তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩৬
ভূমিকা তালুকদার
ফ্রান্সের দক্ষিণে কোত দাজুর অঞ্চলের রাত শীতের মাঝেও একদম উত্তেজনাময় গরম পরিবেশ। চারপাশে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে, বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ইঞ্জিনের গর্জন আর মানুষের উল্লাসের মিশ্র গন্ধ।জায়ান লাল রঙের রেসিং কার no. 07 এর পাশে দাঁড়িয়ে হাতের কালো গ্লাভ’সগুলো ফিটিং করে, হেলমেট পড়ে নেয়।গাড়িতে বসে স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে তিক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে গাড়ি স্টার্ট লাইন এ নিয়ে যায়।
সেখানে রেস ট্র্যাকের একপাশে সারি সারি রঙিন গাড়ি দাঁড়িয়ে লাল, কালো, নীল, রুপালি, প্রত্যেকটার গায়ে স্পন্সর কোম্পানির লোগো ঝলমল করছে। রেসাররা হেলমেট পড়ে গাড়িতে উঠছে, চোখে গাঢ় সানগ্লাস, মুখে অদ্ভুত এক দৃঢ়তা।
ইতিমধ্যে কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যায়।
five….four….three….two….one,Go!
আর সঙ্গে সঙ্গেই
VROOOOMMMM!!!
একসাথে বারোটা রেসিং কার ছুটে চলে বজ্রের মতো। রাস্তা থেকে স্নো উড়ে আকাশে মিশে যায়।স্টেজের দর্শকরা উঠে দাঁড়ালো, কেউ পতাকা নাড়ছে, কেউ চিৎকার করছে, কেউ ফোনে ভিডিও করছে।জায়ানের ঘামে ভেজা মুখ, কপালে টান, চোখ একদম স্থির সামনের দিকে।মূহুর্তেই চোখের পলকে সব রেসিং কার গ্রাউন্ড সীমানা ত্যাগ করে,তবে আকাশে ড্রোন,হেলিকপ্টার দিয়ে পুরো রেস ক্যাপ্চার করার কারণে স্টেজর বড় পর্দায় পুরো রেস দর্শকরা দেখতে পারছে।পুরো ২০০মাইল রাস্তা।প্রায় কয়েকঘন্টা সময়তো লাগবেই শেষ হতে। রাস্তার বাঁকে জুম ইন করে দেখায়,একটি কালো গাড়ি অন্যটিকে পাশ কাটিয়ে সামনে চলে যাচ্ছে, টায়ারের ঘর্ষণে স্পার্ক উড়ছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জায়ানের গাড়ি চোখের আড়াল হতেই লিয়ানার মুখটা কেমন ফেঁকাসে বর্ণ ধারণ করে আছে। ভালো লাগলেও পুরোপুরি যেনো খুশি হতে পারলো না মেয়েটা।কারণ এসব রেস সে আরও আগেও ফোনে, টিভিতে দেখেছে,এসবে প্রাণ সংশয় থাকে,কখন কোন দিক থেকে দূর্ঘটনা এসে পড়ে বলা যায় না।এসবে লাইফ গ্যারান্টি মোটেও থাকে না।বড় স্ক্রিনের দিকে তাকাতেও পারছে না।ভয় হচ্ছে খুব।লিয়ানার বুকের ভেতরটা মুচর দিয়ে উঠতেই হাতে থাকা কফির কাপটা জামার উপর পড়ে যায়।সঙ্গে সঙ্গেই লিয়ানা আহহহ!শব্দ করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।কফিটা হালকা গরম থাকার ফলে ছিটকিয়ে আসা কফি হাতে লেগে ডান হাতটা লাল হয়ে যায়।অসহ্য যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠে মেয়েটা।পাশে থাকা নাদিয়া বসা থেকে উঠেই লিয়ানার হাত আলতো করে ধরে ফুঁ দিতে দিতে বলে উঠে,
“ওমাই গড! ওয়েট ওয়েট,তোমার তো আইস কিউব দরকার।ওহহ গড।কীভাবে পড়লো!”
