তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৫+৬

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৫+৬
নৌশিন আহমেদ রোদেলা

সরি?
মমমাননে… এএএক্চুয়েলি আআমি না সব গুলিয়ে ফেলছি।।যা ববলতে চাচ্ছি না ততাই বলে ফেলছি।।আর যা বলতে চাচ্ছি সেগুলো সেগুলো কি বলবো ভুলে গেছি(অসহায় মুখ করে)
তা তোমার কথা শুনেই বুঝা যাচ্ছে।।নয়তো এমন উদ্ভট সব কথাবার্তা কোনো স্বাভাবিক সেন্সের মানুষের দ্বারা পসিবল না।চুমু?লাইক সিরিয়াসলি?(বিরবির করে)
জি কিছু বললেন?

নাহ.. বলছিলাম এভাবে হাঁপাতে হাঁপাতে এলে কিছু বলবে??(মুচকি হেসে)
জি মানে… থেংকিউ!!
কেনো?(ভ্রু কুঁচকে) চুমু দেওয়ার জন্য?(শয়তানী হাসি দিয়ে)
উনার লাস্ট কথায় আমি একদম থতমত খেয়ে গেলাম।ব্যাটা তো দেখি মিসকা শয়তান ইচ্ছে করে আমায় লজ্জায় ফেলতে চাইছে।।অসভ্য একটা।।আমি কোনোরকম মুখ কাঁচুমাচু করে বলে উঠলাম।।
না না… আপনার জন্য আমার ২৮ বছরের হারিয়ে যাওয়া মামাকে খুঁজে পেয়েছি।।সো থেংক্স।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তোমার মামার বয়স মাত্র ২৮?(অবাক চোখে)
এমা ২৮ হতে যাবে কেন??৫০ /৫৫ বছর হবে।।
তাহলে ২৮ বছরের মামা বলছো কেন??এনিওয়ে আমার জানা মতে আমি কোনো মামা টামাকে চিনি না তাহলে আমার মাধ্যমে পেলে কিভাবে??খুবই অদ্ভুত বিষয়।।নাকি চুমুর জোড়ে পেয়ে গেছো??কোনটা??(ভ্রু নাচিয়ে,,মুখ টিপে হেসে)
উনার কথা শুনে আমি বিষম খেলাম।।ব্যাটা লুইচ্চা লজ্জা শরমের বালাই নেই এরমধ্যে।।কেমন বেশরমের মতো কথা বলছে।।লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে আমার।।কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।।কি বলা যায়,,কি বলা যায়,,এমনটায় ভাবছিলাম ঠিক তখনই উনি বলে উঠলেন….

তো পিচ্চি??পথটা কি ছাড়বে? আমার তো যেতে হবে খুকি নাকি আরেকটা চুমু চায়??চাইলে আসো দিয়ে দিই তবু পথ ছাড়ো।।
কথাটা বলে উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতেই দিলাম এক দৌড়।।আল্লাহ বাঁচিয়েছে।।কি ভয়ঙ্কর ছেলেরে বাবা!!প্রথমে ভেবেছিলাম ব্যাটা একটু লাজুক টাইপ হবে।।কিন্তু এর মধ্যে লাজুকলতার শাখা পর্যন্তও নেই।।বেশরমের কোনো এওয়ার্ড থাকলে এই ব্যাটাই ফার্স্ট প্রাইজ পেতো।।সুন্দর ছেলেদের যে ক্যারেক্টারে সমস্যা থাকে সেটা আজ প্রোভড।।এই চিত্রার বাচ্চাকে দেখানো উচিত ছিলো এর লুইচ্চামো।।শুভ্র ভাইয়া,,শুভ্র ভাইয়া করে তো অঞ্জান।।হুহ বদ মেয়ে।।নিজের মনে বিরবির করে হাটছিলাম তখনই পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো…
কেমন আছো সানশাইন??

