তরঙ্গে তোমার ছোঁয়া পর্ব ২৬
ফারহানা নিঝুম
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ফারাহ!বার বার ওড়না টেনে যথা নিজেকে ঢেকে নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। রাগে দুঃখে কান্না পাচ্ছে তার।একটা মানুষ এত অবাধ্য কি করে হয় তা নিজের লেফটেন্যান্ট সাহেব কে না দেখলে জানতেই পারতো না!মন চাচ্ছে হাত পা ছড়িয়ে কেঁদে ফেলতে!
“আমি কি হেল্প করবো?”
সদ্য শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসেছে তাশফিন।ভেজা চুলে এলোমেলো অবস্থা,পরণে শুধু একটা সফেদ টাওয়েল জড়ানো। তাকে টাওয়েল জড়ানো অবস্থায় দেখে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে এসেছে।
“ছিহ কি নির্লজ্জ আপনি! এভাবেই চলে এসেছে?”
সহসা হেসে ফেলল তাশফিন, এলোমেলো চুল গুলো আরো একটু এলোমেলো করে ঠিক ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাড়ালো। আয়নায় তার উদোম পিঠ দেখা যাচ্ছে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ফারাহ। ঠোঁট গোল করে পুরো মুখ ফু দিতে লাগল ফারাহ। পিটপিট চোখ করে তাকাচ্ছে সে।
“মিসেস শেখ এভাবে তাকালে তো অন্য রকম ফিল আসে।”
থম মে রে গেল ফারাহ,তাশফিন ফের বলে উঠে।
“আসলে তুমি যে ভাবেই তাকাও আমি কিন্তু সবসময় মুডেই থাকি।”
চিকন নাকের ডগা ফুলে উঠেছে ফারাহর,তেতে উঠল সে। চেঁচিয়ে বলল।
“আপনি এমন লুচু আগে জানলে কখনো বিয়ে করতাম…
পরের বাক্যটি সম্পূর্ণ শেষ করতে পারলো না ফারাহ,তার পূর্বেই ওড়না টেনে অনাবৃত বক্ষে ঠাস করে ওষ্ঠো ছুঁয়ে যায় তাকে। কথারা উড়ে গেছে ফারাহর।এক প্রকার হিসহিসিয়ে বলল তাশফিন।
“পরের বার চেঁচিয়ে কথা বললে ডিরেক্ট ঠোঁটে।”
মুখ গোমড়া করে বেরুতে যায় ফারাহ, পিছনে ডাকে তাশফিন।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“জান ড্রেস বের করে দিয়ে যাও।”
নাক ছিটকায় ফারাহ। তর্জনী আঙ্গুল তুলে শাসানোর সহিতে আওড়ালো।
“ট্রেনিংয়ে নিজের কাজ নিজে করতে শেখায় নি? নিজের টা নিজে করুন,পারব না করতে আমি।”
“বাট আমার তো এখন ফুটফুটে বউ আছে সুখ।সেই করবে সব কাজ।”
“কচু করবে, আমি যাচ্ছি আম্মুর কাছে আপনার সম্পর্কে নালিশ করতে। আপনি আমাকে ঘরেও ঢুকতে দেন না পারমিশন ছাড়া! ফাজিল লেফটেন্যান্ট।”
“ওই সুখ দাঁড়া।”
ফারাহ দাঁড়ালো এক দৌড়ে নিচে।
সহসা হেসে ফেলল তাশফিন, বউটাকে জ্বা’লাতে ভীষণ ভালো লাগে তার।
রোদে মাখো মাখো দুপুর। আকাশে এক ফোঁটা মেঘ নেই, রোদটা যেন চোখ ধাঁধানো সোনার পাতার মতো ঝলসে উঠছে। গাছের পাতাগুলো তেতে আছে, হালকা বাতাস এলেও গরম যেন থামতেই চায় না।
রাস্তার দিকে তাকালে দেখা যায়, পথচলতি মানুষজন ছাতা মাথায় বা গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁটছে। রিকশাওয়ালারা ধীর গতিতে চালাচ্ছে রিকশা, যেন গরমে হাঁপিয়ে উঠেছে। দূরে কিছু কুকুর ছায়ার খোঁজে গাছের নিচে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।
বাড়ির বারান্দা থেকে বাইরে তাকালে দেখা যায়, উঠোনটা যেন উত্তপ্ত হয়ে আছে, গাছের ছায়াগুলো ছোট হয়ে গেছে। দেওয়ালে রোদের ঝাপটা পড়ে যেন আরো উজ্জ্বল লাগছে। বারান্দার কোণে রাখা ফুলের টবের মাটি ফেটে চৌচির, ফুলগুলোও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। গরমের দাপটে যেন চারপাশ স্থির হয়ে আছে, শুধু মাঝে মাঝে কোথাও একটা চিল উড়ে যায় ধীর গতিতে, রোদের সঙ্গী হয়ে।
“আহহহহ আহহহ আম্মু আপনার ছেলে আমাকে দৌড়ায় শুধু শুধু!”
