তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৬ (২)
তাবাস্সুম খাতুন
সকাল ছয়টা বেজে বিশ মিনিট। চারিদিকে সূয্যি মামা নিজের তেজ ছড়িয়ে দিয়েছে শহর জুড়ে। চৌধুরী ম্যানশন এ অনেকেই উঠেছে আবার অনেকে এখনো ঘুমিয়ে আছে। সেলিনা চৌধুরী বেড এর উপরে গোজগাজ করছিলো। এমন সময় তাজউদ্দিন চৌধুরী ওয়াশরুম থেকে গোসল করে একেবারে পরিপাটি হয়ে বেড়িয়ে আসলেন। রুমের একপাশে থাকা সোফায় বসে সেলিনার উদ্দেশ্য বললো,,
“সেলিনা তোমার ছেলে দিনদিন আরো বেপারোয়া হয়ে যাচ্ছে।”
সেলিনা হাতের কাজ থামিয়ে তাজউদ্দিন এর দিকে তাকিয়ে বললো,,
“ভালো কিছু করলে ছেলে তখন আপনার হয়, আর খারাপ কোন কিছু করলে ছেলে আমার, তো কি করেছে আমার ছেলে একটু শুনি?”
তাজউদ্দিন ভ্রু কুঁচকিয়ে নিজের বউ এর দিকে কয়েক পলক তাকালেন তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,,
“কি করেনি সে? ফজরের নামাজের আগে একটু ড্রয়িং রুমে গিয়েছিলাম। আর তখন দেখি তোমার ছেলে বাসায় ফিরলো। জিজ্ঞাসা করলাম কই ছিলিস সারা রাত। জবাবে দিসে, ছেলে বড়ো হয়েছে এখন কৈফিয়ত নেওয়া বাদ দেন।”
তাজউদ্দিন এর কথা শুনে সেলিনা বললো,,
“ঠিকই তো বলেছে, এখন সে বড়ো হয়েছে নিজের মতো চলুক না হাজার রাত শেষে দিনের বেলায় বাড়ি আসুক তাতে কি সমস্যা আপনার? কোন মেয়ে কে তো আর ভাগিয়ে আনছে না।”
সেলিনার কথা শুনে তাজউদ্দিন অবাক কণ্ঠে বললো,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আশ্চর্য জনক বিষয়, এইটা তোমার ছেলে তো? ছেলে রাত করে বাড়ি ফিরছে সমস্যা নেই কোন, আবার বলে মেয়ে নিয়ে আসবে। তোমার ছেলে কে কি কেউ মেয়ে দেবে? কোন মেয়ের পছন্দের তালিকায় আমার মনে হয় না তোমার ছেলের নামের একটা অক্ষর ও আছে কিনা।”
সেলিনা — “মেয়ে দেবে না মানে? আমার সোনার টুকরু ছেলের জন্য মেয়েরা লাইন দিয়ে আছে। আর মেয়ে তো আমার অনেক আগেই পছন্দ করা আছে শুধু বিয়ে টা হয়ে গেলে ভালো।”
তাজউদ্দিন — “মেয়ে পছন্দ করা আছে মানে? কাকে পছন্দ করেছো তুমি?”
সেলিনা মুখ ভাঙিয়ে বললো,,
“ঢং করছেন নাকি? দুই দিন আগেই তো রাতে আপনাকে আমার ফুফাতো বোনের মেয়ের কথা বললাম আমার ভাগ্নি। ভুলে গেছেন?”
