তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ১৮
ভূমিকা তালুকদার
শাড়িটা? শাড়িটা খুলতেতো সমস্যা নেই, তবে এত-হেবি শাড়ি পড়েই তো আমারই দম বন্ধ হয়ে আসছে কিন্তু!
এ শাড়ি খুলে আমি পড়বটা কি? খুব তো আমায় শাসিয়ে গেলো, অথচ বলে তো গেলেন না যে শাড়ি খুলে আমি পড়বটা কি? আজব, ধ্যাঁত।
নিজের পড়নের শাড়িটা দেখছে আবার বেডরুমের চারদিকে পাইচারি করেই চলেছে লিয়ানা। সত্যিই তো সে এখন এ শাড়ি খোলে পড়বেই বা কি? ভেবেই ভেবেই রুমের এপাশ ওপাশ তাকাচ্ছে আর মাথা চুলকোচ্ছে। তখনই লিয়ানার চোখে পড়ে দেয়ালের এক কোণে বড়সড় কালো রঙের একটা ওয়ার্ডড্রপ ওয়ারড্রপ বললেও ভুল হবে দেয়ালের সাথে একবারেই অ্যাড- জাস্ট করা। শুধু দরজাটাই দেখা যাচ্ছে দেখই বুঝ যায় এটা অ্যাডজাস্ট কেবিনেট টাইপ। লিয়ানা এবার এগিয়ে যায় ওটার দিকে গিয়েই হাতল ধরে টান দিয়ে খুলে ফেলতেই চোখে পড়ে পরি সারি সারি গুছানো কালো সাদা রংয়ের স্যুট আর প্যান্ট।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সব একই রকম আলাদা করার কোন সব একি রকম উপায় নেই। একটার পর আরেকটা তাক উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে লাগলো লিয়ানা কোনো টি-শার্ট বা এমন টাইপের কিছু আছে কিনা যা পরে আপাতত থাকতে পারবে। দেখতে দেখতে পুরো কেবিনেট দেখা শেষ কিছুই পেলো না। শেষের তাক আবার একটু উল্টিয়ে পাল্টে দেখতেই চোখ আটকে গেলো কোনায় পড়ে থাকা একটা টিশার্ট এর দিকে কালো রঙ্গা একটা গেঞ্জি।দেখেই মনে হচ্ছিলো বেশ পুরনো তবে একদম নতুন কিনে এক দুবার পরে হয়তোবা আর পড়া হয়নি। এখন তা যাই হউক লিয়ানা এবার হাফ ছেড়ে বাঁচে থাকে “এটাই আপাতত ভরসা” তবে গেঞ্জি তো পেলো তবে নিচে কি পড়বে সে?
এভাবে শুধু টি-শার্ট পড়ে! না না ছি! ছি!
আবার একটু কেবিনেট টায় চোখ বুলাতে লাগলো তবে এবার সেন্টু গেঞ্জিও পেলো সাথে ট্রাউজার। ট্রাউজারটা বেশ বড় তার পড়নে হবে কিনা জানা নেই তবে কিছু করার নেই কোনো রকম পড়তে পারলেই হয়। তারপর লিয়ানা এগিয়ে যায় বাথরুমে এর দিকে সেখানে শাওয়ার শেষ করে টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে নেয়।তবে সে এবার খুবই অস্বস্তিতে পড়ে যায় এরকম দামড়া লম্বা লোকের জামা আর মত একটুখানি মেয়ের পড়নে ছোট হবে এটাই স্বাভাবিক টি-শার্টটা একদমই লিয়ানার হাটু ছুঁয়ে গিয়েছে। তবে এখন আর কি করার এভাবেই বাথরুম থেকে বেরিয়ে পড়ে সে হেয়ার ড্রায়ারও নেই যে চুলগুলো একটুখানি শুকাবে। চুল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে চলেছে। খুব রাগ হলো জায়ান খানের উপর উফ! জায়ান ভাই নাকি স্বামী কি বলবে কনফিউজ সে এখনো ।
