তাজমহল পর্ব ৮

তাজমহল পর্ব ৮
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী

শাইনা তবুও থামলো না। সে বেরিয়ে এল শপিংমল থেকে। তাজদার সিদ্দিকীর সাথে একা একা শপিং করার কোনো ইচ্ছে নেই তার। মাথাটা অসম্ভব রকম যন্ত্রণা করছে।
শাইনার পেছন পেছন তৌসিফ বেরিয়ে এল তাসনুভাকে নিয়ে। তাসনুভাকে গাড়িতে বসিয়ে এসে শাইনাকে বলল, “এভাবে যাওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। ভাই কি বলে দেখো একবার।”
শাইনা বলল, “আমার আর এখানে থাকতে ইচ্ছে করছেনা ভাইয়া। মাথাব্যাথা করছে। এভাবে শপিং করা সম্ভব না। আমাকে ছেড়ে দেন। আপনাদের পছন্দমতো কিনে ফেলেন। আমার কোনো পছন্দ অপছন্দ নেই।”

তৌসিফ তাকে রাজী করাতে পারলো না। শাবরিনও বেরিয়ে এল তার স্বামী ইমতিয়াজের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে। সে ঠিক করেছে আলাদা গাড়িতে করে চলে যাবে তারা। কারণ ওই গাড়িতে করে আর যাওয়া সম্ভব না। অন্তত সে যাবেনা। ইমতিয়াজ সব শুনে তাকে বকছে। কেন সে তর্ক জড়ালো ওই বাড়ির মেয়ের সাথে?
তৌসিফ তাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল,”শাবরিন শাইনাকে রেখে যাও। ঘটনাটা বেশিদূর না যাক। বাড়িতে তুলকালাম কান্ড ঘটবে এভাবে শপিং না করে বাড়ি ফিরলে। এমন সময় ঝামেলা হলে ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।”
শাবরিন মলিন চেহারায় বলল,”আমি তো কিছু বলিনি ওকে। সে নিজেই থাকতে চাইছেনা। আপনারা আপনাদের পছন্দমতো কেনাকাটা করে নেন। শাইনা তো বলছে ওর কোনো পছন্দ অপছন্দ নেই।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তৌসিফ গাড়িতে বসা তাসনুভার দিকে তাকালো খেপাটে দৃষ্টিতে। সব নষ্টের মূল এই মেয়ে।
সে বড় ভাবি ঝিমলির দিকে তাকিয়ে বলল,
“বড় ভাই কি বলছে?’
ঝিলমি রায়হানকে সবটা খুলে বলেছে ফোনে। রায়হান সব শুনে বলল শাইনা তার তাজদারকে একা ছেড়ে দিতে। ওদের শপিং ওরা করুক। আর কাউকে দরকার নেই। সে যেন তাসনুভাকে নিয়ে চলে আসে। তাদের শপিং তারা পরিবারের সদস্যরা একসাথে করবে।

শপিং মল থেকে আনিস বেরিয়ে এল। পেছন পেছন তাজদার। তাদের মধ্যে কি কথাবার্তা হলো কে জানে। আনিস এগিয়ে এসে শাবরিনকে বলল,”গাড়িতে গিয়ে বোস।”
শাবরিন অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,”ওই গাড়িতে? বড় ভাই বলছে অন্য গাড়িতে করে চলে যেতে।”
আনিস শক্তকণ্ঠে বলল,”পেছনের সিটে গিয়ে বোস। বাড়তি কথা বলিস না।”
শাবরিনের মন খারাপ করে চলে গেল। পেছন পেছন শাইনাও চলে যাচ্ছিল। আনিস কপাল কুঁচকে বলল,”তুই কোথায় যাচ্ছিস?”

