তোকে চাই সিজন ২ গল্পের লিংক || নৌশিন আহমেদ রোদেলা

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ১+২
নৌশিন আহমেদ রোদেলা

ভার্সিটির প্রথম দিনেই যে কোনো ছেলের হাতে দাবাং মার্কা চড় খেয়ে মানসম্মান খোয়াতে হবে ভাবি নি কখনো।আমি নৌশিন রোদেলা।।পরিবারের ছোট মেয়ে হওয়ায় চড়,থাপ্পড় নামক বস্তুগুলো আমার কপালে খুব কমই জুটেছে।যেখানে বদ্ধ ঘরে একটা থাপ্পড়েই আমার মুখ চোখ লাল হয়ে ওঠে সেখানে ভার্সিটির মেইন গেইটে কোনো ছেলের হাতে থাপ্পড় খেয়ে এভাবে সং এর মতো দাঁড়িয়ে আছি ভাবতেই কান্না পাচ্ছে আমার। শুধু কান্না নয় ভীষনরকম কান্না।।সেই সাথে রাগও হচ্ছে ব্যাপক,,ইচ্ছে হচ্ছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার চুলগুলো টেনেটুনে ছিঁড়ে ফেলি, অসভ্য ছেলে একটা।। এসব ছেলের জন্যই আজ বাংলাদেশ রসাতলে।।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলেই উঠলাম….

এই এই আপনি আমায় মারলেন কেন??হাউ ডেয়ার ইউ??
আপনি আমায় মারলেন কেন সেটা আগে বলুন। তারপর না হয় আমি বলছি।
কথাটা বলেই নির্বিকার ভঙ্গিতে প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ালো ছেলেটা।ছেলেটার ভাব ভঙ্গি দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ব্যাপক মুডে আছে। দরকার পড়লে আরেকটা চড়ও বিনা দ্বিধায় বসিয়ে দিতে পারে আমার গালে।কিন্তু আমিও তো ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নই…আমাকে চড় মেরে চলে যাবে তা আমি কিছুতেই হতে দিতে পারি না ইম্পসিবল।। কিন্তু কি বলবো সেটাও বুঝতে পারছি না,,পেটে কথার পসরা সাজানো থাকলেও গলার কাছে এসে অদ্ভুত ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে কথাগুলো।।ব্যাপারটা ব্যাপক বিরক্তিকর।।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এবং আমিও তাতে চরম রকম বিরক্ত।আমার বান্ধবী চিত্রার সাথে গল্প করতে করতেই ভার্সিটির গেইটে পা রেখেছিলাম কিছুক্ষণ আগে।কিন্তু ভাগ্য নামক জিনিসটা যে এভাবে বেইমানি করবে বুঝতে পারি নি।। তাইতো ভাগ্যের চক্রান্তে নিজের প্লাজুর সাথেই পা লেগে উল্টে পড়লাম মুহূর্তেই।।শুধু উল্টে পড়লেও মানসম্মান কিছু বাঁচলেও বাঁচতো কিন্তু পড়লাম তো পড়লাম কোথায়?? একদম এই খাটাসটার উপর।। আর সে আমায় সামলাতে না পেড়ে আমাকে নিয়ে একদম নিচে।।বিনা টিকেটে সবাইকে বাংলা রোমান্স দেখিয়ে উঠে দাঁড়িয়েই ব্যাটাকে দিলাম এক থাপ্পড়।।ছেলেটা গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে আমার দিকে তাকাতেই আমার হার্টবিট মুহূর্তেই হাজার গতিতে ছুটতে লাগলো।।চোখগুলো যেনো আটকে গেছে ছেলেটার চোখে মুখে।।ছেলেটা কি সত্যিই এতোটা সুন্দর নাকি আমার কাছেই এতোটা সুন্দর লাগছে ঠিক বুঝতে পারছি না।।তবে এটা ঠিকই বুঝতে পারছি ১৮ বছরের রেকর্ড ভেঙে আজ আমিও কারো উপর ক্রাশড।।কিন্তু এই ক্রাশ বেশিক্ষণ টিকলো না।।উনার হাতের ভুবন কাঁপানো থাপ্পর খেয়ে ক্রাশটা হজম হয়ে গেলো মুহূর্তেই।।পাশের ছেলেটার বাজখাঁই গলায় ভাবনার প্রহর কাটিয়ে ভ্রু কুচঁকে তাকালাম…..

