তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ২৭+২৮
নৌশিন আহমেদ রোদেলা
আপুর বিয়ের ডেইট ফিক্সড করা হয়েছে আজ থেকে ১৫ দিন পর।মামু ঘরের লক্ষী ঘরে আনতে দেরী করতে চান না একদম।।মামানিও তাই। তাই আর দেরী না করে ১৫ দিনের মাথায় বিয়ে।গার্ডেন সাইডে দাঁড়িয়ে আছি.. মালিচাচা ফুল চেনাচ্ছেন আমায়।। কতো অদ্ভুত ধরনের ফুল চারপাশে।।অদ্ভুত হলেও সব কটায় অসম্ভব সুন্দর।মালিচাচা বেশ মিশুক টাইপের লোক।।কয়েক দিনেই আমায় বেশ আপন করে নিয়েছেন উনি।গ্রামে নাকি আমার বয়সী একটা মেয়ে আছে উনার… মেয়েটার নাম সিতারা।তার স্ত্রী নাকি সংগীত প্রেমী..বেশ ভালো গান করে তাই মেয়ের নাম রেখেছে সীতারা।মালি চাচার সাথে ঝুঁকে ঝুঁকে গাছ দেখছিলাম হঠাৎ কেউ একজন পেছন থেকে চুল টেনে ধরলো।।পেছন দিকে তাকিয়েই অবাক হলাম… শুভ্র ভাইয়া!!এটা কোন ধরনের অসভ্যতা শুনি??আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকালাম…কিন্তু সেদিকে মহাশয়ের খেয়াল থাকলে তো?তিনি অমায়িক হেসে চাচাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন-
হ্যালো ওল্ড ম্যান!!কেমন আছেন?
জি ভালো ছোট বাবা।(মুচকি হেসে)
আচ্ছা চাচা?বাগানে কি এখন বকুল ফুল পাওয়া যাবে??
না ছোট বাবা এখন তো বকুল ফুল হবে না।
তাহলে লাল গোলাপ?একদম টকটকে লাল গোলাপ হবে চাচা?
হ্যা তা হবে…
তাহলে ১৯ টা লাল গোলাপ এনে দেন না চাচা প্লিজ।
আইচ্ছা বাজান আপনি দাঁড়ান আমি এখনই আনছি।।
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।। সব রেখে ১৯ টা ফুল দিয়ে উনি কি করবেন কে জানে?অদ্ভুত তো…উনি তো ২০ টা ফুলও চাইতে পারতেন ১৯ টায় কেনো চাইলেন??আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে আবারও চুল ধরে টেনে দিলেন।আমি ঠোঁট উল্টে মুখ কালো করে তাকাতেই বলে উঠলেন উনি-
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এই মেয়ে?খেয়েছো তুমি?খাওয়া-দাওয়া না করে এতো ঘুরাঘুরি কিসের শুনি?
খাবো না আমি।তাতে আপনার কি??ডু ইউর ওউন বিজনেস।(মুখ ভেঙিয়ে)
তাই বুঝি?
কথাটা বলেই আমার চুলের গোছা ধরে নিজের কাছে টেনে আনলেন উনি।।ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা….তার সাথে ব্যাথাও লাগছে খুব।।অবাকের চরম সীমা অতিক্রম করে ভয় ভয় গলায় বলে উঠলাম-
কি করছেন??
উনি হালকা হেসে বা চোখটা টিপে দিয়ে বলে উঠলেন,, “ইটস নট ইওর বিজনেস” আমি বুঝতে পারছিলাম উনি ভয়ংকর কিছু করতে চলেছেন।ঠিক তখনই গেইটের কাছে সাহেল ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।উনার পায়ে জোড়ে একটা পাড়া দিয়ে বলে উঠলাম-“হি ইজ সো কিউট ইয়ার…আই এম ক্রাশড অন হিম।।উফফ লাল পাঞ্জাবীতে মারাত্মক লাগছে…” আমার কথায় উনি ভ্রু কুঁচকে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে পেছন ফিরে তাকালেন।।সাহেল ভাইয়া আমাদের দিকেই এগিয়ে এলেন।।ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলেন-
কেমন আছো সানশাইন?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো… আপনি?
