তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪৩
তাবাস্সুম খাতুন
সময়কাল রাত আটটা…
ড্রইং রুমে সবাই গোল করে বসে আছে। আর রাত্রি সবার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় সদর দরজা হয়ে জিহান আর নিশান বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। ওদের দুইজনকে দেখে মেহেরিমা বলে উঠলো,,,
“জিহান, নিশান দুইজনে এইদিকে আয়। গুরুপত্বপূর্ন কথা হচ্ছে।”
নিশানের ইচ্ছে না থাকার সত্ত্বেও গেলো। সবাই উপস্থিত থাকতে তাজউদ্দিন রাত্রির উদেশ্য বললো,,,
“রাত্রি মামুনি, তুমি নিশ্চই অভি কে চেনো? সেও ইতালি থাকতো তোমার ভাইয়াদের বন্ধু।”
রাত্রি উপর নিচ মাথা নাড়ালো। তার মানে সে চেনে। তাজউদ্দিন গলা পরিষ্কার করে বললো,,,
“তুমি হয়তো শুনেছো? তারা আসছিলো। এখন তাদের ছেলে অভির জন্য তোমার হাত চাইতে এসেছে। ছেলে ভালো আমরা রাজি মেয়ে দিতে। কিন্তু তোমার ডিসিশন টা আগে, তোমার যদি না হয় আমরা এগোবো না। তুমি বলো এখন, যেহেতু তাকে চেনো তাই নতুন করে বলতে হচ্ছে না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাত্রি মাথা নিচু করে আছে মিনমিন সুরে কিছু বলবে এর মধ্যে জিহান বলে উঠলো,,,
“ওর হ্যা আর না বলাতে কি আশে যাই? ও তো অভির সাথে প্রেম করছে আজ তিন বছর ধরে। একসাথে বুদ্ধি খাটিয়ে আরেঞ্জ ম্যারেজ করতে চাচ্ছে। ও রাজি না হওয়ার সম্ভবনা এক পার্সেন্ট ও নেই।”
জিহানের কথা শুনে বাড়ির প্রতিটা সদস্য অবাক হয়ে গেলো। নিশান চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে। রাত্রি চোখ খিচে বন্ধ করলো মনে মনে ভাবছে,,,
“ভাইয়া কিভাবে জানলো?”
মেহেরিমা জিহান কে বললো,,,
“এইসব কি বলছিস তুই? আর এইগুলো কোথা থেকে জানলি?”
“আমার বোন আমার বন্ধুর সাথে আমার নাকের ডগার উপরে তিন বছর ধরে প্রেম করবে আর আমি জানতে পারবো না? শুনে দেখো ওর কাছ থেকে।”
নিশান এইবার বলে উঠলো,,,
“এইখানে আমার কোন কাজ নেই, আল্লাহ হাফেজ।”
বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। এইদিকে বাড়ির কর্তারা উঠে দাঁড়ালো। তাজউদ্দীন মেহেরিমার উদ্দেশ্য বললো,,,
“তুই একা নিরিবিলি শুনিস। আমাদের সামনে বলতে নিশ্চই লজ্জা পাবে।”
বলে নিজেদের রুমে গেলো। একে একে সবাই চলে গেলো। মেহেরিমা রাগী দৃষ্টিতে রাত্রির দিকে তাকালো রাত্রি দ্রুত চোখ নামালো আল্লাহই ভালো জানে তার কপালে কি অপেক্ষা করছে? মেহেরিমা রাত্রির কাছে আসলো হুট্ করে ওর কান টেনে বললো,,,
“কবে থেকে করছিস প্রেম?”
রাত্রি ব্যাথায় লাফ দিতে দিতে বললো,,,
“আম্মু ব্যাথা করে তো। ছেড়ে দাও না।”
মেহেরিমা আরো জোরে টেনে দিয়ে বললো,,,
“তোর ব্যাথার লাগার জন্যই ধরছি। বেয়াদব মেয়ে তুই প্রেম করিস? আমাকে বলিস ও নি? আবার ওই ছেলেকে পাঠিয়েছিস আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাহ্ বাহ্ তুমি কত ধাপ এগিয়ে গেছো!”