বজ্জাত লোক। মন চাচ্ছে একদম চিবিয়ে খেয়ে নিতে। কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে তাকে এভাবে নিচে যাবে কি করে! নাক ফুসতে ফুসতে বিরক্তি ভরা মুখ নিয়ে দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকে তখনই লিয়ানার চোখ পড়ে ডাইনিং স্পেসের দিকে তবে সেখানে শুধু জায়ান আর মিসেস হান ছিলেন না লিয়ানার দৃষ্টিতে আরো নতুন অপরিচিত মুখ ভেসে ওঠে। দুটো পুরুষ আরো দুটো মহিলা। ছেলেগুলো না হয় জায়ানের বন্ধু তবে দুটো মেয়ে মানুষগুলো আবার কে?? লিয়ানা কিছুটা মুখ বাঁকিয়ে বাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেয়েগুলোকে পরক করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে। চোখগুলো সরু করে দেখতে লাগে মেয়েগুলোকে দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি লম্বা পড়নে শার্ট আর প্যান্ট। একজনকে দেখতে বুঝাই যাচ্ছিলো যে বিদেশি তবে অন্যজন দেশী নাকি বিদেশি বোঝার উপায় নেই বাঙালি বাঙালিও মনে হলো।
অন্যদিকে জায়ান শাওয়ার নিয়েই ডাইনিং এ সোফায় বসে কপির কাপে চুমুক বসাচ্ছে আর ল্যাপটপটা টাইপ করে যাচ্ছিলো। তবে জায়ানের চোখ হঠাৎ উপরে সিঁড়ির দিকে যেতেই দেখতে পায় লিয়ানা তার টি-শার্ট পরে নিচে নামছে । এভাবে লিয়ানার পড়নে নিজের টি শার্ট দেখে জায়ান বিষম খেয়ে কেশে ওঠে। গালগুলি লাল হয়ে যাচ্ছে তার। খুব করে চাইছে হাসি থামাতে তবে মুখে আঙ্গুল দিয়ে মিটমিট করে হেসে চলেছে। জায়ান খান তো কখনো এভাবে হাসে না তাকে এভাবে হাসতে দেখে মার্কো, নাদিয়া, এলেনা,এলেক্স সবাই হা করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে হঠাৎ কি এমন হলো জায়ান এভাবে হাসছে। তখনই তারা জায়ানকে ফলো করে পিছনে ফিরে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পায় লিয়ানা কিছুটা বিরক্তি ভঙ্গিতে টি-শার্ট নিচের দিকে টেনেটুনে নিচে নামছে নিজেকে সামলাতে সামলাতে। তবে এভাবে সবাইকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে থেকে কেমন লজ্জা লাগছে লিয়ানার, ভাবতে থাকে তাকে কি বেশি অদ্ভুত লাগছে?? নাকি এভাবে তাকানোর কি আছে আজব তো! লিয়ানা নামতেই নাদিয়া জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
is she Liyana?
হুম।
ও মাই গড।
নাদিয়া গিয়ে সরাসরি লিয়ানার হাত ধরে সামনে নিয়ে আসে তারপর তার থুতনিতে হাত দিয়ে বলে –
how pretty! তবে তোমাকে ছবিতে যেমনটা দেখেছিলাম তার থেকে আরও অনেক বেশি।
নাদিয়ার এমন কথা শুনে লিয়ানা কনফিউজড আর বিমরি মিশ্রিত কন্ঠে বলে-
আপনি কে? আর আমাকে কিভাবে চিনেন?? ছবি কই পেলেন? আমি তো কখনো ফেইসবুকে ছবি টবি আপলোড করি না। তাহলে?
লিয়ানার এমন প্রশ্নসূচক কথা শুনে নাদিয়া কিছুটা হাসে। তবে জায়ান লিয়ানার বোকার মত কথা শুনে কপালে আঙ্গুল ঠেকিয়ে ফিসফিস করে।
আস্তে গধোর্প!
লিয়ানাকে দেখে এলেক্স এবার জায়ানের কাছে এসে দাঁড়ায় তারপর জায়ানের কাঁধে হাত রেখে হেসে লিয়ানার দিকে তাকিয়ে-
very sweet girl and attractive। কিরে এ….. জায়ান তোর বর্ণনার থেকেও বেশি কিউট তোর এই পিচ্চি বউ।
এলেক্সের কথা শেষ না হতেই জায়ান চোখ বড় বড় করে এলেক্সের দিকে তাকিয়ে-
shut up! নজর দিবি না গলা কেটে ফেলবো একদম।
জায়ানের কথা শুনে এলেক্স বড় ঢুক গিলতে গিলতে নিজের গলায় হাত রেখে-
নো জায়ান।এভাবে বউয়ের জন্য নিজের বন্ধুকে মেরে ফেলার হুমকি দিতে পারিস না। আমি কি সেভাবে নজর দিয়েছি নাকি।..দেখ যদি বাংলা ভাষায় বলি তাহলে তোর ওয়াইফ তো আমার ভাবি হয় তাই না?
না! আম্মা বল।
What!আম্মা মিন মম্ ??
তোহ!