“তেমন কিছু হয়নি আপু, ঠিক হ’য়ে যাবে।”
লিয়ানার জামাটাও কফির দাগে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছু হয়নি বললেও চোখমুখ এ ব্যথার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো।কাঁপতে থাকা হাতে জামার দাগ মুছতে থাকে।
“কিছু হয় নি আবার কি!দেখি আমার সাথে এসো তো।”
নাদিয়া দু’হাতে লিয়ানাকে ধরে ভিতরে নিয়ে যেতে থাকে।ইতিমধ্যে মার্কো গিয়েই Medical Command Center এ কথা বলে রেখেছে।যেহেতু আন্তর্জাতিক “কার রেসিং চ্যাম্পিয়নশিপ্”এর সময় emergency medical support থাকে।যেনো কোনো রেসার আহত হলে ইমার্জেন্সি সাপোর্ট দিতে পারে। তাই সেখান থেকেই একজন ফিমেল ডক্টরকে মার্কো নিয়ে আসে লিয়ানার চেক্’ড আপ এর জন্যে।নাদিয়া মার্কো আপাতত কোনো রিস্ক নিতে চায় না।আঘাত ছুটো হউক বা বড়। জায়ান এসে যদি দেখে তার বউয়ের হাতের এমন করুণ দশা দেখে তাদের বারোটা বাজিয়ে দিবে।ন্যান্সি নামক একজন ফিমেল ডক্টর লিয়ানার হাতে ঠান্ডা একটা মেডিসিন লাগাতে থাকে।মেডিসিন প্রয়োগের ফলে লিয়ানার হাতটা কেমন অবশ্ হয়ে আসছে।লিয়ানার ডক্টর এর দিকে দৃষ্টি ফেলতেই তিনি মৃদু হেসে বলেন,
“রিলেক্স, হাইপার হওয়ার কোনো কারণ নেই।আই দিন্’ক কফিটা তেমন গরম ছিলো না।আমি মেডিসিন লাগিয়ে দিয়েছি।কিছুক্ষণের মধ্যে আরাম ফিল হবে।”
লিয়ানা কিছু না বলে শুধু ডক্টর ন্যান্সির দিকে তাকিয়ে থাকে।লিয়ানা মনে মনে ভাবতে থাকে,ডক্টর মহিলাটা বেশ্ সুন্দর, লিয়ানার গায়ের রঙ একটু বেশি ফর্সা হওয়ার ফলে কলেজে অনেকেই তাকে ধবল রোগী বলতো ক্ষ্যাপাতো।মজাও করতো।কিন্তুু এরা তো তার থেকেও বেশি সাদা এদেরকে কি বলা উচিৎ তাহলে।লিয়ানাকে আন্যমনস্ক হয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ডক্টর ন্যান্সি হাস্কি সুরে বলে উঠে,
“মি’স লিয়ানা আর ইউ পাকিস্তানি গার্ল? ”
লিয়ানা ড্ক্টরের এমন কথায় ভেবলার মতো তাকিয়ে কিছু বলার আগেই নাদিয়া হেসে বলে,
“নো ডক্টর, সি ইজ অ্যা বাংলাদেশি গার্ল”
“রিয়েলি?? ”
মার্কো কপালে আঙুল ঠেকিয়ে ডক্টর এর পাশে দাঁড়ায়।
“এক’চুয়েলি মিস.ন্যান্সি, হার নে’ইম ইজ্ লিয়ানা খান,ওয়াইফ অফ গ্রেট জায়ান খান ”
ডক্টর ন্যান্সি কিছুটা না পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে গেলেন।তবে আর তেমন কিছু বললেনা।তিনি লিয়ানাকে স্কুলগার্ল ভেবেছিলেন।তার উপরে আবার জায়ান খানের ওয়াইফ ব্যাপারটা বড় অদ্ভুত ঠেকলো তার কাছে।মার্কো আর ডক্টর ন্যান্সিকে এভাবে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নাদিয়ার কেন যেনো ব্যাপারটা তেমন হজম করতে কষ্ট হলো। নাদিয়া একটু জোরেই লিয়ানাকে বলে উঠে,
“চলো লিয়ানা,তোমার ড্রেসটা চেঞ্জ করতে হবে।”