বেশ ভালো।তবে তোমার থেকে একটা হেল্প পেলে আরও ভালো হয়ে যেতাম।
হেল্প?কেমন হেল্প।
হেল্পটা খুবই কঠিন।।বাট তোমার জন্য ইজি হবে বলেই আমার ধারনা।(মুচকি হেসে)
তো আপনার সেই সহজ কঠিন হেল্প টা কি জানতে পারি?
মার জন্য একটা শাড়ি কিনবো।এর আগে কখনো কিনি নি।।খুবই কনফিউজড আমি।তোমার শাড়ির কালেকশন ভালো।মাঝে মাঝেই শাড়ি পড়ো।।আর শাড়িগুলোতে তোমায় মানায়ও বেশ।।সো…আই থিংক তুমি শাড়িটা ভালল পছন্দ করতে পারবে।।একদম চমকে দেওয়া সুন্দর কোনো শাড়ি কি আমায় পছন্দ করে দেবে তুমি?
অবশ্যই।।এই কথাটার জন্য এতোকিছু?তবে আমার একটা শর্ত আছে।(ভাব নিয়ে)
শর্ত?কেমন শর্ত?(ভ্রু কুচঁকে)
আমাকে আইসক্রিম খাওয়াতে হবে।।ইটস মাই ফি…
আমার কথায় হাসলেন উনি।।পকেটে হাত ডুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েই বলে উঠলেন…
যতো চাও ততো দিবো।।এবার হ্যাপি??
একদম..(এক্সাইটেড হয়ে)
উনি আবারও হালকা হেসে মামানির সাথে দেখা করে আমায় নিয়ে বের হবেন বলে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলেন।সাথে সাথেই আমার হাতটা চেপে ধরলেন শুভ্র ভাইয়া।।এতো জোড়ে যেনো এখনি গুঁড়ো হয়ে যাবে হাত।আমি উনার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম।উনি রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন।আমি কিছু বলার আগেই বলে উঠলেন উনি-
যাবে না তুমি।
কেনো যাবো না?অবশ্যই যাবো।সাহেল ভাইয়া বলেছে আর আমি যাবো না হতেই পারে না।।
কেন কি আছে ওর মধ্যে?? (দাঁতে দাঁত চেপে)
অনননননেক কিছু।।কত্তো কিউট উনি,,কত্তো কিয়ারিং… এটলিস্ট আপনার মতো এগ্রেসিভ তো নয়।।
কথাটা বলার সাথে সাথে আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরলেন উনি।।চোখে রাগের আগুন জ্বেলে বলে উঠলেন…
আমি এগ্রেসিব না??হলে হলাম এগ্রেসিব… আই ডোন্ট কেয়ার বাট নেক্সট টাইম সাহেলকে নিয়ে এতো মাতামাতি করলে খুন করে ফেলবো।।ওহ গড…তোমার জন্য..জাস্ট তোমার জন্য আমায় সাহেলের উপরও জেলাসি হচ্ছে ।।
আপনাকে আমি জেলাস হতে বলেছি?আমি তো আপনার বউ না তো জেলাস হতে যান কেন শুনি…??আই এম লাইক ইউর সিস্টার…বোনের জন্য এতো জেলাসি হতে হয় নাকি??আমি তো সাহেল ভাইয়াকে আপনার মতো ভাইয়ের নজরে দেখি না।। আমি তো….
শাট আপ!!কিসের ভাইয়া হ্যা?? কিসের ভাইয়া?আবার ভাইয়া ডাকলে খবর আছে।আর সাহেলকে ভাইয়ের নজরে কেন?চাচার নজরেও দেখা,যাবে না।।ওকে কোনো নজরেই দেখবা না তুমি।।(আমার মুখ ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে) তোমার নজর শুধু এইদিকেই থাকা চায়..শুধু এবং শুধুই এইদিকে।।
আমি বোকা বোকা ফেস নিয়ে বলে উঠলাম-“কেনো ভাইয়া?” উনি তো রেগে আগুন।উনার চোখ দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো টাইম গিলে খাবেন আমায়….কিন্তু রিস্কটা নেবে কে শুনি?তার আগেই তো আমি হাওয়া!!!
