তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১১

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১১
তানিশা সুলতানা

“ক…কি বলছেন এসব?
অলক্ষুণে কথা নিয়ে মজা করবেন না প্লিজ।
ভয়ার্তক স্বরে বলে আদ্রিতা। জবাব দেয় না আবরার। তাকায়ও না আদ্রিতার পানে। বরং খুবই মনযোগ সহকারে ড্রাইভ করতে থাকে।
আদ্রিতা বড় বড় নয়নে তাকিয়ে আছে আবরারের মুখ পানে। খুবই কাছাকাছি রয়েছে মুখ খানা। যতটা কাছাকাছি থাকলে একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যায় ঠিক ততোটাই কাছাকাছি।

এই মুহুর্তে আদ্রিতা আবিষ্কার করলো লোকটার থুতনিতে কাটা দাগ রয়েছে। দাঁড়ির জন্য দাগটা দেখা যায় না। আর বা চোখের পাশে একটা ছোট তিল রয়েছে। একদমই ছোট। কাছাকাছি ছাড়া নজরে পড়বে না।
তারপর লোকটার বুকের ভেতর হতে টিপটিপ আওয়াজ আসছে। হার্টবিট দ্রুত চলছে বোধহয়। আদ্রিতা ব্যাপার খানা শিওর হওয়ার জন্য নিজের বা হাত খানা চেপে ধরে আবরারের বুকের বা পাশে। মাথা খানা এগিয়ে কান খাড়া করে।
নাহহ ঠিকই শুনছে। টিপটিপই করছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মেয়ে মানুষ কোলে বসে থাকলে শুধু হার্টবিট নয় আরও অনেক কিছুই ফাস্ট চলে।
ভূমিকম্পের ন্যায় শোনালো আবরারের কথা খানা। সাইক্লোন যেমন হঠাৎ করে এসে কাঁপিয়ে দেয় প্রকৃতি ঠিক তেমনই আবরারের কথা খানা কাঁপিয়ে দেয় আদ্রিতার সমস্ত সত্তা। অন্য রকম শোনালো লোকটার কন্ঠ। ডার্ক রোমান্টিক মুভিতে হিরো যখন নায়িকার সাথে রোমাঞ্চ করার মত্ত থাকে। তখন দুই এক খানা কথা বলে স্লো ভয়েসে৷ ঠিক তেমন শোনালো। লোকটার বউয়ের কপালে শনি রবি সোম সব রয়েছে। দেখা গেলো সর্বক্ষণ বউকে কোলে নিয়ে ভুলভাল বার্তা বলে গেলো। বা এমনও হতে পারে বদ্ধ কক্ষে চার পাঁচ দিন কাটিয়ে দিলো। ওহহ মাই গড।
শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিতা। আঁখি পল্লব বন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চালায়।

এ্যানি পাশের সিটে গা এলিয়ে দিয়েছে এবং কুটুর কুটুর নয়নে আবরার আদ্রিতাকে দেখতে। পলক ফেলছে না চোখের। আবার কিছু বলছেও না। যেনো আদ্রিতা এবং আবরার মুভি করছে আর এ্যানি সেই সিন দেখছে।
একটু নরেচরে ওঠে আদ্রিতা। আবরারের কাঁধে হাত দিয়ে একটু ভালে করে বসার চেষ্টা করে। তখনই আবরার ফের বলে ওঠে
” উমমম
ডোন্ট ডিস্টার্ব
কপালে ভাজ পড়ে আদ্রিতার। কখন সে ডিস্টার্ব করলো? উল্টে সেই তো আদ্রিতাকে ডিস্টার্ব করছে।