ভাই?আপনি যান…এই মাইয়ারে আমরা দেখতাছি।।দেইখ্যা তো মনে হয় ফার্স্ট ইয়ার।।আগে তো কখনও দেখি নাই ভার্সিটি চত্তরে।
কথাটা শুনে মুচকি হেসে আমার দিকে এগিয়ে এলো ছেলেটি।।হাজার সাহস দেখালেও উনাকে এগিয়ে আসতে দেখে পিছিয়ে গেলাম কয়েক পা।গেইটের গায়ে লেগে দাঁড়াতেই একহাতে পথ আটকে আমার উপর ঝুঁকে পড়লেন উনি।।এতোক্ষণে বুঝতে পারছি মারাত্মক রকমের ভুল করে ফেলেছি আমি।এরা নিশ্চয় ভার্সিটির সিনিয়র ভাই।।ভার্সিটির রেগিং এর কথা আগেই শুনেছি আর এতো কাহিনীর পর আমার উপর কত ডিগ্রী অত্যাচার করা হবে তাও বেশ আন্দাজ করতে পারছি।।উনি আমার দিকে আরো ঝুঁকে এসে বলে উঠলেন-” ফাস্ট ইয়ার তবু এতো তেজ?” আরো কিছু বলতে যাবেন তারআগেই পেছন থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো…

শুভ্র?তোকে প্রিন্সিপাল স্যার ডাকে….
কথাটা কানে যেতেই ঘাড়টা হালকা বাঁকিয়ে ভ্রু কুচঁকে বলে উঠলো সে…” কেন??”
নবীনবরনের অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু বলবে মে বি।।
ওহ্ হ্যা।।রাজ্জাক স্যার বলেছিলো আমায়।।ওকে চল।।
কথাটা বলে আমার দিকে তাকিয়ে বাম হাতে রাখা সানগ্লাসটা পড়তে পড়তে একটা ডেবিলমার্কা হাসি দিয়ে বলে উঠলেন…”তোমায় তো আমি পরে দেখে নিবো…জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ”

ক্যান্টিনের এককোনে বসে পা দুলাচ্ছি আর কফি খাচ্ছি।।আশেপাশে যে আমায় নিয়ে ফিসফাস হচ্ছে তাও বুঝতে পারছি।।এদিকে চিত্রা গালদুটোকে কলা গাছের মতো ফুলিয়ে অফ মেরে বসে আছে।।এমন ভাব করছে যেন তার সদ্য বিবাহিতা জামাই বাসরের আগেই ভেগে গেছে….
ওই তোর কি হইছে?এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে আছিস কেন??(ভ্রু কুচঁকে)
তো কি করবো শুনি??এটা তুই কি করলি বল তো?
আমি আবার কি করলাম??(অবাক হয়ে)
কিছুই করিস নি??সকালে এমন একটা ঘটনা ঘটিয়ে এখন নিশ্চিন্তে কফি খাচ্ছিস??কেমনে পারিস তুই??
আরে…কি এমন করেছি বল তো??একটা থাপ্পড়ই তো মারছি।।শোন…ওই ছেলেকে গণদোলাই দিতে পারলে শান্তি পেতাম।ভেবে দেখ, কতো এতো বড় সাহস আমায় মারে??হুহ