বিছানায় বসে পা নাচাচ্ছি আর ফোন ঘাটছি।হঠাৎ মা এসে বসলেন আমার পাশে।।বেশ কিছুক্ষণ পরও উনার যাওয়ার কোনো লক্ষ্মণ না দেখে ফোনটা পাশে রেখে তার দিকে তাকালাম।।মার সামনে বসে ফোন ঘাঁটা খুবই অস্বস্তির বিষয়।।আমাদের জেনারেশনে মা-বাবার সামনে ফোন চাপা মানে মহাপাপ।।টিভি দেখতে দেখতে টিভির মধ্যে ঢুকে যাও তবু মেনে নিবে তারা… কিন্তু ফোন হাতে??নো ইম্পসিবল!! হাতে ফোন মানেই বাবা-মার মাথা নষ্ট…মেয়ে তার মহাপাপ করছে… এটা তিনি নিজ চোখে দেখছেন তা তো হতে পারে না।।এই পাপ.. এই মহাপাপ তাদের রোধ করতেই হবে…এমনই মনোভাব থাকে তাদের।।আমি আপাতত এই মহাপাপে পাপী হতে চাচ্ছি না।।তাই ফোনটা পাশে রেখে মার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালাম। মা মুখ কাঁচুমাচু করে বলে উঠলেন-
বিয়ে করবি রোদ?
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।।মার মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে আমি স্তব্ধ।।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একটু নড়চড়ে বলে উঠলাম-
মানে?
মানেটা খুব সিম্পল। বিয়ে করবি কি না জিগ্যেস করছি।।করবি??
হুম অবশ্যই করবো।।বিয়ের বয়স হলে অবশ্যই করবো।।বাট এই সময়ে এই কথা কেনো বলছো মা?(ভ্রু নাঁচিয়ে)
না মানে…আহান কে চিনিস না?ওইযে ফর্সা করে ছেলেটা…
মা দুনিয়াতে বহুত ফর্সা করে ছেলে আছে আমার নিজের ভাইও তো ফর্সা মা।।তুমি কার কথা বলছো বলো তো?
ওই যে মহিলাটা… আমাদের সাথে যে গল্প করছিলো।।ছেলে ডাক্তার।।
ওহ..ওই মহিলা??তো সেই মহিলার ছেলে ডাক্তার তার সাথে আহান নামের ছেলের কি সম্পর্ক?? আর সে কথা তুমি আমাকেই বা কেনো শুনাচ্ছো??
ওই মহিলার ছেলের নামই আহান।ছেলেটা খুব সুন্দর বুঝলি।।তোকে খুব পছন্দ করেছে।।দিনে তিনবার ফোন করছে বিয়ে করবে বলে।।বুঝতে পারছি না কি বলবো।এতো ভালো ছেলে হাতছাড়াও তো করা যায় না।।দেখ,বিয়ে তো একদিন করতেই হবে।তাই বলছিলাম কি তুই রাজি হয়ে যা মা।
আশ্চর্য!! একদিন বিয়ে করতে হবে বলে আমি ওই ডাক্তার বা ফাক্টারকে বিয়ে করে ফেলবো??মা?তুমি এমন টিপিক্যাল বাঙালী মায়ের মতো বিহেভ কেনো করছো ?তোমার ভাব দেখে মনে হচ্ছে এই ব্যাটাকে বিয়ে না করলে বাংলাদেশে আমার জন্য আর কোনো ছেলে খুঁজে পাওয়া যাবে না।।আমায় চিরকুমারী থাকতে হবে।।
এভাবে বলছিস কেন?আমি যা বলছি তোর ভালোর জন্যই বলছি।।আমি তোর বাবাকে ঠিক রাজি করিয়ে নিবো দেখিস।।ছেলেটা কি ভদ্র!! এমন ছেলে সহজে পাওয়া যায় বুঝলি??শোন…আমি উনাদের “হ্যা” বলে দিচ্ছি।।আমার কথায় শেষ কথা।।তুই তো আমায় আগেই বলে রেখেছিলি যেখানে আমি বলবো সেখানেই বিয়ে করবি… তাহলে এখন এমন করছিস কেন?
