তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৮

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৮
আমেনা আক্তার

শামসুজ্জামান খাটের উপরে বসে কান্না করছে। নিজের করা ভুলের জন্য,হয়তো এখন নিজের করা ভুলের মাশুল গুনছে আর প্রায়শ্চিত্তের আগুনে জ্বলছে।এ ছাড়া এখন কিছুই করার নেই শামসুজ্জামানের। কিছুদিন আগেই শামসুজ্জামান অনেক বড় একটি এক্সিডেন্ট করে। এক্সিডেন্টে শামসুজ্জামানের দুটি পা অবশ হয়ে গেছে। এখন নিজের থেকে থেকে উঠে দাঁড়ানোর সামর্থ্য নেই শামসুজ্জামানের।
এক্সিডেন্ট হওয়ার পর পরই শামসুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী শামসুজ্জামান কে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। শামসুজ্জামান এর থেকে বেশি কিছু আশাও করেননি নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছ থেকে। কিন্তু পা দুটো অপশ হওয়ার পর থেকে যেনো রেহানা বেগমকে আরো বেশি মনে পরছে।যেই করেই হোক ওনি রেহানা বেগমকে কাছে চাইছে। অন্তত নিজের করা ভুলের জন্য একবার হলেও রেহানা বেগম ও নিজের সন্তানদের কাছে ক্ষমা চাইতে চাইছেন।ওনার করা ভুলের শাস্তি এখন ওনি যথাযথ পাচ্ছেন।ওনি বুঝে গেছেন খুব ভালোভাবে এই শাস্তি হলো বউ রেখে বাইরে পরকিয়া করার শাস্তি। নিজের মেয়ের গায়ের রং নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার শাস্তি।এই জন্যই হয়তো আল্লাহ তায়ালা ওর পা দুটো অপশ করে দিয়েছে।

শামসুজ্জামান কখনো কখনো ভাবেন যদি রেহানা থাকতে ওর এই অবস্থা হতো তাহলে কি রেহানা বেগম ও ওনাকে এভাবে ফেলে চলে যেতেন। কথাটি ভাবতেই শামসুজ্জামানের ভিতর থেকে উত্তর আসে।
না এটি কখনো হতো না, রেহানা বেগম কখনো ওনাকে একা ফেলে যেতেন না। রেহানা বেগম তো ওনাকে ভালোবাসতেন।এই কথা অনেক আগেই উপলব্ধি করেছেন শামসুজ্জামান তাই হয়তো এত বড় অন্যায় করতে একবারও বুক কাঁপে নি শামসুজ্জামানের।উনি ভেবেছিলেন ভালোবাসার মানুষ যত বড় ভুল করুক না কেনো ভালোবাসার মানুষ কে কি কখনো ছেড়ে যাওয়া যায়।এই কথাটি ভেবেই হয়তো ভুল করেছিলেন শামসুজ্জামান। কিন্তু তিনি হয়তো জানতেন না রেহানা বেগমের কাছে ভালোবাসার থেকেও নিজের আত্মসম্মান বেশি গুরুত্বপূর্ণ।যদি জানত তাহলে হয়তো এই ভুল কখনো করতেন না। এখন শামসুজ্জামানের এই অবস্থায় ওর পাশে কেউ নেই। শামসুজ্জামান এখন নিঃস্ব ওর আগে পিছে কেউ নেই। নিজের করা কর্মের ফল এখন সারাজীবন ভোগ করতে হবে শামসুজ্জামান কে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নীলয় কে আজ আবার বাড়িতে নিয়ে এসেছে রেহানা বেগম। রেহানা বেগম যখন শুনেছে নূর আজ বাড়িতে থাকবে না তখনি ওনি নিলয়কে বাড়িতে নিয়ে আসার কথা বলে নূরকে।নূর নীলয় কে এখানে রেখে যেতে সামান্য পরিমাণও সংকোচে বোধ করে না।নূর যখন দেখে ওর ভাইকে কেউ মায়ের স্নেহ দিচ্ছে তখন প্রশান্তিময় হাওয়া বয়ে যায় ওর হৃদয় জুড়ে।
নীলয় বসে আছে খাবার টেবিলে।সাইরা ও মহিমা ও খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। মহিমা খুবই বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে।ওর কেনো যেনো সহ্য হয়না নিলয়কে।কেনো যে ওর মা বারবার নিলয়কে এখানে নিয়ে আসে। শুধু কি নিয়ে আসে নিলয় ও রেহানা বেগম কে দেখে মনে হয় ওরা দুজন মা ছেলে।
রেহানা বেগম ওদের জন্য খাবার নিয়ে আসে। খাবার দেখেই নিলয় অনেক খুশি হয়ে যায়। রেহানা বেগমের হাতের খাবার অনেক মজা লাগে ওর কাছে।তাই রেহানা বেগম কে দেখতেই নিলয় নিজের প্লেট আগে বাড়িয়ে দেয়।
মহিমা বিরক্ত হয়ে বলল।