“ড্রেসটা চেঞ্জ করবো মানে! ”
“দেখো বোকা মেয়ে তোমার জামাটা তো একদমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
নাদিয়া লিয়ানাকে উত্তরের পাশের একটা একটা গ্লাস-ওয়ালওয়ালা চেঞ্জিং রুমে নিয়ে আসে।তারপর লিয়ানাকে সেখানে ডুকে পড়ে।হাতে একটা স্লিভলে’স টপ আর প্যান্ট, নাদিয়া দিয়েছে তাকে।তবে একটু দিধায় পড়ে গেলেও আর কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে জামা পাল্টিয়ে নেয় সেগুলোই পড়ে ফেলে লিয়ানা।বাহিরে যেহেতু প্রচন্ড শীত তাই ওভারকোটটা গাঁয়ে জড়িয়ে নেয়।
প্রায় তিন ঘন্টা সময় পার হ’য়ে গিয়েছে।কুহুকে কুয়াশা কোত দাজুর প্রাচীর ঘিরে রেখেছে।ঠিক সেই মুহূর্তে দূর থেকে দুটো কণ্ঠশূন্য হেডলাইট কুয়াশার ভিতর খুঁচকে উঠলো। কুয়াশা ছেঁড়া আলোগুলো ধীরে ধীরে একটানা দাগ হয়ে সামনে এলো।একটি গাঢ় কালো গাড়ি জাস্টিসের মতো কাটি কেটে রাস্তায় এসে থামল,ইঞ্জিনের ঘুমোনো গর্জন বাতাসে খোঁচা দিলো। গাড়ির দরজা খুলে নেমে এলেন রেহমান পাশা। তার পড়নে কালো লেদার জ্যাকেট, চোখে সেই একই স্থির ভাব, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।সে এক পা এগোতেই কুয়াশার কণাগুলো তার চারপাশে ভাসতে লাগলো।নাদিয়া উপরে ভি আই পি স্টেজ থেকে রেহমান পাষাকে লক্ষ্যে করলেন। ভুরু কুঁচকে নাদিয়া অচেতন ভাবে মুখে প্রশ্ন আটকে রাখলো “ইনি এখানে কি করছেন”।রেহমান পাষা গাড়ি থেকে নেমে সোজা নাদিয়াদের কাছে আসতে থাকে।উপরে উঠেই তিনি এবার নাদিয়ার সাথে কোনো কথা না বলে উল্টো লিয়ানার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।
“হ্যালো মিসেস খান”
লিয়ানা কিছুই বুঝতে পারে না কে এই লোক তাকেই বা চিনে কি করে।আবার এসেই হেন্ড’শেক করতে চাইছে।আশ্চর্য। তারপরও লিয়ানা কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“আপনি কে??আমাকে চিনলেন কি করে ”
নাদিয়া বলতেই যাবে রেহমান পাষা নাদিয়ার দিকে কিছুটা ঝুকেঁ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“উঁহু! আমাকে আগে একটু মিস্টার জায়ানের ওয়াইফ এর সাথে কথা বলতে দাও।কল দিলে যেহেতু ধরই না এখানেও চুপ থাকো”
লিয়ানা একবার ইন্সপেক্টর পাষার দিকে তাকায় আরেকবার নাদিয়ার দিকে।এখানে হচ্ছেটা কি।রেহমান পাষা গিয়ে পাশের সিটে বসে পড়েন।বুক পকেট থেকে পুলিশ আইডি কার্ডটা বের করে লিয়ানার সামনে ধরে।
“আপনি আমাকে না চিনলেও, আমি আপনাকে খুব ভালো করে চিনতে পেরেছি মিসেস লিয়ানা।একচুয়েলি আপনাকে কে না চিনে।শুধু দেখা যায় না এই আর কি।যাই হউক জুটিটা একদমি পার্ফেক্ট।”
“একেবারেই মুদ্রার এ পিঠ ও পিঠ।”
