তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৬

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৬
আমেনা আক্তার

গাড়ি এসে থেমেছে সিরাতের বাড়ির সামনে।মূলত নূর বলেছিল সর্ব প্রথম সিরাতের বাড়িতে গাড়ি থামাতে এর কারণ অবশ্য সিরাত ও রুদ্র জানতে চাইনি।সিরাত গাড়ি থেকে নামতেই নূর রুদ্রকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
তুই ও গাড়ি থেকে নাম।
নূরের কথা শুনে রুদ্র ব্লু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।
আমি কেনো নামবো?
কারণ আমরাও সিরাতের বাসায় যাবো।
নূরের কথা শুনে রুদ্র ও নূর একসাথে বলে উঠল।
কেনো?
যাওয়ার পরেই বুঝতে পারবি।

নূরের কথা শুনে সিরাত ও রুদ্র আর কেনো কথা না বলে হাঁটা শুরু করে। কারণ তাদের মধ্যে এখন আর কিছু বলার মন মানসিকতা নেই। অনেক ধকল গিয়েছে সবার উপর দিয়ে। ওদের তিনজনেরই বিশ্রামের প্রয়োজন।সিরাতের পা যেনো কেনো মতেই চলছে না।ওর মনে হচ্ছে ও একপা আগাচ্ছে তো দু পা পিছিয়ে যাচ্ছে।ও বুঝতে পারছে না মাকে কি জবাব দিবে।মা ওকে কতটা বিশ্বাস করে কিন্তু সিরাত বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারলো না। নিজেকে আজ সিরাতের ব্যর্থ মনে হচ্ছে। নিজের তিন মেয়ের থেকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস রেহানা বেগম সিরাত কে করে।তাই সিরাতের বেশি ভয় লাগছে।ওর মায়ের বিশ্বাস না ভেঙ্গে যায়।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সিরাত তাদের ফ্ল্যাটের সামনে পৌঁছালো।সিরাতের হাত কাঁপছে কলিং বেল বাজাতে।সিরাত নিজেকে ধাতস্থ করছে মায়ের সামনে যাওয়ার জন্য।সিরাত কলিং বেল বাজানোর আগে রুদ্র কলিং বেল বাজায়। এবং সিরাতকে উদ্দেশ্য করে বলল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমাদের কাছে সারাদিন নেই যে তুমি এখানে দাঁড়িয়ে নাটক করতে থাকবে।
রুদ্র কথাটি শেষ করতেই সিরাতদের ঘরের দরজা খুলে যায়।সকলে সেখানে তাকানোর আগেই থাস করে থাপ্পড়ের শব্দ বেজে উঠল সকলের কানে।সবাই হতভম্ব যায় কিন্তু থাপ্পড় তো সিরাতের গালে পড়ার কথা ছিল তাহলে থাপ্পড় টি রুদ্রের গালে পড়লো কিভাবে। রুদ্র হতভম্ব হয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় তার বাবা রুবেল মির্জা দাঁড়িয়ে আছে সামনে।
শুধু যে রুবেল মির্জাকে দেখে রুদ্র অবাক হয়েছে তা নয়।সিরাত ও প্রচুর অবাক হয়েছে।এটি ভেবে রুবেল মির্জা তাদের বাড়িতে কিভাবে আসলো কিংবা তিনি রুদ্রকে থাপ্পড়ই বা কেনো মারলেন।ওনারা সব জেনে গেলেন না তো। কিন্তু উনারা কিভাবে কিছু জানবেন।সিরাতের ভাবনার মাঝে নূর বলে উঠলো।
আমি জানিয়েছি সকলকে, নূরের কথা শুনে রুদ্র ও সিরাত দু’জনেই ওর দিকে তাকায় তখনি রুবেল মির্জা তাদের উদ্দেশ্য করে বলল।

আমি চাচ্ছি না বাইরের মানুষদের আমাদের ব্যক্তিগত কিছু জানাতে।তাই ভিতরে আসে তারপর কথা হবে।
রুবেল মির্জার কথা শুনে ওরা তিনজন ভিতরে প্রবেশ করল। ভিতরে প্রবেশ করে দেখে রুদ্র ও সিরাতের পরিবারের সাথে রুদ্র ও নূরের বন্ধুরাও এখানে আছে।সিরাত সকলকে এড়িয়ে মায়ের দিকে তাকায়। মায়ের দিকে তাকাতেই যেনো সিরাতের কলিজা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
সিরাত আর নিজেকে সংযত করে রাখতে পারলো না।সে মায়ের কাছে গিয়ে মাকে জাপটে ধরে বলল।
মা তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না। তুমি কি বিশ্বাস করো তোমার মেয়ে কিছু জেনে বুঝে কেনো ভুল কাজ করতে পারে।আমি তোমার মেয়ে মা আমি কখনো এমন কাজ করবো না যাতে তোমার মাথা নিচু করে থাকতে হয়।আমি যা কিছু করেছি বাধ্য হয়ে করেছি।

সিরাত এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলো। কিন্তু রেহানা বেগম কেনো প্রতি উত্তর না করে আগের মতোই ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।সিরাত মাকে ছেড়ে দেয় একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে অতঃপর সকলের দিকে তাকিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলল।
আমি কেনো দোষ করিনি তাই আমি কাওকে নিজের কেনো কাজের জন্য বর্ণনা দিবো না।সিরাতের কথা শুনে রুবেল মির্জা বলল।
তোমাদের কেনো কিছুর বর্ণনা দিতে হবে না।যা হয়েছে তা তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে না করলেও এতে তোমাদের ও দোষ ছিল। তাই এর সঠিক সমাধান আমাদের করতে হবে।
রুবেল মির্জার কথা শুনে রুদ্র সোজা সাপ্টা উত্তরে বলল।
কিছু করতে হবে না তোমাদের আমি আজই ডিভোর্স পেপার তৈরি….

