তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩০
আমেনা আক্তার
নূরের ধ্যান ভাঙ্গে যেই ছেলেটি পালানোর চেষ্টা করছিল সেই ছেলেটির আর্তনাদ শুনে।নূর ঝটপট সরে যায় আদিত্যের কাছ থেকে। আদিত্যর গার্ডরা ছেলেটিকে অনেক খারাপ ভাবে মারছে।আর আদিত্য ভাব অলসহীন ভাবে দাড়িয়ে আছে যেনো এখানে কিছুই হয়নি।এর মধ্যে আরিফ আদিত্যের কাছে এসে বলল।
ভাই এখন কি ওদের মারা বন্ধ করব, ওদের অবস্থা তো খারাপ হয়ে গেছে।
আদিত্য গরম চোখে আরিফের দিকে তাকিয়ে বলল।
আমি তোকে ওদের মারা বন্ধ করতে বলেছি।
আদিত্যর কথা শুনে নূর ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছুটা উচ্চ স্বরে বলল।
গুন্ডা কোথাকার, এ কি অবস্থা করেছ এদেরকে মেরে। তোমার মনে একটুও মায়া দয়া নেই। লোকগুলো কিভাবে নিজের প্রাণের ভিক্ষা চাইছে।তবুও কি তোমার একটুও মায়া লাগছে না ওদের জন্য।আমি ভাবতাম রাজনীতি যারা করে তারা সকলে হয়তো খারাপ হয়না।আমার ভাবনা হয়তো বা ভুল। কিন্তু না তোমাকে দেখে আমার বিশ্বাস হয়ে গেল রাজনীতি যারা করে তারা সকলেই তোমার মতো জানোয়ার। তুমি একটা জঘন্য লোক।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
নূর কথাগুলো বলে রাগে থরথর করে কাঁপছে।তার সাথে কাঁপছে নূরের দুটো ঠোঁট।নূর রাগের বশে কি বলছে ও বোধহয় নিজেও বুঝতে পারছে না।আদিত্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নূরের কথাগুলো শ্রবণ করছে। এদিকে আরিফ ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।এই ভেবে এই মেয়ের অবস্থা আদিত্য কি করতে পারে।এই মেয়ের কি প্রাণের মায়া নেই ও আদিত্যের সামনে দাঁড়িয়ে এক তো উচু গলায় কথা বলছে।তার উপর ওকে গুন্ডা ও জানোয়ার বলছে।এর পরিনতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা আরিফ বেশ ভালোভাবে জানে।আরিফ ভালোভাবে জানে আদিত্যেকে এখন যতটা শান্ত দেখাচ্ছে আদিত্য ভিতর থেকে ঠিক ততটাই ভয়ংকর। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো।
তুমি আমাকে চিনো, আমার সম্পর্কে জেনে শুনে কথা বলছো তো।
না চিনি না আর চিনার প্রয়োজন ও বোধ করছি না।না আসলে চিনার প্রয়োজন ছিল।তাহলে দয়া দেখাতে গিয়ে আমার জীবনটাতো আর নষ্ট হতো না।আমি ভেবেছিলাম তোমার কেনো দোষ নেই কিন্তু না এখন দেখছি সব দোষ তোমার। তোমার জন্য সব কিছু হয়েছে।সব কিছুর মুলে তুমিই ছিলে। তুমি আমার জীবন নষ্ট করেছ আর এখন। তোমার সাথে আমার কেনো সম্পর্ক নেই বুঝেছ। তুমি আমার কিছু হও না। তোমার সাথে আমার কেনো সম্পর্ক নেই। আমার জীবনে কখনো ইন্টারফেয়ার করার চেষ্টা করবে না।আর যদি করো আমি তোমার জান নিয়ে নিবো।
কথাটি বলেই নূর সেখান থেকে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যায়।
নূরের কথাটি সকলের কানেই পৌঁছেছে,আরিফ ভয়ে ভয়ে তাকায় আদিত্যের দিকে। কারণ আদিত্যের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও আদিত্য তা পছন্দ করে না। কিন্তু একতো এই মেয়ে আদিত্যের উপর এসে পরেছে। আবার আদিত্যের সামনে গুন্ডা বলে তাকে আখ্যায়িত করে আবার হাবিজাবি কি কথা বলে গেল।তার থেকে বড় কথা আদিত্য কে মারার হুমকি দিয়ে গিয়েছে এই মেয়ে। কিন্তু আদিত্য একদম শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে নূরের যাওয়ার পথে। শুধু আদিত্য জানে ওর মনে কি চলছে। আদিত্য নূরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।এই হাসির রহস্য শুধু মাত্র আদিত্য জানে। আদিত্যর হাসি অন্য মানুষের কাছে যতটা স্বাভাবিক লাগবে।ঠিক ততটাই অস্বাভাবিক আরিফের কাছে।আরিফ আদিত্যের দিকে তাকিয়ে শুকনো এক ঢোক গিলে।
