তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪৬
তাবাস্সুম খাতুন
রাত এগারোটা। নিস্তব্ধ এলাকা চৌধুরী বাড়িও ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে আছে। নিশান আর জিহান বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলো। সোজা গিয়ে উঠলো সামনের এক বাড়িতে যেইখানে জারারা মিষ্টি দিতে এসেছিলো। নিশান বেরোনোর আগে জারাকে জিজ্ঞাসা করে নিয়েছে কে কে ছিলো? সেই অনুযায়ী আসছে। জিহান দরজায় কড়া নাড়লো বাড়ির কর্তা আলীউল গায়ে গামছা দিয়ে দরজার কাছে আসতে আসতে বললো,,
“এত রাতে কেডা আইসে?”
জিহান আবারো কড়া নাড়লো। আলীউল দরজা খুলতেই নিশান আর জিহান ভিতরে ঢুকলো জিহান দরজা আটকিয়ে দিলো আলীউল আতঙ্কিত কণ্ঠে বললো,,,
“তুমরা কারা বাপ? এইহানে কি কর?”
নিশান সোজা কণ্ঠে জবাব দিলো,,
“আপনার বউকে ডাকুন। ”
আলীউল নিজের বউকে না ডেকে উল্টে বললো,,,
“কেডা তুমি?আমার বউ এর লগে তুমার কাম কি? আমারে কও।”
নিশান বাঁকা হেসে ঘাড় কাত করলো শান্ত অথচ ভয়ঙ্কর কণ্ঠে বললো,,,
“তোর বউ এর আজরাইল। ডাক ওকে।”
আলীউল ভয় পেলো সে গিয়ে তার বউকে ডেকে আনলো। তার বউ সুজাতা বেগম নিশানদের সামনে এসে বললো,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তুমরা কে?”
নিশান নিজেকে রিলাক্স করে বললো,,,
“যার অবৈধ ভাবে সন্তান পেটে আসছে বলে অপমান করে মিষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, আসলে আমি সেই অবৈধ সন্তানের বৈধ বাপ।”
সুজাতা বেগম এইবার যেন ঘাবড়ে গেলেন তবে সেইটা বুঝতে না দিয়ে বললো,,,
“দেহো বাবা যেইটা সত্য সেইটাই কইসি। এখন এরজন্য রাত – বিরাতে লোকের বাড়ি আশা ভালা কাজ না।”
নিশান ঘাড় এইপাসে ঐপাশে কাত করে ঘুরাতে লাগলো এইদিকে জিহান বলে উঠলো,,,
“পাঁচ মিনিট সময় পাবেন। এর মধ্যে আপনার বাড়িতে যেই মহিলারা বসে আমার বউ আর বোন কে খারাপ কথা শুনিয়েছে সবাইকে ডেকে আনতে হবে। কোন প্রশ্ন ছাড়াই আর যদি না পারেন সমস্যা নেই। সকালে নিউজ পেপারে বড়ো ধরনের হেড লাইন উঠবে। আলীউল নামের এক ভদ্র লোকের বাসায় ডাকাত পড়ছিলো যা ছিলো সবকিছু লুটে নিয়ে বাচ্চা সহ বউ সবাইকে খুন করে পালিয়ে গেছে। সুন্দর হবে না?”