এলেক্স এভার করুন দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে,
এতো জেলাস, আর ওভার পজেসিব ছেলের জন্যে কি-না এখন তাকে তার মৃত মায়ের স্থানে একটা কচি,হাঁটুর বয়সের মেয়েকে বসাতে হবে।কি খারাপ দিন এলো তার।ওহহ গড।
অন্যদিকে নাদিয়া ধীরে ধীরে লিয়ানার কাঁধে হাত রেখে একটুখানি ঝুঁকে লিয়ানাকে জায়ানের কাছে নিয়ে আসে।
চলো লিয়ানা, তোমায় আজ আমাদের সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। জানো, এখানে আমরা সবাই জায়ানের বন্ধু। ও ফ্রান্সে আসার পর থেকেই। তারপর আমরা সবাই একসাথে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি, আর এখনো একসাথেই আছি।
আচ্ছা আমার নামটাই তো বলা হলো না। হাই! আমি নাদিয়া মেহরিন নূরী।
তারপর এলেক্স তার চুলগুললো পেছনে বেক ব্রাশ করে সোজা হয়ে বসে-
এন্ড আইএম এলেক্স আলবার্ট।
নাদিয়া এবার মার্কোর দিকে তাকাল, তার কণ্ঠে হালকা টিজ করার সুর,
—আর উনি হলেন মাহতাব বীন। কিন্তু আমরা সবাই ওকে মার্কো বলে ডাকি।নিক নেইম আর কি।
মার্কো সেই মুহূর্তে ধীর হাসি ছুড়ে দিলো লিয়ানার দিকে। কিছু বলল না।
লিয়ানার চোখ এবার সরে গেলো পাশের টেবিলে বসে থাকা মেয়েটির দিকে। ফর্সা চেহারা, বাদামী চুল ঢেউ খেলানোভাবে কাঁধে পড়ে আছে, অথচ সে কাউকে পাত্তা না দিয়ে কেবল টেবিলের ওপর রাখা কফির কাপটায় চুমুক দিয়ে চলেছে। কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, শুধু নিঃশব্দে চুমুক দিচ্ছে।
লিয়ানা ধীরে তার দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করল-
আর উনি?
ও হচ্ছে এলেনা এমিলিও।
তারপর লিয়ানা এলেক্স আর এলেনার দিকে তাকিয়ে নাদিয়াকে ইশারা করে –
ওনারা দু’জন কি এদেশের নাগরিক?? মানে ফ্রান্সের?
নদিয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে উত্তর দিলো-
হ্যাঁ এরা দু’জন ফ্রান্সেরই,তবে আমরাও সবাই এদেশের সিটিজেন শীপ প্রাপ্তই। তবে আমি বাংলাদেশীই আর মার্কো ইন্ডিয়ান।
বলতে বলতেই নাদিয়া এবার লিয়ানাকে সোফায় বসিয়ে দেয়।
তবে এগুলোই শুধু আমাদের পরিচয় নয়,আরেকটা পরিচয় আছে।
কোন পরিচয়?
আমরা সবাই বন্ধু বটেই। পাশাপাশি আমরা সবাই Criminal Law Team এর সদস্য। আর জায়ান আমাদের সিনিয়র । Ibonhart Law Firm চিনো? সেটা আমাদের আন্ডারেই।
লিয়ানার শকড, চোখ বিস্ফারিত।
কি বলছেন! আপনারা,ক্রিমিনাল লইয়ার?
