তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৬
তানিশা সুলতানা
“হাতির বাচ্চা গরিলা আবার গানও গাইতে পারে?
আল্লাহ আমি কি কানে ঠিক শুনছি? না কি ভুল শুনলাম?
আবরার তাসনিন রোমান্টিক গানও জানে?
কতো কি যে দেখবো আর আল্লাহ ই জানে।
বিরবির করে আওড়ায় আদ্রিতা। আজকের সকালটা বড্ড বাজে। একদম যা তা।
এ্যানি কোলের মধ্যে এখনো ঘুমচ্ছে। এই হয়েছে আরেক নবাবজাদা। খালি খাবে আর ঘুমবে। কোনো দায়িত্ব নেই। তাকে আদ্রিতা আদর যত্ন করে কেনো লালনপালন করছে?
কেনো?
শুধু শুধু?
উহু
এই দুনিয়ায় ফ্রীতে একটা থা*প্প*ড়ও পাওয়া যায় না। এ্যানিকে মূলত ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে ইন ফিউচার বডিগার্ড এর কাজে লেগে পড়ার জন্য। আদ্রিতাকে প্রটেক্ট করার জন্য।
কিন্তু এ কি করছে?
তার চোখের সামনে দিয়ে তারই মাকে মানুষ কা*ম*ড়ে যাচ্ছে। আর সে টেরই পাচ্ছে না।।
ছিহহহ আদ্রিতা ছিহহ
তোর বাচ্চা কোনো কাজের না।
এ্যানিকে মনে মনে বকতে বকতে নিজ কক্ষের দিকে পা বাড়ায় আদ্রিতা। উদরের ক্ষত স্থানে এখনো চিনচিন ব্যাথা করছে। তবে সেসব পাত্তা দিচ্ছে না। আর জীবনেও ড্রয়িং রুমে ঘুমবে না সে। হাজারবার প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছে ইতোমধ্যেই।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বরাবরই সকালের ব্রেকফাস্ট সিয়াম বানায়। আবরার এবং সে এক সাথে আছে প্রায় আট বছর। এই আট বছরে কখনোই আবরারকে ব্রেকফাস্ট বানাতে দেয় নি।
আজকেও তার ব্যতিক্রম নয়। ঘড়ির কাটায় ঠিক ঠাক দশটা বাজতেই কক্ষ হতে বেরিয়ে আসে। খুব সাবধানে পা ফেলে এদিক ওদিক পর্যবেক্ষণ করে নেয়। সব কিছু স্বাভাবিক আছে।
অতঃপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কিচেনের দিকে চলে যায়। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলো আদ্রিতা। সে এ্যানির জন্য দুধ গরম করছে। রোজ সকালে তার দুধ না হলে চলে না।
সিয়াম শুকনো ঢোক গিলে। আবারও পেছন ফিরে পর্যবেক্ষণ করে নেয় আবরার আছে কি না?
ড্রয়িং রুমের সোফায় দেখা মেলে সাহেব এর। আরামসে বসে ফোনে ফ্রী ফায়ার গেমস খেলছে। মুখ খানা দেখে মনে হচ্ছে এর থেকে নিষ্পাপ এবং ভালো ছেলে দুনিয়ায় দুটো নেই।
সিয়াম ভেংচি কাটে। মনে মনে গালিও দেয় ” শালা বউ কি তোর একাই আছে? দুনিয়ায় আর কেউ বিয়ে করে নাই? সারাক্ষণ চিপকে থাকতে হবে। আর আমাকে ম্যাঁ ম্যাঁ বলে ডাকতে হবে। অসহ্য”
তারই মধ্যে আদ্রিতা পেছন ঘুরে তাকায়। সিয়ামকে দেখে এক গাল হাসে। প্রতিত্তোরে সিয়ামও হাসে।
“সিয়াম ভাই জানেন কি হইছে?
আমান ভাই এ*ক্সি*ডে*ন্ট করেছে। তার হাত ভেঙে গেছে।
সিয়াম এগিয়ে আসে। সেলফ থেকে ময়দার ডিব্বা বের করতে করতে আশ্চর্য ভঙ্গিমায় বলে
” কি বলছো?
কবে ঘটেছে এই ঘটনা? আর তুমি জানলে কি করে?
