তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৪
আমেনা আক্তার
নূর আদিত্যের সাথে হসপিটালে পৌঁছাতেই ওর বন্ধুদের অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।আর হৃদিতা একটি চেয়ারে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।ওর ভিতরে কোনো প্রকার অভিব্যক্তি দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু হৃদিতার চক্ষুদয় প্রচুর পরিমাণ লাল হয়ে রয়েছে। হৃদিতার চোখ দেখে মনে হচ্ছে চোখ থেকে পানি ঝড়তে ঝড়তে হয়তো চোখ ও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।
নূর ওদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল।
কি হয়েছে আয়নার কিছু হলো না তো।
নূরের কথার জবাবে রাজ বলল।
আয়নার কিছু হয়নি,
তাহলে,
নূরের কথার প্রতি উত্তরে ওর বন্ধুরা কিছু বলার আগেই অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বেড়িয়ে আসলো। এবং বলল।
পেটেন্টের ধৈর্য্য আছে বলতে হবে।এমন পরিস্থিতিতে যদি অন্য কোনো মানুষ থাকব তাহলে হয়তো তার চিৎকারে পুরো হসপিটাল কেঁপে উঠতো। কিন্তু আপনাদের বন্ধু প্রথম থেকেই একদম শান্ত।যেনো পণ করে রেখেছে যতই কষ্ট হোক মুখ থেকে কোনো আওয়াজ বের করবে না।
ডাক্তারের কথা শুনে রাজ উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করল।
ও এখন কেমন আছে?
ওনার পিঠের অনেকটা অংশ পুড়ে গিয়েছে।ওনি মুখে কিছু না বললেও আমরা ডাক্তার আমরা ভালো ভাবেই জানি এই পরিস্থিতিতে রোগীর অবস্থা কি হয়। এবং ওনাকে কিছুদিন অবজারভেশনে রাখতে হবে।
কথাগুলো বলেই ডাক্তার সেখান থেকে চলে যায়। তখনি নূর বলে উঠলো।
কি হয়েছে বলবি আমাকে? ডাক্তার কি বলে গেল কার পিঠে কি হয়েছে?
আরশাদের পিঠে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে।
নূর রুদ্রের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল।
আরশাদের উপর কে এসিড নিক্ষেপ করেছে?
নূরের প্রশ্ন শুনে হৃদিতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আরশাদের উপর না এসিড আমার উপর নিক্ষেপ করা হয়েছিল। কিন্তু মাঝে আরশাদ এসে পরে।
অতীত…
হৃদিতা ও ওর কাজিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে গল্প করতে করতে। হঠাৎ হৃদিতা কে ওর কাজিন রাইসা বলল।
শিহাব জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে শুনেছিস।
হৃদিতা ভাব অলসহীন ভাবে উত্তরে বলল।
শুনেছি,
তুই কথাটি জানার পরেও এতো শান্ত আছিস কিভাবে।
শান্ত থাকবো না, তাহলে তুই কি চাস,ওই শয়তানের জেল থেকে বের হওয়ার সংবাদ শুনে আমি রাস্তার ভিতর খুশিতে ড্যান্স করি।
তুই কি সোজা উত্তর দিতে পারিস না কখনো।আমি তোকে কি নাচতে বলেছি।আমি বলছি একটু সাবধানে চলাফেরা করবি এখন থেকে।যদি ও তোর কোনো ক্ষতি করে ফেলে তাহলে।
রাইসার কথা শুনে হৃদিতা কিছু বলবে তার আগেই হৃদিতার চোখ পরে রাস্তায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরশাদের দিকে। তখনি হৃদিতা রাইসার কথায় পাত্তা না দিয়ে আরশাদ কে ডেকে উঠলো।