বিরক্তি নিয়ে পেছন ফিরে তাকালাম।।এই ব্যাটায় আবার কই থেকে এলো আল্লাহ জানে।।ইচ্ছে করছে ঘুষি দিয়ে উড়িয়ে দিই।ব্যাটা আমি কেমন আছি তোকে কেন বলতে যাবো??তোর বন্ধু তো এখনই আমার আত্মা উড়িয়ে দিয়েছিলো।।এখন আরেকজন আসছে ম্যা ম্যা করতে।।কোনোরকম মনের বিরক্তি দমন করে মুখটা হাসি হাসি করে বলে উঠলাম…
আলহামদুলিল্লাহ সুবহানাল্লাহ ভালো আছি।।আপনি ভালো আছেন তো ভাইয়া??
হ্যা ভালো আছি।।এক্চুয়েলি তোমার সাথে একটু কথা ছিলো।।(সাহেল)
বলে ফেলুন।(বিরক্তি নিয়ে)
এখানে?তারচেয়ে ক্যান্টিনে বসে বলি?(সাহেল)

জি না।।এখন ক্যান্টিনে বসা যাবে না।।আপনি বরং কথাটা কাল বলেন আজ আমি আসি।
কথাটা বলেই কেটে পড়লাম।।কে জানে এই হারামিগুলো মিলে আবার কোন প্ল্যান বানিয়েছে।।করিডোরে পা রাখতেই দেখি ছেলে মেয়েদের ভীর তারমধ্যে থেকে চিত্রা ছুটে এসে বললো।।
দোস্ত?ওরিন্টেশনে ফাস্ট ইয়ারদেরও পার্ফোম করতে হবে।।নোটিশ বোর্ডে যার যার ক্যাটাগরি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।।নিজেরে সিলেক্ট করার কোনো চান্স নেই।।আমাকে গানের জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে আর তুই নাচে।।(মুখ কাচুমাচু করে)
কিহহহহ্(চিৎকার করে)

চিত্রার কথা শুনে দিলাম এক চিৎকার সবাই চমকে আমাদের দিকে তাকালো।।কিন্তু সেদিকে আমার খেয়াল নেই।।ওর কথায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো আমার।।বলে কি?আমি আর নাচ?ইম্পোসিবল!! এই ভার্সিটিটাই আমার জন্য অলক্ষুণে সব উলটপালট হচ্ছে এখানে এডমিট হওয়ার পর থেকে।।চিত্রা আবারও বলে উঠলো….
আমার রিহার্সাল কাল থেকে আর তোরটা আজ থেকেই।।আধাঘন্টা পরই তোর রিহার্সাল অডিটরিয়ামে চলে যা।।শুভ্র ভাইয়ার পুরো গ্যাং ই নাচের ক্যাটাগরিতে আছে।।
চিত্রার কথায় গলা শুকিয়ে গেল আমার।।আবার সেই শুভ্র ভাইয়া।।উফফ কি ঝামেলা রে বাবা!! এই বুড়ো বুড়ো ছেলে নাচবে নাকি??কি আশ্চর্যের ব্যাপার।

আচ্ছা উনারে নাচবে?
না হয়তো ওরা শুধু রিহার্সাল করাবে।।একটা দুটো নাচে থাকলেও থাকতে পারে ঠিক বলতে পারছি না।।তো তুই যা আমি বরং বাসায় যাই।। অল দ্যা বেস্ট বেস্টি।
চিত্রা দাঁত কেলিয়ে চলে গেলো।।ওর দাঁত কেলানোর কোনো কারনই আমি খুঁজে পেলাম না।।খুঁজার চেষ্টাও করলাম না।।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অডিটোরিয়ামের দিকে হাঁটা দিলাম কথায় আছে না?যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।।তিনতলায় অডিটোরিয়াম।। দরজার কাছে গিয়ে উঁকি দিতেই শুভ্র ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।। শুভ্র ভাইয়ারা সব ফ্রেন্ড মিলে আড্ডা দিচ্ছেন।কিছু জুনিয়রও আছে ওরা ডান্স প্রেকটিস করছে।।এদের সাথে আমার ডান্স করতে হবে ভাবতেই বিরক্ত লাগছে।।সব ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে ভেতরে ঢুকে টেবিলের উপর ব্যাগটা রাখতেই পেছন থেকে শুভ্র ভাইয়া বলে উঠলো…

