তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৬৫+৬৬

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৬৫+৬৬
নৌশিন আহমেদ রোদেলা

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছি, আমার ঠিক সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে আছেন শুভ্র। সোফার দু’পাশের হাতলে হাত রেখে আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উনি। থেকে থেকে ঢোক গিলে আশেপাশে তাকাচ্ছি আমি। চারপাশে সবাই হাসি-ঠাট্টা আর খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমাদেরকে খেয়াল করছে না বললেই চলে। তবুও অদ্ভুত রকম অস্বস্তি নাড়া দিচ্ছে মনে। আমাকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে শান্ত গলায় বলে উঠলেন উনি,

— আমার দিকে তাকাও।
উনার কথায় মুখ কাঁচুমাচু করে মাথা নিচু করে বসে রইলাম আমি। উঠে যাওয়ারও কোনো পরিস্থিতি রাখেন নি উনি।
— কি হয়েছে তোমার? কোনো সমস্যা থাকলে বলো আমাকে। কাল রাত থেকে কথা বলছো না এর কারণ কি রোদপাখি? চোখ-মুখটাও ফ্যাকাশে লাগছে, তুমি কি অসুস্থ ফিল করছো রোদ? বলো আমাকে?
আমি আড়চোখে উনার দিকে তাকালাম। উনার দৃষ্টি আমার চোখের দিকেই। চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিলাম দ্রুত। উনার কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না আমার। উনি এবার আমার দু’হাত নিজের হাতে নিয়ে নরম গলায় বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— সকালে খেয়েছো? সবাই লাঞ্চ করছে। খাবে, চলো।
উনার কথায় চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে চিত্রাকে দেখতে পেয়েই ডাকলাম তাকে। ও কাছাকাছি এসে দাঁড়াতেই বলে উঠলাম,
— চিত্রা? বলছিলাম কি তো…
আমার কথা শেষ না হতেই রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন শুভ্র। গম্ভীর গলায় চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

— কিছুই বলছিলো না। তুমি যাও চিত্রা।
— এই না, যাবি না তুই৷ শোন আমি কি বলি…
— আমি তোমাকে যেতে বলেছি চিত্রা।
চিত্রার মুখটা মুহূর্তেই রক্তশূণ্য হয়ে গেলো। বেচারী কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। আমার কথাও ফেলতে পারছে না আবার শুভ্রর ভয়ে এখানে দাঁড়িয়েও থাকতে পারছে না। তাই মাথা নিচু করে বিরবির করে বলে উঠলো,
— ভভভাইয়া? ম মমানে বলছিলাম কি? রররোদ…
চিত্রা এটুকু বলতেই ধমকে উঠলেন শুভ্র,
— আমি যেতে বলেছি তোমায়।
চিত্রার দৌঁড়ে পালানোর জন্য শুভ্রর এই একটা ধমকই যথেষ্ট। ধমক শুনে চমকে উঠে উপরের দিকে তাকাতেই চিত্রা হাওয়া! চিত্রা যাওয়ার পর চোখ বন্ধ করে জোড়ে শ্বাস নিলেন শুভ্র। আমার দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— পাঁচ মিনিটের মধ্যে ডাইনিং- এ যেনো দেখতে পাই তোমায়। জাস্ট পাঁচ মিনিট….নয়তো খবর খারাপ হয়ে যাবে তোমার।
কথাটা বলেই ওঠে ডাইনিং-এর দিকে চলে গেলেন উনি। এতোক্ষণ যেনো শ্বাস আটকে বসে ছিলাম আমি। উনি সরে যেতেই বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নিলাম আমি। শ্বাস টেনে নিয়ে চোখদুটো খুলতেই চমকে উঠলাম আমি। চিত্রা আমার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে চলেছে। ওকে হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকালাম আমি,

— কি সমস্যা? হাসছিস কেন?
চিত্রা তাড়াহুড়ো করে আমার পাশে সোফার হাতলে বসে বলে উঠলো,
— কাহিনী কি দোস্ত? ভাইয়া আর তোর মাঝে ফাইট চলছে নাকি?
— হু।
— কেনো, কেনো?
— তোকে বলবো কেনো? বেশি কথা না বলে আমায় ধর তো…ডাইনিং-এ যাবো। মাথাটা ঘুরছে, দাঁড়াতে পারছি না।
আমার কথায় চোখ বড়বড় করে তাকালো চিত্রা। তুমুল উৎসাহ নিয়ে আমাকে ধরে দাঁড় করালো সে। হাঁটতে হাঁটতে কানের কাছে ফিসফিস ফিসফিস করে বলতে লাগলো,

