তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৭

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৭
আমেনা আক্তার

সাহানারা মির্জার কথাটি বলার সাথে সাথেই রুদ্র সিরাত কে কুলে তুলে নেয়। এবং বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে । বিনা বাক্যে রুদ্র এভাবে সাহানারা মির্জার কথা মেনে নেওয়ায় সকলে বেশ অবাক হয়।সব চাইতে বেশি অবাক হয় সিরাত । কিন্তু সিরাতের অবাকতার রেশ তখনি কেটে যায় যখন রুদ্র সিরাত কে বলে।
তুমি এটা ভুলেও ভেবো না আমি এই বিয়ে মেনে নেওয়ার কারণে তোমাকে কুলে তুলে নিয়েছে।তোমাকে কুলে তুলে নেওয়ার একটিই কারণ।যত দ্রুত তোমাকে আমি আগলে নিয়েছি তত দ্রুতই তোমাকে নিচে ফেলতে পারি।
কথাটি বলার সাথে সাথেই রুদ্র সিরাত কে হঠাৎ ছেড়ে দেয়।আর সিরাত ধাপ করে পরে সোফার উপরে।এতে সিরাত সামান্য ব্যথা পায়। কিন্তু রুদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

সিরাত কারও সাহায্য ছাড়াই ওঠে বসে এবং সাহানারা মির্জার চিন্তিত মুখ দেখে সিরাত হাসি মুখে বলল।
আপনি চিন্তা করবেন না মা,আমি আপনার ঘাড় ত্যাড়া ছেলেকে সোজা করে ফেলব।
নিজের ছেলের সম্পর্কে এমন বাক্য শুনে যেই কোনো মা রাগে ফেটে পরবে। কিন্তু সাহানারা মির্জা ও রুবেল মির্জা খুব খুশি হয় সিরাতের কথা শুনে। ওনাদের চাওয়া বোধহয় পূর্ণ হয়েছে নিজের ঘাড় ত্যাড়া ছেলের জন্য উপযুক্ত মেয়ে পেয়েছেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

চোখ বন্ধ করে কেবিনের বেডের উপর চোখ বন্ধ করে আধ শোয়া অবস্থায় বসে আছে আদিত্য। কেবিনের এক সাইডে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আরিফ।আরিফ হলো আদিত্যর দলের লোক শুধু দলের লোক বললে ভুল হবে একদম কাছের লোক আদিত্যের এই আরিফ।আর আদিত্যর পাশে বসে আদিত্যের বাবা আফজাল চৌধুরী আদিত্যকে উদ্দেশ্যে করে বলছে।
তোর উপর যারা হামলা করেছিল, ওদের আমি দেখে নিবো। তুই এই বিষয়ে চিন্তা করিস না। তুই এখন শুধু রেস্ট নে তোর হসপিটালে আরো কিছুদিন থাকতে বলেছে ডাক্তার।
ওদের বাঁচাতে চাইছো আমার হাত থেকে?

আদিত্যর কথায় থতমত খেয়ে যায় আদিত্যের বাবা। আফজাল চৌধুরী খুব ভালোভাবে জানেন আদিত্য যদি একবার ওই লোকগুলোকে হাতে পায় যারা ওর সাথে বেইমানি করে ওকে মারার চেষ্টা করেছে। তাদের কি অবস্থা করতে পারে। আদিত্যর মন পাথরের হলেও আফজাল চৌধুরীর মনে এখনো মায়া দয়া বেঁচে আছে তাই তো উনি চাই তাদের কেনো করুন শাস্তি না হয়। আফজাল চৌধুরীর ভাবনার মাঝেই আদিত্য আবার বলল।
ওই লোকগুলো কে ছিল যারা আমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে?
আমি জানিনা ওরা কে ছিল?আমি হসপিটালে আসতেই ওরা চলে গিয়েছে। কিন্তু তুই জানিস ওরা দুজন মেয়ে ও একজন ছেলে ছিল। ওদের মধ্যে একজন মেয়ের কথায় যে ত্যেজ ছিল।ওর ত্যেজের সামনে আমার ও হার মানতে হয়েছে।

আফজাল চৌধুরীর কথা শেষ হতেই আদিত্য বলল।
ওই দুই মেয়ের মধ্যে একজনের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।
কেবিনের মধ্যে বোধহয় বোমা বিস্ফোরণ হলো।আরিফ ও আফজাল চৌধুরী দুজনে যেনো এক জায়গায় জমে গিয়েছে দুজনের কানে এখনো বাজছে এই মাত্র আদিত্য কি বলেছে।তারা দুজন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে।আফজাল চৌধুরী আদিত্যকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
কি বললি তুই ,
আফজাল চৌধুরীর প্রশ্ন বোধহয় আদিত্যের পছন্দ হলো না। আফজাল চৌধুরী খুব ভালোভাবে জানেন উনার ছেলে এক কথা দুবার বলা পছন্দ করে না।তাই তিনি বললেন ।
কার সাথে বিয়ে হয়েছে তোর, মেয়েটির নাম কি?

