তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৬

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৬
তাবাস্সুম খাতুন

নিশান আর জিহান ড্রইং রুমে এসে বসলো। নিশান গম্ভীর কণ্ঠে জিহান কে বললো,,
“এইভাবে বউ এর আঁচলের তলে না থেকে। বিজনেস এ মনোযোগ দিতে হবে।”
নিশানের কথা শুনে জিহান চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,,
“বিয়ে করলাম সকালে। তো বউ এর আঁচলের নিচে কখন থাকলাম ভাই? বরং তুই তো নিজেই বিয়ে করে বউ এর আঁচলে নিজের হাত বেঁধেছিস।”
নিশান বিরক্তি কণ্ঠে বললো,,,
“ঐগুলো প্রাইভেসি হাত বাঁধা না।”
জিহান একটু অসহায় মুখ করে বললো,,,

“হ্যা প্রাইভেসি শুধু তোর দাঁড়ায় সম্ভব। আর আমার বউ কে একটু চুমু খেতে গেলেই আমার ঠোঁটে এলার্জি হয়!”
নিশান উঠে দাঁড়ালো সদর দরজা দিয়ে বাইরে যেতে যেতে বললো,,,
“ডাক্তার এর কাছে যা। নয়তো বাপ ডাক ও শুনতে পারবি না কখনো।”
নিশানের পিছু পিছু জিহান ও যাই। বললো,,,
“হোপ শালা কি বলছিস এইসব? ”
নিশান কিছু বললো না চুপচাপ নিজের গাড়িতে উঠে বসলো। জিহান ও বসলো। নিশান গাড়ি স্টার্ট দিলো। জিহান ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমরা যাচ্ছি কোথায়?”
নিশান স্টেয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,,,
“তোকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে।”
জিহান ভেবাচ্যাকা খেয়ে বললো,,,
“Why? আমি বাপ ডাক শুনতে পারবো। এমন করিস না। মান ইজ্জত সব শেষ হয়ে যাবে।”
নিশান ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“তোর ইজ্জত আছে?”
জিহান — “না থাকার কি আছে?”
নিশান — “থাকার ই বা কি আছে?”
জিহান — “বাল সত্যি বলছি আমি। এইসব ডাক্তার এর কাছে আমি যাবোনা।”
নিশান এইবার বিরক্তি কণ্ঠে বললো,,
“শালা চুপ কর। নয়তো ধাক্কা মেরে ফেলে দেবো।”

জিহান নিশানের দিকে মুখ ভাঙিয়ে অন্য দিকে ঘুরে বসলো। নিশান ভ্রু কুঁচকে বললো,,
“মেয়ে মানুষ হয়েছিস? যে এইভাবে মুখ ভাঙাস।”
জিহান — “তুই বেশি না বকে গাড়ি চালা।”
নিশান গাড়ি চালাতে চালাতে বললো,,,
“শোন মেয়ে জাতি অভিনয়ে সেরা।সামান্য ঠোঁট লাগাই কেউ অজ্ঞান হয়ে যাই, তোর গোবর মাথায় এইসব ছাড়া আর কিছু আসে না।”
নিশানের কথা শুনে জিহান নিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,,
“মানে?”
নিশান — “খুবই সিম্পল। সামিয়া তোর থেকে দূরে থাকছে তোর সন্নিকটে আসতে চাই না তাই অজ্ঞান হওয়ার নাটক করছে।”

নিশানের কথা শুনে জিহান অবাক হয়ে বললো,,,
“কিহহ তুই কিভাবে জানলি?”
নিশান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“তোর মতো গোবর নেই মাথায়। যথেষ্ট ব্রেন আছে।”
জিহান দুঃখ প্রকাশ করে বললো,,,
“মিস ক্যারক্যারানি আমাকে এইভাবে ধোঁকা দেবে বুজতে পারি নি। ইসসস আমার সাধের ২৯ বছরের পুষে রাখা চুমু তাও খেতে পারলাম না। দস্ত সমবেদনা জানা আমাকে। একশো বালতি না না এক পুকুর পানি দিয়ে আমাকে ঠান্ডা কর।”
নিশান — “সামনে নদী আছে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবো। টেনশন নিস্ না।”
জিহান চোখ ছোট ছোট করে বললো,,,
“আমাকে মারার প্ল্যান করছিস কেন ভাই? তোর বিয়ে বাসর সব শেষ। আর আমার মাত্র বিয়ে হয়েছে এখনো অর্ধেক দিন ও হয় নি। ”

