তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৯

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৯
আমেনা আক্তার

কেটে গেছে আরও একটি দিন।কাল রাতে সিরাত সোফায় ঘুমিয়েছে আর রুদ্র বেডে।সিরাতের অনেক অস্বস্তি অনুভব হওয়ার কারণেই ও সোফায় ঘুমিয়েছে। মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন করতে সময় লাগে তোমনি সিরাতের ও একটি সময় লাগবে সব কিছু মানিয়ে নেওয়ার জন্য।সিরাত রুদ্রের বাড়িতে ওর স্ত্রী রুপে আসলেও এখন ওর পক্ষে ওদের সম্পর্ক আগে বাড়ানো সম্ভব না।তাই সিরাত আগে সকল কিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।সিরাত সকাল সকাল উঠে পড়েছে নামাজ পড়ার জন্য কিন্তু রুদ্র কে হাজার বার ডাকার পরেও ওকে নামাজ পড়তে উঠাতে পারছে না।সিরাত ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে এই রুদ্র কে সোজা করা এতটা সহজ হবে না। কিন্তু সিরাত ও কি কম নাকি সিরাত ও তো নিজের জীবনের কঠিন পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করতে অভ্যস্ত।।সিরাত রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
তুমি ঘুম থেকে উঠবে নাকি আমি কিছু করবো, তোমাকে উঠানোর জন্য।

রুদ্র ঘুমের মধ্যে বলে উঠলো।
যা মন চায় করো আমি উঠবো না,
তাহলে তুমি উঠে নামাজ পড়বে না,
না পড়বো না,
আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমার যা করার আমি তাই করি।
সিরাত কথাটি বলেই ওয়াসরুম থেকে এক বালতি পানি এনে বিলম্ব না করে রুদ্রের উপর ঢেলে দেয়। রুদ্র ধরফরিয়ে বিছানা থেকে উঠে পরে। রুদ্রের পুরো শরীর ভিজে একাকার হয়ে গেছে। রুদ্র রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল।
তুমি এটা কি করলে,
সিরাত ভাব অলসহীন ভাবে বলে উঠলো।
আবার দেখতে চাও,
তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে এভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়ার।
তুমি ভুল ভাবছো,আমি তোমাকে শুধু ভিজাইনি তোমাকে আমি গোসল করিয়ে দিয়েছি। তোমার আর কষ্ট করে গোসল করতে হবে না।
সিরাতের কথা শুনে রুদ্রের রাগ আরো বেড়ে গিয়েছে। রুদ্র এক লাফে খাট থেকে নেমে সিরাত কে কিছু বলার আগেই সিরাত নামাজে দাঁড়িয়ে যায়।আর রুদ্র বেচারা সিরাতকে নামাজরত অবস্থায় দেখে আর কিছু বলতে পারে না। রুদ্র রাগে ফুসতে ফুঁসতে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আয়না আজ রাজের ভার্সিটিতে এসেছে উদ্দেশ্যে হলো ভাইয়ার সাথে আজ ঘুড়তে যাবে।রাজ শুধু ওর বন্ধুদের সাথে ঘুড়তে যায়।আয়নাকে সহজে কোথাও নিয়ে যায় না। কারণ ওর মা আয়নাকে কোথায় নিয়ে গেলে অনেক বকা দেয়।উনার মতো মেয়েদের এত বাইরে ঘুরা ঘুরি করা ঠিক না।তাই রাজ যখনি আয়নাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায় ওর মায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে নিয়ে যায়।
তাই আয়না নিজের কলেজ না গিয়ে সোজা ভাইয়ের ভার্সিটিতে এসেছে। ভার্সিটির ভিতরে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পর আয়না দেখে ওর ভাই আব্রাহাম ও আরশাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। নূর ও হৃদিতা এখনো কলেজে আসেনি আর রুদ্র ও সিরাত সকাল সকাল অফিসে চলে গিয়েছে।

