তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২৮

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২৮
ভূমিকা তালুকদার

মধ্যাহ্নের শুরুতে সূর্যের আলো তখন একেবারে লম্বালম্বি ভাবে নেমে এসেছে। আল্পসের কুয়াশা-ঢাকা পাহাড়ি উপত্যকার বুক চিরে আলোর রেখা ছুরির মতো কেটে ফেলছে চারপাশের আবছা আবরণ। দূর থেকে মনে হয় পাহাড়ের চূড়াগুলো রুপোর আস্তরণে মোড়ানো।
বেড রুমে গ্লাসের ওয়াল এর একটা ওয়ার্ডরোব। লিয়ানা হাত বাড়িয়ে দরজাটা খোলার সাথে সাথেই সেন্সোর লাইট এ আলোকিত হয়ে যায় প্রতিটি শেলফ, যেনো গোপনে লুকিয়ে থাকা এক স্বপ্নলোক হঠাৎ তার চোখের সামনে উন্মুক্ত হলো। সারি সারি জামদানি শাড়ি,নীল, লাল, মধুবর্ণ, পান্না সবুজ,মখমলের মতো ঝুলে আছে।

অবাক দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে লিয়ানা এগিয়ে গেলো, আঙুলের ডগায় ছুঁয়ে নিলো একখানা হালকা গোলাপি জামদানি।এতো তাদের ঢাকাইয়া জামদানি।শাড়ির রঙের দীপ্তি আলোয় ঝিকমিক করে উঠল, আর সেই মুহূর্তে তার ঠোঁটে এক বিস্মিত হাসি খেলে গেলো।কিছুটা অবাকও হলো এসব তিনি আনলেনই বা কবে।একটা নারীর সাজগোজের জন্যে ঠিক যা যা দরকার সব কি সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা।এত সুন্দর করে সে নিজেও কোনোদিনও তার রুম তার কেবিনেট গুছায় নি।একটা পুরুষ মানুষের ধারা আধৌও কি তা সম্ভব। মেয়েদের জিনিসপত্রতে পছন্দ এতো ভালো হয় কীভাব।ভাবতেই ভাবতেই লিয়ানা মনে মনে হাসলো।
একটা লাইট কালারের ফ্লোরাল ড্রেস গায়ে জড়িয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

খোলা চুল সামলে মাথায় একটা হেয়ার ব্যান্ডানা বেধে নেয়। লিয়ানা অবচেতনে মাথা ঘুরিয়ে বিপরীত পাশে তাকাতেই হঠাৎ তার চোখ আটকে গেল। পুরো এক দেওয়ালজুড়ে সাজানো সারি সারি কাঁচের তাক, যেখানে ঝকঝকে বোতলের ভেতর বন্দি নামীদামী হাইয়ার ব্যান্ডের পারফিউমগুলো। শ্যানেল, ডিওর, ysl আরমানি থেকে শুরু করে প্রায় অনেক কালেকশন। যে কেউ দেখলে বুঝে যাবে জায়ান কেবল পারফিউমপ্রেমী নন, বরং একেবারে আসক্ত। কয়েক সেকেন্ড নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখে নিলো সুন্দর লাগছে কি না।

তারপর ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো।এতক্ষণে আসেপাশের সব কিছু মনোযোগ সহকারে ঘুরেঘুরে দেখতে থাকে। নিচের ডাইনিং স্পেসটা অদ্ভুত নিস্তব্ধ।নীরবতার মধ্যে শুধু ফিসফিস করে বাজছে দেয়াল ঘড়ির কাঁটার শব্দ। টেবিলের মাথায় জায়ান হেলান দিয়ে বসে আছে।একহাতে টেবিলের কাঁচে ভর করে ফোন স্ক্রল করছে, মুখে একটুও অভিব্যক্তি নেই।