Exactly।তুমি কি জানো? জায়ান শুধু ক্রিমিনাল লইয়ার নয়, সে ফ্রান্সের ক্রিমিনাল লইয়ারদের লিস্টে একেবারে শীর্ষে। আর আমাদের টিম The most powerful one।আচ্ছা সেসবে আর না যাই।
লিয়ানা এভার জায়ানের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বলে উঠে-
হাহ! আমি তো ভেবেছিলাম এই লোক আসলে এক নাম্বারের সন্ত্রাসী।
লিয়ানার এ কথা বলা মাত্রই এলেক্স মুখ বন্ধ করেই হাসে, জায়ানের ভয়ে আওয়াজও করতে পারছে না।
তোমার হাজব্যান্ড সন্ত্রাসী না ঠিকি, তবে সন্ত্রাসীদের পেছনে লাল বাত্তি জ্বালায়। এই আর কি।
সবি ঠিক আছে কিন্তু উনি,উনি নিজের পরিবার থেকেও সবকিছু লুকিয়ে রেখেছেন কেন??। জানেন আপনারা? আমরা কিছুই জানতাম না ওনার ব্যাপারে। কেন উনি এমন করেন? নিজের পরিবারের সঙ্গে এত নির্দয় কি করে কেউ হতে পারে।
তার শেষ কথা রুমজুড়ে নীরবতা ফেলে দেয়। জায়ানের কানে যেতেই, তার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে হঠাৎ ঠাস্ করে সামনে রাখা ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়। শব্দে সবার বুক কেঁপে ওঠে।
Enough! নাদিয়া। এই বায়োডাটা দেওয়া বন্ধ কর। এত কিছু জেনে কি করবে? জানার হলে এমনিতেই জানতে পারবে।মাইকিং করতে হবে না তোকে।
জয়ান এবার বড় বড় পা ফেলে ওপরের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকে।
হঠাৎ থেমে পিছন ফিরে বলে ওঠে—
মিসেস হান।
রান্নাঘর থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে আসে মিসেস হান।
জি স্যার…
জায়ান হুকুমের সুরে বলে—
আমাদের খাবারগুলো ওপরে দিয়ে আসবেন।
তারপর আবার ঠান্ডা চোখে মার্কো আার এলেক্সের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
মার্কো, এলেক্স… তোরা আমার সাথে ওপরে চল। দরকারি কথা আছে।
জায়ানের কথা শেষ হওয়ার আগেই মার্কো আর এলেক্স দ্রুত তার পেছন পেছন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকে।ওপাশ থেকে সবকিছু চুপচাপ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে লিয়ান তারপর ঘুরে মুখ বেঁকিয়ে বলে-
দেখেছো নূরী আপু? কীভাবে কথা বলে।! কথায় কথায় রেগে যায়! এমন টক্কর স্বভাবের লোকের সাথে আমি কেমন করে থাকবো বলো তো?
লিয়ানা এবার ঠোঁট উল্টিয়ে নাদিয়ার দিকে তাকায়।
উনি যাই হোক না কেন, এক নম্বরের বজ্জাত লোক। আপনারা তো জানেনই না সেদিন বিয়েতে কেমন কাণ্ড করেছিলো! ভাবলেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে আমার। এমন উন্মাদামী কখনোই ভালো মানুষের লক্ষণ হতে পারে??
এত বছর পরে দেশে গিয়ে হঠাৎ করেই কাউকে কিছু না বলে আবার বাড়ি ছেড়ে উধাও হয়ে গেলেন, কতো ফোন করেছে সবাই। আমিও.. কিন্তুু একটাও ধরেননি।… সব অফ করে রেখেছিলেন। উনি শুধু নিজের স্বার্থটাই বোঝেন। স্বার্থপর লোক! তার পর নিজের বাড়ির সব সম্মান শেষ করে আমাকে বিয়ে করলো। বিয়ে করার এত শখ থাকলে আগে করলো না কেন? নিজের বাড়ির সম্মান নষ্ট করে কীসের আনন্দ পেলো বলো তো…?
লিয়ানার চোখ এ সময় ঝাপসা হয়ে চোখের কোনে জল জমতে থাকে
নাদিয়াও মনোযোগ দিয়ে লিয়ানার সব কথা শুনছিলো,ওরা তো সবই জানে… এখন কিভাবে এই মেয়েটাকে বোঝাবে?সত্যি বলতে, জায়ান ছাড়া লিয়ানাকে কেউ বোঝাতে পারবে না।
তবুও নাদিয়া নরম স্বরে বলল—
দেখো লিয়ানা, তুমি যা…
কথাটা শেষ হবার আগেই হঠাৎ চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ায় এলেনা!
চোখ লাল, গলার স্বর কাঁপছে রাগে—
HOW DARE YOU??
বলেই তীব্র ভঙ্গিতে সামনে এগিয়ে আসে লিয়ানার দিকে।
মুখে ক্ষোভের ঝড়।
মুখ দিয়ে যা খুশি তাই বলছো তুমি…!! এই মেয়ে!! তুমি কি একবারও ভেবেছো জায়ান গত দুই মাস কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছে? জায়ান কোনোদিনই স্বার্থপর ছিলো না! তুমি কতটুকু জানো?? বলো আমাকে!! উত্তর দাও…!!!
টেবিলের চারপাশটা মুহূর্তেই জমে যায়।
এলেনার চোখ রক্তবর্ণ, গলায় বজ্রপাত—
জায়ানের জীবনে যদি কোনো অভিশাপ থেকে থাকে… সেটা আর কেউ নয়, সেটা শুধু তুমি, মিসেস লিয়ানা খান. just GO TO HELL!!
এলেনার এমন মুখের ওপর কাটা-কাটা কষ্টদায়ক কথা লিয়ানা সহ্য করতে পারলো না।কথাগুলো বোঝার আগেই চোখ বেয়ে টলটলে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।এ মেয়ে তার সাথে এমন বাজে ব্যবহার কেন করছে? সুন্দরভাবে তো বলতেই পারতো…সে কী করেছে? তারই বা দোষ কোথায়…?
অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে লিয়ানা ঘুরে তাকাল নাদিয়ার দিকে।
নূরী আপু… তুমি বলবে? আমার দোষটা কোথায়…?
নাদিয়া এবার সরাসরি এলেনার দিকে তাকালো। কণ্ঠস্বর ঠান্ডা কিন্তু ধারালো।
এলেনা, খুব বেশি হয়ে গেল না? যা এখান থেকে।
এখানে থাকারই বা কোনো ইচ্ছে আমার নেই।
নাদিয়া তখন লিয়ানার চোখের জল নিজের হাত দিয়ে মুছে দিলো, গালে আলতো করে হাত রাখলো।
না! এখানে তোমার একটুও দোষ নেই। ওর কথা মাথা থেকে ফেলে দাও। আমি বলছি তো, আর কাঁদতে হবে না। জায়ান যদি দেখে তবে এখন আরও বড় সিনক্রিয়েট তৈরি হবে। তুমি কি সেটা চাও…?
লিয়ানা ভাঙা গলায় বলে—
না… কিন্তু… উনি যা বললেন, গত দুই মাসে… কি যেন হয়েছে বললেন… আমি তো বুঝতে পারিনি।
নাদিয়া এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে গেল কিছুক্ষণ।
তারপর ধীরে, ভারী কণ্ঠে বলল—
গত দুই মাসে আমাদের উপর, বিশেষ করে জায়ানের উপর, যা ঝড় বয়ে গিয়েছে… সেটা তুমি ভাবতেও পারবে না।
লিয়ানার শ্বাস আটকে গেল।
কী হয়েছে ওনার ? বলো না, প্লিজ।
নাদিয়া মৃদু মাথা নাড়ল।
দুই মাস আগে জরুরি এক ক্রিমিনাল কেসের কারণে জায়ানকে ফ্রান্সে আসতে হয়েছিলো। কেসটা আমরা জিতে গিয়েছিলাম ঠিকই,কিন্তু তারপর…
লিয়ানার চোখ বিস্ফোরিত হতে লাগলো।
তারপর কী…? বলো!
নাদিয়ার ঠোঁট কেঁপে উঠলো।
তারপর একটা ভয়ঙ্কর অপ্রত্যাশিত গাড়ি দুর্ঘটনা হয়েছিলো জায়ানের।
রাস্তার মাঝে ছিন্নভিন্ন গাড়ির দৃশ্য, সাইরেনের শব্দ, অন্ধকার রাত ভেদ করে নীল আর লাল লাইট ঝলকাচ্ছে।সব কিছু আমাদের চোখের সামনে।
জায়ানকে বাঁচানো তখন প্রায় অসম্ভব হয়ে গিয়েছিলো।ইউরোপের শ্রেষ্ঠ নামীদামী ডাক্তারদের আনা হয়েছিল ওর জন্য। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছিলো না। ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলেও জয়ান চলে গেল কোমাতে।
লিয়ানার চোখের জল থেমে গেছে… ঠোঁট কাঁপছে।
– কি…? কোমা…?
পুরো ডাইনিং স্পেস নিস্তব্ধ হয়ে যায়। শুধু ঘড়ির টিকটিক শব্দ…নাদিয়ার শেষ কথাগুলো যেন বজ্রপাতের মতো নেমে এলো লিয়ানার মাথায়।
ডাক্তাররাও হাল ছেড়ে দিয়েছিল,বলেছিলো ওপরওয়ালা চাইলে তবেই বাঁচবে।
এই বাক্যটা শুনতেই লিয়ানা আর বসে থাকতে পারল না।চোখে অশ্রু জমে গেছে, বুকটা কেঁপে উঠছে ভেতর থেকে।সে আচমকাই নাদিয়াকে সরিয়ে এক দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলো।পায়ের শব্দ করিডরে প্রতিধ্বনির মতো বাজছে।লিয়ানার কাঁপা কাঁপা পা, সিঁড়ি বেয়ে ছুটে যাওয়া, দম ফুরিয়ে আসছে যেনো।ওঠার সাথে সাথেই প্রথমে ঢুকে পড়ল বেডরুমে।
কিন্তু, জয়ান নেই।সে একে একে সব রুমের দরজা ঠেলে ঢুকছে।
চোখ বেয়ে জল নামছে অথচ তার চোখ জোড়া খুঁজ চলছে জায়ানকে।
শেষমেশ এলেক্সের রুমের কাছে এসে থমকে দাঁড়ালো।দরজাটা আধখোলা… ভেতরে জায়ান বসে আছে।মার্কো আর এলেক্স পাশে, মুখ গম্ভীর, যেন গুরুতর কোনো আলোচনার মাঝে।লিয়ানা একটুও না ভেবে ভেতরে ঢুকে সরাসরি জায়ানের কাছে গেল।
কোনো ভয়, কোনো দ্বিধা নেই—
সরাসরি জায়ানের হাত ধরে, পিঠ আর বাহুতে কাঁপতে কাঁপতে হাত বুলাতে লাগলো।
দেখি তো… কোথায় কোথায় আঘাত পেয়েছেন…?? দেখান তো…!!
