তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৪০
ভূমিকা তালুকদার
জানালার কাঁচ গলে একটা ডোরাকাটা রঙিন প্রজাপতি উড়ে এসে নাকের ডগায় বসতেই লিয়ানার ন’গ্ন শরীরটা নড়ে উঠলো।একটা সাদা মখমলে লেপ শরীরে জড়ানো তার।প্রভাতের কুয়াশাভেদ করে আসা সূর্যর নরম আলো এসে মুখাবয়বে পড়ে।পিটপিট করে চোখজোড়া খুলতেই চারপাশে চোখবুলাতে থাকে।নিজেকে বেড রুমে আবিষ্কার করতে পেরে খানিক্ষন নিশ্চুপ থেকে বেডে হাত দিয়ে জায়ানকে খুঁজতে থাকে।
কিন্তুু জায়ানের কোনো অস্তিত্বও নেই বেড রুমে। রাতের শেষ প্রহরে জায়ান লিয়ানাকে কোলে তুলে বেড রুমে নিয়ে এসে শুয়ে দিয়েছিলো।জায়ানপ্রায় সময় এমটাই করে লিয়ানা কোনো প্রভাতেই জায়ানকে তার পাশে পায় না।কেনো পায় না তা সে জানে না।কোথায় চলে যায় লোকটা।লিয়ানার পুরো শরীর থেকে নেশা জাতীয় দ্রববের কেমন একটা ঝাঁঝালো গন্ধ টের পেতেই পুরো শরীর ঘুলিয়ে উঠলো।পুরো শরীরে অসহনীয় ব্যথার ছাপ।আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে কোনভাবে বিছানা ছেড়ে উঠে শাওয়ার নিতে যায় লিয়ানা। ঝর্ণার পানি ছেড়ে বেশকিছুক্ষণ স্ট্যাচু হয়ে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।নিঃশ্বাসটা ভারি হয়ে উঠেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শাওয়ার শেষ করে শরীরে টাওয়াল জড়িয়েই এসে ক’লিজা রঙা কূর্তি পড়ে নেয়।মিরর এর সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো হেয়ার ড্রায়ার করছে আর পুরো শরীরের র’ক্ত জমাট বাঁধা কা/মুড় ক্ষত চিহ্ন গুলোতে ভিটামিন কে ক্রিম আলতো হাতে লাগিয়ে নেয়।প্রত্যেকটা সংবে/দনশী/ল স্থানগুলো যেনো পুড়ে যাবার ন্যায় যন্ত্রণা। ড্রয়ার থেকে একটা পেইন কিলার ঠান্ডা পানির সাথে গিলে নেয়।মাথাটা টনটন করে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে লিয়ানার।ফ্রেশ হয়ে জায়ানকে ডাকতে ডাকতে নিচে নামে।ডাইনিং স্পেসে এসে দেখে টেবিলের উপর কয়েক-রকমের ফল সাজানো ব্রেকফাস্ট রেডি করা।তবে ব/মির উপগ্রেব হওয়ার কারণে ব্রেকফাস্ট মুখে দেয়ার রুচিবোধ হলো না আর।
বিগত কয়েকদিন যাবৎ বাড়ির কথা মনে হচ্ছিলো লিয়ানার।মায়ের সাথে কথা হয়না কতোদিন।না তার বাড়ির লোক একটা কল করে খবর নেয় আর না জায়ান কল করে।জায়ানকে বলারও সাহস নেই লিয়ানা শিউর যদি বাড়িতে কথা বলার কথা বলে জায়ান ক্রোধে ফেটে পড়বে।তবে তার খুব মন চাইছে একবার নিজের মায়ের কণ্ঠটা শুনতে।জায়ান নেই তবে লিয়ানার মনে পরলো সেদিন কেবিনেটের পাশে একটা “landline telephone ” দেখেছিলো।ল্যান্ড ফোন থেকে ইন্টারন্যাশনাল কল তো করা যাবে (ISD)দিয়ে।তবে country code,area,code লাগবে।লিয়ানার মুখে একটা হাসির রেখা দেখা যায়।প্রফুল্লচিত্তে মগ্ন হয়ে ল্যান্ডফোনে বাড়ির নাম্বারে কল ডায়াল করে। কিছুক্ষণ যাবৎ কল দেয়ার পড়ও লিয়ানা বুঝে উঠতে পারলো না কল কি যায় নাকি না।কয়েকবার একনাগারে চেষ্টা করে যায়।হতাশ হয়ে যেই না পিছনে ঘুরে তাকায় তখনি আঁতকে উঠে কান থেকে ল্যান্ডফোনটা মার্বেল ফ্লোরে পড়ে বিকট্ শব্দ হয়।