হাত পা ছড়িয়ে রীতিমতো কাঁদতে শুরু করেছে ফারাহ। এই তো সকাল থেকে ফারাহ কে অহেতুক তাশফিন দৌড়াচ্ছে।
রুবেনা শেখ আহাম্মক বনে গেলেন।কি বলবে এখন?তাশফিন হঠাৎ এমন করছে কেন?
এক গ্লাস পানি নিয়ে এগিয়ে এলো নূপুর।
“এই নাও খাও।একটু ঠান্ডা হও আর এই কান্না টা থামাও।”
গাল ফুলিয়ে বসলো ফারাহ।
“ঝুমুর আপু কে ডেকে দাও।”
ঝুমুর ব্যাগ পত্র নিয়ে নীচেই এসেছিল। ফারাহ কে কাঁদতে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলো। সকাল থেকে সে নিজের অনলাইন ক্লাস নিয়েই ব্যস্ত।সে কি করে জানবে বাড়িতে কী হয়েছে?
“কী হচ্ছে এখানে? ফারাহ কাঁদছে কেন?”
বলতে বলতে এগিয়ে এলো ঝুমুর। নূপুর সবটা বলল তাকে। অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ঝুমুর।তার হাসির কারণ বোধগম্য নয় ফারাহর নিকটে।
“আপু তুমি হাসছো?”
“আরে চিল ভাইয়া অহেতুক তোমাকে জ্বালাচ্ছে। বুঝতে পারছো না?বাই দ্যা ওয়ে আজকে না তোমার নবীন বরণ অনুষ্ঠান!যাবে কখন?”
এত সব কিছুর খেয়ালে ফারাহ ভুলেই বসেছে সে আবার কলেজে ভর্তি হয়েছে।এমা সে তো কিছুই রেডি করেনি।
রুবেনা শেখ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
“কী রে ফারাহ তোর সব কিছু রেডি তো?”
চোরা চোখে তাকায় ফারাহ।
“আসলে আম্মু আমি না ভুলেই গিয়েছি।”
কপাল চাপড়াচ্ছে রুবেনা শেখ।
“হায় কপাল!কী করিস তুই? আচ্ছা নূপুর ওকে একটা ভালো শাড়ি বের করে দেয়।আর হ্যাঁ ঝুমুর তুই ওকে রেডি করিয়ে সাথে নিয়ে যা।”
ফারাহ কে নিয়ে রুমে গেল ঝুমুর। হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি বের করে দিল ঝুমুর। সাথে ছোট ছোট টপ রিং।
“এই নাও। তাড়াতাড়ি শাড়িটা পড়ে রেডি হয়ে নাও। আমাদের যেতে হবে।”
ফারাহ এক গাল হেসে রেডি হতে চলে গেল।
বেগুনি শাড়ির নরম ভাঁজে সে যেন সন্ধ্যাতারার মতো জ্বলজ্বল করছে। সাজসজ্জায় কোনো বাড়াবাড়ি নেই শুধু একরাশ অনাবিল স্বাভাবিকতা। চোখে কাজলের সামান্য ছোঁয়া, কিন্তু তাতেই যেন গভীরতা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। ঠোঁটে হালকা রঙ, ঠিক যেন গোধূলির আকাশে ছড়িয়ে থাকা সূর্যের শেষ আলোর রেখা।
তার খোলা চুল বাতাসে উড়ছে অবাধ্য ঢেউয়ের মতো। কপালের ছোট্ট টিপ, কানের মৃদু দুল, আর হাতে একজোড়া চুড়ি কোনোটাই জাঁকালো নয়, তবু সবকিছু মিলিয়ে সে এক অসম্ভব সুন্দর দৃশ্যপট তৈরি করেছে। তার সাজ যেন এক চাঁদনী রাতের গল্প, যেখানে বাড়তি আলো নেই, নেই কোনও মেকি চাকচিক্য শুধুই নীরব সৌন্দর্যের এক চিরন্তন ছোঁয়া। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সবটা সূক্ষ্ম চোখে পরোখ করে নিচ্ছে এক পুরুষ। থমকালো সে, হৃদয় স্পন্দন প্রবল বেগে ছুটে চলেছে। কন্ঠনালি কাঁপছে তার। দরজায় টোকা দিতেই আয়না থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সেদিকে তাকালো ফারাহ। হাতের মধ্যে এখনো সেফটিপিন রয়েছে, নিচের অংশ টুকু সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সে।বার বার মনে হচ্ছে পেট দেখা যাচ্ছে।কাজল চোখের চাহনিতে ফের স্তম্ভের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল তাশফিন।
“আপনি ভেতরে আসবেন?”
