তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৫

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৫
আমেনা আক্তার

হৃদিতা ওর বন্ধুদের প্রশ্ন শুনে মুচকি হেসে বলল।
আমি চাই না ওর পিঠের পুড়ে যাওয়া যায়গায় প্লাস্টিক সার্জারি করে ঠিক করানো হোক।আমি চাই এই পুড়া চিহ্ন যাতে সারাজীবন ওর পিঠে রয়ে যায়। কারণ…
কথাটি বলে একটু থামে হৃদিতা, তারপর আরশাদের দিকে তাকিয়ে বলল।
কারণ আমি চাই ওর এই দাগ যেনো আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে গন্য হয়।মেয়েরা যেমন নিজের স্বামীর ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে তার সন্তান নিজের পেটে নয় মাস বহণ করে তাকে লালন পালন করে বড়ো করে। নারী যেমন নিজের স্বামীর সন্তানের সুখ দেওয়ার জন্য মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করে নিজের সুন্দর্য বলিদান দেওয়ার কথা একবারও ভাবে না।তেমনি আমার ভালোবাসার চিহ্ন ওর পিঠে সারাজীবন থাকবে এটা আমি চাই।

আমি চাইনা ও আমার কোনো খানিকের চিহ্ন সাথে রাখুক যা ওর চোখের আড়াল হওয়ার সাথে সাথে আমার স্মৃতি ও ওর মনের আড়াল হয়ে যায়।আমি চাই আমি যদি ওর সাথেও না থাকি তাহলেও যেনো ওর পিঠের এই পুড়ে যাওয়ার দাগ ওকে সারাক্ষণ অনুভব করায় ও শুধু আমার।আর ওর চিন্তা চেতনায় শুধু এক নারীর বসবাস তা শুধু আমি।
কথাগুলো বলে থামে হৃদিতা।হৃদিতার এই অদ্ভুত কথা শুনে সকলে সন্দিহ দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে। নূর হৃদিতার উদ্দেশ্যে বলল।
তুই কি পাগল টাগল হয়ে গেলি, তোকে পাবনা ভর্তি করাতে হবে। তুই কি সকল অদ্ভুত কথা বলছিস।কেউ কখনো এইরকম ভালোবাসার চিহ্ন রাখে। কখনো দেখেছিস কাওকে এইরকম পাগলামো ভরা কথা বলতে।
হৃদিতা নূরের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে শিতল দৃষ্টিতে তাকায় নূরের দিকে। এবং সংকোচ বিহীন গলায় নূরের উদ্দেশ্যে হৃদিতা বলল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি পাগল আমার মাথা ঠিক নেই,এই পাগল কে নিয়েই ওর সারাজীবন কাটাতে হবে।ও যদি জেনে বুঝে একটি পাগল কে বিয়ে করে তাহলে তার পাগলামী সহ্য করার দক্ষতাও তো ওর ভিতর থাকতে হবে।
কথাগুলো বলেই হৃদিতা চুপ হয়ে যায়। হৃদিতার কথা শুনে ওরা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। হৃদিতা কে দোষ দিয়েই বা কি হবে ওদের বন্ধুদের মধ্যে তো সকলেরই একই অবস্থা। সকলেই কোনো না কোনো দিক দিয়ে একটি না একটি পাগলামো করতেই থাকে। হৃদিতার কথা শুনে আরশাদ কিছুটা ভারী কন্ঠে বলে উঠলো।
আমি রাজি তোর কথায়, কিন্তু আমারও একটি শর্ত আছে।
কি শর্ত?