আরশাদ হৃদিতার ডাক শুনে ওর দিকে তাকাতেই নিজের ভ্রু কুঁচকে ফেললো।
এবং হৃদিতা কে সেখানে দাঁড়াতে ইশারা করে।আরশাদ হৃদিতার দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় এবং আরশাদ হৃদিতার উদ্দেশ্যে কিছু বলার আগেই আরশাদের দৃষ্টি পরে দূর থেকে আসা একটি বাইকের উপর। বাইকটি খুব স্পিডে এগিয়ে আসছে সামনে। এবং বাইকে আছে দুটি ছেলে একটি ছেলের হাতে একটি কাঁচের সিসি। কাচের শিশিটা দেখে আরশাদের বুক ধক করে উঠল। আরশাদ আর কিছু না ভেবে দ্রুত এগিয়ে যায় হৃদিতার দিকে। এবং হৃদিতার উদ্দেশ্যে চিল্লিয়ে আরশাদ বলল।
ওইখান থেকে সর,
হৃদিতা আরশাদের হঠাৎ উপদেশ দেওয়ার কারণ বুঝতে পারছে না।
হৃদিতা কিছু বলার আগেই বাইকটি হৃদিতার নিকটে চলে আসলো এবং হৃদিতার দিকে তরল কিছু নিক্ষেপ করতেই হৃদিতা একটি চিৎকার দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেললো নিজের। বাইকটি তরল পদার্থটি নিক্ষেপ করার সাথে সাথেই সেখান থেকে চলে যায়। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরেও যখন হৃদিতা কোনো কিছু অনুভব করলো না তখনি হৃদিতা নিজের চেহারা থেকে আস্তে আস্তে হাত সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই নিজের সামনে আরশাদ কে দেখতে পেলো।
আরশাদের চোখ দুর্বল হয়ে পরছে,একটু আগে যখন বাইকে থাকা ছেলেটি হৃদিতার উপর এসিড নিক্ষেপ করেছে তখনি সঠিক সময়ে হৃদিতার সামনে এসে পরে। আরশাদ হৃদিতার সামনে আসায় এসিড যেয়ে পরে আরশাদের পিঠে। আরশাদ হাঁটু গেড়ে বসে পরলো রাস্তায়। আশেপাশের লোক জড়ো হয়ে গেল সেখানে। নূর জাপটে ধরলো আরশাদ কে এবং পাগলের মতো করতে লাগলো। আরশাদ কে ধরে হসপিটালে নিয়ে আসা হলো। আরশাদের পিঠের অধিকাংশ জায়গা ঝলসে গিয়েছে।
হৃদিতার কথা শুনে হসপিটালের পুরো করিডোর যেনো নিস্তব্ধ হয়ে গেল। হৃদিতা ছাড়া এতক্ষণ কেউ জানতো না আসলে কি হয়েছিলো। কিন্তু এখন হৃদিতার কথা শুনে রাগে সকলের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল। সকলে রাগান্বিত কন্ঠে বলল।
যেই এই কাজ করেছে ওকে আমরা এমন শিক্ষা দিবো..
রাজের কথার মাঝে হঠাৎ হৃদিতা বলে উঠলো।
তোরা কিছুই করবি না,যা করার আমি করবো।যে আমার উপর এসিড নিক্ষেপ করেছিল তাকে আমি দেখেছি এবং ওকে খুব ভালোভাবে চিনি।যা করার ওর সাথে আমি করবো। আমার সাথে যদি কিছু হতো তাহলেও হয়তো আমি ওকে মাফ করে দিতাম কিন্তু ওর জন্য আরশাদের এই অবস্থা হয়েছে।আজ পর্যন্ত মানুষ শুধু শুনেছে কোনো ছেলের ভালোবাসার উপর যদি কেউ আঘাত হানে তাহলে ওই ছেলে তার কি অবস্থা করে। কিন্তু এখন লোকে দেখবে কোনো মেয়ের ভালোবাসার উপর যদি কেউ আঘাত করে তাহলে সেই মেয়ে ওই লোকের সাথে কি করতে পারে।এর শাস্তি কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
কথাগুলো বলে হৃদিতা আদিত্যর দিকে তাকায় আদিত্য এতক্ষণ ভাব অলসহীন ভাবে দাড়িয়ে এতক্ষণ যাবত ওদের কথা শুনছিলো। হৃদিতা আদিত্যর কাছে এসে বলল।