লিয়ানা চারদিকে চোখ ঘুরাতে থাকে।একটু একটু করে হেঁটে হেঁটে দেখতে থাকে মেঝেতে সাদা-কালো মার্বেলের ছটা, উপরে ঝুলছে বিশাল এক ক্রিস্টাল চ্যান্ডেলিয়ার।দেয়ালে সাজানো আছে জায়ানের অর্জনগুলো। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আইন সংস্থা থেকে পাওয়া শীর্ষ criminal lawyer award,তবে সেখানে শুধু মিস্টার গ্রেট জায়ান লিখিতো, তাদের পারিবারিক “খান” টাইটেলটা নেই,লিয়ানার কাছে ব্যাপার টা মুটেও ভালো লাগলো না।মুখ খানা একটু মলিন হয়ে গেলো। কিছু পুরনো সার্টিফিকেট এ নজর পরে আর চকচকে গোল্ড প্লেটে’ড প্লাক। প্রতিটি শেলফে রাখা ট্রফি ঝলমল করছে চ্যান্ডেলিয়ারের আলোয়।

আরও চোখে পড়ে, দেয়ালের এক পাশে ফ্রেমে বাঁধানো ছবি।একটায় জায়ান দাঁড়িয়ে আছেন বিখ্যাত আইনজীবীদের সঙ্গে যাদের নাম আন্তর্জাতিক আইন অঙ্গনে কিংবদন্তি।আরেকটায় একটি গুরুগম্ভীর কোর্টরুমে, পাশে হাত মেলাচ্ছেন কোনো নামকরা জর্জের সঙ্গে।কয়েকটা ছবিতে আবার দেখা যায় জায়ানকে ইউরোপের বড় কনফারেন্সে বক্তব্য রাখতে, সামনের আসনে বসা বিদেশি সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিগন।এটাই শেষ নয়। শেলফের অন্য পাশে রয়েছে কয়েকটি দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহযোগ্য বস্তু পুরনো ফাউন্টেন পেন, আইনের বইয়ের ফাস্ট এডিসন আর একটি বিশেষ সিগনেচার গ্যাভেল (হাতুড়ি) যা তাকে উপহার দিয়েছিলো লন্ডনের এক হাই কোর্ট জাজ।

সারা প্যালেসজুড়ে সেই power aura।
লিয়ানা পা টিপে এগিয়ে এসে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ নামানো, কী বলবে বা করবে ঠিক বুঝতে পারছে না।
জায়ান ফোনের দিক থেকে চোখ না সরিয়েই গলা নামিয়ে প্রশ্ন করলো,
“কি? এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
লিয়ানা গলার স্বর খুঁজে পেল না, ছোট ছোট পা ফেলে আরও কাছে এলো।পেটের জমা কথাগুলো গিলে নিলো।মাইর খাওয়ার শখ নেই আর।মুখের ভেতর কেমন শূন্যতা,তবুও কিছু একটা ভেবে দু হাতে জামা খিচকে ধরে বললো।

“শুনুন না।”
জায়ান এক সেকেন্ড চুপ থেকে হালকা
“হুঁ”
লিয়ানা হাত কচলাতে কচলাতে তোতলালো,
“মানে”
জায়ান ভ্রু কুঁচকে এবার চোখ তুলে তাকালো,
“হুয়াট্’স রং উইথ ইউ? ইনিয়েবিনিয়ে কথা না বলে স্পষ্ট করে বল।”
লিয়ানা তখন একেবারে জায়ানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। ওর চোখের দৃষ্টি তীব্র হয়ে উঠলো, লিয়ানা আঁতকে উঠে বললো,

“এভাবে তাকাবেন না, প্লিজ… ভয় পাই।”
জায়ানের ঠোঁট সামান্য কেঁপে উঠে অদ্ভুতভাবে বাঁকা হাসিতে ফেটে পড়লো।চোখটা শীতল হলো কিছুটা।লিয়ানা কিছুক্ষণ স্কেন করে আওড়ালো,
“প্রীটি”
“কি?”