আমার শর্ত হলো তোকে সকাল সন্ধ্যা আমার এই পুড়ে যাওয়া পিঠে চুমু খেতে হবে। অন্তত দিনের ভিতর একশটা চুমু তোকে আমার এই পুড়ে যাওয়া পিঠে দিতে হবে।আর বাকি নয়শ চুমু আমার শরীরের অন্য অন্য যায়গায় দিলেও হবে। তুই যদি আমার এই শর্তে রাজি থাকিস তাহলে আমার তোর কথা মানতে কোনো সমস্যা নেই।
এতক্ষণ ডাক্তার ও এখানেই দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিলো।হৃদিতার কথা শুনে ডাক্তারের যতটা না অদ্ভুত লেগেছে তার থেকে বেশি লজ্জা লাগছে আরশাদের কথা শুনে। এবং উনি আরশাদ কে এখন মনে মনে নির্লজ্জ উপাধি ও দিয়ে দিয়েছেন। নাহলে কেউ শরীরের এই অবস্থা নিয়ে এমন বেফাঁস কথা বলতে পারে। ডাক্তার আরশাদের কথা শুনে আর কেবিনে দাঁড়ালো না উনি চলে গেলেন বাইরে।
হৃদিতা ও রাজি হয়ে গেল আরশাদের কথায়।
হৃদিতা ডাক্তারের সাথে কথা বলতে কেবিনের বাইরে চলে গেল। এখন কেবিনের ভিতরে অবস্থান করছে আরশাদ ও ওর বন্ধুরা। আরশাদ ওর বন্ধুদের আকুল কন্ঠে বলে উঠলো।
তোরা দেখনা কোনো ব্যবস্থা করতে পারিস কিনা?

আরশাদের কথায় রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল।
কি ব্যবস্থা করব,
রুদ্রের কথায় আরশাদ কিছুটা লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলল।
আমার ও হৃদিতার বাসরের ব্যবস্থা, বিয়ে যখন হয়ে গিয়েছে তাই শুভ কাজ করতে দেড়ি করা উচিত না।তোরা শুধু হৃদয় কে রাজি করা বাকিটা আমি সামলে নিবো।
আরশাদের কথায় ও বন্ধুদের মুখ হা হয়ে গেল। নূর দাঁতে দাঁত চেপে আরশাদের উদ্দেশ্যে বলল।
হসপিটালে বসে তোর বাসর করার শখ জাগছে। তুই না অসুস্থ, অসুস্থ শরীর নিয়েও বাসর করার শখ জাগে কিভাবে তোর।
নূরের কথায় আরশাদ কিছুটা গম্ভীর গলায় বলল।

কিভাবে জাগবে আবার, যেভাবে সবার জাগে তেমনি জেগেছে।আর তোরা কি মনে করেছিস? আমি হসপিটালে আছি বলে আমার স্ত্রী কে আমি ওর অধিকার থেকে বঞ্চিত করব। একদম না, আমি অনেক দায়িত্ববান স্বামী কিছুতেই আমি আমার স্ত্রীকে আমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করব না।
আরশাদের কথা শুনে আব্রাহাম একটি সরল হাসি দিয়ে বলল।
যাকে তুই স্ত্রীর অধিকার দেওয়ার কথা ভাবছিস ও যদি তোর এই মহান পরিকল্পনার কথা জানতে পারে তাহলে তোর এক পা তো এখন কবরে আছেই দ্বিতীয় পা ও কবরে পাঠিয়ে দিবে। তখন সেখানে শুয়ে শুয়ে নিজের বাসরের স্বপ্ন দেখিস।
আব্রাহামের কথা শুনে আরশাদের মুখ ভোঁতা হয়ে গেল। অবশ্য আব্রাহাম কথাটি ভুল বলেনি কষ্টকর হলেও আপাতত বাসরের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। কথাটি ভেবে মনে মনে পণ করল আরশাদ যে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নিজের এই অসম্পূর্ণ ইচ্ছা সম্পূর্ণ করবে।