আয়না আব্রাহমকে দেখে ওইখানেই থেকে যায়। আয়না আব্রাহাম কে যখনি দেখে তখনি ওর যেনো পুরোনো আবেগ আবার মাথা চারা দিয়ে উঠে। কিন্তু আয়না কিছুতেই নিজের আবেগকে প্রশ্রয় দেয় না আর না ও কখনো দিতে চায়। কারণ আবেগের সাথে সাথে ওর ওই সকল কথাও মনে পরে যায় যেই সকল কিছু ওকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে ছিল। আয়না নিজেকে ধাতস্থ করে রাজের পিছন দিক দিয়ে এসে এসে এদিক ওদিক না তাকিয়ে ঝুঁলে পরে ভাইয়ের কাঁধে। আয়না এত বড় হওয়ার পরেও এই একটি অভ্যাস যা এখনো ও ছাড়তে পারেনি। যখনি আয়না ভাইয়ের কাছে থাকে তখনি খুব আদুরে হয়ে যায়। ভাইয়ের সামনে নিজেকে বাচ্চা বাচ্চা মনে হয় আয়নার তাই তো বাচ্চাদের মতো আচরণ করে।রাজ ও কি আয়নাকে কম আদর করে রাজ পারলে নিজের জীবন দিয়েও আয়নার সকল আবদার পূরণ করার চেষ্টা করে।

আয়নার এভাবে হঠাৎ রাজের পিঠে ঝুলে পড়ায় প্রথমে রাজ হকচকিয়ে গেলেও যখন বুঝতে পারে তার পিঠে ঝুলে থাকা মানুষটি আয়না। তখন রাজের ঠোঁটে স্মিত হাসি দেখা যায়।আয়না কাঁধ থেকে নামতেই রাজ ব্লু কুঁচকে আয়নাকে জিজ্ঞেস করালো।
তুই কলেজে না যেয়ে এখানে কি করছিস।
আয়না রাজের এক হাত জাপটে ধরে বলল।
আজ কলেজে ক্লাস হবে না,তাই আমি ভাবছি,
কি ভাবছিস,
রাজের কথায় আয়না নিজের বত্রিশটি দাঁত বের করে একটি হাসি দেয়। আয়নার হাসি দেখেই রাজ বুঝে যায় ওর বোনের কি চাই।তাই রাজ চোখ ছোট করে বলল।
ঘুরতে যাবি,
আয়না মাথা নেড়ে হ্যা বলে।
আচ্ছা আমি ওদের কেও আসতে বলছি।
আয়না ভালো ভাবে জানে রাজ ওর বাকি বন্ধুদের কথা বলছে তাই কিছু বললো না। শুরু মাত্র আয়না আরশাদের সাথে কথা বলছে‌ আয়না এমন ভাবে আরশাদের সাথে কথা বলছে যেনো এখানে আরশাদ ছাড়া আর কেউ নেই।রাজ চলে গেল সাইডে ফোন করার জন্য। আব্রাহাম তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে। আব্রাহামের বুকের ভিতরে যেনো আগুন জ্বলছে কেননা আয়না একবারও আব্রাহামের দিকে ফিরেও তাকায় নি। আয়নার এই অবজ্ঞা যেনো ভিতর থেকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে আব্রাহাম কে।

চেয়ারের রক্তাক্ত অবস্থায় বাধা রয়েছে প্রায় চার পাঁচ জন ছেলে।আধমরা অবস্থায় চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে তাদের।একটু পর পর ব্যাথায় কাতরাচ্ছে ছেলেগুলো। কিন্তু ওদের দেখে বোধহয় একটুও মায়া হচ্ছে না সামনে পায়ের উপর পা দিয়ে বসা থাকা আদিত্যের।ওকে দেখে মনে হচ্ছে। ছেলেগুলোর আর্তনাদ গুলো উপভোগ করছে আদিত্য। আদিত্যর পাশেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আরিফ। শুধু আরিফ না এখানে উপস্থিত সকল গার্ড ও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্যের সামনে। আদিত্যকে নিজেদের ব্যর্থতার কথা কিভাবে বলবে তাই ওরা বুঝতে পারছে না।আরিফ আদিত্যের কাছে এসে মাথা নিচু করে বলল।
ভাই এই ছেলেগুলো আপনার উপর আক্রমণ করেছিল। কিন্তু ওদের মধ্যে আরও চার পাঁচ জন ছেলেকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি। শুধু মাত্র এই কজনকে খুজে বের করতে পারলেও যার কথাতে ওরা কাজটি করেছে তাদের কেও খুজে পায়নি।আর ওই পঞ্চায়েত প্রধান কেও আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পায়নি।
আদিত্য শান্তভাবে কথাগুলো শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে আরিফের দিকে তাকিয়ে বলল।
কোথায় খুজেছিস?

