তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ২১+২২

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ২১+২২
নৌশিন আহমেদ রোদেলা

নদীর পাড়ে কি জানি একটা গাছের তলায় বসে আছি।।ভাইয়া বলেছে এটা নাকি নামছাড়া গাছ।।এসব গাছের নাম হয় না।সত্যিই কি নাম হয় না??এইটা নিশ্চয় ভাইয়ার গাঁজাখুরি মতবাদ।।এমন নির্জন একটা স্থানে বসে থাকতে বেশ লাগছে।।মনটাও ভালো লাগছে অনেক।ভাইয়া ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।।আমি অবাক চোখে তাকিয়েই বলে উঠলাম-
বিরিয়ানি??
হুম।সকালে তো না খেয়েই ওঠে এলি।।খাবারের সাথে তোর এতো কিসের রাগ বল তো??
কোনো রাগ নেই।(খেতে খেতে) আচ্ছা ভাইয়া??তুই না বললি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পাত্রী খুঁজবো?তাহলে এখানে বসে আছি কেন??হুয়াই?
আরে পাগলী….তুই হয়তো জানিস না নদীর ধারই পাত্রী খোঁজার সবচেয়ে সুইটেবল জায়গা।
তাই নাকি?(ভ্রু কুচঁকে)
হুম একদম।এই দেখ কোমড় দুলিয়ে কলসি কাখে চারপাশের চারগ্রাম থেকেই মেয়েরা আসবে।।এমনি তো চারগ্রামে ঘুরতে হতো এখন একজায়গায় বসেই চারগ্রামের মেয়ে দেখা যাবে ভালো না??
মহা ভালো।।আরে আহাম্মক এখন আর মেয়েরা কলসি কাখে নদীতে আসে না।।সবার বাড়িতে কলঘর আছে।।বুঝিস না?সচেতন বাংলা!!তোর কপালে বুঝি আর বউ নাই রে।।তোকে চিরকুমারই থাকতে হবে।
চুপ।একদম বাজে বকবি না।চিরকুমার কেন থাকবো??হালি হালি বাচ্চার বাবা হবো ইনশাআল্লাহ!! নো কম্প্রোমাইজ বুঝলি??
ভাইয়ার কথায় হুহা করে হেসে উঠলাম আমি সাথে ভাইয়াও।।

তিনদিন যাবৎ শুভ্র ভাইয়াকে এবোয়েড করে চলছি।চোখে লাগার মতো এবোয়েড। খুব প্রয়োজন ছাড়া উনার সামনেই পড়া বন্ধ করে দিয়েছি এখন।ভার্সিটি যাই না তিনদিন হলো।ফোনের সিম চেঞ্জ করেছি।উনি বাসায় এলে দরজা লাগিয়ে বসে থেকেছি।।মোট কথা টপ লেভেলের এবোয়েড যাকে বলে।।একদম মুখদর্শন ও বন্ধ।।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো… চিত্রা ফোন দিয়েছে…নাম্বার কেমনে পেলো কে জানে।ফোনটা ধরতেই উদ্ধিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো..
কি সমস্যা তোর?ক্লাসে আসিস না কেন?ফোনেও তো পাওয়া যায় না।।ঠিক আছিস তুই?
হুম ঠিক আছি।।কি বলবি তাই বল…আমার ঘুম পাচ্ছে।
সকাল ৮ টা ক্লাস টাইম এখন কিসের ঘুম?
মরার ঘুম।তোর যা বলার বল তো…কথা পেঁচাস না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সেমিষ্টার তো চলে এলো।শীট,নোটস কিছুই তো নেসনি।।আজ স্পেশাল ক্লাস আছে আক্কাস স্যারের।।আজ তো এটলিস্ট ভার্সিটিতে আসিস….শুভ্র ভাই বারবার খুঁজ করে কিছু বলতে পারি না খারাপ লাগে।।
তোর শুভ্র ভাই আমার খোঁজ কেন করে?(অবাক হয়ে)
শুভ্র ভাই আমার কবে থেকে…
এটুকু বলতেই ফোনটা কেটে দিলাম আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।।ভার্সিটি যাওয়া উচিত,, এভাবে বাড়ি বসে থাকা যায় না।।তাই রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করে চলে গেলাম ভার্সিটিতে।।ভার্সিটি গেইটে পা রেখেই কেমন অন্যরকম ফিলিং হলো যেনো কতোদিন পর আসছি সব যেনো অপরিচিত।। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটা দিলাম।।কিছুক্ষণ পরই হাতে টান পড়লো।।তাকিয়েই শুভ্র ভাইকে দেখতে পেলাম।ইশশশ…কি অবস্থা করেছেন চোখ মুখের।মনে হচ্ছে কতরাত ঘুমোন না উনি। খুব মায়া লাগছে উনাকে দেখে কিন্তু আমার তো মায়া লাগলে চলবে না।।তাই বিরক্তি নিয়ে চোখ কপাল কুঁচকে হাতটা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বলে উঠলাম-

আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া….কোনো দরকার?পাব্লিক প্লেসে এভাবে হাত ধরলেন কেনো? নিশ্চয় কোনো দরকার ছিলো।।দেখুন কোনো দরকার হলে আমায় বলবেন এমন হুটহাট হাত ধরবেন না।।আমি আসি ক্লাস আছে।
কথাটা বলেই হাঁটা দিলাম সামনের দিকে।।উনি অবাক চোখে এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।।থাকলে থাকুক তাতে আমার কি??ক্লাস শেষে বের হয়ে কিছুটা সামনে এগুতেই কেউ টেনে ফাঁকা ক্লাসে দাঁড় করিয়ে দিলো আমায়।।শুভ্র ভাইয়া?? উনার চোখদুটো লাল টকটকে।খুব জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করছে “কি হয়েছে আপনার?” কিন্তু জিগ্যেস করা হলো না।।উনি শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়েই বলে উঠলেন-
আমার সাথে কথা বলছো না কেনো??তিনদিন পর দেখা দিলে এসবের কারণ কি??
কেন?আপনার সাথে কোনো কন্ট্রাক্ট সাইন করা ছিলো যে প্রতিদিন আপনার সাথে কথা বলে সকাল সকাল আপনাকে মুখ দেখাতে হবে?
উনি পাশের বেঞ্চটাতে জোড়ে লাথি দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে উঠলেন-

মজা করো আমার সাথে?ফাজলামো পাইছো??আমাকে মানুষ মনে হয় না??আমি মরে যাচ্ছিলাম আর তুমি মজা নিচ্ছো?জানো তুমি??শ্বাস নিতে কতো কষ্ট হচ্ছিলো আমার।।আরেকটু হলে সত্যিই মরে যেতাম।।
আমি কি আপনার প্রাণ ভোমড়া নিয়ে ভেগেছিলাম নাকি যে মরে যাবেন।(অবাক হয়ে)
আমার কথায় শুভ্র ভাইয়া মুচকি হাসলো…. গালের উপর এসে পড়া চুলগুলো গুঁজে দিলো কানে।।ঠোঁটে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে উঠলেন-
তুমিই তো আমার প্রাণ ভোমড়া…
উনি আরো কিছু বলতেন তার আগেই চিত্রার গলার আওয়াজ কানে এলো।।সাথে সাথেই আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন উনি।। লুচু পোলা… চিত্রার ভয়ে ছেড়ে দিলো নির্ঘাত.. তার চিত্রা বেবি কষ্ট পাবে বলে কথা!!!..অসভ্য,সাদা বিলাই কোথাকার!!আমার ভাবনায় জল ঢেলে চিত্রা অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো-