আমি জানিনা, এখন আমি সঙ্গানে ছিলাম না। আমার বিয়ে হয়েছে শুধু এতটুকু মনে আছে।এই বিষয়ে তোমার মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।আমি হ্যান্ডেল করে নিবো।
কথাটি বলেই আদিত্য আরিফ কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আরিফ গাড়ি বের কর আমরা এখনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো।
জ্বী ভাই,
কথাটি বলেই আরিফ গাড়ি বের করার উদ্দেশ্যে চলে যায়।আর আফজাল চৌধুরী আদিত্য কে আর কিছু বলার আগেই আদিত্য আমজাদ চৌধুরী কে বলল।
আমি আর একটি কথাও শুনতে চাই না।

কথাটি বলেই আদিত্য বেড থেকে উঠে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। আফজাল চৌধুরী চেয়ে চেয়ে শুধু ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। আল্লাহ জানে উনার এই কঠোর প্রাকৃতিক ছেলের সাথে কোন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আফজাল চৌধুরীকে বেশি এই কথা ভাবাচ্ছে আদিত্যের একটি অচেনা মেয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার পরেও ও এতটা শান্ত কিভাবে অবশ্যই আদিত্যের মাথায় অন্য কিছু চলছে।বড় কথা হলো যখন বাড়িতে সকলে আদিত্যের বিয়ের কথা জানবে তখন কি হবে কি ঝড় বয়বে বাড়ির ভিতরে।নাহ উনার এইসকল কথা ভেবে লাভ নেই ওনার ছেলে কারো কথা শুনার লোক না।তাই আদিত্য সামনে যা করবে শুধু তা দেখে যেতে হবে।
আদিত্য গাড়ি এসে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করে ঢাকার উদ্দেশ্যে। আরিফ অনেকক্ষণ ধরে আদিত্য কে কিছু বলার জন্য হাঁসফাঁস করছে কিন্তু আদিত্য কে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হচ্ছে না।
কি বলবি বল,

আদিত্যর গম্ভীর গলা শুনে আরিফ শুকনো ঢোক গিলে বলল।
ভাই আমরা চাঁদপুর না গিয়ে এখন ঢাকা কেনো যাচ্ছি। চাঁদপুর গেলেই তো আমরা ও পঞ্চায়েত প্রধান থেকে সকল তথ্য বের করতে পারি উনি কাদের কোথায় সকল কিছু করেছে।
তোর কি মনে হয় এখনো।ওই ডাস্টবিনের কিট তোর জন্য এখনো অপেক্ষা করছে।
আদিত্যর কথায় দমে যায় আরিফ,ওর মন খুব আনচান করছে। আদিত্যর না দেখা স্ত্রী ও নিজের ভাবির সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার। কিন্তু কিছুতেই সাহস পাচ্ছে না আদিত্য কে কিছু জিজ্ঞেস করার। আদিত্যর যায়গায় যদি আরিফ হতো এতক্ষণে হয়তো নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হওয়া স্ত্রীর সম্পর্কে জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকতো।ও পাগল হয়ে যেতে নিজের নব বধূর একবার মুখ দর্শন করার জন্য। কিন্তু আদিত্য ওর ভিতর কেনো ভাবান্তর দেখা যাচ্ছে না।ওর সাথে কাল রাতে যে এত বড় একটি ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে কেনো মাথা ব্যাথা নেই ওর।আরিফের নিজের অচেনা ভাবির জন্য ভিশন কষ্ট হচ্ছে।কার কপাল পুড়েছে এই হৃদয়হীন ব্যাক্তি কে বিয়ে করে আল্লাহ ভালো জানেন। আচ্ছা ভাই কি ওই মেয়েকে মেনে নিবে নাকি ওই মেয়ের জন্য ও কেনো শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছে আদিত্য।

