তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৯
তানিশা সুলতানা
সুইজারল্যান্ড এর জনপ্রিয় জুরিখ ব্রিজ যতটা সুন্দর আজকের পরিবেশ ঠিক ততোটাই জঘন্য। এখানকার মেয়েটা একটু বেশিই খোলামেলা এবং সুন্দর।
ধবধবে ফর্সা মেয়েগুলোকে দেখলেই মাথা নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
চারিপাশে অনেক কাপল দেখা যাচ্ছে যারা নিজেদের মতো করে টাইম স্পেন্ড করছে। সিয়াম হিরো হিরো ভাব নিয়ে এগোচ্ছে। আজকে প্রপোজ করেই ফেলবে সে। সুইজারল্যান্ড এর মাটিতে দ্বিতীয় বার পরির আগমন ঘটেছে। এই পরিকে সে কিছুতেই হাত ছাড়া করবে না। না মানে না।
প্রথম পরির দেখা মিলেছিলো নয় দিন আগে। আহহা আদ্রিতা যখন বাড়িতে ঢুকছিলো ঘন্টা বেজেছিলো সিয়াম এর মনে। ভেবেই ফেলেছিলো জীবনটা বুঝি পরিবর্তন হয়েই গেলো।
আজকে দ্বিতীয় বার ঘন্টা বেজেছে।
আদ্রিতাকে বন্ধুর জন্য সেক্রিফাইজ করেছিলো কিন্তু এই পরিকে কোনোমতে হাত ছাড়া করবে না।
রাজী না হলে তুলে নিয়ে বাসর করে ফেলবে তবুও ছাড়বে না।
মনে মনে কনফিডেন্স অর্জন করে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় মেয়েটির নিকট। সামনে দাঁড়িয়ে হাঁটু মুরে বসে পড়ে। এক খানা হাত বাড়িয়ে দিয়ে কবিতার ছন্দে বলে ওঠে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“দেখেছিলাম বাসর খেয়েছিলাম ফুল
তুমি আমায় ভালোবেসে করে ফেলো ভুল
আমি বড্ড ভালো ছেলে জানে গোটা দুনিয়া
তোমায় আমি পেয়েছি পুরো দুনিয়া খুঁজিয়া
হাতটা ধরিয়া আমায় করে নাও গ্রহণ
খুব তাড়াতাড়ি তোমার জন্য সাজাবো বাসর।
খেলবো হাডুডু ভাঙবো খাট
তুমি আমার পারফরমেন্স দেখে বলে উঠবে “ওহহ মাই গট”
কবিতা খানা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই সিয়াম গালে এক খানা থাপ্পড় পারে। মেয়েলি তুলতুলে হাতের মোলায়েম থাপ্পড়। একটুও ব্যাথা পায় না সে।
হাসি মুখে তাকায় মেয়েটির মুখ পানে।
রাগে ফুঁসতে থাকা রমনিকে বলে ওঠে
“ওহে বালিকা বুঝো না বাংলা
তাই তোমার মনে হচ্ছে আমি বড্ড হেংলা
আসলে যা ভাবছো কিছুই সঠিক নয়
আমি হচ্ছি সিয়াম জেন্ট
মেয়েটি বলে ওঠে
” স্টপইট
আপনার আজাইরা কবিতা বন্ধ করুন। নাহলে জুতো খুলবো আমি৷
সিয়াম দাঁড়িয়ে পড়ে। লাজুক হেসে বলে
“ওহহ আপনিও বাঙালি? তাই তো বলি সুইজারল্যান্ড এর মাটিতে চাঁদ কোথা থেকে আসলো।
আসলে কি হয়েছে
মেয়েটি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। সিয়াম কপাল কুঁচকে ফেলে
“আরেহহ আরেহহ চলে যাচ্ছো কেনো? সোনা দাঁড়াও।
নাম্বারটা দিয়ে যাও। নাহলে বাসার এড্রেস
এই ত্রিভুবনে আমাকে একা করে যেয়ো না জান৷ শীতের সময় কম্বলে শীত কমে না। অন্তত গরম কাল না আসা পর্যন্ত থেকে যাও।।
ওগো জানেমান
সিয়ামের ভুলভাল উক্তি মেয়েটির কানে ঢোকে না। সে বড় বড় পা ফেলে চলে গিয়েছে অনেক দূর। হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে সিয়াম।
” যাহহ শালা চলে গেলো। সিয়াম মাহমুদকে রিজেক্ট করে?
ব্যাপার না জীবনে চলার পথে দুই একজন রিজেক্ট করতেই পারে। তার জন্য কি হাল ছেড়ে দিবো?