সরি ভাইয়া!!আই থিংক আমি রং টাইমে চলে এসেছি।
না না ইটস ওকে।আমরা এমনি ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে ডিসকাশন করছিলাম।(জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে) এক্চুয়েলি লাস্ট টাইম তো আদিবের গন্ডগোলের জন্য এ্যান্গেজমেন্টটা হতে হতেও হয় নি।।সো ওটায় রিপিট করা হবে আগামী শনিবার।।ওটা নিয়েই কথা বলছিলাম জাস্ট।অন্যকিছু না।
ওও আচ্ছা।
আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে উনাদের সংডং এর কথা শুনেই চুপচাপ বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।।এই শুভ্র ভাইয়ার মতি গতি কিছুই বুঝি না আমি।।কি চায় সে আমার থেকে??কেনো এতো নজরদারি আমার উপর??মামুর ভাগ্নি বলে??নাকি অন্যকিছু??হঠাৎই পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো-
ভাবি?
বিরক্তি নিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখি রাতুল ভাইয়া। এদের মধুর স্বরে ভাবি ডাক শুনে নিজেকে সরকারি ভাবি বলে মনে হয়…. বিরক্তি দমন করে… জোড়পূর্বক একটা ক্লোজ আপ হাসি দিয়ে বলে উঠলাম-

জি বলুন দেবরজি।
ভাইকে পাইতেছি না।।ভাই কই?মিটিং আছে লেট হচ্ছে(অসহায় কন্ঠে)
আপনার ভাই কই আমি কি করে জানবো??আমার কি জানার কথা ছিলো নাকি??(ভ্রু কুঁচকে)
না মানে….লাস্ট যখন দেখেছিলাম তখন তো ভাই আপনার সাথেই ছিলো।।ওই ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসের দরজা লাগাচ্ছিলো।
রাতুল ভাইয়া কথাটা সাদা মনে বললেও আমার রাগ তখন সপ্তম আকাশে।।আমাকে নিয়ে দরজা লাগাচ্ছিলো…ছিহ্ কি বিশ্রী শুনায় কথাটা।।মেজাজ ফোরটি নাইন করে কোনো কথা না বলেই হাঁটা দিলাম বাড়ির পথে।।সবকটা আহাম্মকের ঢেঁকি।।অসহ্য,,, জাস্ট অসহ্য!!

আজকে আপুর এনগেজমেন্ট,,সেদিন আমি অসুস্থ হয়ে পড়ায় এনগেজমেন্টটা আর হয় নি।ওখানেই অনুষ্ঠান থামিয়ে দিয়েছিলো মামু।।মার সাথে দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ কোথা থেকে এক মহিলা এসে মুখে অমায়িক হাসি নিয়ে বলে উঠলো-“কেমন আছো মা?” যেনো আমি তার হারিয়ে যাওয়া বউ মা।আমি মুচকি হেসে উত্তর দিলাম-“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো!!আপনি??” আমার কথায় উনি যেনো চাঁদ হাতে পেয়েছেন,, খুশিতে গদগদ হয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন- “আপা?আপনার মেয়েটা যেমন লক্ষি তেমন মিষ্টি।।আমার ছেলেটাও তেমন,,কি ভদ্র!!এবার ডাক্তারী পাস করে হসপিটালে বসেছে।আমাদের নিজেদের ক্লিনিক।” আম্মু চলনসই হাসি দিয়ে চলেছেন ক্রমাগত।।মায়ের হাসিতে মহিলা যেনো আরো ভরসা পেলেন।হাসিমুখে বলে উঠলেন – ” আপা?আপনার মেয়েকে বিয়ে…” আন্টির কথাটা শেষ হওয়ার আগেই কেউ একজন পাশ থেকে বলে উঠলো- “ভাবি??” পাশে তাকিয়ে দেখি আবার সেই রাতুল ভাইয়া।।।উফফ্ আমার হয়ে যাওয়া বিয়েটা একটা মাত্র “ভাবি” ডেকে ভেঙে দিলো তো??আমি আম্মুর দিকে তাকাতেই দেখি আম্মু কড়া নজরে একবার আমাকে তো একবার রাতুল ভাইয়াকে দেখছেন।।”ভাবি” কথাটা নিতে তার যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছে।তার অবিবাহিত মেয়েকে কোনো সুদর্শন হ্যাবলাকান্ত পুরুষ অবলীলায় ভাবি ডাকছে সেটা মা জাতি হিসেবে তার মেনে নেওয়ার কথা নয়….আমি মুচকি হেসে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম-