নিশান ফোঁস করে একটা নিঃশাস ছেড়ে বললো,,,
“তুই কি আসলেই গাধা হয়ে যাচ্ছিস দিন দিন?”
জিহান — “আমি গাধা না তুই গাধা।”
নিশান জিহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবারো গাড়ি চালাতে মনোযোগ দিয়ে বললো,,,
“তোর বউ যদি চুমু তে সিম্পল ডোজ দিয়ে অজ্ঞান হওয়ার নাটক করে। তাহলে তুই ফরজ কাজ টা শেষ করে ফুল পাওয়ার এর ডোজ দিয়ে অজ্ঞানের নাটক টা বাস্তবে করিয়ে ফেল।”
নিশানের কথা শুনে জিহান কিছু ক্ষন চুপ করে রইলো। হুট্ করে নিশানের গালে এসে টুপ্ করে একটা চুমু খেয়ে বললো,,,

“ওওও আমার জানের জিগার দস্ত এত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাস কিভাবে?”
নিশান হাত দিয়ে গাল মুছতে মুছতে বিরক্তি কণ্ঠে বললো,,,
“ইডিয়েট চুমু দিয়ে আমাকে অপবিত্র করছিস কেন? জিন্দেগী তে তোর মেয়েলি স্বভাব যাবে না। ডিসগাস্টিং।”
জিহান দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,,,
“এত সুন্দর বুদ্ধি তুই দিলি। যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। তাই টুপ্ করে একটা চুমু দিলাম। সমস্যা কোথায়? আমরা আমরাই তো।”
জিহানের দিকে তাকিয়ে নিশান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
“আর একটা কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলে। বিলিভ মি জিহান জানে মেরে ফেলবো।”
নিশানের রাগানিত্ব কণ্ঠ শুনে জিহান চুপ হয়ে গেল। আর কিছু বললো না। নিশান ও আর কোন কথা বললো না। নিজের মতো অজানা গন্তব্যের দিকে গাড়ি চালাতে লাগলো।

সন্ধ্যা সাত টা বেজে পাঁচ মিনিট। তিহান মাত্র বাসায় ফিরলো। সাথে সিমি আর সামিয়া কে নিয়ে। নিশান আনতে বলেছিল তাঁদের। তিহান সোজা নিজের রুমে ঢুকে গেলো। ড্রইং রুমে সবাই বসে ছিলো। সিমি আর সামিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাজউদ্দিন তাঁদের দুইজনকে ডাকলো। তারা ধীরে ধীরে গেলো। তাজউদ্দিন গম্ভীর কন্ঠে সামিয়া কে প্রশ্ন করলো,,,
“বিয়ে কি হয়ে গেছে?”
সামিয়া মাথা উপর নিচ করলো। যা দেখে তাজউদ্দিন বললো,,,
“খুব ভালো। সংসার কর।পড়াশোনা আর করতে হবে না। আর দুইটা আছে। কখন না জানি ওই দুটো কেউ কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে আসে। আমরা ফকির তো এইজন্য। আমাদের টাকা পয়সা নেই শুধু তুলে নিয়ে গিয়ে কবুল বলালেই বিয়ে শেষ। খরচ ব্যাতিত।”

তাজউদ্দিনের কথা শুনে সিমি চট করে বললো,,,
“আসলেই ফকির। এইজন্য তো বিয়েতে মাত্র দুই টাকা কাবিন করছিলো।”
সিমির কথা শুনে তাজউদ্দিন কেশে উঠলো। বাকি সবাই মুখ চেপে হাসছে। সামিয়া সিমি কে একটা চিমটি কেটে ফিসফিস করে বললো,,,
“এই ছেমরি কি বলছিস? সেন্স এ ফিরে আয়।”
সিমি আশেপাশে তাকিয়ে নিজের কথা ভেবে নিজেই নিজের মাথায় চাটি মারলো মনে মনে বললো,,,
“সিমিরে সিমি একটু তো মুখের কন্ট্রোল করতিস? ছিঃ এইভাবে কেউ শশুর কে ফকির বলে?”
কিন্তূ মুখে কিছু বললো না। তাজউদ্দিন বললো,,,
“তাহলে ভাবো কত গুণধর ব্যাক্তি দের বিয়ে করেছো তোমরা? দুই টাকা কাবিন রাখে।”
সিমি মাথা নিচু করে হাসছে সামিয়া কে ফিসফিস করে বললো,,,