শাইনা থেমে গেল। ভাইয়ের দিকে ফিরে বলল,”বাড়ি যাব।”
“তুই থাক এখানে। কেনাকাটা করে তারপর বাড়ি যাবি।”
শাইনা মৃদুস্বরে বলল,”আমার মাথাব্যথা করছে।”
“খাওয়াদাওয়া করলে ভালো লাগবে। চা খাবি?”
শাইনা সাথে সাথে বলল,”না লাগবেনা। তুমিও বাড়ি চলে যাবে?”
“আমি ওদের একা ছাড়তে পারব না। বাড়িতে গিয়ে কি হয় জানিনা। ইতোমধ্যে সবার কানে পৌঁছে গেছে সবটা। তুই থাক। শপিং করে চলে আয়। আমরা যাচ্ছি।”
ভাইদের মুখের উপর কথা বলতে না পারাটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। সে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো। শাবরিন যাওয়ার সময় বলল,
“আমি যাচ্ছি। তুই সাবধানে থাকিস।”

শাইনা বলল,”বাড়িতে গিয়ে আবার ঝামেলা বাঁধিওনা। আমার ভালো লাগেনা এসব।”
শাবরিন তাকে আশ্বাস দিয়ে বলল,”আমি কিছু বলবো না কাউকে।”
সবাই চলে যেতেই শাইনা একা একা দাঁড়িয়ে রইলো। তাজদার সিদ্দিকী তার পাশ কাটিয়ে গেল। একদম গা ঘেঁষে হাঁটে। অসহ্য!
সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। তাজদার সিদ্দিকী গলা খাঁকারি দিল কিছুদূর গিয়ে। শাইনা ইঙ্গিত বুঝে চুপচাপ তার পেছন পেছন হাঁটতে লাগলো।
তাজদার একটা ক্যাফেতে ঢুকে চা নাশতা অর্ডার দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের বসলো। শাইনা সামনে বসা। তার একটা অসহ্যকর ব্যামো আছে। কারো সামনে বসলে মনে নানানরকম অস্বস্তি কাজ করে। পেটের ভেতর গুড়গুড় করতে থাকে।

তাজদার সিদ্দিকী যদিও ফোন নিয়ে ব্যস্ত তবুও তার কেমন একটা লাগছে। এভাবে সামনাসামনি বসা যায় নাকি?
ফোন থেকে মনোযোগ সরিয়ে তাজদার হঠাৎই তার দিকে তাকালো। শাইনা সেটা বুঝে ফেললো না তাকিয়েও। সে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো ইচ্ছে করে। টেবিলের নিচে থাকা পায়ের তলা ঘামছে।
কিছুক্ষণ পর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন উইংস, মিটবক্স, পাস্তা, চিজকেক, ব্রাউনি, পেস্ট্রি চলে এল। এত খাবার তার দ্বারা খাওয়া সম্ভব না জেনেও অর্ডার করেছে ইচ্ছে করে। ভালো করেই জানে এভাবে খেতে সে লজ্জা পাবে। নিজে চিজকেক নিয়ে নড়াচড়া করছে আর তার দিকে একেকটা ঠেলে দিচ্ছে।
শাইনা মনে মনে ঠিক করলো সে মোটেও লজ্জা পাবেনা। সংকোচ করবে না। বুঝতে দেবেনা সে তার অস্বস্তি হচ্ছে। অনেকটা সময় নিয়ে সে মোটামুটি খেল সবকিছু থেকে।

শেষে চা কফি এল। শাইনার জন্য দুধ চা। তাজদারের জন্য কোল্ড কফি। শাইনা সবকিছু ফেলে আগে চায়ের কাপ টেনে নিয়ে গরম চায়ের কাপে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। সামনে যে একটা মানুষ বসে আছে কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গিয়েছিল সে। চায়ের কাপে ঠোঁট ডুবিয়ে তাজদারের দিকে চোখ পড়তেই তাজদারও তার দিকে তাকালো কফির মগে ঠোঁট ডুবিয়ে রেখে। শাইনা দ্রুত মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চা শেষ করতে লাগলো। এত গরম চা মানুষ খেতে পারে দেখে তাজদার সিদ্দিকী বোধহয় অবাকই হচ্ছে।
খাওয়াদাওয়া করে শরীরে একটু বল পেল শাইনা। বিশেষ করে চা’টা। চা তার এত পছন্দের। তার মনে হয় তার সব রোগের মহৌষধ এই চা।