জায়ান দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বুকে হাত গুজে।ইনি হঠাৎ করে কোত থেকে উদয় হলো।লিয়ানা শুকনো ঢুক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
“আপনি … ক…কই ছিলেন।”
“হু’আই।তার কৈফিয়ত কি আমি তোকে দিবো? ”
“অ…অবশ্যই দিবেন।অ্যাম ইউর ওয়াইফ”
জায়ান পিছনের দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে, ক্রোধে ফেটে পড়ে।লিয়ানার সামনে এসে দাঁড়ায়। বড় বড় শ্বাস টানতে থাকে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে, তার চোখের মণিতে ধরা পড়ছে রাগ সাথে একটা অস্থিরতা, যেনো নিজের ভেতরের দানবের সঙ্গে যুদ্ধ করছে সে।
“সব কিছু আমার নিয়ন্ত্রণে এ বাড়ির। কি ভেবেছিস আমি কিছু জানতে পারবো না।এতো বোকা কেন তুই।আমাকে বলতি।তুই জানিস ল্যান্ডফোন যে আমার ফোনের সাথে কানেক্ট করা।আমার থেকে লুকিয়ে চুরিয়ে তুই কিছু করতে পারবি না নাথিং।your everything is only mine ”
জায়ান লিয়ানার দিকে হালকা ঝুঁকতেই লিয়ানা পিছিয়ে যেতে নিলে জায়ান ধরে ফেলে।হেঁচকা টানে নিজের কাছে টেনে অগণিত চুমু খেতে থাকে লিয়ানার গালে,ঘাড়ে। টানা কয়েক মিনিট পর জায়ান লিয়ানার গাল শক্ত করে চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠে।
“your are only mine.mine mine mine!তোর ভাগ আমি কাউকে দিতে পারবো না কাউকেই না।দুনিয়ায় কাউকে না।”
“নিজের সন্তানদেরও না? ”
“না!”
“কিহ!কিসব যা তা কথা বলছেন।পাগল হয়ে গিয়েছেন নাকি।”
“উঁহু। আমার বে’বিস রা তো আমারই অংশ।আমার ডিএনএ। তাদের সাথে No compared ”
“যাক একটু হলেও বোধবুদ্ধি আছে তাহলে আমি ভেবেছিলাম সব লোপ পেয়েছে আপনার। ”
জায়ান লিয়ানাকে ঘুড়িয়ে টেবিলের উপর বসিয়ে দেয়।জায়ান চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিলো, কিন্তু ভিতরে ক্রোধের আগুন ভেতরে এখনো জ্বলতে থাকে, নিয়ন্ত্রণের বাইরে। হঠাৎ দেয়ালের দিকে ঘুষি মারতেই শব্দটা ঘরের নিস্তব্ধতা চিরে ফেলে।জয়ান নিঃশ্বাস নিতে নিতে লিয়ানার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে বজ্রের ন্যায় বলে,
“Tell Me You are mine.”
“yes!…yes..yes..Iam only yours Zayan.”
“Call me sweetheart ”
“Yes sweetheart ”
“White Rose,Now kiss me, if you Don’t do this,i swear i will f*k & li*k you right now.”