তার আগে নিজে গণদোলাই থেকে বাঁচ,, তারপর নাহয় উনাকে নিয়ে ভাবিস।।
মানে??
মানে সিম্পল।।উনি কে জানিস??(ভ্রু নাচিয়ে)
কেন রে উনি কি প্রধানমন্ত্রীর পোলা?
না…তবে তার থেকে কমও না।।উনি হলেন পলিটিক্যাল লিডার তারসাথে ক্লাস টপার।।(একটু নড়েচড়ে বসে)উনার ডিপার্টমেন্টে এই ৩৫ বছরে উনিই একমাত্র সিজিপিএ ৪ পেয়ে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন।।পয়ত্রিশ বছরের রেকট ভেঙে চুরমার করে নতুন ইতিহাসটা তিনিই তৈরি করলেন এবার।।পলিটিক্স, পড়াশোনা দুটো একসাথে কিভাবে কভার করেন কে জানে??এখন মাস্টার্স করছেন।।যেকেনো সময় এই ভার্সিটিতেই টিচার হয়ে যেতে পারেন।।প্রফেসরদের ফেবরিট স্টুডেন্ট।।ছেলেদের ফেবরিট বড় ভাই।।আর মেয়েদের ক্রাশ আইকন।। বন্ধুদের কথা না হয় বাদই দিলাম।।সো এবার বল….গণদোলাই কে খাবে তুই নাকি সে??(দাঁত কেলিয়ে)

চিত্রার কথায় এবার চিন্তা বাবাজি আমার মাথায় বেশ কড়াকড়িভাবে চড়ে বসলেন৷।সত্যি তো।।ভার্সিটি পপুলার ছেলেকে চড় মেরেছি ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে ভয়ানক দুঃসাহস।।কিন্তু আমি কি করে জানবো যে সে এত্তো পপুলার।।একটা সাইনবোর্ড গলায় ঝুলিয়ে ঘুরলেই তো পারে।।যত্তসব।। ।।কিছুক্ষণ চুপ থেকে শুকনো গলায় একটা ঢুক গিলে নিয়েই বলে উঠলাম…
তুই জানলি কিভাবে এতো সব কাহিনী??(ভ্রু কুচঁকে)
আপুর কাছে শুনেছি।।আপু তো এই ভার্সিটিতেই পড়ে আর উনি আপুরও ক্রাশ।।আম অলসো ক্রাশড অন হিম রোদ।।

আমি চিত্রার দিকে একবার অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়েই কফি খাওয়ায় মন দিলাম।।ঠিক তখনই সেই সাদা বিলাই আই মিন আমাদের শ্রদ্ধেয় শুভ্র ভাইয়া এসে চেয়ার টেনে,ঠিক আমার মুখ বরাবর বসে পড়লেন।।তারসাথে আরো সাত আটজন ছেলেমেয়ে ঘিরে বসলো আমাদের।।এরমধ্যে পাঁচজন ছেলে আর দুজন মেয়ে।।এদের হাবভাবে দেখেই বুঝা যাচ্ছে… এরা আমায় বাঁশ দিতেই এসেছে।। আমি শুকনো গলায় কয়েকটা ঢুক গিলে চারপাশে তাকাতে লাগলাম,,উদ্দেশ্য কোনো ফাঁকফুকুর পেলেই দৌড় লাগাবো।।কিন্তু সেটা যে নিতান্তই নিরাশা তা বুঝতে বাকি রইলো না আমার।চিত্রার দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখও ফ্যাকাশে হয়ে এসেছে।।দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেচারী ব্যাপক ভয় পেয়েছে।।আমিও যে কম পেয়েছি তা না,,,কিন্তু এদের কাছে নিজের ভয়টাকে কিছুতেই প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।।তাই অসীম সাহস নিয়ে বলে উঠলাম…”কি ব্যাপার?”