জায়ান এবার হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে হাতের উলটো পিঠ দিয়ে লিয়ানার মুখের পাশে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলো। ফিসফিস করে বললো,
“খিদে পেয়েছে, my pretty little babe?”
লিয়ানা চোখ নামিয়ে মৃদু স্বরে বললো,
হুম। কিন্তু আমি তো আপনার কথাই ভাবছিলাম। আমি তো কিছু রান্না করতে পারি না।
“কি পারিস??”
“গরম পানি ফুটাতে।হ্যাঁ একবার চা বানাতে গিয়েছিলাম হয়নি উল্টো হাত পুড়িয়ে ফেলেছিলাম। ”
কথাটায় জায়ান বেশ রেগে গেলো লিয়ানার হাত ধরে দেখতে লাগলো এপাশে ওপাশ।
“দেখি। হাতে লেগেছে মানে কি।কোন স্টুপিড তোকে রান্না করতে পাঠিয়েছে আমায় বল।আই ওইল কিল দেম”

জায়ান ফোঁসাতে থাকে।
লিয়ানা মনে মনে ভাবেছিলো, নিশ্চয়ই উনি রাগ করবেন।কেমন বউ রেঁধে খাওয়াতে পারবে না!কিন্তুু এতো দেখি মেঘ না চাইতেই জল।
“আরেএএ এমন কিছুই না।আমি নিজের জন্য বানাতে চেয়েছিলাম।”
“তারও দরকার নেই।”
“তাহলে কে করবে?? আপনার কি মনে হয় না, এত বড় বাড়ির জন্য একটা কেয়ারটেকার অন্তত একটা মেইড রাখা উচিত?”
জয়ানের কণ্ঠ তৎক্ষণাৎ কেটে গেলো।কপাল কুঁচকে লিয়ানার হাত শক্ত করে চেপে ধরে,
“না, উচিত নয়। এই বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি কারও নেই আর কোনওদিন কাউকে দেবও না। I hope you understand।”

বলেই জায়ান উঠে কিচেনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো। লিয়ানা পেছন পেছন গেলো।
“ওভেনে পিজ্জা বেক হতে দেখেই লিয়ানা মাথা নিচু করে দেখতে থাকে। জায়ান পোলাও এর সাথে ইয়া বড় বড় দুইটা লবস্টার ফ্রাই করে রেখেছে।খাবারগুলো খুলে খুলে দেখতে থাকে।”
“আপনি আর কি কি পারেন আমায় একটু বলবেন?? ”
জায়ান হাতে গ্লাবস লাগিয়ে ডিস ওয়াশ করতে করতে বলে।
“কি কি পারি না সেটা বলতে বললে, একটু ইজি হতো।”
“বুঝেছি অলরাউন্ডার এর ডিব্বা আপনি।তবে এভাবে উদোম হয়ে ঘুর ঘুর করবেন না।ঘরে যে একটা বউ আছে জানেন না।একটু তো লজ্জা করুন। ”
জায়ান পিছন ফিরে শক্ত হাতে তার কোমর জড়িয়ে ধরলো।
“আহ!”

জায়ান কোনো উত্তর দিলো না,অচঞ্চল শক্তিতে তুলে নিয়ে মার্বেল কাউন্টার টপ এর উপরে বসিয়ে দিলো। লিয়ানার দুই হাত স্বাভাবিকভাবেই জায়ানের কাঁধ আঁকড়ে ধরলো ভারসাম্য রক্ষার জন্য।জায়ান দু হাতে কাউন্টার টপ এ ভর দিয়ে লিয়ানার দিকে ঝুকে বলে,
“বউ আছে বলেইতো সমস্যা।দেখলেই বডির টেম্পারেচার হাই হয়ে শার্ট ভিজে যায়।তাই উদোম হয়ে আছি।ইভেন তুই চাইলে নু’ডস হয়েও ঘুরে বেড়াতে পারি।”
লিয়ানা লজ্জায় দু হাতে মুখ ঢেকে নেয়।
“ইশশশ।চুপ করুন।বেশরম এর বংশধর একটু তো লাগাম টানুন মুখে।”
জায়ান লিয়ানার গলায় মুখ ডুবিয়ে লিয়ানার দেহের ঘ্রাণ টেনে নিয়ে বলে,
“আর ইউ লস্ট বেবিগার্ল?? ”