তার এভাবে ভেঙে পড়া কাঁদতে দেখে এলেক্স আর মার্কো হঠাৎ একে অপরের দিকে তাকালো।চোখের ইশারায় তারা দু’জনেই উঠে দাঁড়ালো।
চুপচাপ দরজা টেনে দিল,রুমটা এখন শুধু তাদের দুজনের।জায়ান এবার
আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়,একটানে লিয়ানার হাত চেপে ধরে, কিছুক্ষণের জন্য চোখের গভীরে তাকিয়ে থাকে।
এক সেকেন্ড… দুই সেকেন্ড… তিন সেকেন্ড…
মাঝখানে শুধু নিস্তব্ধতা।
তারপর,ল
কি করছিস?? এইভাবে পাগলের মতো কেন করছিস??
নিজের ধ্বংস ডেকে আনতে চাইছি?
কিন্তু লিয়ানা যেনো কোনো কথা শুনছেই না।ওর চোখ শুধু জায়ানের দিকে,
শুধু আমাকে দেখতে দিন, শুধু দেখতে দিন।কোথায় আঘাত পেয়েছেন।
লিয়ানার এমন পাগলামি দেখে জায়ান হঠাৎ চোখ বন্ধ করে ফেলে।পরের মুহূর্তেই এক ঝটকায় লিয়ানার কোমর জড়িয়ে ধরে টেনে আনে। নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে পাশের ঠান্ডা দেওয়ালে ঠেলে দেয়।
দেওয়ালের ঠাণ্ডা স্পর্শে লিয়ানার শরীর কেঁপে উঠে।
শ্বাস দ্রুত হয়ে যাচ্ছে, কাঁপা কাঁপা চোখ জায়ানের চোখে আটকে আছে।রুমটা নিস্তব্ধ।বাহিরের হালকা বাতাস পর্দা উড়িয়ে দিচ্ছে, অথচ ভেতরে শ্বাসের ভারী শব্দে চারদিক গুমোট।
জায়ান লিয়ানার একেবারে সামনে দাঁড়ানো।দু’হাত লিয়ানার দু’পাশে, দেওয়ালে চেপে ধরে রেখেছে।তার বিশাল শরীরের ছায়া পুরোটা ঢেকে ফেলেছে লিয়ানাকে।
জায়ান মুখটা ঝুঁকিয়ে একেবারে কাছে নিয়ে এলো লিয়ানার।
গভীর, কাঁপা কণ্ঠে কানে ফিসফিস করে বলে,
ভয় পাচ্ছিস না? এত সাহস বাড়লো কবে থেকে??
লিয়ানা কেঁপে উঠল, চোখের জল,ভয়,অসস্তি গিলে ফেলে সে জায়ানের পায়ের আঙুল ভর করে উঠে দাঁড়ালো।এক মুহূর্তে তার মুখ ছুঁয়ে দিলো জায়ানের গালের কাছে।
আমায় ক্ষমা করে দিন।
কণ্ঠটা ভেঙে যাচ্ছিল যেনো।
তারপরও কোনো দ্বিধা না করে জায়ানের শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলো
কাঁপা কাঁপা আঙুলে কাপড় সরিয়ে দেখতে চাইছে, কোথায় কোথায় আঘাত লেগেছিলো।
প্রতিটি স্পর্শে জায়ানের শরীর কেঁপে উঠছে ঠিকি তবে মুখে তা ফুটে উঠেনি।
যেন ছুরির ধার লাগছে বুকের ভেতরে,কাটা বিধছে।হঠাৎই জায়ান শক্ত গলায় গর্জে উঠলো, হাতগুলো আরো জোরে দেওয়ালে চেপে ধরলো
তোকে ছিঁড়ে ফেলবো আমি!
তোকে আমি ছুঁবো,তুই কেনো, বারবার এভাবে আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিস??
আমাকে সিডিউস করার চেষ্টা করছিস নাকি??