মা!! তাই বলে এখন?ইম্পোসিবল…. কিছুতেই না।
আচ্ছা রুহির বিয়েতে ছেলেটা আসছে।।তখন না হয় তার সাথে পরিচিত হয়ে নিবি।।অনেক লক্ষ্মী একটা ছেলে।।তোর পছন্দ হবেই হবে।
হুম..আমার পছন্দ হলেও তোমার ভাতিজার পছন্দ হবে না মা।এ কথা শোনার পর উনি এই ডাক্তারের যে হাল করবে তা তোমারও মোটেও পছন্দ হবে না।।(বিরবির করে)
বিয়ের শপিং-এ যাবো আজ।চিত্রাকে ফোন দিয়ে আসতে বলেছি….দুজন একরঙা শাড়ি পড়বো আজ।শাড়িটা হাতে নিতেই আম্মু খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠলেন-
বাহ্ শাড়ি পড়বি?আমিও তাই বলছিলাম.. শাড়িই পড়।আজ আহান আমাদের সাথে জয়েন করবে।বেচারা তোকে আগে দেখে নি তো মায়ের কথাতেই বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে। কি লক্ষ্মী ছেলে ভাবা যায়? আচ্ছা…এই শাড়িটা না পড়ে লাল শাড়িটা পড় না…খুব মিষ্টি লাগে তোকে লাল রঙটাতে…
মার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। ফ্যামিলি মিলে শপিংয়ে যাবে সেখানে বাইরের মানুষ কেনো?বিরক্তিকর ব্যাপার!!মাকে কোনোরকম রুম থেকে বের করে শাড়িটা ছুঁড়ে মারলাম বিছানায়।আলমারি থেকে টপস আর জিন্স বের করে পড়ে নিলাম।টপসের উপর কুটি চাপিয়ে চুলগুলো ছেড়ে কাঁধের দু’পাশে ছড়িয়ে দিলাম।।মুখটা ভালো করে ধুয়ে তাতে বেশ খানিকটা মেরিল লাগিয়ে দিলাম….এতে করে কালো কালো লাগবে নির্ঘাত।।রেডি হয়ে বের হতেই দেখি মামু,মামানি,অভ্র ভাইয়া,সাহেল ভাইয়া,শুভ্র সবাই বসে আছে সোফায়।।বিনা সংকোচে ওদের পাশে বসতেই চেঁচিয়ে উঠলো মা-
এসব কি রোদ?তোকে না বললাম শাড়ি পড়তে!!এসব কি পড়েছিস?একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।আহান তো তোকে দেখে পিচ্চি বাবু মনে করে ললিপপ অফার করবে।যা এক্ষুনি চেঞ্জ করে আয়…আর আহানও তোকে শাড়িতেই দেখতে চায় সো গো এন্ড চেঞ্জ!!
