তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২১
তাবাস্সুম খাতুন
রাত দুইটা পঞ্চাশ নিশান সিমি কে কোলে নিয়ে বাইকের কাছে গেলো। সিমি কে বাইকের সামনে নিয়ে এক হাত দিয়ে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে বাইক স্টার্ট দিলো। বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। সিমি নিভু নিভু চোখে তাকানোর চেষ্টা করছে নিশান কে জড়িয়ে ধরে আছে। গায়ে তেমন শক্তি নেই যেমন তেমন করে ধরে আছে। তিনটা বিশ এর দিকে নিশান চৌধুরী ম্যানশন এ প্রবেশ করলো। সিমি কে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। জিহান আগে থেকে দরজা খুলে রাখছিলো। সে সোফায় বসে ছিলো ড্রইং রুমে। নিশান সিমি কে কোলে নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই জিহান তাড়াতাড়ি নিশানের কাছে আসলো সিমির দিকে তাকিয়ে তারপর নিশানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,,,
“কি হয়েছে ওর?”
নিশান সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে বললো,,,
“যাই হোক তোর সমস্যা কি? নিজের চরকায় তেল দে।”
জিহান দরজা লাগিয়ে দিয়ে দৌড়ে নিশানের কাছাকাছি এসে বললো,,,
“আমার চরকায় আমি নিয়মিত তেল দিচ্ছি but সিমি অমন করে আছে কেন? ওর কি হয়েছে?”
নিশান নিজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে জিহানের দিকে ফিরে বললো,,,
“ফরজ কাজ করতে গিয়ে বেশি টায়ার্ড হয়ে পড়ছে।”
বলে নিশান নিজের রুমে ঢুকে গেলো। এইদিকে জিহান নিশানের কথা শুনে কেশে উঠলো। কাশতে কাশতে নিজের রুমে গিয়ে টি টেবিল থেকে পানির জগ থেকে পানি খেলো বুকে হাত দিয়ে বিড়বিড় করলো,,,
“আর একটুর জন্য হার্ট টা বেড়িয়ে আসে নি। শালা মুখে একটু তো লাগাম রাখতিস ছিঃ।”
জিহান নিজের রুমের দরজা লক করে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো ঘুম লাগছে প্রচুর ওই শালার জন্য সে এখনো ঘুমাতে পারে নি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নিশান সিমি কে কোলে নিয়ে একেবারে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। সিমি এখনো জ্ঞানে আছে। জিহান কে বলা নিশানের কথা যেন তাকে লজ্জা দিচ্ছে ছিঃ এই বিদেশি কুত্তা কি সব বলে। নিশান সিমি কে ঝর্ণার নিচে দাঁড় করিয়ে দিলো। ঠান্ডা পানি সিমির গলায় ঘাড়ে ঠোঁটে পড়তেই জ্বালা করতে লাগলো। চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলো। নিশান বললো,,,
“জ্বালা করছে?”
সিমি মাথা উপর নিচ করলো। নিশান,,
“সমস্যা নেই এন্টিসেপ্তিক মলম লাগিয়ে দিবো।”
বলে নিশান নিজ হাতে সিমি কে গোসল করিয়ে নিজেও গোসল করে বেড়িয়ে আসলো। সিমি একটা টাওয়াল জড়িয়ে আছে। নিশান কাভার্ড থেকে নিজের একটা সাদা শার্ট বাহির করে সিমি কে দিয়ে বললো,,,
“পরে নে এইটা।”
সিমি শার্ট হাতে নিয়ে নিশানের দিকে তাকালো। নিশান ভ্রু কুঁচকে বললো,,
“কি হলো? পড়।”
সিমি মিনমিনে সরে বললো,,
“ইয়ে মানে আপনি ওইদিকে ফেরেন।”
নিশান কুঁচকানো ভ্রু জোড়া নিয়েই বললো,,
“কেন?”
সিমি — “আমি এইটা পড়বো সেইজন্য।”
নিশান বাঁকা হেসে বললো,,,
“তো আমি ফিরে থাকলে সমস্যা কোথায়?”