নূর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ভার্সিটিতে পৌছায়। সেখানে রুদ্র, হৃদিতা, আরশাদ,রাজ, আব্রাহাম ও আয়না সকলে উপস্থিত ছিল। নূরের অবস্থা দেখে হৃদিতা প্রশ্ন করলো।
কি হয়েছে তোর তুই এমন করছিস কেনো।
নূর কর্কশ গলায় উত্তরে বলল।
পরে বলবো, এখন আমার মুড ঠিক নেই। কোথায় যাবি চল।
নূরের কথা শুনে কেউ আর কিছু বললো না। কারণ নূরের বন্ধুরা বেশ ভালোভাবে জানে নূরের মুড ঠিক না হতে ও কিছু বলবে না। সকলে মিলে গাড়ির ভিতরে বসেছে।আয়না বসেছে জানালার পাশে নূর ও হৃদিতা বসেছে আয়নার পাশের সিটে। তাদের সামনের সিটে বসেছে রাজ, আব্রাহাম ও আরশাদ আর ড্রাইভারের সাথে বসেছে রুদ্র।রাজ সিরাতকে সাথে নিয়ে আসতে বলেছিল রুদ্রকে। কিন্তু রুদ্র তো রুদ্র ও কি কারও কথা শোনার মতো মানুষ।
গাড়ি চলছে নিজ গতিতে,সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে।আর আয়না জানালার বাইরে তাকিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে আছে। তখনি রাজ আব্রাহামের উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলো।
আব্রাহাম নুসাইব কেমন আছে। অনেকদিন যাবত তোদের বাড়িতে যাওয়া হয়না।
আদিত্য জবাবে বলল,
ও ভালো আছে, ভাবি তোদের বাড়িতে যেতে বলেছে। কিন্তু কিছুদিন যাবত অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটার জন্য তোদের বলা হয়নি।
আব্রাহামের কথার প্রতি উত্তরে রাজ বলল।
হ্যাঁ ভাবি আমাকেও অনেকবার ফোন করে বলেছে তোদের বাড়িতে আয়নাকে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ওকে কিছুতেই তোদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করাতে পারি না।আগি সারাদিন তোদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমার কাছে বাইনা করত।আর এখন ওকে কিছুতেই তোদের বাড়ি যেতে চাই না।
রাজের কথায় সকলে আয়নার দিকে তাকায়।আয়না চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে।রাজ আয়নাকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
ভাবি তোর কথা অনেকদিন যাবত বলছে,আমরা অন্য আরেকদিন ঘুরতে যাবো।আজ নাহয় আব্রাহামদের বাড়িতে যাওয়া যাক।
না ,আমি অন্য কোথাও যাবো না,আমাকে হয়তো ঘুরতে নিয়ে যাও, নাহলে গাড়ি থেকে এখনি নামিয়ে দাও।আমি বাড়ি চলে যাবো।
আয়নার ত্যাড়ামি কথা শুনে রাজ কিছু বলার আগেই হৃদিতা বলল।
থাক আমরা ভাবির সাথে অন্য কোনদিন দেখা করে নিবো,আজ আয়নার ঘুরতে যেতে মন চাইছে তাই ওইখানেই যাওয়া যাক।
হৃদিতার কথার প্রতি উত্তরে আর কেউ কিছু বলে না। কারণ রাজ বাদে সকলেই যানে আয়নার ও বাড়িতে না যাওয়ার কারণ। এদিকে আব্রাহামের বুকে জেনো অনুশোচনার আগুনে ঝলছে।আয়না নিচের চোখ বন্ধ করে সিটের সাথে হেলান দিয়ে বসে হারিয়ে যায় নিজের সেই বিষাক্ত অতীতে।যেই অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা আয়নার জীবনের অস্তিত্ব বদলে দিয়েছে। বাধ্য করেছে আব্রাহামের প্রতি তার এত কঠোর হওয়ার।
অতীত,
আয়না আব্রাহাম এর সামনে বসে হাঁটু গেড়ে বসে কান্না করছে। আব্রাহামের সামনে বসে নিজের ভালোবাসার ভিক্ষা চাইছে আয়না। কিন্তু আব্রাহাম ওর কেনো কথা শুনতে চাইছে না। আয়না কান্না করতে করতে বলল।