আদ্রিতা মলিন স্বরে জবাব দেয়
“মা কল করেছিলো। বললো আমায়। এটাও বললো উনি যাচ্ছে হাসপাতালে আমান ভাইকে দেখতে।
সিয়াম ঠোঁট গোল করে “ওহহ” শব্দটা আওড়ায়। এবং আড়চোখে ড্রয়িং রুমের সোফার পানে তাকায়। কিন্তু আশ্চর্য জনক বিষয় হচ্ছে সেখানে আবরার নেই। যাহহম শালা কোথায় গেলে?
চিন্তিত সিয়াম কপাল কুঁচকে গোটা ড্রয়িং রুম পর্যবেক্ষণ করে অতঃপর কিচেনের দরজার পানে তাকাতেই চমকে ওঠে। কেনোনা নোবেল প্রাপ্ত বউ ওয়ালা এখন কিচেনের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়াম বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। বিরবির করে বলে
“শালা কোলে নিয়ে বসে থাক তুই তোর বউকে। আর নাহলে টিপ করে গিলে খেয়ে ফেল।”
“সিয়াম ভাই আমাকে নিয়ে যাবেন হাসপাতালে? আমান ভাইকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
আজকেই বুঝলেন
আর কখনোই আমাকে নিয়ে যেতে হবে না কোথাও। কেনো বলুন তো?
আমার আসিফ সন্ধ্যায় ল্যান্ড করবে সুইজারল্যান্ড এ। তারপর সেই আমাকে সব জায়গায় নিয়ে যাবে।
সিয়াম শুকনল ঢোক গিলে পেছনে তাকায়। আবরারের গম্ভীর মুখশ্রী দেখে মুহুর্তেই কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে
” কিচ্ছু করি নি আমি। মা উসকাচ্ছে। আমি ভালো ছেলে। বিশ্বাস কর।।
আদ্রিতা ভ্রু কুচকে পেছনে তাকায়। আবরারকে দেখে চমকে ওঠে। ঠোঁটের কোণের হাসিটুকু দৌড়ে পালিয়ে যায়। সেখানে ভর করে এক রাশ ভয়। আশ্চর্য লোকটা বাঘের মতো দেখছে কেনো?
এখনই গর্জন দিয়ে উঠবে না কি?
ভয়ার্তক আদ্রিতা মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকে। সিয়াম এক ফাঁকে টুপ করে কেটে পড়ে কিচেন থেকে। “নিজে বাঁচলে বাপের নাম” উক্তি খানা যেনো সিয়াম এর জন্যই তৈরি।
আবরার বুট জুতোর খট খট আওয়াজ তুলে আদ্রিতার পানে আগায়। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মুহুর্তেই নিজের হাত খানা ঢুকিয়ে দেয় টপস এর ফাঁকে। কা*ম*ড় দেওয়া জায়গায় চেপে ধরে শক্ত করে। আদ্রিতার নয়ন জোড়া বড় বড় হয়ে যায়। দু পা পিছিয়ে যায়। তবে সুবিধা করতে পারে না। দেয়াল পিঠ ঠেকে।
এটারই সুযোগ নেয় আবরার। চেপে ধরে দেয়ালের সাথে।
এবং হিসহিস করে বলে
“ভালো মানুষ নই আমি।
তবুও ভালো হওয়ার চেষ্টা করছি। জাস্ট বিকজ অফ ই্যয়ু।
আমাকে রাগিও না। তাহলে নেক্সট কা*ম*ড়টা বেলিতে নয় বুক
থেমে যায় আবরার। আদ্রিতা আঁখি পল্লব বন্ধ করে নেয়। কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছে তার। তাহলে তাকে আবরার কা*ম*ড়ি*য়েছে?
গলা শুকিয়ে আছে আদ্রিতার। আবরার নজর নিষিদ্ধ স্থানে। টপসের গলা বড় হওয়ার সুবিধার্থে এক অংশ বেরিয়ে গিয়েছে। আবরারের থাবায় ওড়না নিচে পড়ে গিয়েছে।
লজ্জিত আদ্রিতা টপস এর গলা টেনে ঠিক করার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।
আবরার তাসনিন এর হাতের চাপে পড়েছে টপস এর বেশ অনেকটা অংশ।
” ছ…ছাড়ুন আমায়।
কি…কি করছেন?