বোধ ফিরে পেলো তাশফিন, গোপনে নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে এলো।
“রেডি?”
শেষ সেফটিপিন টা লাগিয়ে নিজেকে আয়নায় এক নজর দেখে বলল।
“জ্বি এইবার রেডি।”
ওয়াড্ররোবের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।
“তা ম্যাডাম এত সাজগোজ, আজকে আপনার নবীন বরণ অনুষ্ঠান তাই তো।”
একনাগাড়ে উপর নীচে মাথা দোলায় ফারাহ।চোখ গুলো ছোট হয়ে এলো ফারাহর।
“কিন্তু এত সাজের কি আছে? বিয়েতে তো আর যাচ্ছো না?”
“আরে না কোথায় সাজগোজ করলাম? দেখুন তো সাজগোজ করিনি তো।”
পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক পলক দেখে নিল তাশফিন। সত্যি তো মেয়েটার সাজসজ্জা বলতে তেমন কিছুই নয়, তারপরেও কেমন একটা হাঁসফাঁস লাগছে তার।
“উঁহু। বুঝলাম। কিন্তু এত্ত সুন্দর বিবি কে দেখে তো যে কারো নজর বদলে যেতে পারে তাই নয় কি?”
কিয়ৎ সময় ধরে এক নজরে তাকিয়ে রইল ফারাহ। তাশফিনের ভাবান্তর বোঝা দায়।
মেদহীন উদরে বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শ পেয়ে মোচড়া যাচ্ছে সে।
“উফ্।”
“সে এগেইন।”
চুপটি করে গেল ফারাহ। আলগোছে শাড়িটা দিয়ে আপত্তিকর কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল তা ঢেকে দিল তাশফিন। ছুঁয়ে দিল কানের লতি। ফিসফিসিয়ে বললো।
“আমি কে?”
“লেফটেন্যান্ট কমান্ডার।”
“উঁহু তোমার কে?”
“স,, স্বামী।”
“তুমি কে?”
“ফারাহ।”
“উঁহু হয়নি।”
“বউ।”
“তোমার কাছে আমার কি আছে?”
ভাবনায় পড়ে গেল ফারাহ,কী আছে? চমকে উঠে সে।
“সুখ আছে!”
চমৎকার হাসলো তাশফিন,গালে গাল ছুঁয়ে বলল।
“তাহলে দিয়ে দাও আমার সুখ?”
লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায় ফারাহ, শুকনো ঢোক গিলে বলল।
“আমাকে যেতে দিন না?”
“উঁহু বাসর বাসর ফিল পাচ্ছি। চলো বাসর করি।”
চোখ বড়বড় করে তাকালো ফারাহ, তাকে আরো এক দফা অবাক করে দিয়ে বললো।
“ফরগট টু ব্রিং ইট টুডে, থিঙ্ক উই ক্যানে সারভাইভ দা ওয়েডিং নাইট উইদআউট ইট?”
হাঁসফাঁস করছে ফারাহ, মিনমিনে গলায় বলল।
“কলেজে যাবো ছেড়ে দিন না!”