মা?একজন আমাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখতে চাইবে আর আমি নাঁচতে নাঁচতে শাড়ি পড়ে নিবো তা তো হতে পারে না।।তাছাড়া আমার ভীষন গরম লাগছে… আমি শাড়ি পড়তে পারবো না।
শুভ্র ভাইয়া সহ সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।বিষয়টা ঠিক কি,তা বুঝতে পারছে না কেউই।আম্মু হাল ছাড়ার পাত্র নয়….বিয়ে সে ডাক্তারের সাথে দিবেই দিবে।।এবার উনি শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে বলে উঠলেন-
দেখেছিস শুভ্র?এই বাড়িতে আমার কোনো ভ্যালু আছে?নেই!!কেউ আমার কথায় শুনে না।এই যে আমি বলছি শাড়ি পড়ে যেতে শুনছে?শুনছে না।।বরং এমন ভাব করছে যেনো ওকে আমি কুরবানির ছাগলের মতো জবাই করে দিচ্ছি,,এসব কি বল তো?ছেলেটা কি ওকে খেয়ে ফেলবে?আরে বিয়েই তো করতে চাইছে….দুদিন পর যার বউ হবি তার সামনে শাড়ি পড়ে যেতে কি সমস্যা…তুইই বল??
বাহ অসাধারণ…. মা বাঘকেই জিগ্যেস করছে বাঘ মামা এতো হিংস্র কেন??আমি আড়চোখে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম।উনাকে দেখেই বুঝতে পারছি রাগে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে তবু নিজেকে শান্ত রেখে হাসিমুখে বলে উঠলেন-
বউ?কার বউ হওয়ার কথা বলছো ফুপি?
কার আবার রোদের!!জানিস….(এক্সাইটেড হয়ে) ছেলেটা ডাক্তার…. কি সুন্দর চেহারা। একদম হুমায়ুন আহমেদের শুভ্রর মতো।পৃথিবীর শুদ্ধতম পুরুষ!! তারসাথে বিয়ে হয়ে আমার মেয়ে হবে পৃথিবীর শুদ্ধতম মহিলা।দারুন না??
শুভ্র ভাইয়া কিছু বললেন না চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলেন।।হয়তো রাগ কন্ট্রোল করছেন।।কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে কিছু একটা বলতে যাবেন ঠিক তখনই পাশ থেকে সাহেল ভাইয়া বলে উঠলেন-
আন্টি আপনার কথায় কিন্তু লজিক আছে।আই এগ্রি উইথ ইউ বাট নামটাই একটু ঝামেলা হয়ে গেলো না?আহান!! শুদ্ধ পুরুষ হিসেবে আহান নামটা কি মানায়?এখানে আহানের চেয়ে শুভ্র নামটাই বেশি গ্রহণযোগ্য…(শুভ্র ভাইয়াকে কনুইয়ের গুতো দিয়ে)তাই না শুভ্র?(চোখ টিপে) আসলে কি আন্টি?শুভ্র নামটার মধ্যেই শুভ্রতা টাইপ ব্যাপার আছে…সেটা কি অন্য কোনো নামে পাওয়া যাবে?যাবে না.. কক্ষনো না!!এই যে আমাদের শুভ্রকেই দেখুন না….একদম দুধের মতো সাদা…ভার্সিটির স্যারদের প্রিয়মুখ…জুনিয়রদের প্রাণের ভাই…ব্রাইট স্টুডেন্ট…আঙ্কেলের প্রিয় পুত্র…কতো গুণ হে হে হে গুণের ছড়াছড়ি…তাই না সানশাইন??(দাঁত কেলিয়ে)
উনার কথায় আমি দ্রুত মাথা নেড়ে সায় জানালাম,,,যার অর্থ “হ্যা,গুণের ছড়াছড়ি” মা বিমল হাসি দিয়ে বললেন-
হ্যা তা ঠিক!শুভ্রও খুব লক্ষ্মী একটা ছেলে।লাখে এক!!
সেটাই তো…লক্ষে একটা রেখে হাজারে কেন খুঁজাখুঁজি করেন বুঝি না(বিরবির করে)
কি বললে??(ভ্রু কুঁচকে)
হে হে..বললাম!! বললাম যে… আমার আর শুভ্রর বউ অনেক লাকি হবে তাই না আন্টি??এতো ভালো ছেলে আমরা।।(দাঁত কেলিয়ে)
হ্যা তা তো হবেই।তোমাদের কাছে যে মেয়ে আসবে তার বাবা-মা তো ধন্য।।
সেই ধন্য ব্যক্তিটা আপনি হয়ে গেলেই তো হয়…(বিরবির করে)
কিছু বললে সাহেল?