লিয়ানা কাঁপা কাঁপা শরীর এ শিহরণ ঠেকিয়ে বলে উঠে।
“কি কি বললেন।ছিহ! এটা তো 365 days মুভির ঔই লুচু নায়কটার ডায়লগ।আপনি এসব দেখেন ছি! ”
জায়ান ঠোঁট কামড়িয়ে ব্রু উঁচিয়ে বলে,
“তুই কিভাবে জানলি ঐইটা ঐই মুভির নায়কের। তার মানে তো তুই নিজেই এইট্টিন প্লাস মুভি এডিক্টেড।”
লিয়ানা বলেও ফেঁসে গেলো।কি মুশকিল মাইনকার চিপা পড়ে দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে বলে।
“মুটওও না।আমার বেস্টি মেরিন আছে না।ওকে একবার বলেছিলাম যে মুভি সাজেস্ট করতে, এই মেরিনের বাচ্চা এই মুভি সাজেস্ট করছিলো বলে এটা নাকি পারিবারিক মুভি।কোনো রোমান্টিক সিন নাই।বেশ্ আমিও দেখতে গেলাম আর দেখেই আস্তাগফিরুল্লাহ।কি সব উল্টাপাল্টা আকাম ছেহহহ! ”

“এক্সপ্লেইন করতে হবে না।আই নো।বাট নিকোলাস কে?? ”
লিয়ানার পছন্দের হিরোর নাম শুনতেই উত্তেজনার বশে বলে দেয়।
“আরে নিক তো মাই ফল্ট মুভির হিরো।”
মুখ ফুঁসকে বের হয়ে গিয়েছে বুঝতেই জিভ কেটে মাথায় হাত রাখে এটা কি বলে দিলাম। তুই শেষ রে লিয়ানা। গেয়া খাতাম।
জায়ান লিয়ানার জামার হাতায় নিচে নামিয়ে কাঁধে চুমু খেয়ে কামড় বসিয়ে দেয়। লিয়ানার শরীরটা কেঁপে উঠে। ঘারটা পিছনের দিকে হেলিয়ে নিয়ে বলে,
“খাবেন না।ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।”
জায়ান লিয়ানার ঘাড়ে চুমু দিতে দিতে বলে,
“হুহ!নড়িস না, আই ওয়ান্ট ইট ইউ।

প্যারিস শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে, এক বিশাল ভবন দাঁড়িয়ে আছ।শুধু দরজার উপর ঝলমলে নিয়ন লাইটে লেখা –
“BLACK HOLE NIGHT BAR”
ভেতরে ঢুকলেই প্রথমেই এক বিশাল লবি,কালো মার্বেল আর কাঁচের মিশ্রণে তৈরি, মাথার উপরে গম্বুজ আকারের ছাদে হাজারো LED আলো তারার মতো ঝলমল করছে।
ভেতরে ঢুকলেই দুই ভাগ,

একদিকে ডান্স ফ্লোর, বিশাল, চকচকে কালো টাইলসে ঢাকা। আলো কখনো লাল, কখনো বেগুনি, কখনো সবুজ হয়ে ঝলসে ওঠে। গায়ে গায়ে লোক নাচছে, ডিজের সাউন্ড সিস্টেম কাঁপিয়ে দিচ্ছে দেয়াল।
অন্যদিকে প্রাইভেট লাউঞ্জ,ঝুলন্ত ক্রিস্টাল ঝাড়বাতি, আরামদায়ক কালো লেদারের সোফা, নিচু টেবিলে শ্যাম্পেন, ককটেল সাজানো। যেসব ভিআইপি অতিথি ভিড়ের বাইরে বসে নিজেদের মতো সময় কাটাতে চান, তারা এই অংশে বসেন।