এই মেয়ে তুমি এখানে কেন?(ভ্রু কুচঁকে)
শুভ্র ভাইয়ার কথায় পেছন ফিরে বলে উঠলাম-
ডান্স প্রেকটিস করতে আসেছি ভাইয়া।।
ডান্স??ডান্সের “ডি” জানো যে ডান্স করতে আসছো??
কি বলতে চান আপনি??
জাস্ট একটা কথায় বলতে চাই,, গেট লস্ট।।সাব্বির?কিসব ফাউল পোলাপানদের সিলেক্ট করেছিস??তোদের দিয়ে আসলেই কিছু হবে না।।অনুষ্ঠানের সব দায়িত্ব আমাদের উপর আর তুই কি চাচ্ছিস এদের সিলেক্ট করে আমার ইমেজ নষ্ট হোক??(রাগী গলায়)

শুভ্র ভাইয়া যে আমাকে অপমান করছে তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।।উনার প্রত্যেকটা কথায় মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার।।খাটাস একটা!!নিজেকে অনেক শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে বলেই উঠলাম-
এইযে মিস্টার নিজেকে কি মনে করেন হ্যা?? কারো এভিলিটি না জেনে কথা শুনানো কোনো ভদ্রলোকের কাজ নয়।।সো ডোন্ট আন্ডারেস্টিমেট মি।।(রাগী চোখে)
ওহ রিয়েলি?এক্চুয়েলি আমি তোমার সাথে কোনো কথায় বলতে চাচ্ছি না।।জাস্ট গো বেক অন ইউর পজিশন।।
রাগে গা জ্বলছে আমার।।আমাকে পজিশান দেখাচ্ছে।।ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট হয়ে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি??বললেই হলো গো বেক??ডান্স তো আমি করবোই।।আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাহা নামের মেয়েটা এসে গাল চেপে ধরলো আমার।।মনে হচ্ছিলো গালের হারটাই ভেঙে ফেলতে চাইছে এই মেয়ে।।এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না।।মেয়েটার হাতটা চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলাম-

ডোন্ট টাচ মি…. নয়তো হাতটা কেটে রেখে দিবো।।এন্ড মিষ্টার সাদা বিলাই… ভার্সিটি কি আপনার শশুড়ের নাকি??যে যা বলবেন তাই হবে?যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তি হয়েছি এখানে কারো দয়ায় নয়।।ভার্সিটির সব কারিকোলামে পার্টিসিপেট করার অধিকার আমার আছে সো মিষ্টার শুভ্র আবরার অর আবরার শুভ্র হোয়াটএভার,,এটাকে নিজের শশুড়ের প্রোপার্টি ভাববেন না মাইন্ড ইট(চোখ রাঙিয়ে)
তোমার সাহস কিভাবে হয় আমার সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলার?আমি যখন বলেছি তুমি রিজেক্টেট দেট মিনস্ তুমি রিজেক্টেট।।

শুভ্র ভাইয়া যদি ভালোভাবে বলতো তাহলে হয়তো খুশি মনে সরে আসতাম বাট ব্যাটার এই এটিটিউট দেখার পর পৃথিবী উল্টে গেলেও ডান্স আমায় করতেই হবে নয়তো রাতে ঘুম হবে কি না সন্দেহ।।অবশেষে আমাদের গন্ডগোলের অবসান ঘটালেন রাজ্জাক স্যার।।আমার পার্ফোমেন্স দেখা হলো।।সবার পছন্দ হলেও আমায় রিজেক্ট হতে হলো শুভ্র ভাইয়ার জন্য।। তিনি স্যারকে বুঝালেন আমি সিনিয়রদের সাথে বেয়াদপি করেছি।।আর স্যারও নাচতে নাচতে উনার কথা বিশ্বাস করে আমাকে রিজেক্ট করে দিলেন।।।ইচ্ছে করছিলো এই স্যার সহ সব কটাকে উষ্টা মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দিই।।এই সাদা বিলাইকে তো আমি দেখে নিবো।।আমাকে অপমান করার মজা তুমি এবার হারে হারে টের পাবে বাচ্চু জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।।

চোখের পানি আটকে রাখার তুমুল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু সফল হতে পারছি বলে মনে হচ্ছে না।।আমার এই এক সমস্যা অতিরিক্ত রেগে গেলেই নাকের জল চোখের জল এক হয়ে যায়।।আমারও এখন ঠিক এক অবস্থা।।একহাতে চুল ঠিক করছি তো অন্যহাতে চোখের পানি মুছতে মুছতে করিডোর দিয়ে হাঁটছি উদ্দেশ্য বাসায় যাওয়া।।কিন্তু হঠাৎই একটা ফাঁকা ক্লাসের মাঝ থেকে একজোড়া হাত আমার চোখ মুখ চেপে ধরে ভেতরে টেনে নিলো আমায়।।আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে কিছু একটা দিয়ে আমার চোখ বেঁধে হাত দিয়ে আমার দুইহাত পেছনের দিকে চেপে ধরলো সে।চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার দেখছি।।