— ব্রেকফাস্ট করেছিলি?
— না। করি নি। খেতে ইচ্ছে করছিলো না।
— এখনও খেতে ইচ্ছে করছে না?
— না। কেনো বল তো?(ভ্রু কুঁচকে)
— আচার খাবি?
— খালি পেটে আচার খেতে যাবো কেন? তবে ঝাল ঝাল হলে খাওয়া যেতেই পারে।কেন, তুই খাওয়াবি নাকি?
— না। আমি তো চেক করছিলাম। মনে হয় বাবু আসছে। আচার আচার করছিস,, মাথাও ঘুরছে… উহুম উহুম।
চিত্রার কথায় দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। পিঠে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে বলে উঠলাম,
— তুই আসলেই একটা গবেট। গাধী কোথাকার। আচার খেলেই মানুষ প্রেগনেন্ট হয়ে যায়? বাংলা ছবি পাইছিস এটা? ননসেন্স।
আমার কথায় মুখটা কালো হয়ে গেলো চিত্রার। এই টপিকে কথা বলা তার জন্য বিপদজনক হয়ে উঠবে ভেবে। টপিক চেঞ্জ করে চাপা স্বরে বলে উঠলো সে,

— এই? ভাইয়ার সাথে রাগ করেছিস কেন রে?
চিত্রার প্রশ্নে ওর দিকে তাকালাম আমি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও হাঁটা দিলাম। হালকা গলায় বললাম,
— তিলের জন্য।
— তিল? কিসের তিল? ভাইয়াকে তিলের তেল টেল আনতে বলেছিলি নাকি? আনে নি বলে রাগ করেছিস?
চিত্রার কথায় ভ্রু কুঁচকালাম আমি। বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলাম,
— আমি গলার তিলের কথা বলছি, ডাফার!
আমার কথায় অবাক চোখে তাকালো চিত্রা। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলো সে। কয়েক সেকেন্ড পর ঠোঁট উল্টিয়ে করুন স্বরে বলে উঠলো,
— দোস্ত? যুক্তিবিদ্যার মতো পেঁচিয়ে কথা বলছিস কেন?বিশ্বাস কর দোস্ত, তোর কথা আমার কাছে বায়োলজির থেকেও কঠিন লাগছে। একটু এক্সপ্লেনেশন দে না, প্লিজ!

— তোর ভাইয়া একটা মেয়ের গলার তিল দেখে এসে আমাকে বলেছে তার তিল নাকি আমার তিলের সাথে মিলে যায়। ভাবতে পারছিস? সে এখন মেয়েদের গলার তিল গবেষণা করতে লেগে গেছে। এরপরও রাগ করবো না আমি?
আমার কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালো চিত্রা। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
— ভাইয়া কি পরকীয়া করছে নাকি? (আমি রেগে তাকাতেই) উপস্ সরি সরি। আমি বোঝাতে চাচ্ছিলাম… ভাইয়া কাজটা ঠিক করে নি। তোর রেগে থাকাটা জায়েজ। এনিওয়ে, ভাইয়াকে কিছু বলিস নি তুই?
— কি বলবো?
— কি বলবি মানে? কিছুই বলবি না? সামনে গিয়ে শার্টের কলার ধরে বলবি, “সমস্যা কি তোর? অন্য মেয়ের গলার দিকে এতো নজর যায় কেন? চোখদুটো তুলে নিবো একদম।”

— পাগল তুই? আমি উনাকে তুই করে বলবো? মরে গেলেও না।
— সামান্য তুই করে বলার জন্য তোকে মরে যেতে হবে? আজব!
— আমি উনাকে তুই করে ডাকতে পারবো না। ফাস্টলি উনি আমার বড়। সেকেন্ডলি উনি আমার হাজবেন্ড আর থার্ডলি আই রেসপেক্ট হিম।
আমার কথায় চিত্রা বেশ বিরক্ত হলো বলেই মনে হলো।চোখ-মুখ কুঁচকে বলে উঠলো,
— ওকে ফাইন! আমি যে ডায়লগটা বললাম সেটাতে “তুই” এর জায়গায় “আপনি” লাগিয়ে দিস। সামান্য একটু তুই করে বলতেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে তোর আমি হলে তো ঠাস করে একটা চড় লাগিয়ে দিতাম। এক চড়েই কাজ খতম। তুই কিন্তু ট্রাই করতে পারিস…