নাহ..বলছিলাম কি..চলুন আন্টি যাওয়া যাক।শুভ্র হাই টেম্পার হয়ে যাচ্ছে…আই মিন ওর ভীষণ গরম লাগছে…ভীষণ!!আর পাত্রর চিন্তা করবেন না সে সানশাইনকে ফকিন্নির বেশে দেখলেও পছন্দ করবে।।মেয়ে তো আমাদের এক নম্বর তাই না??
মাকে কনফিউজড করে দিয়ে আমাদের সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে এলেন সাহেল ভাইয়া।গাড়ি চলছে…আমি জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি আর মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ছি।সামনের গাড়িটা সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আই মিন ওটাতে বাবা-মা,মামু-মামানি উঠেছে।পরেরটাতে সাহেল ভাইয়া,রাহাত ভাইয়া, অভ্র ভাইয়া আর আপু।সবার শেষের গাড়িতে আমি আর শুভ্র ভাই!! আমি কতো করে মিনতি করলাম আমায় সাহেল ভাইয়ার গাড়িতে একটু জায়গা দিতে….কিন্তু কেউ ফিরেও তাকালো না….সব কটা পাষান আমাকে কি সুন্দর বাঘের খাঁচায় ফেলে কেঁটে পড়লো…আমি বারবারই আড়চোখে তাকাচ্ছি কিন্তু শুভ্র ভাইয়ের সেদিকে কোনো হেলদুল নেই বললেই চলে। উনি স্ট্রেট বসে ড্রাইভ করে চলেছেন,,,একবারও আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না।।গায়ে সাদা শার্ট হাতাটা কনুই পর্যন্ত ভাজ করা…চোখে সানগ্লাস…সামনের চুলগুলো বাতাসের তালে তালে অল্পবিস্তর উড়াউড়ি করছে।।গাড়ির ভেতর সানগ্লাস পড়ে থাকার মানে কি বুঝলাম না।ভয়ে ভয়ে কাঁপা গলায় বলে উঠলাম-
আপনি কি রেগে আছেন?
কিন্তু ব্যাটা খাটাস বলে কথা,, আমার কথার উত্তরই দিলো না।এতো ভাব কিসের হ্যা?বেশ কয়েকবার এটা ওটা জিগ্যেস করার পরও কোনো উত্তর না পাওয়ায় চুপচাপ বসে রইলাম।।মাঝ রাস্তা থেকে চিত্রাকে পিক করে নিয়ে আবারও চলতে লাগলো গাড়ি।।চিত্রার সাথে ঠিকই হাসি বিনিময় করে কথা বলে চলেছেন উনি।বিষয়টা বড্ড লাগলো আমার।আমি কি নদীতে ভেসে এসেছি নাকি?আমার কোনো গুরুত্বই নেই?বেশ তো না থাকুক গুরুত্ব বলবো না কথা।। শপিং মলে গিয়ে নামতেই মা আমাকে চুপিচুপি ডেকে বললেন আমি যেনো পার্কিং এ দাঁড়ায় আহান আসবে!!এমনি মেজাজটা ফোরটি নাইন হয়ে আছে তার ওপর মার এমন কথা শুনে মেজাজটা চটে গেলো মুহূর্তেই।
রাগে গজগজ করতে করতে চিত্রাকে নিয়ে দাঁড়ালাম পার্কিং -এর এক কোণায় ।চিত্রা কারণ জিগ্যেস করতেই দিলাম এক ধমক।।প্রায় ১০ মিনিট পর পার্কিং এর অন্যপাশে শুভ্র ভাইয়াকে চোখে পড়লো।।প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হিরো হিরো লুক নিয়ে অমায়িক হাসি দিয়ে একটা মেয়ের সাথে কথা বলে চলেছেন।।মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে… পারলে হাসতে হাসতে শুভ্র ভাইয়ার কোলে উঠে পড়ে সে।।কি বিশ্রী অবস্থা!! কি এতো কথা বলে শুভ্র ভাই? চিত্রাকে দাঁড়া করিয়ে ওদিকে এগিয়ে যেতেই চোখাচোখি হলো দুজনের শুভ্র ভাই স্বাভাবিক ভাবেই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবারও গল্পে মেতে উঠলেন নতুন উৎসাহে।।ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছিলো যেনো উনাদের একদম সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলাম-
উনি কে শুভ্র ভাইয়া?