ভাই সূর্যধারী গ্রাম ও চাঁদপুর গ্রাম এই দুই গ্রাম আমরা তন্নতন্ন করে খুঁজেও ওদের কোথাও পায়নি।
ওরা ঢাকায় আছে তাই এখানে ওদের খোঁজ লাগানো শুরু কর।যত দ্রুত সম্ভব আমি ওদের আমার সামনে দেখতে চাই। আমিও দেখতে চায় কার এত বড় কলিজা যে আদিত্য চৌধুরীর উপর আক্রমণ করেছে।আর এই ছেলেগুলোকে এমন ভাবে ঠিকানা লাগাবি যাতে ওদের লাশ ও খুঁজে না পাওয়া যায়। ওরা আদিত্য চৌধুরীর গায়ে হাত লাগানোর সাহস করেছে। ওদের ও তো বুঝা উচিত ওরা কত বড় অপরাধ করেছে।
কথাটি বলেই আদিত্য গোডাউন থেকে বের হয়ে যায়। আদিত্যর সাথে বের হয় আরিফ ও গার্ডরা।

নূর যথা সম্ভব দ্রুত হেঁটে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।আজ একটি রিকশাও পায়নি যে তাতে চড়ে ভার্সিটিতে যাবে।রাজ ওকে ফোন করে ভার্সিটিতে দ্রুত যেতে বলেছে কেননা। আয়নার সাথে সাথে ওরা সকল বন্ধুরাও ঘুরতে যাবে। ওদের সাথে যা ঘটেছে এর পরে সকলেরই রিফ্রেশ মেন্ট প্রয়োজন। কিন্তু আজ এই রাস্তাটি একটু বেশিই শুনশান মনে হচ্ছে নূরের কাছে। অন্যদিন তো দু একটা রিকশা চলতে দেখা যায় কিন্তু আজ এমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। নূর বেশি কিছু না ভেবে হাঁটতে লাগলো।

সামনে আগাতেই নূর দেখতে পেলো কিছু কালো পোশাকধারী মানুষ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়। এবং তারা রাস্তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে ওই লোকগুলোকে না সরিয়ে এই রাস্তা দিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।তাই নূর ওই লোকগুলোর কাছে যেতেই শুনতে পায় কিছু লোকদের আর্তনাদ। নূর কিছু বলবে তার আগেই ভিতর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লোক দৌড়ে আসে। লোকটির দৌড়ের গতি এতটাই তীব্র যে দুজন গার্ডকে একসাথে ধাক্কা মারতে তারা দূরে সরে যায় গার্ডরা ও লোককে থামাতে অসক্ষম হয়। এবং লোকটির সাথে নূরের এত তীব্র ভাবে ধাক্কা লাগে নূর ছিটকে কিছুটা দূরে যেয়ে পরে।

রাস্তার উপর পড়া থেকে একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছে একটি লোকের জন্য। কারণ নূর এসে সেই লোকটির উপর পরেছে লোকটি বডিগার্ড এর মাঝখানে দাড়িয়ে ছিল। নূর এত তীব্র গতিতে ও লোকের উপর পড়ার পরেও লোকটি নিজের যায়গা থেকে এক চুলও নড়ে নি। নূরের হাত সোজা গিয়ে পড়েছে লোকটির বুকে। নূর এখনো এই লোকটির চেহারা দেখেনি। তবুও নূরের বুকের ভিতর থেকে জেনো খুব জোড়ে জোড়ে আওয়াজ আসছে। নূর আজ পর্যন্ত এইরকম পরিস্থিতিতে কখনো পরেনি। কদিন ধরে ওর সাথে কি হচ্ছে আল্লাহ জানে।ও যেই সকল কিছু কখনো কল্পনাও করেনি সেই সকল কিছু আজ কাল ওর সাথে ঘটছে।নূর নিজেকে ধাতস্থ করে উপরে তাকাতেই অনাকাঙ্ক্ষিত মুখ দেখে যেনো থমকে গেল।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৮

নূর বিশ্বাস করতে পারছে না ও যেই লোকটির উপর পরেছে সে আদিত্য।তার সেই স্বামী যাকে কিনা হসপিটালে ফেলে চলে এসেছিল।যার নাম ও নূর শুনতে নারাজ।যার সাথে ও না চাইতেও একটি কঠিন সম্পর্কে বেঁধে গিয়েছে নূর। নূরের হতভম্বতা কাটছেই না।নূর যেনো পলক ফেলতেও ভুলে গিয়েছে ওর মুখ থেকেও কেনো আওয়াজ বের হচ্ছে না।কি করবে নূর এখন কিভাবে এই পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলাবে। নিজের অপরিচিত স্বামীকে দেখে কিভাবে ঠিক রাখবে নিজেকে নূর..

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩০