকে তাকালো না।
‘যদি না পড়ায় সে? তোমরা এত শিউর কিভাবে হচ্ছো?’ —- সাদাদকে কুহু কোনরকমে বললো।
‘শিউর হচ্ছি; কারণ তুমি বাড়ির ছেলে বিয়ে করবে।’ —- সাদাদ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন।
‘বাড়ির ছেলে?’— কুহুর কানে শব্দটা পোকার মতো ভনভন করতে শুরু করল। ও আহাম্মক হয়ে সাদাদের দিকে তাকালো।

মেঝো চাচা সাদাফ পাশ থেকে কুহুর দিকে চেয়ে নরম কণ্ঠে বললেন——-‘হু, ঠিক বলেছেন ভাইজান। কুহু, ছোট মেয়ে তুমি এখনো। কিন্তু তোমার কথা চিন্তা করে ভাই-ভাবি পেরেশান হয়ে যাচ্ছেন। তাই তারা একটা ফয়সালা নিয়েছেন: যেন ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকে, তাদের চোখের সামনেই থাকে।’

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৩০

কুহু শ্বাস আটকে বসে থাকল, সেই ‘বাড়ির ছেলের’ নামটা শোনার জন্যে। ঠিক তখুনি শামিমা আসল বো-মাটা ছুড়লেন, কুহুর কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে হাসিহাসি মুখে বললেন———‘ছোটবেলা থেকে বলে এসেছি- আমার কাব্যের জন্যে একটা পুতুল আনবো বউ করে। অথচ ঘরের সামনে একটা জলজ্যান্ত পুতুল থাকতেও আমি কিনা বাইরে খোজ নিচ্ছিলাম? কি রে কুহু? বানাবি আমাকে শাশুড়ি? হবি আমার কাব্যের বউ?’

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৩২

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here