নিজেকে ছাড়ানোর হাজারও চেষ্টা করে চলেছি ক্রমাগত কিন্তু সামনে দাঁড়ানো শক্তির সাথে পেড়ে উঠছি না।।বেশকিছুক্ষন এভাবে থাকার পর গালে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেলাম।।অজানা ভয়ে গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো আমার।।আবারও শুরু করলাম ছুটাছুটি কিন্তু সামনের শক্তিটাকে বিন্দুমাত্র নাড়াতে পারলাম বলে মনে হলো না।।সে নিজের মতোই গাল ছেড়ে নেমে এলো গলায়।।সারা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো আমার।।গলায় একটা কামড় দিয়েই হাতদুটো ছেড়ে দিলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি।।ভয়ে রীতিমতো কাঁপছিলাম আমি।।শুকনো গলায় বারবার ঢোক গিলছিলাম,,কাঁপা কাঁপা হাতে চোখের কাপড়টি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেখলাম একটা ফাঁকা ক্লাসে আমি একা দাঁড়িয়ে আছি।।দৌঁড়ে দরজার কাছে গিয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়েও কাউকে খুঁজে পেলাম না।। রাগ, ভয়, বিরক্তি সব কিছু নিয়ে অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছিলো আমার।।হঠাৎ হাতের কাপড়টার উপর চোখ পড়লো।।সাদা কাপড়টাতে লাল কালিতে কিছু লেখা।।কৌতূহল নিয়ে কাপড়টা চোখের সামনে মেলে ধরতেই অবাক হলাম আমি….

তোমার রাগী ফেসের ওই রক্তিম আভায় খুন হয়েছি আমি।তোমার গলার ওই কালো তিলটা বড্ড জ্বালায় আমায়।ওকে বলে দিও..আমাকে আবার এভাবে পুড়ালে আবারও শাস্তি পেতে হবে তাকে”- লেখাটা পড়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।কে হতে পারে এই ব্যক্তি?গলার চিনচিনে ব্যাথায় ভাবনা কাটলো আমার।।ভার্সিটির ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়াতেই চোখ আটকে গেলো আমার।।গলার নিচের দিকে কামড়টা স্পষ্ট।তিলের জায়গাটা লাল হয়ে ফুলে গেছে একদম।।রাক্ষস নাকি লোকটা।একবার হাতে পেলে খুন করে ফেলবো তাকে।।ভীতুর ডিম কোথাকার।এখন এই দাগের কি করবো? বাসায় গেলেই কতো প্রশ্নে জর্জরিত হতে হবে আমায়।।ওড়নাটা গলায় ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে চুল গুলোও ছড়িয়ে দিলাম কাঁধে,, এখন শেষ রক্ষা হলেই হলো।

গেইটের কাছে আসতেই শুভ্র ভাইয়ার গাড়িটা চোখে পড়লো।সকালে একবার দেখেছিলাম উনাকে এই গাড়িতে।উনার কথা মনে পড়তেই রাগটা মাথায় চাড়া দিয়ে উঠলো।ব্যাগ থেকে পানি আর জুসের বোতল বের করে ড্রাইবিং সিটে ঢেলে দিলাম পুরোটা।। এখন বুঝো ঠেলা।।হুহ!!আমার সাথে পাঙ্গা!! কাজটা কমপ্লিট করে পিছে তাকিয়ে দেখি উনারা আসছেন কোনোরকম দৌড়ে সরে এলাম সেখান থেকে।রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে হাঁফাচ্ছি।হঠাৎ খেয়াল করলাম লাল রং এর একটা গাড়িতে বসে থাকা একটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।ব্যাটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই মনে পড়লো…” ও মোর আল্লাহ্,, এই ছেলেই সেই কামড়ে দেওয়া ছেলে নয় তো?” ইচ্ছে তো করছিলো গিয়ে শার্টের কলার টা ধরে দিই কয়েকটা থাপ্পড় কিন্ত আশেপাশে মানুষ না থাকায় সাহসে কুলাতে পারলাম না।।যদি কিডন্যাপ করে নেই আমায়??

মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ে চারদিকে তাকাচ্ছিলাম যদি একটা রিক্সা পেয়ে যাই।।কিন্তু রোদ বিপদে পড়েছে আর রিক্সা এসে হাজির হয়েছে তা কখনোই পসিবল নয়।।আমার লাইফে রিক্সা হলো বাংলা সিনেমার পুলিশদের মতো ওলওয়েজ লেইট।।ছেলেটাকে আড়চোখে দেখলাম,, সে এখনো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।।কি অসভ্য ছেলেরে বাবা।আর রিস্ক নেওয়া ঠিক হবে না ভেবে উল্টো পথে হাঁটা দিলাম।ওমা!!!একি?এই ছেলে তো আমার পেছন পেছনই গাড়ি ছুটিয়ে আসছে।।হাঁটার গতি দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলাম কিন্তু কাজে লাগলো না গাড়িটা একদম আমার সামনে এসে থামলো।।কি করবো ভাবছিলাম,,আমার কাছে বডিস্প্রে টাইপও কিছু নেই যে নাটকের নায়িকার মতো চোখে মেরে দৌড়ে পালাব।।ছেলেটাকে দেখে হাই সোসাইটির বলেই মনে হচ্ছে যথেষ্ট স্মার্ট।

ছেলেদের গায়ের রং যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমন তার গায়ের রং ওই সাদা বিলাইয়ের মতো সাদা তো একদম নয়,,উজ্জল শ্যামা।।মাথা ভর্তি হালকা কুঁকড়ানো চুল।।গায়ে ফুল ফরমাল গেটাপ।।এমন একটা ছেলে আমার পেছনে কেন লেগেছি বুঝতে পারছি না।।হাতটা ব্যাগে ঢুকিয়ে কিছু একটা খুঁজছি যদি বাঁচার উপায় কিছু একটা পেয়ে যাই….হঠাৎই হাতে বাজলো আপুর জন্য প্যাক করে নেওয়া কোল্ড কফি আর বার্গার।।এই দুটোই এবার শেষ ভরসা আমার।ছেলেটা হাসি হাসি মুখ নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই কোল্ড কফিটা ছুড়ে মারলাম তার মুখে।।আচমকা এমনটাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সে।এই সুযোগে বার্ডারের চিজ সাথে থাকা ক্যাচাপ সবকিছুই ঘষে দিলাম তার মুখে।।ক্যাচাপটা যে উনার চোখে চলে গেছে বুঝতে পারলাম।।বারবার চোখ ডলছেন উনি।।উনার মুখটা চেনার উপায় নেই পুরাই জোকারদের মতো লাগছিলো তাকে।।ইচ্ছে করছিলো হুহা করে হেসে দিই।কিন্তু তার আগেই পেছন থেকে একজন বলে উঠলো…

এসব কি করছো সানশাইন?কে এটা?
পেছনে তাকিয়ে দেখি শুভ্র, সাহেল ও সাব্বির ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।।সাহেল ভাইয়ার কথায় বিরক্তি হলেও বলে উঠলাম…
আমার বয়ফ্রেন্ড, কোনো সমস্যা??(মুচকি হেসে)
এটা সিরিয়াসলি তোমার বিএফ??(অবাক হয়ে)
জি হ্যা।আমি আপনাকে মিথ্যা কেন বলবো বলুন তো?
উনার মুখে এসব কি?কেউ বিএফের সাথে এমন বিহেভ করে নাকি??(ভ্রু কুচঁকে)
কেউ করে না আমি করি।আর এসবে ও অভ্যস্ত এটাই আমার ভালোবাসা।।এবার আপনারা যেতে পারেন।।
শুভ্র ভাইয়া ফোনে কার সার্ভিসের সাথে কথা বলছিলেন।।আমার মুখে “বয়ফ্রেন্ড” কথাটা শুনে ফোনটা কেটে পকেটে পুড়ে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ছেলেটির দিকে।।তারপর আমার দিকে ক্ষিপ্ত নজরে তাকিয়েই দ্রুতবেগে হাঁটা দিলো সেখান থেকে।।তারসাথে সাহেল আর সাব্বির ভাইয়াও দৌড় লাগালো।।এবার আমি ভ্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলাম….