“ফ্রেন্ড” কথাটা বলেই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন-
এই রূপসা?তুই না আইসক্রিম খেতে চেয়েছিলি?চল খাওয়াবো তোকে।
মেয়েটা এক্সাইটেড হয়ে একরকম জড়িয়েই ধরলো তাকে।শুভ্র ভাইয়া একটু সরে দাঁড়িয়ে আমাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে মেয়েটাকে নিয়ে পাড়ি জমালো মলের ভেতর দিকে।।রাগে গাঁ জ্বলে যাচ্ছিলো আমার…এতো অপমান!!কি এমন করেছি আমি?যার জন্য এমন ব্যবহার করছেন উনি….আমার বিয়ের কথা শুনেই মেয়ে নিয়ে মেতে উঠেছেন আর বিয়েটা হয়ে গেলে তো পুরো মেয়েদের গোডাউনে ঢুকে থাকবেন।যত্তোসব!!নিজের মনে বিরবির করতে করতে আগের জায়গায় ফিরে যেতেই চোখ আমার চড়কগাছ।।চিত্রা কারো সাথে কোমর বেঁধে ঝগড়া করছে। কি ভয়ানক ব্যাপার!!দৌড়ে ওদের কাছে যেতেই চিত্রা নাকমুখ ফুলিয়ে বলে উঠলো-
রোদ?দেখ কি অসভ্য ছেলে!!আমাকে মেরে ফেলার পায়তারা করছিলো জানিস?
আমি অবাক হয়ে বলে উঠলাম-” তোকে মেরে উনার কি লাভ?”
আমার কথায় সুর মিলিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছিপছিপে ছেলেটি বলে উঠলো- “এক্জেক্টলি!!আমি আপনাকে মারতে চাইবো কেন?আমি ব্যাক মিরোরে দেখছিলাম হঠাৎ আপনি সামনে এসে পড়ায় খেয়াল করি নি। তাই একটু লেগে গেছে।আই এম সরি ফর দেট ইয়াং লেডি….
কিসের সরি?হোয়াট সরি?আপনার সরি আপনার কাছে রাখেন।রোদ?তোর কোনো ধারনা নেই এই ছেলেটা কতোটা ফাজিল…আমাকে ধাক্কা দিয়ে এসে সরি না বলে কি বলছে জানিস??”আপনিই কি মেয়ে?” আরে ..তুই বল আমার মধ্যে কি ছেলে টাইপ কিছু দেখতে পাচ্ছিস??বাঙালী রমনীর মতো শাড়ি পড়ে এসেছি আর এই ব্যাটাই আমায় বলে কি না… আমি কি মেয়ে??হোয়াট রাবিশ!!(চোখ মুখ কুঁচকে)
ওহহো..আপনি ভুল বুঝছেন মিস. আমি সেটা বুঝায় নি।আমি এখানে একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে এসেছি।আপনিই সে কি না তাই জিগ্যেস করছিলাম…নাথিং ইল্স”!
এবার আমার টনক নড়লো।এটাই তাহলে মার তথাকথিত অতি শুদ্ধতম পুরুষ!!আমি মুখ কাঁচুমাচু করে নরম স্বরে বলে উঠলাম-
ডক্টর আহান??
উনি আমার দিকে তাকিয়ে সানগ্লাসটা খুলে হাতে নিতে নিতে বলে উঠলেন-
ইয়েস…ডু ইউ নো মি?