অনেকটা সময় পেড়িয়ে গিয়েছে।নূররা অনেক সময় ধরে রুদ্রদের বাড়িতে আড্ডা দিচ্ছে। নূরের বিয়ের সম্পর্কে ওর বন্ধুরা ও সিরাত ছাড়া কেউ জানেনা না। ওরা সকলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাওকে জানাবেও না।আগে নূর নিজেকে ভালোভাবে সামলে নিবে তারপর সিদ্ধান্ত হবে কি করা যায়। রুদ্র কে হৃদিতা বলল।
দোস্ত আজকে তোর বাসর রাত।তোর অনুভূতি প্লিজ আমাদের জানা ভবিষ্যতে তো আমাদের ও এমন সময় আসবে তোর অনুভূতি সম্পর্কে জেনে আমরাও কিছুটা অভিজ্ঞতা নিতে চাইছি।
হৃদিতার কথা শুনে রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
অনেকক্ষণ ধরে তোদের ফালতু কথা শুনছি নিজেদের বকবক বন্ধ কর নাহলে মুখে কষটিপ বেঁধে দিবো তোদের।
রুদ্রের কথা শুনে রাজ ঠাট্টার স্বরে বলল।
ও ঠিকই তো বলেছে তোরা ওকে এখনকার অনুভূতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিস কেনো।তোরা ওকে কাল সকালে আজ রাতের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবি।
রাজের কথা শুনে আব্রাহাম বলল।

আজ রাতের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আর কি জিজ্ঞেস করব।আমার তো মনে হয় রুদ্র সিরাতের ভয়ে রুমেই ঢুকবে না।
আব্রাহামের কথা শুনে সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।আর এদিকে রুদ্র রাগে ফুঁসছে ফুঁসছে বলল।
তোদের কি মনে হয় আমি সিরাতকে ভয় পায়।আমি আমার রুমে ঘুমাবো দরকার পড়লে ওকে রুম থেকে বের করে দিবো। কথাটি বলেই রুদ্র নিজের রুমের দিকে চলে যায়। আর এদিকে ওর বন্ধুরা এখনো হসছে রুদ্রের যাওয়ার পানে তাকিয়ে।
রুদ্র রুমে প্রবেশ করে দেখতে পায় সিরাত নিজের জামা কাপড় ওর কাবার্ড এর ভিতরে রাখছে। রুদ্র এটি দেখে সিরাতের সামনে এসে বলল।

তুমি তোমার জামা কাপড় আমার কাবার্ডের ভিতরে রাখছো কেনো।
কারণ আজ থেকে এটি আমার ও কাবার্ড।
না এই কাবার্ড ও এই ঘরের সকল জিনিস শুধু আমার।আর আমি তোমার সাথে কেনো কিছু শেয়ার করব না।
রুদ্রের কথা শুনে সিরাত স্বাভাবিক ভাবেই বলল।
আমার সাথে কিছু শেয়ার না করতে পারলে তুমি এই রুম থেকে বেরিয়ে যেতে পারো। আমার কেনো সমস্যা নেই।
তুমি আমার রুম থেকে আমাকে বের করে দিবে।
আমি তোমাকে কোথাও বের করছি না। তোমার সমস্যা হবে আমার সাথে থাকতে তাই তোমাকে সমাধান বলে দিচ্ছি।

দেখো,
পরের লাইন আর বলতে পারলো না রুদ্র তার আগেই রুদ্রের একদম কাছে চলে আছে এবং রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আজ আমাদের বাসর রাত আজ দেখা দেখি হবে ঠিক আছে।তার মানে কি এই তুমি দরজা বন্ধ না করেই আমাকে দেখাতে চাইছো।এত দুষ্টুমি কিন্তু ঠিক না।আমি আর তুমি তো এখানেই আছি আমি কি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি বলো।তাই দরজাটা আগে বন্ধ করে আসো তারপর তুমি যা দেখাতে চাও দেখাতে পারো।
সিরাতের কথায় রুদ্র কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ওর ভাবনাতেও ছিল না সিরাত তাকে এইরকম কথা বলতে পারে। রুদ্র নিজের অবাকতার রেশ কাটাতে কাটাতে সিরাত নিজের সকল জামাকাপড় কাবার্ডে রেখে দেয়। রুদ্র কিছুক্ষণের মাঝে নিজেকে স্বাভাবিক করতেই সিরাত কে বলে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৬

কি বলছো তুমি দরজা বন্ধ করে আমি তোমাকে কি দেখাবো ?
এখন তুমি কি দেখাতে চাও এটা তো তুমিই ভালো জানো। আচ্ছা আসলেই তুমি আমাকে কি দেখাতে চাইছিলে বলোতো।
সিরাতের কথায় রুদ্র থতমত খেয়ে যায় আসলেই ও কি দেখাতে চাইছিল সিরাতকে। কিছুক্ষণ ভাবনার মাঝেই রুদ্র বুঝতে পারে সিরাত ওকে কথার জালে ফাসাচ্ছে। রুদ্র আর কিছু বলার আগেই দেখতে পেলো সিরাত বিছানায় শুয়ে পড়েছে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৮