মধ্যিখানে বিশাল গ্লাস বার কাউন্টার,লম্বা, বৃত্তাকার, যেখানে শ’খানেক ভিন্ন ভিন্ন দেশের মদ,ওয়াইন এর বোতল সাজানো। বারটেন্ডাররা শো-এর মতো করে ককটেল বানায়,আগুন, ফ্লেয়ার, ফ্লিপ।
বারের আরেকপাশে মিনি স্টেজ, যেখানে মাঝে মাঝে জ্যাজ ব্যান্ড, লাইভ ভোকাল বা বিশেষ পারফরম্যান্স হয়। এখানে গান আর নাচ মিলে রাতকে করে তোলে আরও হিপনোটিক।
উপরে উঠলে আছে VIP ফ্লোর,পুরোটা কাঁচ দিয়ে ঘেরা, ভেতরে বসে পুরো ডান্স ফ্লোর দেখা যায় নিচে। এখানে সাধারণ অতিথির প্রবেশ নেই, শুধু বিশেষ সদস্য বা মালিকের অনুমতিতে।
পুরো জায়গাটাতে এক ধরনের রহস্যময় অন্ধকার।আলো কখনো ঝলসে ওঠে, আবার মিলিয়ে যায়। আর এই অন্ধকারেই মনে হয় নামটা মানে পাচ্ছে Black Hole। ভেতরে ঢুকলে সময়ের হদিস থাকে না, বাইরের দুনিয়া থেকে কেটে গিয়ে ডুবে যেতে হয় স্রেফ রাতের উন্মাদনায়।

সময়টা ঠিক রাত নয়টার পর পর। বারে স্লো ইংলিশ মিউজিক এর শব্দ। গানের তালে তালে ফরাসি মেয়েগুলো কোমড় নাড়িয়ে নাড়িয়ে ওয়াইন খেতে নাচছে।চার পাঁচ জন মেয়ের মাঝে এলেক্স তালে তাল মিলিয়ে ওয়াইন খাচ্ছে।
নাদিয়া এলেক্স এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“শেইমলেস ম্যান।”
ঠিক সেই ক্ষণে পার্কিং এর দিকে একটি জোরালো গড়গড়ানি ছুটে এলো একটি KTM বাইক।বাইকটা থেমে, হালকা ধোঁয়ায় পা মেলে দাঁড়ালো।

দরজার পাশে সিঁড়ির ধারে থামতেই বাইক রণকীর্তি করে,রাইডার ধীরে ধীরে হেলমেট খুলে নিলো। লোকটার চুল লম্বা কাঁধ ছুয়েছে।কালো জ্যাকেট, জ্যাকেটের কাঁধে হালকা সিলুয়েটেই বোঝা যায় ওর শরীর গঠনে জোর। পকেট থেকে লম্বা চাবি বের করে। ধীরে ধীরে বার-কাউন্টারের দিকে এগোলো, হাতে এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস কাজের মানুষ, কিন্তু আভায় রহস্য।
যিনি আর কেউ নন ইনসপেক্টর -রেহমান পাষা।
ভিতরে ডুকেইতেই তার চোখ পড়লো নাদিয়ার উপর তিনি তার কাছেই এগিয়ে এলো।
“হেই মিস নাদিয়া।তুমিও দেখছি এখানে।”

নাদিয়া ইন্সপেক্টর রেহমান পাষাকে দেখতেই মুখ বাকালো।
তাতে আপনার কি??আপনি এখানে কেনো??
“দেশের দুই নাম্বার বড় বার, নামি-দামি লোকজনের আনাগনা।তাদের সাথেই মিট আপ করতে এলাম।”
“হ্যাঁ, যেটা আপনি সব সময় করে থাকেন।আপনার না ঠিক ভাবে টেনিং নিয়ে তারপর পুলিশ ইউনিফর্ম পরা উচিত ছিলো।”

