তাজমহল দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ১৪

তাজমহল দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ১৪
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী

আনিসের বন্ধুরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরল।
হাসাহাসি করছে সবাই।
“আজকে তোর কী অবস্থা রে? আসার পর থেকেই তোর মাথার ওপর একেকটা বিস্ফোরণ ঘটছে!”
বন্ধুরা হাসতে হাসতে তার পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে।
আনিস বিরক্ত মুখে গ্লাসটা নামিয়ে রাখল। টিস্যু দিয়ে ঠোঁটের পাশ মুছতে মুছতে বলল,

“সরে দাঁড়া তোরা… গরম লাগছে।”
“আরেহ শীত পড়ছে! গরম আবার কোথা থেকে এল?”
ওই সময় ইশরাক ডেকে বলল,
“এইদিকে আয়। বসে থাকতে এসেছিস নাকি? আয়।”
আনিস মাথা নাড়িয়ে বলল,
“আমি আর কিছু খাব না। তোরা যা।”
পাশ থেকে রাহাত ফিসফিসিয়ে বলল,
“চল সবাই সরে যাই। ও মেয়েটেয়ে দেখুক।”
সেই কথায় আবারও তুমুল হাসি।
আনিস হতাশ হয়ে উঠে দাঁড়াল।
“তোদের কি আর কোনো কাজকর্ম নেই?”
বন্ধুরা দম ধরে হাসি চেপে আবার খোঁচা মারল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“দেখ তোর ভাবি আসার সময় বলেছে আনিস ভাইকে এইবার ধরেবেঁধে একটা বিয়ে করিয়ে দাও। তাহলে তার বিবাহভীতি কেটে যাবে!”
আনিস ঠান্ডা গলায় বলল,
“বউগুলোকেও তোদের মতো তারছিঁড়া বানিয়ে ফেলেছিস।”
আরেক দফা অট্টহাসি। চারপাশ তাদের খুনসুটিতে সরগরম।
তখুনি মুক্তার ভাই আর বাবা এগিয়ে এসে বলল,
“বাবা চলো হালকা নাশতা করে নিই।”
আনিস বলল,”নাশতা রাখার মতো জায়গা পেটে নেই আঙ্কেল।”
মুক্তার বাবা হেসে জোর করলেন,
“তবুও তবুও একটু মুখে দিতে হবে। চলো, চলো।”

আনিস মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো। শেষমেশ সবাই টানাটানি করায় বাধ্য হয়ে তাদের সঙ্গে যেতে হলো।
এদিকে তাসনুভা দোতলায় গিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। নিচে নামবে না এটা স্পষ্ট করে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। অন্তত বরপক্ষ যতক্ষণ নিচে থাকবে, ততক্ষণ তার পা সিঁড়ির ধারে পড়বে না।
নিচে বর আর তার বন্ধুরা হেসে-খেলে গল্প করছে। মাঝে মাঝে সিরিয়াস কথাবার্তাও চলছে। মুক্তা তাদের সাথে আছে। তার বান্ধবীরাও পাশে বসেছে। হাসি-ঠাট্টা, পড়াশোনা, প্রফেশন, একে অন্যকে চিনে নেওয়া সব মিলিয়ে জমজমাট আড্ডা বসেছে।
মুক্তা হঠাৎ চারপাশে তাকিয়ে বলল,

“একি নুভা কোথায়? এতক্ষণ ছিলই না?”
এক নিমিষে পিনপতন নীরবতা।
জেনি ফিসফিসিয়ে বলল,”ও বলেছে আসবে না।”
“কেন?”
“জানিনা। ওর মাঝে মাঝে মুড সুইং হয়।”
মুক্তা বিরক্ত হয়ে বলল,”এই মেয়েকে নিয়ে আর পারি না, সত্যি।”
সবাই নাশতা শেষ করে স্টেজের দিকে গেল। বর-কনের ছবি তোলা হচ্ছে। বন্ধুদের কেক কাটাও শেষ। হাসাহাসি, খুনসুটি সব মিলিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত। একদিকে নাচ হচ্ছে। সবাই বেশ মজা করছে।
বর মুক্তাকে বলল,”তাসনুভাকে ফোন দাও। তোমার ওপর রাগ ধরে বসে আছে মনে হয়।”
মুক্তা গানের সাউন্ড অফ করিয়ে ফোন দিল তাসনুভাকে। রিং হতেই সাথেসাথে রিসিভ।
“বলো,” তাসনুভার গলার স্বর ঠান্ডা। বিরক্তও।
মুক্তা হাসল,”কিরে সাজঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছ নাকি?”