হাতে ভেজা ভেজা কিছু অনুভব করতেই আদ্রিতা নজর দেয় আবরারের গলায়। ঘেমে গিয়েছে লোকটা। কিন্তু কেনো? ওয়েদার তো ঠান্ডা। শীতের পোশাক পড়ার মতো ওয়েদার। তাহলে এই হাতি ঘামছে কেনো? আশ্চর্য
হঠাৎ গাড়ি থেমে যায়। আদ্রিতার হুশ ফেরে। এতোক্ষণ আবরারকে অনুভব করতে এতোই ব্যস্ত ছিলো যে কখন পথ ফুরিয়ে গিয়েছে খেয়ালই করে নি।
আবরার চোখ বন্ধ করে আদ্রিতার কোমরে হাত রাখে। গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেয় কোমরের ভাজ। পূনরায় কেঁপে ওঠে আদ্রিতা। নিজের হাত খানা রাখে আবরারের হাতের ওপর। এবং বল প্রয়োগ করে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। রিনরিনিয়ে বলে

“আ….আমি নামবো।
বিরক্ত হলো বোধহয় আবরার। চোখ মুখ কুঁচকে চোখ খুলে। আদ্রিতার নিচু মুখের পানে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে ভয়ংকর কিছু অশ্লীল বাক্য আওড়ায়। আদ্রিতা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বেরুচ্ছে তার। ছিহহ লোকটা এতো অশ্লীল?
বিরবির করে বলে
“আপনি প্লিজ মুখে ফুলস্টপ মেরে থাকুন। মুখ খুললেই ভুমিকম্প হয়ে যাবে।
আবরার বোধহয় শুনতে পেলো আদ্রিতার কথা। তাই তো চাপা স্বরে বলে ওঠে
“উহু ভুমিকম্প এখনো হয় নি। আসিফ আদনান নামটা আর একবার শুনলে ভুমিকম্প হবে তোমার ছোট্ট দেহ খানায়। সহ্য করতে পারবে না। ম রে যাবে।

নিজ বক্তব্য শেষ করে সিট বেল্ট খুলে গাড়ির দরজা খুলে দেয় আবরার। আদ্রিতা যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। তারাহুরো করে নেমে পড়ে আবরারের কোল হতে। কোনো দিক না তাকিয়ে এক দৌড়ে চলে যায় মূল ফটকের ভেতরে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে দুটো শ্বাস টানে। এতোক্ষণ যেনো শ্বাস আটকে ছিলো।
লোকটা ভয়ংকর।
শুধু ভয়ংকর নয় নির্লজ্জ। ছিহহ কিসব কথা বলে। মুখের কোনো ব্রেক নেই।
অসভ্য হাতি একটা।

জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় আদ্রিতা। কলিং বেল চেপে দাঁড়িয়ে থাকে। একবার পিছু ঘুরে উঁকিও দিয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যে। মনে হচ্ছে এই বুঝি লোকটা পেছনে চলে আসলো আর আবারও কিছু ভুলভাল বাক্য আওড়ালো বা আদ্রিতাকে
না না ছিহ ছিহহ
লোকটা আর এমন করবে না।
এ্যনি আদ্রিতার পা ঘেসে দাঁড়ায়। সে মাত্রই দৌড়ে এলো।
মিনিট দুয়েক পরে সিয়াম দরজা খুলে দেয়। আদ্রিতাকে দেখে এক গাল হেসে বলে
” উফফফ আদ্রিতা তুমি হচ্ছো চোখের শান্তি। তোমায় দেখলেই পরান জুরিয়ে যায়।
আদ্রিতা সিয়ামকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে জবাব দেয়

“সিয়াম ভাই আমি আপনার আপন বোন৷ ফ্ল্যাট করবেন না।
সিয়ামের হাসি মাখা মুখ খানা চুপসে যায়। হাত দ্বারা কপালে দুটো আঘাত করে উচ্চস্বরে বলে
” ইয়া মাবুদ এই ছিলো আমার কপালে?
হতে চাইলাম বর
বানিয়ে দিলো আপন ভাই?
এসব আমি কেম্নে সহ্য করবো?
আদ্রিতা হেসে ফেলে সিয়ামের কথা শুনে। অলস ভঙ্গিমায় সোফায় এসে বসে। হাতের ইশারায় সিয়ামকেও ডাকে। নিজের পাশে বসতে বলে।
ভদ্র ছেলে সিয়াম এসে বসে আদ্রিতার পাশে।
“ভাই উনি বললো “আ’ম ইউওর হ্যাজবেন্ড”
কেনো বললো গো? কাহিনি কি? পাগল হলো না কি?
“আরেহহ ধুর ওই শালা পাগল।