চোখ জ্বলছে আপনার?
হুম অঅননেক..
বেশ হয়েছে।আমাকে ফলো করতে আসলে এমনই হবে।অসভ্য ছেলে!!সাহস কি করে হয় আপনার আমাকে ফলো করার??(কমোড়ে হাত রেখে)
রোদ?আমি তোমায় ফলো করছিলাম না বোন।আমি অভ্র!!!
আপনি অভ্র হোন আর আকাশ পাতাল সব হোন আমার কোনো যায় আসে না।।আমার হাতে ক্যাচাপের বোতল থাকলে পুরোটাই ঢেলে দিতাম আপনার চোখে।।লুচু ছেলে কোথাকার!!!বাড়িতে মা-বোন নাই??
মা আছে।।বোন আছে একটা সে আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।।রোদ আমি তোমার মামুর ছেলে,,তোমার অভ্র ভাইয়া।।

কথাটা শুনেই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলাম আমি।।ওমা!! এটা মামুর ছেলে?সর্বনাশ করেছে।এখন কি হবে??
সসরি ভভাইয়া।আমি আসলে বুঝতে পারি নি।।সরি সরি।
সরি পরে বলো বোন আগে পানি দাও।চোখ জ্বলছে তো।
ওহ হ্যা।
ব্যাগ থেকে বোতল বের করেই হতাশ হলাম।বোতল খালি। সব তো শুভ্র ভাইয়ার গাড়িতে ঢেলে রেখে আসছি।।এখন উপায়??অভ্র ভাইয়ার হাত ধরে একটু হেঁটে চা এর দোকান থেকে পানি নিয়ে উনার হাতে দিলাম।।শেষমেষ উনার চোখ ঠিক হলো।।আমি অপরাধীর মতো উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি চোখ মুছে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টিও হেসে বললো…

বোন রে তুমি তো খুবই ভয়ংকর।
সরি..(কিউট করে)আপনি আগে বললেই তো হতো যে, আপনি মামুর ছেলে!!না বলে ওভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন??(মুখ ফুলিয়ে)
আরে ওটা অনেক কাহিনী…বাবা আমাকে ফুপ্পির পিক দেখিয়ে বললো এটা দেখলেই নাকি আমি তোমাকে চিনে নিবো।।আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।।ত্রিশ বছর আগের পিক দেখে কাউকে কিভাবে চিনা সম্ভব তাও ছবিটা তার নিজের না তার মার….এটা নিয়ে বাজি ধরে অফিস থেকে সোজা এখানে চলে আসলাম।।এতোক্ষণ তোমাকে খেয়াল করে দেখছিলাম কিছু বলতাম তার আগেই তো এতো কান্ড করে ফেললে।।

আমি আবারও অপরাধী দৃষ্টিতে বললাম, “সরি” ভাইয়া মুচকি হেসে বলে উঠলেন-
ইটস ওকে…চলো এবার?
কোথায়?
তোমায় পৌছে দিই।তুমি নাকি আইসক্রিম অনেক পছন্দ করো,, বাবা বললো।।চলো তোমায় আইসক্রিম খাওয়াবো..
সত্যি?
হুমমম…
ওকে চলুন।।যাওয়ার সময় আপুর জন্য কোল্ড কফি আর বার্ডারও নিতে হবে।।আগের গুলো তো আপনার মুখে..(হাত দিয়ে ইশারা করে উনার মুখ দেখাতেই দুজনই ফিক করে হেসে দিলাম)

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৩+৪

কাল রাতে অভ্র ভাইয়াকে নিয়ে আপুর সাথে এতো এতো গল্প করতে করতে ঘুমাতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।।যার ফলাফল প্রথম ক্লাস মিস।।তাড়াহুড়ো করে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম।। তিন তলায় লাইব্রেরী চারতলায় আমাদের ডিপার্টমেন্ট।। তিনতলা পেরিয়ে যখনই চারতলায় উঠবো কেউ একজন টেনে লাইব্রেরীর এক কোনার দেয়ালে চেপে দাঁড় করিয়ে দিলো আমায়।।লাইব্রেরি পুরোটা ফাঁকা আজ।গা ছমছম পরিবেশ।সামনের মানুষটা আরও বেশি ভয়ংকর।।

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৭+৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here