তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৬

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৬
আমেনা আক্তার

রাজ ফোনটি রিসিভ করে বলল।
তুই এত রাতে আমার বোনের মোবাইলে ফোন করেছিস কেনো।
রাজের কথায় আব্রাহাম ভাব অলসহীন ভাবে উত্তর দিলো।
তোর বোনের সাথে প্রেম করার জন্য।
আব্রাহামের কথায় রাজ মুহূর্তের মাঝে শব্দ করে হেসে উঠলো। এবং আব্রাহামের কথার প্রতি উত্তরে বলল।
শালা তোর আমার বোনের সাথে প্রেম করার যোগ্যতা আছে। তোর আমার বোনের সাথে তো দূরের কথা কারো সাথে প্রেম করার যোগ্যতা নেই।যার মেয়েদের সাথে কথা বলতেও এলার্জি সে নাকি করবে প্রেম। আগে মেয়েদের সাথে প্রেমের কথা বলা শিখ তারপর প্রেমের কথা বলতে আসিস।
রাজের কথায় আব্রাহাম বিরবির করে ফোনের উপাস থেকে বলল।
প্রেমের কথা বলতে পারিনা দেখেই তো আজ মরন যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে।
রাজ আব্রাহামের বিরবির করে বলা কথা বুঝতে না পেরে বলল।
কি বললি,

কিছু বলিনি, এখন ঘরে গিয়ে ঘুমা কাল সকালে আবার কলেজে যেতে হবে।
রাজ আব্রাহামের সাথে কথা শেষ করে ফোন রেখে দিয়ে আয়না কে বলল।
ও বোধহয় ভুলে তোকে ফোন দিয়ে দিয়েছে। তুই এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে ঘুমা।এত পড়াশোনা করলে মাথার তার সব ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেও তো তোর সকল তার ছিড়া।
কথাটি বলেই রাজ আয়নার রুম থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো তখনি আয়না রাজের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
তোমার বন্ধু যদি সত্যি আমার সাথে প্রেম করার জন্য ফোন দিয়ে থাকে তাহলে?
রাজ প্রতি উত্তরে বলল।
তাহলে আমি নিজে তোদের বিয়ে দিবো।
ভাইয়ের কথা শুনে আয়না দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
আমি তোমার বন্ধুকে বিয়ে করব না।মরে গেলেও না।
তোর মরে আমার বন্ধুকে বিয়ে করতে হবে না।বেঁচে থেকে বিয়ে করলেই হবে।
কথাটি বলেই রাজ চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আর এদিকে আয়না রাগে দুঃখে বই বন্ধ করে ঘুমাতো চলে যায়।
বিছানায় শুয়ে রয়েছে আয়না কিন্তু কিছুতেই ঘুম চোখে ধরা দিচ্ছে না। আয়না অতীতের কথা বারবার মনে পরছে।সে কতটা পাগল ছিল আব্রাহামের জন্য ওই দিন আব্রাহাম তার বাড়িতে আয়না কে প্রত্যাখ্যান করার পরেও বেশরমের মতো প্রতি রাতে আব্রাহাম কে ফোন করে নিজের মনের কথা প্রকাশ করতো।
অতীত…
আয়না ফোন সামনে নিয়ে বসে আছে। আব্রাহাম কে ফোন করবে না করবে না ভেবেও ফোনটি হাতে তুলে নিয়ে আব্রাহামের নাম্বারে ফোন করে। কিছুক্ষণ ফোন বাজার পরে আব্রাহাম ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল।
হ্যালো ,
আব্রাহামের ঘুমময় কন্ঠ শুনে আয়না আব্রাহামের প্রেমে বোধহয় আরো একবার পরে গেল। নিজের চোখ বন্ধ করে আয়না বলে উঠলো।
আব্রাহাম ভাই,

ফোনের উপাসে আয়না বুঝতে কথাটি পেরে মুহূর্তের মাঝে আব্রাহামের ঘুম ছুটে গেল। এবং ক্রোধে আব্রাহামের রক্ত যেনো টগবগ করে উঠলো।এই মেয়েকে এত বুঝানোর পরেও এই মেয়ে ওর পিছু পরে আছে। আব্রাহাম রাগান্বিত কন্ঠে বলল।
কি বলবি? তাড়াতাড়ি বল।
তুমি যানো আমি কি বলতে ফোন করেছি তবুও জিজ্ঞেস করছো।
হ্যা জিজ্ঞেস করছি কারণ আমার সব সময় মনে হয় তুই হয়তো আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কেনো কথা বলতে ফোন দিস। কিন্তু না প্রতিবার তোর আজেবাজে কথা আমার শুনতে হয়।
আমার ভালোবাসা তোমার আজেবাজে কথা মনে হয়।
হ্যা হয় তবুও,এই কথাটি একশো বার বলার পরেও তো বেহায়ার মতো বারবার ফোন করিস।
আব্রাহামের কথায় আয়না একটি মলিন হাসি দিয়ে বলল।
এমন না হয়,এই বেহায়া আমাকে দেখার জন্য তুমি সব কিছু করতে রাজি থাকো। কিন্তু ওইদিন আমি তোমার দিকে ফিরেও না তাকায়। তখন তোমার অনেক কষ্ট হবে সত্যি বলছি। এখন যেমন তোমার অবহেলা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে তোমনি আমি চাই না তোমার কথাগুলো আমাকে এতটা আঘাত করুক পরবর্তীতে আমি তোমার কষ্টের কারণ হয়ে যায়।

আমি তোর সাথে কথা বলতে চাই না ফোন রাখ।
কথাটি বলেই আব্রাহাম ফোন রেখে দেয় আর আয়না বিছানায় শুয়ে কান্না করতে থাকে।আজ আরেকটি রাত হয়তো তার নির্ঘুম কাটবে।
বর্তমান
আয়না নিজের অতীতের কথা ভাবা বন্ধ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয় এখন আর আয়নার এইসকল কথায় কেনো তফাৎ পরে না।এই কথাটি নিজের মনকে বুঝাতে বুঝতে ঘুমিয়ে পড়লো আয়না।

মহিমা বিরক্তিকর নজরে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে। যখন থেকে নিজের বাবা ও স্বামীর সত্য জেনেছে মহিমা সেদিন থেকেই তার পুরুষ মানুষের উপর এক ধরনের ঘৃনা চলে এসেছে।তার মধ্যে ওর মা দুদিন পর পরই এই আধ পাগল লোকটিকে ফোন করে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে আসার পরেই নিলয় মহিমার আসে পাশে ঘুরা ঘুরি করতে থাকে।যাতে মহিমা বরাবরের জন্যই বিরক্ত হয়।এত বুঝানোর পরেও রেহানা বেগম মহিমার কথা না শুনে তার বিরক্ত বাড়ানোর জন্য নূরকে বলে নিলয়কে বাড়িতে নিয়ে আসে।
নিলয় মহিমার দিকে তাকিয়ে একটির পর একটি কথা বলে যাচ্ছে। আসলে মহিমার দিকে তাকিয়ে বললে ভুল হবে মহিমার উঁচু পেটের দিকে তাকিয়ে তার বাবুর সাথে কথা বলছে।

মহিমার এখন প্রচুর রাগ লাগছে নিলয়ের উপর তবুও মুখ বুজে সব সহ্য করছে শুধু মাত্র মায়ের জন্য। রেহানা বেগম ওকে ভালোভাবে বলে দিয়েছে।ছেলেটি অসুস্থ ওর সাথে উঁচু গলায় কথা বলবি না। কিন্তু নিলয়ের কথায় মহিমা এতটাই বিরক্ত হলো যে তাকে একটি ধমক দিয়ে বসলো। নিলয় কে ধমক দিতেই নিলয় কিছুক্ষণ মহিমার দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে উঠে চলে গেল।
দৃশ্যটি রেহানা বেগম দেখে মহিমার কাছে এসে বললো।
তুই সবসময় ছেলেটির সাথে এমন আচরন করিস কেনো? তুই কি দেখিস না ছেলেটা অসুস্থ।
অসুস্থ তো ওর হসপিটালে থাকা উচিত মা। ওকে তুমি আমাদের ঘরে নিয়ে এসেছিস কেনো। আমার সহ্য হয়না ওকে।