— চড় খেতে না চাইলে চুপ যা। উনার গায়ে আমি হাত তুলবো? পাগল তুই? জীবন থাকতে এ দিনটা যেন কখনো না আসে।
— এহহ! বিয়ের আগে তো কথায় কথায় চড় মারতি তাও আবার পুরো ভার্সিটির সামনে।বিয়ে হওয়ার পর ধোয়া তুলশীপাতা হয়ে গেলি?
— বিয়ের আগে উনি শুধুই একজন ছেলে ছিলেন আমার কাছে। বিয়ের পর স্বামী। দুটোর মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ।
আমার কথা শেষ না হতেই মামানির ডাক পড়লো। দু’জনেই এগিয়ে গেলাম ডাইনিং-এর দিকে। চিত্রা চেয়ার টেনে বসে পড়লোও আমি দাঁড়িয়ে রইলাম চুপচাপ। মামানি অবাক হয়ে বলে উঠলেন,

— কি রে? দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বসে পড়। খাবি না?
— এখন না মামানি। ওরা খেয়ে নিক তারপর। আমি বরং খাবার সার্ভ করে দিই?
— খাবার সার্ভ করার মানুষের অভাব আছে নাকি? বস চুপচাপ।
— প্লিজ মামানি। এখন খেতে পারবো না। খাবার দেখেই পেট ফুলে যাচ্ছে আমার। আমি পরে খাই?
কথাটা বলে ডালের বাটিটা নিয়ে কিচেনের দিকে পা বাড়াতেই দুনিয়া ঘুরে এলো আমার। হাতের বাটিটা পড়লো আমার পায়ে। আমিও পড়ে যেতে নিতেই কেউ একজন ধরে ফেললো আমায়। কয়েক সেকেন্ড পরই চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হলো আমায়। চোখ বন্ধ রেখেও বুঝতে পারছি সবাই ঘিরে রেখেছে আমায়। চারপাশের শব্দগুলোও কানে আসছে স্পষ্ট। কিন্তু চোখটা খোলারই শক্তি পাচ্ছি না আমি। পাশ থেকে কারো ফিসফিসানোর আওয়াজ এলো কানে। বুঝতে পারলাম মানুষটি শুভ্রর বড় খালা,

— এই শুভ্র? তোর বউ প্রেগনেন্ট নাকি রে? যেভাবে চকড়া চকড়ি পারছে আমার তো তাই মনে হয়।
বড় খালামণির কথায় শুভ্র যেনো চরম বিরক্ত এমন ভাব নিয়ে বলে উঠলো,
— বড় খালামণি? এটা কি বাংলা সিনেমা পেয়েছো নাকি? মাথা চক্কর দিলেই প্রেগনেন্ট! আজাইরা। মানুষের বিভিন্ন কারণে মাথা চক্কর দিতে পারে। তাই আজগুবি চিন্তা বাদ দাও তো…বাবা? ডক্টর আংকেলকে একটু আসতে বলো না, প্লিজ।
এরপর আবারও নীরবতা। মাথাটা সোজা করে বসতে পারছি না আমি ঢলে পড়ছে বারবার। কোনোরকম চোখ পিটপিট করে তাকালাম আমি। ডানপাশে তাকিয়ে দেখলাম সাহেল আর অভ্র ভাই দাঁড়িয়ে আছেন আর বাম পাশে শুভ্র। শুভ্রকে দেখা মাত্রই শুভ্রর গায়ে ঢলে পড়লাম আমি। তারপর,আর কিছুই মনে নেই আমার। যখন চোখ খুলি তখন আমি বিছানায় শুয়ে, হাতে স্যালাইনের নল লাগানো। রুমের এখানে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে ডক্টরের কন্ঠে ডানদিকে ফিরে তাকালাম আমি,

— না শুভ্র। তেমন কোনো সমস্যা নেই। প্রেশাল ফল করার জন্যই সেন্স হারিয়েছিলো। বাচ্চা একটা মেয়ের প্রেশার এতো লো হয়ে গেলো কিভাবে? খাওয়া-দাওয়া করে না নাকি? শরীরও বেশ দুর্বল। খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর দিও। মেডিসিনের মাঝে শুধু দুটো টেবলেট দিচ্ছি একটা প্রেশারের আরেকটা খাবারের রুচি হওয়ার জন্য।
কথাগুলো বলেই ফিরে তাকালেন উনি। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
— কি মামনি? উঠে গেছো? কেমন লাগছে এখন?
উত্তরে মিষ্টি করে হাসলাম আমি। ডক্টর কোনো একটা আর্জেন্ট কাজে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন৷ বাকি সবাই আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। রুমের এক কোনে বাবা, মা আর ভাইয়াকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। নীরবতা ভেঙে আমার পাশে বসেই ধমকে উঠলেন শুভ্র।