আবরার আদ্রিতার গলার দিকে মুখ এগোতে এগোতে বলে
“ছাড়ুন ধরুন অশ্লীল আওয়াজ এসব করবে আমার নিচ
আদ্রিতা নিজের হাত দিয়ে ছাপিয়ে ধরে আবরারের মুখ। বলতে দিবে না সে। লোকটার কথা ভয়ংকর। কাঁপিয়ে তুলে আদ্রিতার সর্বাঙ্গ। নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয়
“আপনি প্লিজ কথা বলিয়েন না।
আপনার মুখের একেকটা কথা আমার আমার
থেমে যায় আদ্রিতা।
আবরার ঠোঁট বাঁকিয়ে ভ্রু কুচকে ছোট ছোট নয়নে দেখতে থাকে আদ্রিতাকে। কপাল, নাক, গাল, ঠোঁট তারপর
পূণরায় অপস্তুত হয়ে পড়ে আদ্রিতা। ছাড়া পাওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকে।
জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে মনে মনে বলে
” আপনার চাহনি মুখের ভাষার থেকেই মারাক্তক।
কখন জানি ছোট্ট আদ্রিতার ছোট কলিজা লাফিয়ে বেরিয়ে আসবে।
কলিং বেল বেজে ওঠে। আদ্রিতা ছটফট করতে থাকে। আবরারের হাতের ওপর হাত রেখে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। বিরক্ত আবরার দাঁতে দাঁত চেপে ছেড়ে দেয় আদ্রিতাকে। চুলায় বসানো গরম দুধের পাতিল ফেলে দেয় ছুঁড়ে। বিকট শব্দে দেয়ালে বাড়ি খায় সেটা।
আদ্রিতা জান হাতে নিয়ে এক দৌড়ে চলে যায় কিচেন থেকে। বাড়ির মূল ফটকের দরজা খুলে দেয়। আতিয়া বেগমকে দেখে মুহুর্তেই জাপ্টে জড়িয়ে ধরে। এবং বিরবির করে বলে
“মা আমি আর এখানে থাকবো না। বাংলাদেশ নিয়ে চলো আমাকে।
আতিয়া বেগম আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে। আশ্বাস দিয়ে বলে
” আম্মু আমি চলে এসেছি তো। কি হয়েছে বল আমায়?
আদ্রিতার হুশ ফেরে। কি বলবে মাকে? “তোমার ছেলে কা*ম*ড়ি*য়েছে আমায়? না কি বলবে “দেয়ালের সাথে চেপে ধরে উদরে হাত দিয়েছে?”
ছিহ ছিহহ এসব বলা যায়।
অপ্রস্তুত আদ্রিতা একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
“তো..তোমায় মিস করছিলাম তো তাই।
আতিয়া আদ্রিতার মাথায় গাট্টা মারে। হেসে বলে
” পাগল মেয়ে।
আবরার সুট বুট পড়ে জেল দিয়ে সেট করা চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বেরিয়ে যায় সদর দরজা পেরিয়ে। একবারও ওদের দিকে তাকায় না। আতিয়া বেগম এক পলক তাকিয়ে নজর ফিরিয়ে নেয়। আদ্রিতাকে নিয়ে সোফায় বসে।
তখনই ফের কলিং বেল বেজে ওঠে। দরজা খোলা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে ধবধবে ফর্সা একটা মানব।
আদ্রিতা এগিয়ে যায়।
এবং বলে
“কি চাই?
ছেলেটা একটা ফোন এগিয়ে দেয় আদ্রিতার পানে। এবং ইংরেজিতে কিছু একটা বলে। মূর্খ আদ্রিতা ইংরেজি বোঝে কম। তাই ছেলেটার কথা বুঝতে পারে না। তবে আন্দাজ করে নেয়।
ফোন খানা হাতে নিয়ে বলে
” খুঁজে পেয়েছেন ফোনটা? রাস্তায় পড়ে ছিলো?
ধন্যবাদ আপনাকে। আসলে একটা হাতি ফেলে দিয়েছিলো এটা।
আপনাদের দেশ ভীষণ উন্নত। হারানো ফোন ফিরে পাওয়া যায়। আমাদের বাংলাদেশ হলে গাঁ*জাখোররা এটা বিক্রি করে গাঁ*জা খেতো।
আপনারা বুঝি গাঁ*জা খান না?
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৫
ছেলেটা পূণরায় কিছু বলে। মানে হলো “সে আদ্রিতার কথা বুঝতে পারে নি”
হতাশ আদ্রিতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“অউন্নত অশিক্ষিত লিজেন্ড হীন দেশ হচ্ছে সুইজারল্যান্ড।
বাংলাদেশের মানুষদের সামনে হা বললেই তারা হাতি বুঝে যায়। অ বললে অজগর।
আর এখানকার মানুষদের কথা বেটে গিলিয়ে দিলেও বলে
” স্যরি ম্যাম আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট ইউআর সেইং”