রেহমান পাষা নিজের জ্যাকেট টা টেনেটুনে ঠিক করে চুল গুলো বেক ব্রাশ করে বলে।
“দেখতে কি বেশি খারাপ লাগছে দেখো তো।”
নাদিয়া চোখ উল্টালো।হাত দিয়ে চুল উড়িয়ে।
“আপনাকে ভালো দেখায় কবে।”
“তোমাকে ছাড়া সব মেয়েদেরই ভালো লাগে।দেখো নাদিয়া।কাজের কথায় আসি।হাতে টাইম খুব কম।”
“আপনি আর কি বলবেন আমার জানা আছে, এইটাইতো যে এই বারে অবৈধ লেনদেন হয়,আপনি ইনফর্ম হয়ে এসেছেন। আর কত?? এই নিয়ে ৩৬ বার পুরো বার চেক করে ফেলেেছন!কিছু পেয়েছেন??কোনো প্রমাণ। এই বারের পিছনে পরে না থেকে মার্ডার এর কেস গুলোতে ফোকাস করুন কাজে দিবে।”
রেহমান পাষা সোফার উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে পরেন।

“তোমরা মেয়ে জাতি একটু বেশি বুঝো।আমার পাশে এসে বসো আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।”
“নট ইন্টারেস্টেড।”
“তাহলে মিস্টার জায়ানকে বলো পাষা দেখা কারতে এসেছেন।”
রেহমান পাষা ওয়াইন এর গ্লাসে চুমুক বসিয়ে নাদিয়ার দিকে হেসে চোখ টিপে বাকা হাসে,
“তোমায় সুন্দর লাগছে।”
“নতুন কিছু বলুন।আপনি কি জানেন আপনার ফ্লাটিং স্কিল খুবই জঘন্য।”
“মুডের বারোটা বাজিয়ে দিলে ধুর্।আচ্ছা তুমিই আমায় একটা প্রশ্নের উত্তর দাও।”
“হুয়াট??”

“এই বার মিডিয়ার জন্য সবসময় বন্ধ থাকে কেন? অথচ এতো বড় বার মিডিয়ার আগ্রহ থাকা উচিত নয় কি?অফিসিয়ালি ভাবে কেন বলা হয় privacy policy , ঠিক একারণে আমার সন্দেহ হয় এটা কভার আপ।”

দেখো নাদিয়া মিস্টার জায়ানকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি।নিঃসন্দেহে হি ইজ আ টেলেন্টেড পার্সন।বাট আমি আমার চাকরি টাকে তো ভুলে যেতে পারি না।আইনের চোখে সবাই সমান।এটা মিস্টার জায়ান আমার থেকে ভালো জানেন।আমি আমার কাজ চালিয়ে যাবো।ওনি এই ব্যাপারগুলো কেন ক্লিয়ার করছেন না??
ঠিক তখনি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আলো-আঁধারির ভেতর থেকে ধীরে ধীরে ভেসে উঠলো এক ছায়ামূর্তি। কালো ব্লেজার স্যাুট এ।
“হাউ আর ইউ ইন্সপেক্টর রেহমান পাষা?”
ঘড়ির কাটা তখন রাত একটা ছুই ছুই।জায়ানকে দেখতে পেয়েই রেহমান পাষা উঠে দাঁড়ায়।
“আসুন আপনার অপেক্ষাতেই ছিলাম।নাইস টু মিট ইউ।”