— দেই একটা কানের নিচে লাগিয়ে? দিবো? বেয়াদপ মেয়ে। বেশি আদর দিয়ে ফেলছি তাই কথা গায়ে লাগে না। এখন থেকে নো আদর শুধু মাইর চলবে।
উনার কথায় অবাক চোখে তাকিয়ে আছি আমি। সবার সামনে কিভাবে বকছেন আমায়। বিছানার এককোণে সাহেল ভাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলেন। শুভ্রর ধমকে আমতা আমতা করে বলে উঠলেন,
— আহ! শুভ্র, মেয়েটাকে এভাবে বকছিস কেন? এমনি অসুস্থ। বাদ দে না।
সাহেল ভাইয়ার কথায় তাল মিলিয়ে মামুও বলে উঠলেন,

— তাইতো শুভ্র। এভাবে বকছিস কেন ওকে? এই অসুস্থ অবস্থায় কেউ বকে?
— তোমরা চুপ করো বাবা। একটা কথাও বলবে না আজ। তোমাদের আস্কারা পেয়েই বিছানায় শুয়ে আছে আজ। সাহেল? খুব তো ওর সাইড নিয়ে কথা বলছিস, তোর কোনো ধারণা আছে কি করে ও? ভার্সিটিতে ক্লাস নিয়ে পুরো ভার্সিটি খুঁজে ওকে বের করে জোর করে ক্যান্টিনে নিয়ে খাওয়াতে হয়। আর যদি সেই টাইমে আমার ক্লাস থাকে তাহলে তো কথায় নেই। আমি ফোন দিয়ে ওকে খেতে যেতে বলি আর উনি? ফোনে ভদ্রভাবে বলে “হ্যা!খাবো।” এমন একটা ভাব যেনো এক্ষুনি খেতে বসে যাচ্ছে অথচ পরে দেখা যাবে খায়ই নি। আমি অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে রাতেও না খেয়েই ঘুম। আমি খেতে বললে সুন্দর করে বলেবে “আমি খেয়েছি।” অথচ সকালে উঠে শুনি বউ আমার রাতে খায় নি। তাহলে বল, রাগটা উঠবে না? অলওয়েজ বাচ্চামো…অলওয়েজ! বাচ্চার বাপ না হয়েও ফুপ্পির রেডিমেড বাচ্চা পালতেছি আমি, রিডিকিউলাস।
উনার কথায় রাগ স্পষ্ট। আর উনার রাগের তেজে সবাই নিস্তব্ধ।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন উনি,

— ফুপ্পি? যাওয়ার সময় তোমার মেয়েকে সাথে করে নিয়ে যাবে। ওর এখানে থাকার কোনো দরকার নেই।
উনার কথায় মামু অবাক হয়ে বলে উঠলেন,
— কি বলছিস শুভ্র?
— খুব সুন্দর একটা কথা বলছি। তোমার ভাগ্নীকে যেমন এনেছিলে ওমনি রেখে আসো। নয়তো আমাদের সবার একসাথে জেলের ঘানি টানতে হবে। কি দরকার? দরকার আছে কোনো? ফুপ্পি? যাওয়ার সময় ওকে নিয়ে যেও। একদম পার্মানেন্টলি নিয়ে যাবে।
উনার কথায় মিনমিন করে বলে উঠলাম,
— আমি যাবো না কোথাও।
— যাবো না বললে তো হবে না। যেতে হবে। মামুর বাড়ি আসছো থাকো বাট আমার রুমে থাকা চলবে না। এই মাধবী? রেহেলা?
উনার ডাকে মাধুবী আর রেহেলা দরজার ধার থেকে উঁকি দিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠলো,

— জি ছোট ভাইজান?
— তোমাদের ছোট ভাবির লাগেজ প্যাক করে দাও তো। উপস্ সরি, ছোটভাবি না আপামনি। আগে যেমন আপামনি ডাকতে এখনও আপামনিই ডাকবে। ভাবি ডাকার প্রয়োজন নেই। এখন ঝটপট তোমাদের আপামনির ব্যাগ গুছিয়ে দাও। সব জিনিস গোছাবে…ওর একটা জিনিসও আমার ঘরে যেনো না থাকে? বুঝেছো?
— আম্মু…..(কাঁদো কাঁদো হয়ে)
— আম্মু আম্মু করলে তো কিছু হবে না। ডিসিশন ফাইনাল। এই তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন? গোছাও…
— মামু? দেখো আমায় তাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি যাবো না….যাবো না।
— শুভ্র? বাড়াবাড়ি করছিস তুই? আমার মা টাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে চাইছিস। মাইর দিবো একটা।
— মারলে মারো৷ যা ইচ্ছে করো। যেতে তো ওকে হবেই। ফুপ্পি? নিয়ে যাবা না তোমার মেয়েকে?
— অবশ্যই নিয়ে যাবো। আমার ভাতিজাটাকে এভাবে জ্বালানোর পরও রেখে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আহা! ছেলেটার মুখ-চোখ শুকিয়ে গেছে একদম।
আম্মুর কথায় শক খাওয়ার মতো তাকিয়ে রইলাম আমি। এই তার মেয়ের প্রতি ভালোবাসা? মেয়ের থেকে ভাতিজার প্রতিই দরদ বেশি তার। এতো আদর তো কোলে নিয়ে বসে থাকলেই তো হয়। যত্তসব আদিক্ষেতা! মনে মনে একগাদা বকা দিয়ে কান্নামাখা গলায় বলে উঠলাম আমি,