“আমি আমার কমফোর্ট জোন ছাড়া যেখানে সেখানে ঘুমাতে পারি না এটা তুমি ভালো করেই জানো।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। কিন্তু তুমি কোথায়? নিচে আসো। তোমার ভাইয়া বলছে। আসো, ছবি তুলবো।”
“না, আমি যাব না। আমার ভালো লাগছে না।”
“আরেহ আসো তো। নাহলে আমি নিজে গিয়ে ধরে নিয়ে আসবো।”
“আমাকে একা থাকতে দাও মুক্তা।”
মুক্তা ভ্রু কুঁচকাল,”তুমি কি কাউকে দেখে লজ্জা পাচ্ছ নাকি?”
তাসনুভা আকাশ থেকে পড়ল।
“আমি আর লজ্জা?”

“তাহলে নিচে আসো। নাহলে আমি দুই সুপ্তিকে পাঠাচ্ছি তোমাকে নিয়ে আসতে।”
মুক্তা তার বোনকে ডেকে বলল,”যাও তোমার নুভা আপুকে নিয়ে এসো।”
সুপ্তি দোতলায় উঠতেই তাসনুভা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। প্রথমে চুল ঠিক করল, তারপর শাড়িটা সামনে–পিছনে টেনে দেখে নিল সব ঠিক আছে কিনা। শেষে ঠোঁটে সামান্য লিপগ্লস ছুঁইয়ে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করল।
“সুপ্তি আমার আগে আগে থাকো,” বলে সে দরজা ঠেলে বেরিয়ে এল।
দু’জনে সিঁড়ি বেয়ে নামতেই নিচের হল ঘর থমকে গেল। সব চোখ তাদের দিকে।
স্টেজে কেক কাটার রীতিমতো উৎসব চলছে। বর কনের পাশে বসেছে আনিস আর তার বন্ধুরা। কেক খাওয়ানো হচ্ছে। আনিসের আর কিচ্ছু খেতে ইচ্ছে করছে না।
আজ এত খাওয়াদাওয়া হয়ে গেছে যে মনে হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে তিন-চার বাচ্চার বাবা হতে খুব একটা দেরি লাগবে না।

হঠাৎ তাসনুভাকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে আনিস নিচু গলায় বলল,”তোরা কথা কম বলিস। আমার বেয়াইন আছে এখানে। আমার মানসম্মান রাখিস।”
বন্ধুরা একসাথে হৈ হৈ করে উঠল।
“তোর বেয়াইন? আগে কেন বললি না। তোর বেয়াইন মানে তো আমাদেরও বেয়াইন। কোনটা?”
একজন সঙ্গে সঙ্গেই নির্দেশ করল,
“ওই যে গালফুলিয়ে যেটা নামছে ওইটা! ওর বোনের বিয়ে দিয়েছে না পাশের বাড়িতে? তাজদার সিদ্দিকীর সাথে? ওর বোন।”
আরেকজন মুখ টিপে হাসল,

“অ্যাহ্! একে তো শাইনার বিয়েতে তো দেখেছিলাম। একদম তাজদার সিদ্দিকীর ফটোকপি।”
আনিস বিরক্ত হয়ে বলল,”থাম তোরা। আর বলিস না।”
তার মনে হচ্ছে বেয়াইন শব্দটা বলে সে ফেঁসে গেছে। এবার আর রক্ষে নেই। সবাই ইনিয়েবিনিয়ে ডাকাডাকি করা শুরু করল,”আনিসুজ্জামানের বেয়াইন নামের কেউ আছে নাকি?”
তাসনুভা তার বান্ধবীর আড়ালে দাঁড়িয়ে কোনোমতে মুখ ঢাকার চেষ্টা করছে। আনিস ভাইয়ের সব বন্ধু আনিস ভাইয়ের মতোই ফালতু!
আনিস হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বন্ধুদের দিকে। রাহাত বলল,”আরেহ চাপ নিস না। আমরা ওর ভাইয়ের বন্ধু। প্রাইমারিতে একসাথে পড়েছি।
মুক্তা তাসনুভাকে দূর থেকে ডাকল। তাসনুভা চুপচাপ থাকায় সে নিজেই এগিয়ে এল।
“এই নুভা এদিকে এসো তো!”