দেখ মুড আছে, কিন্তু সময় নেই আপাতত।
তারপরও লিয়ানা থামলো না।
আমায় প্লিজ,একবার দেখতে দিন, তারপর যা বলবেন, সব মানবো,শুনবো।
শুধু একবার… শুধু একবার।
জায়ান থমকে দাঁড়ালো।তার চোখের দৃষ্টি লিয়ানার চোখে আটকে গেল।
তারপর নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে-
সব শুনবি??
লিয়ানা জায়ানের চোখে চোখ রেখে, নিঃশ্বাস গিলে মাথা নাড়লো-
হুম।
জায়ান ধীরে ধীরে শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলো। প্রথম বোতাম, তারপর দ্বিতীয়,যেন একেকটা বোতাম খোলার সঙ্গে সঙ্গে লুকিয়ে থাকা কোনো নিষিদ্ধতা উন্মোচিত হচ্ছে। আলো-আঁধারি রুমে ঝুলে থাকা ল্যাম্পশেড থেকে আলো গড়িয়ে পড়ছে তার গায়ে।শার্টের কাপড় একটু একটু করে সরে যেতে না যেতেই প্রকাশ পেলো জায়ানের ফর্সা বুকের ওপর লম্বা তির্যক দাগ,যেনো ধারালো ব্লেড টেনে দেওয়া হয়েছে বুকের মাঝ বরাবর। দাগের কিনারা এখনও ফ্যাকাশে লালচে, পুরনো অথচ ভোলার মতো নয়। তার পাঁজরের ডানপাশে ছড়িয়ে আছে গাঢ় নীলচে দাগ, যা একসময় হাড় ভাঙার সাক্ষী।বোতামগুলো খুলতে খুলতে যখন শার্ট পুরোপুরি আলগা হলো, তখন আলোয় স্পষ্ট হয়ে উঠল পিঠের গভীর ক্ষতচিহ্ন,দুই কাঁধের মাঝ বরাবর এক বিকৃত রেখা, যেন আগুনে পোড়া চামড়া জমাট বেঁধে আছে। সেই দাগগুলো শুধু শরীরে নয়, তার অস্তিত্বেই খোদাই হয়ে আছে।
এক মুহূর্তের জন্য রুমটা নিস্তব্ধ হয়ে পড়লো সাথে লিয়ানাও। লিয়ানার মনে হচ্ছিলো বুক ফেটে হৃদপিণ্ড বেরিয়ে যাবে,এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য সহ্য করার মতো শক্তি তার নেই। সে আর সামলাতে পারলো না নিজেকে। হঠাৎ করেই ঝাঁপিয়ে পড়লো জায়ানের বুকে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। চোখের জলে ভিজে যাচ্ছিলো জায়ানের বুক। গলায় শব্দ আটকে যাচ্ছিলো, তবু নিঃশব্দ কান্নার ঝড়ে কেঁপে উঠছিল লিয়ানা। যেন শব্দহীন আর্তনাদ।এদিকে জায়ান দাঁত চেপে, মুঠি শক্ত করে সবকিছু দমিয়ে রাখছিলো। দাগগুলোতে কোনো যন্ত্রণা ছিল না, কিন্তু লিয়ানার এভাবে কাঁদা, তার বুকের ভেতর মাথা গুঁজে ভেঙে পড়া,ক্ষতচিহ্নগুলোর আঘাত তার তেমন কোনো ব্যাথা অনুভুতো না হলেও লিয়ানার করা প্রতিটা স্পর্শ তার হৃদয়ে ঠিকি বড়সড় ভাবে আঘাত করেছে।এটা তাকে ভেতর থেকে অগ্নিগর্ভ যন্ত্রণায় দগ্ধ করছিলো। তবু নিজেকে কষ্টে আটকে রাখলো,নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে গেলো।
লিয়ানা যতই শক্ত করে ধরে থাকছিলো, জায়ান ততই অনুভব করছিলো বুকের ভেতরকার দহন বাড়ছে। শেষে আর সহ্য করতে না পেড়ে। হঠাৎ করেই তার হাত বাড়িয়ে দেয় লিয়ানার হাতগুলো শক্ত করে ধরে সরিয়ে দিলো নিজের থেকে। চোখে ঝড় জমে উঠেছে।এক ঝটকায় লিয়ানাকে নিজের সামনে টেনে নিলো আরো, লিয়ানার গলার কাছটা শক্ত করে চেপে ধরলো। তার চোখে সেই অন্ধকার ঝড়, গলায় গুমরে ওঠা দমবন্ধতা একটা দৃষ্টি যা বলে দিচ্ছিলো,
