তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ১১+১২

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ১১+১২
নৌশিন আহমেদ রোদেলা

নিউ মার্কেটের সামনে থেমে গেলো গাড়ি। মামু অভ্র ভাইয়াকে কিসব কিনে নিতে বলেছেন। কিন্তু এই সাদা বিলাইয়ের সেই ধৈর্য থাকলে তো! সে কিছুতেই অভ্র ভাইয়ার সাথে যাবে না। এই মুহূর্তেই বাসায় যেতে চাই সে। এট এনি কষ্ট। অভ্র ভাইয়া হয়তো জানে একে বলে লাভ হবে না। তাই তাকে কিছু না বলে আপুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,
কেউই কি আমার সাথে যাবে না?
সাথে সাথেই শুভ্র ভাইয়া বলে উঠলেন,

রুহিকে নিয়ে যাও ভাইয়া। ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওর চয়েজ সুন্দর। রুহি যাবে ভাইয়ার সাথে? প্লিজজ!
আমি উনার কথায় চরম অবাক। এই ছেলেকে দেখে কে বলবে এইছেলে এতোটা ফাজিল। আপুকে এতো কিউট করে প্লিজ বলছে আপু তো নির্ঘাত ভাববে এই পোলা ইনোসেন্সের দোকান। কিন্তু আসলে তো তা নয়। একদম অসভ্য! শুভ্র ভাইয়ার কথায় আপু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে গাড়ি থেকে নেমে গেল। আমিও নামতে যাবো ঠিক তখনই শুভ্র ভাইয়া বলে উঠলেন, “একেও নিয়ে যাও।যদিও কাজে কিছুই লাগবে না। তবু নিয়ে যাও।” উনার কথায় মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে উনার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলাম, “আপনি না বললেও আমি যাবো। আপনার মতো থার্ড ক্লাস পার্সোনের সাথে থাকার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।” কথাটা বলে নামতে গেলেই বাদ সাধলো আপু।
এই না না। তোর আসতে হবে না। কি রোদ বাইরে দেখেছিস? সকালে তো ব্রেকফাস্টটাও করিস নি ঠিকঠাকভাবে। এখন দুটো বাজে। পরে দেখা যাবে সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেছিস। “একটা মেয়ে শপিং করতে করতে বেহুশ” কি বিশ্রী অবস্থা হবে বল তো? তার থেকে তুই শুভ্র ভাইয়ার সাথে চলে যা। বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবি। গো
না উনার সাথে আমি কিছুতেই যাবো না। তাছাড়া তুমি তো একা গেলে আনইজি ফিল করবে।
আমি ম্যানেজ করে নিবো। তবু তোর হেল্থের সাথে নো কম্প্রোমাইজ। তোর তো একটুতেই প্রেশার লো হয়ে যায়। সো তুই বাড়ি যা। আর একটা কথাও না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আপুর কথায় মুখ ফুলিয়ে বসে পড়লাম। এই বলদের সাথে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। তবুও যেতে হচ্ছে। উফফ অসহ্য! কিছুক্ষনের মধ্যেই অভ্র ভাইয়া আপুকে নিয়ে হাওয়া হয়ে গেলেন আর আমার মতো অবলা নারীকে এই নরপিশাচের কাছে রেখে গেলেন। উফফ! দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। উনার ভাব দেখে মনে হচ্ছে শুধু উনার পাশে কেন? উনার ত্রিসীমানার মধ্যে কেউ নেই। আজাইরা! হঠাৎই একটা মোড়ে গাড়ি থেমে গেল। সাথে সাথেই একটা ছেলে দৌড়ে এসে দাঁড়ালো জানালার পাশে। ছেলেটা ক্রমাগত হাঁপাচ্ছে। মনে হচ্ছে বেশ দৌঁড়েছে সে। হাঁপাতে হাঁপাতেই বলে উঠলো,
ভাই? যে বার্গার আনতে বলছেন ওইটা তো পাই নাই। তাই চিকেনবার্গার নিয়ে আসছি। আর আইসক্রিমও আনছি। ধরেন (হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে)

উনি সামনের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন, “ওটা আমার জন্য নয় সাকিব। পাশের জনকে দে।” উনার কথায় ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে বেক্কল মার্কা হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ” ভাবি ধরেন। একদম ফ্রেশ আনছি।” উনার “ভাবি” কথাটায় আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই সে তাড়াহুড়ো করে বলে উঠলো,
সরি সরি আপুমনি।
সাকিব গাধার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে খাবারটা সামনে রেখে চলে যা। তোর না তিনটাই ক্লাস?
হ ভাই।
তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন আহাম্মক?
সরি ভাই। আসি ভাবি সরি আপুমনি আসি?
কথাটা বলেই আবারও দৌঁড় লাগালো ছেলেটি। এবার আমি উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। কিন্তু সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপই নেই। অদ্ভুত মানুষ!