সিরাতের চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে দিচ্ছে রুদ্র।সিরাতের চুল আঁচড়ানোর এক পর্যায়ে সিরাতকে জাপটে ধরলো রুদ্র।এতে অবশ্য সিরাত সামান্য পরিমাণও ঘাবড়ালো না। এখন ওর এই সকল কিছুর অভ্যাস হয়ে গেছে। রুদ্র হুট হাট সিরাতকে জাপটে ধরলেও জাপটে ধরার আগে বাড়তে পারেনি এখন ও । রুদ্র ভেবেই পায়না ও কিভাবে সিরাতের কাছে যাবে। আবার যখনি ও নিজের মনকে বুঝিয়ে সিরাতের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখনি আবার মাথায় এই প্রশ্ন উদয় হয় যে সিরাত আবার রাগ করবে নাতো।ও কি এখন তৈরি আছে নিজের ও রুদ্রের সম্পর্ক কে নতুন এক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
রুদ্র সিরাতের ঘাড়ে নিজের থুতনি রেখে বলল।
আজ হৃদিতা ও আরশাদের বিয়ে হয়েছে হসপিটালে।
রুদ্র কথাটি বলতেই সিরাতের কাছ থেকে উত্তর আসলো।
আমি জানি,

জানো আরশাদ কি বলছিল,
না এটা জানি না,
সিরাতের কথায় যেনো রুদ্র কিছুটা সুযোগ পেয়ে গেল সিরাতকে নিজের মনের কথা বুঝানোর জন্য।তাই রুদ্র গলাটা পরিষ্কার করে সিরাতকে বলল।
ও বলছিল ও নাকি আজ হসপিটালেই বাসর করবে।ওর নাকি অপেক্ষা করতে ভালো লাগছে না।এতে অবশ্য আরশাদের দোষ নেই।আসলে ছেলেদের বিয়ে হয়ে গেলে ওদের নিজের বউকে কাছে পাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে যায়। তুমি জানো এমনও অনেক ছেলে আছে যাদের বিয়ের দু তিন মাস পার হয়ে যাওয়ার পরেও বউকে কাছে পায়না। আমার না তাদের জন্য অনেক কষ্ট লাগে।মনে হয় বেচারারা কতই না কষ্ট পায় তাদের বউয়ের সাথে রোমান্স করতে না পেরে।
কথাগুলো বলেই রুদ্র আশার আলো নিয়ে সিরাতের দিকে তাকায়। সিরাতের জবাবের অপেক্ষায়।এই বুঝি সিরাত ওকে বলবে। তোমারও তো অনেক কষ্ট হয় আমাকে কাছে না পেয়ে।আমারই ভুল হয়েছে তোমাকে এতদিন স্বামীর অধিকার না দিয়ে। আমাদের ও উচিত এখন কাছে আসার।
কিন্তু সিরাত এমন কিছু না বলে রুদ্র কে বললো।
অন্যের কথা না ভেবে নিজের কথা চিন্তা করো।
সিরাতের কথা শুনে রুদ্র এক্সাইটেড হয়ে বলল।

কি চিন্তা করব?
তোমার কাজে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে।
সিরাতের কথা শুনে রুদ্র মুহূর্তের মধ্যে চুপসে গেল।ও বোধহয় কখনো সিরাতকে নিজের মনের কথা বলতে পারবে না। রুদ্র নিরাস হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নেই রুদ্র যাওয়ার আগে সিরাত রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলল।
আজ একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করো কিছু কাজ আছে।
রুদ্র নিরস মুখেই জবাবে বলল।
আচ্ছা,
তারপর রুদ্র চলে গেল নিজের কাজে। রুদ্র চলে যেতেই সিরাত শব্দ করে হেসে উঠলো।সিরাত খুব ভালোভাবেই তখন বুঝতে পেরেছে রুদ্র ওকে কি বুঝাতে চেয়েছে।সিরাত ইচ্ছে করে না বুঝার ভং ধরেছে। রুদ্র কে যে ওর জ্বালাতন করবে খুব ভালোলাগে।