ইয়াহ…আই এম নৌশিন আহমেদ রোদেলা।আই থিংক আপনি আমার সাথেই মিট করতে এসেছেন।
ও মাই গড!!ইউ আর দ্যা গার্ল??ইউ আর লাইক আ কিউট লিটল বেবি!!এনিওয়ে আপনার তো শাড়ি পড়ে আসার কথা ছিলো।তাই আমিও এই শাড়ি পরিহিতা মেয়েকেই আপনি ভেবেছিলাম।সরি!
সরি বলার কি আছে?ওর নাম চিত্রা…মাই বেস্ট ফ্রেন্ড।আর চিত্রা?(চিত্রার দিকে তাকিয়ে) উনি ডক্টর আয়ান.. তোকে…
এটুকু বলার সাথে সাথেই চিত্রা মুখ ভেঙিয়ে চলে গেলো।চিত্রার মুখ ভেঙানিতে হেসে উঠলো আহান…আমিও অপরাধী হাসি দিয়ে বলে উঠলাম-” প্লিজ কাম!”
সারাটা দিন আহানের সাথেই কেটে গেলো আমার।মার জোড়াজুড়ি… শুভ্রর প্রতি রাগ…সব মিলিয়ে আমার আর ছাড়া পাওয়া হলো না।।সারাদিনে চিত্রা আহানেরও ঝগড়া লেগেছে বেশ কয়েকবার।।আহানের কোনো কথায় ভালো লাগে না চিত্রার।চিত্রার মুখ চোখ দেখে মনে হচ্ছিলো রাস্তায় গণদোলাই নামক জিনিসটা যেনো এই আহান নামের ব্যক্তিটার জন্যই কোনো এক কালে তৈরি করে রাখা হয়েছিলো।।যা এখন প্রয়োগ করার মক্ষোম সময়।।ওদের দুজনের ঝগড়া,,আহানের শপিং এর ব্যাপারে মূর্খতা সব মিলিয়ে বেশ ভালোই কেটেছে সময়টা।।ফেরার সময় বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে যা যা কিনেছিলো তার অর্ধেকটাই আমার হাতে ধরিয়ে স্ফিত হেসে বলেছিলো আহান- “আপনার জন্য..লিটল বেবি!” আমি পুরো দু’মিনিট “হা” করে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে।শুভ্র ভাইয়ার প্রতি রাগ দেখিয়ে পজিটিভ সাইন দেখিয়ে দিলাম না তো??উফফ…বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম…মাথাটা ঝিমঝিম করছে সারাদিনের ধকলে শরীরটা বড্ড ক্লান্ত।।চোখের পাতা ভারি হয়ে আসতেই ম্যাসেজ টুনে ঘুমটা চটে গেলো একদম।বিরক্ত মুখে ম্যাসেজটা অন করতেই দেখি অভ্র ভাইয়ার ম্যাসেজ।।বেশ অবাকই হলাম আমি।রাত প্রায় বারোটা,, এতো রাতে অভ্র ভাইয়া??ম্যাসেজে লেখা-” ❤শালিকা ঝটপট ছাদে চলে আসো সারপ্রাইজ আছে।।তোমার বোনও ছাদে।তাড়াতাড়ি আসো তো…উই আর ওয়েটিং❤”
তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬
অনিচ্ছা সত্তেও বালিশের পাশ থেকে ওড়নাটা নিয়ে হাঁটা দিলাম ছাঁদের দিকে।।ছাঁদে এসেই শিউরে উঠলো গাঁ।একদম শান্ত পরিবেশ ছাদে।কেউ আছে বলে মনেই হচ্ছে না।কাঁপা কাঁপা গলায় একবার আপু তো আরেকবার অভ্র ভাইয়াকে ডাকলাম কিন্তু কারো সাড়া পাওয়া গেলো না।।আরেকটু এগিয়ে যেতেই ছাদের দরজাটা ভীষন আওয়াজ তুলে বন্ধ হয়ে গেলো।।পেছনের দিকে তাকিয়েই গলা শুকিয়ে এলো আমার….