রাত্রি কাঁদো কাঁদো সুরে বললো,,,
“ভুল হয়ে গেছে আম্মু মাফ করে দাও প্লিজ।”
মেহেরিমা ঐভাবেই কান টেনে ধরেই রুমের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বললো,,,
“পুরো ঘটনা খুলে বলবি, তারপর তোর ছাড়া হবে।”
রাত্রি ব্যাথায় লাফ দিয়ে দিয়ে উঠছে বারবার কিন্তু মেহেরিমা শক্ত করে ধরে আছে। কোন ছাড়াছাড়ির নাম নেই।
নিশান রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। ভিতরে ঢুকে তার চোখ গেলো বেডে গটশট হয়ে বসে থাকা সিমির দিকে। একপলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। নিশান ভিতরে ঢুকে গায়ে থাকা শার্ট খুলে ফেললো কোমরে সাদা টাওয়াল জড়িয়ে প্যান্ট খুলে ফেললো। আলমারি থেকে টাউজার আর টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। এইদিকে সিমি মাথা নুইয়ে বসে আছে কেন জানি তার লজ্জা করছে নিশানের দিকে তাকাতেও লজ্জা লাগছে। সে বেড থেকে নামলো সোজা সোফার কাছে গেলো চুপ করে বসে রইলো। নিশান আসলে তাকে পায়েস দেবে। দশ মিনিট পরে নিশান ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো। সিমিকে সোফায় বসে থাকতে দেখে সে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে চুলগুলো শুকিয়ে সেট আপ করে ল্যাপটপ নিয়ে বেডে বসলো। সিমির একটু মন খারাপ হলো তবে মন খারাপকে পাত্তা না দিয়ে পায়েস এর বাটি হাতে তুলে নিয়ে নিশানের কাছে গেলো মিনমিনিয়ে বললো,,,
“এই নেন পায়েস।”
নিশানের নির্লিপ্ত জবাব এলো,,,
“পায়েস খাই না আমি।”
“আপনার যে পায়েস পছন্দ।”
“ছিলো একটু আগে পযন্ত, এখন আর নেই।”
নিশানের এমন কথা শুনে সিমির মন খারাপ হয়ে গেলো, চোখের কোনে পানি ভীর করলো তবুও সে বললো,,,
“একটু খেয়ে দেখুন না। জীবনে প্রথম আপনার জন্য রান্না করলাম বেশি না অল্প একটু মুখে দিন।”
সিমি রান্না করেছে এই কথা শুনতেই নিশান সিমির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,,,
“তুই রান্না করেছিস?”
সিমি মাথা নাড়লো। নিশান রাগী কণ্ঠে বললো,,,
“কে বলেছে তোকে রান্না করতে?”
সিমি নিজেকে সামলিয়ে বললো,,,
“আপনার পছন্দের বলতে কোন কিছুই করি নি আজও পযন্ত তাই সামান্য আপনার পছন্দের রান্না টুকু করলাম। একটু খেয়ে দেখুন না।”
বলে চামুচে করে একটু তুলে নিশানের মুখের দিকে এগিয়ে নিলো। সিমি বেমালুম ভুলেই গেছে তার হাত পোড়ার কথা। নিশান পায়েস এর দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সিমির হাত পুড়ে গেছে অনেকটা। দ্রুত সিমির হাত টেনে নিয়ে বললো,,,
“হাত পুড়িয়েছিস কিভাবে?”
সিমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে বললো,,,
“রান্না করতে গিয়ে।”
নিশানের রাগ যেন দ্বিগুন হচ্ছে, কতখানি হাত পুড়িয়েছে সে? যদি এর থেকে বেশি অঘটন ঘটে যেত তখন? নিশান ধমক দিয়ে বললো,,,
“ইডিয়েট বাড়িতে কি কেউ ছিলো না যে তুই কিচেন রুমে ঢুকছিস? যদি খারাপ কিছু হতো? মাথায় কোন কমনসেন্স নেই তোর।”
বলে উঠে ফাস্ট এইড বক্স আনলো। সিমির পোড়া হাত পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে ফুঁ দিতে লাগলো। সিমি নিশানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, কি অদ্ভুত মানুষ তাকে ভালোবাসেনা অথচ এমন ভাব করছে যেন ব্যাথাটা তার না উনার নিজের হাতে হয়েছে। কিভাবে ফুঁ দিচ্ছে আবার সসাচ্ছে, আসলেই গভীর অভিমান করেছে তার উপরে। হুট্ করে সিমি নিশানের গালে চুমু দিয়ে বসলো। নিশান থেমে গেলো চোখ বন্ধ করে নিলো। সিমি চোখ ছোট ছোট করে নিশানের দিকে তাকিয়ে আছে। এর মধ্যে নিশান সিমিকে বেডে ফেলে ওর দিকে ঝুঁকে পরে বলে উঠলো,,,
“তুই আমার জন্য এত উন্মাদ কবে থেকে হলি?”