রুদ্র আর কিছু বলার আগেই রুদ্রের গালে পড়লো দ্বিতীয় থাপ্পড়।আর এটি দিয়েছে রুদ্রের মা। রুদ্র অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। কেননা রুদ্রের মা রুদ্র কে একটি পিঁপড়া কামড়ালে ও যেখানে কষ্ট পায় সেখানে আজ রুদ্রের মা রুদ্র কে থাপ্পড় মেরেছে। রুদ্রের মা রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
বিয়ে কি কোনো ছেলেখেলা মনে করেছিস তুই।যে করলি আর ছেড়ে দিলি। তুই মানিস আর না মানিস এখন থেকে সিরাত তোর স্ত্রী আর মির্জা বাড়ির বউ এখন থেকে তোর ওর সাথেই সংসার করতে হবে।আজ থেকে তোরা দুজন সাধারণ স্বামী স্ত্রীর মতো সংসার করবি।
রুদ্রের মায়ের কথা শুনে রুদ্র ও সিরাত একসাথেই বলে উঠলো।
অসম্ভব,

কথাটি বলেই দুজন দুদিকে চলে যায়।
রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে সিরাতদের ব্যালকনিতে শুধু সে দাঁড়িয়ে নেই রাগে ফুঁসছে রুদ্র।তখনি রুদ্রকে পিছন থেকে ঘিরে ধরে ওর বন্ধুরা আব্রাহাম রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
বিয়ে করে এখন কেমন লাগছে দোস্ত।
আব্রাহামের কথার সাথে তাল মিলিয়ে রাজ বলল।
অবশ্য খুব অসাধারণ অনুভূতি হচ্ছে। কারণ যেই মেয়েকে রুদ্র সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে তার সাথেই ওর বিয়ে হয়েছে।

রুদ্র তার বন্ধুদের কথা শুনে ওর রাগ যেনো কয়েক ধাপ আরো বেড়ে গেল।তখনি রুদ্র দেখলো নূর ও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে । রুদ্র রাগে গজগজ করতে করতে নূরের কাছে গিয়ে বললো।
তুই তো ওদের আমার বিয়ের কথা বলে দিয়েছিস কিন্তু ওদের কি তোর কথা বলেছিস।যে শুধু আমার ও সিরাতের বিয়ে হয়নি।তোর ও বিয়ে হয়ে গিয়েছে একজন অচেনা ব্যাক্তির সাথে।
রুদ্রের কথা শুনে যেনো সকলে আকাশ থেকে পড়লো। হৃদিতা নূরের কাছে এসে বলল।
রুদ্র কি বলছে, আমাদের পাথরের বুকে ফুল ফুটালো কে।
হৃদিতার কথার সাথে তাল মিলিয়ে আরশাদ বলল।
তুই আমাদের থেকে এত বড় সত্য লুকাতে পারলি শয়তান,তুই কি চাস আমরা আমাদের দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করতে না পারি।
আরশাদের কথা শুনে রুদ্র এবার হেসে বলল।
তোদের তো একটি ইন্টারেস্টিং কথা বলাই হয়নি, জানিস আমাদের দুলাভাই কি করে?
রুদ্রের কথা শুনে সকলে একসাথে বলে উঠল।
কি করে?
রাজনীতি.

রুদ্রের কথা শুনে অশান্ত পরিবেশটি মুহূর্তের মধ্যে শান্ত রুপে পরিনত হলো। ওদের সকলের মনে হচ্ছে কানে কিছু ভুল শুনেছে। নূরের স্বামী তাও রাজনীতি এ কি আধো সম্ভব।সকলে নূরের দিকে বড়বড় চোখ করে তাকায় নূর ওদের এভাবে তাকানো দেখে বলল।
ও আমার কিছু লাগে না, আমাদের সাথে যাই কিছু ঘটেছে ওর জন্যই ঘটেছে।আমি আর একবার ওর কথা শুনতে চাই না। কথাটি বলেই নূর চলে যায় সেখান থেকে।
সিরাত নিজের রুমে চোখ বন্ধ করে খাটের সাথে আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে। ভিশন ক্লান্ত এখন ও রাত এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারেনি। শুধু সিরাত কেনো রুদ্র ও নূর ও তো এক মুহুর্তের জন্যও ঘুমাইনি।রাতে যেনো ঘুম ওদের চোখ থেকে উড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন যেনো কেনো মতে চোখ দুটোকে খুলে রাখতে পারছে না।
সিরাতের দরজায় নক করে রেহানা বেগম।সিরাতের অনুমতি পেয়ে উনি রুমে প্রবেশ করে।সিরাত নিজের দুর্বল চোখ দুটো জোড় করে মেলে তাকায় মায়ের দিকে।মাকে দেখে সিরাত একটি শুষ্ক হাসি দেয় তখনি রেহানা বেগম এসে জাপটে ধরে রেহানা বেগম।

