তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৮

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৮
তানিশা সুলতানা

“তাছিন গ্রুপ অফ কোম্পানি” আবরার তাসনিন এর দীর্ঘ ১০ বছরের পরিশ্রমের ফসল এই কোম্পানি। ছোট বেলা থেকে বহুবার শুনেছে “দাদার টাকায় খাচ্ছিস”
“দাদা ছিলো বলেই ফুটানি করতে পারে”
ঠিক তখন থেকেই আবরারের একটাই লক্ষ ছিলো বড় হওয়া৷ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।
সবাই যাতে বলে “আবরার তাসনিন বেস্ট”

সুইজারল্যান্ড এ আবরার বা তাসনিন নামখানা উচ্চারণ করা কঠিন। এখানকার জনগণ ঠিকঠাক বলতে পারে না। তাই নিজের বড় নাম খানা কেটে তাছিন বলে পরিচিত করেছে।
তাছিন গ্রুপ অফ কোম্পানিতে চারশত কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। তারা আবরারের আন্ডারে কাজ করে। লেহেঙ্গার সহ নায়িকাদের পরনের বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর ড্রেস তৈরি সহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয় এখান থেকে।
এসব আতিয়া বেগম জানতেন না। আজকে জানতে পেরেছে ইভান এর থেকে।
মনটা বড্ড খারাপ তার। নিজের ছেলে একটুও দাম দেয় না তাকে। কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত জানায় না। বা কি করছে না করছে সেসবও জানার অধিকার তার নেই।।
কিন্তু কেনো?
কি দোষ করেছেন তিনি?
মা হিসেবে কি ব্যর্থ তিনি?
হয়ত তাই।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আতিয়া বেগম। চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু কণা মুছে নেয় হাতের উল্টো পিঠে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আসিফ আদনান আদ্রিতার ক্রাশ। কলেজে পা রাখার পরপরই মানুষটিকে দেখেছিলো। তখন থেকেই মনে ধরেছিলো। এবং এখন পর্যন্ত মনে রয়ে গিয়েছে। ক্রাশ থেকে ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠেছে।
জুরিখ নদীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিতা। প্রথমবার একা একা অনেকটা পথ অতিক্রম করেছে। জিজ্ঞেস করতে করতে পৌঁছেছে অচেনা গন্তব্যে। সত্যি বলতে একটুও ভয় করে নি তার।
নিজের দেশে একা একা শপিং মলে যাওয়ার সাহস না পাওয়া মেয়েটি। সুইজারল্যান্ড এর জুরিখ শহরের শেষ প্রান্তে অবস্থিত জুরিখ নদীর পাড়ে এসেছে।
সবটাই কি ভালোবাসার টান?

হুমম
এই যে যতক্ষণ ট্যাক্সিতে ছিলো সর্বক্ষণ মনে হয়েছে “কখন পৌঁছোবে?
আসিফ আদনানকে দেখে
রিয়াকশন কেমন হবে?
সে কি রংয়ের শার্ট পড়ে আসবে?
আদ্রিতার জন্য কি ফুল আনবে?
বা কোনো গিফট?
ফাস্ট ডেট এ তো গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড গিফট দেয়।
আদ্রিতা ঠিক এনেছে আসিফ আদনানের জন্য গিফট।
সে কি আনবে?

এটা সেটা ভাবতে ভাবতেই পৌঁছে যায়। নির্দিষ্ট জায়গায় ট্যাক্সি থামতেই ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ে।
বিশাল এক ঝুলন্ত ব্রিজ দেখা যাচ্ছে। লাল নীল নিয়ন বাতি চলছে ব্রিজ জুড়ে। দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে।
চারিপাশে অনেক কাপল দেখা যাচ্ছে। যারা হাতে হাত রেখে হাঁটছে। কেউ কেউ চুম্বনে লিপ্ত হচ্ছে।
আদ্রিতা মুচকি হাসে। দু পা এগিয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ায়। বিশাল নদী। তবে শান্ত। একটুও ঢেউ নেই।
এ্যানিকে কোল থেকে নামাতে যায় তবে এ্যানি নামে না। খাঁমচে ধরে আদ্রিতার জামা। আঁচড় লেগে যায় গলায়। মৃদু স্বরে “আহহ” বলে ওঠে আদ্রিতা।
তখনই ভেসে আসে গম্ভীর কন্ঠস্বর