“মা…মানে…”-লিয়ানা টেবিল থেকে নেমেই সরে যেতে নিলে জায়ান লিয়ানার দু’হাতে পিঠে চেপে ধরে নেয়।জিভ দিয়ে গাল স্পর্শ করে। লিয়ানার চুলের ভাজে মুখ ডুবিয়ে দেয়।শ্বাস টেনে চুলের ঘ্রাণ টেনে নেয় নিজের মধ্যে। হিমশীতল অনুভূতিতে জমে যায় লিয়ানা।জায়ান এর গাল ধরে চোখে নাজুক দৃষ্টি ফেলে। জায়ানের ঠোঁটের নিচে বাদামী তিলকে চুমু খেয়ে নেয়।এতো মোহনীয় কেন এটা।জায়ানের চোখের দিকে তাকালে কেন লিয়ানা সব ভুলে যায়।এতো ভালোবাসতে কেন ইচ্ছা করে এই পুরুষটাকে।এটা কি ভালোবাসা নাকি ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে অন্যে কিছু।ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি টেনে লিয়ানা জায়ানের শার্টে মুখ গুজে দেয়।জায়ানের বুকে নোখ দিয়ে আঁকিবুঁকি করতো করতে বলে,
“ব্রেকফাস্ট করে নিন”
“খেয়ে নিয়েছি।Strawberry with Milk ”
“এ কেমন উদ্ভুট রেসিপি ”
“মাই ফেভারিট, মাঝে মাঝে চকলেট দিয়েও খাই”
“আচ্ছা শুনুন না”
“কি?”
“বাড়িতে একটা কল করবেন? ”
কথাটা কানে আসার আগেই জায়ান রক্তিম চোখে লিয়ানার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।তড়তড় করে র’ক্ত গরম হয়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম।জায়ানকে রাগে গজগজ করতে দেখে লিয়ানা চুপ হয়ে যায়।হাত উঁচিয়ে গালে চড় বসানোর আগেই জায়ান হাত মুষ্টি বদ্ধ করে পায়চারি করা শুরু করে একবার এদিক তো আরেকবার ওদিক।নিজে নিজের চুল খামচে ধরে রেখেছে। জায়ানের মুডটাই খারাপ করে দিলো লিয়ানা। জায়ানের উপর ক্রোধের ছাঁয়া দেখতে পেয়ে লিয়ানা জায়ানকে শান্ত করতে কাছে গেলেই।জায়ান এক ধাক্কা মেরে তাকে ফ্লোরে ফেলে দেয়। হাতের কনুইতে ব্যথা পেতেই মৃদুস্বরে গুঙিয়ে উঠলো লিয়ানা।জায়ান লিয়ানার হাতের মাঝবরাবর ধরে উঠিয়ে টানতে টানতে বাহিরে নিতে থাকে।লিয়ানা জায়ানের কাছ থেকে হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে তেজি গলায় বলে,
“ডুন্ট ক্রস ইউর লিমিট জায়ান।এনা’ফ ইজ এ’নাফ।হাতটা ছাড়ুন বলছি।”
“তুই আজকে যেইকোনো একটা অপশন চোজ্ করবি হয় আমি নাহলে তোর ফ্যামিলি।”
জায়ানের এমন নিষ্ঠুর আচরণে লিয়ানার মেজাজ এবার দ্বিগুন বেরে গেলো।ফ্যামিলি কি শুধু তার। জায়ানের না।এটা কি কাম্য। জায়ানের বারাবারি গুলো চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছে এবার।
“কিসব ব্রেইন’লেস কথাবার্তা আপনার।কি খেয়ে এসেছেন।মুখ দিয়ে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছেন।ভুলে যাবেন না।যেই ফ্যামিলির কথা বলছেন তা একান্ত আমার না আপনারও।”