প্লিজ আব্রাহাম ভাই আমাকে একটু ভালোবাসুন।আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।আমি আপনার এই অবজ্ঞা আর সহ্য করতে পারছি না।আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমাকে একবার গ্রহণ করে দেখুন আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসব।আমি কখনো আপনাকে নিজের কাছ থেকে দূরে যেতে দিবো না। শুধু একবার আমাকে সুযোগ দিন একবার।
বলতে বলতে আবার অঝোরে কান্না করছে আয়না। কিন্তু আব্রাহাম আয়নার কেনো কথা শুনতে রাজি নয়।ও আয়নার উদ্দেশ্যে বলল।
আমি তোমার কখনো হবো না আয়না তুমি আমাকে ভুলে যাও, ভুলে যাও আমাকে।
কথাটি বলতে বলতে আব্রাহাম কোথাও যেনো হারিয়ে যাচ্ছে । আয়না প্রাণ পণ দৌড়াচ্ছে আব্রাহাম কে ধরার জন্য। কিন্তু কিছুতেই ও আব্রাহাম কে ধরতে পারছে না। আব্রাহাম ওর থেকে বহু দূরে চলে যাচ্ছে।শুনতে পারছে না আয়নার আর্তনাদ।
ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে যায় আয়না, এতক্ষণ আয়না স্বপ্ন দেখছিল। আয়নার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে।আয়না জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।নাহ এক গ্লাসে আয়নার পিপাসা মিটে নি।ও কাঁপা কাঁপা হাতে আরেক গ্লাস পানি ঢেলে পানি খেয়ে নেয় আয়না।ওর শরীর যেনো এখনো কাঁপছে। আয়নার মনে হচ্ছে আয়না আব্রাহাম কে চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেলবে। স্বপ্নটা খুবই জঘন্য লেগেছে আয়নার।ওর মনে হচ্ছে এই রকম জঘন্য স্বপ্ন ও আগে কখনো দেখেনি।
আয়না ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তিনটা পঁচিশ মিনিট।আয়না ফোনটি হাতে তুলে নেয় কেনো কিছু না ভেবে এত রাতে আব্রাহামের ফোনে কল দেয় আয়না। দুবার রিং বেজে কেটে যায়। আয়নার মনে হচ্ছে আব্রাহাম যদি এখন ওর কল না ধরে ও বোধহয় এখন মরেই যাবে। আয়নার মন চাইছে এক দৌড়ে আব্রাহামের কাছে ছুটে যেতে। কিন্তু এত রাতে তা সম্ভব না।তাই আব্রাহামের ফোন ধরার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তিনবারের সময় আব্রাহাম আয়নার ফোন রিসিভ করে ঘুমের ঘোরে বলল।
কে,
আব্রাহামের কন্ঠ শুনে যেনো আয়নার প্রাণে প্রাণ আসলো।সে একটি স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলল।
আব্রাহাম ভাই আমি, আপনি কোথায় এখন,
আব্রাহামের মাথায় খারাপ হয়ে গেল আয়নার কথা শুনে এমনিতেই ও আজ রাত করে ঘুমিয়েছে তাই ঘুমটা এখন বেশ কাঁচা তার উপর এই মেয়ে এত রাতে ফোন করে জিজ্ঞেস করছে ও এখন কোথায়। আব্রাহাম আয়নার উদ্দেশ্যে চিল্লায়ে বলল।
আমি এখন বাড়িতে আছি ইডিয়ট, আমি না তোমাকে অনেকবার বলেছি।আমার সাথে ফালতু কেনো কথা বলার জন্য ফোন দিবে না। কিন্তু তুমি তো জন্মগত বেহায়া আমার কথা তোর কানে যায় না। তোমার কাছে ফালতু সময় থাকলেও আমার কাছে এত ফালতু সময় নেই।তাই পরবর্তীতে ফোন করার আগে একশো বার ভেবে নিবে। কারণ এতদিন ধরে তোমাকে কিছু না বললেও পরবর্তীতে আমি আর চুপ থাকবো না।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২৯
কথাগুলো বলেই ফোন কেটে দেয় আব্রাহাম। আব্রাহাম এত কথা বলার পরেও আয়নার এতটা কষ্ট লাগেনি যতটা না ভালো লাগছে। এখন আয়না ভাবছে কাল আব্রাহামদের বাড়িতে গিয়ে নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে আসবে। কারণ যেই পর্যন্ত আয়না সচোখে আব্রাহাম কে না দেখবে সেই পর্যন্ত শান্তি পাবে না।