রেহানা বেগম মহিমার পাশে বসে ওর হাত ধরে বললো।
আমি জানি তোর সাথে যা হয়েছে তাতে তুই অনেক ভেঙ্গে পরেছিস। কারো উপর বিশ্বাস করা তোর জন্য অনেক কঠিন। কিন্তু এর মানে এই না তুই তোর মনের কষ্ট অন্য জনের উপর প্রয়োগ করবি। নিলয়ের মানসিক সমস্যা হওয়ার পরেও কিন্তু ও কখনো তোর সাথে খারাপ আচরণ করেনি।আমি জানি প্রথম দিন ও যা করেছে তা ঠিক ছিল না। কিন্তু দেখ তার পরে আমি ওকে বুঝিয়েছি ও তারপরে এমন আর কেনো আচরণ করে নি।
রেহানা বেগমের কথা মহিমা চুপচাপ শুনে তার দিকে তাকিয়ে বলল।
মা ওকে বলে দিবে আমার সামনে আসতে আমার কেনো জানি ওকে সহ্য হয়না।
কথাটি বলেই মহিমা নিজের রুমে চলে যায়।আর রেহানা বেগম তাকিয়ে থাকে মেয়ের যাওয়ার পানে।

সিরাত অফিসের উদ্দেশ্যে আজ একটু তাড়াতাড়ি বের হয়েছে। প্রতিদিন বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত হেঁটে যায় সিরাত।তাই আজ ও হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত। সিরাত থেকে বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস এখন দুই মিনিটের দূরত্বে আছে।সিরাত হঠাৎ লক্ষ্য করলো একটি জায়গায় কিছু লোকের জটলা লেগে আছে। অধীর আগ্রহে লোকগুলো কিছু একটা দেখছে।সিরাত সেখানে থেকে বাস স্ট্যান্ড এর উদ্দেশ্যে আগে বাড়ার জন্য পা বাড়তেই শুনতে পেলো মানুষ বলাবলি করছে।
কিছুক্ষণ আগেই এক্সিডেন্ট হয়েছে।লোকটি বোধহয় এখনো বেঁচে আছে।

লোকগুলোর কথা শুনে সিরাতের পা থেকে যায় সে কৌতুহল বশত আগে বাড়ে কি হয়েছে দেখার জন্য।সিরাত মানুষ ঠেলে আগে বাড়তেই দেখতে পায় একটি গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়েছে।সিরাতের গাড়িটি পরিচিত মনে হলো।সিরাত একটু আগে বাড়তেই দেখতে পেলো গাড়িটির ভিতরে রুবেল মির্জা রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে।সিরাত রুবেল মির্জাকে এই অবস্থায় দেখে প্রথমে নিজেকে শান্ত করে। এখন ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৫

নিজেকে শান্ত করার পর সিরাত কিছু লোকের সাহায্য রুবেল মির্জাকে নিয়ে একটি ট্যাক্সিতে উঠে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।সিরাত গাড়ির ভিতর বসে আছে। রুবেল মির্জার মাথা সিরাতের কুলে।সিরাত ফোন লাগায় নূরের ফোনে রুদ্রের নাম্বার সিরাতের কাছে নেই।আর এই সময় রুদ্র তার বন্ধুদের সাথেই আছে হয়তো।
সকল বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে তখনি নূরের ফোন বেজে উঠলো। নূর ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখতে পেলো সিরাত ফোন করেছে।নূর ফোনটি রিসিভ করতেই…

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৭