তাজউদ্দিন উঠে দাঁড়ালেন হাতে ঘড়ি পরে চুলগুলো ঠিক থাক করে বললো,,
“সেগুড়ে বালি ঢালছো সেলিনা, আমার মনে হয় না তোমার ওই উগ্র ছেলে কাউকে বিয়ে করবে। আমি অফিসে যাবো দ্রুত আসো বাইরে।”
বলে তাজউদ্দিন চলে গেলো। সেলিনা বিড়বিড় করে বললো,,
“করবে না মানে, আমার ভাগ্নি কি কম সুন্দরি নাকি? অবশ্যই করবে শুধু আর কই মাসের অপেক্ষা সে দেশে আসুক তারপর ছেলে কে বিয়ের কথা বলবো।”
সেলিনা ও আর দাঁড়ালো না বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।ড্রইং রুম a বসে আছে জামালউদ্দিন, সালাউদ্দিন আর মেহেরিমা তিন ভাই বোন মিলে গল্প করছে। তখনি তাজউদ্দিন আসে তাদের সাথে গল্পে যুক্ত হয়। তাজউদ্দিন মেহেরিমা কে বললো,,
“কিরে মেহেরিমা? তোর ছোট ছেলে আর রুবেল কবে আসবে দেশে?”
মেহেরিমা হেসে উত্তর দিলো,,
“এইতো ভাইজান কাজ তারা দ্রুত শেষ করে ফেলছে আজকেই চলে আসবে সন্ধ্যার দিকে।”
তাজউদ্দিন — “খুব ভালো তবে তোরা কিন্তূ এইখানে থাকবি এইখান থেকে তোদের যেতে দেবো না বলে দিলাম।”
বড়ো ভাই এর সাথে বাকি দুই ভাই ও সাই দিলো। মেহেরিমা বললো,,
“হ্যা থাকবো তো থাকবো। আর রুবেল সন্ধ্যায় আসবে। রাতে একটা সারপ্রাইস আছে তোমাদের সবার জন্য। আশা করি সবাই উপস্থিত থাকবে সেখানে?”
সালাউদ্দিন — “কি সারপ্রাইস আফা?”
মেহেরিমা — “রাত হলে জানতে পারবি।”
জামালউদ্দিন — “অপেক্ষা থাকলাম।”
সেলিনা ডাক দিলো তিন ভাই কে নাস্তার জন্য। তারা বাড়ি থেকে খাওয়া দাওয়া করেই যাই। বাইরের কোন খাবার খাই না। তারা তিন ভাই উঠে গেলো। সেলিনা নাস্তা দিলো সবাই কে। কিয়া চৌধুরী মেয়েদের বই পড়াচ্ছে বসে থেকে। জারা আর রাত্রি এখন গভীর ঘুমে। এইদিকে সামিয়া উঠে বই পড়ছে কিন্তূ সিমি ঘুমিয়ে আছে। এমন সময় রোজিনা সিমির রুমে আসলো। সামিয়া কে বই পড়তে দেখে বললো,,,
“আমার আদর্শ সন্তান, সকালে উঠে বই পড়ছে আরেকটা আদর্শ র আ ও নেই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে এখনো।”
সামিয়া রোজিনার দিকে তাকিয়ে বললো,,
“বসো মামুনি, আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো দ্রুত তাই বই পড়ছিলাম।”
রোজিনা গিয়ে সামিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো বললো,,
“হুম পড়ো বই পড়ো, আর আমি ওই মহারানী কে উঠিয়ে দেই।”
বলে রোজিনা সিমির কাছে গেলো। সিমির গায়ে হাত দিয়ে দুই তিনবার ডাকলো না কোন সারা শব্দ নেই। রোজিনা এইবার ওয়াশরুম এ ঢুকে এক মগ ঠান্ডা পানি আনলো। এনে সোজা সিমির মুখে চেলে মারলো। সিমির চিৎকার দিয়ে উঠলো,,,
“ডুবে গেলাম বাঁচা কেউ।”
সিমির চিৎকার বাড়ির প্রত্যেক টা সদস্য শুনতে পেলো। দৌড়ে সবাই সিমির রুমে হাজির হলো। সিমির চুল সহ জামা সবকিছু ভিজে গেসে। সালাউদ্দিন রোজিনার দিকে তাকিয়ে বললো,,
“কি হয়েছে রোজিনা? মেয়ের কাপড় সহ চুল ভিজে কেন?”