জি ভাইয়া বলুন…..
আপনাকে আংকেল ডাকছে…
আংকেল??
মানে আপনার মামু ডাকছে।এনগেজমেন্টের রিং নাকি আপনার কাছে?এগুলো চাইছেন।
ওহ আচ্ছা!!ওকে চলুন।
আমার কাছে কোনো রিং কোনো কালেই ছিলো না।রাতুল ভাইয়া যে ডাহা মিথ্যা কথা বলছেন তা বেশ বুঝতে পারছি।।কিন্তু কেনো??এই ভাবি রহস্য তো দূর করতেই হবে।।আমাকে কোন আহাম্মকের বউ বানিয়ে চলেছে ক্রমাগত কে জানে??ওরা আমায় ভাবি ডাকে…তাহলে ওদের ভাই কে? শুভ্র ভাইয়া?ইয়েস…কারন একমাত্র শুভ্র ভাইকেই ওরা ভাই ভাই বলে ডাকে।। আমি এতোটা ডাফার কি করে হলাম??ওরা আমাকেও অনেকবার বলেছে…ভাই এটা,,ভাই ওটা..আর আমি বুঝতেই পারলাম না?সিউর তো হতেই হবে।।যেই কথা সেই কাজ…একটু দূরেই কোলড্রিংকস হাতে নিয়ে রাতুল ভাইয়া দ্রুত পায়ে হেঁটে চলেছেন।।আমি সোজা উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।। ব্যাপারটায় উনি অবাক।।আমি উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলাম-

কেমন আছেন রাতুল ভাইয়া??
আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবি।আপনি কেমন আছেন ভাবি?
ভালো..খুব ভালো।(দাঁত কেলিয়ে) তোহ্…. এত্তোগুলো কোল্ডড্রিংক্স নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন ভাইয়া??
ছাদে যাচ্ছি ভাবি।ভাই নিয়ে যেতে বলছে।সাহেল ভাইয়ারা সবাই মিলে ওখানে আড্ডা দিবে তো তাই।
ওহহহহ..আচ্ছা আচ্ছা।।খুব ভালো হেহেহে…ভাই আড্ডা দিবে?ভালো,,খুব ভালো,,মহা ভালো!!
আমি এখন যাই ভাবি?দেরী হলে ভাই রাগ করবে।
নাহ্ না আপনি যাবেন না।
মানে?(অবাক হয়ে)

মানে সিম্পল আপনি এখন ছাদে যাবেন না।।এখানে আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবেন।
আমি এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করবো?(অবাক হয়ে)
আমার সাথে গল্প করবেন।আমার না খুব গল্প করতে ইচ্ছে করছে বুঝলেন??সো আপনি এখন আমার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করবেন।
কিন্তু ভাই রাগ করবে তো ভাবি।।আর আমি আপনার সাথে কি নিয়ে গল্প করবো?(অসহায় দৃষ্টিতে)
অনেক টপিকস আছে গল্প করার মতো।।আর ভাইয়ের টেনশন করবেন না…ভাই কিচ্ছু বলবে না…ভাইদের উপর হলো ভাবি।।একটা সিক্রেট বলি??
জি??
আপনার ভাই কিন্তু আমায় দেখে ভয় পায়।। ভালোবাসে তো বুঝেন না??আচ্ছা আপনার কি মনে হয়,,আপনার ভাই আমাকে সত্যিই ভালোবাসে??নাকি সব নাটক??হুম?(ভ্রু নাঁচিয়ে)