আবারও বিয়ের বাজারে চলে এল দু’জন। দোকানিরা তাজদার সিদ্দিকীর সাথে হাসিঠাট্টা করছে।
ঝামেলার ব্যাপারে বলল, এইসব রোজ দেখি। বরপক্ষ আর কনেপক্ষের ঝামেলা নতুন কিছু নয়।
তাজদার কথা বলতে বলতে বসলো। ধীরেসুস্থে বলল,”বিয়ের জন্য শাড়ি আর ওয়ালিমার জন্য লেহেঙ্গা দেখান। পাশের জন পছন্দ করবে।”
পাশের জন বলায় কেউ কেউ ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। শাইনা মনে মনে কত কি বলে গালি দিল।
দোকানিরা একে একে রঙিন প্যাকেট খুলে সাজিয়ে দিতে লাগলো কাতান, বেনারসি, জামদানি শাড়ি, আর নানান ডিজাইনের লেহেঙ্গা। শাইনা শুরুর দিকেই একটা শাড়ি পছন্দ করেছিল। শাড়িটা তার এত পছন্দ হয়েছে যে বিয়ের শাড়ি হিসেবে এটা যেমন আলাদা হবে তেমন নজরকাঁড়া। যদি কিনতে হয় সে এটাই কিনবে।
সে শাড়িটা ধরে বসে রইলো। দোকানদাররা এটা সেটা দেখাতে লাগলো। শাইনা শাড়িটা ছাড়লো না। দোকানদাররা বলল, “ভাবি তাহলে শাড়িটা গায়ের একপাশে জড়ান, তারপর ঘোমটটা মাথায় দিয়ে আয়নায় দেখুন কেমন লাগছে। ফাইনাল করুন কোনটা নেবেন।”

শাইনা তাদের কথামতো মাথায় ঘোমটাটা তুললো। আয়নার দিকে ফিরে নিজেকে দেখতে লাগলো। মনস্থির করলো এই শাড়িটাই সে কিনবে। দোকানদার বলল,
“ভাইয়াকে দেখান। উনি বলুক কেমন লাগছে। ভাবির পছন্দ কিন্তু লা জবাব ভাইয়া।”
শাইনা আলতো করে তাজদারের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। চোখাচোখি হতেই শাইনা দ্রুত ঘোমটা নামিয়ে রেখে নিল। তাজদার বলল,

“তাহলে এটা ফাইনাল।”
লেহেঙ্গা চুজ করতেও বেশিক্ষণ সময় লাগেনি। শাইনা বিয়ের শাড়ি একটু কড়া রঙের নিয়েছে তাই চাচ্ছিল লেহেঙ্গাটা হালকা রঙের নেবে। তাজদারও তার দিকে একটা লেহেঙ্গা বাড়িয়ে দিল দেখার জন্য। লেভেন্ডার পিংক। কালারটা যে কারো পছন্দের হবে। লেহেঙ্গার কাপড়টা পুরোটা খোলার পর শাইনার পছন্দ হয়ে গেল। মোলায়েম একটা কালার। চোখের আরাম। দোকানি হেসে বলল,
“আমাদের দোকানের ভালো জিনিসগুলো আপনারাই নিয়ে নিচ্ছেন।”
শাইনা বলল,”কথাটা সব দোকানিরাই বলে। একটু নতুন কিছু বলুন।”
দোকানিরা সবাই হেসে ফেললো তার কথা শুনে।

সে অন্যদিকে গিয়ে শাড়ি আর লেহেঙ্গার ওড়নাটা মাথায় পরে আরও ভালো করে দেখছিল। তাজদার সিদ্দিকী তখন সেকেন্ড শাড়ি, থার্ড শাড়ি আর বাকি জিনিসগুলো দেখছিল। আর মাঝেমধ্যে আয়নার দিকে। যদি শাইনা এমনভাবে দাঁড়িয়েছে যে তাজদার সিদ্দিকীর ছায়াও যাতে না যায় তার পেছনে। সে দোকানিদের সাথে ভালো কথাবার্তা বলছে। কিন্তু তাজদারের চোখাচোখি হওয়ামাত্রই আবারও জমে যাচ্ছে। দোকানিরাও সেটা খেয়াল করেছে।
বিয়ের শাড়ির সাথে আর কি কি কিনতে হয় সব জানে দোকানিরা। তারা নিজেরাই সবকিছু বলে বলে প্যাকেজিং করছে।
তাদের পোশাকের কেনা শেষ হয়েছে। দোকানিরা তাদের জন্য চা নাশতার আয়োজন করেছে। শাইনা চা ফেরত দেয়নি। তাজদার কিছু খায়নি।

