তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২০

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২০
তাবাস্সুম খাতুন

চারিদিকে আঁধার নেমে আসছে। বাড়ির প্রতিটা মানুষ সেই লালাখাল নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে। দুই পাঁচটা স্থানীয় লোকদের ডাকা হয়েছে কিন্তূ তারা কোন উপকার করতে পারলো না। রোজিনা কান্না করতে করতে একবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। সে যেতে চাই বোনের দিকে কিন্তূ সবাই তাকে ধরে আছে। কি করবে কিছু বুজতে পারছেনা। জারা বললো,,,
“আমি ভাইয়া কে ফোন দিয়েছি ভাইয়া বকছে অনেক, তারপর ফোন কেটে দিলো, পরে আর ফোনে পেলাম না হয়তো আসছে।”
তাজউদ্দিন ধমক দিয়ে বললো,,
“সে কোন দেশ থেকে আসবে কখন আর ততক্ষন সিমি ঐখানে থাকবে?”
জারা আর কিছু বললো না চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।

সিমি চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে গলা ভেঙে গেসে। পানি পিপাসা লাগছে পানি নেই কোথাও। বড্ড ভয় লাগছে তার একদম অন্ধকার তিমিরে ঢাকা অন্ধকার জঙ্গল। সিমির চোখে এখনো পানি সে কিছু দেখতেও পারছেনা। তখনি কানে শুনতে পেলো শেয়ালের ডাক। ভয়ে কেঁপে উঠলো সিমি। শুকনো পাতার খচখচ শব্দ হচ্ছে। বন্য কুকুর গুলো ডাকছে হিংস্র ভাবে। কি ভয়ানক শোনাচ্ছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক ও যেন আজকে ভয়ঙ্কর শব্দ তুলছে। সিমি মুখে হাত চেপে কান্না করছে মনে হচ্ছে কেউ যেন তার দিকে এগিয়ে আসছে ও পিছাতে লাগলো পিছাতে পিছাতে পাথর বেঁধে পরে গেলো। সাথে সাথে সিমির ডান হাতের বাহু কেটে গেলো অনেক খানি। কোমরে ব্যাথা পেলো। ডান হাত থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছে।সিমি বহু কষ্টে উঠে দাঁড়ালো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শেয়ালের ডাক যেন আরো কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে সিমি দিক বেদিক ভুলে অন্ধকার জঙ্গলের ভিতরেই দৌড় দিলো। দৌড় দিতে দিতে পা পিছলে খাদে পরে গেলো। খাদ টা বেশি গভীর না হওয়ায় সিমির তেমন ক্ষতি হয় নি তবে হাত পা ছিলে গেছে। সিমি পা টিপে টিপে হাঁটতে লাগলো। ভয় করছে তার কোথায় যাচ্ছে কিচ্ছু জানে না একটা ফোন থাকলে তাও একটু ভালো হতো। বড়ো আম্মু তো ফোন নিয়ে চলে গেছে। সিমি আরো কিছুদূর এগিয়ে গেলো দেখলো কিছু জোনাকি পোকা দূরে আছে মিটিমিটি করে আলো দিচ্ছে। সিমি সেই দিশা ধরে গেলো। সেখানে গিয়ে জোনাকি দের থেকে পাওয়া আলোতে সে দেখলো এই তিমিরে ঢাকা অন্ধকার ভয়ঙ্কর জঙ্গল ভীষণ ভয় লাগছে তার। সিমি ওই জায়গায় বসলো। হাঁটু তে মুখ গুঁজে কান্না করতে করতে বললো,,,
“আমাকে এইখান থেকে কেউ নিয়ে যাও আমার ভয় করছে খুব। আমি সয্য করতে পারছিনা, আমার কষ্ট হচ্ছে তো। কেউ নেই আসো না আমাকে নিয়ে যাও আমি পারছিনা তো।”
সিমির কান্নার বেগ বাড়ছে আকাশের পানে তাকিয়ে বললো,,

“ও আল্লাহ তুমি কাউকে পাঠাও না আমাকে সেভ করার জন্য। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, তুমি তো সবকিছু দেখতে পারছো পাঠিয়ে দাও না কাউকে।নিশান ভাই আমাকে মারে শুধু মারে কষ্ট দেই। আর আজকে পুরো পরিবারের মানুষ আমাকে কষ্ট দিচ্ছে কেউ আমাকে ভালোবাসে না কেউ খুঁজছে না কেন আমাকে? আমি কি তাদের কেউ না।”
সিমি মুখ গুঁজে কান্না করতে লাগলো। তখনি আবারো শেয়াল দেখে উঠলো। সিমি ঐভাবে বসে থেকেই পিছাতে লাগলো। পিছাতে পিছাতে কিছুর সাথে বাঁধা গ্রস্ত হলো। সিমি হাত দিয়ে হাতড়িয়ে দেখলো ছোট্ট মতো ঢুকার জায়গা। সিমি হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে তার ভিতরে ঢুকলো।