রোজিনা — “ভিজিয়ে দিয়েছি এত ঘুম কাতুরে মেয়ে বাবা আমি জীবনেও দেখি নি।”
রোজিনার কথা শুনে তাজ বললো,,
“জীবনে দেখো নি বলেই তো আপুনি তোমার ইচ্ছা পূরণ করে দিলো আম্মু। আপুনি কে তো পুরস্কার দেওয়া উচিত।”
ছোট তাজের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলাম রোজিনা ধমক দিয়ে বললো,,
“তুই এইখানে কি করিস? যা গিয়ে পড়তে বস।”
তাজ — “পড়তেই তো বসেছিলাম, আপুনির চিৎকার শুনে দৌড় দিয়েছি।”
রোজিনা — “হয়েছে তোর দৌড় যা পড়তে বস।”
তারপর রোজিনা ওদের তিন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,,
“আমি সামলিয়ে নিচ্ছি আপনারা নিজেদের কাজে চলে যান।”
তিন ভাই কোন কথা না বলে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। মেহেরিমা ভিতরে ঢুকলো। সেলিনা ও আছে সাথে। জারা আর রাত্রি এসেছিলো ওদের এখনো ঘুম কাটে নি তাই আবারো ঘুমাতে গেছে। কিয়া চৌধুরী মেয়েদের রেখে উপরে আসছিলো সিরিয়াস কিছু না বলে আবারো নিচ্ এ চলে গেছে। কিন্তূ নিশান আর জিহান আসে নি কেন আসে নি এখন তারাই জানে। এইদিকে সিমি ঠোঁট ফুলিয়ে ন্যাকা কান্না করছে। মেহেরিমা এসে সিমির চুলের পানি মুছতে মুছতে বললো,,,
“রোজিনা তুই আমার সিমি কে এইভাবে একদম বিরক্ত করবি না, আমার সোনাটার ঘুম হয় নি এখনো ভালো করে।”
সিমি ফুফি কে জড়িয়ে ধরে ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,,
“আর বলো না ফুফি আম্মু সবসময় আমার উপরে এমন অবিচার করে। তুমি খুব ভালো।”
রোজিনা চোখ ছোট ছোট করে বললো,,.
“মা একটু শাসন করলে মা খারাপ তাইতো, আচ্ছা তুই থাক তোকে আর কিছু বলবো না।”
মেহেরিমা — “হ্যা তুই যা আমি আছি।”
রোজিনা আর দাঁড়ালো না চলে গেলো। সেলিনা সামিয়া কে বললো,,
“সামিয়া ওই দুই বাঁদর কই?”
সামিয়া — “সেই দুই বাঁদর ও তো এখনো ঘুমিয়ে আছে বড়ো আম্মু।”
সেলিনা রাগান্নিত কন্ঠে বললো,,
“পড়াচ্ছি ওদের ঘুম।”
বলে সেও চলে গেলো। মেহেরিমা সিমি কে উঠিয়ে ওয়াশরুম এর কাছে নিয়ে গিয়ে বললো,,
“যাও আম্মু সাওয়ার নিয়ে আসো। আমি ড্রইং রুমে বসছি।”
সিমি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। মেহেরিমা ও রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। সিমি ওয়াশরুম থেকেই সামিয়ার উদ্দেশ্য বললো,,,
“সামু আমাদের আবারো হোস্টেল এ ফিরে যেতে হবে।”
সামিয়া — “হ্যা পুরো দুইদিন হয়ে তিনদিন পড়ছে।”
সিমি — “স্বাভাবিক ভাবে যাবো হোস্টেল এ উঠে বড়ো আব্বু কে জানিয়ে দেবো, এছাড়া কাউকে কিছু বলবি না ঠিকাছে?”