জুতোর দোকানেও বেশিক্ষণ সময় নেয়নি শাইনা। ততক্ষণে তারা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। শাইনার ইচ্ছে করছিল একদৌড়ে পটিয়া চলে যেতে। জুতোর দোকান থেকে বের হয়ে এসে তারা গেল জুয়েলারির দোকানে।
তাজদার আগেভাগে দোকানে ঢুকে পড়েছিল। শাইনা এদিকওদিক তাকাতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেছে। সামনে তাকাতেই দেখলো তাজদার সিদ্দিকী কোথাও নেই।
সে সামনে, পেছনে, ডানে-বামে তাকালো। এত ভিড় চারপাশে। মনে হচ্ছে আজ সবাই বিয়ের বাজার করতে এসেছে। শাইনা কপালের হাত দিয়ে ঘাম মুছলো। এখন সে কি করবে? এভাবে আগে আগে হাঁটলে তাকে রাখার কি দরকার ছিল?

সামনে একটা ভিড়। মহিলাদের গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগছে। শাইনা ভীড়ের মধ্যে ঢুকে গেল। যদি আজ সে ওই লোকটাকে খুঁজে না পায় তাহলে সে একা একা চলে যাবে। তারপর তাকে খুঁজে মরুক।
মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার। ভিড়ের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে একটা মহিলার সাথে প্রবল ধাক্কা লাগলো হঠাৎ। কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিল হাঁড়গোড় কিছু একটা ভেঙে গেছে। সে মহিলাটির খেপাটে দৃষ্টিতে তাকাবে তখুনি একটা ঠান্ডা হাত তার আঙুলে আঙুল মিশিয়ে নিল। শাইনা জমে গেল পাথরের মূর্তির মতো। কয়েকটা অপরিচিত আঙুল তার আঙুলের ফাঁকে নড়াচড়া করছে বলে কান দিয়ে গরম বাষ্প বের হচ্ছে। সে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হাতটা ছাড়িয়ে নিতে গেলে আঙুলগুলো আরও ঝাপটে ধরলো তার আঙুলকে।

দুই পরিবারের গুরুজনেরা বসে বিষয়টা মিটমাট করে নিচ্ছিল তাজদার ফেরার আগে। তৌসিফ একপাক্ষিকভাবে সব দোষ তাসনুভার উপর চাপিয়ে দিয়েছে। যদিও কথাগুলো কেউ তুলতে চায়নি আসার পর কিন্তু তারা ফেরত এসেছে দেখে সবাই রেগে গিয়েছে। বিশেষ করে আশরাফ আর তাজউদ্দীন সিদ্দিকী। মেয়েমানুষ মানেই ঝামেলা।
আশরাফ বলল,”ওদের এভাবে ছাড়া ঠিক হয়নি। মুরব্বি যাওয়া উচিত ছিল সাথে। তাহলে এতকিছু হতো না।”
তৌসিফ বলল,”আনিস ভাই তো ছিল।”
তৈয়বউদ্দীন বললেন,”আনিস তুমি ওদের থামালেনা কেন? ওরা তো তোমার ছোট। একটা ডাক দিতে পারতে।”
আনিস বলল,”আমি কিছু বললে সেটা বড়সড় ব্যাপার হয়ে যেত। আপনারাই বলতেন আপনাদের বলার আগে কেন আপনাদের মেয়েকে শাঁসালাম।

আমি দাঁড়িয়ে আছি অথচ আপনাদের মেয়ে আমাকে একটুও সমীহ করলো না। মুখে যা এল তাই বলে গেল। এইরকম বেয়াদব মেয়ের সাথে তর্কে জড়ানোর কোনো ইচ্ছে নেই আমার।”
তাজউদ্দীন সিদ্দিকীর কথাটা পছন্দ হয়নি। আনিস নুভাকে বেয়াদব বলতে পারে না। আনিস আর কিছু না বলে সরে পড়েছে। ওরা নিজেদের দোষ কখনো দেখেনি। দেখবে না।
আনিস তাসনুভাকে বেয়াদব ডেকেছে কথাটা ওই বাড়িতে চলে গিয়েছে সবার মুখে মুখে।
তাসনুভা সবটা শুনে চটে গিয়েছে। তাকে বেয়াদব ডেকেছে আনিস ভাই? সবার সামনে? ওদের এত সাহস কি করে হয়?
রওশনআরা ধমকে বলল,”নিজে দোষ করে এখন আবার রাগারাগি করছো?”
তাসনুভা বলল,