“ওকে,বাট আমার সুখ, সেটা যেনো অক্ষত থাকে। আমি যাবো রিসিভ করতে।গুড বায়।”
এক মূহুর্ত অপেক্ষা করলো না তাশফিন, বেরিয়ে গেল দরজা দিয়ে।
নিজেকে দেখে অদ্ভুত লাগছে ফারাহর।এমন মনে হচ্ছে সর্বাঙ্গে মিশে গেছে তাশফিন। ধাতস্থ করে সেও বেরিয়ে যেতে লাগলো, হঠাৎ করেই তাকে ফের টেনে ধরলো তাশফিন। ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো সে। আকস্মিক অবাক করে বললো।
“সুখ সুখ তোমাকে টেস্ট করতে মন চাচ্ছে!”
নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না ফারাহ,কি ঠোঁটকাটা লোক সে!হাত মুচড়ে ছুটিয়ে নিল ফারাহ। দৌড়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। শব্দ করে হেসে উঠলো তাশফিন।যখন ধরবে তখন তার ফুটফুটে বউটার কি হবে?ভাবতেই হেসে ফেলছে।
বিকেল টা ম্লান।গাড়ি চলছে ভৌ ভৌ করে।মুখ গোমড়া করে সিটে বসে আছে ফারাহ।পুরুষ্ট চোয়াল শক্ত হয়ে আছে তাশফিনের। অনেকক্ষণ ধরে দুজনেই চুপ, কারো মধ্যে কোনো কথা নেই
পেট গুড়গুড় করছে ফারাহর। কথা বলতেই হবে, এভাবে চলা যায় না।
“এই শুনুন আপনি শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি তো কিছুই করিনি,ওটা তো….
“শিট।”
স্টিয়ারিংয়ে সজোরে আ’ঘাত করল তাশফিন।
“আমি এমন করছেন কেন?”
“কেন বে আশিক কে খুব মনে ধরেছে?লিসেন আজকেই আমাদের বাসর হবে। আমার না আর ধৈর্য্য নেই। সময় দিয়েছিলাম কিন্তু এখন আর কোনো সময় দেব না।”
গাল ফুলিয়ে বসে ফারাহ।সে কি করলো?যা করেছে সেই কলেজের ফাজিল আর্দ্র ছেলেটাই তো করেছে। কলেজে নবীনবরণ অনুষ্ঠান ছিল, বন্ধু বলতে নতুন দু’জন ছুটেছে ফারাহর কপালে।রাহা,নেহা। দু’জনেই স্কুল লাইফের বন্ধু।অবশ্য ফারাহর সাথে চট করেই মিশে গেছে।হল রুমের ভেতরে ছেলেদের লাইন লেগেছে রীতিমতো। অনেকেই ভেতরে যাচ্ছে না বাইরে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতে ব্যস্ত।
ফারাহ,রাহা এবং নেহা তিনজনে মিলে ভেতরে প্রবেশ করলো।
“আচ্ছা ফারাহ তুই নাকি মিঙ্গেল?”
নেহার কথায় ভিমড়ি খেলো ফারাহ।সে মিঙ্গেল এটা তাদের কে বললো?
“তোদের কে বলল?”
ভ্রু কুঞ্চিত করল রাহা।
“তার মানে সত্যি?”
“আরে ভাই হ্যাঁ সত্যি, কিন্তু কথা হচ্ছে এই বয়সে বিয়ে করলি কেন?”
“নিশ্চয়ই ওর ফ্যামিলি জোর করে বিয়ে দিয়ে দিছে।”
নেহা আর রাহার কথা শুনে ভীষণ হাসি পাচ্ছে ফারাহর।
“আরে থাম তোরা। উফ্ এত দিন সবাই বলতো আমি বাচাল, এখন তো আম্মু কে এখানে এনে তোদের কে দেখিয়ে বলা উচিত, আমি বাচাল নই।”
অনুষ্ঠান শেষে গেইটের কাছাকাছি গেল ফারাহ, অকস্মাৎ আগমন ঘটে আর্দ্রর।
“কি গোঁ সুন্দরী?”