কি ব্যাপার?(ভ্রু কুচঁকে)
কোনো ব্যাপার না।(শয়তানী হাসি দিয়ে)
তাহলে আমাদের মতো মাসুম মেয়েদের এভাবে ঘিরে বসেছেন কেন?
আমার কথায় সবকটা হুহা করে হেসে উঠলো।।ওদের মধ্যে ফর্সা করে একটা ছেলে বলে উঠলো…
দোস্ত?এরা নাকি মাসুম।।তো এই মাসুম বান্দীদের নিয়ে কি করা যায় বল তো।(বাঁকা হেসে)
সাহেল?তোর কি মনে হচ্ছে না আমাদের ব্যাপারটা সেলিব্রেট করা দরকার।।আমরা যে কতোটা লাকি সেটা তো ভার্সিটির সবাইকে জানাতে হবে।।দুইটা মাসুম,, ধোয়া তুলশিপাতা পেয়ে তো আমরা ধন্য,,কি বলিস?
অবিয়েসলি দোস্ত।আমাদের লাক দেখে আমার এতো খুশি লাগছে যে খুশির চোটে আইটেম সং দেখতে ইচ্ছে করছে।।

পাশের ছেলেগুলোও চেঁচিয়ে উঠলো,,তারমানে সাহেল নামক ছেলেটার সাথে তারাও একমত।।আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।।এরা আমার সাথে ঠিক কি করতে চাইছে এবং কতটুকুই বা করতে চাইছে??তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না তবে এটা বুঝতে পারছি ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটবে আমার সাথে আর তা এখনই।।চিত্রা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ ওকে দেখে মনে হচ্ছে সে যেকোনো সময় ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠবে।।আমি চোখটা সরিয়ে সামনের দিকে তাকালাম,ভয় একটা ছোঁয়াচে রোগ।কারো হাসি দেখলে যেমন হাসি পায় ঠিক তেমনি কাউকে ভয় পেয়ে কাঁপা-কাঁপি করতে দেখলে নিজের মধ্যেও একটা কাঁপা-কাঁপি ভাব চলে আসে।।তাই এই মুহূর্তে চিত্রার দিকে না তাকানোটাই উত্তম বলে আমি মনে করছি।।ভাবনার সুতো কেটে পাশের টপস,জিন্স পড়া মেয়েটা কথা বলে উঠায় চোখ ঘুরিয়ে বামপাশে তাকালাম।।মেয়েটা বেশ গোছালো। বাঙালি মেয়েদের দেখলেই এক অজানা কারনেই মনে হয়… নাহ্ হয়তো শাড়িতেই মেয়েটাকে বেশি সুন্দর লাগবে।।কিন্তু আশ্চর্যকর বিষয় হলো এই মেয়েটাকে দেখে আমার তেমন কিছু মনে হচ্ছে না।।।মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্চে শাড়ি নয় এই ড্রেসটাতেই তাকে বেশি মানিয়েছে।।এই ড্রেসটা না পড়লে যেনো মেয়েটাকে মানাতো না।।এটাই তার জন্য সর্ব্বোচ্চ পোশাক।।মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো…

শুভ্র?তুই আমাদের লিডার তো আমাদের সামান্য ইচ্ছে পূরণ করবি না??বেচারা সাহেল আইটেম সং দেখতে চাচ্ছে সো তোর উচিত ব্যবস্থা করা।।দেখ না,ছেলেটার মুখটা কি শুকিয়ে গেছে।।
কথাটা বলেই সবাই একসাথে হেসে উঠলো।।সবাই কে চুপ করার ইশারা করে শুভ্র ভাইয়া সানগ্লাসটা খুলে টেবিলে রেখে শয়তানী হাসি দিয়ে বলে উঠলো…
অবিয়েসলি নীলি তোরা চাইবি আর আমি পূরন করবো না তাই কি হয়??তাছাড়া আজ তো গ্র্যান্ড সেলিব্রেশনের দিন।।এতো ইনোসেন্ট দুইটা বাচ্চা পাইছি।।যারা নাকি গেইট দিয়ে ঢুকতেই সিনিয়রের গায়ে হাত তুলে।।ভাবা যায়??সেলিব্রেশন তো হবে দোস্ত।।
কথাগুলো আমার দিকে তাকিয়ে বলেই জোড়ে চেচিয়ে রনি নামে কাউকে ডাকলেন।।উনার এই ডাকেই কেনো জানি আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো খানিকটা।।পরক্ষনেই পাশে এসে দাঁড়ালো হ্যাংলা পাতলা একটা ছেলে।।