তাসনুভা বিরক্তির দৃষ্টি ছুঁড়ে ধীরে ধীরে এগোল। কাছে যেতেই মুক্তা ধমকের সুরে বলল,
“লুকিয়ে লুকিয়ে থাকছো কেন?”
তাসনুভা দীর্ঘশ্বাস ফেলল,”দেখছো না সবাই কি শুরু করেছে? এসব কি ধরণের কথা বলার স্টাইল?”
মুক্তা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ধুর! উনি শুধু বলেছে আমার বেয়াইন আছে, কথা সাবধানে বলিস। এখানে ভুল কোথায়? ওরা তোমাকে চেনে তাজদার ভাইয়ার সুবাদে। মজা তো করবেই। চলো পরিচয় করিয়ে দিই।”
কথা শেষ না হতেই সে তাসনুভাকে টেনে নিয়ে গেল।
দু’জনে এগিয়ে যেতেই বন্ধুরা একসাথে বলে উঠল,

“এই যে! বেয়াইন সাহেবা এসেছেন। আসুন আসুন। মিষ্টিমুখ না করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন?”
তাসনুভা মুখ গম্ভীর করে বলল,”আমি ভোমরা ভয় পাই।”
তার কথায় চারদিক হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়ল। হাসির ঢেউ এমনভাবে ছড়িয়ে গেল যে তাসনুভাও নিজের অজান্তেই হাসল। অবশ্যই ব্যঙ্গ করে, সরাসরি আনিসের দিকে তাকিয়ে।
আনিস সেই হাসিটা দেখে অপ্রস্তুতভাবে ঘাড়ের পেছনে হাত বুলাতে বুলাতে ধীরে ধীরে সরে পড়ল। এদিক-ওদিক ঘুরলো ফিরলো। কিন্তু বন্ধুদের কাছাকাছি আর গেল না।
রাহাত বলল,”আপনাকে বেয়াইন সাহেবা ডেকেছি বলে একজনের পালপিটিশন বেড়ে যাচ্ছে।”
তাসনুভা ঠোঁট কোঁচকাল,”ঢঙ…”

আনিস পুরো ক্লাবটা ঘুরে ঘুরে দেখছিল আর মুক্তা বাবা চাচাদের সাথে কথাবার্তা বলছিল। তারাও চাকরির বিষয়াদি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলাবলি করছিলো। আনিস তাদের সাথে অনেক গম্ভীর আলাপ আলোচনা করলো সেখানে দাঁড়িয়ে। তারপর যখনই বন্ধুদের দিকে এগোতে যাবে তখুনি তাসনুভা মিষ্টির প্লেট নিয়ে উপরে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎই তার সামনে পড়ে গেল। কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
“আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে বিয়েবাড়িতে মেয়ে দেখতে এসেছেন।”
আনিস খুবই স্বাভাবিকভাবে বলল,” ছেলেদের কাজই মেয়ে দেখা। আমি অবিবাহিত পুরুষ মানুষ। মেয়ে তো দেখবোই। বিয়ের আগে মেয়ে দেখা হালাল।”
“সাবধানে দেখবেন। নইলে কেস খেতে পারেন।”
“ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিলেই প্রতিবেশীদের দেখা যায়। তাদের নতুন করে দেখে কেস খেতে চাই না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।”

তাসনুভা কপাল কুঁচকে ফেললো। এত আওয়াজ, কোলাহলের ভেতর সে বুঝে উঠতে না আনিস ভাই কি বলতে চেয়েছে। শুধু এটুকু বুঝলো তাকে আবারও খোঁচা মেরে কথা বলেছে। মেয়েদের মতো খোঁচাখুঁচির অভ্যাস আছে উনার। একেবারে ফালতু।
পেছন থেকে আনিসের বন্ধুরা বলল,”কিরে তুই কোথায় চলে গেলি? আমরা সবাই বেয়াইনের হাতে মিষ্টি খেলাম। তোরটা মিস গেল।”
আনিস বলল,”আমি যা খেয়েছি তা এখনো হজম হয়নি। তোরা যাবি?”
ঘড়ি দেখলো সে। বলল,”অনেক রাত হয়েছে। আমাকে একা যেতে হবে। নইলে তোরা থাক। আমি চলে যাচ্ছি। আমাকে বাইপাস দিয়ে যেতে হবে।”
বলতে বলতে সে বর ইশরাকের কাছে গেল।
তাসনুভা সিঁড়ি বেয়ে উঠছিল একহাতে মিষ্টির প্লেট আর শাড়ি ধরে। হঠাৎ থেমে গেল তার পা জোড়া।
পুনরায় সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল সে। মুক্তাকে বলল,”মুক্তা আমি চলে গেলে কেমন হয়?”
“তুমি থেকে যাবে বলেছিলে না?”