— আম্মু তুমিও?
আম্মু কিছু বললেন না। মুখ টিপে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। এবার কাঁদতে বসলাম আমি। সত্যিই কি আমাকে পাঠিয়ে দিবেন শুভ্র? আমি যখন মুখ ফুলিয়ে কাঁদছি তখনই একে একে বেরিয়ে গেলো সবাই। সবাই বেরিয়ে যেতেই দরজা লাগিয়ে হুট করেই আমার উপরে এসে পড়লেন শুভ্র। উনার এমন কান্ডে চমকে ওঠে কান্না থেমে গেলো মুহূর্তেই। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছি আমি। উনি আধ শুয়া হয়ে হয়ে দুই বাহু চেপে ধরে বললেন,
— কাঁদো কেন? ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করো? কাজ হবে না।
আমি ঠোঁট উল্টিয়ে আগের মতোই চুপচাপ তাকিয়ে রইলাম উনার মুখে। আমাকে চুপ থাকতে দেখে হাতটা আরো জোড়ে চেপে ধরে ঠোঁটে ছোট্ট করে কামড় দিয়ে বলে উঠলেন,

— কথা বল নয়তো এক্ষুনি বাপের বাড়ি দিয়ে আসবো তোকে…কি দিয়ে আসবো?
— আমি যাবো না।
— যাবে না তো কথা শুনো না কেন আমার? আবার কাঁদছো কেন?
কথাটা বলে চোখের পাতায় চুমু দিয়ে দিলেন উনি। মুচকি হেসে বলে উঠলেন,
— এই মেয়ে?কাঁদলেই পাঠিয়ে দিনো বাপের বাড়ি। আমার সামনে থাকলে কাঁদা যাবে না। বুঝো না কেন? ভালোবাসি তো..বুকে ব্যাথা লাগে।
উনার কথায় মুচকি হাসলাম আমি। অভিমানী গলায় বলে উঠলাম,

— চিত্রার মুখে একটা তিল আছে,খেয়াল করেছেন?
— না তো। কেনো বলো তো।
— শ্রেয়ার মুখেও একটা তিল আছে। বলুন তো কোথায়?
— আজব তো৷ আমি কিভাবে জানবো?
— জানবেন না কেন? সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করে দেখতে পান না?
— আমি ওভাবে খেয়াল করেছি নাকি? তুমি হঠাৎ তিল নিয়ে পড়লে কেন বলো তো?
— তাদের খেয়াল না করলে নাবিলা আপুকে কেন খেয়াল করেছেন শুনি? কাহিনী কি?তলে তলে কি চলে হুম?? সরুন… সরুন আমার উপর থেকে।
আমার কথায় হাসলেন উনি। গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে উঠলেন,
— সরি! নাবিলাকে খেয়াল করার কারণ হলো সাহেল। নাবিলার আচরণগুলো তোমার সাথে মেলাচ্ছিলাম জাস্ট। আর তাছাড়া তিলটা আমি ইচ্ছে করে দেখি নি। তোমার সামনে এসে যখন দাঁড়ালো তখন সরাসরিই তিলটাই চোখে পড়ে গিয়েছিলো আমার। ব্যস এটুকুই। তো? আমার মিসেস এই জন্যই মন খারাপ রেখেছিলো বুঝি? পাগলি!(নাক টেনে)