জি ভাই?
বক্স নিয়ে আয় ফাস্ট
জি ভাই
ছেলেটা যতো দ্রুত এসেছিলো তার থেকেও দ্রুত পা চালালো।।যেনো এই কাজটা সম্পন্ন না করতে পারলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে যা ছেলেটা কিছুতেই হতে দিতে পারে না।।আমি চুপচাপ বসে আছি।।গলা শুকিয়ে কাঠ,,, ইচ্ছে করছে ফ্লোরে বসে পা ছড়িয়ে কাঁদি।।এই ভার্সিটিতে জীবন যে আমার নরকে পরিনত হবে তা বেশ বুঝতে পারছি আমি।এত্তো কিউট একটা ছেলে যে এত্তো ডেঞ্জারাস হতে পারে কে জানতো??কিছুক্ষণের মধ্যেই হ্যাংলা ছেলেটা একটা বিশাল সাউন্ড বক্স এনে পাশের টেবিলের উপর রেখে দিলো।।শুভ্র ভাইয়া শরীরটা টানা দিয়ে চেয়ারে আরাম করে বসে আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলেন….

হেই হোয়াটস ইউর নেইম??
রররোদ…(জড়ানো গলায়)
হোয়াট?রররোদ কারো নাম হয় নাকি?(ভ্রু কুচঁকে)
রররোদ নয় রোদ।(মুখ ফুলিয়ে)
আমার কথাটা শুনেই শুভ্র ভাইয়া চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলেন….
হোয়াট? রোদ??হেই গাইস শীতের দিকে একে একটু কাছে কাছে রাখতে হবে তাহলে আর টাকা খরচ করে সুয়েটার কিনতে হবে না, কি বলিস??
উনার কথায় আবারও সবাই হুহা করে হেসে উঠলো।।একজন তো বলেই ফেললো…” দোস্ত আমি তো ভাবছি শীতের রাতে একে সাথে করেই নিয়ে যাবো।।আরে রাতে রোদ পাওয়ার ভাগ্য সবার হয় নাকি??” এবার আমার চোখদুটো টলমল করে উঠলো।।এতোটা অপমানিত এই জীবনে কখনো হয়েছি বলে মনে হয় না।।এই একদিনেই আমার অবস্থা যে এমন হবে জানলে কখনো ভার্সিটিতে ভর্তিই হতাম না।।উনাদের হাসাহাসি শেষ হলে শুভ্র ভাইয়া আবারও আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন।।

হেই সানশাইন।।মাথা নিচু করে বসে আছো কেন??উপরের দিকে তাকাও।।তো..তোমার নাম শুধুই সানশাইন??আই মিন শুধু রোদ?আগে পিছে ঝর বৃষ্টি কিছু নেই??
আমি কোনোরকম নিজের কান্না আটকিয়ে কিছু একটা বলতে যাবো তখনই পাশ থেকে একজন বলে উঠলো…”দোস্ত জিজ্ঞেস কর তো নামের আগে পিছে ঠাডা, বজ্রপাত কিছু আছে কি না??”উনার কথায় আবারও সবাই একপত্তন হেসে নিয়ে আমার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো…” পুুরো নাম কি?”
নৌশিন আহমেদ রোদেলা।(মাথা নিচু করে)
রো-দে-লা??(টেনে টেনে)
নট বেডডড।।এনিওয়েস ঝটপট টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে পড়ো।।ফাস্ট ফাস্ট
আমি অবাক চোখে মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলাম -“কেন???'”সাথে সাথে আবারও হেসে উঠলো সবাই।।ডানপাশে বসা লং স্কার্ট পড়া মেয়েটা আমার জুটি করে রাখা চুলগুলো একটানে খুলে দিয়ে বলে উঠলেন…”দোস্ত?এই মেয়ের এতো দেখি ব্যাপক কিউরিওসিটি রে।।আমাদের প্রশ্ন করে।।কি করা যায় একে??”

