তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৯ (২)
তাবাস্সুম খাতুন
এইদিকে নিশান সিমি কে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই সিমি হাত পা ছুড়াচুরি করতে লাগলো। নিশান হনহন পায়ে নিজের রুমে ঢুকে।। পা দিয়ে দরজা জোরে লাগিয়ে দিলো। তারপর সিমি কে নিয়ে বেডের কাছে গিয়ে তাকে জোরে চেলে ফেলে দিলো। এইভাবে চেলে দেয়াই সিমি হাল্কা ব্যাথা পেলো।সিমি এখনো কান্না করছে। সে উঠে বসলো নিশানের উদ্দেশ্য বললো,,
“কি সমস্যা আপনার? কেন আমার পিছু লেগেছেন? আ..!”
সিমি কে বাকি কথা শেষ করতে না দিয়ে নিশান নিজের চুলে হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বললো,,
“সমস্যা আমার না সেইটা তোর?”
সিমি চোখ ছোট ছোট করে বললো,,
“আমার কিসের সমস্যা?”
নিশান — “তো সমস্যা কি ছেলেদের হয় নাকি? মেয়েদেরই তো হয় আবাল।”
সিমি — “আপনি আমাকে আবাল বললেন কোন দুঃখে?”
নিশান — “তোর তো এমনিই দুঃখে বুক ভেসে যাচ্ছে আবার কোন দুঃখ লাগবে?”
সিমি কান্না মাখা কণ্ঠে বললো,,
“আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন বলেই তো আমার এত বুক ভাসছে, তাই ভালো ভাবে ডিভোর্..!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সিমির মুখের কথা মুখেই রয়ে গেলো বাহির হওয়ার আগেই নিশান সিমির গাল চেপে ধরলো। সিমি হাত দিয়ে নিশান কে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তূ পারছেনা। সিমি ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো, নিশান হিংস্রতার সাথে বললো,,
“ভালো ব্যাবহার করছি বলে তুই কি মনে করেছিস? যে আমি ভালো no never আমি ভালো না আর তোর ক্ষেত্রে তো একদমই না। খোদার কসম তুই যদি মুখ দিয়ে আর একবার ডিভোর্স এর কথা উচ্চারণ করলে তোকে দুনিয়া থেকে তুলে নেওয়ার দায়িত্ব টা আমিই নিবো।”
বলে নিশান সিমির গাল ছেড়ে দিলো। সিমি জোরে কান্না করে দিলো তার গাল প্রচন্ড ব্যাথা করছে। এতদিন স্বপ্নে মেরেছে এখন বাস্তবে। সিমির কান্না করা দেখে নিশান শান্ত কন্ঠে বললো,,
“ইশু ভালো ভাবে বলছি কান্না থামা, এইসব ফ্যাচফ্যাচ আমার সয্য হচ্ছে না।”
এইদিকে কে শোনে কার কথা সিমি তো নিজের মতো কেঁদেই যাচ্ছে। নিশানের রাগ যেন আরো বাড়ছে সে চিৎকার দিয়ে বললো,,
“তোর ভাতার মরে গেছে যে এইভাবে কান্না করছিস? চোখের পানি মুছে ফেল। যদি কান্না করতে দেখছি আর তো খুন করে ফেলবো। ইডিয়েট চোখের পানি মোচ!”
নিশানের কথাই সিমি কেঁপে উঠলো। এই বিদেশি কুত্তার বিশ্বাস নেই যদি সত্যি সত্যি মেরে ফেলে না থাক। সিমি চোখের পানি মুছে ফেললো। নিশান আর কোন কথা না বলে গম্ভীর মুখ করে ওয়াশরুম এ ঢুকে পড়লো। নিশান কে ওয়াশরুম এ ঢুকতে দেখে সিমি যেন হাতে জান ফিরে পেলো। সে পা টিপে টিপে হেঁটে দরজার কাছে গেলো। দরজার লক খুলতে গেলো কিন্তূ খুলতে পারছে না। সিমি আরো দুই চারবার ট্রাই করলো না খুলতে পারছে না। সিমি বিড়বিড় করে বললো,,
“এই বিদেশি কুত্তার সমস্যা কি? আমাকে বন্ধী করে রাখার মানে কি?”
এইভাবে সিমি আবারো ট্রাই করলো। ওর ট্রাই করার মধ্যে নিশান ওয়াশরুম এর দরজা খুলে বাইরে আসলো। সিমি দ্রুত দরজার হাতল ছেড়ে দিয়ে নিশানের দিকে ফিরতেই দ্রুত চোখ বন্ধ করে বলতে লাগলো,,
“আস্তাগফিরুল্লাহ নাউযুবিল্লাহ ছিঃ ছিঃ বিদেশি কুত্তা পোশাক বিহীন।”
নিশান ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে সিমি কে দরজার কাছে দেখে তেমন রিয়েকসান না দিলেও চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করতে করতে কি বললো সেইটা দেখে নিশান চোখ ছোট ছোট করে বললো,,
“তুমি ঐখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? পালাচ্ছিলে নাকি?”