জিহানের কথা শুনে সুজাতা আলীউল কে বললো,,
“ছেলে মেয়ে দুইটা দেহে রাখো আমি ওদের সবাই রে ডেকে আনি।”
আলীউল মাথা নাড়লো ছেলে মেয়েদের রুমে দরজা লাগিয়ে দুটো চেয়ার বাহির করে নিশান আর জিহান কে বসতে দিলো। নিশান আর জিহান বসলো নিশান নিজের ফোন বাহির করে স্ক্রল করতে লাগলো। এইদিকে সুজাতা সবার বাড়ি গেলো যারা সিমি সামিয়া এদের খারাপ কথা বলেছে। সত্যি কথা বললে কেউ আসবে না এইজন্য মিথ্যা বানিয়ে বললো,,,
“বাড়িতে বিরিয়ানি রান্না করছি সবাই এসে একটু নিয়া যাও দেহি।”
এই কথা শুনে চার পাঁচ মহিলা আসলো মূলত তারাই ছিলো। সুজাতা হাসি মুখেই তাঁদের বাড়িতে এনে তুললো। সবাই ভিতরে ঢুকতেই নিশান আর জিহান কে দেখে ওরা সুজাতা কে বললো,,,
“কিরে সুজাতা পোলা দুইটা কেডা?”
সুজাতা দরজা বন্ধ করে এসে বললো,,,
“তাজউদ্দিন ভাইয়ের ছেলে আর একটা ভাগ্নে।”
নিশান আর জিহান কে মূলত পাড়ার কেউ চেনে না। চিনবে কিভাবে? তারা তো আর বাড়ি থাকে না রাত দুইটা বাজলে বাসায় আসে আবার ভোর হলে চলে যাই নয়তো বাড়িতে থাকে। আরেকটা মহিলা তার নাম মুন্নি বেগম সে বললো,,,
“তুমরা ভালো আছো?”
তারা কেউ উত্তর দিলো না। পাসের এক মহিলা কাকুলি সে সুজাতা কে ফিসফিস করে বললো,,,
“কিরে তুই কইলি বিরিয়ানি রান্না করছিস কই?”
সুজাতা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,,,
“সামনে বসে আছে চেয়ার পেতে দেখতে পারছিস না।”
সুজাতার কথার মানে কাকুলি কিছু বুজতে পারলোনা। নিশান এইবার উঠে দাঁড়ালো গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,,,
“আমার বউকে বাজে খারাপ কথা বলার রাইট তোদের কে দিয়েছে?”
মুন্নি বলে উঠলো,,,
“তুমাগো গুরুজন হয় আমরা আপনি থেহে একেবারে তুই তো গেছো কে? এ কেমন শিক্ষা পাইসো।”
নিশান হাসলো ব্যাঙ্গ করে হাসলো মহিলা গুলোর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,,,
“শিক্ষা আমার খুবই ভালো। তোরা গুরুজন হয়েও আমার থেকে তুই ছাড়া আর কোন কিছুই ডিজার্ভ করিস না। কুত্তার বাচ্চারা আমার বউ আর আমার বাচ্চাকে তোরা খারাপ কথা বলার সাহস কোথায় পেলি?”
নিশানের শেষের কথাটা একটু জোরেই বলা হয়েছে। যার দরুন মহিলাগুলো কেঁপে উঠলো। জিহান ও চিৎকার দিয়ে বললো,,,
“আমার বউ কি তোদের ঘাড়ের উপরে উঠে আছে? তোদের খাই না পরে? যে তোরা ওকে কথা শুনাস? হ্যা ও ধর্ষিতা আমি জানি তবুও সে আমার বাম পাঁজরের হাড়ের অংশ আমার অর্ধাঙ্গিনী কোন মুখ দিয়ে তোরা এইসব কথা বলিস?”