আন্সারটা দিয়েই দে।।আচ্ছা আমিই বলছি,,এই যে সানশাইন…তোমাকে এই টেবিলের উপর উঠে আনটেম সং এর সাথে ডান্স করতে হবে।।এক্চুয়েলি আমার ফ্রেন্ডসদের আইটেম সং দেখতে ইচ্ছে করছে সো স্টার্ট করো।(শয়তানী হাসি দিয়ে)
উনার কথাটা শুনে মাথাটা যেন ঘুরে গেলো আমার।।বলে কি এই ছেলে?পুরো ভার্সিটির সামনে আমি টেবিলের উপর আইটেম সং এ নাচবো??পাগল নাকি??
দদদেখুন আআমি নাচ পারি ননা।
না পারলেও সমস্যা নেই।।নাচতে নাচতে শিখে যাবে।।তাছাড়া তুমি চাইলে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলোও তোমায় সঙ্গ দিতে পারে….কি লাগবে??
দেখুন আমি নাচবো না।আর আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই।।ভার্সিটিতে রেগিং এলাউড নয় ,, আপনারা বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি ভিসি স্যারকে জানাতে বাধ্য হবো।।
আমার কথায় আবারও হেসে উঠলো সবাই।।তারমধ্যে পাশে বসা আপুটি আমার চুলগুলো শক্ত করে চেপে ধরে মাথাটা একটু তুলে ধরলো…ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম।।কিন্তু তাতে মেয়েটার কোনো ভাবান্তর হলো বলে মনে হচ্ছে না।।বরং আরো শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন….

ভিসি স্যার,,রেগিং হোয়াটএভার এসব তোমার “আবরার আহমেদ শুভ্র” এর গায়ে হাত তোলার আগে চিন্তা করা উচিত ছিলো খুকি।।নাও ইউ আর গন।
কথাটা বলেই টেবিলে থাকা পানিভর্তি জগের পানিগুলো ছুঁড়ে মারলেন আমার গায়ে।।এমন কিছুর জন্য তৈরি ছিলাম না আমি।।জামাটা পুরো ভিজে একাকার।।ঠান্ডায় শরীরটা হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে।।এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না।।চোখ থেকে ঝরে পড়লো দু’ফোটা জল।।তার সাথে চেপে বসলো জেদ।।জেদের বশেই করে ফেললাম আরেকটা মারাত্মক ভুল।।হাতের কাছের গ্লাসের পানিগুলো ছুঁড়ে মারলাম শুভ্র ভাইয়ার মুখে।আমি এমন কিছু করবো তা হয়তো চিন্তাই করতে পারে নি কেউ।।চিত্রাকে দেখলাম মুখ চেপে ধরে আছে,, ওর চশমার উপর দিয়েও বুঝা যাচ্ছে ও কাঁদছে।।কয়েকমিনিটে পুরো ক্যান্টিন অস্বাভাবিক রকম শান্ত হয়ে গেলো যেনো ঝড় আসার পূর্ব নীরবতা চারপাশে।।হঠাৎ করেই প্রচন্ড শব্দে চমকে উঠলাম আমি।।শরীরটা ভয়ে কুঁচকে গেছে একদম।।অবাক চোখে সামনের দিকে তাকাতেই দেখি আমার সামনের টেবিলটা আর নেই।।ওটা ছিটকে পড়ে আছে আমাদের থেকে একটু দূরে,,আর শুভ্র ভাইয়া চোখ মুখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছেন।।ভয়ে আমার প্রাণপাখি রীতিমতো উড়াউড়ি শুরু করে দিয়েছে।।আমার ভয়টাকে আরো দুইগুণ বাড়িয়ে দিয়ে উনি একহাত আমার চেয়ারের হাতলে রেখে অন্যহাতে গাল চেপে ধরলেন আমার।।উনার লাল লাল চোখগুলোর দিকে তাকানোর সাহস খুঁজে পাচ্ছিলাম না যেনো।।কি ভয়ানক দুটি চোখ।।উনি গম্ভীর গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন…