সামিয়া হুম বললো। সিমি প্রায় বিশ মিনিট পরে একেবারে রেডি হয়ে বেড়িয়ে আসলো। সিমি আসতেই সামিয়া গেলো ওয়াশরুম এ সাওয়ার নিয়ে রেডি হতে। সিমি ডেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে চুল শুকিয়ে নিলো। তারপর হিজাব পড়লো। মুখে পন্ডস আর ঠোঁটে লিপবাম দিয়ে বেডে বসে নিজের ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। এর মধ্যে সামিয়া ও বেড়িয়ে আসলো। সেও গুছিয়ে নিলো নিজেকে। তারপর দুইজনে একসাথে নিচে গেলো। নিচে নেমে দেখলো জারা, রাত্রি আর মিহু, পিহু বসে নাস্তা করছে। সামিয়া আর সিমি ও বসলো তাদের সাথে। কেউ কোন কথা বললো না চুপচাপ খেয়ে উঠলো। সিমিরা বাড়ির সবাই থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটির উদেশ্য রওনা দিলো। মিহু,পিহু ও স্কুল কলেজে চলে গেলো।বাড়ির মেয়েরা এইবার ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করে নিলো। দুপুর বারোটা তখন উপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসলো নিশান আর জিহান। তাদের দুই জনকে আরো অনেক আগে ডাকা হয়েছে কিন্তূ তারা ওঠে নি। দুইজনে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে টুকটাক কথা বলতে লাগলো। সকালের নাস্তা দুপুরে লাঞ্চ করলো। রোজিনা আর কিয়া কিচেন রুমে রান্না করছে। মেহেরিমা আর সেলিনা নিচের গেস্ট রুমে কাজ করছে। নিশান আর জিহান কথা বলছে নিশান বললো,,
“ইদ্রিস এর কি অবস্থা?”
জিহান — “নাইট্রিক এসিডে পুড়েছে ভাব কেমন তাহলে?”
নিশান — “আয়ান আর অভি ওদের কি অবস্থা?”
জিহান — “আছে ভালো, একবারও তো দেখতেও যাস নি।”
নিশান — “কোথায় আছে এখন?”
জিহান — “বাড়িতে।”
নিশান — “আচ্ছা রাতে দেখতো যাবো।”
জিহান আর কিছু বললো না নিশান বলে উঠলো,,
“তোর বোন কই দেখছি না তো?”
জিহান — “নিশান তোর মাথার তার ছিঁড়ে গেসে ভার্সিটি তে গেছে জানিস না নাকি?”
নিশান আর কিছু বললো না। তখনি ডাইনিং টেবিলের উপরে রাখা রোজিনা চৌধুরীর ফোন বেজে উঠলো। নিশান বললো,,
“মেজো আম্মু, তোমার ফোনে কল আসছে।”
কিচেন থেকে রোজিনা জবাব দিলো,,
“নিশান তুই ধর বাপ।”
নিশান বিরক্তি তে ফোন হাতে নিয়ে দেখে সিমি নামটা জ্বলজ্বল করছে। নিশান রিসিভ করে কানে ধরতেই সিমি বলে উঠলো,,
“আম্মু আমি আর সামু কিন্তূ বাড়ি যাচ্ছি না। পরপর দুই দিন প্রায় আড়াই দিন থেকেছি বাড়িতে। এখন হোস্টেল এ যাওয়ার সময় হয়েছে তাই আমরা চলে আসছি। বড়ো আব্বু কে কল দিয়ে বলে দিয়েছি। এখন তুমি টেনশন করবে তাই তোমাকে জানিয়ে দিলাম।”
সিমির কথা শেষ হতেও নিশান কিছু বললো না হাতে থাকা কাঁচের গ্লাস টা শুধু জোরে চেপে ধরলো। জিহান তাকিয়ে আছে নিশানের দিকে সে কিছু বুজতে পারছেনা। সিমি তার মায়ের কথা শুনতে না পেয়ে আবারো বললো,,
“আম্মু রাগ করে থেকো না প্লিজ, আমি আবারো যাবো তো ওই বাড়িতে এমন কর না..!”