আশা করছি একটু সচেতন হবেন।এতো ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে ঘুরলে হবে।দুনিয়াদারি ভালো ভাবে বুঝতে হবে।
লিয়ানা শুধু বুঝতে পারলো এইলোক হয়তবা এখানকার কোনো বড় মাপের ইনস্পেকটর। তবে ইনি এভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কেন কথা বলছে।অদ্ভুত তো।লিয়ানা ভ্রু কুচকিয়ে তাকালো পাষার দিকে,
“আপনি কেনো আমাকে এসব বলছেন??আমার সাথে আপনার কি কাজ!আমার হাসবেন্ড রেসিং শেষ করে এলে ওনার সাথেই যা বলার বলিয়েন।দয়া করে এখন এখান থেকে যান”
“নো মিস্,আপনার সাথেই আমার কিছু বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।”
“দেখুন, অ্যাম অ্যা অর্ডিনারী (সাধারণ) গার্ল”সো প্লিজ লিভ।”
আরেএএএ…-কথা শেষ করার আগেই নাদিয়া বিরক্ত হয়ে রেহমান পাষার হাত ধরে দূরে সাইডে নিয়ে যায়।
“যাস্ট সাট্ আপ বিচ্।আপনি এখানে কোনো”
“হুআই আমাকে মিস্ করছিলে নাকি?? ”
“মিস্ মাই ফুট”
রেহমান পাষা নাদিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে ফেলে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি কিছুটা শীতল করে নাদিয়ার সামনের বেবি হেয়ারগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দেয়।নাদিয়া প্রানপনে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয় না।রেহমান পাষার ছয় ফিট দু ইঞ্চি বলিষ্ঠবান শরীরের কাছে নাদিয়া তুচ্ছ। নাদিয়ার উপর একটু ঝুকেঁ অধরে আঙুল বুলিয়ে দেয়।হালকা ঠোঁট কামড়ি বলে উঠে,
“আমাকে দেখলে কি শরীরের কারেন্ট বেশি বেড়ে যায় নাকি তোমার।অতিরিক্ত রাগ কিন্তু ভালোবাসার লক্ষণ,তবে কি আমি ধরেই নিবো… ??”
নাদিয়া রাগে গজগজ করতে করতে মুখ ফেরালো।
“আপনি একবার আমাকে ছেড়েই দেখুন না আপনাকে মেরে দরকার পড়লে জেলের ভাত খাবো।অ্যাস’হোল।”
রেহমান পাষা নাদিয়াকে ছেড়ে দেয়। সাথে সাথে নিজের গাল পেতে দেয়।গালে আঙুল রেখে হেসে বলে,
“নাও কাম অন কিল মি,অ্যাম রেডি”
নাদিয়া এবার করে বসে এক কান্ডু রাগের বশে রেহমান পাষার মেইন পয়েন্টেই হাঁটু গেড়ে দেয়।রেহমান পাষা ব্যাথায় সেখানেই মর্মাহত হয়ে পড়ে।
“সো স্যাড রোমিও!”-বলেই নাদিয়া মুচকি হেসে স্টেজে চলে আসে।
এদিকে রেস প্রায় শেষের পথে। নাদিয়া এসে দেখে লিয়ানা চোখ মুখ বন্ধ করে হাত দিয়ে প্রে করছে।নাদিয়ার আর বুঝতে বাকি রইলোনা লিয়ানা জায়ান এর জন্যেই প্রে করছে।চারটা গাড়ি গ্রাউন্ডে এর দিকে এগিয়ে আসছে লাল গাড়িটা সবার সামনে।শেষ বাঁক ঘুরে লাল কারটা গন্তব্যের দিকে ছুটে আসে।স্টেজের মানুষের চিৎকার, পতাকার নড়াচড়া, ক্যামেরার ফ্ল্যাশে ভরে যায় চারপাশ।
আর তারপরে,
একটা মুহূর্তের নিস্তব্ধতা।
তারপর একজন ফরাসি মহিলার কণ্ঠ ভেসে আসে মাইক্রোফোনে,
“Winner—Car No. 7 From France!”