হাউ ডেয়ার ইউ??এতো সাহ..
এটুকু বলেই আমার শরীরের দিকে তাকালেন উনি।।কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলেন একদৃষ্টে পরক্ষণেই আমায় ছেড়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন উনি।।গায়ের জ্যাকেটটা খুলে আমার উপর ছুঁড়ে ফেলে,,”কাল ওর ক্লাস নেবো” কথাটা বলেই বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে গেলেন উনি।।চারপাশের সবাই আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে আর মেয়েরা ফিসফাস করে চলেছে।।ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে নিজের দিকে তাকিয়েই লজ্জায় কুকড়ে উঠলাম আমি।।পানিতে ভেজা সাদা জামায় শরীরের প্রতিটা ভাজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।।ছিহ্ কি লজ্জার ব্যাপার,,তাই তো ছেলেগুলো মুখের লালা ফেলে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।ভাবতেই শরীরটা ঘিনঘিন করে উঠলো…লজ্জায় আর অপমানে চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো অনবরত।।ঠিক তখনই পাশ থেকে চিত্রা ভাঙা ভাঙা গলায় বলে উঠলো…..
ররোদ?জ্যাকেটটা শরীরে জড়িয়ে নে সসব বুঝা যাচ্ছে খুবই বিশ্রী দেখাচ্ছে।।এজন্যই হয়তো শুভ্র ভাইয়া জ্যাকেটটা দিয়ে গেলো তোকে।।

আমিও আর কিছু না ভেবে জ্যাকেটটা পড়ে নিলাম।।এছাড়া আর কোনো অপশন আমার কাছে নেই।।এই অবস্থায় ভার্সিটি গেইট পর্যন্ত যাওয়া মৃত্যু যন্ত্রনার চেয়ে কম কিছু নয় বরং তার চেয়েও বেশি।।জ্যাকেটের চেইন লাগাতে লাগাতে আবারও বলে উঠলো চিত্রা…
আবারও একই ভুল করলি রোদ।।পানি মারার ছিলো তো আমার মুখে মারতি।।শুভ্র ভাই কেই মারতে হলো??এবার কাল যে তোর সাথে কি হবে সেটা ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার।।
আমিও বুঝতে পারছি আবারও ভয়ানক একটা কাজ করেছি আমি।।এর পরিনতি কি হতে পারে ভেবেই গলা শুকিয়ে আসছে বারবার।।

কোনোরকম মুখ লুকিয়ে বাসায় ঢুকে গেলাম আমি।।মার সামনে পড়তে হয় নি ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।। মার সামনে পড়লেই হাজারও প্রশ্নে জড়জড়িত হতে হতো আমাকে।গায়ের জ্যাকেট কার?আমার এই অবস্থা কেন?হেন তেন কতো কিছু।।তারপর সবশুনেই শুরু হতো উনার টেনশন নামক পীড়া তারসাথে প্যাশার আপ ডাউন।।এক্সট্রা ঝামেলা!!! মা নামক মানুষগুলো এমনি হয়,,,এদের টেনশন না করলে পেটের ভাত হজম হয় না।।সিম্পল বিষয়গুলো নিয়েও উনারা খাওয়া-নাওয়া বাদ দিয়ে টেনশন করতে বসে যাবেন।।আর এটা তো সিরিয়াস ইস্যু।।রুমে ঢুকে কোনোরকম শাওয়ার নিয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।।আজকের দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে দিনগুলোর তালিকায় প্রথম।।আর শুভ্র নামের মানুষটা ভালো লাগা আর খারাপ লাগার মাঝে বিরক্তিকর একটা পার্সোনালিটি যাকে আমি ইহকালে দ্বিতীয়বার দুচোখ মেলে দেখতে চাই না।।কখনো না।।

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৩+৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here