ছোট বেলায় তোমাদের বিয়ের কথা হয়েছিলো ও সেটা ধরেই পড়ে আছে। হে হে ভেবেছে তোমাকে বিয়ে করবে।
পাগল ছেলে
কেবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলে সিয়াম
হতাশ আদ্রিতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“পৃথিবীতে এতো এতো ভালো মানুষ থাকতেও আমার বিয়ের কথা কেনো ওই হাতির সাথেই হয়েছিলো সিয়াম ভাই?
সিয়াম শান্তনা দেওয়ার ভঙ্গিমায় বলে
” তুমি চাইলে হাতি ডিলিট করে সিয়ামকে সেভ করতে পারো। অপশন আছে।
আদ্রিতা মুখ বাঁকায়

“পাগলের থেকে হাতিই ভালো। নয় কি?
” তুমি আমায় পাগল বললে আদ্রিতা?
“না তো ভাই। কখন বললাম?
আপনি আমার আপন ভাই। পাগল বলতে পারি?
সিয়াম ঘোর প্রতিবাদের সুরে কিছু বলবে তার আগেই হুরমুরিয়ে ঢুকে পড়ে আহাদ, আমান এবং ইভান। তাদের হাতে রয়েছে বিশাল সাইজের ব্যাগ।
কৌতুহলী আদ্রিতা প্রশ্ন করে
” ব্যাগে কি আছে?
জবাব দেয় আমান
“আজকে আবরারের বার্থতে তো। ওকে সারপ্রাইজ দিবো।

পরপরই ওরা কাজে লেগে পড়ে। অহনা আদ্রিতার কোলে বাচ্চা দিয়ে নিজেও ওদের হাতে হাতে সাহায্য করে। আতিয়া বেগম শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। তার ছেলে কি এসব মানবে? করবে বার্থডে সেলিব্রেট? হয়ত করবে না।
ঘন্টা লেগে যায় সাজানো শেষ হতে। আমান এবং আহাদ আতিয়া বেগমকে জোর করে কিচেনে পাঠিয়ে দেয়। তারা কেনো কেক আনে নি। আতিয়া বেগম এর হাতে বানানো কেক দিয়েই আবরারের বার্থডে সেলিব্রেট করবে।
কাজ শেষে সকলেই ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। বাচ্চা কাঁদছে বিধায় অহনা তাকে নিয়ে নিজ কক্ষে চলে যায় দুধ খাওয়াতে।
আদ্রিতা এক খানা বেলুন ফুলানোর চেষ্টায় আছে।
আমান বলে

” আদ্রিতা তুমি কবিতা বলতে পারো?
“হ্যাঁ ভাইয়া খুব পারি। এমনকি মুখে মুখে কবিতা বানাতেও পারি। শোনাবো একটা?
আহাদ বলে
” শোনাও তো দেখি।
সোজা হয়ে বসে আদ্রিতা। শুকনো কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নেয়। তারপর বলে
“আম পাতা জোড়া জোড়া
সিয়াম ভাইয়ের কপাল পোড়া
শেয়ালের ডাকে কুকুর নাচে
আহাদ ভাই আশায় বাঁচে
রাতের রং কালো
আমান ভাই খুবউউউ ভালো
দূর আসমানে বক থাকে
ইভান ভাই কু কু কু বলে ডাকে
মানুষ নাম তার দেখতে হাতির বাচ্চা
সে আর কেউ নয় আমাদের আবরার চাচা

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১০

আতিয়া বেগম উচ্চস্বরে হেসে ফেলে আদ্রিতার কবিতা শুনে। আমান লাজুক হেসে আদ্রিতার পাশে বসে পড়ে। আহহা তাকে ভালো বলেছে মানে আদ্রিতার তাকে ভালো লাগে।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১২