সেখানে ঢুকে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে দেখলো খানিক টা বড়ো বড়ো পাথর। সিমি সেগুলো তুললো আর যেই ছোট্ট জায়গা দিয়ে সে প্রবেশ করেছে সেখানে দিলো। যেন নিজেকে সেভ করছে হিংস্র পশুদের থেকে। অনেকগুলো পাথর দেওয়ার পরে সিমি হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে জায়গা টা কেমন? বেশি একটা বড়ো না একজন মানুষ এর ভিতরে বসতে পারবে ভালো ভাবে সেইরকম একটা জায়গা। গুহা টাইপের। সিমি ঐখানে বসে রইলো তার ডান হাতের বাহু থেকে রক্ত পড়ছে এখন যন্ত্রনা করছে সিমি তার হিজাব খুলে বাম হাতের সাহায্য নিয়ে আর মুখ দিয়ে ডান হাতের বাহু তে উড়না বাঁধলো। এইদিকে ছিলে যাওয়া হাত পা জ্বলছে সিমি থু থু নিয়ে দিলো সেই জায়গা গুলো তে। নীরবে কান্না করছে সকালের অপেক্ষা তে আছে। দিনের আলোয় যদি বাইরে বেরোনোর পথ সে পাই। এমতা অবস্থায় কেন জানি তার বারবার নিশানের মুখ টা সামনে আসছে শুধু মনে হচ্ছে নিশান যদি তার কাছে থাকতো, তাহলে সে এই বিপদে পড়তো না। সিমি হাঁটুতে মুখ গুঁজে নীরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।

রাত দুটো বেজে ত্রিশ মিনিট হতেই ইতালি থেকে আসা প্লেন বাংলাদেশে ল্যান্ড করলো। নিশান দ্রুত নেমে পড়লো সাথে জিহান ও। তারা সবকিছু দ্রুত করে বেড়িয়ে গেলো। বাইরে আসতেই গাড়ি দেখলো তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এইগুলো সব জিহান ঠিক করে রেখেছে।নিশান আর জিহান উঠে বসতেই এয়ারপোর্ট থেকে একটু দূরে ফাঁকা মাঠে এসে থামলো। যেইখানে আছে পাঁচটা হেলিকোপটার। নিশান দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে একটা হেলিকোপটার এ উঠে বসলো নিশান উঠতেই হেলিকোপটার উড়াল দিলো। এইদিকে জিহান গিয়ে আরেকটাতে বসলো।

সেইটাও উড়াল দিলো সাথে সাথে আরো তিনটা হেলিকোপটার ও উড়াল দিলো। উদ্দেশ্য সিলেটের লালাখান নদীর জঙ্গলে। নিশান এর শরীর কাঁপছে, ভয় লাগছে শুধু তার ইশুর জন্য। ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। চোখ বন্ধ করে নিজেকে কন্ট্রোল করছে। এইদিকে জিহান ফোন নিয়ে একের পর এক জনকে কল দিয়ে যাচ্ছে। সব দরকারি লোকদের দিচ্ছে। সাড়ে তিনটা বাজতেই পরপর পাঁচটা হেলিকোপটার ঘিরে ফেললো লালাখাল নদীর জঙ্গল কে। হেলিকোপটার এর সাথে সাথে সেখানে উপস্থিত হলো একশো জন বডিগার্ড যাদের সাথে আছে পঞ্চাশ টা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর। আর এলাকার স্থানীয় পঞ্চাশ জন লোক। পুরো চৌধুরী ফ্যামিলি এইসব দেখে অবাক। জারা হাসি দিয়ে বললো,,,
“বলেছিলাম ভাইয়া আসবে, দেখেছো আমাদের সিমি কে আনতে আমার ভাইয়া আসছে।”

কেউ কোন কথা বললো না শুধু দেখতে লাগলো। বডিগার্ড সহ স্থানীয় লোকজন মিলে জঙ্গল ঘিরে ফেললো আলোকিত হয়ে গেলো পুরো জঙ্গল। উপরে উড়তে থাকা হেলিকোপটার গুলো হাল্কা নিচে নেমে আসলো খুঁজতে লাগলো। কুকুর গুলো কে সিমির উড়নার ঘ্রান শুকিয়ে দিয়েছে তারা এইদিকে ঐদিকে দৌড়ে ডাকছে আর খুজছে। এত কুকুরের শব্দ যেন সিমি ভয়ে আরো অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছে গটশট হয়ে আসলো আরো বেশি। হেলিকোপটার এর আওয়াজ সবকিছু তার কাছে ভয়ঙ্কর লাগছে। সবার লাইট এর আলোতে জঙ্গল প্রায় আলোকিত দেখতে পেলো সিমির রক্ত। যা তার হাত কেটে বাহির হয়েছিল আশেপাশে খুঁজতে লাগলো। সব জায়গায়। এইভাবেই টানা ত্রিশ মিনিট কেটে গেলো চারটা বেজে গেছে একটু পরেই ভোরের আলো ফুটবে।