ওই ছেলেটা আমায় ভাবি ডাকলো কেন? (রাগী গলায়)
ওটা ওকে জিগ্যেস করো। আমাকে কেন জিগ্যেস করছো? (ভাবলেশহীন ভাবে)
অবশ্যই আপনাকে জিগ্যেস করবো। আপনিই নিশ্চয় ওকে শিখিয়ে দিয়েছেন যেন ও আমায় ভাবি ডাকে।
What a joke!! ও হ্যালো? আমি কোন দুঃখে বলতে যাবো? আমার মনে হয় তুমি দেখতে হয়তো ওর ভাবির মতো তাই তোমাকে দেখলেই ওর ভাবি ভাবি ফিলিংস আসে। (শয়তানী হাসি দিয়ে)
একদম মিথ্যে বলবেন না। আর এসবের মানে কি?বার্গার, আইসক্রিম এসব দিয়ে কি প্রমান করতে চাইছেন?
নিজেকে জাস্ট সেইভ করতে চাইছি। কিছু প্রমান করতে চাইছি না।
সেইভ? কার থেকে?
তোমার থেকে।
হোয়াট? (অবাক হয়ে)

হুমম। তোমার প্রেশার অলওয়েজ লো থাকে। ওভারঅল ৯০/৫০। আর সকাল থেকে না খেয়ে থাকায় এখন তা ৯০/৩০ এ ও নেমে যেতে পারে। মোরাল অফ দ্যা স্পিস হলো তুমি এখনি সেন্সলেস হয়ে যেতে পারো। আর আমার মনে হয় কি জানো? তুমি ইচ্ছে করে এমনটা করছো যেন সেন্সলেস হয়ে আমার কোলে চড়তে পারো। ও মাই গড চিন্তা করা যায়? কি ভয়ানক মেয়ে?
জীবনেও না। আমি মরে গেলেও আপনার কোলে উঠবো না। নিজেকে কি মনে করেন হ্যাঁ? প্রিন্স চার্মিং?যত্তসব আজাইরা! আর আপনি আমার ফিজিক্যাল কন্ডিশন কি করে জানলেন? (সন্দেহের দৃষ্টিতে)
উনি কিছু না বলে মুচকি হাসলেন। উনার হাসিতে পিত্তি জ্বলে গেলো আমার। অসভ্য ছেলে। হাসিতেও একটা শয়তান শয়তান ভাব আছে। আবারও নীরব হয়ে গেল গাড়ির পরিবেশ। উনি খুব সফ্টলি গাড়ি চালাচ্ছেন আর পাশে বসে আমি ছটফট করছি। পেটের মধ্যে হাজারও প্রশ্ন কিলবিল করছে। উনাকে জিগ্যেস করবো কি করবো না বুঝে উঠতে পারছিলাম না। উনি কি উত্তর দিবেন? আচ্ছা জিগ্যেস করেই দেখি যা হবার হবে।সকল দ্বিধাদ্বন্দ্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রশ্নটা করেই ফেললাম,

একটা কথা জিগ্যেস করি?
(নিশ্চুপ)
না মানে বলছিলাম কি আপনি কবে থেকে জানেন যে আপনি আমার মামুর ছেলে?
আমি তোমার মামুর ছেলে হতে যাবো কেন? আমি আমার বাবার ছেলে। এখন আনফরচুনেটলি আমার বাবা যদি তোমার মামু হয় দেন হোয়াট ক্যান আই ডু?
উফফ এতো পেচান কেন? বলুন না কবে থেকে জানেন।
খাবারটা খেলে বলবো।
আমি ফটাফট বার্গারটা হাতে নিয়ে বললাম। “ওকে খাচ্ছি! এবার তো বলুন।।”
উনি মুচকি হেসে আবারও গাড়ি চালানোই মনোযোগ দিলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলেন,
প্রথম দিন থেকেই জানি।
প্রথম দিন? তারমানে চড় খেয়েই বুঝে গিয়েছিলেন?(উনি রাগী চোখে তাকাতেই) না না মানে বলছিলাম যে প্রথমবার দেখেই বুঝে গিয়েছিলেন?
নোপ। প্রথমে বুঝি নি। প্রথমে ততোটা খেয়াল করে দেখিই নি তোমায়। ক্যান্টিনে রাহা তোমার উপর পানি ফেলার পর বুঝতে পেরেছিলাম।