” না ” শব্দটা বড্ড প্রবলেমেটিক শব্দ। “হ্যাঁ” শব্দটা যত সহজে বলা যায়, না শব্দটা ততটা সহজে বলা যায় না। অল্প পরিচিত মানুষদের সামনে সমস্যাটি আরো বিরাট আকার ধারণ করে। অতি পরিচিত মানুষকে কোনো কিছুতে যেমন চট করে না বলে দেওয়া যায় অল্প পরিচিত মানুষদের ক্ষেত্রে তা হয় না। ভদ্রতার হাসি হেসে ইনিয়ে বিনিয়ে না বলতে হয় তবুও মাঝে মাঝে শেষ রক্ষাটা হয়ে ওঠে না। আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক সেরকম। বড়-ছোট সবাই মিলে ছাদে বসেছে আড্ডা দিতে। মামানি আর মামুর বিয়ের রোমাঞ্চকর গল্প শোনার পর সবারই ইচ্ছে জাগলো নাবিলা আপুর গান শুনবে। বেশ ভালো কথা, গান শুনতেই পারে তাতে ক্ষতি কিছু নেই। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। নাবিলা আপু খুব কৌশলে গানের বেড়াজালে জড়িয়ে নিলেন আমায়। তিনি দৃঢ়ভাবে ঘোষনা করলেন, তিনি গাইবেন। কিন্তু তার সাথে গলা মেলাতে হবে আমাকে। দু’তিন বার মৃদু হেসে অসম্মতি জানালেও বিশেষ একটা লাভ হলো না। অতি পরিচিত মানুষ হলে চোখ গরম করে মানা করা গেলেও এক্ষেত্রে তা করা যাবে না তাই বাধ্য হয়েই রাজি হতে হলো আমায়। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে অসম্ভব মিষ্টি কন্ঠে গান ধরলেন নাবিলা আপু। বাংলা গান। বাংলা গান শুনে বেশ স্বস্তিই পেলাম তবু এতোগুলো মানুষের সামনে গান! কথাটা ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, চূড়ান্ত অস্বস্তি নিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই গলা মেলালাম,

আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আমার দিনগুলো সব রং চিনেছে, তোমার কাছে এসে।
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে,
ভোরের শিশির খুব ছোঁয়ে যায়,
তোমায় ভালোবেসে।
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
……………………………
…………………….………
আমার ক্লান্ত মন ঘর খুঁজেছে যখন-
আমি চাইতাম,পেতে চাইতাম,
শুধু তোমার টেলিফোন।
ঘর ভরা দুপুর,আমার একলা থাকার সুর
রোদ গাইতো, আমি ভাবতাম,
তুমি কোথায়, কতো দূর?
আমার বেসুর গিটার সুর বেঁধেছে তোমার কাছে এসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আমার একলা আকাশ চাঁদ চিনেছে,
তোমার হাসি হেসে,শুধু তোমায় ভালোবেসে।
………………………………..
অলস মেঘলা মন আমার আবছা ঘরের কোণ
চেয়ে রইতো, ছুঁতে চাইতো,
তুমি আসবে আর কখন?
শ্রান্ত ঘুঘুর ডাক,ধুলোমাখা বইয়ের তাক
যেনো বলছে, বলে চলছে-
থাক, অপেক্ষাতেই থাক।
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আমার দিনগুলো সব রং চিনেছে, তোমার কাছে এসে।
শুধু তোমায় ভালোবেসে।❤”

গানটা শেষ করতেই রুহি আপুর চাঁপা আর্তনাদ কানে এলো। সবাই একসাথে আপুর দিকে তাকাতেই অভ্র ভাইয়ের গায়ে ঢলে পড়লো আপু। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, চোখ-মুখ ফ্যাকাশে। আপু ডান হাতটা পেটের উপর রেখে বামহাতে অভ্র ভাইয়ার কলার আকঁড়ে ধরে বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে বলে উঠলো,

— প্রচুর ব্যাথা করছে। আমায় হসপিটালে নিয়ে চলো অভ্র। আমি আর পারছি না।
আপু কথাটা বলে শেষ করতেই দৌড়ে নিচে নেমে গেলেন শুভ্র। সাহেল ভাইয়া ফোন লাগালেন হসপিটালে, শেষ মুহূর্তে ডক্টর সঙ্কট কারোরই কাম্য নয়। অভ্র ভাইয়া হতভম্ব হয়ে বসে আছেন। কিছুই যেন তার মাথায় ঢুকছে না। কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থেকে গাড়ির হর্ণ শুনে ওঠে দাঁড়ালেন উনি। আপুকে কোলে তোলে নিয়ে সিঁড়ির দিকে দৌঁড় লাগালেন। সাহেল ভাইয়া ওদের পিছু নিয়ে সিঁড়িঘর পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েও ঘুরে এসে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। নাবিল আপুর মাথায় হাতরেখে শীতল গলায় বললেন,