“না আমার না। তোর। আমি লে’টা চুকিয়ে কবেই চলে এসেছে।এসব বা’ল পরিচয়ে জায়ান খান চলে না।”
“বিহেভ ইউ সে’ল্ফ!মনুষ্যবোধ হ্রাস পেয়েছে আপনার”
“আ’ন্সা মি লিন।যা বলেছি তার উত্তর দে।যদি কিছু না বলিস এর পরিণাম মুটেও ভালো হবে না।”
লিয়ানা জায়ানের হাতে কা/মুড় বসিয়ে দৌড় দেয়।কি করতে পারবে সেও দেখবে।লিয়ানা দৌড়ে বাগানের এক প্রান্তে এসে পিছনে ফিরে দেখে জায়ান নেই।সামনে মুখ ঘুরাতেই জায়ান সামনে এসে তাকে পাজঁ কোলে নিয়ে নেয়।বাগানের পাইন গাছটার কাছে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়।ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে লিয়ানার শরীর থেকে তার স্কার্ফটা টান খুলে ফেলে।ঠান্ডা পাইন গাছের সাথে লিয়ানাকে তারই স্কার্ফ দিয়ে বাঁধতে শুরু করে।লিয়ানা শুধু জায়ানের এমন উদ্ভট কর্মকাণ্ড দেখে নাক ছিটকালো। জায়ান লিয়ানাকে বাঁধলো ঠিকি তবে মুটেও শক্ত করে না।
“নাও গো সুইটহার্ট। এবার দৌড়ো তো। Run bbe girl…”
লিয়ানা এবার ফিক করে হেসে উঠলো।
“চলুন Truth or Dare খেলি”
জায়ান ভ্রু কুচকিয়ে পকেটে হাত রাখলো।পাশেই জায়ানের সাদা আর কালো হর্স দুইটা বাঁধা অবস্থা আছে।জায়ান ওদের উদ্দেশ্য করে বলে।
“আমার হরিণিকে আজ তোদের সাথে বেঁধে দিলাম।নজরে রাখিস তো।পালাতে দিস না।তেজ বেড়েছে খুব”
জায়ান মুখে শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যেতে নিলে। লিয়ানা বলে উঠে,
“ভয় পেলেন নাকি।বলুন ট্রুথ অর ডেয়ার।”
জায়ান এক সেকেন্ডই পাঁ পিছিয়ে লিয়ানার দিকে ঘুড়ে তাকালো।
“ডেয়ার”
“খুলে দিন আমায়”
জায়ান ঠোঁট জোড়া গোল করে হাসলো।সে জানতো লিয়ানা এমন কিছুই বলবে।জায়ান কোনো প্রতিউত্তুর না করেই বাগানের অপরপ্রান্তে গিয়ে সোফায় গাঁ হেলিয়ে বসে পড়লো।ল্যাপটপ টা অন করে কাজে মনোযোগ দিলো।মাঝে মাঝে ঘাড় কাত করে লিয়ানাকে দেখে আর বাঁকা হাসি টানে মুখে।লিয়ানা এক দৃষ্টিতেই জায়ানের দিকেই তাকিয়ে থাকে। আর হাত খুলার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। বাঁধনটা অতিরিক্ত শক্ত না হওয়ায় লিয়ানা বুঝতে পারলো চাইলেই খুলা সম্ভব। লিয়ানার চোখে মুখে বিরক্তি ছাপ।জায়ানের উপর এক আকাশসম পরিমাণ ক্ষোভ জমা হ’য়েছে।
সারারাত নির্ঘুম কাটানোর পর জায়ান ক্লান্ত হয়ে সোফাতেই পিঠ হেলিয়ে ঘুমের দেশে কখন যে পারি জমালো তা বুঝে উঠার আগেই লিয়ানা নিজের হাতের বাঁধন খুলে ফেললো।