পুরো গ্রাউনন্ডে যেনো বজ্রপাতের মতো করতালি ছড়িয়ে পড়ে।ধোঁয়ায় ভরা সেই রেসট্র্যাকের ওপর রেখে যায় এক জ্বলন্ত তুষারে ঘেরা রাতের স্মৃতি।
লিয়ানা চিনে ফেলে এটা আর কারোর গারি না বরং তার জায়ানের রেসিং কারটাই।হ্যাঁ এটাই।আবেগে আপ্লূত হয়ে মেয়েটা কেঁদেই দেয়।এক মুহুর্ত দেরি না করে সোজা স্টেজ থেকে নেমে জায়ানের দিকে ছুটতে থাকে।জায়ান রেসিং কার থেকে নেমে হেলমেট খুলতেই পাখির ঝাঁকের মতো প্রেসের লোকজন তাকে ঘিরে ফেলে।জায়ান চুলগুলো ব্রেক ব্রাশ করে, বেপরোয়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।লাইটের ফ্লেশের কারণে চোখ খুলতে পারছে না ঠিক মতো ঠিক তখনি শরীরের সাথে কারোর স্পর্শ লাগতেই দেখে লিয়ানা এসে সোজা জায়ানের কোলে উঠে পড়েছে।প্রেসের সবাইকে ঠেলেঠুলে।লিয়ানা জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরতেই জায়ান লিয়ানাকে ৩৬০° অ্যাঙ্গেলে ঘুরিয়ে দেয়।
পুরো স্টেজের সবাই অবাক দৃষ্টিতে সে দৃশ্য দেখতে থাকে।জায়ান লিয়ানাকে কোল থেকে নামিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে নেয়।লিয়ানায় লজ্জায় জায়ানের বুকে ঘুষি মারে।
“কি করছেন,সবাই দেখছে।পাব্লিক প্লেসে অন্তত নিজেকে সংযত করুন।”
“আই ডুন্ট কেয়ার ইউর ফা’কিং পাব্লিক। ”
তাদেরকে চারদিক থেকে প্রেস ঘিরে রেখেছে। সবাই জায়ানের সাথে কথা বলতে চায়।জার্নালিস্ট দের ভির লেগে আছে।জায়ান লিয়ানার কোমড়ে হাত রেখে তাকে রেসিং কার এর মধ্যে বসিয়ে দেয়।কপালে আরেকটা চুমু খেয়ে মৃদু হাসে।প্রেসের লোকদের কাছে ইন্টারভিউ দিয়ে লিয়ানাকে নিয়ে একটু রাইড দিবে সেই ভেবেই গাড়িতে উঠায় জায়ান।
“এখানেই বসে থাক ডুন্ট মুভ।কোথাও যাবি না।”
লিয়ানা আর কিছু বলে না।রেসিং কারে উঠে অনেক প্রাউড প্রাউড ফিল হচ্ছে লিয়ানার।উফফ! ভাবা যায় তার হাসবেন্ড কিনা ওয়ার্ল্ড কার রেসিং চ্যাম্পিয়ন।লিয়ানার গাড়ির সিটে থাকা জায়ানের হেলমেটা পড়ে নেয়।এবার নিজেকে নিজের কাছের লেডি রেসার লাগছে।আহা! লিয়ানার গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রেখে জায়ানের জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে।বাহিরে এতো মানুষ সে বের হলে নিশ্চয়ই তাকেও বিভিন্ন প্রশ্ন করা হবে।না বাবা!মিডিয়ার সামনে গিয়ে যদি উল্টো পাল্টা কিছু বলে ফেলে।পড়ে জায়ানের কাছ থেকে বকা খেতে হবে।
জায়ানের সামনে এতো এতো জার্নালিস্ট তার মধ্যে থেকে একজন ফিমেল জার্নালিস্ট জিজ্ঞেস করেন।
ইউ আর ভেরি ট্যালেন্টেড পার্’সন মিস্টার জায়ান খান।এভাবে এতগুলো দেশের চ্যাম্পিয়ন রেসারদের মাঝে উইনার হওয়ার কি কোনো সিক্রেট বা হিডেন কিছু আছে? আমরা জানতে চাই।প্লিজ!
জায়ান শুধু বাঁকা হাসলো।
“ইট’স্ নট সিক্রেট।আমি কখনো ব্রেকের উপর পাঁ ই রাখিনা কারণ আমার কোনো মৃত্যুর ভয় নেই।দ্যাট্স হুআই।”
পাশে মার্কো দাঁড়ানো দুজন মিলে জার্নালিস্টদের একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাচ্ছিলো।প্রায় বেশ কিছুক্ষণ এর মধ্যেই,
হঠাৎ!
একটা বিকট শব্দে মাটি কেঁপে উঠে !
“বুমমমমমম!!!”