চোখ কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম।
“হ্যালো মিস্টার নিজের বিহেভিয়ার ঠিক করতে শিখুন।”
সহসা হেসে ফেলল আর্দ্র।
“আরে আরে তুমি তো দেখছি রেখে যাচ্ছো।”
বিরক্ত হয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলো ফারাহ, কিন্তু আর্দ্র তা হতে দিলো না।
“এই ফারাহ শুনো যাচ্ছো কোথায়? আমারা ফ্রেন্ড তো হতেই পারি।”
আবারো দু’জন সামনাসামনি। তর্জনী আঙ্গুল তুলে শাসানোর সহিতে আওড়ালো।
“দেখুন আমার কোনো ইচ্ছে নেই বন্ধু হওয়ার।”
“আরে ফারাহ তুমি যেমন টা খারাপ ভাবছো আমি কিন্তু তা নই।, আসলে আমি তো দুষ্টুমি…
ঠাঁটিয়ে একটা চড় পড়ল আর্দ্রর গালে। আঁতকে উঠে ফারাহ। হাতের মালিক কে দেখে থতমত খেয়ে গেল সে!
“লেফটেন্যান্ট সাহেব!”
“হেই ইউ বাস্টার্ড হাউ ডেয়ার ইউ..
তাশফিন এগিয়ে যেতে নিলে টেনে ধরে ফারাহ। আহাম্মক বনে গেল আর্দ্র।
“ছাড়ুন ছাড়ুন কি করছেন এসব?”
রাগে ফুঁসছে তাশফিন। ফারাহ আটকাতে পারছে না। ফারাহ কে টেনে গাড়িতে বসালো তাশফিন।ভয়ে হাত-পা রিতিমত কাঁপছে।
আর্দ্র ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, তাকে মে রে চলে গেল?
ধুলো উড়িয়ে গাড়ি এগিয়ে চলেছে,রাস্তার দুই পাশে থেমে থাকা অসংখ্য গাড়ির সারি হর্ণের শব্দে আকাশ ভারী, ক্লান্তিকর জ্যামের ভেতরেও এই গাড়ির একরকম দাপুটে উপস্থিতি। গাড়ির চাকায় ধুলো উড়ছে, যেন পেছনে ফেলে যাচ্ছে এক অস্থির শহরের উত্তাপ, মানুষের ব্যস্ততা, আর অপেক্ষার দীর্ঘশ্বাস। গাড়ির জানালায় সূর্যের আলো এসে পড়ছে ভাবে, গাড়ির ভিতরে থাকা মানুষটার চোখে পড়েছে ক্লান্তি আর কিছুটা তাড়াহুড়োর ছায়া। তার সামনে থাকা জ্যাম যেন এক বিশাল বাধা, আর ধুলো যেন তার ছুটে চলার একরকম প্রতিবাদ।
গাড়ি ঘুরায় তাশফিন। ফারাহ হাঁসফাঁস করছে। এতে এত রাগ করার কি আছে?
“বাড়ি যাই এরপর খবর করব আপনার ম্যাডাম। দেখবেন তাশফিন কি জিনিস!”
ভয়ে বুকের ভেতর মোচড় দিচ্ছে ফারাহর।সে করল টা কি?
“শুনুন না সত্যি বলছি আমি কিছু করিনি পাক্কা প্রমিজ!”
“রিয়েলি?”
তরঙ্গে তোমার ছোঁয়া পর্ব ২৫
সজোরে ব্রেক কষে তাশফিন, ভয় পেয়ে গেলো ফারাহ। চোরা চোখে তাকায় তাশফিনের দিকে।কিছু বলবে ঠোঁট নাড়াতে চায়, অকস্মাৎ তাকে পেঁচিয়ে কোলে টেনে নিলো তাশফিন।ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে মেয়েটা।তাশফিন অপেক্ষা করলো না, মুখ ডুবিয়ে দিলো বক্ষ ভাঁজে,সজোরে দাঁত বসিয়ে দেয় নিজের।গগন কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠে তাশফিন। পরক্ষণেই সরে গেল সে। থমথমে মুখ করে ফের ড্রাইভিং শুরু করে। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে ফারাহর,পারছে না সে হাত পা ছড়িয়ে কেঁদে ফেলতে। ব্যথায় জান যায় যায় অবস্থা তার!