সিমি ঐভাবে চোখ। বন্ধ রেখে বললো,,
“আরে না না আমি পালাবো কেন? এই দরজার কাছে অনেক ময়লা ছিলো সেইটাই পরিষ্কার করছিলাম।”
নিশান সিমির কাছে এগিয়ে আসলো। ভ্রু কুঁচকিয়ে বললো,,
“চোখ বন্ধ করে আছো কেন?”
সিমি — “আপনি আগে পোশাক পড়েন।”
নিশান — “why?”
সিমি — “why মানে আপনি বিনা পোশাকে আছেন। আমার কেমন জানি লাগছে দ্রুত পড়েন।”
সিমির কথার মানে বুজতে পেরে নিশান বাঁকা হেসে বললো,,
“আমি তো টাওয়াল পরে আছি। তাহলে কিভাবে বলিস আমি পোশাক হিনা আছি।”
সিমি ঐভাবেই বললো,,
“না না আপনি জামা পরে আসেন যান যান!”
নিশান এগিয়ে আসতে আসতে একদম সিমির কাছে চলে আসলো। নিশান বললো,,
“চোখ খুলে দেখ একদম পোশাক পরেই আছি।”
সিমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখলো নিশানের বড়ো বডি তার সম্মুখে। বড়ো বড়ো ড্রাগনের ট্যাটু সেখানে আবার পানি লাগাই যেন জীবন্ত লাগছে। লোম হীন বুক, সিমির চোখ যেন আটকে গেলো নিশানের বডি তে। নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছে। নিশান সিমি কে নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে হুট্ করে নিশান দরজার দুইপাশে হাত দিয়ে সিমি কে আটক করে নিলো। হুট্ করে এমন করাই সিমি থতমত খেয়ে গেলো। সে চোখ উঁচিয়ে নিশানের দিকে তাকাতেই নিশান বললো,,
“আমি জানি আমি সুন্দর তাই বলে এইভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়া উচিত না, আমি তোরই হাসব্যান্ড দেখার জন্য সময় আছে অনেক।”
সিমি দ্রুত চোখ বন্ধ করে মনে মনে নিজেকে গালি দিয়ে বললো,,
“শালা সিমি এই বিদেশি কুত্তার দিকে কিভাবে নির্লজ্জের মতো তাকালি ছিঃ ছিঃ। তোর উপরে ঘৃণা আসছে আমার থু।”
নিশান — “চোখ বন্ধ করলি কেন? তাকা দেখ আমাকে, আমি মাইন্ড করবো না এইগুলো তোরই তো হক তুই যদি বলিস টাওয়াল তাও খুলে দিতে পারি।”
নিশানের কথা শুনে সিমি নিশানের বুকে দুই হাত দিয়ে ঠেলে দিয়ে বললো,,
“আস্তাগফিরুল্লাহ নাউযুবিল্লাহ ছিঃ ছিঃ কি অসভ্য কথা ওয়াক।”
নিশান একটু সরে আসলো ঠোঁট কামড়ে বললো,,
“আমি মানুষটা তোর জন্য অসভ্য তাই আমার থেকে কোনোদিন সভ্য কিছু আশা করবি না। কারণ তোর ওই আশা নিরাশা হবে আমার অসভ্যতামির এক ঘন্টা ক্লাস করলে।”
বলে নিশান কাভার্ড থেকে নিজের পোশাক বাহির করে ওয়াশরুম এ ঢুকে গেলো। ওয়াশরুম এর দরজার আওয়াজ হতে সিমি যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। সে দরজার কাছে গিয়ে হাতল ধরে টান দিতেই দরজা খুলে গেলো। সে এতক্ষন ধরে খুলার চেষ্টা করছে কিন্তূ পারছেনা। আর এখন যেই হাত দিয়েছে সেই খুলেই গেলো। সিমি আর দাঁড়ালো না দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো। সে নিজেকে ঠিকঠাক করে সামনে এগোতেই চমকে উঠলো। কারণ তার রুমে তার বেডে জারা, সামিয়া আর রাত্রি বসে আছে তার দিকে হা করে তাকিয়ে। সিমি বুকে হাত দিয়ে তার কাছে গেলো। বেডে বসে তাদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে বললো,,
“কিরে তোরা তিনজন এইখানে কি করছিস?”
সামিয়া — “আমাদের কথা বাদ দে তুই ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা থেকে কি বাড়িতে ফিরলি নাকি?”
সিমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,,
“ম্যারাথন দৌড় থেকেও খারাপ রে ওই বিদেশি কুত্তা আমার জীবন টা শেষ করে দিলো এক রাতের ভিতরে।”
জারা সিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরী কণ্ঠে বললো,,
“আহারে আমার ভাবি জান আপনি কান্না করিয়েন না। আমার ভাইয়া খুব ভালো ভাবিজান তোমাকে খুব ভালোবাসে।”
সিমি প্রথমে বুজতে না পেরে সে নিজেও বললো,,
“হ্যা নন..!”
বাকিটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো মুখ চেপে ধরলো তারপর বললো,,
“এই শালী তুই আমাকে ভাবি ডাকিস কেন?”
জারা কে কিছু বলতে না দিয়ে রাত্রি দুঃখ প্রকাশ করে বললো,,
“সিমি জানু মোর ভাবি হয়তো, কিন্তূ এক্সিডেন্ট করে গাড়ি উল্টিয়ে নিশান ভাই এর সাথে বিয়ে হয়ে জারার ভাবি হয়ে গেলো।”
রাত্রির কথা শুনে সিমি দাঁত কিড়মিড় করে বললো,,
“মীরজাফর এর বংশধর, তোর ভাই কি যেন নাম ও হ্যা জবেদার ভাতার ওকে আমি কখনোই বিয়ে করতাম না। আর ওই ন্যাসপাতি ও তো আমাকে চড় মারতে মারতে কবুল বলিয়েছে নয়তো আমি ঈশিতা জাহান সিমি ওই বিদেশি কুত্তা কে কবুল বলতাম না।”
সিমির কথা শেষ হতে সামিয়া বললো,,
“সবাই চুপ, সিমি জানু শোন্।”
সিমি আর চোখে সামিয়ার দিকে তাকাতেই সামিয়া আস্তে আস্তে বললো,,
“সিমি মানে তোদের বিয়েতো রাতে হয়েছে তাই না?-
সিমি মাথা নাড়ালো, সামিয়া আবারো বললো,,
“রাত কয়টা নাগাদ হবে?”
সিমি একটু ভেবে বললো,,
“হয়তো রাত দুইটা।”
সামিয়া — “তার মানে রাতে তুই ন্যাসপাতি ভাই এর রুমে ছিলিস?”
সিমি — “হ্যা।”
সামিয়া এইবার মুচকি হেসে বললো,,
“তার মানে তোদের First night শেষ।”
সামিয়ার কথা শুনে সিমি দুইগালে হাত দিয়ে তওবা করতে করতে বললো,,
“তওবা তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ তোদের মুখে ঠাডা পড়ুক। ছিঃ ছিঃ কতটা নোংরা মাইন্ড তোদের।”
সিমির কথা শুনে জারা চোখ ছোট ছোট করে বললো,,
“ভুল কি বললো ও একসাথে এক ছাদের নিচে এক জায়গায় ছেলে মেয়ে থাকলে তো ইটিস পিটিশ হতেই পারে?”
জারার কথার সাথে রাত্রি ও সামিয়া ও হ্যা মিলালো। সিমি বললো,,
“বাল হবে কিচ্ছু হয় নি, তোর ভাই এর বডিতে যে বড়ো বড়ো ড্রাগন ট্যাটু আকিয়েছে সেইটা দেখে আমি ভয়ে আছি চুপ কর।”
সিমির কথা শুনে ওরা তিনজনেই মুচকি হাসলো সামিয়া বললো,,
“মানে সামথিং সামথিং হয়েছে?”
সিমি উঠে দাঁড়ালো ওয়াশরুম এর দিকে যেতে যেতে বললো,,
“নাথিং নাথিং।”
সিমি কে ওয়াশরুম এ যেতে দেখে রাত্রি বললো,,
“হ্যা আমরা বুজি বুজি, কিছু হয় নি তাই সাওয়ার নিতে গিয়েছিস।”
সিমি ওয়াশরুম থেকেই চিৎকার করে বললো,,
“আল্লাহ আমার একটাই দোয়া এই তিনটার মুখে ঠাডা পড়ুক।”
নিশান ডেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো সেট আপ করতে জিহান ওর রুমে ঢুকলো। জিহানের চোখে এখনো ঘুম। নিশান জিহান কে দেখে বললো,,
“অফিসে যাবি না?”
জিহান — “যাবো,”
নিশান বেডের কাছে এসে নিজের ফোন তুলে নিয়ে জিহানের উদ্দেশ্য বললো,,
“রাতে চুরি করতে গিয়েছিলিস নাকি? যে এইভাবে ঘুমে ঢুলছিস এখনো।”
জিহান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
“শালা হারামি দিস কবে তুই ঘুম পড়তে আমাকে, কালকে তো চুরি করতে গিয়েছিলাম কাজী আর উকিল কে আনতে। শালা বিয়ে করার ও করলি বউ এর সঙ্গ ও পেলি এখন আমাকে বলিস আমি চুরি করি।”
নিশান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৯
“তোর ফালতু স্টক তোর কাছে রাখ আর দ্রুত সাওয়ার নিয়ে আয় আমি অপেক্ষা করছি।”
জিহান বিড়বিড় করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলো। আর নিশান সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। দেশে আসছে দুই তিনদিন হচ্ছে এখনো অফিসের কোন কাজেই হাত দিতে পারিনি অনেক কাজ জমে আছে তাই আজকে দুই ভাই যাচ্ছে কাজগুলো এগিয়ে গুছিয়ে নিতে।