ওকি জীবনও খাবার খাইনি, খাবার দেখে এই রকম আচরণ করছে কেনো।
মহিমার কথা শুনে নিলয় নিজের প্লেট সরিয়ে ফেললো।রেহানা বেগম মহিমার আচরণ দেখে আশা হত হয়।
মহিমার খাবার শেষে মহিমা রুমে বসে আরাম করছে।তখনি রেহানা বেগম মহিমার রুমে প্রবেশ করে।মাকে দেখে মহিমা সোজা হয়ে বসে। রেহানা বেগম মহিমার কাছে এসে শক্ত গলায় বলল।
তোকে না আমি নিলয়ের সাথে খারাপ আচরণ করতে না করেছিলাম,
আমার ওকে দেখতে মনে চায়না,
আচ্ছা আমি মানলাম ওকে তোর দেখতে মন চাইনা। কিন্তু তুই কি জানিস নিলয় আগে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল।চার বছর ধরে নিলয়ের মানসিক সমস্যা।
রেহানা বেগমের কথা শুনে মহিমা অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকায়। কারণ ও জানতনা নিলয় যে জন্ম থেকে ভারসাম্য হীন না। তখনি রেহানা বেগম আবার বললেন।
নিলয় আগে আমাদের মতো স্বাভাবিক ছিল। নিলয়ের ও একটি সুন্দর পরিবার ছিল।ওই পরিবারে ছিল ও নূর আর…
আর?

আর নিলয়ের স্ত্রী কায়নাত,
নিলয়ের স্ত্রী আছে,
আছে না ছিল,নিলয় নিজের স্ত্রী কে প্রচুর ভালোবাসত,তোর আর আমার স্বামীর ভালবাসার মতো ভালোবাসা না।এটি ছিল সত্যকার অর্থে ভালোবাসা। ভালোবাসার জন্য নিলয়ের স্ত্রীর কখনো সন্তান হবে না যেনেও যাকে পূর্ণ সম্মান দিয়ে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ডাক্তার সাফ সাফ বাচ্চা হওয়ার বিষয়ে না করলেও বিয়ের চার বছরের মাথায় ওর স্ত্রী সন্তান সম্ভাবনা হয়। ওইদিন অনেক খুশি ছিল ও আর নূর। পাগলামী করছিল নিলয়, ওকে দেখে মনে হচ্ছিল ও বোধহয় খুশিতে পাগল হয়ে গেছে।পুরো এলাকায় ওইদিন নাকি নিলয় মিষ্টি বিতরণ করেছে। কিন্তু ভাগ্য ভাগ্যের উপর কি কারও জোড় চলে, চলে না।তোমনি নিলয়ের ভাগ্য নিলয়ের সঙ্গ দেয়নি।
নিলয় যখন ওর স্ত্রী কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে চেকাপ করাতে যাচ্ছিল তখন ঘটে অনেক বড়ো দুর্ঘটনা।
মায়ের কথা এক ধ্যানে শুনছিলো মহিমা, রেহানা বেগম কথাটি বলে থামতেই মহিমা জিজ্ঞেস করলো।
কেমন দুর্ঘটনা মা,

এক ভয়াবহ এক্সিডেন্ট, নিলয়ের গাড়ির সাথে একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এক্সিডেন্টে নিলয়ের গাড়ি থেঁতলে যায়। ওইখানে নিলয়ের স্ত্রী কায়নাত দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যায়। নিলয়ের অবস্থা ও অনেক খারাপ ছিল। চিরদিন নিলয় হসপিটালে সেন্সলেস অবস্থায় ছিল।যখনি নিলয়ের জ্ঞান ফিরে তখন নিলয় সর্ব প্রথম নিজের স্ত্রীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। ভাইয়ের করুন অবস্থা দেখে নূর ভাইকে মিথ্যা কথা বলতে বাধ্য হয়।ও বলে কায়নাত ভালো আছে কিন্তু ওর শরীর এখনো কিছুটা খারাপ।তাই কায়নাত কে ওর বাবা মায়ের বাড়িতে রেখে এসেছে নূর।নিলয় ও নিজের বোনের কথা বিশ্বাস করে ফেলে।
কিন্তু যখনি নিলয় কিছুটা সুস্থ হয় তখন নিজের স্ত্রীর সাথে দেখা করার জেদ করতে থাকে। তখন নূর বাধ্য হয়ে ভাইকে সত্য কথা বলতে।নিলয় যখন নিজের স্ত্রীর করুন পরিনতির কথা জানতে পারে।তখনি নিলয় নিজের সেন্স হারিয়ে ফেলে এবং তিনদিন পর চোখ খুলেই ও পাগলামো করতে লাগে। তখন থেকেই নিলয় নিজের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