সিমি মাথা নিচু করে বললো,,,
“উম আমার লজ্জা লাগবে আপনি সরে যান।”
নিশান আর কিছু না বলে বেলকুনিতে চলে গেলো। সিমি নিশানের দেওয়া শার্ট টা পরে নিলো। যেইটা পরে তার যেন আরো বেশি লজ্জা লাগছে। সিমি ধীরে ধীরে বেডে গেলো ব্লাঙ্কেট এর নিচে নিজেকে লুকিয়ে নিলো। দশ মিনিট পরে নিশান রুমে এসে দেখলো সিমি ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে শুয়ে আছে। নিশান একটা টাউজার আর টি শার্ট পরে নিলো। ফার্স্ট এইড বক্স থেকে দুটো ওষুধ আনলো সাথে এন্টিসেপ্তিক মলম। নিশান বেডে বসে সিমি কে তুলে নিজের কোলে বসালো। ওষুধ দুটো তার হাতে দিয়ে পানির গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে বললো,,,
“খেয়ে নে।”
সিমি কিছু না বলে খেয়ে নিলো। নিশান এইবার এন্টিসেপ্তিক মলম সিমির ঘাড়ে গলায় লাগালো সিমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলো জ্বালা করছে তার প্রচুর। নিশান সিমির ঠোঁটেও মলম লাগিয়ে দিলো। তারপর সিমি কে বেডে শুয়ে দিয়ে ব্লাঙ্কেট তার গায়ে জড়িয়ে দিলো। মলম টা টি টেবিলের উপরে রেখে লাইট অফ করে সিমি কে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে বললো,,,
“ঘুমা।”
সিমি নিশানের বুকের উপরে শুয়ে থেকেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো। নিশান ও সিমি কে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।
রাতের আঁধার কেটে ধরণীতে সূর্যের আগমন ঘটলো। নিস্তব্ধ শহরে আবারো গাড়ি ঘোড়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। মানুষ তাঁদের নিজেদের কর্মে যাচ্ছে। কেউ কোথাও থেমে নেই দুই বেলা পেটে কিছু দেওয়ার জন্য মানুষ এইদিক থেকে ওইদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সময়টা সকাল আট টা বেজে দশ মিনিট। চৌধুরী বাড়ির সকলে ঘুম থেকে উঠে গেছে। বাড়ির কর্তা রা নিজেদের বিজনেস এ চলে গেছে। গিন্নিরা বাড়ির টুকিটাকি কাজ করছে। রোজিনা, কিয়া, মেহেরিমা সকলে সেলিনার সাথে কথা বলতে গেলে সে কারোর সাথে হ্যা হুঁ না করে নিজের মতো আছে। তাই তারা আর কিছু বললো না। মিষ্টি নিজেদের বাড়িতে গেছে পরিবারের মানুষের সাথে দেখা করতে। জারা, সামিয়া আর রাত্রি মাত্র একটু হাঁটাহাঁটি করে বাড়ি ফিরলো। তাজ আর মিহু স্কুলে গেলো একটু আগে।
পিহু বেরোবে একটু পরে। জারারা নাস্তা করলো বসে। নাস্তা শেষ হতে তারা উপরে গেলো নিজেদের রুমে। তিহান ও বাড়িতে নেই সে বেড়িয়ে গেছে অনেক সকালে। শুধু দুই রুমের দরজা এখনো খোলা হয় নি। এক জিহানের রুমের আরেকটা নিশানের রুমের। নিশানের যেন আজকে ঘুম ভাঙছে না কতবছর পরে মনে হয় শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। এইদিকে সিমি নিশানের বুকের মাঝে থেকে বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। শীত লাগছে প্রচুর কথা বলতে পারছেনা। চোখের পাতা ভারী খুলতেও পারছেনা। সারা দেহ কাঁপছে ঠোঁট ও কাঁপছে। সিমির এইভাবে কেঁপে ওঠাতে নিশানের ঘুম ভেঙে গেলো সে সিমির দিকে তাকাতে দেখলো সিমি কেঁপে কেঁপে উঠছে তার হাত বুক আগুনের মতো গরম হয়ে গেছে। নিশান দ্রুত উঠে সিমির কপালে হাত দিয়ে দেখলো আগুনের মতো গরম সিমির শরীর।