আমার দুর্বলতা হয়ে যাস না, তুইতো, আমার সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা।
তারপর মূহূ্তেই জায়ানের ঠোঁটের কোণে ধীরে ধীরে টেনে আনা একরকম বাঁকা হাসি, যেন ভেতরের থাকা পাথরের ন্যায় বস্তুটা অবশেষে কথা বলতে শিখেছে। কণ্ঠস্বর নীচু, ভারী, কিন্তু প্রতিটা শব্দ যেনো রুমে বাজতে থাকা বজ্রপাতের মতো-
যেদিন আমি তোকে চাইবো আমার মতো করে,সেদিন তুই না বলার সাহসও পাবি না।
হঠাৎ তার পদক্ষেপ এগিয়ে এলো, চোখের দৃষ্টি কেটে যাচ্ছে ব্লেডের মতো ধারালো হয়ে। সে যেন আর মানুষ নেই, এক অদৃশ্য শিকারি, আর তার সামনে শুধু বন্দি এক শ্বাসরুদ্ধ শিকার।
তোকে পালাতে দেবো না কোনোদিনও না, তোর দেহের প্রতিটা কোনা, প্রতিটা শিরা,উপশিরায় থাকবে আমার ছোঁয়ার দাগ আমার স্পর্শ, আমার দেয়া চিহ্ন।আমার ঠোঁটের প্রতিটা স্পর্শ তোকে ঘূর্ণিঝড়ের ন্যায় কাঁপিয়ে দিবে। আমার ছায়া থেকে তুই পালাতে পারবি না কোনোদিনও না।
কারণ তুই জানিস না আমি যা চাই, তা ছিনিয়ে নিই।
শেষ লাইনটা বেরোলো নিঃশ্বাসের সঙ্গে গলায় ভাঙা আগুন মিশিয়ে—যেন সতর্কবার্তা নয়, শপথ। চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। যেন সময়ও জমে গেছে শুধু তার এই অশুভ প্রতিজ্ঞার সাক্ষী হতে।
অন্যদিকে লিয়ানার কাঁপা ঠোঁট নড়ে ওঠে, কিন্তু কোনো শব্দ বের হয় না। জায়ান ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে লিয়ানার মুখের পাশের চুলের গোছা সরিয়ে দেয়। আঙুল ছুঁতেই তার শিরায় বিদ্যুতের শিহরণ বয়ে যায়। চোখে চোখ রেখে জায়ান ঝুঁকে আসে। এক মুহূর্তের জন্য সময় যেন থমকে দাঁড়ায়।
তারপর হঠাৎ,ঝড়ের মতো,সে লিয়ানার অধঁরে নিজের ওষ্ঠ,অধর চেপে ধরে। পৃথিবীর সব অস্থিরতা, সব ক্ষুধা, সব যন্ত্রণার এক বিস্ফোরণ ঘটে সেই চুম্বনে। লিয়ানা প্রথমে আঁতকে ওঠে, কিন্তু তারপর তার শরীর গলে যেতে থাকে সেই দমবন্ধ করা টানে। সে বুঝে যায়, পালানোর কোনো রাস্তা নেই,শুধু ডুবে যাওয়া আছে, জায়ান নামের ঝড়ের ভেতরে।কিন্তু জায়ানের আগ্রাসী চুম্বন ক্রমশ আরও গভীর হতে থাকে।তার ঠোঁটের আক্রমণে লিয়ানার ঠোঁট ব্যথায় কেঁপে ওঠে,একটা চাপা গোঙানি বেরিয়ে আসে। ঠিক সেই মুহূর্তেই জায়ান দাঁত দিয়ে লিয়ানার অধঁরে হালকা কামড় বসিয়ে দেয় ।
তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ১৭
ব্যথা আর আবেগের মিলনে লিয়ানার চোখ ভিজে ওঠে, শরীর কেঁপে ওঠে,যেন ভয়, বেদনা আর এক অচেনা আকর্ষণ মিলেমিশে গিয়ে তাকে সম্পূর্ণভাবে বন্দী করে ফেলেছে।তার হাত জায়ানের শার্টের ওপর আঁকড়ে ধরে, বুকের ভেতর আগুন জ্বলে ওঠে। জায়ান যেনো প্রতিটি সেকেন্ডে তাকে নিজের করে নিচ্ছেঅধিকার, উন্মত্ততায়।
সম্পূর্ণ আলোয় ভিজে থাকা ঘরে দুজনের ছায়া মিশে যায় একাকার। বাইরে নীরবতা ভাঙে না, শুধু ভেতরে তীব্র নিশ্বাস আর হৃদস্পন্দনের শব্দ প্রতিধ্বনি তোলে,যেনো আকাশ-পাতাল সাক্ষী হয়ে আছে তাদের এই নিষিদ্ধ অথচ অনিবার্য প্রেমের সূচনা।