মহিমা স্তব্ধ হয়ে শুনছিলো কথাগুলো,ও কখনো ভাবেনি নিলয়ের সাথে এমন কিছু ঘটতে পারে। মহিমা নিজের স্বামী ও বাবাকে দেখার পর ভেবেছিল সব পুরুষ এক। কিন্তু না নিলয়ের অতীত সম্পর্কে শুনে এখন বুঝতে পারছে সব নারী যেমন এক নয় তেমনি সব পুরুষ ও এক নয়। নিলয়ের সাথে করা আচরণের জন্য এখন অপরাধ বোধ জাগ্রত হচ্ছে মহিমার মনে।ও কিভাবে একটি মানুষ সম্পর্কে না জেনে তার সাথে খারাপ আচরণ করতে পারে।এতো খারাপ কবে থেকে থেকে হয়ে গেল ও।

হৃদিতার বিয়ে ভাঙ্গার আনন্দে সবাই এখন সেলিব্রেশন করছে।হৃদিতার আনন্দে আজ সিরাত ও অংশ নিয়েছে।সিরাতের জন্যই তো এত সহজে শিহাবের আসল চেহারা সবার সামনে তুলে ধরতে পেরেছে।
হৃদিতা হাস্যোজ্জ্বল মুখে সিরাত কে বলল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ, তুমি যদি শিহাবের ফোন হ্যাক করার আইডিয়া না দিতে তাহলে ওর আসল চেহারা বাবার সামনে আনতে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হতো।
আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কেনো কারণ নেই,আমি শুধু আইডিয়া দিয়েছি যা করার তোমরাই করেছ।
সিরাতের কথা শেষ হতেই রুদ্র বলল।
অনেক হয়েছে তোমাদের ধন্যবাদ দেওয়া নেওয়া এখন থামো নাহলে সেলিব্রশনের সব মজা তোমাদের ধন্যবাদ দেওয়া নেওয়াতেই শেষ হয়ে যাবে।
রুদ্রের কথা শুনে সকলে সহমত প্রকাশ করল। এবং নিজেদের পার্টি শুরু করল। ওদের পার্টি চলা কালীন নূরের ফোন সশব্দে বেজে উঠল নূর সকলকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
আমি আসছি,

নূর সাইডে গিয়ে অচেনা নাম্বার দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো।এই সময় ওকে অচেনা নাম্বার থেকে কে ফোন করেছে কথাটি ভেবে।নূর ফোন রিসিভ করে কানে ধরে বলল।
হ্যালো কে বলছেন?
ওপাশ থেকে আদিত্য মুচকি হাসলো নূরের কন্ঠস্বর শুনে। এবং নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
তোমার একমাত্র স্বামী,
নূর নিজের ভ্রু কুঁচকে ফেললো আদিত্যর কন্ঠ শুনে এবং আবার বলল।
কেনো ফোন দিয়েছ,
আদিত্যর সোজা জবাব,
বউয়ের সাথে প্রেম করতে,
আদিত্যর কথা শুনে নূর খুবই শান্ত স্বরে বলল।
আমি এখন ব্যস্ত,

আমি খুব ভালোভাবে জানি তুমি এখন ব্যস্ত।আমি তোমাকে এখন ডিস্টার্ব করব না। কিন্তু তোমার বন্ধুদের সাথে পার্টি শেষে বাহিরে দেখবে আমার পাঠানো একটি সাদা রংয়ের গাড়ি ধার করানো আছে।ওই গাড়িতে চুপচাপ ওঠে বসবে। এবং অবশ্যই গাড়িতে ওঠার আগে আমাকে ফোন করে কনফার্ম হয়ে তারপর গাড়িতে উঠবে।ওই গাড়ি সোজা তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।
কথাটি বলেই আদিত্য নূরকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেটে দেয়।নূর আদিত্য কে এভাবে ফোন কাটতে দেখে রাগের মাথায় বিরবির করে বলল।
শয়তান, শুধু আমাকে হুকুম দেয়।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৭

নূর আদিত্যের সাথে কথা বলে। আবার ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে ওঠে।
সকলে মিলে অনেক মজা করে একসাথে। কিন্তু ওরা বোধহয় হয়তো জানে না এখন সবাই যতটাই আনন্দিত হয়তো কদিন পর এর থেকে বেশি কষ্ট পেতে হবে। হয়তো এক ঝড়ো হওয়ায় সবার জীবন এলোমেলো হয়ে যাবে।হয়তো এই ঝড় ওদের জীবনের নতুন সূচনা ঘটাবে নয়তো সমাপ্তি।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৯