আমার তোমার সাহায্য চাই,
আদিত্য নিজের মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো।
তোমার সাহায্য করলে যদি আমার অর্ধাঙ্গিনী খুশি হয় তাহলে আমি সব সময় প্রস্তুত তোমার সাহায্য করার জন্য
কেটে গিয়েছে কিছুদিন, আরশাদ মোটামুটি সুস্থ হলেও এতটা সুস্থ এখনো হয়নি। আরশাদের বাবা মা দুজনেই বিদেশ থাকে ।যার কারণে আরশাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা তারা কেউ জানেনা। আরশাদই ওর বন্ধুদের না করে দিয়েছে ওর বাবা মাকে যেনো কিছু না জানানো হয়।
চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে একটি লোককে।একটু পর পরই লোকটি ব্যথায় কুঁকড়ে উঠছে। কিন্তু লোকটি এখনো জানেনা ওকে এখানে কারা বা কি কারনে এখানে আনা হয়েছে।লোকটি পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে দেখতে পায় কিছু মানুষ হেঁটে আসছে। কিন্তু স্পস্ট ভাবে ওদের চেহারা দেখতে পাচ্ছে না। কিছুটা কাছে আসার পর লোকটির কাছে দৃশ্যমান হয় হৃদিতার চেহারা।ও ওর চেহারায় থাকা ক্রূর হাসি।
হৃদিতার হাসি দেখে যেনো লোকটির অনন্ত আত্মা সহ কেঁপে উঠলো। ওর শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠলো।ভয়ে লোকটি শুকনো ঢোক গিলল। কারণ হৃদিতাকে দেখতে খুবই ভয়ংকর লাগছে।এই রুপে হৃদিতা কে আজ প্রথমবার দেখছে শিহাব। আরো অনেকবার হৃদিতার সাথে শিহাবের সাক্ষাৎ হয়েছে।অনেকবার ও অনেক ভাবে হৃদিতা কে জ্বালাতন করেছে। কিন্তু হৃদিতার চেহারায় আজ যে হিংস্রতা দেখা যাচ্ছে তা আগে কখনো দেখে নি। হৃদিতার সাথে আছে আদিত্যর বডিগার্ড। হৃদিতা এসে দাঁড়ায় শিহাবের সামনে এবং মুখে ক্রূর হাসি বজায় রেখে শিহাবের উদ্দেশ্যে বলল।
কেমন আছো শিহাব?
হৃদিতার কথার উত্তরে শিহাব বলল।
তুমি আমাকে এখানে বন্দি করেছ, আমাকে কেনো এভাবে আটকে রেখেছ আমাকে যেতে দাও।
তুমি বাইরে যেতে চাও, কিন্তু কেনো ও মনে পরেছে। তোমার প্লানে ফেল হয়ে গিয়েছ। আমার মুখ যে ঝলসে দিতে পারো নি। তোমার প্রতিশোধ ও তো পুরো হয়নি।তো এখান থেকে বের হয়ে কি আবার আমার উপর এসিড নিক্ষেপ করতে চাও।
হৃদিতার কথা শুনে শিহাবের পুরো শরীর কাঁপছে। হৃদিতা যেনে গিয়েছে ওর উপর শিহাব এসিড নিক্ষেপ করেছিল।শিহাবের ভাবনার মধ্যে হৃদিতা বলল।
এইটাই তো ভাবছ আমি কিভাবে জেনেছি আমার উপর এসিড নিক্ষেপ কারি তুমি ছিলে। তাহলে শুনো তুমি এসিড মারার সময় আমি তোমার চেহারা দেখে নিয়েছিলাম।
হৃদিতার কথা শুনে শিহাবের শরীর বাজে ভাবে কাঁপতে লাগল। এখন হৃদিতার কাছে ও অস্বীকার ও করতে পারবেনা যে ও এসিড মারেনি কারণ হৃদিতা নিজে ওকে দেখেছে। কিন্তু তবুও নিজেকে বাঁচানোর জন্য শিহাব হৃদিতা কে উদ্দেশ্য করে বলল।
আ..আমি জানি আমি ভুল করেছি,আমি আমার ভুলের জন্য তোমার কাছে মাফ চাইছি। এবং আমি কথা দিচ্ছি আমি আর এই রকম ভুল আর কখনো করবো না। প্লিজ আমাকে যেতে দাও।
যেতে দিবো..