নিশান হেলিকোপটার থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামলো কুকুর গুলো ঘেউ ঘেউ করছে যেইদিকে সিমি পরে গেছিলো যেই খাদে সেখানে দাঁড়িয়েই। নিশান একটা টচ নিলো ধীরে ধীরে নিচে নামলো। সবাই ওপরে দাঁড়িয়ে আছে এইদিকে কুকুর গুলো ঘেউ ঘেউ করেই যাচ্ছে। নিশান লাইট মেরে জায়গা টা দেখলো সে এগিয়ে গেলো কিছু দূরে সিমি যেইখানে লুকিয়ে আছে ঠিক তার কাছাকাছি চলে আসছে নিশান। নিশান এইদিকে ওইদিকে লাইট মারছে। এইদিকে গুহার মধ্যে থাকা সিমি হাঁটুতে মুখ গুঁজে আছে কিন্তূ তখনি কানে সাপের ফেনা তোলার আওয়াজ পেলো। সিমির যেন কথা আটকে গেছে, কথা বেরোচ্ছে না মুখ দিয়ে। হাত পা ও যেন চলছে না তবুও হাত দিয়ে খুঁজে পাথর গুলো সরালো আস্তে আস্তে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো।

কুকুর শেয়ালের হাতে পড়লে দৌড়ে বাঁচা যাবে সাপ থাকলে জায়গায় মরতে হবে সেইটা ভেবেই সিমি বেড়িয়ে আসলো। উঠে দাঁড়ালো। একটু জোরেই হাঁটা ধরলো। তখনি তার চোখে আলো মারলো কেউ সিমি হাত দিয়ে নিজের চোখ ঢাকলো একটু ফাঁকা করে তাকানোর চেষ্টা করলো দেখতেও পেলো অতি পরিচিত মানুষ নিশান। নিশান কে পেয়ে সিমি আর দাঁড়ালো না দ্রুত দৌড়ে লাফ দিয়ে নিশান এর গলা জড়িয়ে ধরলো। নিশান নিজের ব্যালেন্স রাখতে পারছিলো না সিমির কোমরে হাত রেখে নিজের ব্যালেন্স আনলো।নিশান সিমির দিকে য্খন লাইট মারলো দেখলো সিমির বেহাল দশা। ময়লা কাপড় মাথায় কাপড় নেই উড়না টা একপাশে যেমন তেমন ঝুলে আছে। চুল গুলো খুলে যাওয়ার পর্যায়। এইদিকে সিমি নিশানের গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে কান্না করতে করতে বললো,,,

“কোথায় ছিলেন আপনি? এত কেন দেরি করলেন? আমার একা ভয় করছিলো, শেয়াল ডাকছে কুকুর ডাকছে ঐদিকে সাপ আমার অনেক ভয় লাগছে। আপনি আগে আসেন নি কেন আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। আমার কষ্ট হচ্ছে খুব।”
নিশান সিমির মাথায় হাত বুলিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে বললো,,,
“রিলাক্স জানবাচ্চা রিলাক্স আমি এইখানেই আছি,কিচ্ছু হয় নি তোর কিচ্ছু হয় নি। আমি আছি তো।”
সিমি ফুফাতে ফুফাতে বললো,,,
“আমার আমার ভয় করছে খুব। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। আমার ভালো লাগছে না কষ্ট হচ্ছে খুব।”
নিশান সিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,,,

“কিচ্ছু হবে না জানবাচ্চা আমি আছি তো। কোন কষ্ট হবে বা এইবার আমি ধরেছি শক্ত করে।”
নিশান অপেক্ষা করলো সিমির উত্তরের কিন্তূ কোন উত্তর পেলো না। সিমির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো সেন্স নেই। নিশান সিমি কে পাঁজা কোলে করে নিলো। সেখানে হেলিকোপটার নামলো। নিশান সিমি কে কোলে নিয়েই হাসপাতালের দিকে রওনা দিলো। এইদিকে জিহান তার বাড়ির মানুষের কাছে গেলো। সবাইকে বললো,,,
“সিমি কে পাওয়া গেছে, এখন নিশান ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আপাতত নিশান যে কি করবে আমি জানিনা তবে ও কাউকে ছাড়বে না।”
বলে জিহান ও একটা হেলিকোপটার এ উঠে হাসপাতালের দিকে গেলো। বাকি বডিগার্ড মানুষরাও নিজেদের কর্মে ফিরে গেলো।চৌধুরী ফ্যামিলি ও ঢাকার দিকে রওনা দিলো। সবাই খুশি হলেও খুশি হতে পারছেনা মিষ্টি আর সেলিনা। মুখ গোমড়া করে রেখেছে।

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ১৯

নিশান সিমি কে কোলে নিয়ে হাসপাতালে ঢুকলো মহিলা ডাক্তার দেখে সিমির চিকিৎসা করতে বললো সঠিক ভাবে। এর মধ্যে জিহান ও আসলো নিশানের ঘাড়ে হাত রাখলো কিছু বলবে তখনি নিশান জিহান কে উপেক্ষা করে সেই জায়গা ত্যাগ করলো। জিহান জানে ও এখন নিজের বাড়িতে ফিরবে সবকিছু তছনছ করতে। সে যেতে পারবে না তার বোন কে এইভাবে একা ফেলে সে যাবে না। তাই ওইখানেই বসে পড়লো।

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২০ (২)