জায়ানের ঘুম ঘোলানো মুখটা দেখে মায়া হলেও মুখ ফিরিয়ে নিলো।পাষাণ লোক আস্ত একটা সাইকো।লিয়ানা হাতের দিকে তাকায়।হাতটা পুরো লাল হয়ে গিয়েছে।লিয়ানা কোমড়ে হাত রেখে লিও জিও কাছে এগিয়ে যায় দুইটা ঘোড়ার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়।জায়ান এদের খুব আদর করে তা দেখে লিয়ানারও খুব ভালোলাগে।এতোদিনে লিয়ানা জায়ানের সাথে থেকে একটা জিনিস অন্তত বুঝতে পেরেছে জায়ান মানুষ থেকে পশুপাখি বেশি পছন্দ করে।সেদিন দু-তালার জানালা দিয়ে লিয়ানা জায়ানকে একটা বুনো বিড়ালকে খাবার খাওয়াতে দেখেছিলো।জিওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে লিয়ানা বলে,
“তোমাদের বাবা অনেক হৃদয়হীণ মানব । দেখেছো কতটা কষ্ট দিলো।আমি ব্যথা পেয়েছি না বলো।কেন এমন করে তোমরা কি জানো।আওয়াজ করিও না তোমাদের বাবা ঘুমোচ্ছে। একদমি উঠতে দেয়া যাবে না।আমি শুধু এটা দেখবো আমাকে না পেয়ে মাননীয় উকিল সাহেব উরুফে তোমাদের বাবা কতোটা জ্বলতে পারে। কিছুক্ষণ জ্বালাতে চাই।চুপ ”
ঘোড়া গুলি যেনো লিয়ানার কথা বুঝতে পারলো। যেনো তারাও সম্মতি দিলো।লিয়ানা গুটি গুটি পায়ে প্যালেসের মেইন গেইটের বাহিরে চলে আসে। এই প্রথম জায়ানকে ছাড়া লিয়ানা বাড়ির বাহিরে পা রেখেছে।সম্পূর্ণ জনমানবহীন এলাকা।লিয়ানা যতটুকু জানে এটা ফ্রান্সের শেষ সীমানা। এটার পর ইতালির শুরু।লিয়ানা ভাবলো জায়ান এক ঘুরে মানুষ পছন্দ না। শহরের কোলাহল থেকে দূরবর্তী স্থানে এসে নিজের সাম্রাজ্যের বানিয়েছেন।আশেপাশে সবুজ শ্যামলা পরিবেশ সুন্দর তবে নাদিয়া মার্কো ভাই, এলেক্স ওরা সহ থাকলে ভালো লাগতো লিয়ানার।একা দিন পার করতে মুটেও ভালো লাগে না তার।একটা বাঁচাল স্বভাবের মেয়ের কিনা দিনের পর দিন রুমে শুয়ে বসে কাটাচ্ছে। এর থেকে হসপিটালে যে ছিলো তাও শান্তিময়।লিয়ানা প্যালেস থেকে দূরে গেলো না।তবে এর পিছনের দিকটায় যেতে লাগলো।যত গভীরে যাচ্ছে কুয়াশাগুলো আরও ঘন হতে থাকে।প্যালেসের পিছনের দিকে চলে আসে লিয়ানা।আসতেই দেখলো সামনে ঘন গাছপালা ঘেরা।একটা বড়সড় সাইনবোর্ড লাগানো।
“Restricted Area”
অবচেতন মনে কৌতূহল জাগ্রত হয়।জায়গাটা রেস্ট্রিকটেড দেয়া কেন।বোকা মনে ফ্যান্টাসি চিন্তাভাবনা এলো।সরকারিভাবে নিষিদ্ধ জায়গাকে কে নিজের স্বামীর এরিয়া ভেবে প্রবেশ করলো।জায়ানের উপর ক্ষোভ থেকে ভাবলো এক ঘন্টা এখানে লুকিয়ে থেকে শাস্তি দিবে।আর জায়ানও খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে আসবে এটা লিয়ানার বিশ্বাস।