কথাটি বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পরলো হৃদিতা, কিছুক্ষণ হাসার পর আবার শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলল।
তুই ভাবলি কি করে আমি তোকে ছেড়ে দিবো, তুই আমার কলিজায় আঘাত করেছিস ছিন্ন ভিন্ন করেছিস আমার কলিজাকে।আর আমি কিনা তোকে ছেড়ে দিবো। আচ্ছা তুই যখন এত করে বলছিস আমি তোকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু তার আগে..
তার আগে..
তার আগে কথাটি বলেই হৃদিতা নিজের চেহারায় শয়তানি হাসি ফুটিয়ে তোলে এবং একজন গার্ডকে ইশারা করতে হৃদিতার হাতে একটি কাঁচের শিশি তুলে দেয়। কাচের শিশি টি দেখে শিহাব ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকে।ও হৃদিতার কাছে নিজের জীবনের ভিক্ষা চাইতে থাকে। কিন্তু হৃদিতার মধ্যে সামান্য পরিমাণও দয়ার আবির্ভাব ঘটলো না।ও এসিডের শিশির থেকে এসিড গুলো খুব নির্দয়ভাবে উড়িয়ে মারলো শিহাবের শরীরে। শিহাব সেখানেই ছটফট করতে লাগলো।হৃদিতা শিহাবের অবস্থা দেখে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে। তখনি সেখানে আদিত্য এলে এবং হৃদিতার উদ্দেশ্যে বলল।
তুমি এখন এখান থেকে যাও,একে ঠিকানা লাগানোর দায়িত্ব আমার।
আদিত্যর কথা শুনে হৃদিতা চলে গেল নিজ গন্তব্যে।
হৃদিতা নিজেকে ফুটিয়ে তুলছে নতুন এক সাজে।আজ থেকে ওর নতুন এক জীবন শুরু হতে চলেছে। এখন আর কারও বাঁধা নিষেধ ও মানবে না। এখন শুধু তাই করবে ওর মন যা চায়। অনেক মেনেছে বাধা অনেক শুনেছে অন্যের কথা আর না।হৃদিতার তৈরি হওয়া শেষ হতেই নিজেকে দেখে মুচকি হাসলো এবং গুনগুন করে বলল।
তোমার জন্য আমার সন্ধ্যা ,
তোমার জন্য রাত,
তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আমি,
তুমি কখন ধরবে আমার হাত,
বেড়িয়ে পড়ল নিজ গন্তব্যে হৃদিতা।
নব বধূ রুপে একটি মেয়ে হসপিটালে প্রবেশ করতেই হসপিটালের সকলে হা করে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। মেয়েটির শুধু কি নববধূ রুপে একা এসেছে।নাহ মেয়েটির সাথে রয়েছে একজন কাজি যে মেয়েটির সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছে। মেয়েটির চেহারা দেখে বুঝা দায় মেয়েটির কোনো আপন মানুষের শরীর অসুস্থ নাকি।আর শরীর অসুস্থ হলেও কি কেউ এ বেশে কাজি কে নিয়ে হসপিটালে আসে।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৩
পুরো হসপিটালে খানিকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো মেয়েটির কথা।সকলে কানাঘুষা করছে মেয়েটিকে নিয়ে কিন্তু মেয়েটির ভিতরের অভিব্যক্তি সামান্য পরিমাণও বদলালো না।মেয়েটি এগিয়ে যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে। হৃদিতা বধূ বেশে আরশাদের কেবিনে প্রবেশ করলো। আরশাদের কেবিনে ওর বন্ধুরা গোল করে আরশাদ কে ঘিরে বসে ওর সাথে গল্প করছিল। সকলে দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে দরজার দিকে তাকাতেই হৃদিতা কে বধূ বেশে দেখে সকলে যেনো…