জায়ান এসেই সোফার বসে পায়ের উপর পা দুলে,হাত বাড়িয়ে ইন্সপেক্টর কে বসতে বলে,
“এই যে আপনি যখন তখন আমার বারে চলে আস্তে পারেন। আমি আপনাকে বাধা দিয়েছি?আপনি এসে নিজের মন মত সার্চ চালিয়ে যান।আপার কি মনে হয় যদি অবৈধ কিছু থাকতো আপনাকে আমি প্রবেশ করার অনুমতি দিতাম??”
আপনি খুব ভালো করে জানেন আমি চাইলে শুধু মিডিয়া কেন আপনাকেও এই বার এর একশো হাত দূরে রাখতে পারি।”

“আই নো।বাট আমি অবৈধ জিনিসের গন্ধ পাই ”
“তাহলে আপনার নাক আর চোখ দুটোই অবৈধ।নেক্সট টাইম ওয়াশ করে চেঞ্জ করে আসবেন।”
“আপনি মধ্যে ওভার কনফিন্ডেন্স।”
জায়ান বাকা হাসলো।
“কারণ আমি ভয় পাই না।ভয় আমার ডিকশনারিতে নেই।” আমি চাইলে ভয়কে পোষা কুকুরের মতো শিকল পড়িয়ে দিতে পারি।
জায়ান গ্লাসে রেড ওয়াইন ঢেলে গ্লাসে চুমুক বসায়।আরেকটা মিস্টার দিকে হাত বাড়ায়।ইনস্পেক্টর পাষা হাত এর ওয়াচ এর দিকে তাকায়।
“তো মিস্টার জায়ান আজ আসি, আবার দেখা হবে। ”
জায়ান হাত বাড়িয়ে দরজা দেখিয়ে দেয়।
“ইয়েস গো।”

বাহিরের রাত ঠাণ্ডা, বাতাসে দূর-বিশাল ইঞ্জিনের গুঞ্জন আর ক্লাবের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে ইনস্পেক্টর রেহমান পাষ বাইকের পাশে এসে দাঁড়াল। ঠিক সেই মুহূর্তে তার চোখ পড়ল Audi গাড়ির পেছনে আলোর ছায়ায় সোজা দাঁড়িয়ে থাকা একজনের দিকে এলেনা। কাঁধে হালকা কোট, চুল পেছনে টেনে সোজা, ঠোঁটে ন্যূনতম হাসি নেই পুরো ভঙ্গিটাই যেন বলে।
রেহমান পাষা ধীরে ধীরে এলেনার সামনে এসে দাঁড়ালো।
গলার স্বর নরম হলেও তীক্ষ্ণতা মিশিয়ে এলেনা বলে,
“তোকে কতোবার বলেছি,এই বারে আসবি না।
দেন্ হুআই আার ইউ কামিং, loser। ”

পাষা এক পা সামনের দিকে দিয়েই ঠোঁটের এক কোণে কটাক্ষ করল,
তুই আমাকে ভাই হওয়ার সুবাদে বারণ করতেই পারিস।বাট আই এম অ্যা ইনস্পেক্টর। ইট’স মাই জব।
এলেনা কাঁধ উচিয়ে কর্কশ গলায় কটাক্ষ করলো,
ভাই?মাই ফুট,নট ব্রাদার, ইট’স স্টেপ ব্রাদার
ইয়েস সেম সেম বাট ডিফারেন্ট।
তখন এলেনার চোখে আভা নেমে এলো।তারপর একটা সতর্ক সুরে,
আই ওয়ার্ন ইউ।এখানে আসবি না।
পাষা ঠোঁটের কোণে হালকা হেসে বলে,
আসবো।পারলে বাল ছিড়ে দেখাস।

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২৭

রেহমান পাষা তারপর ধীরে ধীরে বাইকের উঠে বসে। বাইকের স্টার্ট দিল KTM এর গুচ্ছ গর্জে উঠলো।
গুড নাইট সিস্টার।টেক কেয়ার বাই।বাসায় এসে মম্ সাথে দেখা করে যাস।
এলেনা গাড়িতে একটা ঘুষি মেরে বলে,
“ফা*ক।সি ইজ ইউর মম্,নট মাই।রাসকেল।”

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here