সিমির বাকি কথা শেষ করার আগেই নিশান রোজিনার ফোন টা ফ্লোরে জোরে চেলে ফেলে দিলো। অতিরিক্ত চাপ দেয়াই কাঁচের গ্লাস তাও ভেঙে গেলো। কাঁচ ভেঙে নিশানের হাতে ঢুকে গেলো। নিশান উঠে দাঁড়ালো। কাঁচ ভাঙার শব্দ আর মোবালই ভাঙার শব্দ পেয়ে রোজিনা, কিয়া, মেহেরিমা আর সেলিনা বাইরে আসলো। এসে দেখলো নিশানের হাত থেকে রক্ত পড়ছে গলগল করে ফ্লোর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। সেলিনারা এগিয়ে আসতে নিশান উঠে দাঁড়ালো। প্যান্ট এর পিছনের পকেট থেকে একটা রুমাল বাহির করে সেইটা হাতে জড়িয়ে নিয়ে হনহন করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। নিশান কে এইভাবে যেতে দেখে জিহান ও দৌড় দিলো তার সাথে না জানি আবার কি অঘটন ঘটায়। এইদিকে বাড়ির ভিতরে সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে পড়লো কি থেকে কি হলো কেউ কিছু বুজতে পারছেনা। নিশান বাইরে বেড়িয়ে এসে তার বাইক নিয়ে জিহানের জন্য অপেক্ষা না করে ফুল গিয়ারে গাড়ি চালাতে লাগলো। উদ্দেশ্য ভার্সিটি। জিহান ও নিজের বাইক নিয়ে নিশানের সাথে যেতে লাগলো।
সিমিদের ক্লাস শেষ তাই ওদের ছুটি হয়ে গেছে একটার সময়। জারা আর রাত্রি সিমিদের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। তারা চৌধুরী
ম্যানশন এ যাবে। সিমি আর সামিয়া একটা রিক্সা নিয়ে হোস্টেল এর দিকে গেলো।প্রায় বিশ মিনিট পরে তারা হোস্টেল এর সামনে এসে দাঁড়ালো। রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে দুইজনে উপরে তাদের রুমে গেলো। রুমে গিয়ে বসতেই, তারা বাইকের শব্দ শুনতে পেলো। বেশি পাত্তা দিলো না। এইদিকে নিশান এর বাইক থামলো মহিলা হোস্টেল এর সামনে। সে দারোয়ান কে বললো,,
“ঈশিতা জাহান সিমি নামে যে মেয়েটা আছে এইখানে চেনেন আপনি?”
দারোয়ান একটু ভেবে বললো,,
“হ্যা চিনি তো।”
নিশান — “Good তো কোন জায়গায় তার থাকার জায়গা বা রুম।”
দারোয়ান একবার নিশান কে মাথা থেকে পা পযন্ত দেখে নিলো। তারপর সিমি কোন রুমে আছে বলে দিলো। নিশান উত্তর পেয়ে ভিতরে ঢুকতে বাঁধা দিলো দারোয়ান নিশান দারোয়ান কে পিছে ফেলে এগিয়ে গেলো। হোস্টেলের মেয়ে গুলো সব ঝাঁক দিয়ে নিশানের পিছু যেতে লাগলো। নিশান কাউকে পরোয়া না করে সোজা সিমির রুমের দরজার সামনে এসে টোকা দিলো। সিমি আর সামিয়া বাইরে চিৎকার শুনতে পাচ্ছে কে এল যে চিৎকার করছে আর কেই বা নক করছে। তাদের ভাবনার মধ্যে আবারো নক করলো নিশান। সিমি এইবার উঠে এসে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে সামনে কে আছে দেখার আগেই শক্ত পক্ত এক হাতের চড় পড়লো তার ডান গালে। সিমির মাথা যেন ঘুরে উঠলো ডান গালে হাত দিয়ে নিজেকে সামলাতে গিয়ে আবারো চড় খেলো বাম গালে। সিমি হয়তো সত্যি এইবার অজ্ঞান হয়ে যাবে চড় তো না যেন বাঘের থাবা। সিমি দুই গালে হাত দিয়ে সামনে তাকানোর চেষ্টা করলো।চোখে পানি ভীড় করেছে তাই ঝাঁপসা লাগছে। চোখ বন্ধ করে আবারো তাকাবে নিশান আবারো চড় বসালো সিমির গালে। সিমি এইবার কান্না করে দিলো কান্না মাখা কণ্ঠে বললো,,
“কে ভাই তুই আমা..!”