একটা বিরাট বড় বিস্ফোরণ! একটা রেসিং কার ব্লাস্ট হয়ে তাতে ধাউ ধাউ করে আগুন জ্বলে উঠে। আগুনের ধোয়া চারপাশে মেঘের মতো ছড়িয়ে পড়ে।আশেপাশের সকলে ছিটকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।আগুনের কমলা শিখা আকাশ ছুঁয়ে উঠল, বাতাসে ছিটকে গেল গাড়ির অংশবিশেষ।ধোঁয়ার কালো মেঘে ঢেকে গেল পুরো ট্র্যাক।জার্নালিস্টদের চিৎকার ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে
“ব্লাস্ট! ব্লাস্ট!কল দ্যা ফায়ার সার্ভিস ইমিডিয়েটলি। ”
কার no.07 ব্লাস্ট হয়ে গিয়েছে।
কথাটা কানে আসতেই জায়ানের পৃথিবীটা যেনো এক মূহুর্তে থেমে গেলো।তীব্র ধোয়ায় হাত দিয়ে সরিয়ে দেখে তারই গাড়ি আগুনের লেলিহানে ধাউ ধাউ করছে।আশেপাশের এতো শব্দের মাঝে শুধু একটা শব্দই কানে বাজলো, লিয়ান!
কিছু না ভেবেই জায়ান এক দৌড়ে গাড়ির দিকে ছুটে,জায়ানর পিছুন পিছুন মার্কোও দৌড় দেয়। জায়ান দৌড়টা হচ্ছিল না, পায়ের সাথে যেনো মাটিটা লেগে গেছে। জায়ানের পুরো শরীর বুকটা কাঁপছে,প্রতিটি নিঃশ্বাস একটা ছিঁড়ে যাওয়ার চেষ্টা। সকলেই অবাক জায়ান কেন আগুনে লিপ্ত গাড়ির দিকে ছুটে চলছে,।জায়ান পাগলামির সীমা অতিক্রম করে গাড়ির দিকে যাওয়ার আগেই মার্কো এসে জায়ানের কোমড় শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে,
“কি করছিস জায়ান।পাগল হয়ে গেছিস,ডেম’ইট মরে যাবি ভাই”
ঠিক তখনি জায়ান গলা ফাটিয়ে চিৎকারে করে উঠে,
“লিননন!লিনননন!”
আশেপাশে থাকা প্রত্যেকটা মানুষ জায়ানের এমন ভয়ানক আর্তনাদ এ সাক্ষী হয়ে রইলো।তিন-চারজন এসে ধরেও জায়ানকে আটকে রাখতে পারছে না।যাকে এক নামে পাষাণ হৃদয়ের পুরুষ বলে জানে।যার কঠোরতার কাছে হার মানতে বাধ্য সকলে।যার ভয়ে যার চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কাঁপতে থাকে মানুষ,যার চোখে আজ পর্যন্ত কেউ কোমল দৃষ্টি দেখে নি।যার সামনে মানুষ মরে পড়ে থাকলেও ফিরেও তাকায় না।এমন পাষন্ড পুরুষের চোখে অশ্রু আজ সকলের কাছে বেমানান মনে হচ্ছে।ইনিও যে কারোর জন্যে চোখের জল ফেলতে পারে তা অকল্পনিও।জায়ানের করা প্রত্যেকটা আর্তনাদে পায়ের নিচে মাটি কেঁপে উঠছে।গলার শিরাগুলো কেমন রক্ত জমাট বেঁধে লাল হয়ে ফুটে উঠেছে।জোরে চিৎকার করে কেঁদে উঠে,
তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩৫
আমার বউ!
জায়ান ছটফট করে মার্কোর কাছ থেকে হাত সরাতে চায়।কিন্তু মার্কো আরও শক্ত করে চেপে ধরে। জায়ান হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে উচ্চশব্দে চিৎকারে করে উঠে, গলায় যেনো শ্বাস আটকে আটকে আসছে।
মার্কো! ছাড়, আমায় ঐ গাড়িতে আমার বউ আছে।খোদারে,আমার বউরে মারিস না।আমার শরীর জ্বইল্লা যাইতাছে।ওহহ খোদা, আমি মইরা যামু ।আমার দম বন্ধ হইয়া যাইতাছে।
বাক্যে শেষ করার আগেই অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জায়ান।নাক বেয়ে দু ফোটা রক্ত মাটিতে গড়িয়ে পড়ে………