“না, কাল তিতলিকেও নিয়ে আসতে হবে। ওর ড্রেস চুজ করে দিতে হবে। ছোট ভাইয়াকেও বলতে হবে। আমার চলে যাওয়া উচিত। তুমি কিছু মনে করো না। হ্যাঁ? আমি যথাসময়ে পার্লারে চলে যাব।”
বলেই সে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। ততক্ষণে আনিস বেরিয়ে গেছে। তাসনুভা দ্রুত ক্লাব থেকে বের হলো।
বাইরে যেতেই দেখলো আনিস মুক্তার ভাইয়ের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। তাসনুভা কিছুটা পেছনে গিয়ে দাঁড়াতেই মুক্তার ভাই বলল,
“নুভা কিছু বলবে?”
“জি ভাইয়া। উনাকে।”
আঙুল দিয়ে আনিসকে দেখিয়ে দিল সে। আনিস ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো।
“কি?”
তাসনুভা বলল,”আমাকেও বাড়ি ফিরতে হচ্ছে এমার্জেন্সি। আপনি আমাকে নিয়ে যেতে পারবেন? একা ফিরছি বললে আব্বু বকবে। আমি বাড়িতে বলেছিলাম আজ ফিরবো না। কিন্তু এখন ফেরাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।”
আনিস মুক্তার ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাঁটতে লাগলো। তাসনুভা তার পেছনে হাঁটতে হাঁটতে বলল,”আশ্চর্য কিছু বলছেন না কেন?”

আনিস বলল,”কিন্তু আমি তো তোমাকে নিয়ে যেতে পারবো না। আমি বাইক নিয়ে এসেছি। আমিও সেকেন্ড পার্সন ক্যারি করতে পারিনা বাইকে। এক্সিডেন্ট হওয়ার ভয় থাকে।”
তাসনুভা তার বাইকের কথা শুনে বলল,
“সরি সরি আমি জীবনেও আপনার বাইকে উঠবো না। আপনি আমাকে অপমান করেছিলেন আমার স্পষ্ট মনে আছে। দরকার নেই আপনার বাইকে করে যাওয়ার। আমি বাসে করে ফিরবো।”
আনিস বলল,”আচ্ছা চলো তোমাকে ডাইরেক্ট গাড়িতে তুলে দিই। সোজা বাড়িতে পৌঁছে দেবে।”
“আমি একা একা ভাড়া গাড়িতে যাব না। আমি যেতে পারবো। আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। আপনি চলে যান।”
“আচ্ছা বাসস্ট্যান্ড অব্দি যাই। তারপর দেখা যাবে।”

আনিস একটু দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সে বাইকে উঠে বসলো। তাসনুভা রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে। রাস্তায় এখন তেমন জ্যাম নেই। তাসনুভা হেঁটে হেঁটে বাসস্ট্যান্ড অব্দি চলে এল। সেখানে পটিয়া যাওয়ার বাসগুলোতে তেমন মানুষজন নেই। তাছাড়া একা একটা মেয়ে নিরাপদও না। পটিয়া থেকে আজিমপুর যাওয়া অব্দিও তো অনেকটা পথ।
আনিস শেষমেশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
“আচ্ছা বাইকে ওঠো। বাসে হবে না। এত রাতে ঝামেলা হয়ে যাবে।”
তাসনুভা গম্ভীর মুখে জেদ বজায় রেখে বলল,
“আপনার বাইকে আমি যাব না। আমাকে বসতে বলেই তো আপনি শাঁ করে দৌড় মেরেছিলেন! আজ একদম এসব হবে না।”

আনিস ঠোঁট কামড়ে একবার তাকাল।
কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল।
জেদী মেয়ে। ওর সাথে তর্ক করে লাভ নেই।
তাসনুভাও কোনোভাবেই রাজি হলো না।
অগত্যা তাকে বাসে উঠিয়ে দিয়েই আনিস ফিরতে বাধ্য হলো।
তবুও…ওকে একা পাঠিয়ে সে স্বস্তি পাচ্ছিল না। মেয়েমানুষ এতরাতে একা বাসে! ব্যাপারটা চিন্তার। তাই সে বাসটার পিছু পিছু দূরত্ব রেখে বাইক চালিয়ে যেতে লাগল। যদি বাস ফেলে সে আগেই অনেকটা পথ চলে এসেছে।
মাঝপথে পৌঁছতেই হঠাৎ ফোনের রিং! তৌসিফ ফোন করছে। এত রাতে ফোন কেন? নিশ্চয়ই জরুরি কিছু।
আনিস সাইডে বাইক দাঁড় করিয়ে কল রিসিভ করল।
রাগে তৌসিফের কাঁপা গলা শোনা গেল,

