তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১১

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১১
তাবাস্সুম খাতুন

সময়টা বিকাল পাঁচটা। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। সেই দুপুর থেকেই হচ্ছে। পুরো তিন ঘন্টা যাবৎ। ঝুম বৃষ্টি সাথে ঝোড়ো হাওয়া। চৌধুরী ম্যানসন এর ছাদে হাঁটু তে মুখ গুঁজে কান্না করছে এক কিশোরী। টানা তিন ঘন্টা যাবৎ এই বৃষ্টিতে ভিজছে। কেঁপে কেঁপে উঠছে। বৃষ্টির এত বেগ ঝোড়ো হাওয়া যার দরুন তার কান্না শোনা যাচ্ছে না। কোমর ছোঁয়া চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। পানিতে ভিজে গেছে সব। তিন ঘন্টা যাবৎ বৃষ্টি তে ভিজলে যেমন টা হয় আরকি। কিশোরীর কান্না থেমে আসলো। তবে কেঁপে কেঁপে উঠছে এখনো। হুট্ করে ছাদের ফ্লোরে শুয়ে পড়লো। অজ্ঞান হয়ে গেছে, হুস নেই তার আর কোন।

পাঁচটা দশ। এমন সময় জিহান নিশানের রুমে আসলো। রুমের অবস্থা দেখে তার ভ্রু কুঁচকে গেলো। তার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। পকেট থেকে ফোন বাহির করে রাত্রি কে কল লাগালো। রাত্রি কল ধরতেই জিহান বললো,,
“নিশানের রুমে দুটো স্টাফ পাঠিয়ে দে।কুইক।”
বলে জিহান কল কেটে দিলো। সে রুমে ঢুকে নিশান কে খুঁজতে লাগলো। ওয়াশরুম এ গেলো নেই। বেলকুনিতে যেতেই চোখে পড়লো নিশান কে দাঁড়িয়ে আছে বেলকুনির এক পাশে। ডান হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে রক্ত শুকিয়ে গেছে। তবুও যেন সতেজ দেখাচ্ছে। জিহান রুমে ঢুকে ফার্স্ট এইড বক্স টা আনলো। নিশানের কাছে গেলো। নিশানের ডান হাত টেনে নিজের কাছে নিলো। নিশান অনুভূতিহীন, না কিছু বলছে? না ব্যাথা প্রকাশ করছে? না তাকিয়ে দেখছে কে এসেছে? জিহান নিশানের হাতে বেঁধে যাওয়া কাঁচের টুকরো গুলো তুলে ফেললো। তারপর সেভলন আর তুলো দিয়ে হাত পরিষ্কার করলো। এন্টিসেপতিক মলম লাগিয়ে। সেই জায়গা টা ব্যান্ডেজ করে দিলো। জিহান গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স টা রেখে আসলো। নিশানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“সমস্যা কি তোর? এইভাবে ক্ষতবিক্ষত করিস কেন নিজেকে?”
নিশান এখনো চুপ। সিগারেট টানছে এখনো। জিহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,
“দেখ প্রতিদিন তোর এই নাটক আমার দেখতে ইচ্ছা করছে না।”
নিশান এইবার গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,
“নাটক তো করে তোর মামা মামীরা, তাঁদের নাটক থামাতে বল।”
জিহান — “ওরা নাটক করেছে, মানলাম তুই তো জবাব ও দিয়েছিস? তাহলে এইসব ভাঙচুর করলি কেন?”
নিশান — “পার্সোনাল কিছু শোনার রাইট আমি তোকে দেই নি।”
জিহান চোখ ছোট ছোট করে বললো,,

“না দিলেও আমি রাইট বানিয়ে নিসি, সমস্যা কি তোর বল?”
নিশান — “সমস্যা আমার কখনো ছিলো না, যা সমস্যা সব তোর বোনের।”
জিহান — “কি করেছে সিমি?”
নিশান রাগে কটমট করতে করতে বললো,,
“বাল করেছে, স্বামীর আদর কোনটা বোজে না! বাল সব।”
জিহান একটু কেশে বললো,,
“সিমি কে সময় দে, ও এখনো এইসব মানতে পারে নি। আর ও তো এখনো ছোট…!”
জিহান কে বাকি কথা বলতে না দিয়ে নিশান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
“ছোট না বাল, দেখ আমার মাথা গরম করিস না বেড়িয়ে যা।”
জিহান বিরক্তি কণ্ঠে বললো,,

“কথাই কথাই বাল বাল করিস কেন? ”
নিশান — “Favorite word.. সেইজন্য তুই এখন বেড়িয়ে যা।”
জিহান — “যাচ্ছি যাচ্ছি তার আগে বল সিমি কই?”
নিশান — “আছে হয়তো নিজের রুমে খুঁজে নে।”
জিহান — “নেই ওর রুমে, রাত্রি কেউ জিজ্ঞাসা করলাম গত তিন ঘন্টা যাবৎ ওর সাথে দেখা হয় নি কারোর। তোর কাছে আছে।”
নিশান জিহানের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
“বড়ো বড়ো বাঁশ আছে আমার কাছে নিবি?”
জিহান বিরক্ত কণ্ঠে আবারো বললো,,
“নিশান stop joke.. আমি সিরিয়াস সিমি কোথায়?”