জ্বর আসছে সেইজন্য এইভাবে কেঁপে কেঁপে উঠছে। নিশান দ্রুত উঠে ওয়াশরুম থেকে ছোট্ট মগ করে পানি আনলো। নিজের রুমাল এনে পানিতে ভিজিয়ে সিমির কপালে জল পট্টি দিতে লাগলো। ব্লাঙ্কেট টা ভালো ভাবে জড়িয়ে দিলো। এসি অফ করে দিলো। সিমি এইবার মুখ দিয়ে ওয়াক ওয়াক শব্দ করতে লাগলো। নিশান সিমি কে তুলে বসালো মুখের কাছে পাত্র দিতে সিমি সেইটা তে বমি করলো। বমি করে সিমি আবারো নেতিয়ে পড়লো।এইভাবে হুট্ করে জ্বর আশা আবার বমি হওয়া যেন নিশানের মনে ভয়ের সৃষ্টি হচ্ছে সে কিছু বুজতে পারছেনা। নিজের ফোন নিয়ে দ্রুত কল মিলালো জিহানের নাম্বারে। তিন চারবার রিং হতে জিহান কল রিসিভ করতেই নিশান বলে উঠলো,,,
“পনেরো মিনিটের ভিতরে একটা মহিলা ডাক্তার নিয়ে আমার রুমে আয়। আগ পিছে হলে কিন্তূ খুব খারাপ হয়ে যাবে ফার্স্ট।”
বলে নিশান কল কেটে দিলো। এইদিকে জিহান ফোনের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে উঠে পড়লো যেমন তেমন করে ফ্রেশ হয়ে যেই অবস্থা তে ছিলো সেই অবস্থা তে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। নিশানের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই জিহান ডাক্তার নিয়ে হাজির হলো।নিশানের রুমে এসে নক করতে নিশান দরজা খুলে দিলো। জিহান কে বাইরে দাঁড় করিয়ে ডাক্তার কে ভিতরে ঢুকতে দিলো।ডাক্তার বেডে বসে সিমি কে চেক আপ করতে লাগলো। নিশান গম্ভীর মুখ নিয়ে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে সিমির কোন হুস নেই। কেঁপে কেঁপে উঠছে। ডাক্তার পুরো পাঁচ মিনিট ধরে ভালো ভাবে চেক আপ করে নিশান কে প্রশ্ন করলো,,,
“ওনাকে কি ওষুধ দিয়েছিলেন? মিস্টার চৌধুরী।”
নিশান গম্ভীর মুখে বললো,,,
“ডাক্তার রুগী দেখে রোগ নিরাময় করে ওষুধ দিবেন পার্সোনাল লাইফে এন্ট্রি নিবেন না।”
ডাক্তার ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
“ডাক্তার আমি আপনি না, আমি ডাক্তার নিয়ে পড়াশোনা করছি আপনি না। রুগীর জ্বর আসছে। এইটা আমি জানি আমি তো চাইলে শুধু জ্বরের মেডিসিন দিয়েই কেটে পড়তে পারি। কিন্তূ আমার কর্তব্য রুগী কে ভালো চিকিৎসা দেওয়া। রুগীর জ্বর আসছে আসতেই পারে কিন্তূ আপনি ওকে ওষুধ দিয়েছেন আমি ধরতে পারছি। তাই তেড়ামো না করে বলেন কষ্ট রুগীর হচ্ছে আমার কিন্তূ কিচ্ছু না।”
ডাক্তারের কথা শুনে নিশান রাগে তিরতির করতে লাগলো নিজের রাগ সংবরং করে বললো,,,
“বার্থ কন্ট্রোল মেডিসিন দিয়েছিলাম শেষ রাতে।”
ডাক্তার — “এই বার্থ কন্ট্রোল মেডিসিন টা রুগীর দেহের সাথে ম্যাচ খাচ্ছে না। সেইজন্য জ্বর আসছে। May be বমি করছে হয়তো?”