— সাবধানে থেকো। তোমাকে তাড়াহুড়ো করে হসপিটালে যেতে হবে না, আমরা তো আছি।
কথাটা বলে আমার দিকে তাকালেন উনি। ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি। সাহেল ভাইয়া আমার দিকে তাকাতেই ঘোর কাটলো আমার। ” আপু অসুস্থ ” কথাটাও চট করে আঘাত হানলো মাথায়। সাহেল ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— রোদ তুমি যে…
এরপরের শব্দটা আমার কানে পৌঁছানোর সুযোগ না দিয়েই নিচের দিকে ছুঁটে গেলাম আমি। মাথায় তখন একটা কথায় ছুঁটে চলেছে ক্রমাগত, “আপু অসুস্থ “, “আপু অসুস্থ”

আমি, অভ্র ভাইয়া আর আপু বসে আছি পেছনের সিটে। আপুর মাথা এলিয়ে আছে অভ্র ভাইয়ার কাঁধে। ক্লান্ত আপু নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে, চাপা আর্তনাদ করে চলেছে যেন এই আর্তনাদ করার শক্তিটুকুও তার শরীরে অবশিষ্ট নেই। অভ্র ভাইয়া ঘেমে চিপচিপে,কপাল বেয়ে ঝরে পড়ছে ঘামের ধারা। একহাতে আপুকে জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে বারবার কপালের ঘাম মুছছেন উনি। সামনের সিটে বসে আছেন সাহেল ভাইয়া আর শুভ্র। গাড়ি ঝড়ের গতিতে ছুঁটছে। সাহেল ভাইয়া একবার ফোনে হসপিটালে কল করছেন তো একবার শুভ্রকে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলছেন। হসপিটালের কাছাকাছি আসতেই শ্বাস কষ্টের সমস্যা শুরু হয়ে গেল আপুর। টেনে টেনে শ্বাস নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

— অভ্র? আমার মনে হচ্ছে এটা ওয়ান ওয়ে জার্নি। আমি হয়তো আর ফিরবো না।
আপুর কথায় অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন অভ্র ভাইয়া। যথাসম্ভব শান্ত স্বরে বলে উঠলেন-
— কিসব বলছো,রুহি? চুপ করো। এই টাইমে সব মেয়েদেরই এমনটা মনে হয়। ইটস্ নরমাল। জাস্ট টেক আ ডিপ ব্রেথ। এভ্রিথিং উইল বি ওকে!
— যদি সব ঠিক না হয়। যদি সব অন্যরকম হয়ে যায়, তাহলে তুমি আবারও বিয়ে করতে পারো অভ্র। আমার কোনো সমস্যা নেই তবে প্লিজ একটা রিকুয়েষ্ট রাখবে?
— রুহি! তোমাকে চুপ থাকতে বলেছি। না তোমার কিছু হবে না আমি অন্যকাউকে বিয়ে করবো৷ বাচ্চাদের মতো কথা কেনো বলছো?
— আগে বলো রাখবে। রিকুয়েস্ট! বলো। আমার বেবিটাকে আমার বোনের কাছে দিয়ে তারপর বিয়ে করো। “সৎ মা”- এর ছায়াটা ওর ওপর পড়তে দিও না। আমি জজানি র রোদ ওকে নিজের বাচ্চার মতোই ভালোবাসবে। রেখো?

অভ্র ভাইয়া জোরে শ্বাস নিলেন। কনুই দিয়ে মুখের উপরের ঘামটা মুছে নিয়ে ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
— হবে না। কিচ্ছু হবে না তোমার। এসব বলো না, আমার ভালো লাগছে না। প্লিজ রুহি! স্টপ। দোহাই তোমার।
অভ্র ভাইয়ার কথার জবাব দেওয়ার জন্য নিজেকে জাগিয়ে রাখতে পারলো না আপু। হসপিটালে পৌঁছানোর পাঁচ মিনিট আগেই জ্ঞান হারালো ও। ভয়ে হাত-পা শক্ত হয়ে আসছে আমার। সবার মুখেই অজানা আতঙ্কের ছাপ। রাত ২ টা ৩০ মিনিটে হসপিটালে গিয়ে পৌঁছালাম আমরা। গাড়ি থেকে নামতেই স্ট্রেচারে করে অটি-তে নেওয়া হলো আপুকে। বাড়ির সবাই ধীরে ধীরে হসপিটালে ভীর জমালেন। অভ্র ভাইয়া করিডোরের এককোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছেন। উনার ঘামে সিক্ত শরীর যে অল্প অল্প কাঁপছে তা দূর থেকেও বুঝতে পারছি আমি। হঠাৎ-ই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো আমার। ১১ টায় স্যালাইন খুলে ১২ টায় সবাই মিলে ছাদে বসেছিলাম আর এখন প্রায় ৩ টা বাজে….আমার শরীরটাও যে দুর্বল তা এবার জানান দিয়ে চলেছে আমার ব্রেন। ডান হাতের তালু দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে বামপাশে তাকালাম। করিডোরের একপাশের চেয়ারে সাহেল ভাইয়া আর শুভ্র মাথা নিচু করে বসে আছেন। আমি ধীর পায়ে হেঁটে শুভ্রর পাশে বসে পড়লাম। আমি বসতেই চোখ তুলে তাকালেন শুভ্র। মৃদু কন্ঠে বললেন,