মহিলা গুলোর ভয় লাগছে এই দুই সাইকো ভাই তাঁদের সাথে এখন কি করবে? নিশান নিজেকে শান্ত করে বললো,,,
“আমার ক্ষমতা কত দূর সেইটা যদি জানতিস তো জেনে বুঝে কেউ এই গন্ডি তে পা দিতিস না। নাইট্রিক এসিড দিয়ে পুড়িয়ে মারে এই তানভীর চৌধুরী নিশান। প্রশ্ন যদি ওঠে তার বেঁচে থাকার অক্সিজেন ইশু কে নিয়ে বাজে কথা বলার তবে আমি একা তানভীর চৌধুরী নিশান টু শব্দ না করেই জানে মেরে ফেলতে পারবো।”
মহিলা গুলো একত্রে দাঁড়ালো ভয়ে সারা দেহ কাঁপছে। নিশান আবারো বললো,,,
“তোদের কপাল ভালো আমি তোদের আজ অল্প শাস্তি দিয়ে বুঝাতে চাই যে এই তানভীর চৌধুরী নিশানের প্রপার্টি কে খারাপ কথা তো দূর চোখ তুলে তাকালেও জীবন দিতে হবে।”
বলে নিশান তার সাথে আনা একটা ছোট ব্যাগ থেকে পাঁচটা ছোট বোতল বাহির করলো। প্রত্যেকের হাতে একটা করে বোতল দিয়ে বললো,,,
“এক বোতল করে নাইট্রিক এসিড আছে। এই এসিড তোরা একে অপরকে ছুড়ে মার। এইটাই সবথেকে সহজ শাস্তি আর যদি না পারিস। তবে ভালোই হবে আমার টর্চার সেলে পচিয়ে মেরে হিংস্র প্রাণীদের আহার হতে হবে।”
এই কথা শুনে দ্রুত বোতলের মুখ খুলে একে অন্যের গায়ে চলতে লাগলো। চিৎকার দিয়ে উঠলো সবাই। সবার মুখে পড়ছে গলায় হাতে। সঙ্গে সঙ্গে ঝলসে গেছে সয্য করতে পারচ্ছেনা জ্বালা যন্ত্রনা। নিশান ওদের দেখে বাঁকা হেসে বললো,,,
“এই এসিডে পোড়ার কথা যদি মনে থাকে। তবে এই তানভীর চৌধুরী নিশানের ইশু আর তার বাচ্চাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করতে গেলে মরে এর উসুল দিতে হবে।”
বলে নিশান আর জিহান বেড়িয়ে গেলো। জিহানের শান্তি লাগছে নিশান যেইভাবে ওদের শাস্তি দিয়েছে এতেই অনেক। নিশান আর জিহান বাড়ির ভিতরে ঢুকলো যে যার রুমে ঢুকলো জিহান ফ্রেশ হয়ে বেডে শুয়ে পড়লো সামিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে নিজের বুকের মাঝে টেনে আনলো কপালে গভীর চুম্বন করে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো। অপরদিকে নিশান রুমে ঢুকে সাওয়ার নিলো। সাওয়ার শেষে টাউজার শার্ট পরে সিমির কাছে আসলো সিমির মুখের পানে তাকালো মাথায় হাত দিলো, শরীর ঠিক আছে কিনা দেখলো। কিছু ক্ষণ তাকিয়ে উঠে যেতে নিলেই সিমি নিশানের হাত জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো সুরে বললো,,
“প্লিজ যাবেন না একে তো রাত করে বাড়ি ফিরছেন আবার আমাদের দুইজনকে ছেড়ে সোফায় ঘুমাবেন। বেবি কান্না করছে আপনার সাথে ঘুমাবে।”
নিশান ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
“আর একদিন পরে এইটাও বলবি নিশ্চই বেবি প্রসাব করেছে পরিষ্কার করে দাও।”
সিমি দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,,
“হ্যা করলে অবশ্যই বলবো।”
নিশান সিমির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো পরে লাইট অফ করে বেডের একপাশে শুয়ে পড়লো। সিমি নিশানকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বুকে মাথা রেখে শুতেই নিশান বলে উঠলো,,,
“ইশু আমি টায়ার্ড ঘুমাতে দে।”
সিমি বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে শুয়ে বললো,,,
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪৫
“আমিও টায়ার্ড ঘুমাতে দেন।”
বলে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যেতে লাগলো। নিশান ও আর কিছু বললো না। অনেক দিন পরে বুকটা যেন ভরা ভরা লাগছে প্রশান্তির বাতাস বয় যাচ্ছে ভালো লাগছে খুব। সেও ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো।