“গুণধর বটেই এত সুন্দর জামাই।উগান্ডা তেও পাবো না।”
সামিয়া ও ফিসফিস করে বললো,,,
“মেরি মা এইসব যেন এখন বলিস না।”
সিমি মাথা নাড়ালো মানে বলবে না। তাজউদ্দিন আবারো বললো,,,
“উপরে যাও তোমরা।”
সিমি আর সামিয়া এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না সোজা হাঁটা ধরলো। ওদের পিছু পিছু রাত্রি আর জারা ও আসলো। সিমি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখে মিষ্টি তাকে দেখে হাসছে। সিমি জানে মিষ্টি নিশান কে ভালোবাসে। আর বিয়ে করতে চাই এখনো। সিমি এইবার দুস্টু হেসে সামিয়া কে বললো,,,
“সামু আমার নিশান ভাই সরি আমার নিশান জামাই যে এত ভালো উফফ কল্পনা করা যাবে না। ভাগ্গিস কোন শাকচুন্নি পাই নি তাকে। আর আজকে কি হয়েছে জানিস?”

সামিয়া — “কি হয়েছে?”
সিমি হেসে বললো,,,
“আজকে উনি আমাকে একটা গান শুনিয়েছে অস্থির ছিলো গান টা। তুই শুনেছসি? ঐযে Seven song ঐটা।”
সামিয়া চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,,,
“কিহহহ ন্যাসপাতি ভাই তোকে ওই গান শুনিয়েছে?”
সিমি — “হ্যা আসলে রোমান্টিক মুডে ছিলো তো এইজন্য।”
সামিয়া, জারা আর রাত্রি হাসছে। আর এইদিকে এতক্ষন হাসতে থাকা মিষ্টি রাগে ফুসতে লাগলো। সিমি ইচ্ছে করে তাকে এইভাবে রাগাচ্ছে। সিমি রুমে ঢুকতে ঢুকতে জোরে জোরে বললো,,,
“উমম পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে। কি যেন পুড়ে গেছে। যাক গে আমার কি? আমি জামাই এর অপেক্ষা করতে রুমে বসি। ”

বলে রুমে ঢুকে গেলো। সাথে সামিয়ারাও ঢুকলো। মিষ্টি একবার দরজার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে নিজের রুমে গেলো। রুমে গিয়ে জিনিষ পত্র ভাঙচুর করতে লাগলো। রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে। শান্ত হচ্ছে না। ঠিক সেই সময় রুমে ঢুকলো সেলিনা। মিষ্টি কে এমন করতে দেখে দ্রুত তার কাছে আসলো। তাকে বুকে নিয়ে বললো,,,,
“কি হয়েছে মামুনি? এইভাবে রিয়েক্ট করিস কেন?”
মিষ্টি রাগানিত্ব কন্ঠে বললো,,,
“খালাআম্মু ওই সিমি আমাকে রোস্ট করছে। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিজেদের রোমান্স সম্পর্কে বলছে। যেইগুলো আমার সয্য হচ্ছে না। আমার নিশান কে কেড়ে নিয়ে সে সংসার করছে।”
সেলিনা চুপ রইলো।চোখ বন্ধ করে যেন কিছু একটা ভাবতে লাগলো। বেশ কিছু সময় পরে চোখ খুলে হেসে বললো,,,,

“ভালোবাসিস তো ধৈর্য ধর। অপেক্ষা কর। আর কয়দিন পরেই বাড়িতে পার্টির আয়োজন করা হবে। তখনি আমাদের ইট ছুড়তে হবে। পাটকেল নাহয় পরে দেখে নেবো।”
মিষ্টি কিছু বুজলো না। সেলিনা তাকে সবকিছু বুজিয়ে বললো। যা শুনে মিষ্টির মুখেও হাসি খেললো বললো,,,
“জি খালাআম্মু ইট ছুড়লে পাটকেল টি খেতে হয়। সমস্যা কি ইট ছুড়লে যদি ভেঙে যাই। তো পাটকেল খেলে কিছু হবে না তেমন।”
সেলিনা মাথা নাড়লো। মিষ্টি কে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। বাইরে গিয়ে একটা সার্ভেন্ট দেখে এনে রুম পরিষ্কার করে নিলো।