— খারাপ লাগছে?
— নাহ। একটু ক্লান্ত লাগছিলো জাস্ট। আচ্ছা? একটা সিজারে কতক্ষণ সময় লাগে? প্রায় আধাঘন্টা হয়ে গিয়েছে, তাই না?
শুভ্র জবাব দিলো না। সোজা হয়ে বসে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে আমার মাথাটা কাঁধে টেনে নিয়ে বললেন,
— রেস্ট নাও। টেনশন করো না। এভ্রিথিং উইল বি ফাইন।
সবাইকে টেনশনের ব্লান্ডারে ব্লেন্ড করে বেশ কিছুক্ষণ পর বাচ্চার তীক্ষ চিৎকার কানে এলো। এই প্রথম বাচ্চাদের চিৎকার এতোটা আরামদায়ক আর আনন্দের মনে হলো আমার কাছে। অটি-র লাইট অফ হলো। একটা তরুন হাসি-খুশি ডক্টর বেরিয়ে এসে মাস্ক খুলতে খুলতে হাসি মুখেই বললেন,

— আমাদের মিষ্টি কোথায়?
অভ্র ভাইয়া জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে নার্ভাস গলায় বললেন,
— ডক্টর! আমার ওয়াইফ এন্ড বেবি?
— এভ্রিথিং ইজ ওকে মিষ্টার আহমেদ। আপনি দু’দুটো কিউট ছেলের বাবা হয়ে গেছেন।
— রুহি!
— উনিও ঠিক আছেন। ব্যাথা সহ্য করতে না পারায় সেন্স হারিয়েছিলেন। একটু শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে বাট সেটা তেমন সিরিয়াস নয়। উনি জলদি ঠিক হয়ে যাবেন। কিছুক্ষণ পর কেবিনে শিফট করা হবে। তখনই দেখা করতে পারবেন আপনারা।
ডক্টর আবারও হাসলেন। উনার হাসি দেখে মনে হচ্ছে উনার সামনে মজার কোনো ফ্যামিলি শো চলছে যা দেখে উনি দারুন আনন্দ পাচ্ছেন। আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকেই লাফিয়ে উঠলাম। আপুর জমজ বাবু হয়েছে…কথাটা ভাবতেই নাচতে ইচ্ছে করছে আমার। শুভ্র আর সাহেল ভাইয়া তো রীতিমতো হৈ-হুল্লোড় শুরু করে দিয়েছেন। মামু-মামানি, আব্বু-আম্মু সবার মুখই খুশিতে উজ্জল, একসাথে দু’নাতি পেয়ে গেলেন বলে কথা। উফফ! ডাবল সেলিব্রেশন!!

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৬৩+৬৪

হসপিটালে সাতদিন থাকার পর বাড়িতে আনা হয়েছে ওদের। সারা বাড়িটা খুশির আমেজে ভরে উঠেছে। আমি সুযোগ পেলেই গালে হাত দিয়ে বাচ্চাদুটোর সামনে বসে থাকছি। দু’জনেই একদম সেইম। গোলাপী চিকন ঠোঁট আর কেমন লালচে ফরসা গায়ের রং। ছোট ছোট হাত-পাগুলো ক্রমাগত ছুঁড়াছুঁড়ি করে চলেছে আর দন্তহীন মুখে হেসে চলেছে। আবার কখনো বা একসাথে গলা মিলিয়ে কেঁদে উঠছে। আমি আর চিত্রা মিলে নামও ঠিক করে ফেলেছি ওদের। একজনের নাম রাখা হয়েছে, রাফসান আহমেদ আদ্র। অন্যজনের নাম রাখা হয়েছে আরাফ আহমেদ রোদ্র। কিন্তু সমস্যা হলো, কে যে আদ্র আর কে যে রোদ্র তাই নিয়ে বিশাল কনফিউশান! মনে হচ্ছে কোমরে দুই ধরনের সুঁতো বেঁধে চিন্হ করতে হবে এবার।

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৬৭+৬৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here