ঘন গভীর জঙ্গলে পা ফেলে পাঁচ মিনিট হাঁটার পর লিয়ানা সামনে একটা ঝিল দেখতে পায়।কাচের ন্যায় সচ্ছ জলধারা বহমান।এতো সুন্দর ঝিল লিয়ানা এ জীবনে আর দেখেনি।জলে সাদা রাজহংসি সাঁতার কাটছে।লিয়ানা দৌড়ে গিয়ে ঝিলের ধারে বসে পাঁ ভিজিয়ে দেয়।এত সুন্দর জায়গা কেন রেস্ট্রিকটেড দেয়া লিয়ানা ফিসফিস করলো।আর জায়ান তাকে নিয়ে আসে না কেন।তারা তো মাঝে মাঝে এখানে এসে টাইম স্প্যান্ড করতেই পারে।লিয়ানা মনের সুখে ঝিল এর পানিতে পা ভিজিয়ে বসে থাকে।একটা বড় দীর্ঘশ্বাস টেনে নেয়।মনটা খারাপ তবে ভালোরাখার জন্যেই মুখে হাসির রেখা টানে সে।
বেশকিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়।লিয়ানা ঝিলের পানিতে হঠাৎ কারোর একটা ছায়ামূর্তি ভাসমান দেখতে পায়।লিয়ানা পিছন ফিরার আগেই লিয়ানার ঘাড়ে একটা ইনজেকশন পুষ করে দেয় একটা শক্তপুক্ত হাত।লিয়ানা লোকটার হাত ধরে ইনজেকশনটা খুলে ফেলে দেয়।ভয়ে চিৎকার করে উঠে।কালো কুচকচা কালো নিগ্রু দেখতে এক লম্বা লোক তার সামনে দাঁড়িয়ে। লিয়ানা ভয়ে লোকটাকে কোনো মতে ধাক্কা মেরে দৌড়োতে থাকে।লোকটা কুড়াল হাতে তার পিছু ছুটতে থাকে। লিয়ানা দৌড়াচ্ছে। তার নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে।ভয়ে কেঁদে ফেলেছে।বুক কাঁপছে। চুল এলোমেলো হয়ে বাতাসে উড়ছে।চোখে মুখে আতঙ্কের ছায়া।রাস্তা হারিয়ে আরও ঘন জঙ্গলে ভিতরে প্রবেশ করে ফেললো।চারপাশে শুধু ঘন বন পাইন আর ওক গাছের ভেতর দিয়ে হাওয়ার শব্দ যেন ফিসফিসিয়ে বলছে কিছু।পেছনে কোথাও ডাল ভাঙার শব্দ শোনা গেল।মাটির ওপরে লোকটার ভারী বুটের চাপ, এক অজানা নিশ্বাসের গর্জন।লিয়ানা হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়লো, জামার হাতা ছিঁড়ে কনুই কে/টে গেলো।শ্বাস আটকে মুখ চেপে ধরে কাঁদা আগেই চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে এলো।ইনজেকশনের প্রভাবে শরীর অচেতন হয়ে ঢলে পড়ার আগে লিয়ানার পাঁ ধরে লোকটা টান মারে।
একটা পুরনো গুহা।আশেপাশে পচা পাতার গাঁ গন্ধ। গুহার মুখটা সরু পাথর কনঠাল দেওয়ালের দুপাশে লতাপতঙ্গ ঝুলে আছে, কুঁচকে নেমে এসেছে দীর্ঘ আঙ্গুরের মতো।গুহার ভিতরে মৃত মানুষ দেহের কঙ্কাল মাটি চাপা পড়ে আছে।র’ক্ত, পঁচা মাং/সর গন্ধে চার পাশ ভরে উঠেছে।ভিতরে অন্ধকার একটা রুমে চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় লিয়ানা বেহুশ হয়ে পড়ে আছে।লোকটা দুটো ছুড়ি একটা অপরের সাথে ঘষতে ঘষতে গুন গুন করছে।পুরো রুম জোড়ে ক্যামিকেল, মাং/সের পোড়ার বিদঘুটে গন্ধ।লোকটা লিয়ানার কাছে এগিয়ে বিশ্রি একটা হাসি দিলো।কি বিভৎস জঘন্য দেখতে লোকটাকে।লোকটা লিয়ানার চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলো।লিয়ানার শরীরের উপর ধারালো ছুড়ি গলা বেয়ে নিচে নামাতে নামাতে বিশ্রি হাসি দিয়ে বলে,