এমনি কেমনে বুঝে গেলেন? আর বুঝলে মামুকে বলেন নি কেন?
আমি সিউর ছিলাম না তাই বলি নি। আর আমি সিউর না হয়ে কিছুই করি না।
ওহ। তা না হয় বুঝলাম। বাট আপনি আমায় চিনলেন কিভাবে?
শুভ্র হাসলো। হাতের ঘড়িটা একবার দেখে নিয়েই বলে উঠলেন,
বাংলা সিনেমা দেখেছো কখনো?
হ্যাঁ কেন? (অবাক হয়ে)
দেয়ার ইজ আ কমন সিন আন্ড দ্যাট ইজ ছেলে অবিকল বাবার মতো দেখতে নয়তো মেয়ে একদম মার মতো দেখতে। এসব দেখে তখন হাসিই পেতো। বিশ্বাস কোনোকালেই হয় নি। বাট আনফরচুনেটলি ব্যাপারটা তোমার সাথে ঘটেছে। ফুপির চেহারার সাথে তোমার চেহারার ৮০% মিল আছে। ফুপির ছোটবেলার ছবি যদি কেউ বারবার দেখে তাহলে তোমায় হঠাৎ দেখে চমকাতে বাধ্য হবে সে।
আপনি আম্মুর পিক দেখেছিলেন?

হুমম আমাদের বসার ঘরেই ফুপ্পির ছোটবেলার আই মিন তোমার বয়সী একটা পিক ঝুলানো। ছোট থেকেই দেখে আসছি।
ওহহ! আপনি আমার রিলেটিভ এটা জানার পরও আমার সাথে কি বাজে বিহেভ করেছেন। ছিহ্! আমি মামুকে সব বলে দিবো (মুখ ফুলিয়ে)
আমি কি তোমার সাথে কথা বলার সময় স্ল্যাং ইউজ করেছি? তোমার শরীরে হাত দিয়েছি? তাহলে মিসবিহেভ কিভাবে করলাম? বাবাকে কি বলবে? (বাঁকা হাসি দিয়ে)

আপনি আমায় প্রস্টিটিউটের সাথে তুলনা করেছেন। এটা কি কম? (রাগী গলায়)
আচ্ছা বলো। আমিও বাবাকে বলবো কেন তুলনাটা করেছি। গলায় লাভ বাইট ভাসিয়ে ঘুরলে যে কেউ এই একই কথা বলবে।।তোমাকে দেখে পিচ্চি মনে হলে কি হবে বয়ফ্রেন্ডদের সাথে যে রাস্তায় রাস্তায় রোমান্স করে বেড়াও সেটা বাবার জানা উচিত। আচ্ছা তুমি কি শুধু রাস্তায়ই এমন করো নাকি রুমেও?
শাট আপ। আর একটা কথা না। গাড়ি থামান।
কেন?
আই সেইড স্টপ দ্যা কার (চিৎকার করে)
চিৎকার করে লাভ নাই। থামাব না।

তাহলে আমি গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়বো। আপনার ঘৃন্য চেহারা দেখার চেয়ে গাড়ি থেকে পড়ে মরে যাওয়া ভালো। গাড়ি থামান বলছি (দাঁতে দাঁত চেপে)
পারলে লাফিয়ে পড়ো। আই ডোন্ট কেয়ার বাট গাড়ি থামবে না। (শান্ত গলায়)
রাগে আমার গা জ্বলছে। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করি নয়তো একে খুন করে ফেলি। তাহলে হয়তো রাগটা একটু কমতো। মানুষ এতোটা খারাপ কি করে হতে পারে। ছিহ্! নিজের অজান্তেই দুফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। সাথে সাথেই ব্রেক কষলেন উনি। আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন,
খবরদার যা করার করো বাট চোখের পানি পড়লে খবর আছে।

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৯+১০

আমি যা ইচ্ছা করি তাতে আপনার কি? জাস্ট গো টু হেল। আমার লাইফটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছেন আপনি।
কথাটা বলেই সামনে রাখা পানির বোতলটার ছিপি খুলে উপর করে দিলাম উনার উপর। আবার সেই পানি! উনার উপর পানি ঢেলেও শান্তি পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছিলো একে এক ধাক্কায় গাড়ি থেকে আউট করে দিলে কিছুটা শান্তি পেলেও পেতে পারি। উনার দিকে আড়চোখে তাকালাম। উনি খুব শান্ত ভঙ্গিতে টিস্যু নিয়ে মুখটা মুছে নিলেন। শার্টের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে নিয়েই হাতাটা ফোল্ড করে আবারও গাড়ি স্টার্ট দিলেন। উনার ভাব দেখে মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয় নি। সব স্বাভাবিক আছে। আমার দেওয়া পানিতে উনার শার্টও ভিজে চুপচুপেও হয় নি। কি আশ্চর্য! এর রিয়েকশন বাটন কি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে নাকি? হতেও পারে। হু নোস??

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ১৩+১৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here