জি জি অনেক ভালোবাসে।নাটক কেনো হবে?আস্তাগফিরুল্লাহ্
আপনি কিভাবে বুঝলেন,,অনেক ভালোবাসে?(ভ্রু কুচঁকে)
বুঝবো না কেন?আপনি কোথায় যাচ্ছেন,, কি করছেন সব কিছুই তো ভাইয়ের জানা।।অলওয়েজ আপনাকে কেউ না কেউ ফলো করে,,যদিও ডিস্টেন্স রেখে তাই আপনি বুঝেন না।।আর সেই দিন তো স্বপনদের হেব্বি কেলিয়েছে….হাত ভেঙে দিছে একদম।।
কেনো??কেলিয়েছে সরি মেরেছে কেনো??
আপনার দিকে তাকিয়ে সিটি বাজিয়েছিলো বলে….(মাথা নিচু করে)
ওহহ…এটুকুর জন্যই হাত ভেঙে দিলো??(অবাক হয়ে)
জি ভেঙে দিলো।
আচ্ছা আমি সম্পর্কে আপনার কি হই??

ভাবি….
আপনি আমার কি হোন??
জি মানে…(কনফিউজড হয়ে)দেবর হই ।
আপনার সাহেল ভাইয়ার কি হই আমি??
উনি তো সানশাইন বলেন।।(বোকা বোকা গলায়)
ওহ হ্যা তাই তো।।তাহলে আপনার শুভ্র ভাইয়ের কি লাগি?
বউ…
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।।সন্দেহী দৃস্টিতে বলে উঠলাম-
বউ? এটা শুভ্র ভাইয়া বলেছে আপনাকে??
হুম।ভাই তো সবাইকে বলে দিয়েছেন,,,”রোদ হলো আমার বউ।।সো তোদের মধ্যে একজনও যদি ওর দিকে চোখ তুলে তাকাস….জাস্ট খুন করে ফেলবো।।ভুল করেও যেনো ওর দিকে চোখ না যায়,,নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।।আমার জিনিসে কেউ নজর দিবে তা আমি কিছুতেই সহ্য করবো না।মনে থাকে যেনো।”

আমি জিনিস হয়ে গেলাম??
জি হয়ে গেলেন।ভাইয়ের জিনিস।ভাবি?এখন যাই?হাত ব্যাথা করছে,,, অনেকগুলো কোল্ডড্রিংস তো…
হুমম যান বাট একটা কথা…
কি কথা??
এখন ছাদে গিয়েই আপনার ভাইকে স্ট্রেইট দুলাভাই ডেকে দিবেন,,, শুধু একবার নয় প্রতি লাইনে লাইনে দুলাভাই ডাকবেন…বুঝলেন??

দুলাভাই কেনো ডাকবো?(অবাক হয়ে)
আমি বলছি তাই।
না ভাই চড় মারবে।
আর না ডাকলে আমি কান্না করে দিবো।।তখন আপনার ভাই আপনাকে আরো বেশি মারবে।।বুঝেন না?ভালোবাসা!!!(চোখ টিপে)
রাতুল ভাইয়ার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ব্যাপক ফ্যাসাদে পড়েছেন।।উত্তর দক্ষিণ যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই প্রবলেম।বেচারা!!!

দু..দুলাভাই?কোলড্রিংক্স এনেছি।
রাতুল ভাইয়ার কথায় উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েই বলে উঠলেন-
তুই কি আমাকে বলছিস??
জি দুলাভাই আপনাকেই বলছি।
এই তুই আমাকে দুলাভাই ডাকছিস কেন??মাথা ঠিক আছে তোর??(অবাক হয়ে)
জি দুলাভাই… মাথা ঠিক আছে।
একটা চড় বসাবো।।ফাজলামো করিস আমার সাথে?(রাগী গলায়)
ফাজলামো করছি না দুলাভাই… ভাবি বললো ডাকতে তাই ডাকছি।নয়তো উনি কাঁদবেন।(মিনমিন করে)
ভাবি বললো মানে??কোন ভাবি??(ভ্রু কুঁচকে)

আমাদের ভাবি!!
রোদ??(বিস্ময় নিয়ে)
উনি তুমুল গতিতে মাথা ঝাঁকিয়ে জানান দিলো “হ্যা রোদ” শুভ্র ভাইয়া অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই হুহা করে হাসতে লেগে গেলেন।।যেনো ভীষন মজা পেয়েছেন ব্যাপারটায়।।আমিও মুচকি হেসে দরজার আড়াল থেকে সরে এলাম।।শুভ্র ভাইয়া লাভস্ মি??ভাবতেই অবাক লাগছে..কিভাবে সম্ভব??হাও হাও??