“মানুষের মাং\সের স্বাদ মিটাতে আমায় আজ আর শহরে শিকার করতে যেতে হলো না।”
লোকটা আর কেউ না এক ভয়ানক নাইজেরিয়ান নর/খাদক যে বহুবছর ধরে আল্পস এ এসে নিজের আস্তানা বানিয়েছে।ন/রখাদকটার প্রিয় খাদ্য তালিকায় প্রথমেই মানুষের তাজা ম/স্তিষ্ক । লোকটা যে একটা অত্যন্ত বিকৃত মস্তিষ্কের তা তার কাজে ফুটে উঠলো।লোকটা নারী শিকার করে আগে ধর্ষ/ণ করে চাহিদা মেটায় তারপর তার মাং/স রান্না করে খায়।লোকটা লিয়ানার কাছ থেকে সরে রুমের এক কোণে রাখা বড় বেডসিটের উপর রাখা একটা ন/গ্ন মেয়ের শরীরের কাছে এসে পৈশাচিক হাসি দেয়।
শেষবারের মতো মৃত দেহটার সাথে ইনটি/মেট হয়ে নেয়।সং/বেদনশীল জায়গা গুলোতে হাত বুলাতে থাকে। মেয়েটা তার কালকের শিকারি ছিলো।মেয়েটার পুরো শরীরে নখের আচর। দাঁতের কা/মুড়ের ছাপ।নর/খাদকটা এতটাই বিকৃত মস্তিষ্কের যে সে ছুড়ি দিয়ে মেয়েটার ব্রে/স্ট কাটতে শুরু করে,তারপর বুকের উপর চাম/ড়া কেটে ছিঁড়ে ভিতরের হাড়গুলো ভেঙে কলিজাটা বের করে তা একটা প্লেটে রাখে।তারপর একটা ধারালো ছুড়ি দিয়ে মাথার খু/লি কাঁটতে থাকে।পরিস্থিতি যতটা বিভৎস জঘন্য হয়ে উঠে। নর/খাদকটার মাং/স খাওয়ার চাহিদা আরও তিব্র হয়ে উঠে।মেয়েটার মাথা থেকে গড়গড় করে তাজা র/ক্ত বের হতে থাকে।নর/খাদকটা জিভ দিয়ে তা চাট/তে শুরু করে।পুরো শরীর নিখুঁত নিপুন হাতে দেহ থেকে চা/মড়া মাং/স গুলো খুলার পর। ব্রেস্টে/র মাংস আর মস্তি/ষ্কের রাখা প্লেটটা নিয়ে চুলার কাছে যায়।লবণ মরিচ মেখে তা ফ্রাইপেন এ রান্না করতে থাকে।পুরো রুমে মাং/স পুড়ার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।নর/খাদক টার জিভ দিয়ে অনবরত লা/লা গড়িয়ে পড়তে থাকে তাজা মাং/স পুড়া খাওয়ার চাহিদায়।মাথার মস্তি/ষ্কটা ফ্রাই হয়ে গেলে এক সেকেন্ড দেরি না করে পাগলের মতো তা খেতে থাকে।যেনো কয়েককুটি বছরের হিংস্র পশু তার ক্ষুধা মিটাচ্ছে।
তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩৯
প্রায় দুঘন্টা অতিক্রম হওয়ার পর জায়ান হঠাৎ চোখ খুলে তাকায়…….
পাশে একটা চিঠি রাখা….
[Save your liver before touching the liver]
(কলিজাতে হাত দেওয়ার আগে কলিজাকে বাঁচিয়ে নাও)