নিশান — “আমি জানিনা।”
জিহান — “জানিস না তো খোঁজ কোথায়?”
নিশান — “ফালতু সময় আমার নেই।”
জিহান একটা হতাশার শ্বাস ফেলে বললো,,
“তাইতো ও তোর কেই বা হয়? মরুক মরলে বেঁচে যাবে, অন্তত তোর হাত থেকে?”
জিহানের এই কথা শুনে নিশান জিহানের কলার টেনে ধরে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,,
“জিহান মুখের কথা মুখে ফিরিয়ে নে, নয়তো তোর মুখ আমি ভেঙে ফেলবো।”
জিহান — “আমার মুখ পরে ভেঙে দিস, এখন সিমি কে খোঁজ।”
নিশান হাতে থাকা সিগারেট এ শেষ টান দিয়ে সেইটা ফেলে দিলো। রুমে গিয়ে বেড থেকে শার্ট টা তুলে গায়ে জড়িয়ে বোতাম লাগাতে লাগাতে রুমের বাইরে গেলো। প্রথমে সে সিমির রুমে গেলো না কোন জায়গায় নেই। জারা দের রুমে গেলো নেই কোন জায়গায়। একে একে সব রুম খুঁজলো। নিচে গেলো সেখানেও ড্রইং রুম, কিচেন সব জায়গা খুঁজলো কিন্তূ পেলো না। সদর দরজা হয়ে বাইরে বেরোলো তাও পেলো না। নিশান রাগে কটমট করতে করতে বললো,,

“বেয়াদব মেয়ে একটা কোথায় আছে ধুর।”
নিশান এইবার সিঁড়ি বেয়ে ছাদের দিকে গেলো। ছাদের কাছে এসে দেখলো ছাদের দরজা খোলা, কুঁচকানো ভ্রু জোড়া যেন আরো বেশি কুঁচকে গেলো। সে দ্রুত পায়ে ছাদে গেলো। ছাদে যেতেই দৃশ্যমান হলো, সাদা জাম পরাহিতা এক কিশোরী। নিশানের বুকের ভিতরে যেন কেমন অসহ্য জ্বালা যন্ত্রনা হয়ে উঠলো। সে ধীরে পায়ে কিশোরী টির দিকে এগিয়ে গেলো। কিশোরী টির মুখে চুল আছে মুখ দেখা যাচ্ছে না। নিশান নিচু হলো কাঁপা হাতে কিশোরীর মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরাতেই। বুকের ভিতরে যেন কেউ হাতুড়ি পিটিয়ে দিচ্ছে এমন হলো। চোখ দুটো জ্বালা করছে, কষ্ট হচ্ছে। নিশান দ্রুত কিশোরী টিকে নিজের কোলে মাথা নিলো। গালে চাপর দিয়ে বললো,,
“ইশু ইশু ওঠ, এই ইশু ওঠ।”

কিন্তূ সিমির কোন সারা শব্দ নেই। ফর্সা গায়ের রং ক্রমশ যেন নীল হয়ে আসছে। নিশান দ্রুত উঠে দাঁড়ালো সিমি কে কোলে নিলো। বরফের মতো ঠান্ডা সিমির শরীর। সে দ্রুত পায়ে সিমি কে নিয়ে নিজের রুমে আসলো। এসে সিমি কে বেডে শুয়ে দিয়ে নিজের ফোন বাহির করে জিহান কে কল লাগালো। জিহান কল রিসিভ করতেই নিশান বললো,,
“দ্রুত তুই মহিলা ডাক্তার নিয়ে আমার রুমে আয় first…!”