“আনিস ভাই! নুভা নাকি এখনো বাসস্ট্যান্ডের সামনে একটা বটতলায় দাঁড়িয়ে আছে। আপনি আসার রাস্তায় ওকেও নিয়ে আসেন। বেয়াদবটা আজ বাড়ি ঢুকুক একচড়ে কান ফাটিয়ে ফেলবো! আমাকে বলেছে আসবে না, এখন আবার বলছে চলে আসবে। এখন আমি ঘুম থেকে উঠে তাকে আনতে যাব? এটা সম্ভব?”
আনিস ভুরু কুঁচকে বলল,”ও আমার সামনের বাসে।”
“না। ও বাস থেকে নেমে গিয়েছে।”
আনিসের চোখ বড় হয়ে গেল।”কি? কখন?”

“হ্যাঁ ওর দ্বারা সব সম্ভব। এখন ভয় পাচ্ছে। আপনি প্লিজ একটু দেখেন। আপনার বাইকে উঠিয়ে আনেন। আজ বাড়িতে আসুক, বাকিটা পরে হবে। বেয়াদব মেয়ে কোথাকার। ওকে দেখে নেব আমি আজকে। আসুক একবার।”
তৌসিফ রাগে গর্জন করছে।
আনিস তাড়াতাড়ি বলল,”ও কোন জায়গায় নেমেছে? লোকেশন বলো।”
তৌসিফ বলল,”বাসস্ট্যান্ডের কাছেই। পটিয়ার কেউ নেই তাই নাকি নেমে গিয়েছে। আচ্ছা মেসেজ চেক দেন। ওর নাম্বার দিচ্ছি। আপনি ফোন দেন। আমি আপনার নাম্বারও ওকে দিচ্ছি।”
তৌসিফের গর্জনে বাড়ির সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়েছে। সবার হৈচৈ শুনে শাইনারও ঘুম ভেঙে গিয়েছে। তিতলি ঘুমায় তার সাথে। ঘুমানোর সময় ওর হাত থাকে উত্তরে, পা থাকে দক্ষিণে। এত নড়াচড়া করে ঘুমের মধ্যে। শাইনার ভয় হচ্ছে। কোন সময় তার পেট বরাবর ধুম করে লাথি দিয়ে বসে কে জানে। লজ্জায় কিছু বলতেও পারছে না।
আনিস ফোন করলো। রিং বাজতেই তাসনুভা রিসিভ করল।

আনিস সরাসরি জিজ্ঞেস করল,
“কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছ?”
তাসনুভা ঠান্ডা গলায় বলল,
“আমি বটতলার একটু সামনে।”
ফোন কেটে আনিস আবার ঘুরে গেল। রাস্তার বাতির নিচে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনের ভিড় স্ক্যান করতে করতে সে বাইক নিয়ে বটতলার সামনে এসে থামল।
আর সেখানেই তাসনুভা। একাই দাঁড়িয়ে আছে।

শীতে হাত দুটো বুকের কাছে ধরে রেখেছে। ঠকঠক করে শীতে কাঁপছে।
আনিস কিছু বলল না। শুধু বাইকটা তার সামনে এনে একটা হর্ন বাজাল।
তাসনুভা কিছুক্ষণ নড়ল না। স্থির দাঁড়িয়ে রইল বাইকটার দিকে চেয়ে। তারপর শীত নিবারনের জন্য শাড়ির আঁচলটা টেনে গা ঢেকে নিয়ে ধীরে ধীরে এসে বাইকের পেছনে বসল।

তাজমহল দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ১৩

বাইক স্টার্ট দেওয়ার সাথে সাথেই একটা ঝটকা।
তারপরই তাসনুভার নরম, ঠান্ডা হাত দুটো তার পাঞ্জাবির কাঁধে এসে চেপে ধরল।
মুঠোটা শক্ত। আনিস কিছু বলল না। রাতের কুয়াশা ভেদ করে দু’জন ধীরে ধীরে অদৃশ্য হলো পথের মোড়ে।

তাজমহল দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ১৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here