সিমি নিশানের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
“যেইদিন থেকে আপনার অভিমানের ভাষা বুজেছি, যেইদিন আপনার চোখের পানির স্পর্শ বুজেছি, যেইদিন আপনার না বলা কথা গুলো ধরতে পেরেছি, যেইদিন আপনার নিরাবতা এত উন্মাদনার কারণ খুঁজে পেয়েছি। সেইদিন থেকেই আমিও উন্মাদ হয়েছি।”
সিমির কথা শুনে নিশান আরো ঝুঁকলো সিমির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে স্লো ভয়েসে বললো,,,
“উন্মাদ ভালো তবে উন্মাদনা না। সাবধানে থাকিস তোর উন্মাদ তোকেই যেন উন্মাদনা করে না দেই।”
সিমি ফট করে বলে উঠলো,,,
“হতে চাই আমি উন্মাদনা। যতটা উন্মাদনা হলে আপনার কাছে ঠাই পাবো, হ্যা আমি ঐরকম উন্মাদনা হতে চাই শুধু আপনাকে পাওয়ার জন্য।”
নিশান বাঁকা হেসে বললো,,,
“আমি পাপ উহুম আমার স্পর্শ পাপ পাপিষ্ট আমি। ভুলে যাস না তোর শরীরে টাচ করলে তুই ও পাপ হয়ে যাবি।”
সিমি মলিন হেসে বললো,,,
“পাপ না পবিত্র সেটা তো হয়েছি সেই কবেই যেইদিন আপনার স্পর্শ আমার শরীরের প্রতিটা জায়গায় বিচরণ চালিয়েছে। ”
নিশান উঠে পড়লো নিজের ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় চলে গেলো। সিমি উঠলো পায়েস এর বাটি নিশানের কাছে দিয়ে এসে বললো,,,
“যদি একটা মিনিটের জন্য না এক সেকেন্ডর এর জন্য ও আমাকে চেয়ে থাকেন মন থেকে তবে আমার তৈরী পায়েস আপনি খাবেন। যদি না খান তাহলে বুজবো আমার প্রতিটা চেষ্টায় ব্যার্থ, সাথে ব্যার্থ স্ত্রী, ব্যার্থ মেয়ে, ব্যার্থ এই কলঙ্ক ময় সমাজের নারী।”
বলে সিমি সোজা বেডে যেতে নিলেই পরে যাচ্ছিলো বেড ধরলো নিশান দ্রুত সিমির কাছে উঠে আসলো সিমির হাত ধরে বললো,,,
“ঠিক আছিস তুই? কোন সমস্যা হয়েছে তোর?”
সিমি বেডে বসে বললো,,,
“ঠিক আছি। একটু ক্লান্ত তাই এমন হচ্ছে বিশ্রাম নিলে ভালো লাগবে।”
নিশান কিছু বললো না। সিমির গায়ে ব্লাঙ্কেট টেনে দিয়ে আবারো সোফায় গিয়ে বসলো। এইদিকে সিমি ভালো করে ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে ঘুমের দেশে পারি জমাতে লাগলো ক্লান্ত প্রচুর। মাথা ঘুরছে তার কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে কিছু ভালো লাগছে না বমি আসছে। তাই তো দ্রুত বেডে শুয়ে পড়লো। ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলো।
সিমি ঘুমিয়েছে এক ঘন্টা হচ্ছে। নিশান পায়েস এর বাটিটা হাতে তুললো সিমির দিকে তাকালো অতঃপর বললো,,,
“তুই যদি জানতিস প্রতিটা ন্যানো সেকেন্ড এও আমি তোকে কতবার করে চাই? তাহলে এমন কথা বলতিস না।”
বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এক চামুচ পায়েস মুখে দিলো। মুখে দিতেই সে কিছু সময় বসে রইলো সব ঠিক আছে তবে চিনির জায়গা হয়তো নুন বেশি দিয়েছে। সিমি তার জন্য অনেক শখ করে পায়েস রান্না করছে তাই নষ্ট না করে সম্পূর্ণ কষ্ট করে খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে এক গ্লাস পানি খেলো। নিজের ল্যাপটপ রেখে সিমির কাছে গেলো ব্লাঙ্কেট টা ভালো ভাবে ঠিক করে দিয়ে ওর কপালে হাত দিলো শরীর ভালো আছে। নিশান নিচু হয়ে সিমির কপালে একটা চুম্বন দিলো ফিসফিস করে বললো,,,
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪২
“আমার উন্মাদনা আজ থেকে না জানবাচ্চা, তুই কখনোই আমার উন্মাদনায় আসতে পারবিনা। কিন্তু আমার উন্মাদনা শুধু তোকে ঘিরেই আছে, তুই চাইলেও আমার না চাইলেও আমার। এই তানভীর চৌধুরী নিশানের থেকে তুই কোনদিন ছাড়া পাবি না জানবাচ্চা।”
বলে সিমির গালে একটা চুমু দিয়ে উঠে সোফার কাছে চলে গেলো। বালিশে মাথা দিয়ে ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে সেও ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।