বলেই নিশান কল কেটে ফোন চেলে দিলো বেডে। সিমির পোশাক ভিজে এই অবস্থায় তাকে রাখা যাবে না। কি করবে তাহলে সে?নিশান কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে। রুমের দরজা লক করে দিলো। কাভার্ড থেকে সিমির জন্য পোশাক বাহির করলো। সাথে সিমির আলাদা একটা উড়না। নিশান সিমির কাছে আসলো। উড়না টা চোখে বেঁধে। সিমির ভিজে কাপড় খুলে শুকনো কাপড় পরিধান করালো। সিমি কে আবারো কোলে নিয়ে সোফায় শুয়ে দিলো। ভিজে বিছানার চাদর তুলে ফেলে দিলো। ব্লাঙ্কেট বেডে বিছিয়ে সিমি কে আবারো কোলে নিয়ে বেডে শুয়ে দিলো। তারপর কাভার্ড থেকে আরো একটা ব্লাঙ্কেট এনে সিমির গায়ে জড়িয়ে দিলো। ভিজে চুলগুলো টাওয়াল দিয়ে সুন্দর করে মুছে দিলো। এর মধ্যে জিহান ডাক্তার নিয়ে রুমে আসলো। ডাক্তার কে দেখে বাড়ির সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লো হুট্ করে ডাক্তার কেন আসলো। সবাই জিহানের সাথে গেলো। নিশানের রুমে ঢুকতে দেখে বাড়ির সকলের মনে ভয় ঢুকে গেলো। সিমি কে নিয়ে, ডাক্তার রুমে ঢুকলো নিশান সিমির বাম পাশে বসে আছে সিমির হাত নিজের হাতের ভিতরে নিয়ে। ডাক্তার এসে ডান পাশে বসলো। বাড়ির সকলে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সিমির নিস্তেজ শরীর বেডে দেখে আঁতকে উঠলো। রোজিনা নিজেকে সামলাতে না পেরে ভিতরে ঢুকতে গেলেই নিশানের গম্ভীর আওয়াজ আসলো,,

“উহুম শাশুড়ি আম্মা যেইখানে আছেন, সেখানে থাকেন। ভিতরে আসলে আমি ইশু কে নিয়ে এক্ষুনি বেড়িয়ে যাবো এই বাড়ি থেকে।”
সালাউদ্দিন রোজিনার হাত চেপে ধরলো। রোজিনা মুখ বুজে কান্না করতে লাগলো। এইদিকে ডাক্তার সিমি কে চেক করলো গায়ের তাপ মাত্রা প্রচুর। ডাক্তার নিজেই আতঙ্কিত হয়ে নিশান কে বললো,,
“রুগীর এমন অবস্থা কেন?”
ডাক্তার এর এমন কথা যেন নিশানের রাগে ঘি ঢেলে দিচ্ছে সে দাঁতে দাঁত চেপে ডাক্তার কে বললো,,
“রুগীর কি হয়েছে? ডাক্তার হয়েও জানেন না, আমাকে জিগান? কোন বালে আপানকে ডাক্তারি পদবি দিয়েছে?”
ডাক্তারি থতমত খেয়ে গেলো। নিজেকে ঠিক করে বললো,,
“এইখানে ডাক্তারীর প্রশ্ন না, রুগীর কি হয়েছে? আমাকে বলতে হবে খুলে? রুগীর টেম্পারেচার অনেক, ভিজেছে মনে হয় অনেক?”

নিশান একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো,,
“বৃষ্টি তে ভিজেছে, টানা তিন ঘন্টা।”
বাড়ির সকলে অবাক হলো তবে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। নিশান যদি সিমি কে নিয়ে চলে যাই। ডাক্তার আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না, নিজের জিনিষ থেকে ইনজেকশন বাহির করলো সেইটাতে ওষুধ ঢুকিয়ে সিমির ডান হাতের বাহু তে দিতে গেলেই বাঁধা দেই নিশান চিৎকার দিয়ে বললো,,
“আরে কি বালের ডাক্তার সব. কোন কিছু হলেই ইনজেকশন মারাই? এই ইনজেকশন এ ব্যাথা লাগে না নাকি? যতসব আজাইরা পাবলিক।”
বাড়ির সকলে কপাল চাপড়াচ্ছে। ডাক্তার নিশান কে বোজাতে বললো,,

“দেখো এই ইনজেকশন দেওয়ার কারণ আছে, আমি যদি শুধু মেডিসিন দেই, তাহলে রোগী সুস্থ হতে সময় নেবে। আর ইনজেকশন দিলে রোগী দ্রুত সুস্থ হবে। তাই এইটা দেওয়া বেটার।”
নিশান আর কিছু বললো না। ডাক্তার নিশানের চুপ তাকে সম্মতি ধরে ইনজেকশন দিলো। কিছু ওষুধ লিখে দিলো। সেইটা জিহানের হাতে দিলো। জিহান ডাক্তার কে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। নিশান সিমির মুখের দিকে তাকিয়ে বাড়ির সকলের উদ্দেশ্য বললো,,

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১০

“আমার প্রাইভেসি লাগবে, বউকে জ্ঞান এ ফেরানোর জন্য চুমু খাওয়া লাগবে। যদি দেখতে চাও থেকে যাও। আর না চাইলে প্রাইভেসি দাও।”
নিশানের কথা শুনে ছিঃ ছিঃ করছে। এই ছেলের মুখে লাগাম নেই। সবাই চলে গেলো। নিশান উঠে গিয়ে দরজা টা বন্ধ করে দিলো।

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১২