এনগেজমেন্ট শেষের দিকে।রিং পড়ানো শেষ।এবার কাজিন,,ফ্রেন্ডস সবাই মিলে গেইম খেলবে।গেইমটা সিম্পল।একটা বাক্সে সবার জন্য একটি চিরকুট রাখা হয়েছে।।তারমধ্যে থেকে একটা চিরকুট তুলতে হবে এবং যা লেখা আছে তাই পার্ফোম করতে হবে।।গান থাকলে গান,,নাচ থাকলে নাচ।।আমার কপালে এসে পড়লো গান।।কি দুর্ভাগা কপাল আমার….গানটাও সিলেক্ট করা…এটাই গাইতে হবে।।কি মুশকিল।।আমি আপুর পেছনে দাঁড়িয়ে আপুর শাড়ির আঁচল খামচে ধরে আড়চোখে শুভ্র ভাইয়াকে দেখে নিয়েই গাইতে শুরু করলাম…
লাললালা লা লাই লাই লাই লালা…..

লাললালা লা লাই লাই লাই লালা…..
দিদি তেরা দেবার দিওয়ানা
ও দিদি তেরা দেবার দিওয়ানা.
হায় রাম!!গোরিও কো ঢালে দানা..
ধান্ধা হে এ উজকা পুরানা
ও ধান্ধা হে এ উজকা পুরানা
হায় রাম!!গোরিও কো ঢালে দানা…
লাললালা লা লাই লাই লাই লালা…..
মে বলি কি লানা দু ইমলি কি দানা, মাগার ও ছোয়ারে লে আয়া দিওয়ানা…

গান গাইতে গিয়ে লজ্জায় আমি লাল।।সবাই চারপাশ থেকে শুভ্র শুভ্র বলে চেঁচাচ্ছে… ইশশ কি লজ্জা।।আমি আড়চোখে উনার দিকে তাকালাম…উনি মুচকি হাসছেন।।চোখাচোখি হতেই সামনের চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে… শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে এগিয়ে এলেন আমার দিকে।।আমি ভয়ে আর লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম মুহূর্তেই।।আপুর আড়ালে নিজেকে পুরোপুরি ঢেকে নিলাম।।উনি পাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানী হাসি দিয়েই আপুকে টেনে নিলেন নিজের কাছে।।আমার হাত থেকে মাইক্রোফোনটা নিয়ে গানের সাথে তাল মেলালেন।।আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।। কি সুন্দর গাইতে পারেন উনি!!!আপুর কাঁধে হালকা কাঁধ ঝাকিয়ে গেয়ে উঠলেন উনি-

ভাবি তেরি বেহেনা কুমারা
ও ভাবি তেরি বেহানা কুমারা…
হায় রাম!!গোরিও কা হে যাময়ানা..
রাব্বা মেরে মুজকো বাঁচানা,,ও রাব্বা মেরে মুজকো বাঁচানা..
হায় রাম!!!গোরিও কা হে যাময়ানা…।।
রাপপাপাপা রুরুরুরু রুওরুরু…।।(আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে)
হুকুম আপকা থা যো মেনে না মানা,,খাতাবার হু মে না আয়া নিবানা।
সাজা যো বিহ দুগে ও মঞ্জুর হোগী…

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ১৯+২০

গান শেষে আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানী হাসি দিয়ে সবার সামনেই বা চোখ টিপে দিলেন।। আমি ঢোক গিলছি বারবার…কি শয়তান ছেলে।।সবাই কি ভাবছে.. কে জানে??

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ২৩+২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here