আদিত্যের আলিশান বাড়ির চারদিকে ফুটে উঠেছে কৃত্রিম লাইটের আলো। বাড়ির আনাচে কানাচে দেখা মিলছে সাজ সজ্জার।চোখ ধাঁধানো সুন্দর্য যেনো ফুটে উঠেছে বাড়িটিতে এবং বাড়ির মানুষের মাঝে। এখন যেই কেউ এই বাড়ির দেখেই বলে দিতে পারবে আদিত্য দের আভিজাত্যের কথা। আজ দেশ বিদেশ থেকে ছুটে এসেছে বিভিন্ন আত্নীয় স্বজন।আজ আয়শা চৌধুরীর জন্মদিন বলে কথা।আয়শা চৌধুরীর জন্মদিন এমন ভাবে পালন করা হয় যেই কেউ এর প্রশংসা করতে বাধ্য।
বাড়ির সুন্দর্যের মতোই খাবারের আয়োজন করা হয়েছে খুব সুক্ষ্মভাবে। বিভিন্ন আইটেমের খাবার রান্না করা হয়েছে। খাবারের ঘ্রাণে পুরো বাড়ি মো মো করছে।এই সকল কিছুর মাঝে আয়শা চৌধুরীর চোখ আটকে আছে দরজার পানে। অপেক্ষা করছেন আদিত্যর জন্য।দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন মানুষ ছুটে আসলেই এখনো নিজের সন্তানই আসেনি ওনার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে।

আয়শা চৌধুরী যেনো অধৈর্য হয়ে পরেছেন আদিত্যর জন্য।এর একটি কারণ আছে অবশ্য। এতদিন চেষ্টা করেও নূর কে আদিত্যর কাছ থেকে দূরে সরাতে পারেনি আয়শা চৌধুরী।তাই আয়শা চৌধুরী আজ একটি ফন্দি এঁটেছেন।আজ যেই করেই হোক সবার সামনে আয়শা চৌধুরী আদিত্য কে রাজি করাবে সারার সাথে বিয়ের জন্য। আয়শা চৌধুরী কিছুতেই নূরকে আদিত্যর স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিবে না।তাই তো আজ উনি এই ফন্দি এঁটেছেন।আয়শা চৌধুরী আর যেনো অপেক্ষা করতে পারছেন না। বারবার ওনার মনের মধ্যে এই প্রশ্নই উদয় ইচ্ছে আদিত্য আজ আসবে তো। আদিত্য আজ না আসলে ওনার সকল প্লান যে ভেস্তে যাবে।
আয়শা চৌধুরী কথাগুলো যখন ভাবছিলেন তখনি সারা এসে দাঁড়ায় আয়শা চৌধুরীর সামনে এবং ওনাকে উদ্দেশ্যে করে বলল।

খালামনি আদিত্য এখনো আসছে কেনো।ও আসবে তো।ও যদি না আসে তাহলে আমাদের সকল প্লান বিফলে চলে যাবে।আমি আর কখনো আদিত্য কে নিজের করে পাবো না।
আয়শা চৌধুরী সারার কথায় ওকে শান্তনা দিয়ে বলল।
তুমি চিন্তা করো না, আদিত্য অবশ্যই আসবে।আজ আমার জন্মদিন আদিত্য কি না এসে থাকতে পারবে। আমাদের মাঝে যতই অভিযোগ আর অভিমান থাকুন না কেনো আদিত্য আমার জন্মদিনে নিশ্চয়ই আসবে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৪(২)

আয়শা চৌধুরীর কথা শেষ হতেই প্রবেশ দ্বার হতে আগমন ঘটে আদিত্যর।তাও যেই সেই আগমন নয় যেনো কোনো রাজকীয় আগমন।আজ মনে হয় আদিত্য কে একটু বেশিই সুদর্শন লাগছে তাইতো পার্টিতে থাকা সকল মেয়ে হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আদিত্যর স্টাইল, আদিত্যর গেটআপ সকল কিছু যেনো ফিদা হয়ে যাওয়ার মতো।
সকলে আদিত্যর দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এখন।আর আয়শা চৌধুরী ও সারা তাকিয়ে আছে ক্রোধ ভরা দৃষ্টিতে কারণ…

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৬