“এখানে কি করছো তুমি?
আদ্রিতার বুকের ভেতরটা টিপটিপ করছে। পেছন ঘুরে তাকানোর সাহস টুকুও পাচ্ছে না। পরিচিত মানুষ। যাকে আগে দূর থেকে দেখতো। অতঃপর সেইদিন কাছ থেকে দেখলো। ছুঁয়ে দিলো হাত। আবার আজকেও কাছ থেকে দেখবে। এই তো পেছন ঘুরলেই দেখতে পাবে৷ ঠোঁটের কোণের মৃদু হাসি চওড়া হয়। ধীরে ধীরে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে৷ তাকায়। আসিফ আদনান তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে৷ চোখ তুলে তাকায় আদ্রিতা। মুহুর্তেই চোখাচোখি হয়। মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল, শ্যাম বর্ণ গায়ের রং। হঠাৎ আদ্রিতার মনে হয় আসিফ আদনান আবরার তাসনিন এর মতো এতোটা সুদর্শন নয়।
লোকটার মধ্যে একটা হিরো হিরো ব্যাপার আছে। হটনেসে ভরপুর।
দাঁত দিয়ে জিভ কাটে আদ্রিতা। মনে মনে বলে

“ছিহহহ নির্লজ্জ লুচু লোকটার কথা কেনে ভাবছিস পঁচা আদ্রিতা। ভাবিস না তার কথা সে একটা বাজে লোক।
আসিফ আদনান এগিয়ে আসে। আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে
” এখানে একা দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
“ও..ওই আপনাকে খুঁজছিলাম।
” আমি ওই দিকে ছিলাম। ওখানকার ভিউ বেশি জোশশ। চলো যাই।
আদ্রিতা মাথা নারিয়ে সম্মতি জানায়। পাশাপাশি হাঁটতে থাকে আসিফ আদনানের। এ্যানি কুটুর কুটুর নয়নে তাকিয়ে আছে। ভাব খানা এমন যেনো বোঝার চেষ্টা করছে “এই মালটা আবার কে?”

আসিফ খেয়াল করে। হাত বাড়িয়ে ছুঁড়ে দেয় এ্যানির লোমে ভরপুর শরীর। বিরক্ত এ্যানি মুখ ঘুরিয়ে ম্যাউ ম্যাউ আওয়াজ তুলে।
আদ্রিতা হেসে বলে
“ও আসলে অপরিচিত মানুষদের দেখলে ভয় পায়।
” তো পরিচিত করাও। বলো আমি ওর বাবা।
লজ্জা পায় আদ্রিতা মাথা নিচু করে ফেলে। গাল দুটোও লাল হয়ে ওঠে। আসিফ জিন্স এর পকেটে হাত ঢুকায়। দূরে চুম্বন লিপ্ত এক কাপলের পানে তাকিয়ে বলে

“তারপর কেমন চলছে দিনকাল?
” উমমম ভালোই।
পেছন থেকে ভেসে আসে কবিতার সুর
“দিনকাল যায় ভালো
রাত হলে হয় কালো
শা/লা তোর কপাল ভালো
তাছিন ভাই নেই এখানে
থাকলে তুই ভোগে যেতিস
বিদম মা/ই/র খেতিস
পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে আদ্রিতা পেছন ঘুরে তাকায়। সিয়াম এবং আহাদকে দেখে আশ্চর্য হয়ে বলে
” আরেহহ আপনারা এখানে?
“মাইয়্যা খুঁজতে আইছিলাম মা।

সিয়াম এর সরল জবাব। এ্যানি হাত বাড়িয়ে মিউ মিউ বলো ওঠে। মানে সিয়াম এর কোলে উঠবে।
সিয়াম হাত বাড়িয়ে নেয় তাকে। এবং বলে
” এই মফিজ আবার কেডা?
হাবলু হাবলু দেখতে। কোনো টোকাই না কি?
থমথমে খেয়ে যায় আসি। নিজের পানে তাকায়।
“মিট মাই বয়ফ্রেন্ড আদনান তাসনিন। আপনি হাবলু টাবলু কি বলছেন এসব?
সিয়াম গম্ভীর নয়নে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে আসিফ আদনানের। দু পা এগিয়ে এসে চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। আসিফ আসহায় নয়নে তাকিয়ে থাকে সিয়াম এর মুখ পানে।
” চুল গিলো কি আসল না কি কস্টিউব দিয়ে লাগানো?
আহাদ বলে