উহু
বরং ফুল স্পিডে লেগে পড়বো। একজন না একজন পটবেই। হাত পা বা চোখ না থাকলেও চলবে। শুধু কোনোরকমে একটা মেয়ে হলেই হবে।
নিজেকে নিজে শান্তনা দিয়ে বুক ফুলিয়ে আদ্রিতাদের দিকে চলে যায়।।
আবরার বুকে হাত গুঁজে গম্ভীর নয়নে তাকিয়ে আছে আদ্রিতার মুখ পানে। কাচুমাচু আদ্রি ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছে মুহুর্তেই। আসিফের পেছন থেকে একটু একটু উঁকি দিয়ে দেখছে। লোকটা যে হাতি আবার আসিফ আদনানকে দু ঘা বসিয়ে না দেয়।
শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিতা।
আহাদ বলে ওঠে
“আবু এই শালা আদুর সাথে ফাস্ট ডেট করতে আসছে।
আদ্রিতা ভ্রু কুচকে ফেলে। আদু আর আবু কে?
সে আসিফের পেছন থেকে বেরিয়ে আসে মুহুর্তেই। বুকে হাত গুঁজে বলে ওঠে
” আদু আর আবু কে ভাইয়া?
পেছন থেকে ভেসে আসে সিয়াম এর কবিতা
“আবু আদু দুই জন লাভ ব্রাইট কাপল
তাদের চক্করে সিয়াম আহা হয়ে যাচ্ছে ছাপল।
জীবন আ
আবরার বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে
” স্টপইট সিয়াম।
সিয়াম মুহুর্তে ঠোঁটে আঙুল ঠেলায়। যেনো কেয়ামত হয়ে গেলেও সে আর কথা বলবে না।
আসিফ বলে ওঠে
“আবরার ভাইয়া আপনাকে আমি চিনি। ফেসবুকে ফলো করি।
আবরার দু পা এগিয়ে আসিফের মুখোমুখি দাঁড়ায়। বা হাত তুলে রাখে আসিফের কাঁধে। শান্ত স্বরে বলে
” সী ইজ মাই প্রোপার্টি। দূরে থাকো তার থেকে। নাহলে বাঁচতে পারবে না।
পরপরই কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে নেয়। আসিফের পাশে গুটিগুটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রিতার পানে তাকায়।
“ভাইয়া ওকে আমি ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই।
আসিফের কন্ঠে তেজ ফুটে ওঠে। আবরার দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে তাকায় আসিফের পানে।
সে ফের বলে ওঠে
” আমরা অতি দ্রুতই আপনাদের জানাতে চাচ্ছিলাম বিয়ের বিষয়টা।
আদ্র
গর্জে ওঠে আবরার। হাত উঁচু করে বলে
“ওই নাম উচ্চারণ করলে জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো আই স্যয়ার।
আদ্রিতা পূণরায় ভয়ে সিঁটিয়ে ওঠে। আসিফের পানে এগোতে নিলেই আবরার তার হাত খানা ধরে ফেলে। এবং বড় বড় পা ফেলে গাড়ির দিকে এগোতে থাকে।
সিয়াম আসিফের গলা জড়িয়ে ধরে। আহাদ পা থেকে মাথা পর্যন্ত নজর বুলিয়ে বলে
” মুসলমানি হয়েছে তোর?
আসিফ ঠিক বুঝতে পারে না।
“বুঝতে পারি নি।
” আরেহহ গাঁধার বাচ্চা গরু কাটিং ফিটিং হইছে তোর? সুন্নতে খাৎনা?
নাহলে করে নিবে। কাটা বড়ই জরুরি।
আর নতুন একটা মেয়ে খুঁজে নিস।
আমাদের আদুর দিকে তাকালে কাটিং ফিটিং এর জিনিস খানা একদম পুরোটা কেটে দিবে।
গট ইট
সিয়াম ফলো মি।
বলেই শার্টের বোতামে লেগে থাকা চমশা তুলে চোখে পড়ে নেয়। শার্টের কলার সোজা করে স্টাইল মেরে হেঁটে চলে যায়। সিয়াম আসিফের গালে টুপ করে এক খানা চুমু খায়। তারপর দুই গাল ইচ্ছে মতো টেনে দিয়ে বলে
“আমার সোনা মনা টুনটুনি
ভালোবেসে তোমায় ডাকবো বুলবুলি
চুমু খেয়ে হয়ে যাও ট্রমা
তোমায় আমি ডাকবো ও মাই শীলা
আসিফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সিয়ামের চলে যাওয়া দেখে। পরপরই শুকনল ঢোক গিলে বিরবির করে বলে
” এ মানুষ না কি কবিতার ধর্ষক? সহজ সরল কবিতাকে পুরোই ধর্ষণ করে দিচ্ছে।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৮
ফুল স্পিডে গাড়ি চলছে। যেনো যখন তখন খাঁদে চলে যাবে। আবরারের মুখশ্রী ভীষণ গম্ভীর। যেনো এখুনি আসহায় কিউট আদ্রিতাকে টুপ করে খেয়ে নিবে।
বিরক্তিকর লোক।
আদ্রিতা খানিকক্ষণ চুপচাপ দেখে নেয় বাঘকে। পরপরই প্রচন্ড রাগী স্বরে বলে ওঠে
“কি প্রবলেম আপনার?
কেনো আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছেন না? কি ক্ষতি করেছি আপনার?
মুহুর্তেই গাড়ি থেমে যায়।