বাকি কথা শেষ করার আগে নিশান আবারো একটা চড় মারলো সিমির গালে। সিমি এইবার বলে উঠলো,,
“আমার ব্যাথা লাগছে, আপনি মারছেন কেন কে আপনি?”
সিমি এইবার দুই গালে হাত দিয়ে চোখ পিটপিট করে সামনে তাকাতেই ৫০০ ভোল্টেজ এর শকড খেলো। কারন সামনে আর কেউ নই সত্যি বাঘ ই দাঁড়িয়ে আছে। সিমি কিছু বলবে তখনি নিশান সিমি কে কোলে তুলে নেই। সামিয়া কি বলবে করবে বুজতে পারছেনা। নিশান সিমি কে কোলে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। সিমি হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে কিন্তূ নিশান শক্ত করে ধরে আছে সিমি কে। হোস্টেল এর বাইরে নিয়ে এসে সিমি কে নিয়ে বাইকে উঠলো নিশান। সিমি একদম নিশানের বুকের মাঝে মিশে আছে। সিমি বললো,,
“একি করছেন আপনি? কোথায় বসালেন আমি এইখানে বসতে পারবোনা।”
নিশান শান্ত কন্ঠে বললো,,
“তুই বসলেও কি না বসলেও কি আমার হার্টবিট শান্ত আছে এইটাই অনেক।”
সিমি কিছু বলবে তখনি নিশান বাইকে টান দেই। সিমি পরে যেতে নিলে নিশান কে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,,
“ও নিশান ভাই আমার ভয় লাগছে,?”
নিশান — “বিলিভ মি ইশু আর একবার ভাই বলে ডাক তখন তোকে সত্যি ফেলে দেবো।”
সিমি কাঁদো কাঁদো সরে বললো,,
“পরেই তো যাচ্ছি।”
নিশান — “আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধর পড়বি না।”
সিমি তাই করলো নিশান কে আরো শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলো নিশানের গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে রইলো। সিমির কপালে নিশানের গলায় উঁচু কেমন জানি ঠেকলো। একটু মাথা উঁচিয়ে ভালো ভাবে তাকাতে বুজলো এইটা Adam’s apple.. সিমি আর একটু তাকাতে আবারো পরে যেতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নিশান কে। নিশান বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের মত বাইক চালাতে লাগলো।
এইদিকে জিহান হোস্টেলে এসে দেখে সামিয়া বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। জিহান সামিয়া কে বললো,,
“অপেক্ষা করে লাভ নেই, ও ফিরবে না আর আমার সাথে বাড়ি চল।”
বলে জিহান সামিয়া কে নিজের বাইকে উঠতে বললো। সামিয়া আনইজি ফিল হতে লাগলো। তাও উঠে বসলো। জিহান বললো,,
“ধরে বসো।”
সামিয়া — “সমস্যা নেই।”
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৬
জিহান কিছু না বলে বাইক চালাতে হাল্কা ব্রেক লাগতেই সামিয়া একদম জিহানের কাছাকাছি চলে আসলো জিহানের পেটে হাত দিয়ে রাখলো। জিহান বললো,,
“প্রথমেই বলেছি ধরে বসতে।”
সামিয়া — “সরি সরি।”
বলে একটু সরে এসে জিহানের কাঁধে হাত দিলো। জিহান ও চৌধুরী ম্যানশন এর দিকে রওনা দিলো।