“সুপার গ্লু দিয়ে লাগানো হতে পারে।
আসিফ তারাহুরো করে বলে
” না না এগুলো আমার আসল চুল।
সিয়াম ভ্রু কুচকে ফেলে।
“আমি তোমার নানা?
আসিফ শুকনো ঢোক গিলে তাকায় আদ্রিতার পানে।
” আমি বলতে চেয়েছি
আসিফকে থামিয়ে আদ্রিতা বলে
“ও মানে বুঝিয়েছে। না
না

” আমি তো সেটাই বললাম। নানা কেনো ডাকলো আমায়?
ছেলে পছন্দ হয় নি। আদ্রিতা তাকে রিজেক্ট করে দাও।
ভীষণ গম্ভীর দেখাচ্ছে আসিফ এর মুখ খানা। যেনো ভীষণ সিরিয়াস সে। এবং নিজের সিদ্ধান্ত থেকে এক পা নরবে না।
আদ্রিতা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে
“ভাইয়া এমন করছেন কেনো?
উনি ভালো ছেলে।
আহাদ বলে ওঠে
” গোটা দুনিয়ায় আমার বন্ধু আবরারের থেকে ভালো মানুষ দুটো নেই।
সিয়াম কবিতার মাধ্যমে ওদের বুঝিয়ে দে তো।
সিয়াম কবিতা বলার জন্য প্রস্তুতি নেয়। শুকনো কাশি দিয়ে বলতে শুরু করে

“ভালো মানুষ কাকে বলে
যদি জানতে চাও
আবরার তাসনিন এর নামটা
ভাই জেনো রেখে তাই
আমি তুমি সবাই জানি ভালো কাকে বলে
আমার বন্ধু আবরার একমাত্র ভালো ছেলে।
আসিফের মাথা ঘুরছে এমন উদ্ভট কবিতা শুনে। এগুলো কবিতা হলে কবিতাকে কি বলে?
আদ্রিতা বুকে হাত গুঁজে ছোট ছোট নয়নে তাকায় সিয়ামের পানে এবং বলে

” সিয়াম ভাই।
আপনি আমাকে কপি কেনো করছেন?
এমন কবিতা আবৃত্তি আমি করি। আপন
আসিফ হতাশ স্বরে বলে
“তুমি কবিতা আবৃত্তি করো?
আদ্রিতা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে
“হ্যাঁ
সিয়াম ভাই তো আমার থেকেই কবিতা শিখেছে। বলুন সিয়াম ভাই।
সিয়াম কথা বলতে পারে না। কেনোনা তার দৃষ্টি আটকে গিয়েছে আদ্রিতার পেছনে মেরুন রঙের টপস পরিহিত এক রমনির পানে। আহহহা
কি সুন্দর দেখতে মেয়েটি।
সিয়াম জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। এ্যানিকে ছুঁড়ে ফেলে মাটিতে। এবং শার্টের পকেটে থাকা সানগ্লাস পড়ে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে চলে যায় সেদিকে।
এ্যানি বেচারা ব্যাথা পেয়ে মিউ মিউ করে ওঠে।
আদ্রিতা তারাহুরো করে কোলে নেয় এ্যানিকে।
গায়ে হাত বুলিয়ে কোথাও ব্যাথা পেয়েছে কি না চেক করতে থাকে। আসিফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
” তুমি এদের এনেছো কেনো?
আহাদ বলে ওঠে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৭

“এনেছো তো?
তোর প্রবলেম কি?
আমাদের বস কে জানিস?
তোকে মে/রে তক্তা বানিয়ে দিবে।
রাগান্বিত কন্ঠস্বর আহাদ এর।
আসিফ বলে ওঠে
” ভাইয়া আপনি রেগে কেনো যাচ্ছেন? আমি জাস্ট জিজ্ঞেস করছি।
ঠিক আছে আমি তাহলে যাচ্ছি। আদ্রিতা চলো তোমায় পৌঁছে দেই।
“এখানে কি হচ্ছে?
আবরার তাসনিন। আদ্রিতা চমকায়। ভয়ে আসিফ আদনানের পেছনে চলে যায়৷

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৯