নিশান মাথা নাড়লো ডাক্তার আবারো বলা শুরু করলো,,,
“এইটা রুগীর জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে আরো বেশি। তাই আশা রাখি দ্বিতীয়বার তাকে এই মেডিসিন দিবেন না। আর রুগী দুর্বল হয়ে আছে আমি সেলাইন দিচ্ছি সেখানে জ্বরের এন্টিবায়োটিক ও দিচ্ছি বিকালের ভিতরে সে সুস্থ হয়ে যাবে।”
বলে ডাক্তার সেলাইন টাঙিয়ে ক্যানেলা সিমির বাম হাতের শিরায় ঢুকিয়ে দিলো। সাথে কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে নিশানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,,,
“এই মেডিসিন গুলো খাইয়ে দিবেন। আর কোনোদিন ওই মেডিসিন দিবেন না।”
বলে ডাক্তার চলে গেলো। জিহান গিয়ে আবারো তাকে রেখে আসলো। নিশান সিমির পাশে বসলো সিমির মুখে হাত দিলো। কপালে গভীর চুমু একে দিয়ে বললো,,,
“আমি দ্রুত ফিরবো। এসে যদি দেখি বাঁদরামো করছিস তাহলে আজকের শাস্তি টা একটু অন্যরকম হবে।”
বলে নিশান ওয়াশরুম এ ঢুকে গেলো। সাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসলো। বাইরে এসে ফর্মাল ড্রেস পরে। রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। জিহানের সাথে দেখা হতেই নিশান বললো,,,
“অফিসে আয় দ্রুত।”
বলে নিশান সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো। ড্রইং রুমে জারা দের বসে থাকতে দেখে নিশান জারা কে উদ্দেশ্য করে বললো,,,
“রুমে ইশু আছে ওকে দেখে রাখিস। ওর কিছু হলে কিন্তূ তোকেও ছাড়বো না জারা।”
বলে নিশান বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে। সামিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,,
“শালী রুমে কি করছে রে?”
রাত্রি — “চল দেখে আসি।”
বলে তিনজন উঠে দাঁড়ালো। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে সামিয়া দুঃখ ভরা মন নিয়ে গাইতে শুরু করলো,,,
“ঘটক বুজি আমার বাড়ির রাস্তা চেনে না…
ও সে পান খায়া মুখ লাল করিয়া…
কালো ছাতা মাথায় দিয়া কত বিয়ার খবর আনে…
আমার খবর আনে না…..!”
সামিয়ার গান থামতেই জিহান বলে উঠলো,,,
“আপনার মতো ক্যারক্যারানীকে ঘটক দেখতে পাই নি। Its ok আমি হেল্প করে দিচ্ছি বিয়ের প্রস্তাব এইবার দিনে দশটা করে আসবে। একটা বিয়ে করে ফেলেন।”
বলে জিহান আর না দাঁড়িয়ে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে। এইদিকে সামিয়া জিহানের কথা শুনে হা হয়ে গেলো রাত্রি কে বললো,,,
“কিরে রাতের নেশা তোর ওই ভাই কোথা থেকে আমার গান শুনলো?”
রাত্রি — “তুই যা জোরে গাচ্ছিস বাথরুম সিঙ্গার তোর গলা রুমে গিয়ে ভাইয়া কে নক করছে তাই বাহির হয়েছে।”
সামিয়া চোখ ছোট ছোট করে জিহানের যাবার পানে তাকিয়ে বললো,,
“উমম আসছে আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে শালা জবেদার ভাতার দেখিস আমি কালকের মধ্যেই একটা জবেদা কে ধরে আনবো। যদি নাও পাই তবে এক বুড়ির নাম জবেদা বানিয়ে নিয়ে এসে তোর সাথে বিয়ে দেবো
হুউউউ।”
জারা হাসি থামিয়ে বললো,,,
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২০ (৩)
“হয়েছে হয়েছে চল ঐদিকে আমার ভাবিজানের কি অবস্থা দেখে আসি।”
বলে ওরা তিনজন নিশানের রুমে ঢুকলো সিমি কে সেলাইন দিচ্ছে ব্যাপার টা দেখে তারা ঘাবড়ে গেলো নিশান ভাই কি আবারো সিমি কে মারছে? নাকি অন্য কারণ। এখন সিমি অজ্ঞান হয়ে আছে জ্ঞান ফিরলে জিজ্ঞাসা করা যাবে। তাই ওরা তিনজন ল্যাপটপ নিয়ে এসে বেডের এক পাশে তিনজন একসাথে বসে মুভি দেখতে লাগলো। আর সিমি রে পাহারা দিতে লাগলো।