সিরাত আর নিজেকে সামলাতে পারে না।সেও মাকে জাপটে ধরে কেঁদে ফেললো। এতক্ষণ সকলের সামনে নিজেকে শক্ত রাখলেও মায়ের সামনে যেনো সকল কষ্ট চোখের অশ্রুর মাধ্যমে প্রকাশ করছে। রেহানা বেগম স্নেহের হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সিরাতকে বলল।
কাল সারারাত আমার মেয়েটার উপর দিয়ে অনেক কিছু গিয়েছে আমি জানি। কিন্তু আমার মেয়ে নিজের কষ্ট কারও সামনে প্রকাশ করবে না।এটিও আমি ভালোভাবে জানি।আমার আম্মু তুই চিন্তা করিস না আমি ভালোভাবে জানি তুই কখনো নিজের ইচ্ছায় এমন কিছু করবি না যাতে আমি কষ্ট পাই।
সিরাত কান্না করতে থাকে তার মাকে ধরে তখন রেহানা বেগম আবার সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।
এই জীবন অনেক কঠিনরে মা,আমরা যতই বলি আমাদের কারও প্রয়োজন নেই কিন্তু সকলেরই জীবনে একজন হাত ধরার মতো কারও প্রয়োজন হয়।আমি জানি তোদের বিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়েছে। কিন্তু আমি চাই তুই এই বিয়েটাকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখ।বিয়ে কেনো ছেলে খেলা না তাই আল্লাহ তায়ালা যখন তোর ভাগ্য রুদ্র কে লিখে দিয়েছে তখন নিশ্চয়ই উনি উত্তম পরিকল্পনা করেই তোদের এক বন্ধনে আবদ্ধ করেছে।তাই নিজের ভাগ্যকে একটি সুযোগ দিয়ে দেখ।

সিরাত মায়ের কথা শান্ত হয়ে শুনে মা ওকে যা বলতে চাইছে তা সিরাত ভালোভাবে বুঝতে পারছে।সিরাত বুঝতে পারছে ওর মা চাইছে ও যেনো রুদ্রের সাথে নতুন জীবন শুরু করে।সিরাতের মা সিরাতের কাছে কখনো বেশি কিছু চাইনা তাই সিরাত এটি মায়ের ইচ্ছা ভেবে মেনে নিলো। কিন্তু মনে মনে এই ওয়াদা ও করলো ওই বদ মেজাজি রুদ্র কে ও সোজা করে ছাড়বে।
রেহানা বেগম সিরাতকে রাজি করাতে পেরে একটি শান্তির নিশ্বাস ছাড়লো। এদিকে নূর একা এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।তখনি নূরের পিছন থেকে হৃদিতা এসে ওকে জাপটে ধরে বলল।
আমরা আছি তো জান,আমরা যতই তোকে নিয়ে ঠাট্টা করি আমরা জানি তুই এখন কতটা কষ্টে আছিস। তোর আরো বেশি কষ্ট লাগছে এটা ভেবে তোর পাশে তোর পরিবার নেই। কিন্তু আমরা আছি না আমরা সবাই তো একটি পরিবার।

নূরের কথার সাথে তাল মিলিয়ে রুদ্র বলল।
হৃদয় ঠিকই বলেছে, তোর কিছু চিন্তা করার প্রয়োজন নেই আমরা সব সময় তোর সাথে আছি। পরিস্থিতি যেই রকম হোক না কেনো। সকল পরিস্থিতিতে তুই আমাদের পাশে পাবি।
বন্ধুদের কথায় নূর কিছুটা আশ্বাস পায়। এখন কে আছে ওকে সামলানোর ওর বন্ধুরা ছাড়া। তবুও যে মনের ভিতর যেই ঝড়ে হাওয়া বয়ে চলেছে তা থামছে না।একই পরিস্থিতির সাথে লড়াই করছে সিরাত ও রুদ্র।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৫

রুদ্র ও সিরাত দাঁড়িয়ে আছে রুদ্রদের বাড়ির দরজার বাইরে। শাহানারা মির্জা বরণ ডালা তৈরি করছে। রুবেল মির্জা ও রুদ্রের বন্ধুরা ভিতরে দাঁড়িয়ে মুখ টিপে হাসছে।আর রুদ্র তাই করছে যা ও সবসময় করে রাগে গজগজ।সিরাতের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না ও খুশি হয়েছে নাকি কষ্ট পেয়েছ। শাহানারা মির্জা রুদ্র ও সিরাত কে বরণ করা শেষে রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
এখন বউকে কুলে তুলে ঘরের ভিতরে প্রবেশ কর।
শাহানারা মির্জার কথায় রুদ্র…

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৭