সিমি রা রুমে ঢুকে দরজা অফ করে হাসতে লাগলো। জারা বললো,,,
“ভাবিজান সত্যি বলতে বাঁশ টা কিন্তূ সেই ছিলো?”
সিমি ও হাসতে হাসতে বললো,,,
“বাঁশ না সবকিছু সত্যি। যা যা হয়েছে সবকিছু বললাম।”
রাত্রি — “বাহ্ বাহ্ খুব উন্নতি। তুই বিয়াত্তা মহিলা। আর আমরা চির সিঙ্গেল।”
জারা এইবার সামিয়ার হাত ধরে বললো,,,
“সামু কিরে বিয়ে তো অনেক আগেই করেছিস? ইয়ে টিয়ে কিছু হয়েছে নাকি?”
সামিয়া নাক মুখ ছিটকিয়ে বললো,,,,
“জবেদার ভাতার আর আমি ওয়াক। অসম্ভব কাজ কাম এইগুলো। মুখেও আনিস না।”
সিমি হাসতে হাসতে বললো,,,,
“হ্যা তাই বলে অজ্ঞানের নাটক করছিলো!”
জারা আর রাত্রি বুজতে না পেরে বললো,,,

“মানে?”
সিমি সবকিছু খুলে বললো। যা শুনে ওরা দুইজন হাসতে হাসতে শেষ। সামিয়া বিরক্তি কণ্ঠে বললো,,,
“দূর বাল ভালো লাগছে না হাস তোরা।”
বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গিয়ে। জারা দের রুমে গিয়ে সে শুয়ে পড়লো। ঘুম পাচ্ছে তার। সবকিছু যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সামিয়া চলে যাওয়ায় পরেও। সিমিরা কিছু ক্ষণ কথা বললো। রাতের খাবার খেলো। সামিয়া কে কেউ ডাকলো না ঘুমিয়েছে ঘুমাক এমনিতেই মেয়েটার উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে গিয়েছে। সিমি গিয়ে চুপচাপ নিশানের রুমে শুয়ে পড়লো। জারা আর রাত্রি সিমির রুমে ঘুমিয়ে পড়লো। আর সামিয়া জারা দের রুমে।বাড়ির প্রতিটা সদস্য ঘুমিয়ে পড়লো। রাত হয়েছে।

রাত দুইটা বেজে পাঁচ মিনিট। জারাদের রুমে চোরের মতো চুপিচুপি ঢুকলো জিহান। রুমে ঢুকে ফ্ল্যাশ অন করে দেখে সামিয়া বেডে অগোছালো ভাবে ঘুমিয়ে আছে। প্লাজু হাঁটুর উপর পযন্ত উঠে গেছে। উড়না টা অবহেলায় পাশে পরে আছে। জিহান সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাশ অফ করে দিলো। এই মেয়ে তাকে মেরে ফেলবে। জিহান আস্তে আস্তে সামিয়ার কাছে গেলো। একটা ঢোক গিলে সামিয়া কে কোলে তুলে নিলো। যেইভাবে এসেছিলো ঠিক সেইভাবেই সামিয়া কে নিয়ে আবারো নিজের রুমে গেলো। নিজের রুমের বেডে সামিয়া কে শুয়ে দিলো। রুম লক করে। জিহান নিজেও বেডে শুয়ে পড়লো লাইট অফ করে দিলো। সামিয়ার গায়ে হাত দিতে গিয়েও দিতে পারছেনা। একটা ঢোক গিলে সামিয়ার গায়ে হাত দিয়ে সামিয়া কে নিজের বুকের কাছে নিয়ে আসলো। সামিয়া জিহানের পেটে হাত দিলো। জিহান চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে বললো,,,,

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৫

“সত্যি এই মেয়ে আমাকে খুন করবে। কোন অস্ত্র ছাড়াই।”
বলে সে নিজেকে ঠিক করলো। সামিয়াকে ও জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। বউ কে জড়িয়ে ধরার কারণে। যেন জিহানের দ্রুত ঘুম চলে আসলো। সামিয়া ও ঘুমের ভিতরে জিহান কে জড়িয়ে ধরে আছে। নিজের কোলবালিশ মনে করে।

তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here