“আমি কি খারাপ জিনিস কিনতাম শাইনার জন্য? আমাকে ওভাবে অপমান করলো কেন সবাই মিলে?”
“তুমিও নাকি ওদের কম কথা শোনাওনি। তৌসিফ সব বলেছে আমাকে।”
“শোনাবো না? শাবরিন আমাকেও যথেষ্ট কথা শুনিয়েছে। আমি নাকি নিজের ইচ্ছেমতো শাড়ি লেহেঙ্গা চুুজ করছি। ওদের নাকি পাত্তা দিচ্ছি না। আমার ভাইয়ের বউকে আমি খারাপ জিনিস কিনে দিতাম? ভাইয়া আমাকে এমনি যেতে বলেছে ওদের সাথে?”
“ঝামেলা বাড়িওনা নুভা। আনিস তোমারও ভাইয়ের মতো। তুমি ওকে সমীহ করোনি। সেও তাই তোমাকে বেয়াদব ডেকেছে।”
“কেন ডাকবে? আমাকে কোন সাহসে বেয়াদব ডাকবে?”
“শাইনা বাইরের মেয়ে হলে তুমি তার ভাইয়ের সামনে তার বোনকে কথা শোনাতে পারতে? পড়াশোনা জানা মেয়ে তুমি। মেজাজ সামলে রাখতে শেখো।”

“আনিস ভাই আমাকে বেয়াদব ডাকতে পারেন না।”
সে কিছুতেই মানতে পারছেনা ওই বাড়ির মানুষ তাকে বেয়াদব ডেকেছে।
এদিকে শাবরিন সবাইকে বলছে তাসনুভা তাকে কিভাবে কিভাবে কথা শুনিয়েছে। এখনো বউ তুলে নেয়নি। তারমধ্যে এতকথা? শাহিদা বেগম চুপ করে আছেন।
আনিস ঘরে এসে শাহিদা বেগমকে বলল,”আকদ ভেঙে দাও। ওই বাড়িতে মেয়ে দেয়ার দরকার নেই। আমরা কোথাথেকে উঠে এসেছি সেটা ওরা জেনেই সম্পর্ক করতে চেয়েছে। এখন এত কথার মানে কি? আমাদের মেয়ে কি ফেলনা নাকি? ওরা মুখে যা আসে তাই বলছে আমাদের। ওরা আমাদের খাইয়ে পরিয়ে বড় করেনি। ওদের সব কথা মানতে বাধ্য নই আমরা।”

শাহিদা বেগম কখনোই ছেলেদের সামনে শব্দ করেনি শাইনার অমত সম্পর্কে। তাদের কানে তুলেননি শাইনা এই বিয়েতে রাজী নয়। শুধু বলেছেন সে এখন বিয়ে করতে চায় না। তাজদারকে বিয়ে করতে চায় না এটা বলেননি।
আশরাফ, আনিস, শাওন জানে শাইনা রাজী আছে মোটামুটি।
কিন্তু আনিস আজ স্পষ্ট বুঝে গেল শাইনা বিয়েতে রাজী ছিল না। তাই সে মাকে বললো, আকদ ভেঙে দিতে। ওরা তাদের বোনকে চাকর বানিয়ে রাখবে। মুখের উপর জবাব দিলে সহ্য করবে না কেউ। ওদের সেই স্বভাব এখনো যায়নি।

তাজমহল পর্ব ৭

আফসার সাহেব চিন্তিত হয়ে বসেছিলেন। আনিসের কথা শুনে বললেন,”বললেই হলো? এভাবে আকদ ভাঙা যায় নাকি?”
“যায়।”
বড় ফুপু বলল,”আচ্ছা তোরা শান্ত হ। তাজদার কি বলে দেখ। জামাই ভালো হলেই হলো।”

তাজমহল পর্ব ৯